অধ্যায় : ৪৩ বায়তুল মাল (রাজকোষ)
ধারা-১০০৭
বাইতুল মালের সজ্ঞা বিভিন্ন উৎস্য হইতে সংগৃহীত অর্থ সরকার কর্তৃক রক্ষিত তহবিল ও সংস্থাকে “বাইতুল মাল” বলে।
বিশ্লেষণ
বিভিন্ন উৎস হইতে সংগৃহীত অর্থ-সম্পদ সরকার কর্তৃক রক্ষিত তহবিল ও সংস্থাকে বাইতুল মাল’ বলে। বাইতুল মালের সৃষ্টি যদিও রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যমানায় হইয়াছিল, কিন্তু তাহার সময় কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে এত পরিমাণ অর্থ কখনও একত্র হইত না যাহা সংরক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। বরং যে সামান্য অর্থ আসিত সাথে সাথে রাসূলুল্লাহ (সা) উহা গরীবদের মধ্যে বন্টন করিয়া দিতেন। তাঁহার পরে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা)-এর কালেও একই অবস্থা ছিল। ইহার পর হযরত উমার ফারুক (রা)-এর কালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাইতুল মালের প্রতিষ্ঠান আত্মপ্রকাশ করে। হিজরী ১৫ সনে বারাইন হইতে যখন পুরা খিরাজ পাঁচ লাখ (দিরহাম) সংগৃহীত হইল তখন হযরত উমার (রা) সকলের সহিত পরামর্শ করিয়া হযরত আবদুল্লাহ ইবন আরকাম (রা)-কে প্রধান কোষাধ্যক্ষ নিযুক্ত করিয়া কেন্দ্রীয় বাইতুল মাল’ প্রতিষ্ঠা করেন।
ধারা-১০০৮
কেন্দ্রীয় বাইতুল মাল সরকার কেন্দ্রীয়ভাবে বাইতুল মাল প্রতিষ্ঠা করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
কয়েকটি প্রদেশ, বিভাগ বা জেলার সমন্বয়ে একটি দেশ গঠিত হয়। এই সকল প্রদেশ বিভাগে ও জেলায় স্থানীয়ভাবে বাইতুল মাল থাকিবে। কিন্তু সরকার
৪২৪
সার্বিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য এবং এই সকল বিভাগীয় বাইতুল মালসমূহকে সার্বিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করিবার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি “বাইতুল মাল সংস্থা” প্রতিষ্ঠা করিবে এবং বিভাগ বা জেলাওয়ারী বাইতুল মাল হইতে স্থানীয় চাহিদা মেটাইবার পর উদ্বৃত্ত অর্থ-সম্পদ সরকারের কেন্দ্রীয় বাইতুল মালে জমা হইবে। যেমন হযরত উমার (রা) মিসরের গর্ভনর আমর ইবনুল আসকে লিখিতভাবে নির্দেশ প্রদান করিয়াছিলেন?
فاذا حصل اليك وجمعه اخرجت منه عطاء المسلمين ومايحتاج اليه مما لايد منه ثم انظر فما فضل بعد ذالك فاحمله الي.
“যখন আপনার সমস্ত অর্থ-সম্পদ উসুল হইয়া যায় এবং আপনি সেগুলিকে জমা করেন এবং উহার দ্বারা মুসলমানদের বেতন-ভাতা, গরীবদের প্রয়োজনে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করিবার পর অবশিষ্ট মাল আমার নিকট পাঠাইবেন”।২
ধারা-১০০৯ বাইতুল মাল হইতে বেতন-ভাতা প্রদান সরকার তাহার কর্মচারীদের বাইতুল মাল হইতে বেতন-ভাতা প্রদান করিবে।
বিশ্লেষণ
সরকারের প্রধান দায়িত্ব হইতেছে তাহার দেশের জনগণ হইতে সংগৃহীত বাইতুল মাল হইতে সরকারী কর্মচারীদের সার্বিক চাহিদা পূরণের জন্য সবার জন্য শ্ৰেণীমত বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা)-এর খেলাফতকালে দেশের প্রত্যেক মানুষের জন্য বাইতুল মাল হইতে “ভাতা” নির্ধারিত ছিল। পরবর্তীতে হযরত উমার (রা) এই ধারা কিছুটা পরিবর্তন করিয়া বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সামাজিক মর্যাদা, ইসলাম প্রচারে অবদান ইত্যাদির ভিত্তিতে বেতন-ভাতা নির্ধারণ করেন। আধুনিক মিসরী লেখক উস্তাদ মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিন আর-রয়ীস উহাকে সংক্ষিপ্তভাবে পেশ করিয়াছেন। যেমন হযরত উমার ফারুক (রা) যে সকল মুহাজির বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিয়াছিলেন তাহাদের প্রত্যেকের মাথাপিছু বাৎসরিক পাঁচ হাজার দিরহাম পরিমাণ অর্থ বাইতুল মাল হইতে নির্ধারণ করিয়াছিলেন। হযরত উমার (রা) নিজেও এই দলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। হযরত
৪২৫
আব্বাস (রা)-কেও এই দলভুক্ত করা হইয়াছিল। অবশ্য কাহারও কাহারও মতে তাহাকে প্রাধান্য দেওয়া হইয়াছিল এবং তাহার জন্য বাৎসরিক সাত হাজার দিরহাম নির্ধারিত ছিল এবং অন্য বর্ণনায় আছে, তাহাকে চার হাজার দিরহাম দেওয়া হইত। অনুরূপভাবে হযরত হাসান (রা) ও হযরত হুসাইন (রা)-এর ভাতা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকটাত্মীয় হওয়ার কারণে তাহাদের পিতা হযরত আলী (রা)-এর ভাতার সমপরিমাণ অর্থাৎ পাঁচ হাজার দিরহাম করিয়া দেওয়া হইত। যে সকল আনসারী বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিয়াছিল তাহাদের প্রত্যেকের জন্য বাইতুল মাল হইতে বাৎসরিক মাথাপিছু চার হাজার দিরহাম প্রদান করা হইত। আহলে বদরের উপর আর কাহাকেও প্রাধান্য দেওয়া হয় নাই, শুধুমাত্র হযরত আয়েশা (রা) ছাড়া। তাহার জন্য বাৎসরিক বারো হাজার দিরহাম নির্ধারণ করা হইয়াছিল। ফতেহ মক্কার পূর্বে হিজরতকারীদের জন্য তিন হাজার দিরহাম এবং ফাতহে মক্কার পরের ইসলাম গ্রহণকারীদের জন্য দুই হাজার দিরহাম নির্ধারিত ছিল। মুহাজির এবং আনসারীদের সন্তানদের জন্যও এই পরিমাণ অর্থ বাইতুল মাল হইতে নির্ধারিত ছিল। অতঃপর বিভিন্ন জায়গার মানুষের জন্য যুদ্ধে অংশগ্রহণের ভিত্তিতে তাহাদের জন্য ভাতা নির্ধারণ করা হইত। আহলে ইয়ামন, কবিলায়ে কায়েস, আহলে শাম, আহলে ইরাকীদের বিভিন্ন মরতবা অনুযায়ী তিন শত দিরহাম হইতে দুই হাজার দিরহাম পর্যন্ত নির্ধারণ করা হইয়াছিল। আনসার ও মুহাজির মহিলাদের জন্য দুই শত হইতে ছয় শত দিরহাম পর্যন্ত ভাতা সরকারী বাইতুল মাল হইতে নির্ধারিত ছিল। এই বণ্টনের মধ্যে হযরত উমার ফারুক (রা) আরব অনারবের মধ্যে কোন পার্থক্য করেন নাই। তিনি প্রত্যেক নবজাতক শিশুর জন্য এক শত দিরহাম নির্ধারণ করিয়া দিয়াছিলেন। যখন ঐ শিশু কিশোর হইত তখন তাহার জন্য দুই শত দিরহাম প্রদান করিতেন এবং যুবক হইলে তাহার জন্য আরও অতিরিক্ত ভাতা কেন্দ্রীয় বাইতুল মাল হইতে নির্ধারণ করিয়া দিতেন।
ধারা-১০১০
বাইতুল মালের তত্ত্বাবধান। সরকার বাইতুল মালের তত্ত্বাবধান করিবে।
বিশ্লেষণ
সরকার বাইতুল মাল সরাসরি তত্ত্বাবধান করিতে পারেন। যেমন হযরত ফারুকে আজম (রা) নিজে বাইতুল মাল তত্ত্বাবধান করিতেন। তিনি বাইতুল মাল
৪২৬
সদকা ফাণ্ড নিজেই তদারকি করিতেন, বাইতুল মালে সংরক্ষিত যাকাত সদকা হিসাবে প্রাপ্ত পশুগুলির গণনা করিতেন, তাহাদের রং আকৃতি লিখিয়া রাখিতেন। মানানেয়ে আবসী (রা) বলেন, একদা সদকার কিছু উট বাইতুল মালে আসিল। হযরত ফারুকে আজম, হযরত আলী ইবন আবু তালিব ও হযরত উসমান ইবন আফফান (রা) তিনজন যৌথভাবে সেইগুলি দেখিতে গেলেন। হযরত উসমান (রা) ছায়ায় বসিয়া লিখিতেছিলেন এবং হযরত আলী হযরত উসমান (রা)-এর নিকটে দাঁড়ান অবস্থায় হযরত ফারুক (রা) যাহা কিছু বলিতেছিলেন তাহা হযরত উসমান (রা)-কে লিখিতে সাহায্য করিতেছিলেন এবং হযরত উমার কালো কাপড় পরিধান করিয়া দুপুরের প্রচণ্ড রৌদ্রে উট গণনা করিতেছিলেন।
ধারা-১০১১ বাইতুল মাল হইতে প্রদেয় ভাতা কম-বেশি করা। সরকার বাইতুল মাল হইতে প্রদেয় ভাতাদি শ্রেণীবিশেষে কম-বেশি করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
সরকারের এই ক্ষমতা রহিয়াছে যে, বাইতুল মাল হইতে প্রদত্ত ভাতা ব্যক্তিবিশেষ বা শ্রেণীবিশেষ কম-বেশি করিতে পারিবে, যেমন হযরত ফারুকে আযম (রা) করিতেন। মানুষেরা যখন হযরত উমার ফারুক (রা)-কে এই সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করিতে লাগিল, তখন তিনি তাহাদেরকে এই বলিয়া উত্তর প্রদান করিতেন, হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা) বাইতুল মাল বণ্টন সম্পর্কে এক বিশেষ মত পোষণ করিতেন। কিন্তু আমি এ ব্যাপরে ভিন্নমত পোষণ করি। কারণ যাহারা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিয়াছে আর যাহারা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর পক্ষে তাহার সঙ্গে যুদ্ধ করিয়াছে তাহাদের কখনও আমি এক রকম ভাবিতে পারি না। অবশ্য পরে যখন সরকারী ভাণ্ডারে (বাইতুল মালে) প্রচুর ধন-সম্পদ হইল তখন তিনি ঘোষণা করিলেন, আগামী বৎসর ভাতা প্রদানে বরাবর করা হইবে। রাবী বলেন, আগামী বছর আসিবার পূর্বেই হযরত উমার (রা) ইন্তেকাল করেন।
৪২৭
ধারা-১০১২ বাইতুল মাল বিষয়ক আইন প্রণয়ন ও সংস্কার। প্রয়োজনবােধে সরকার বাইতুল মাল সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন ও সংস্কার করিবে।
বিশ্লেষণ
সরকার বাইতুল মাল সংক্রান্ত কোন বিষয়ে নিয়ম-পদ্ধতি পরিবর্তন করিতে চাহিলে তাহা করিতে পারিবে। হযরত ফারুকে আজম (রা) হইতে আমীরে মুয়াবিয়া পর্যন্ত খলীফাগণ বাইতুল মাল সংক্রান্ত আইনের তেমন সংস্কার না হইলেও পরবর্তীতে খলীফা আবদুল মালেক ইবন মারওয়ান বাইতুল মাল সংক্রান্ত আইন বিশেষভাবে সংস্কার করেন, যাহার বিস্তারিত বিবরণ ইমাম আবু ইউসুফ (র) তাহার কিতাবুল খিরাজে উল্লেখ করিয়াছেন?
“যখন আবদুল মালেক ইবন মারওয়ান খলীফা হইলেন তখন তিনি ইসহাক ইবন আবদুর রহমান আল-আশয়ারীকে জাজীরা এলাকায় গর্ভনর নিযুক্ত করিলেন। সেখানকার মানুষের নিকট হইতে বাইতুল মালের জন্য যে পরিমাণ অর্থ সম্পদ উসুল করা হইতেছিল উহা তাহার নিকট কম মনে হইল। তাই তিনি ওখানকার স্থানীয় সর্দারদিগকে আবার প্রাথমিক পর্যায় হইতে পর্যালোচনা করিতে নির্দেশ দিলেন এবং সকল সাধারণ জনগণকে তাহাদের অধীনস্থ শ্রমিকের মর্যাদায় কাজ করিতে নির্দেশ দিলেন। তিনি হিসাব করিয়া জানিতে পারিলেন যে, এক ব্যক্তি সারা বৎসর কি পরিমাণ ফসল উৎপন্ন করে। অতঃপর তিনি সেই পরিমাণ পর্যন্ত ক্ষমা করিয়া দিলেন যাহা তাহাদের ফসল উৎপাদন বাবদ খরচ হইত এবং তাহাদের বাৎসরিক আনন্দ উৎসবের দিনগুলিকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করিলেন। এইভাবে হিসাব করিয়া দেখিলেন যে, পুরা বৎসর প্রত্যেক ব্যক্তির নিকট মাত্র চার দীনার অতিরিক্ত বাঁচে। তখন হইতে আবদুল মালেক ইবন মারওয়ান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর প্রতি বছর বাইতুল মালের জন্য চার দীনার ধার্য করিতেন। দুই ব্যাপারে প্রত্যেককে সমান মনে করিলেন। অতঃপর তিনি যাহারা শহরের নিকটবর্তী তাহাদের জন্য এক প্রকারের কর এবং যাহারা শহর হইতে দূরে বসবাস করে তাহাদের উপর অন্য রকম কর আরোপ করিলেন। নিকটবর্তী এক শত জয়তুন বৃক্ষের উপর এক দিনার এবং দূরবর্তী দুই শত জয়তুন বৃক্ষের উপর এক দীনার ধার্য করিলেন। ইহা এইজন্য করা হইয়াছিল যাহাতে কাহারও উপর অত্যাচার করা
হয়।
৪২৮
ধারা-১০১৩ সরকারী কর্মচারীগণ কর্তৃক বাইতুল উসুল করা। সরকার কর্তৃক নিয়োজিত কর্মচারীগণই বাইতুল মালের অর্থ উসুল করিবে।
বিশ্লেষণ
সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীগণই কেবল বাইতুল মালের অর্থ সম্পদ উসুল করিবে। তাহাদের মাধ্যমেই অর্থ সম্পদ সরকারী বাইতুল মালে জমা হইবে। কারণ যাকাত, উশর ইত্যাদি সরকারকেই প্রদান করিতে হইবে। এইজন্যই ফিক্হ-এর কিতাবে বলা হইয়াছে?
براة رب المال بالدفع الى السلطان مع العدل والجور (سلامی
ریاست کا مالی نطام) .
“জনগণ তাহার যিম্মা হইতে মুক্তি লাভ করিবে যদি তাহারা তাহাদের মাল সরকারকে প্রদান করে, সরকার বৈধভাবে আদায় করুক অথবা অবৈধভাবে”।
ইমাম মুসলিম তাহার সহীহ মুসলিমে হযরত ওয়াইল ইবন হুজর (রা) হইতে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন এবং ইমাম তিরমিযী তাহাকে সহীহ বলিয়া মত প্রকাশ করিয়াছেন।
عن وائل بن حجر قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم ورجل يساله فقال ارايت ان گان امراء يمتعون حقنا ويسالون حقهم فقال اسمعوا واطيعوا فانماعليهم ماحملوا وعليكم ما حملتم
‘ (
449 sels Ll9) “হযরত ওয়াইল ইবন হুজর (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলিয়াছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলিতে শুনিয়াছি এবং একটি মানুষ তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল। সে বলিয়াছিল, আপনি কি মনে করেন, যদি সরকার আমাদের হক আদায় না করে অথচ তাহারা তাহাদের হক আমাদের নিকট তলব করে? রাসূলুল্লাহ (সা) বলিলেন, তোমরা অবশ্যই তাহাদের (সরকারের কথা শুনিবে এবং তাহাদের আনুগত থাকিবে। কেননা তাহারা যাহা করিবে উহার ফল তাহারই ভোগ করিবে। আর তোমরা যাহা কর তাহার ফল তোমার ভোগ করিবে”।
৪২৯
হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা)-কে জিজ্ঞাসা করা হইল।
ان لى ما فالی من ارفع زكاته فقال ادفعها الى هؤلاء القوم
• IT “কেহ তাহাকে বলিল, আমার অর্থ সম্পদ আছে। আমি সেইগুলির যাকাত কাহাকে দিব? তিনি বলিলেন, সরকারকে হাওয়ালা কর”। লোকটি পুনরায় জিজ্ঞাসা করিল,k, Luisiti/ “যদি তাহারা আয়েশ-আরামে অর্থাৎ বিলাসিতায় ব্যয় করে”? তিনি বলিলেন “ওয়াইন”, অর্থাৎ যদিও তাহারা তাহাই করে।” অপর এক বর্ণনায় তিনি বলিয়াছেন?
