৪৪
আজাদের মা টেলিফোন করেন অ্যাম্বুলেন্সের জন্য ৷ কিন্তু কোনো অ্যাম্বুলেন্স আসে না ৷ রক্তাক্ত দেহ নিয়ে পড়ে আছে দুটো ছোট মানুষ : জায়েদ আর টগর ৷ তিনি একা একা রিকশা নিয়ে যান হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের সামনে ৷ ভাড়া করে আনেন ট্যাক্সি ট্যাক্সিঅলাকে বলেন, ‘বাবা, দুইটা ছোট ছোট ছেলের গুলি লাগছে ৷ একটু ধরতে হইব ৷’ ট্যাক্সিচালক, আজাদের মা, মহুয়া-অতিকষ্টে ধরে জায়েদ আর টগরকে গাড়িতে তোলে ৷ মা বলেন, ‘ঢাকা মেডিকালে চলো ৷’ ট্যাক্সিঅলা বলে, ‘ঢাকা মেডিক্যালে আর্মি গিজগিজ করে, ওইখানে গুলি খাওয়া রোগী নিয়া গেলে ওরা গায়েব কইরা ফেলব ৷ এর চায়া হলি ফ্যামিলিতে লন ৷’
‘তাই চলো ৷’
টগর আর জায়েদকে হলি ফ্যামিলিতে ভর্তি করানো হয় ৷ তারা অজ্ঞান অবস্থায় শুয়ে থাকে হাসপাতালের বিছানায় ৷ আজাদের মায়ের দিনগুলো যে তখন কী করে কাটছে! দুটো ভাগ্নে, তারা তার ছেলের মতোই, হাসপাতালে, বাঁচে কি মরে ঠিক নাই ৷ তাদের জন্য ওষুধপাতি, রক্ত জোগাড় করা, হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করা-এসব তাঁকে করতে হচ্ছে ৷ ওদিকে তাঁর নিজের ছেলে ধরা পড়েছে আর্মিদের হাতে ৷ একই সঙ্গে ধরা পড়েছে ভাগি্নজামাই, আর তাঁর ছেলের তিনজন বন্ধু ৷ একা একটা মানুষ তিনি কী করবেন, কোথায় যাবেন ৷ এক ফাঁকে প্রথম সুযোগে তিনি তাঁর বাসায় গোপন জায়গায় লুকিয়ে রাখা অস্ত্রশস্ত্রগুলো সরিয়ে ফেলেন হাঁড়ির মধ্যে ভরে, ভাগ্নে টিসুর মাথায় চাপিয়ে দিয়ে ৷ আর তখনই মেডিক্যাল ছাত্র সাজ্জাদুল আলম কুটু স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে আসে জুয়েলের হাতের ক্ষত ড্রেসিং করে দেবে বলে, সাফিয়া বেগম মুহূর্তে কর্তব্য স্থির করেন ৷ চারদিকে গোয়েন্দা আর পাকিস্তানিদের চর গিজগিজ করছে ৷ এই নির্দোষ ছেলেটা না আবার ধরা পড়ে ৷ তিনি তাকে ডেকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যান, আর বলেন, ‘বাবা, আমার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না বলেই তোমাকে খবর দিয়ে আনিয়েছি, আমার ব্লাড প্রেসারটা মেপে দ্যাখো তো…’ গোয়েন্দারা তাকিয়ে দেখে কুটু সাফিয়া বেগমের ব্লাড প্রেসার মাপছে, আর হাতে ব্লাড প্রেসার মাপক যন্ত্রের কাপড় পেঁচানো অবস্থায় আজাদের মা বিড়বিড় করে বলে চলেন, ‘বাবা, তুমি তাড়াতাড়ি সটকে পড়ো, জানো না, রাতে ওদের সবাইকে ধরে নিয়ে গেছে আর্মিরা…’