ادفعوا صدقة أموالكم الى من ولاه الله امركم من بر فلنفسه
ومن اثم فعليها .
“তোমরা তোমাদের যাকাতকে সরকারের ঐ সকল কর্মকর্তাকে দাও যাহাদেরকে আল্লাহ পাক তোমাদের উপর নিযুক্ত করিয়াছেন। যে নেকী করিবে উহা তাহার কাজে আসিবে। আর যে জুলুম করিবে সে নিজেই উহার জন্য দায়ী থাকিবে”। আল্লামা শাওকানী বলেন, একই মত হযরত আবু বাকর (রা), হযরত মুগীরা (রা) এবং হযরত আয়েশা (রা) ব্যক্ত করিয়াছে। ইমাম বায়হাকী এ সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা) হইতে একটি রিওয়ায়াত বর্ণনা করিয়াছেন?
واخرج ابیهقی ایضا عن ابن عمر باسناد صحيح اذ قال
ادفعوها اليهم وان شربو الخمر .
“ইমাম বায়হাকী হযরত ইবন উমার (রা) হইতে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলিলেন, তোমরা সরকারী কর্মকর্তাকে যাকাত দাও, যদিও তাহারা মদ পান করে”।১২
ধারা—১০১৪
বাইতুল মাল নিয়ন্ত্রণের অধিকার রাষ্ট্রপ্রধান অথবা রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ বাইতুল মাল রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করিবেন।
বিশ্লেষণ
বাইতুল মাল মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফান্ড বা তহবিল, যাহার দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করা হয়। সুতরাং ইহার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ তহবিলের সার্বিক
৪৩০
দেখাশুনার দায়িত্বও রাষ্ট্রের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়া বাঞ্ছনীয়। তিনি স্বয়ং খলীফা অথবা খলীফা কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিই হইবেন বলা হইয়াছে। বাইতুল মালের সকল সরকারী কর্মচারীর প্রতি তাহাদের এদ্ববিষয়ক অধিকার ও দায়িত্বাবলী খলীফার পক্ষ হইতে অর্পিত হইবে। উল্লেখ্য যে, খলীফাও বাইতুল মালের প্রধান হইবেন। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মতে খলীফার উক্ত অধিকার ও ক্ষমতা শুধু খলীফা হিসাবেই তাহার প্রাপ্য। উহা কোনরূপ ব্যক্তিগত ক্ষমতা, প্রতিপত্তি বা অধিকারবলে তাহার প্রাপ্য হয় না। বলা হইয়াছে?
وكون الحق في التصرف في اموال بیت المال للخلفية ليس معناه ان يتصرف فيها طبقا لما يشتهي كمايتصرف في ماله الخاص فان كان يفعل ذالك قيل ان بيت المال قد فسد او اصبح غير منتظم بل ينبغي ان يكون تصرفه في تلك الأموال كتصرف ولی اليتيم في مال اليتيم كما قال عمر بن الخطاب رضي الله تعالی عنه اني انزلت نفسي من هذا المال بمنزلة ولى اليتيم ان استخنیت استعفقت وان افتقرت اكلت بالمعروف فاذا ایسرت قضيت ويعني ذلك أن يتصرف في المال الذي يرى انه خير للمسلمين واصلح لامرهم دون التصرف بالتشهي والهوى والاثرة
• (• = n! ) “বাইতুল মালে খলীফার যে অধিকারের কথা বলা হইয়াছে, তাহার অর্থ ইহা নহে যে, খলীফা তাহার স্বাধীন ইচ্ছামত যাহা খুশি সেইভাবে ব্যবহার করিবে, যেমন সে তাহার ব্যক্তিগত মালে অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। যদি কোন খলীফা বাইতুল মালের উপর এইরূপ অবৈধ অধিকার প্রতিষ্ঠা করে তবে বলা হইবে যে, বাইতুল মাল নষ্ট হইয়া গিয়াছে অথবা বাইতুল মাল বিশৃংখল অবস্থায় পতিত হইয়াছে। বরং খলীফার কর্তব্য হইল, তিনি বাইতুল মালকে ইয়াতীমের মালের মত ব্যবহার করিবেন। যেমন উমার (রা) বলেন, আমি বাইতুল মালের উপর নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাকে ঠিক সেইরূপ মনে করি যেইভাবে আমি ইয়াতীমের মালের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করি। যদি আমার নিকট ধন-সম্পত্তি থাকে তবে আমি উহা হইতে কিছুই গ্রহণ করি না। আর যদি আমি মালের মোহতাজ (ফকির) হইয়া যাই তাহা হইলে প্রয়োজনমত স্বাভাবিক পর্যায়ে উহা গ্রহণ করি এবং যখন আমার নিকট মাল সম্পদ আসে তখন আমি উহা পরিশোধ করিয়া দেই। অর্থাৎ আমি উহার মধ্যে নিজের ইচ্ছামত কিছুই করি না”।১৩
৪৩১
রাষ্ট্রের রাজস্ব সংগ্রহ ও বণ্টনের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি সাহিবু বাইতিল মাল (JCall L০) নামে অভিহিত।
ويجب وهو ماجرت عليه العادة أن يولى الخليفة على البيت المال رجلا من اهل الامانة والقدرة وكان التصرف في بيت المال بأنابة الخليفة يسمى صحب بيت المال وانما يتصرف فيه طبقا لما يحدده الخليفة من طرق التصرف .
“এবং সরকারের কর্তব্য হইল এবং যাহা সাধারণত প্রথাও বটে, খলীফা কোন ব্যক্তিকে বাইতুল মালের ব্যবস্থাপনার জন্য নিয়োগ দান করিবেন, যিনি সৎ যোগ্য এবং আমানতদার হইবেন এবং তিনি বাইতুল মাল সংক্রান্ত বিষয়ে খলীফার প্রতিনিধিত্ব করিবেন। নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে “সাহিবু বাইতিল মাল” বলা হয় এবং তিনি খলীফা কর্তৃক নির্দেশিত নিয়ামাবলী অনুসরণ করিবেন”।১৪
অন্যত্র বলা হইয়াছে, রাষ্ট্রের রাজস্ব সংগ্রহ ও বণ্টনের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি রাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের বিভিন্ন শাখায় নিযুক্ত কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণের মধ্যে প্রধানরূপে বিবেচিত হইবেন। উক্ত পদে নিযুক্ত হইবার জন্য অপরিহার্য শর্ত রহিয়াছে। প্রথমতঃ নিয়োজিতব্য ব্যক্তির মুসলিম হইতে হইবে। দ্বিতীয়, আদিল (ন্যায়পরায়ণ) হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট কার্য সম্পাদনের প্রয়োজনীয় যোগ্যতার অধিকারী হইতে হইবে। অধিকন্তু আবােপযোগ্য করের পরিমান নির্ধারণ এবং উহার ব্যয়ের পার্থক্য বােধের ক্ষেত্রে নিয়োজিতব্য ব্যক্তির ইজতিহাদের গুণের অধিকারী হইতে হইবে। রাজস্ব সংগ্রহ ও বাইতুল মালে উহা জমাদানের কার্যে নিয়োজিত অধীনস্থ কর্মচারীগণ অমুসলিমও হইতে পারেন। বাইতুল মালের কাগজপত্র ও হিসাবের খাতা একটি বিশেষ ব্যবস্থাপনা পরিদপ্তরের দায়িত্বে সংরক্ষিত থাকিবে। উক্ত : পরিদপ্তর কাতিবুদ দীওয়ান (Gls) নামে অভিহিত কর্মকর্তার নেতৃত্বে কার্য পরিচালনা করিবে। উপরোক্ত কাঠামোর মধ্যে থাকিয়া খলীফা তাহার পদাধিকারবলে ও ব্যক্তিগত বিচার বিবেচনা দ্বারা বাইতুল মালের কার্য নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পদের ধরন ও উহাদের কার্যাবলীর সীমানা নির্ধারণ করিয়া দিবেন।১৫
৪৩২
ধারা-১০১৫
বাইতুল মালের উৎসসমূহ বাইতুল মালের উৎসসমূহ নিম্নরূপ –
(১) সকল প্রকার যাকাত; (২) গনীমতের মাল; (৩) খনিজ সম্পদ; (৪) ভূগর্ভে প্রােথিত সম্পদ, যদি পাওয়া যায়; (৫) ফায়; (৬) বাইতুল মালের নিজস্ব সম্পদের আয়; (৭) বাইতুল মালে প্রদত্ত দান-খয়রাত ইত্যাদি; (৮) এইরূপ সম্পত্তি যাহার মালিকের সন্ধান জানা যায় না; (৯) উত্তরাধিকারবিহীন কোন মুসলমান মৃত্যুবরণ করিলে; (১০) মুরতাহাদের সম্পত্তি।
বিশ্লেষণ
বাইতুল মালের আয়ের অন্যতম উৎস হইল যাকাত। যাকাত বলিতে যত রকম যাকাত আছে সকল প্রকারকে বুঝাইবে। দ্বিতীয়তঃ গনীমতের মালের এবং খনিজ সম্পদ ও ভূ-গর্ভে প্রােথিত সম্পদ বাইতুল মালের প্রাপ্য। উল্লেখ্য যে, উক্ত খাতে প্রাপ্য রাজস্ব আল্লাহ ও রাসূল-এর প্রাপ্য এবং উক্ত প্রাপ্য সমাগ্রিকভাবে মুসলিম উম্মার কল্যাণমূলক কার্যে ব্যয়িত হইব।১৬
‘ফায়”ও বাইতুল মালের আয়ের অন্যতম উৎস। ফায় বলা হয় ঐ সকল সম্পত্তিকে যাহা কাফেরদের নিকট হইতে যুদ্ধ ছাড়া লাভ করা হয়। ফায়-এর কয়েকটি শ্রেণী আছে, নিম্নে তা উল্লেখ করা হইল।১৭।
ফায় -এর প্রথম শ্রেণী হইল সেই প্রকার মাল যাহা কাফেরগণ মুসলমানদের সামরিক অভিযানের ভয়ে পরিত্যাগ করিয়া পালাইয়া যায়।১৮
দ্বিতীয় প্রকার হইল যাহা কাফেরদের নিকট হইতে গ্রহণ করা হইয়াছে খিরাজ অথবা এমন জমির ইজারা হিসাবে যে জমির মালিক মুসলমান এবং উক্ত জমিন ইজারা হিসাবে দেওয়া হইয়াছে কোন মুসলমান অথবা যিম্মিকে অথবা এমন জমিন যাহার উপর মুসলমানদের খিরাজ পাওনা রহিয়াছে।
তৃতীয় প্রকারের ফায় হইলঃ জিয়া, যাহা কাফেরদের প্রতি আরোপ করা . হইয়াছে। তাহাদের মুসলিম রাষ্ট্রে নিরাপদে বসবাসের জন্য যাহা তাহাদের প্রত্যেক সক্ষম বালেগ ব্যক্তির উপর প্রযোজ্য। ১৯
চতুর্থ প্রকার ও আহলে যিম্মা হইতে আদায়কৃত ওশর। ইহা কেবল তাহাদের উপর প্রযোজ্য যাহারা ব্যবসায় উদ্দেশ্যে দারুল হরবে এবং দারুল হরব হইতে
৪৩৩
দারুল ইসলামে যাতায়াত করে অথবা দারুল ইসলাম হইতে অন্য যে কোন দেশে গমন করে। তাহাদের নিকট হইতে বৎসরে শুধুমাত্র একবার ওশর গ্রহণ করা হইবে। অনুরূপভাবে আহলে হরব ব্যবসায়ী হইতে আদায়কৃত উশরকেও ফায় বলে, যে সকর আহলে হরব নিরাপদে ব্যবসার উদ্দেশ্যে মুসলিম দেশে আগমন করে। ২০
পঞ্চম প্রকারঃ যে পরিমাণ মালের উপর আহলে হরবরা মুসলমানদের সহিত সমঝোতা করিয়াছে (শান্তি বিনিময় করিয়াছে)।
যষ্ঠ প্রকারঃ মুরতাহাদের মাল, সে মৃত অথবা নিহত হইলে উক্ত মালও ফায় বলিয়া বিবেচিত হইবে।২১
৭ম প্রকার মালে ফায়ঃ যিম্মীর মাল, যখন সে নিহত অথবা মৃত্যুবরণ করে এবং কোন উত্তরাধিকারী রাখিয়া না যায় এবং তাহার উত্তরাধিকারীদের দেওয়ার পর যে মাল অতিরিক্ত থাকে উহাও মালে ফায় হিসাবে বাইতুল মালে জমা হইবে।২২
অষ্টম প্রকার মালে ফায় : ঐ প্রকার ফসলি জমি যাহা এখনও গনীমতের মাল হিসবে বণ্টন করা হয় নাই।
বাইতুল মালের আয়ের অন্যতম উৎস্য হইল এইরূপ সম্পত্তি যাহার মালিকের সন্ধান পাওয়া যায় না। যেমন গ্রেফতারকৃত পলাতক দাস এবং গ্রেফতারকৃত চোর-ডাকাতের নিকট হইতে উদ্ধারকৃত অজ্ঞাত মালিকের অর্থ-সম্পদ। উদ্ধারকৃত সম্পত্তি অস্থাবর হইলে উহার বিক্রয়লবধ অর্থ এবং উহার স্থাবর সম্পত্তি হইলে উহাতে উৎপন্ন পণ্য অথবা উহা হইতে লব্ধ অর্থ বাইতুল মালে জমা হইবে।
বাইতুল মালের আয়ের অপর উৎস হইতেছে ইসলাম ত্যাগকারী (মুরতাদ) লোকদের সম্পত্তি। যদিও অধিকাংশ ফকীহ এই মত পোষণ করেন যে, মুরতাহাদের যাবতীয় সম্পত্তি বাইতুল মালে জমা হইবে, তথাপি হানাফী ফকীহগণ এই বিষয়ে যে অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন উহাতে এতদ্বিষয়ে তাহাদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। একদল হানাফী ফকীহ বলেন, মুরতাদ ব্যক্তির সম্পত্তির শুধু সেই অংশই বাইতুল মালে জমা হইবে, যাহা সে মুরতাদ হইবার পূর্বে উপার্জন করিয়াছে।
বাইতুল মালের আয়ের অপর উৎস্য : মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি, মালিকী মাযহাব মতে বাইতুল মাল একমাত্র সেই অবস্থায় মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির বৈধ উত্তরাধিকারী হইবে যখন তাহার কোন বৈধ “আসাবা না থাকে অথবা কুরআন মজীদে প্রদত্ত বিধান মুতাবিক এইরূপ উত্তরাধিকারীগণও না থাকে যাহারা তাহাদের জন্য নির্ধারিত উত্তরাধিকার অংশ হিসাবে তাহার সমুদয় সম্পত্তিকে নিজেদের অধিকার আনিতে = ২৮,
“
৪৩৪
পারে। উক্ত মাযহাবমতে মৃত ব্যক্তির কোনরূপ উত্তরাধিকারী না থাকিলে তাহার সম্পত্তির অন্তর দুই-তৃতীয়াংশ বায়তুল মালে জমা হইবে। উল্লেখ্য যে, মৃত ব্যক্তির ওসিয়াতের অর্থের পরিমাণ তাহার মোট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ অপেক্ষা অধিক হইতে পারিবে না। অন্যান্য মাযহাবমতে মৃত ব্যক্তি কুরআন মজীদের বিধান মুতাবিক কোনও উত্তরাধিকারী অথবা রক্ত সম্পর্কের আত্মীয় রাখিয়া গেলে তাহার সম্পত্তির কোন অংশই কোনক্রমে বাইতুল মালে জমা হইবে না। হানাফী মাযহাবমতে মৃত ব্যক্তির কোনও উত্তরাধিকারী অথবা রক্ত সম্পর্কের আত্মীয় না থাকিলে সে ওসিয়াতের মাধ্যমে তাহার সমুদয় সম্পত্তি হেবা করিয়া যাইতে পারে। উক্ত মাযহাবের মতে উত্তরাধিকারীবিহীন মৃত ব্যক্তি ওসিয়াতের মাধ্যমে তাহার সম্পত্তির কিয়দংশ অথবা উহার সমুদয় অংশ হেবা করিয়া গেলে উক্ত হেবাকৃত সম্পত্তি অধিকার করা বাইতুল মালের জন্য অবৈধ এবং যবরদস্তিমূলক আদায়কৃত সম্পত্তিরূপে পরিগণিত হইবে।২৩
ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান রাজস্ব উৎস ছিল জমির উপর আরোপিত কর বা খারাজ। প্রথমদিকে উক্ত কর বিজিত দেশের শুধু অমুসলিমদের জমির উপর আরোপিত ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বিপুল সংখ্যক অমুসলিম অধিবাসী যখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিতে লাগিল, তখন বৈধতা বিষয়ে কিয়ৎ পরিমাণ সন্দেহ দেখা দেওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে ধ্বংসের হাত হইতে বাঁচাইবার জন্য এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হইল যে, জামির মালিক ধর্ম ত্যাগ করিয়া মুসলিম হইলেও তাহাকে জমির কর প্রদান করিতে হইবে। ইসলামী বিধানানুসারে খারাজ এক প্রকার কর। এই কর মুসলিম উম্মার সামগ্রিক কল্যাণ ব্যয়িত হইত। বলা অনাবশ্যক যে, বিজয়ী মুসলিম উম্মাহ ছিল বিভিন্ন দেশের জমির মালিক।
ধারা-১০১৬
বাইতুল মাল ব্যয়ের খাতসমূহ বাইতুল মালের ব্যয়ের খাত দুইটি – (ক) অপরিহার্য খাত এবং (খ) স্বেচ্ছামূলক খাত।
বিশ্লেষণ
যে খাতে বাইতুল মাল ব্যয় করা রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য উহা দুই প্রকারের। কোনও ব্যক্তি বা দল কর্তৃক রাষ্ট্রের সেবা করিবার বিনিময়ে যে অর্থ ব্যয় করা হয়,
৪৩৫
যেমন সরকারী কর্মচারীদেরকে দেয় বেতনাদি এবং রাষ্ট্রীয় কার্য সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ও সরঞ্জাম ক্রয়। দ্বিতীয় প্রকারের ব্যয়ের খাতঃ যে সকল খাতে অর্থ ব্যয় করা রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য, যেমন কয়েদীদের ভরণপোষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ। দ্বিতীয় খাতে অর্থ ব্যয় করা রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য নহে। এই সকল খাতে অর্থ ব্যয় করিবার দায়িত্ব বাইতুল মালের উপর তখনই বর্তায় যখন প্রথমোক্ত শ্ৰেণীর খাত সমূহে প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করিবার পর এই শ্রেণীর খাতসমূহে ব্যয় করিবার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ উহাতে উদ্বৃত্ত থাকিয়া যায়। যেমন রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, হাট বাজার, খেলাধুলার মাঠ, অসহায় গরীব-মিসকীনদের জন্য ব্যয় কর।
যেন বলা হইয়াছে।
فيحتمل بيت المال نفقاتهم وكسوتهم ومايصلحهم من داء
••••••••••••••১৯ls “এই জাতীয় গরীব অসহায় মানুষদের ভরণপোষণের এবং ঔষধপত্র এবং তাহাদের কাহারও মৃত্যু হইলে তাহার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
অনুরূপভাবে যিম্মীদের মধ্যে যাহারা গরীব অসহায় তাহাদের জন্য বাইতুল মাল খরচ করা। যেমন ইমাম আবু ইউসুফ (র) উল্লেখ করিয়াছেন।
مما اعطاه خالد بن الوليد رضي الله عنه في عهده لاهل الحيرة ايما شیخ ضعف عن العمل او اصابته افة من الآفات وكان
…………. 1 ts:
“যেমনভাবে হযরত খালিদ ইবন অলীদ তাহার সময়ে যিম্মীদেরকে বাইতুল মাল হইতে ব্যয় করিয়াছিলেন। সেই সকল যিম্মীর জন্য যাহারা নিতান্ত বৃদ্ধ হইয়া গিয়াছে এবং কাজ করিতে অক্ষম অথবা প্রাকৃতিক কোন দুযোর্গের শিকার হইয়া নিঃস্ব হইয়া গিয়াছে অথবা ধনী ছিল পরে গরীব হইয়া গিয়াছে ইত্যাদি”।২৪।
অনুরূপভাবে যে সকল মুসলমান যোদ্ধা কাফেরদের হাতে বন্দী রহিয়াছে তাহাদের মুক্ত করিবার জন্য বাইতুল মাল ব্যবহার করা যায়। যেমন ইমাম আবু ইউসুফ উল্লেখ করিয়াছেন?
قول عمر ابن الخطاب رضي الله عنه كل اسیر فی ایدی
المشركين من المسلمين ففكاله من بيت المال المسلمين .
৪৩৬
“যে সকল মুসলমান বন্দী অবস্থায় কাফেরর নিকট আছে তাহাদের মুক্ত করিতে বাইতুল মাল ব্যয় করা যাইবে”।২৫
অনুরূপভাবে সরকারী কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী ভুল করিয়া কোন অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইলে উহার ক্ষতিপূরণ বাইতুল মাল হইতে দেওয়া হইবে অথবা যদি কোন ব্যক্তিকে রাজপথে অথবা বড় কোন ময়দানে অথবা বড় কোন জামে মসজিদে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় এবং যদি তাহার হত্যাকারীকে সনাক্ত করা না যায় তবে সেক্ষেত্রেও উক্ত নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের সরকার বাইতুল মাল হইতে খরচ দিবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত আবদুল্লাহ ইবন সাহল (রা) আনসারী খয়র নিহত হইলে এবং তাহার হত্যাকারী চিহ্নিত না হওয়াতে বাইতুল মা হতে তাহার দিয়াতের অর্থ প্রদান করিয়াছিলেন। ২৬
ধারা-১০১৭ বাইতুল মাল সংক্রান্ত মামলা গ্রহণের অধিকার। প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা বাইতুল মাল সংক্রান্ত মোকদ্দমা গ্রহণ করিতে পারিবেন।
বিশ্লেষণ
বাইতুল মালের প্রধান কর্মকর্তা বাইতুল মাল সংক্রান্ত যে কোন মামলা ফয়সালার জন্য গ্রহণ করিতে পারিবেন। সরকারী ভাণ্ডার বা বাইতুল মালের নিয়ম কানুন যথাযথভাবে পালিত হইতেছে কিনা তাহা দেখিবার দায়িত্ব যে সরকারী কর্মকর্তা উপর ন্যস্ত থাকে তিনি পদাধিকারবলে পূর্বোক্তরূপ বিরোধের শুনানী গ্রহণের আইনগত অধিকার রাখেন।২৭
ধারা-১০১৮ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাইতুল মাল ব্যয় করা। ব্যয়ের একাধিক খাত থাকিলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাইতুল মাল ব্যয় করা যাইবে।
বিশ্লেষণ
বাইতুল মাল ব্যয়ের একাধিক খাত থাকিলে এবং উহাতে বাইতুল মাল ব্যয় করা জরুরী হইয়া পড়িলে সেই অবস্থায় সরকার তাহার সুবিবেচনার ভিত্তিতে উহার
৪৩৭
মধ্যে অগ্রাধিকার প্রদান করিতে পারেন। তবে এ ব্যাপারে ফকীহগণের মতভেদ রহিয়াছে।
ইমাম মালেক এবং ইমাম শাফিয়ী (র) বলেন, বাইতুল মাল সর্বপ্রথম ব্যয় করা হইবে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বংশের লোকের জন্য যাহাদের জন্য যাকাত সদকা গ্রহণ করা হারাম। যেমন হযরত উমার (রা) বাইতুল মাল হইতে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বংশ দিয়া শুরু করিয়াছিলেন। অতঃপর অন্যান্য খাত যেগুলি জনকল্যাণে করা হয়, যথা রাস্তাঘাট, পুল, মসজিদ ইত্যাদি। ২৮ ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল বলেন, যদি রাষ্ট্রের সামনে বাইতুল মাল ব্যয়ের একাধিক খাত একত্রে পাওয়া যায়, তবে সর্বপ্রথম অগ্রাধিকারের প্রদান করা হইবে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য অর্থাৎ সামরিক বাহিনীর রসদ খাবার রেশন অস্ত্র ইত্যাদি ক্রয় করা, অতঃপর সাধারণ জনকল্যাণে ব্যয় করা।২৯
ধারা-১০১৯
বাইতুল মালের উদ্ধৃত সম্পদ বাইতুল মাল হইতে ব্যয় করিবার পর উদ্বৃত্ত যাহা থাকিয়া যাইবে সরকার উক্ত অর্থ ভবিষ্যত প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে বাইতুল মালে সঞ্চিত রাখিবে।
বিশ্লেষণ
বাইতুল মাল হইতে বিভিন্ন বিভাগে যথাযথ ব্যয় হইবার পর যদি অতিরিক্ত মাল আরও থাকিয়া যায় তবে উক্ত মাল কি করিতে হইবে এই বিষয়ে ফকীহদের মতভেদ রহিয়াছে। ইমাম আবু হানীফা (র) বলেন, গুরুত্বপূর্ণ যাবতীয় ব্যয় নির্বাহের পর যে অর্থ অবশিষ্ট থাকিয়া যায় উহা ভবিষ্যত প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে বাইতুল মালে সঞ্চিত থাকিবে। ইমাম শাফিয়ী (র) বলেন, এইরূপ উদ্বৃত্ত অর্থ। জনকল্যাণমূলক কাজে সঙ্গে সঙ্গে ব্যয় করিতে হইবে। তৃতীয় আর একটি মত হইল, উক্ত অর্থ কোন খাতে ব্যয় হইবে উহা সম্পূর্ণ সরকারের ইচ্ছা। তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত অর্থ জুয়া, গান-বাজনা তথা হারাম কাজে ব্যয় করিবে না। ৩ কালয়বী ইমাম সাফী হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, বিজ্ঞ লোকের মতামতে সরকার উহা জমা রাখিবে।
৪৩৮
ধারা-১০২০
বাইতুল মালে সরকারের দায়িত্ব (ক) সরকার জুলুম করিয়া জনগণ হইতে মাল সংগ্রহ করিতে পারিবে।
(খ) জনগণ হইতে বৈধভাবে মাল গ্রহণ করিলেও শরীয়াত বর্ণিত পন্থায় উহা ব্যয় হইবে।
(গ) সরকার বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে বাইতুল মালের কর্মকর্তা নিয়োগ করিবে।
(ঘ) সরকার বাইতুল মালকে এমনভাবে মিশ্রিত করিবে না যে, পরবর্তীতে উহার পার্থক্য অসম্ভব হইয়া পড়ে।৩১
ধারা—১০২১ বাইতুল মালের কর্মীবৃন্দের কাজের হিসাব গ্রহণ সরকার নিয়মিতভাবে বাইতুল মালে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের কাজের হিসাব গ্রহণ করিবেন।
বিশ্লেষণ
সরকার কর্তৃক নিয়োজিত বাইতুল মালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের হিসাব গ্রহণের দায়িত্ব সরকারের। এ সম্পর্কে সহীহ বুখারীতে উল্লেখ আছে?
عن أبي حميد الساعدي قال استعمل النبي صلى الله عليه وسلم رجلا من الازد علی صدقات بنی سلم يدعى ابن اللتبية فلما
(s ) •4ws : “আবু হুমায়দ আস্-সায়েদী বলিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইবনুল লুতবিয়্যা নামক আজদ গোত্রীয় জনৈক ব্যক্তিকে সদাকাহ সগ্রহের কাজে নিয়োজিত করিলেন। সে যখন সদাকা উসূল করিয়া প্রত্যাবর্তন করিল তখন রাসূলুল্লহ (সা) তাহার হিসাব গ্রহণ করিলেন।৩২
৪৩৯
ধারা-১০২২ বাইতুল মালের প্রধানের নিয়োগের শর্তাবলী বাইতুল মাল প্রধানের পদে নিয়োগ প্রাপ্তির জন্য প্রার্থীর মধ্যে নিম্নবর্ণিত যোগ্যতা থাকিতে হইবে
(ক) তাহাকে মুসলমান হইতে হইবে। (খ) আদিল বা ন্যায়পরায়ণ হইতে হইবে; (গ) বাইতুল মাল সংক্রান্ত বিষয়ে যোগ্যতার অধিকারী হইতে হইবে;
(ঘ) আবােপযোগ্য করের পরিমাণ নির্ধারণ এবং উহার ব্যয়ের পার্থক্য বােধের ক্ষেত্রে ইজতিহাদের গুণের অধিকারী হইতে হইবে।৩
ধারা-১০২৩
বাইতুল মাল দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হইলে বাইতুল মাল দায়িত্ব পালনে দুইভাবে ব্যর্থ হইতে পারে
(ক) খুমুস ও যাকাত, যাহার অর্থ ব্যয়ের নির্দিষ্ট খাত রহিয়াছে, যদি ঐ খাতে কোন অর্থ না থাকে;
(খ) খুমুস ও যাকাত ব্যতীত অন্য সকল প্রকারের আয়ের খাতে যদি অর্থ থাকে।
বিশ্লেষণ
বাইতুল মালে যদি অর্থ না থাকে তবে স্বাভাবিকভাবেই বাইতুল মাল তাহার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে ভাণ্ডার শূন্য হইলেও বাইতুল মালকে যে কোন উপায়ে হউক তাহার ব্যয় নির্বাহের দায়িত্ব পালন করিতে হয়। আল-মাওয়ারদী এবং আবুল আলা বাইতুল মাল তাহার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দুইটি শ্রেণী উল্লেখ করিয়াছেন। প্রথম প্রকারঃ বাইতুল মালের যে অর্থ ব্যয় করিবার নির্দিষ্ট খাত শরীয়াত কর্তৃক নির্দিষ্ট যেমন খুমুস এবং যাকাত। সুতরাং খুসুম এবং যাকাত ফান্ডে যদি কোন অর্থ না থাকে তবে সেই সকল নির্দিষ্ট খাতে অর্থ ব্যয় করা বাইতুল মালের জন্য জরুরী হইবে না।
৪৪০
দ্বিতীয় প্রকারঃ খুসুম, যাকাত ছাড়া, যদি ফায় অথবা এই জাতীয় আয়ের উৎস বাইতুল মালে না থাকে তবে তখন ব্যয়ের খাত সাধারণ দুই প্রকারের। এক প্রকারঃ যে খাতের ব্যয় নির্বাহ করা রাষ্ট্রের জন্য অতি জরুরী, যেমন স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সৈনিকদের লালন-পালন এবং অস্ত্রসস্ত্র ক্রয় বাবদ অর্থ ব্যয় করা। এই খাতে ব্যয়ের জন্য যদি বাইতুল মালে কোন অর্থ নাও থাকে তবুও ধারকর্য করিয়া হইলেও ব্যয় নির্বাহ করিতে হইবে। যেখাতে রাষ্ট্রের জন্য ব্যয় করা অতি জরুরী নহে, তবে অর্থ থাকিলে ব্যয় করা হয়, যেমন রাস্তা ঘাট, ব্রিজ কালভার্ট ইত্যাদি, এই খাতে অর্থ ব্যয় করা বাইতুল মালের জন্য কর্তব্য হইবে যদি এই ফান্ডে অর্থ থাকে। আর যদি অর্থ না থাকে তবে ব্যয় করা বাইতুল মালের জন্য জরুরী নহে।৫
ধারা-১০২৪
আঞ্চলিক বাইতুল মালে অর্থসংকট কেন্দ্রীয় বাইতুল মাল ছাড়া যদি আঞ্চলিক বাইতুল মালে অর্থ সংকট দেখা দেয় তবে উহার ঘাটতি কেন্দ্রীয় বাইতুল মাল হইতে পূরণ করা যাইবে।
বিশ্লেষণ
অনেক সময় বিভিন্ন অঞ্চলে নানা কারণে আঞ্চলিক বাইতুল মালে অর্থ সংকট দেখা দিতে পারে। এই রকম পরিস্থিতি হইলে আঞ্চলিক বাইতুল মালের প্রধান কেন্দ্রীয় বাইতুল মালের প্রধানের নিকট বিষয়টি অবগত করাইবেন। যদি এই সংকট আঞ্চলিক স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে হয় তাহলে কেন্দ্রীয় বাইতুল মাল উহা যথা সম্ভব শীঘ্র পূরণ করিবেন। আর যদি উক্ত অর্থসংকট আঞ্চলিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য হইয়া থাকে তবে সেক্ষেত্রে উহা পূরণের জন্য কেন্দ্রীয় বাইতুল মাল বাধ্য নহে।৬
ধারা-১০২৫ বাইতুল মালের উপর সরকারের অধিকার বাইতুল মালের উপর সরকারের নিম্নবর্ণিত অধিকার থাকিবে – (ক) বাইতুল মালের মাল বেচাকেনা করা; (খ) বাইতুল মালের সম্পত্তি ইজারা প্রদান করা;
৪৪১
(গ) বাইতুল মালের জমিতে সেচসহ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা;
(ঘ) বাইতুল মালের সম্পদ অপরকে ধারা দেওয়া; (ঙ) বাইতুল মালের সম্পদ কর্য হিসাবে প্রদান করা।
বিশ্লেষণ
সরকার প্রয়োজন বােধ করিলে বাইতুল মালের মাল বেচাকেনা করিতে পারে। তবে শর্ত থাকে যে, সরকার বা তাহার মনোনীত ব্যক্তি তাহা নিজের জন্য ক্রয় করিতে পারিবে না। যেভাবে ইয়াতীমের লালন-পালনকারী ব্যক্তি নিজে ইয়াতীমের মাল ক্রয় করিতে পারে না। তবে বিশেষ কোন প্রয়োজন দেখা দিলে নিজের জন্যও ক্রয় করিতে পারিবে।৩৭
বাইতুল মালের সম্পদ (জমি) ইজারা হিসাবে দেওয়া যাইবে। ওয়াকফকৃত সম্পত্তি যেভাবে ইজারা প্রদান করা যায়।
অনুরূপভাবে সরকার বাইতুল মালের সম্পত্তিতে (জমিতে) প্রয়োজনমত সেচ প্রদান করিতে পারিবে, যেভাবে অভিভাবক তাহার অধীনস্থ শিশুকে বৈধ সকল প্রকারের লালন-পালন করিতে পারে। ৯ অনুরূপভাবে বাইতুল মালের সম্পত্তি ধার প্রদানের ক্ষেত্রে ফকীহগণের মাঝে রহিয়াছে। আসনাবী বলেন, ধার দেওয়া বৈধ। রামলী বলেন, কোন অবস্থায় সরকার বাইতুল মাল ধার পারিবে না। ইমাম কালয়ুবী বলেন, যদি কোন ব্যক্তি বাইতুল মালের মাল ধার হিসাবে গ্রহণ করে, অতঃপর উহা তাহার হাতে নষ্ট হয় তবে সেক্ষেত্রে তাহার উপর কোন প্রকারের জরিমানা আরোপ হইবে না, যদি বাইতুল মালে তাহার কোন প্রাপ্য থাকিয়া থাকে।৪১ বাইতুল মাল হইতে কর্য দেওয়া যাইতে পারে যেমন ইবনে আছীর উল্লেখ করিয়াছেন, হযরত উমার (রা) হিন্দু বিনতে আনবাকে চার হাজার দীনার কর্য হিসাবে প্রদান করিয়াছিলেন।৪২ খােদ রাসূলুল্লাহ (সা)-ও বাইতুল মাল হইতে ধার গ্রহণ করিয়াছেন।৪৩
ধারা-১০২৬ বাইতুল মালের জমির খেরাজ মওকুফ বাইতুল মাল কর্তৃপক্ষ বাইতুল মালের জমি হইতে খেরাজ মওকুফ করিয়া দিতে পারেন।
৪৪২
বিশ্লেষণ
কর্তৃপক্ষ মনে করিলে বাইতুল মালের জমিনের খেরাজ মওকুফ করিয়া দিতে পারিবেন, তবে উশর মওকুফ করিতে পারিবেন না। ইহা ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মত। কর্তৃপক্ষ যদি এ জাতীয় জমি হইতে উশর বা যাকাতের মাল মওকুফ করিয়া দেন তবে ইহা ফকীহদের সর্বসম্মত মতে বৈধ হইবে না।৪৪
ধারা-১০২৭
বাইতুল মালের নিকট দায়বদ্ধতা বাইতুল মাল কর্তৃপক্ষ যদি কোন ভাল উদ্দেশ্যে ধনিক শ্রেণীর উপর বিশেষ কর ধার্য করেন, তবে তাহারা উহা প্রদানে বাইতুল মালের নিকট
দায়বদ্ধ থাকিবেন।
বিশ্লেষণ
সরকার বিশেষ প্রয়োজনে অনেক সময় বিশেষ শ্রেণী বা বিশেষ লোকদের প্রতি বিশেষ কর ধার্য করিয়া থাকেন। যদি সরকার উহা জনকল্যাণের নিমিত্তে করিয়া থাকেন তবে যাহাদের উপর উহা ধার্য করা হইয়াছে তাহারা উহা প্রদানে বাধ্য থাকিবেন। উহা আদায় না করা পর্যন্ত তাহারা বাইতুল মালের নিকট দায়বদ্ধ থাকিবে”।৪৫
ধারা১০২৮
দুর্ভিক্ষের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে সরকার বাইতুল মাল হইতে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করিবার দায়িত্ব বাইতুল মালের। দুর্ভিক্ষে সার্বিক সাহায্য সহযোগিতা প্রদানের জন্য বাইতুল মাল গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করিতে পারে। ইমাম জাস্সাস আহকামুল কুরআন নামক গ্রন্থে সূরা ইউসুফের ব্যাখ্যায় বলেন : দুর্ভিক্ষের ক্ষেত্রে সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য ইসলামী রাষ্ট্রের অর্থাৎ বাইতুল মালের। দুর্ভিক্ষ পীড়িত এলাকার জনগণের দুঃখ-কষ্ট নিবারণ ও তাহাদের
৪৪৩
আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা করার সম্ভাব্য সকল প্রকারের প্রচেষ্টা চালানো সরকারের জন্য ফরজ। ৪৬
দুর্ভিক্ষ জনগণের জন্য এক দুঃসহ মসিবত। হযরত উমার ফারুক (রা)-এর খেলাফতকালে একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি শপথ করিয়া বলিয়াছিলেন, যত দিন না ইহা সম্পূর্ণ নিরসন হয় তিনি ঘি খাইবেন না এবং দুধ পান করিবেন না। সকল গভর্নর এবং প্রশাসকদের তিনি লিখিয়া পাঠান যেন তাহারা এই মুহূর্তে মদীনাবাসীর সাহায্যে আগাইয়া আসেন। ইহার পর হযরত আবু উবাইদা (রা) খাদ্যশস্য ভর্তি চার হাজার উট লইয়া খলীফার দরবারে উপস্থিত হন। হযরত আমর ইবন আস (রা) বিশটি জাহাজ ভর্তি খাদ্যশস্য পাঠাইয়া দেন। হযরত উমার (রা) প্রবীণ সাহাবীদের সংগে নিয়া স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণের জন্য ‘জার’ বন্দরে গিয়া হাজির হন।
ধারা-১০২৯
হিংস্র ও ক্ষতিকর জন্তু নিধন জনগণের নিরাপত্তার জন্য দেশের হিংস্র ও ক্ষতিকর জন্তু জানোয়ার হত্যার উদ্দেশ্যে বাইতুল মাল হইতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যইবে।
বিশ্লেষণ
জনগণের নিরাপত্তার জন্য যাহা কিছু করণীয় সরকার তাহাই করিবে এবং এ বিষয়ে বাইতুল মাল অর্থ যোগান দিবে। এ সম্পর্কে শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী (র) হুজ্জাতুল্লাহি বালিগা কিতাবে .. … বা নাগরিক রাজনীতি শীর্ষক অধ্যায়ে ক্ষতিকর হিংস্র জীব হত্যা ও ধ্বংস করাকে ইহার অন্তর্ভুক্ত করিয়াছেন।৪৭।
ইসলামী খেলাফতকালে হযরত উসমান (রা) সর্বপ্রথম একাজ আরম্ভ করিয়াছেন। অতঃপর যাসী বাঈন’ নামক স্থানে যখন বিছার উৎপাৎ ও অত্যাচার সীমা ছাড়াইয়া যায়, জনগণ অতিষ্ঠ হইয়া উঠে, তখন রাষ্ট্রের পক্ষ হইতে বিছা নিধনের জন্য তোক নিয়োগ করা হয়। এ সম্পর্কে মুজামুল’ বুলদান গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হইয়াছে। সিজিস্তানে সাপের আধিক্য ছিল। হযরত উসমানের (রা) খেলাফতকালে হযরত আবদুর রহমান ইবন সায়মা সন্ধিসূত্রে সিজিস্তান জয় করেন। তখন সন্ধিচুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল খারপাসত ও বেজী যাহারা সাপ ভক্ষণ করে, তাহা মারিতে পারিবে না।
৪৪৪
ধারা-১০৩০
জন-উন্নয়নমূলক কাজ জনগণের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়নে বাইতুল মাল সম্ভব্য সকল প্রকারের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করিবে।
বিশ্লেষণ
বাইতুল মালের অন্যতম উদ্দেশ্য হইতেছে জনগণের কল্যাণ সাধনে সার্বিক সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান। এ সম্পর্কে আল্লামা শামী বলিয়াছেন যে, সকল প্রকারের জনকল্যানমূলক কাজের যিম্মাদার রাষ্ট্র। জনগণের যখন যাহার প্রয়োজন হয় তাহার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। নিম্নে কতিপয় অপরিহার্য খাতের উল্লেখ করা হইল।
(১) ফাঁড়ি ও সরাইখানা নির্মাণঃ মুসাফির, ব্যবসায়ী ও পথিকদের সুখ-সুবিধার দিকে হযরত উমার (রা)-এর তীক্ষ্ণ নজর ছিল। মক্কা-মদীনার মধ্যবর্তী স্থানে ঘরবাড়ী নির্মাণের জন্য যখন জনগণ খলীফার নিকট অনুমতি লাভের আবেদন জানায় তখন তিনি এই শর্তে অনুমতি দিয়াছিলেন যে, মুসাফির ছায়া ও পানির বেশী হকদার। মাকরিযীর গ্রন্থে বর্ণিত যে, তিনি মক্কা মদীনার রাস্তায় এমন অনেক লোক নিযুক্ত করিয়াছিলেন যাহাদের একমাত্র কাজ ছিল পথহারা লোক ও কাফেলাকে গন্তব্য স্থানে পৌঁছাইয়া দেওয়া।
(২) মেহমানখানা ও ফাতহুল বুলদান গ্রন্থে বলা হইয়াছে?
أمر عمر رضى الله تعالی عنه ان يتخذ لمن يود من الافاق دارا
L
•••••••••••• 49 1$<3 “হযরত উমার (রা) মুসাফিরদের জন্য বিভিন্ন এলাকায় মেহমানখানা নির্মাণের আদেশ দিয়াছিলেন যেখানে তাহারা অবস্থান করতে পারে”। পরে ক্রমে ক্রমে এ বিষয়ে আরও অনেক উন্নতি সাধিত হয়।
(৩) পুকুর ও খাল ও হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রা) জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে মক্কা ও মদীনায় বহু কূপ ও চৌবাচ্চা নির্মাণ করেন। বীরে রুমা নামক কূপ সম্পর্কিত ঘটনা এবং এই সম্পর্কে মহানবী (সা)-এর ফরমান, কুকুরকে পানি পান করানোর কাহিনী ও এ সম্পর্কেও ফরমান এবং এ জাতীয় বহুবিধ জনহিতকর
৪৪৫
কার্যাদির জন্য উৎসাহব্যাঞ্জক নির্দেশাদি ও বাণী বুখারী ও মুসলিমে বিস্তারিত উল্লেখ আছে। হযরত উসমান (রা) কর্তৃক নিযুক্ত বসরার গভর্নর হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমায়ের (রা) সর্বাগ্রে আরাফাত ময়দানে অনেকগুলি চৌবাচ্চা নির্মাণ করেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা) মক্কা ও মদীনা ব্যতীত অন্যান্য শহরেও অনেক নদী-নালা খনন করেন। সরকারী ব্যবস্থায় যেসব নদী-নালা খনন করা হইয়াছিল তম্মধ্যে নহরে আবু মুসা, নহরে আবু মাকিল, নহরে আমিরুল মুমিনীন প্রভৃতি বিখ্যাত।
(৪) কৃষিসেচ খাল ও কৃষি খাত যে কোন রাষ্ট্রের জন্য অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ রাষ্ট্র কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষির উন্নতির উপর দেশের উন্নতি নির্ভর করে। এই সম্পর্কে ইমাম আবু ইউসুফ (র) কিতাবুল খারাজে উল্লেখ করেন?
واذا احتاج أهل السواد الى کرى انهارهم العظام التي تاخذ من دجلة والفرات كريت لهم وكانت النفقة من بيت المال واما المثبوق والمسنيات والريدات التي تكون على في دجلة والفرات وغيرها من الأنهار العظام فا النفقة على هذا كله من بيت المال (کتاب الخراج
• (a – “অতঃপর সওয়াদবাসী যখন দিজলা ও ফোরাতের পানি বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা সৃষ্টির মাধ্যমে ভাড়া প্রদানের ভিত্তিতে সরবরাহের আবেদন জানায়, তাহাদের সে আবেদন মঞ্জুর করা হয় এবং বাইতুল মাল থেকে তাহার যাবতীয় ব্যয় বহন করা হয়। ঠিক তেমনি নদী ও সমুদ্র উপকূল ভগ্নাংশ, সেচ ব্যবস্থার মুখাপেক্ষী জমি, ডাকঘর যাহা কিছু দিজলা ও ফোরাত প্রভৃতি নদী-নালার মুখাপেক্ষী, সব কিছুর জন্য
পানি সরবরাহের যাবতীয় ব্যয়ভার বাইতুল মাল হইতে নির্বাহ করা হইত।
ধারা-১০৩১
কর সগ্রাহক নিয়োগ সরকার বাইতুল মালের কর সংগ্রহের জন্য কর আদায়কারী নিয়োগ করিবে।
বিশ্লেষণ
বাইতুল মাল সমৃদ্ধ করিবার অন্যতম মাধ্যম হইতেছে কর। এই কর আদায় করিবার জন্য কর সগ্রাহক নিয়োগ আবশ্যক এবং সরকার এই পদের জন্য তোক
৪৪৬
নিয়োগ করিতে পারিবেন। ৮ম হিজরী সনে মক্কা বিজয়ের পর যাকাত প্রদান বাধ্যতামূলক হইলে রাসূলুল্লাহ (সা) উহা আদায়ের জন্য তোক নিয়োগ করেন। যেমনঃ খায়বর, ফাদাক, ওয়াদিল কুরা, কুরা আরাবিয়াহ এবং তায়মা ইত্যাদি এলাকায় কর সংগ্রাহকদেরকে নিয়োগ দেওয়া হইয়াছিল। হযরত আমর ইবনুল আস সামী মহানবী (সা)-এর কর সংগ্রাহকরূপে প্রথমে ওমান সফরে যান। ৯ম হিজরীতে হযরত মুয়াজ ইবন জাবাল ইয়ামনের গর্ভনর নিযুক্ত হইবার পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কর আদায়কারী হিসাবে কুরা আরাবিয়াতে গমন
করিয়াছিলেন।৪৯
অনুরূপভাবে হযরত ওয়ালিদ ইবনে উকবা উমাবী বনু মুসতালিক গোত্রের মুসলমানদের কর আদায়কারী হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণকে যদিও সাধারণভাবে উলাত (গভর্নর) বলা হইত এবং তাহারা নিজ নিজ প্রশাসনিক এলাকা হইতে কর আদায়ের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকিতেন, তবুও আবার বিশেষ বিশেষ কর্মকর্তাগণকেও করদাতাহাদের নিকট হইতে সরাসরি কর আদায়ের জন্য নিযুক্ত করা হইত।৫০
ধারা-১০৩২
কর সংগ্রাহকদের শ্রেণীবিভাগ বাইতুল মালের জন্য নিয়োজিত কর সংগ্রাহগণ সাধারণত দুই শ্রেণীভুক্তঃ (ক) কেন্দ্রীয় কর সংগ্রাহক ও (খ) স্থানীয় কর সংগ্রাহক।
বিশ্লেষণ
বাইতুল মালের কর সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ সাধারণত দুই শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। (এক) সরাসরি কেন্দ্র হইতে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ, তাহারা প্রকৃত করদাতাহাদের নিকট যাইতেন না। তাহারা নিজেদের এলাকার বা গোত্রের সদর দফতরে অবস্থান করিয়া স্থানীয় কর আদায়কারীগণের নিকট হইতে তাহাদের সংগৃহীত কর গ্রহণ করিতেন এবং আদায়কৃত কর কেন্দ্রীয় বাইতুলমালে প্রেরণ করিতেন।
(দুই) অপরপক্ষে স্থানীয় কর সগ্রাহক বলিতে তাহাদেরকে বুঝানো হইয়াছে যাহারা জনগণের নিকট হইতে সরাসরি কর আদায় করেন। উল্লেখ্য যে, স্থানীয় কর সংগ্রাহকগণ কখনও কখনও আদায়কৃত কর সরাসরি কেন্দ্রীয় বাইতুল মালেও
৪৪৭
প্রেরণ করিতে পারে। যেমন রাসূলুল্লাহ (সা)-এর যুগে স্থানীয়ভাবে নিযুক্ত কর সংগ্রাহকগণ কখনও তাহাদের আদায়কৃত কর সরাসরি তাঁহার নিকট পাঠাইয়া দিতেন।৫১ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সকল কর সগ্রাহকগণকে সাধারণত নিয়োগ পত্র দেওয়া হইত। উহাতে কর সংগ্রাহক ও জনগণের প্রতি বিভিন্ন নির্দেশ দেওয়া থাকিত।
ধারা-১০৩ কর হিসাবে সর্বোত্তম মাল গ্রহণ না করা কর সংগ্রাহকগণ জনগণের নিকট হইতে তাহাদের মালের মধ্যে বাছাইকৃত সর্বোকৃষ্ট মাল গ্রহণ করিতে পারিবেন না।
বিশ্লেষণ
কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সকল কর সংগ্রাহককেই সাধারণত একটি নিয়োগপত্র দেওয়া হইত। তাহাতে শুধু সংশ্লিষ্ট কর সংগ্রাহকই নহে, জনসাধারণের জন্যও নির্দেশ লিখিত থাকিত। ইবন সাদ রাসূলুল্লাহ (সা)-এর একটি পত্রের কথা উল্লেখ করিয়াছেন। পত্রটি সাদ হুযায়ম অথবা কুজাহ ও জুযাম গোত্রের লোকদেরকে উদ্দেশ্য করিয়া লেখা ছিল। পত্রে তিনি সদাকার ফারাজ (নির্দিষ্ট পরিমাণ) বর্ণনা করিয়া নির্দেশ দিয়াছেন যে, তাহারা যেন তাহার দুইজন দূত উবাইদ এবং আনবাসা অথবা তাহাদের প্রতিনিধির নিকট নিজেদের সদাকাহ এবং খুমুস প্রদান করেন।৫২
হযরত আমর ইবন হাযম এবং ওয়াইল ইবন হুজর আল-হাদরামী যাহারা যথাক্রমে নাজরানের অধিবাসী এবং হাদারামাতের আকিয়ালগণের নিকট হইতে সদাকাহ আদায় করিতেন এবং এসকল কর সগ্রাহকদেরকে রাসূলুল্লাহ (সা) বিশেষ বিশেষ নির্দেশ প্রদান করিতেন। যেমন জনগণের নিকট হইতে যেন তাহাদের সম্পদের শ্রেষ্ঠ বা পছন্দের অংশ (কারাইম) গ্রহণ করা না হয়। কাহারো প্রতি অন্যায় এবং জুলুম না করা হয়। কোন প্রকারের দুর্নীতির আশ্রয় যেন না নেওয়া হয় বা পাওনার অতিরিক্ত কিছু আদায় না করা হয়।
তাহাদের আরও নির্দেশ দেওয়া হইত যে, সদাকাহ (যাকাত) যেন লোকদের চারণ ভূমিতে গিয়া গ্রহণ করা হয়। ৫৪ ইহার দ্বারা বুঝানো হইত যে, কর আদায়কারীগণ যেন জনগণের নিকট যান এবং জনগণকে যেন তাহাদের নিকট আসিতে বাধ্য করা না হয়।
৪৪৮
নাসাঈ (L.) শরীফের একটি হাদীসে হযরত সুয়াইদ ইবন গাফাল বর্ণনা করিয়াছেন যে, একবার একজন কর সগ্রাহক তাহাদের নিকট আসিয়া কর হিসাবে সকল গবাদি পশুর হিসাব গ্রহণ করিলেন। কিন্তু সদাকাহ হিসাবে উহা গ্রহণের অনুমতি ছিল না। সেই একই ঘটনায় একজন লোক খুবই ভাল জাতের একটি উটনী লইয়া আসিল। কিন্তু তিনি সেটি গ্রহণ করিতে অস্বীকার করিলেন এবং সাধারণ মূল্যের অপর একটি উট গ্রহণ করিলেন।৫
অনুরূপভাবে দুইজন কর সংগ্রাহক একজন মুসলিমের নিকট গিয়া তাহার নিকট হইতে চারণরত গবাদী পশুর সদাকাহ তলব করেন। চারণকারী একটি দুধেল ছাগী কর হিসাবে প্রদান করিতে চাহিলে তাহারা উহা গ্রহণ করিতে সম্মত হন নাই এই বলিয়া যে, উন্নত জাতের সেই ছাগীটি গ্রহণ করিবার অনুমতি তাহাদের দেওয়া হয় নাই। সেই ব্যক্তি অপর একটি সাধারণ ছাগল দিলে কর সংগ্রাহকগণ তাহা গ্রহণ করেন।৫৬
ধারা-১০৩৪
কর সংগ্রাহকদের নিয়োগ পদ্ধতি বাইতুল মালের জন্য কর সংগ্রাহকগণ স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে নিয়োগ লাভ করিতে পারেন।
বিশ্লেষণ
বাইতুল মালের পক্ষে নিয়োজিত কর আদায়কারী ব্যক্তিগণের চাকুরী স্থায়ীভাবেও হইতে পারে আবার অস্থায়ীভাবেও হইতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সা) ও সাহাবীদের সময় এই দুই প্রকার কর আদায়কারীর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য কিতাব হইতে জানা যায় যে, কেন্দ্রীয় কর আদায়কারীগণ প্রায় ক্ষেত্রে স্থায়ীভাবে তাহাদের পদে বহাল থাকিতেন। এইরূপ একজন ছিলেন হযরত আমর ইবনুল আস (রা)। মক্কা বিজয়ের পর তাহাকে কেন্দ্রীয় কর আদায়কারী হিসাবে ওখানে প্রেরণ করা হইয়াছিল। ৯ম হিজরীর প্রথম দিকে তাহাকে হাওয়াযিন অঞ্চলে কর আদায়কারী হিসাবে দেখা যায়। সেই একই সময়ে তিনি ফাজারাহ/ গাতফান অঞ্চলের কর আদায় করিয়াছিলেন বলিয়া জানা যায়। অতঃপর তাহাকে “খুযায়াহ”-এর কর আদায়কারী হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। তিনি সেই অঞ্চলেই থাকিতেন। পরে ১০ম হিজরীতে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বিদায় হজ্জের পরে পুনরায় তিনি ওমানের কর আদায়কারী হিসাবে প্রেরিত হন। তখন তাহাকে এই নিশ্চয়তা
৪৪৯
প্রদান করা হয় যে, পূর্বাঞ্চলে দায়িত্ব পালন শেষ করিলে পুনরায় তাহাকে পূর্বাঞ্চলের কর্মস্থলে পাঠানো হইবে। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ওফাতের আগে তিনি আর মদীনাতে ফিরিয়া আসিতে পারেন নাই। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ইন্তেকালের পর হযরত আবু বাকর সিদ্দীক (রা) তাহার খেলাফতকালে তাহাকে প্রদত্ত রাসূলুল্লাহ (সা)-এর
ওয়াদা মোতাবেক পূর্বাঞ্চলের কর্মস্থলে পুনরায় নিয়োগ দিয়াছিলেন।
অনুরূপভাবে আনবাসা, আব্বাদ ইবন বিশর, বুরাইদা ইবন হুসাইব, রাফে ইবন মাকীস, দাহহাক ইবন সুফিয়ান, ইকরামা ইবন আবু জাহল, হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রা) প্রমুখ সাহাবী ছিলেন স্থায়ীভাবে নিযুক্ত কর আদায়কারী কর্মকর্তা। তাহারা কোনরূপ বাধা বিঘ্ন ব্যতীত রাসূলুল্লাহ (সা)-এর ওফাত পর্যন্ত নিজ নিজ পদে বহাল ছিলেন।
তবে কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, কেন্দ্রীয় কর আদায়কারীগণ তাহাদের পদে অস্থায়ীভাবে নিযুক্ত ছিলেন। বস্তুত তাহাদের দায়িত্ব শেষ হইবার পর তাহারা পদত্যাগ করিয়াছিলেন। উদাহরণস্বরূপ হযরত মুয়াবিয়া ইবন আবু সুফিয়ান হাদামাওতের ওয়াইল ইবন হুজরদের এলাকাতে প্রেরিত হইয়াছিলেন এবং তাহাদের নিকট হইতে কর আদায় করিবার পর মদীনা ফিরিয়া আসেন। অনুরূপভাবে হযরত আলী ইবন আবু তালিব (রা) “আযদ” গোত্রের একটি শাখার লোকদের নিকট হইতে সদাকাহ (যাকাত) ও জিয়া আদায় করিয়া মদীনাতে ফিরিয়া আসিয়াছিলেন। তামীম গোত্র যখন রাসূলুল্লাহ (সা)-এর কর সংগ্রাহক বুসর ইবন সুফিয়ানকে খুজায়ার বনু বাকরগণের নিকট হইতে কর আদায়ে বাধা দেন তখন উয়াইনা ইবন হিসন কর আদায় করিতে সক্ষম হইয়াছিলেন।
এই সকল উদাহরণ দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর দুই রকম কর আদায়কারী ছিলেন অধিকাংশই ছিলেন। স্থায়ী কর্মকর্তা, আর মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছিলেন অস্থায়ী।
ধারা-১০৩৫
কর আদায়কারীর যোগ্যতা বাইতুল মালের জন্য কর আদায়কারী হিসাবে নিযুক্তির শর্ত হইতেছে প্রার্থীকে : (ক) মুসলমান, আকেল, বালেগ হইবার সাথে সাথে বিশেষ মেধা ও দক্ষতা সম্পন্ন হইতে হইবে;
(খ) কর আদায়কারী অঞ্চল সম্পর্কে ভৌগোলিক জ্ঞান ও সামগ্রিক অবস্থা এবং অধিবাসীগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকিতে হইবে; ২৯,
“
৪৫০
(গ) সকল প্রকারের পার্থিব লোভ-লালসামুক্ত চারিত্রিক দৃঢ়তা, উচ্চ নৈতিকতাবোেধ সম্পন্ন হইতে হইবে।
বিশ্লেষণ
কর আদায়কারী পদে নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে কিছু কিছু যোগ্যতা বিবেচনা করা হইত। সবচাইতে বড় যোগ্যতা ছিল মেধা ও দক্ষতা। কোন এলাকা সম্বন্ধে ভৌগোলিক জ্ঞান ও সামগ্রিক অবস্থা এবং অধিবাসীগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। তাহা ছাড়া চারিত্রিক দৃঢ়তা, উচ্চ নৈতিকতাবােধ এবং পার্থিব লোভ-লালসার প্রতি নিস্পৃহতা ছিল নিযুক্তি লাভের অন্যান্য যোগ্যতা। যেমনঃ একবার দু’জন লোক হযরত আবু মূসা আল-আশআরীর সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট আসিল এবং কর আদায়কারী পদে নিযুক্তির আবেদন করিল। রাসূলুল্লাহ (সা) তাহাদের বিষয়ে হযরত আবু মূসা আল-আশআরীর অভিমত জিজ্ঞাসা করিলে তিনি তাহাদের ইচ্ছা সম্পর্কে জানেন না বলিয়া জানাইয়া দেন। রাসূলুল্লাহ (সা) তাহাদের আবেদন এই বলিয়া বাতিল করিয়া দেন যে, আমরা এমন লোককে নিয়োগ দান করি না যাহারা চাকুরীর পিছনে ঘুরিয়া বেড়ায়। এই কথা বলা সত্বেও অল্প কিছু দিন পর রাসূলুল্লাহ (সা) স্বয়ং হযরত আবু মূসা আল-আশআরীকেই ইয়ামনের এক বিশাল এলাকার ওয়ালী (গভর্নর) হিসাবে প্রেরণ করিয়াছিলেন।৫৮
রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁহার নিজের কোন আত্মীয়-স্বজনকে অর্থাৎ বনু হাশিম গোত্ৰীয়গণকে কর আদায়কারী হিসাবে নিয়োগ লাভের অযোগ্য বলিয়া ঘোষণা করিয়াছিলেন। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা) বংশীয়গণের (আহলুল বায়ত) জন্য সদাকাহ গ্রহণের অনুমতি ছিল না। ওয়াকিদীর মতে, সম্ভবত খায়বার অভিযানের সময় অথবা পরে আবদুল মুত্তালিব ইবনে রাবীয়াহ এবং ফাদল ইবনুল আব্বাস তাহাদের পিতার আদেশে কর আদায়কারী হিসাবে নিয়োগের জন্য রাসূলুল্লাহ (সা)-কে অনুরোধ করিয়াছিলেন। কিন্তু তাহারা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বংশের লোক বলিয়া তিনি তাহাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। ৫৯
তথ্য উৎস্যসমূহ হইতে ধারণা পাওয়া যায় যে, ৯ম হিজরী সনে রাসূলুল্লাহ (সা) আল-জিরানাহ হইতে প্রত্যাবর্তনের অল্প কিছুকাল পর বিভিন্ন অঞ্চলে কর সংগ্রহের জন্য একদল কর আদায়কারী প্রেরণ করিয়াছিলেন। কিন্তু সদাকাহ আদায়ের জন্য যে দল প্রেরণ করিয়াছিলেন, ইহাই প্রথম বা একমাত্র উদাহরণ নহে। ইতিহাস
৪৫১
হইতে জানা যায় যে, ইহার পূর্বেও বিভিন্ন অঞ্চলে কর আদায়কারী হিসাবে লোক নিয়োগ করিয়াছিলেন। যখনই কোন এলাকা বিজিত হইয়াছে অথবা কোন গোত্র ইসলাম কবুল করিয়াছে তখনই সেখানে কর আদায়কারী নিযুক্ত করা হইয়াছে। ইহার পক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায় তাবারীর একটি উল্লেখে, যেখানে তিনি বলিয়াছেন যে, যে অঞ্চল ইসলামের পদানত হইত সেখানেই রাসূলুল্লাহ (সা) কর আদায়কারী হিসাবে লোক নিয়োগ দিতেন। এই ঘটনার আরও প্রমাণ পাওয়া যায় ৯ম হিরজীর মুহররম মাসে প্রেরিত কর আদায়কারীর তালিকা হইতে, যাহা ওয়াকিদী ও ইবন সাদ বৰ্ণনা করিয়াছেন।
ধারা-১০৩৬
খারিস নিয়োগ করা বাইতুল মালের পক্ষে কর আরোপের জন্য উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য সরকার খারিস (কর নির্ধারক) নিয়োগ করিতে পারিবেন।
বিশ্লেষণ
জমিতে উৎপাদিত ফসলের বিষয় আলোচনায় খায়বার ও তাহার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ইহূদী খামার ও বাগিচার ফল-ফসলের উপর কর নির্ধারক (খারিস) সম্পর্কে একটি আভাস দেওয়া হইয়াছে। তাহা ছাড়া মুসলিম শরীফে কর নির্ধারণ সম্পর্কে বলা হইয়াছে যে, একবার রাসূলুল্লাহ (সা) নিজেই একটি খেজুর বাগিচার উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ নির্ণয় করিয়াছিলেন। তাবুক অভিযানকালে তিনি ওয়াদী আল-কুরাতে পৌছাইয়া সেখানে জনৈকা মহিলার একটি বাগিচা দেখিতে পাইলেন। তিনি তাহার সঙ্গীগণকে ইহার উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ নির্ধারণ করিতে বলিলেন এবং নিজেও পরিমাণ করেন ১০ ওয়াসাক। অতঃপর তিনি মালিককে নির্দেশ দিলেন যে, তিনি ফিরিয়া না আসা পর্যন্ত সেগুলি যেন হিসাব করিয়া রাখিয়া দেওয়া
হয়।
অবশ্য পরে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নির্ধারিত পরিমাণ ফসলই অর্থাৎ ১০ ওয়াসাক পরিমাণ ফসলই হইয়াছিল। এই হাদীস দ্বারা ইহা নিশ্চিতভাবে ধরিয়া লওয়া যায় যে, সেই উৎপাদিত ফসলের উপরই কর ধার্য হইয়াছিল। ইহা হইতে ধারণা করা যায় যে, ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসরত সকল নাগরিকের আবাদযোগ্য ভূমি, ফসলের মাঠ ও ফলের বাগিচার উৎপাদনের হিসাব নির্ধারণ এবং তাহার উপর কর আরোপ করা হইত।
৪৫২
তৎকালীন আরবের সবচাইতে শ্রেষ্ঠ খারিস ছিলেন হযরত আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা (রা)। খায়বারের প্রত্যেক ফসলের মৌসুমে তিন উৎপাদিত ফসলের হিসাব গ্রহণ করিতেন এবং মূতা যুদ্ধে শহীদ হইবার পূর্ব পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করিয়া যান। কাহারও মতে তাহার স্থলে আবু হায়সাম ইবনুত তায়্যিহান আওসী কর আদায়কারী নিয়োগ লাভ করেন, অন্যান্যদের মতে জাব্বার ইবন সাখর নিয়োগ লাভ করিয়াছিলেন। শেষোক্তৃ মত অনুযায়ী যায়দ ইবন সালামা খাজরাজী জাব্বার ইবন সাখর-এর সঙ্গে যুক্ত হইয়া খায়বারের উৎপাদিত ফসলের হিসাব নির্ধারণ করিতেন।
উস গ্রন্থে উদ্ধৃত একটি হাদীস অনুযায়ী উমাইয়া বংশীয় আমর ইবনে সাঈদ ছিলেন খায়বার অঞ্চলের উৎপাদিত ফসলের হিসাব গ্রহণকারী। এই অঞ্চলের অপর একজন খাররাস (হিসাব গ্রহণকারী কর্মকর্তা) ছিলেন হযরত আবু হাসমাহ আমের ইবন সাঈদ আল-খাজরাজী। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জীবনের শেষদিকে তিনি তাহাকে সেই সম্মানজনক পদে নিয়োগ দিয়াছিলেন এবং তিনি এই পদে হযরত আলী (রা)-এর খেলাফতের শেষ পর্যন্ত (৬৬১ খৃ.) বহাল ছিলেন। তিনি একটানা দীর্ঘ ত্রিশ বৎসর তাহার এই পদে বহাল ছিলেন। অনুরূপভাবে ফারওয়াহ ইবন আমর। আল-বায়াদী ছিলেন মদীনাতে উৎপাদিত ফসলের হিসাব গ্রহণকারী কর্মকর্তা। বিশেষ করিয়া তিনি খেজুরের উৎপাদন হিসাবে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন।
ধারা-১০৩৭
অমুসলিমদের সাহায্য করা বাইতুল মাল হইতে সরকার অমুসলিমদিগকে সাহায্য করিতে পারিবেনঃ
তবে শর্ত থাকে যে, এইসব সাহায্য শুধু দুস্থ ও অসহায়দেরকে দেওয়া যাইবে।
বিশ্লেষণ
বাইতুল মালের উপর অমুসলিমদেরও অধিকার রহিয়াছে। ইসলামের অর্থনীতিতে যেসব স্থানে “মিসকীন” শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে এবং রাষ্ট্রীয় ধন-সম্পদে তাহাদের অধিকারের কথা ঘোষণা করা হইয়াছে, সেই সকল ক্ষেত্রেই ধর্মমত নির্বিশেষে সকল নিঃস্ব দরিদ্র নাগরিকদেরকেই বুঝানো হইয়াছে। হযরত আবু
৪৫৩
বাকর সিদ্দীক (রা)-এর খেলাফত কালে ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষ হইতে হযরত খালিদ ইবন ওলীদ (রা) হীরাবাসীদের সহিত যে সন্ধি চুক্তিপত্র সাক্ষর করিয়াছিলেন, উহাতে তিনি স্পষ্টভাবেই লিখিয়াছিলেন যে,
وجعلت لهم انيماشيخ ضعف عن العمل او اصابته افة من الافات او كان غنيا فافتقر وصار اهل دينه يتصدقون عليه جزيته وعيل من بيت المال المسلمين وعياله مااقام بدار الهجرة .
“এবং আমি তাহাদিগকে এই অধিকার দান করিলাম যা তাহাদের কোন বৃদ্ধ যদি উপার্জন ক্ষমতা হারাইয়া ফেলে কিংস্থা কাহারও উপর কোন আকস্মিক বিপদ আসিয়া পড়ে অথবা কোন ধনী ব্যক্তি যদি সহসা এতদূর দরিদ্র হইয়া পড়ে যে, তাহার সমাজের লোকেরা তাহাকে ভিক্ষা দিতে শুরু করে, তখন তাহার উপর ধার্য করা জিয়া কর প্রত্যাহার করা হইবে। সেই সংগে তাহার ও তাহার সন্তানদের ভরণপোষণ ইসলামী রাষ্ট্রের বাইতুল মাল হইতেই করা হইবে, যতদিন সে ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিক হইয়া থাকিবে”।৬১
হযরত উমার (রা) এক বৃদ্ধ ব্যক্তিকে ভিক্ষা করিতে দেখিয়া তাহাকে ভিক্ষার কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন সে বলিল, আমাকে জিয়া আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে কিন্তু তাহা আদায় করিবার কোন সামর্থ্য আমার নাই। এই কথা শুনিয়া তাহাকে তিনি নিজের ঘরে নিয়া গেলেন এবং বাইতুল মালের খাজাঞ্চিকে ডাকিয়া আদেশ করিলেন, ইহার অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রাখিও, ইহার জন্য ভাতা নির্দিষ্ট করিয়া দাও এবং ইহার নিকট হইতে জিয়া উসুল বন্ধ করিয়া দাও। অতঃপর বলিলেন, আল্লাহর শপথ! ইহারা যৌবন শক্তিকে আমার কাজে ব্যবহার করিবে, আর আমি তাহাকে বার্ধক্যের অক্ষম অবস্থায় অসহায় ছাড়িয়া দিব ইহা কোন মতেই ইনসাফ হইতে পারে না।
ধারা-১০৩৮
“বাইতুল মাল” নামকরণ ইসলামী রাষ্ট্রের সরকারী ভাণ্ডারকে “বাইতুল মাল” নামে অভিহিত করা যাইতে পারে।
বিশ্লেষণ
ইসলামী রাষ্ট্রের সরকারী অর্থ ভাণ্ডারকে বাইতুল মাল নামে অবহিত করা যায় বা অন্য নামও গ্রহণ করা যাইতে পারে। যদিও এই নাম যে রাসূলুল্লাহ (সা)
৪৫৪
দিয়াছিলেন তাহার কোন তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে অবশ্য বহু হাদীসের উদ্ধৃতির মাধ্যমে এ কথা জানা যায় যে, সরকারী কোন অর্থভাণ্ডার অবশ্যই ছিল। কেননা ফায়, যাকাত, খুমূস সদাকার মালসমূহ এই সকল বিষয়ের পৃথক খাতা বা রেজিষ্টার ছিল এবং প্রয়োজন মোতাবেক উহার ব্যবহার করা হইত (মুসনাদে আহমাদ, ১খ, পৃ. ৪৫৯; কিতাবুল খারাজ, পৃ. ৩৬)।
অতঃপর হযরত উমার ফারুক (রা)-এর খেলাফতকালে এই নামে অর্থাৎ সরকারী অর্থভাণ্ডারকে “বাইতুল মাল” নামে অভিহিত করা হয়। তাহার খেলাফতকালেই বিভিন্ন রাজ্যে প্রাদেশিক বাইতুল মালও প্রতিষ্ঠা করা হইয়াছিল এবং প্রাদেশিক বাইতুল মালে যদি অর্থসংকট দেখা দিত সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাইতুল মাল হইতে উহার ঘাটতি পূরণ করা হইত। অনুরূপভাবে প্রাদেশিক বাইতুল মালে
খরচের অতিরিক্ত অর্থ কেন্দ্রীয় বাইতুল মালে ফেরত পাঠানো হইত।
ধারা-১০৩৯
বাইতুল মালের মালিকানা বাইতুল মালে কাহারও একক ব্যক্তিগত মালিকানা নাই। ইহার উপর সকল নাগরিকের যৌথ অধিকার রহিয়াছে।
বিশ্লেষণ
বাইতুল মাল ইসলামী রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের সম্মিলিত মালিকানা সম্পদ। এইজন্যই বলা হইয়াছে?
مال بيت المال عامة المسلمن .
“বাইতুল মালের সম্পদ মুসলমানদের সম্মিলিত সম্পদ”। বাইতুল মালে সঞ্চিত রাষ্ট্রীয় সম্পদে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকেরই সমান অধিকার স্বীকৃত। কি রাষ্ট্রপ্রধান, কি সরকারী কর্মচারী বা সাধারণ মানুষ, উহার উপর কাহারও একচেটিয়া বিশেষ অধিকার স্বীকৃত নহে। এই প্রসংগে রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেনঃ
ماأعطيكم ولا أمنعكم إنما أناقاسم اضع حيث أمرت .
“আমি তোমাদেরকে দানও করি না, নিষেধও করি না, আমি তো বন্টনকারী মাত্র। আমাকে যেরূপ আদেশ করা হইয়াছে আমি সেইভাবেই বণ্টন করিয়া থাকি”।৬২
৪৫৫
ধারা-১০৪০ বাইতুল মাল ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা
বাইতুল মাল হইতে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বিধান করিতে হইবে।
বিশ্লেষণ
ইসলামী রাষ্ট্রের বাইতুল মালে সঞ্চিত ধন সম্পদের উপর সর্বসাধারণের সাধারণ অধিকার স্বীকৃত। রাষ্ট্রের সীমার মধ্যে কোন একজন নাগরিকও যাহাতে
মৌলিক প্রয়োজন হইতে বঞ্চিত থাকিতে বাধ্য না হয় তাহার ব্যবস্থা করা বাইতুল মালের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব। সমাজের স্বচ্ছল অবস্থার লোকেরা তাহাদের দরিদ্র নিকটাত্মীয় ও পাড়াপ্রতিবেশীর প্রয়োজন পূরণ করিবে। তাহার পরও যদি কেহ তাহার মৌলিক প্রয়োজন পূরণে অসমর্থ থাকিয়া যায় তাহা হইলে তাহা পূরণের দায়িত্ব হইবে বাইতুল মালের। এ সম্পর্কে হযরত উমার (রা) বলেনঃ
والله مااحد احق بهذا المال من احد وما انا باحق به من احد ووالله ما من المسلمين احد الآ وله في هذا المال نصيب ولئن بقيت لكم لياتين الراعی بجبل صنعاء حظه من هذا المال وهو
• a3K• • “আল্লাহর শপথ! এই বাইতুল মালের উপর কেহ অপর কাহারও অপেক্ষা অধিক প্রাপ্তির দাবি করিতে পারে না। আমি নিজেও আবার কাহারও অপেক্ষা অধিক পাওয়ার দাবিদার নহি। আল্লাহর শপথ! প্রত্যেক মুসলিমের জন্যই এই সম্পদে নির্দিষ্ট অংশ রহিয়াছে। আর আমি যদি বাঁচিয়া থাকি তাহা হইলে সানয়া’ পর্বতের রাখাল নিজ স্থানে পশু চরাইবার কাজে ব্যস্ত থাকিয়াও এই মাল হইতে তাহার নিজের ন্যায্য অংশ লাভ করিতে পারিবে”।
ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিকদের এই মৌলিক প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা করা খলীফার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। যে খলীফা তাহার নাগরিকদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধান করিতে পারে না, মনে করিতে হইবে সে তাহার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করিতেছে না। এই পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ (সা) বলিয়াছেন?
من والاه الله عز وجل شيئا من أمور المسلمين فاحتجب دون حاجتهم وخلهم وفقرهم احتجب الله تعالى عنه دون حاجته وخلته وفقره (رواه أبو داؤد) .
৪৬
“যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের দায়িত্বপূর্ণ কাজসমূহ আঞ্জাম দেওয়ার কর্তৃত্ব দিবেন সে যদি জনগণের প্রয়োজন পূরণ ও অভাব মোচনের দায়িত্ব পালন হইতে বিরত থাকে, তাহা হইলে আল্লাহ তায়ালাও সেই ব্যক্তির প্রয়োজন ও
অভাব মোচন হইতে বিরত থাকিবেন”।৬৩
ধারা-১০৪১ বাইতুল মালে রাষ্ট্রপ্রধানের কর্তৃত্ব রাষ্ট্রপ্রধান বাইতুল মালের মাল শরীয়াত বর্ণিত পন্থায় খরচ করিবেন।
বিশ্লেষণ
বাইতুল মাল যদিও ইসলামী রাষ্ট্রের খলীফার নিয়ন্ত্রণেই থাকে এবং তাহারই নিদের্শক্রমে পরিচালিত হয়, কিন্তু তবুও তিনি ব্যক্তিগতভাবে তাহার নিজস্ব কোন কর্তৃত্বই উহার উপর স্বীকৃত বা কার্যকর হইতে পারেন না। কারণ বাইতুল মাল সম্পর্কে বলা হইয়াছে?
ان المال كان بيده بمنزلة الوديعة بجماعة المسلمين .
“রাষ্ট্রীয় ধন-সম্পদ মুসলিম নাগরিকদের পক্ষ হইতে খলীফার নিকট আমানত স্বরূপ” ৪
জাতীয় কোষাগারের উপর একজন বাদশাহ বা একজন ডিকটেটরের যে স্বেচ্ছাচারমূলক কর্তৃক স্থাপিত থাকে এবং তাহারা যেভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ভোগ ব্যবহার করে, ইসলামী রাষ্ট্রের বাইতুল মালের উপর খলীফাতুল মুসলিমীনের অনুরূপ কর্তৃত্ব স্থাপিত হইতে পারে না। হযরত উমার ফারুক (রা) হযরত সালমান ফারেসীকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, আমি বাদশা না খলীফা? উত্তরে সালমান (রা) বলিয়াছিলেন, “ইসলামী রাষ্ট্রের বাইতুল মাল হইতে একটি মুদ্রা বা তদপেক্ষাও কম পরিমাণ অর্থ আপনি যদি অপব্যয় বা অপচয় করেন তবে আপনি বাদশাহ, অন্যথায় আপনি খলীফা”।
৪৫৭
ধারা-১০৪২
বাইতুল মাল ঋণদান সরকার তাহার দেশের জনগণকে বাইতুল মাল হইতে কর্য অথবা ঋণ (দায়ন) দান করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
ইসলামী অর্থনীতি একদিকে সূদী কারবার ও সকল প্রকার সূদ ভিত্তিক লেনদেন চিরতরে হারাম করিয়া দিয়াছে, অপরদিকে নাগরিকদের প্রয়োজন অনুযায়ী কর্য ও ঋণ দানেরও ব্যবস্থা করা হইয়াছে। আদান-প্রদান প্রথম দিকে ব্যক্তিগতভাবেই সম্পন্ন হইত। সাহাবাগণ এবং রাসূলুল্লাহ (সা) লোকদের নিকট হইতে প্রয়োজনে কর্য গ্রহণ করিয়াছেন। কুরআন মজীদে এ সম্পর্কে বিশেষ উৎসাহ প্রদান করা হইয়াছে?
من ذا الذي يقرض الله قرضا حسنا فيضعفه له (البقره اية ۲۶۰)
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিবে আল্লাহ তাহাকে উহার কয়েক গুণ বাড়াইয়া দিবেন” (২৪ ২৪৫)।
সভাবে ঋণ দেওয়ার অর্থ অভাবগ্রস্ত ও দারিদ্র পীড়িত লোকদেরকে নিঃস্বার্থ ঋণ দান করা। অতএব ইসলামী রাষ্ট্রের সরকারী বাজেটে নিঃস্বার্থ ঋণ দেওয়ার একটি খাত অবশ্যই থাকিবে। হযরত উমার (রা)-এর খেলাফতকালে বাইতুল মাল হইতে নিঃস্বার্থ ঋণ দেওয়ার কাজ ব্যাপকভাবে সম্পন্ন হইয়াছিল। সরকারী কর্মজীবী নিজেদের চাকরীর জামানতে বাইতুল মাল হইতে ঋণ গ্রহণ করিতে পারিত। বস্তুত নিঃস্বার্থ ঋণদান সমিতির ইতিহাসে ইসলামী রাষ্ট্রের বাইতুল মালই সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠান।৬৫
ধারা-১০৪৩
উৎপাদনী ঋণ দান সরকার বাইতুল মাল হইতে জনগণকে উৎপাদনী ঋণ প্রদান করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
জনগণের নিজ নিজ প্রয়োজন পূরণ করিবার জন্য যেমন কর্যে হাসানা দেওয়ার ব্যবস্থা করিতে হইবে, অনুরূপভাবে উৎপাদনী কার্যে বিনিয়োগের জন্যও ইসলামী
৪৫৮
রাষ্ট্রের বাইতুল মাল হইতে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা অপরিহার্য। এই ব্যাপারে স্ত্রী-পুরুষ বা মুসলিম-অমুসলিমের মধ্যে কোনরূপ পার্থক্য বা কাহারও প্রতি বিন্দুমাত্র পক্ষপাতিত্ব প্রদর্শন করা যাইবে না। হিন্দু বিনতে উত্বা (রা) হযরত উমার (রা)-এর নিকট হইতে ব্যবসায়ে বিনিয়োগের জন্য বাইতুল মালের চার হাজার মুদ্রা জামিনে গ্রহণ করিয়াছিলেন। বসরার শাসনকর্তা হযরত আবু মূসা আশয়ারী (রা) হযরত আবদুল্লাহ ইবন উমার ও উবাইদা ইবন উমারকে ব্যবসা করিবার জন্য প্রচুর অর্থ ঋণ বাবদ দিয়াছিলেন। কৃষকদিগকেও কৃষিকাজের উন্নতি বিধান, বীজ সগ্রহ ও কৃষি সংক্রান্ত অন্যান্য খরচ যোগাইবার জন্য বিনা লাভে ঋণ দেওয়া ইসলামী রাষ্ট্রের বাইতুল মালের কর্তব্য। ৬৬ হযরত উমার (র) ইবন আবদুল আজিজ (র)-এর সময় অন্ধ গরীব নাগরিকের পথ চলার কাজে সাহায্য করার জন্য এবং পঙ্গু ও অক্ষম লোকদের সেবার জন্য বাইতুল মাল হইতে লোক নিয়োগ করা হইয়াছিল।
ধারা-১০৪৪
ক্ষতিপূরণ দান ইসলামী রাষ্ট্রের কোন সামষ্টিক কাজের জন্য নাগরিকদের বিশেষ কোন ক্ষতি সাধিত হইলে বাইতুল মাল হইতে উহার ক্ষতিপূরণ প্রদান করিতে হইবে।
বিশ্লেষণ
ইসলামী রাষ্ট্রের কোন সামষ্টিক কাজের জন্য কিংবা যুদ্ধের ঘাঁটি নির্মাণ, সৈনিকদের চলাচল অথবা বৈদেশিক আক্রমণের ফলে নাগরিকের বিশেষ কোন ক্ষতি সাধিত হইলে উহার ক্ষতিপূরণ দান করা ইসলামী রাষ্ট্রের কর্তব্য। হযরত উমার ফারুক (রা)-এর নিকট একজন কৃষক আসিয়া অভিযোগ করিল যে, সিরিয়ার একদল সৈন্য পথ অতিক্রম করার ফলে তাহার শষ্যক্ষেত নষ্ট হইয়া গিয়াছে। এই কথা শুনিয়া হযরত উমার (রা) বাইতুল মাল হইতে তাহার ক্ষতিপূরণ বাবদ দশ হাজার দিরহাম দান করিলেন।৬৭
মোটকথা ইসলামী রাষ্ট্রের বাইতুল মালের উপর এইরূপ বিভিন্ন প্রকার খরচের অসংখ্য বিরাট দায়িত্ব আসিয়া পড়ে যাহা পূরণ করা উহার অবশ্য কর্তব্যসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এইসব দায়িত্ব পালনের পরও যদি বাইতুল মালে সম্পদ থাকিয়া যায় তবে উহাও জনকল্যাণে ব্যয় করিতে হইবে।
৪৫৯
ধারা-১০৪৫ বাইতুল মালের জমির শ্রেণীবিভাগ বাইতুল মালের জমি তিন প্রকারের (১) সরকার খুমূস সম্পত্তি হইতে যে জমি নির্বাচন করিয়াছেন; (২) খেরাজী জমিন; (৩) এমন জমি যাহার মালিক কোন উত্তরাধিকারীহীন মারা যায়।
বিশ্লেষণ
বাইতুল মালের জমি সাধারণত তিন প্রকারের হইয়া থাকে। যে জমিন সরকার খুমুস হিসাবে নির্বাচন করিয়াছে অথবা গনীমত লাভকারীদের খুশিমতে যে জমি কেন্দ্রীয় বাইতুল মাল লাভ করে। খেরাজী জমিন ইহা কাহারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি হইতে পারে না। কেননা খেরাজী জমিনের কিছু কিছু ওয়াকফ সম্পত্তি হিসাবে গণ্য এবং উহার খেরাজ হইল ইজারা এবং খেরাজী জমিন কিছু কিছু মানুষের মালিকানাও রহিয়াছে।
(৩) এমন ভূমির মালিক যিনি তাহার কোন উত্তরাধিকারী না রাখিয়া মৃত্যুবরণ করিয়াছেন। এই জাতীয় সম্পত্তির উপর শাফিঈ মাযহাবে মতভেদ রহিয়াছে। কাহারও কাহারও মতে, উক্ত জমি ওয়াকফী সম্পত্তি হিসাবে গণ্য হইবে। সুতরাং এই হিসাবে উক্ত জমি বেচাকেনা অথবা অধিগ্রহণ করা যাইবে না। অপর মতে উক্ত জমি সরকার কর্তৃক ওয়াকফ না করা পর্যন্ত ওয়াকফী সম্পত্তি বলিয়া বিবেচিত হইবে না। সুতরাং এই অবস্থায় উক্ত জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা যাইবে। এভাবে উক্ত জমি ক্রয় করা বৈধ।৬৮ অপর মতে উক্ত জমির অধিগ্রহণ বৈধ নহে, যদিও উহার ক্রয়-বিক্রয় বৈধ।
ধারা-১০৪৬
ভূমি অধিগ্রহণ ও বণ্টন সরকার বাইতুল মালের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করিতে এবং পুনরায় তাহা বণ্টন করিতে পারিবেন।
বিশ্লেষণ
সরকার বাইতুল মালের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করিতে পারিবেন কিনা এই বিষয়ে ফকীহদের মতভেদ রহিয়াছে। ইমাম আবু হানীফা (র) মনে করেন যে, সরকার
৪৬০
এমন জমি যাহার কোন মালিকানা নাই বা যাহা কাহারও নিয়ন্ত্রণেও নাই তাহা অধিগ্রহণ করিতে পারিবেন, যদি উহার মধ্যে মুসলিম জনসাধারণের উপকার নিহিত থাকে। যেমন সরকার যে কোন ব্যক্তিকে বাইতুল মাল হইতে অন্য কোন সাহায্য-সহযোগিতা করিয়া থাকেন। ইমাম আবু ইউসুফ (রা) এবং তিনি প্রমাণ হিসাবে হযরত উমার ফারুক (রা)-কে পেশ করিয়াছেন। যেভাবে হযরত উমার ফারুক কিসরাবাসীর জন্য বাইতুল মালের জমি নির্বাচন করিয়াছিলেন এবং ঐ সকল ব্যক্তির সম্পত্তি যে যুদ্ধে নিহত হইয়াছে অথবা দারুল হরবে (শত্রুদেশে) আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছে অথবা পানিতে ডুবিয়া মারা গিয়াছে অথবা আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করিয়াছে এবং কিসরার ঐ সময়ের খেরাজের পরিমাণ ছিল প্রায় সাত হাজার দীনার। সুতরাং তিনি যাহার খুশি তাহারই ভূমি অধিগ্রহণ করিতেন।
ইমাম আবু ইউসুফ বলেন, ইহা ঐ জাতীয় জমি যাহার কোন মালিক নাই বা কাহারও অধীন নহে অথবা কাহারও উত্তরাধিকারীর হাতেও নাই। এমতাবস্থায় সরকারের অধিকার রহিয়াছে যে, সরকার চাহিলে যে কোন মুসাফির ব্যক্তিকে উক্ত জমি দিতে পারিবেন। যদি সরকার মনে করেন যে, ইহার মধ্যে মুসলিম জনসাধারণের কোন উপকার রহিয়াছে। ৯ এই সকল কথা ইবন আবেদীন বর্ণনা করিয়াছেন এবং তিনি আরও উল্লেখ করিয়াছেন যে, এই জাতীয় অধিগ্রহণ কখনও কাহারও মৃত্যুর কারণে হয়। আবার কখনও বাইতুল মালের পক্ষ থেকে তাহাদের জন্য যাহাদের বাইতুল মালের অধিকার রহিয়াছে।
অর্থাৎ সরকার যেভাবে ভাল মনে করে সেইভাবেই উহা গ্রহণ ও প্রদান করিতে পারিবে। এই কথাও জানিয়া রাখা উচিত যে, যাহার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হইল সে উক্ত জমির মালিকও হইয়া যাইবে এবং এইজন্য উক্ত ব্যক্তি হইতে উশর গ্রহণ করা হইবে।
ধারা—১০৪৭
বাইতুল মালের ক্ষতিপূরণ যদি কেহ অন্যায়ভাবে বাইতুল মালের ক্ষতি সাধন করে তবে সে উহার জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য থাকিবে।
বিশ্লেষণ
এ বিষয়ে ফকীহদের মাঝে কোন মতভেদ নাই যে, যদি কেহ বাইতুল মালের ক্ষতিসাধন করে তবে সে উহার ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য থাকিবে। অনুরূপভাবে যদি
৪৬১
কেহ বাইতুল মাল হইতে অবৈধভাবে কিছু গ্রহণ করে তবে সে উহা ফেরতদানে বাধ্য থাকিবে। তবে বাইতুল মাল চুরি করিলে হানাফী, শাফিঈ ও হাম্বলী মাযহাবমতে চোরের হাত কাটা যাইবে না। ইহাদের পক্ষের দলীল হইল ইবন মাজা গ্রন্থে হযরত ইবন আব্বাস (রা)-এর হাদীস :।
عن بن عباس رضي الله عنهما أن عبدا من رقيق الخمس سرق من الخمس فرفع الی النبی ء فلم يقطعه وقال رسول الله له مال الله سرق بعضه بعضا (ابن ماجه) .
“হযরত ইবন আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত। যুদ্ধলব্ধ এক গোলাম যুদ্ধলব্ধ মাল চুরি করিলে লোকেরা তাহাকে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট উপস্থিত করিল। কিন্তু তিনি তাহার হাত কাটিলেন না, বরং বলিলেন : আল্লাহর মালের একাংশ
অপরাংশকে চুরি করিয়াছে”।৭০
বাইতুল মাল চুরি সম্পর্কে হযরত উমার ফারুক (রা) বলিয়াছেন?
ان ابن مسعود سئل عمر بن الخطاب عن رجل سرق من بيت المال فقال ارسله فما من احد الا وله في هذا المال حق (اخرجه عبد الرزاق).
“হযরত ইবন মাসউদ (রা) হযরত উমার ইবন খাত্তাব (রা)-কে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলেন, যে বাইতুল মাল হইতে চুরি করিয়াছে। উত্তরে তিনি বলিলেন, তাহাকে ছাড়িয়া দাও। কেননা বাইতুল মালে প্রত্যেকেরই অংশ নির্দিষ্ট রহিয়াছে”।
দ্বিতীয় মাযহাব হইল ইমাম মালেক (র)-এর। তিনি বলেন, বাইতুল মাল হইতে চুরি করিলে তাহার ক্ষেত্রেও শাস্তি প্রযোজ্য হইবে। কেননা আল্লাহ পাক
পবিত্র কুরআনে বলেন :
والسارق والسارقة فاقطعوا أيديهما (سورة المائده اية : ۳۸) .
“চোর নারী হউক অথবা পুরুষ, তাহাদের উভয়ের হাত কাটিয়া দাও” (সূরা মাইদা : ৩৮)।
বর্ণিত আয়াতে আল্লাহ পাক সাধারণভাবে উল্লেখ করিয়াছেন যে, চুরি করিলেই হাত কাটা যাইবে। কেননা চোর নিঃসন্দেহে সংরক্ষিত মালকে চুরি করিয়াছে এবং যদি কেহ নিশ্চিতভাবে সংরক্ষিত মাল চুরি করে তবে অবশ্যই তাহার শাস্তি হয়। সুতরাং এই চোরেরও শাস্তি হইবে।৭২
৪৬২
ধারা-১০৪৮ বাইতুল মালের জমি ভাগচাষে দেওয়া সরাকর প্রয়োজন মনে করিলে বাইতুল মালের জমি ভাগচাষে দিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
সরকার মুসলিম জনগণের কোন উপকার হইতে পারে এই কথা বিবেচনা করিয়া বাইতুল মালের জমি ভাগচাষ হিসাবে অথবা অন্য যে কোনভাবে চাষাবাদের জন্য প্রদান করিতে পারিবে। ইমাম মালেক (র) বলিয়াছেন, সরকার যদি এই জমি চাষাবাদের জন্য কোন ব্যক্তিবিশেষকে প্রদান করিয়া থাকেন তবে সেক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি জীবিতকালে উক্ত জমি চাষাবাদ করিতে পারিবে এবং তাহার মৃত্যু হইলে উক্ত জমি আবার বাইতুল মালে ফেরত যাইবে। তবে ঐ জমি ঐ কৃষক এবং তাহার উত্তরাধিকারীকে চাষাবাদের জন্য পূর্ব হইতে অনুমতি প্রদান করিয়া থাকিলে তবে সেক্ষেত্রে উক্ত জমি ঐ কৃষকের মৃত্যুর পর তাহার উত্তরাধিকারীগণ চাষাবাদ করিতে পারিবে।
ধারা-১০৪৯
সরকারী কর্মচারীদের বেতন সরকারী কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাইতুল মাল হইতে প্রদেয় হইবে।
বিশ্লেষণ
সরকারী কর্মচারীর বেতন-ভাতাও বাইতুল মাল হইতে আদায় করা হইবে। কারণ ইহারা সকলেই জনগণের সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় কর্ম আঞ্জাম দেওয়ার ব্যাপারে নিরন্তর আত্মনিয়োগ করিয়া থাকে। অতএব সামগ্রিক ধনভাণ্ডার বাইতুল মাল হইতে তাহাদের জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করিতে হইবে। রাসূলুল্লাহ (সা) সরকারী কর্মচারীদের বেতন দিয়াছেন এবং খুলাফায়ে রাশেদুনের যুগেও অনুরূপ হইয়াছে।
ধারা-১০৫০ সরকারী কর্মচারীদের বেতনের পরিমাণ প্রত্যেক সরকারী কর্মচারী যাহাতে তাহার ন্যূনতম প্রয়োজন পূরণ করিতে পারে, সেই পরিমাণ বেতন-ভাতা নির্ধারণ করিতে হইবে।
৪৬৩
বিশ্লেষণ
ইসলামী অর্থনীতি অনুযায়ী সরকারী কর্মচারীদের বেতন নির্ধারণের ব্যাপারে কর্মচারীর যোগ্যতা ও কাজের ধরন এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের বাজারদর সম্পর্কে বিশেষ বিবেচনা করিতে হইবে। রাসূলুল্লাহ (সা) এই সম্পর্কে নিম্নলিখিত একটি নীতি ঘোষণা করিয়াছেন?
من كان لنا عاملا فليكتسب زوجة فان لم يكن له خادم فليكتسب خادما فان لم يكن له مسكنا فليكتسب مسكنا من اخذ غير ذالك فهو غال او سارق .
“যে লোক আমাদের সরকারী কর্মচারী হইবে সে যদি বিবাহ না করিয়া থাকে তবে সে বিবাহ করিয়া লইবে। তাহার কোন গৃহচাকর না থাকিলে সে তাহা রাখিয়া লইবে। তাহার কোন ঘর না থাকিলে সে একখানা ঘর প্রস্তুত করিবে। ইহার অধিক যে গ্রহণ করিবে সে হয় বিশ্বাসঘাতক না হয় চোর” (আবু দাউদ) কিতাবুল খারাজ, বাব ১০, নং ২৯৪৫)।
বর্ণিত এই হাদীস সরকারী কর্মচারীদের বেতন সম্পর্কে একটি স্থায়ী মান নির্ধারণ করে। রাষ্ট্র ও সরকার সকলের বুনিয়াদি প্রয়োজন পূর্ণ করার দায়িত্ব গ্রহণ করিবে। ইসলামের রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি একজন গর্ভনর ও একজন পিওনের মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে কোন পার্থক্য করে নাই। খুলাফায়ে রাশেদুনের যুগেও বেতনের হার উক্ত হাদীস অনুসারেই নির্ধারিত হইয়াছিল। এই সম্পর্কে হযরত উমার ফারুক (রা)-এর নিম্নলিখিত বক্তৃতাংশ হইতে চূড়ান্ত মূলনীতি লাভ করা যায়?
فالرجل وبلاؤه في الاسلام والرجل وقدمه في الاسلام والرجل وغناءه في الاسلام والرجل وحاجته في الاسلام والرجل وعياله في
• (51) ১১। “ব্যক্তি ও ইসলামের জন্য তাহার দুঃখভোগ, ব্যক্তি ও তাহার ইসলাম গ্রহণে অগ্রগামিতা, ব্যক্তি ও ইসলামের জন্য তাহার সম্পদ ব্যয় (বা তাহার প্রাচুর্য), ব্যক্তি ও ইসলামী সমাজে তাহার (ন্যূনতম) প্রয়োজন, ব্যক্তি ও ইসলামে তাহার পরিবারের পরিধি” (মুসনাদে আহমদ, ১খ, পৃ. ৪৩, হাদীস নং ২৯২; আবু দাউদ, ইমারা, বাব ১৩, হাদীস নং ২৯৫০, ইরাজী অনু. নং ২৯৪৪)।
৪৬৪
একটু চিন্তা করিলেই বুঝা যায় যে, বেতন নির্ধারণের জন্য ইহা অপেক্ষা সুবিচারপূর্ণ ন্যায়-নীতি আর কিছুই হইতে পারে না। ইসলামী অর্থনীতিতে বেতন নির্ধারক এই নীতিকে বলা হয় “ভরণপোষণের দায়িত্ব পালনোপযোগী বেতন নীতি”। খুলাফায়ে রাশেদুনের যুগে এই নীতিই কার্যকর ছিল। ফলে একটি পরিবারে যখন একটি শিশু জন্মের পর বাইতুল মাল হইতে তাহার জন্য বৃত্তি দান শুরু করা হইত।
ধারা-১০৫১
বাইতুল মালের আয়-ব্যয় ইসলামী রাষ্ট্রের বাইতুল মালের আয় ও ব্যয় শরীয়াত বর্ণিত পন্থায় হইতে হইবে।
বিশ্লেষণ
ইসলামী রাষ্ট্রের বাইতুল মালের আয় ও ব্যয় করার ব্যাপারে শরীআতের মূলনীতি ও অন্যায় পথে আয়ও করা যাইবে না; ব্যয়ও করা যাইবে না”। ইসলামী জীবন ব্যবস্থার অন্যান্য ক্ষেত্রের ন্যায় উহার রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতেও ইসলামী রাষ্ট্রের আয়-ব্যয়ের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় অর্থনীতির প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ স্বীকৃত হয়। দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমার ফারূকের ভাষায় তাহা নিম্নরূপ :
انه لم يبلغ ذو حق في حقه ان يطاع في معصية الله واني لااجد هذا المال يصلحه الأخصال ثلاث ان يوخذ بالحق ويعطي بالحق ويمنع من الباطل – (كتاب الخراج لابی يوسف ص ۱۱۰) .
“আনুগত্যের যোগ্য কোন ব্যক্তির এই মর্যাদা হইতে পারে না যে, আল্লাহর নাফরমানী করিয়াও তাহার আনুগত্য করিতে হইবে। তিনটি হালাল পন্থা ভিন্ন অন্য কোনভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদেহস্তক্ষেপ করার আমার কোন অধিকার নাই। প্রথমতঃ সত্য ও ন্যায়পরায়ণতার সহিত তাহা গ্রহণ করা হইবে; দ্বিতীয় ও ন্যায় পথেই উহা ব্যয় করা হইবে এবং তৃতীয় ও উহাকে সকল প্রকার অন্যায় নীতির উর্দ্ধে রাখিতে হইবে” (কিতাবুল খারাজ, ইমাম আবু ইউসুফ, পৃষ্ঠা নম্বর ১১৫ -এর বরাতে ইসলামের অর্থনীতি, মাওলানা মোঃ আব্দুর রহীম, পৃ. ২১৮)।
ইসলামী রাষ্ট্র কেবল সরকারী ব্যয় বহনের জন্যই বাইতুল মালে অর্থ-সম্পদ গ্রহণ করিবে না, দেশের গরীব-দুঃখী, অভাবী, অসহায় মানুষদের জন্য স্থায়ী কল্যাণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করার উদ্দেশ্যে ও পথিক, বেকার ও ঋণগ্রস্ত লোকদের সাহায্য করার জন্যও বাইতুল মালে মাল গ্রহণ করিবে।
।
৪৬৫
ধারা-১০৫২
বাইতুল মালে ঋণ গ্রহণ বাইতুল মালের ঋণ গ্রহণ সাধারণত দুইভাবে হইতে পারে –
(ক) দেশে অতিরিক্ত অর্থ উৎপাদনের কাজে ঋণ গ্রহণ অথবা (খ) বিশেষ প্রয়োজন পূরণের জন্য ঋণ গ্রহণ।
বিশ্লেষণ
সরকার যে ঋণ গ্রহণ করে তাহা সাধারণত দুই প্রকারের হইতে পারে। প্রথমতঃ সরকার দেশে আরও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য, বিভিন্ন শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য ঋণ গ্রহণ করিতে পারে। দ্বিতীয়তঃ দেশের বিশেষ কোন প্রয়োজন পূরণের জন্য ঋণ গ্রহণ করিতে পারে। সরকারের বাইতুল মাল হইতে জনগণ এই উভয় উদ্দেশ্যেই ঋণ গ্রহণ করিতে পারে। বাইতুল মালও প্রয়োজন অনুসারে জনগণের নিকট হইতে ঋণ গ্রহণ করিতে পারে এবং এই ঋণ গ্রহণের ব্যাপারে উহাকেও সেইসব শর্ত পালন করিতে হইবে যাহাকে ঋণ গ্রহীতা জনগণের উপর আরোপ করিয়া থাকে। আধুনিক কালে সরকসমূহ জনস্বার্থে এবং সাধারণ উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা কার্যকর করিবার জন্য ঋণ গ্রহণ করিয়া থাকে। যথা সেচ পরিকল্পনার জন্য খাল ও পুকুর খনন, বাঁধ, রাস্তাঘাট পুল প্রভৃতি অর্থোৎপাদক কাজের জন্য প্রত্যেক সরকারই জনগণের নিকট সাময়িক ঋণের দাবি করে। ইসলামী রাষ্ট্রও প্রয়োজন হইলে এইরূপ অর্থোৎপাদক কাজের জন্য জনগণের নিকট হইতে ঋণ গ্রহণ করিতে পারে।
ধারা-১০৫৩
অমুসলিমদের আর্থিক নিরাপত্তা বাইতুল মাল হইতে মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসরত অমুসলিমদেরকে আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করিতে হইবে।
বিশ্লেষণ
ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসরত অমুসলিম জনগণের আর্থিক নিরাপত্তা বিধান করা সরকারের দায়িত্ব। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ইসলামী অর্থনীতি এই সামাজিক নিরাপত্তা কেবল মুসলিম নাগরিকদেরকেই দেয় নাই, প্রকৃপক্ষে ধর্মমত
১০
“
৪৬৬
নির্বিশেষে সকল দেশবাসীই এই নিরাপত্তা লাভ করে। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা)-এর খেলাফতকালে ইসলামী রাষ্ট্রের পক্ষ হইতে হযরত খালিদ ইবন ওয়ালীদ (রা)-কে হীরাবাসীদের সাথে যে সন্ধির চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করিয়াছিলেন তাহাতে তিনি
স্পষ্টভাবে লিখিয়াছেন?
وجعلت لهم ایماشيخ ضعف عن العمل او اصابته افة من الافات او كان غنيا فافتقر وصار اهل دينه يتصدقون عليه طرحت جريته وعيل من بيت المال المسلمين وعياله مااقام بدار الهجرة
: (c ) ১১। “এবং আমি তাহাদিগকে এই অধিকার দান করিলাম যে, তাহাদের কোন বৃদ্ধ যদি উপার্জন ক্ষমতা হারাইয়া ফেলে অথবা কাহারও উপর কোন আকস্মিক মছিবত আসিয়া পড়ে অথবা কোন ধনী ব্যক্তি যদি হঠাৎ এত দরিদ্র হইয়া পড়ে যে, তাহার সমাজের লোকেরা তাহাকে ভিক্ষা দিতে আরম্ভ করে, তখন তাহার উপর ধার্য কর প্রত্যাহার করা হইবে এবং সেই সাথে তাহার ও তাহার পরিবারের যাবতীয় দায়িত্ব কেন্দ্রীয় বাইতুল মাল গ্রহণ করিবে, সে যত দিন ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিক থাকিবে” (কিতাবুল খারাজ, পৃ. ১৪৪)।
ধারা-১০৫৪ শিক্ষক ও ইমাম-মোয়াজ্জিনের বেতন-ভাতা প্রদান রাষ্ট্রীয় বাইতুল মাল হইতে শিক্ষক, ইমাম ও মোয়াজ্জিনের বেতন-ভাতা প্রদান করিতে হইবে।
বিশ্লেষণ
ইসলামী রাষ্ট্রে শিক্ষা বিস্তারের জন্য সরকার গুরুত্বারোপ করিবে। শিক্ষা বিস্তারের জন্য হযরত উমার ফারুক (রা)-এর খেলাফতকালে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়া হইত। শিক্ষকের বেতন বাইতুল মাল হইতে আদায় করা হইত। আল্লামা ইবনুল জাওযী সীরাত উমার (রা) গ্রন্থে বলেন,।
ان عمر ابن الخطاب وعثمان بن عفان رضی الله تعالى عنهما كان يرزقان المؤذنين والائمة والمعلمين – (سيرة العمر علامة بن الجوزی).
৪৬৭
“হযরত উমার ও উসমান (রা) মুয়াজ্জিন, ইমাম এবং শিক্ষকদের জন্য বেতন-ভাতা নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছিলেন”(সীরাত উমার -এর বরাতে ইসলামের রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক উত্তরাধিকার, পৃ. ৯৮)।
হযরত উমার (রা) আবু সুফিয়ান নামক জনৈক ব্যক্তিকে নির্দেশ দিয়াছিলেন, তিনি যেন সমাজের এমন সকল লোকের সন্ধান করিয়া বাহির করেন যাহাদের সামান্যতম কুরআনের জ্ঞান নাই। তিনি এই জাতীয় লোকদের শাস্তির বিধান করিয়াছিলেন। কানযুল উম্মাল নামক গ্রন্থে বলা হইয়াছে, যাহারা কুরআন মজীদ শিখিয়াছেন তাহাদের বেতন নির্দিষ্ট করা হউক। আল্লামা শামী রদুল মোহতারে উল্লেখ করিয়াছেন যে, ইসলামী রাষ্ট্রের শিক্ষকদের বেতনও বাইতুল মাল হইতে প্রদান করিতে হইবে। ইমাম আবু উবাইদ কিতাবু আমওয়ালে লিখিয়াছেন?
ان عمر ابن الخطاب رضي الله تعالى عنه كتب الى بعض العمال اعطوا الناس على تعليم القران (کتاب الاموال الامام ابو عبيد).
“হযরত উমার (রা) তাহার জনৈক কর্মচারীকে লিখিয়া পাঠান : লোকদের কুরআন শিক্ষার জন্য যেন (বাইতুল মাল হইতে) ভাতা প্রদান করা হয়”।
ধারা-১০৫৫ রাষ্ট্রের কর্মচারী ও তাহাদের পোষ্যদের জন্য ভাতা নির্ধারণ
বাইতুল মালে পর্যাপ্ত সম্পদ থাকিলে, রাষ্ট্রের কর্মচারী ও তাহাদের পোষ্যদের জন্য বাইতুল মাল হইতে ভাতা নির্ধারণ করা যাইবে।
বিশ্লেষণ
বাইতুল মাল অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ থাকিলে সরকার তাহার সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাহাদের পরিবারবর্গের জন্য ভাতা নির্ধারণ করিতে পারে। হিফজুর রহমান “ইসলাম কা ইকতেসাদী নিজাম” নামক গ্রন্থে ইমাম তালতাবীর গ্রন্থ নিজামুল আলম ওয়াল উমাম” -এর দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ১৮৩ বরাতে উল্লেখ
করিয়াছেন?
فلما كثرت الأموال في ايامه عمر ووضع الديوان فرض الرواقب العمال والقضات ومنع انخار المال وحرم على المسلمين اقناء
৪৬৮
الضياع والزراعة لان ارزاقهم وارزاق عيالهم تدفع لهم من بيت المال حتى الى عبيدهم ومواليهم اراد بذلك أن تبقوا جهدا على اهمية الرحل لا يمنعهم انتظار الزراع ولا يقعدهم الطرق والقصيف (نظام العالم والامم) .
“হযরত উমার (রা)-এর খেলাফতকালে যখন ইসলামী জাহানে সম্পদের প্রাচুর্য দেখা দিল এবং আম্দমশুমারীর রেজিষ্টার প্রস্তুতের কাজ শেষ হইল তখন তিনি রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী, গর্ভনর, বিচারক প্রমুখের জন্য ভাতা নির্ধারণ করেন এবং বিত্ত সম্পদ পুঞ্জীভূত করাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিলেন। মুসলমানদের জন্য বিশেষ জমিদারী ও কৃষিকাজকে নিষিদ্ধ করা হইল। কেননা তাহাদের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ বাইতুল মাল হইতেই নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া হইয়াছিল। শুধু তাহাই নয়, তাহাদের পরিবারবর্গের জন্যও ভাতা নির্ধারণ করা হইয়াছিল বাইতুল মাল হইতে। কেননা ইহার একমাত্র উদ্দেশ্য হইল যেন গোটা জাতিই সৈনিক ও যোদ্ধা জাতি হিসাবে গড়িয়া উঠে এবং সদা প্রস্তুত অবস্থায় যুদ্ধের ময়দানে অগ্রসর হওয়ার জন্য তৈরি থাকে। তাহাদের এ যাত্রাপথে জমিদারী কৃষিকাজ যেন বাধা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিতে না পারে এবং তাহারা যেন অলস জীবন ও বিলাসিতায় নিমজ্জিত না হয়” (নিজামুল আলম ওয়াল উমার, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ১৮৩)।
ধারা-১০৫৬ আম্দমশুমারীর ব্যয় নির্বাহ বাইতুল মাল হইতে
বিশ্লেষণ
সমাজের প্রকৃত অভাবী, গরীব, অসহায় ইত্যাদির সংখ্যা নির্ণয় এবং তাহাদেরকে সাহায্য প্রদান করার উদ্দেশ্যে আম্দম শুমারী একান্ত প্রয়োজন। ইসলামের দৃষ্টিকোণ হইতে ইহার আসল ও প্রকৃত উদ্দেশ্য হইল সমগ্র রাষ্ট্রের তথা দেশের আনাচে কানাচে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে যত বেকার, দরিদ্র, অক্ষম, রোগী এবং অভাবী অসহায় লোক আছে তাহাদের সংবাদ সংগ্রহ এবং তাহাদের জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তা বিধান করা। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রাখিয়া হযরত উমার ফারুক (রা) গোত্র ও পদমর্যাদার ভিত্তিতে আম্দমশুমারীর তালিকা প্রস্তুত করেন। প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক তাবারী বলেনঃ
৪৬৯
كتب الناس على قبائلهم وفرض لهم العطاء.
“হযরত উমার (রা) গোত্রীয় আম্দমশুমারী করান এবং বাইতুল মাল হইতে তাহাদের ভাতা নির্ধারণ করেন।
ফাতহুল বুলদান ও তাবারীতে আরও উল্লেখ করা হইয়াছে?
قال حزام رائت عمر ابن الخطاب يحمل التوابين خزاعة حتى ينزل قديدا فتاتيه بقديد فلا يغيب عنه امرأة بكر ولا ثيب فيعطيهن في ايديهن ثم يروح بعسفان فيفعل مثل ذالك ايضا حتى توفى
: (sall; affc53) “হিযাম বলেন, আমি খলীফা হযরত উমার (রা)-কে খুজায়া গোত্রের রেজিষ্টার হইতে কাদীদ নামক স্থানে গিয়া ভাতা বণ্টন করিতে দেখিয়াছি, এমন কি কুমারী (বিবাহিতা ও অবিবাহিতা) ও বিধবা মহিলাদের নাম পরিচয় উক্ত রেজিষ্টারে উল্লেখ ছিল। তিনি তাহাদের ভাতা তাহাদের হাতে দিলেন। একইভাবে তিনি উসফান নামক স্থানে গিয়াও একই ব্যবস্থা করিয়াছিলেন এবং মৃত্যুকাল পর্যন্ত প্রতি বৎসর এভাবেই দায়িত্ব পালন করিতেন” (আবু দাউদের বরাতে ফাতহুল কারীম, পৃ. ১২৪)।
ধারা-১০৫৭ দুগ্ধপোষ্য শিশু ও বিধবাদের ভাতা বাইতুল মাল হইতে দরিদ্র অসহায় দুগ্ধপোষ্য শিশু ও বিধবাদের ভাতার ব্যবস্থা করিতে হইবে।
বিশ্লেষণ
যদি রাষ্ট্রে এমন কোন দরিদ্র অসহায় দুগ্ধপোষ্য শিশু অথবা বিধবা থাকে যাহাদের তত্ত্বাবধানের কেহ নাই, তবে সেক্ষেত্রে তাহাদের সার্বিক দেখাশুনার দায়িত্ব বাইতুল মালের উপর বর্তাইবে। হযরত উমার ফারুক (রা) তাহার খেলাফত কালে প্রত্যেক দুগ্ধপোষ্য শিশুর জন্য “দশ দিরহাম” ভাতা প্রদান করিতেন এবং একটু বড় হইলে দুই শত দিরহাম ভাতা প্রদান করিতেন। এ সম্পর্কে ইমাম আবু দাউদ তাহার গ্রন্থে উল্লেখ করিয়াছেন?
৪৭০
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول من ترك ما فلورثته ومن ترك دينا او ضياعا فلى وعلى (ابو داؤد على باب ارزاق
• (14) “রাসূলুল্লাহ (সা) বলিতেন, যদি কেহ সম্পদ রাখিয়া মারা যায় তবে তাহা তাহার উত্তরাধিকারীর। কিন্তু যদি কেহ ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মারা যায় অথবা অসহায় শিশু রাখিয়া মারা যায় তবে সে ব্যাপারে সার্বিক দায়িত্ব আমার”।
অর্থাৎ শিশু, বিধবা, অসহায় ও নিঃস্ব ব্যক্তিদের লালন পালনসহ সার্বিক ভরণ পোষণের দায়িত্ব ইসলামী রাষ্ট্রের এবং বাইতুল মাল ইহার যিম্মাদার হইবে। হযরত উমার (রা) বলিয়াছেনঃ
اما والله لئن بقيت لارامل اهل العراق لادعهن لا يفتقرن الى
‘ s ৷ “জানিয়া রাখ, আল্লাহর শপথ! তিনি যদি আমাকে কিছু দিন বাঁচাইয়া রাখেন তাহা হইলে ইরাকের বিধবাদের এমন অবস্থায় রাখিয়া যাইব যেন আমার পরে তাহাদের কোন আমীরের মুখাপেক্ষী না হইতে হয়” (“কিতাবুল খারাজ”)।
ধারা-১০৫৮ দুর্ভিক্ষ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থা গ্রহণ যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলায় বাইতুল মাল যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।
বিশ্লেষণ
যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাইতুল মাল দ্বারা সরকার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে। ইমাম জাসসাস রাজী আহকামুল কুরআন নামক গ্রন্থে সূরা ইউসুফের ব্যাখ্যায় বলেন : দুর্ভিক্ষের ক্ষেত্রে সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য হইল ইসলামী রাষ্ট্রের অর্থাৎ বাইতুল মালের। দুর্ভিক্ষ পীড়িত এলাকার জনগণের দুঃখ-কষ্ট নিবারণের ও তাহাদের আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের জন্য ফরজ। হযরত উমার ফারুক (রা)-এর খেলাফত কালে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি কসম খাইয়া বলিয়াছিলেন! যত দিন না ইহার সম্পূর্ণ নিরসন হয় তিনি ঘি খাইবেন না ও
৪৭১
দুধ পান করিবেন না। অন্যান্য সকল রাজ্যের গর্ভনর ও প্রশাসকদের নিকট তিনি লিখিয়া পাঠান যে, তাহারা যেন এই মুহূর্তে মদীনাবাসীদের সাহায্যে আগাইয়া আসেন। ইহার পর হযরত আবু উবাইদা (রা) চার হাজার খাদ্যশস্য ভর্তী উট লইয়া খলীফার দরবারে উপস্থিত হন। হযরত আমর ইবনুল আস (রা) যিনি মিসরের গভর্নর ছিলেন, বিশটি জাহাজ ভর্তি খাদ্যশস্য কেন্দ্রীয় বাইতুল মালে প্রেরণ করেন। হযরত উমার (রা) প্রবীণ সাহাবীদেরকে সঙ্গে লইয়া স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণের জন্য ‘জার’ নামক বন্দরে গিয়া হাজির হন। খাদ্যশস্য মওজুদ রাখিবার জন্য দুইটি গুদাম ঘর নির্মাণ করেন এবং হযরত যায়দ ইবন ছাবিত (রা)-কে নির্দেশ দেন, যেন তিনি দুর্ভিক্ষপীড়িত লোেকদের তালিকা প্রণয়ন করেন। তালিকাভুক্ত লোেকদের নামে বাইতুল মাল হইতে চেক পাঠানো হইত যাহার উপর খলীফার সীলমোহর অংকিত থাকিত (আহকামুল কুরআন, জাসসাস-এর বরাতে ইসলামের রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক উত্তরাধিকার, আসম ওমর আলী, পৃ. ১২৭)।
ধারা-১০৫৯ বেকার শ্রমজীবি ও অক্ষম মানুষদের নিরাপত্তা বিধান বাইতুল মাল হইতে বেকার শ্রমজীবী ও অক্ষম মানুষদের আর্থিক সহায়তা বিধান করিতে হইবে।
বিশ্লেষণ
বাইতুল মাল হইতে দেশের বেকার, শ্রমজীবী ও অক্ষম মানুষদের আর্থিক সহায়তার বিধান নিশ্চিত করিতে হইবে। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে?
الفقراء المهاجرين الذين أخرجوا من ديارهم وأموالهم يبون
• (A: Jl sas-~) As u L “যাকাতের সম্পদ সেই সকল ফকির মুহাজিরদের জন্য যাহারা নিজেদের ধন-সম্পত্তি ও ঘর-বাড়ী হইতে বিতারিত হইয়াছে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টির সন্ধান করিতেছে” (সূরা হাশর ও ৮)।
কুরআনের পরিভাষায় ফকীর এমন মজুর ও শ্রমজীবীকে বলা হয়, যাহারা শারীরিক স্বাস্থ্য ও শক্তির দিক দিয়া খুব মজবুত এবং কর্মক্ষম হওয়া সত্ত্বেও প্রতিকূল অবস্থার কারণে বেকার ও উপার্জনহীন হইয়া পড়িয়াছে। কুরআন মজীদে ঠিক এই অর্থেই ইহা ব্যবহৃত হইয়াছে। এই দিক দিয়া সেই সকল অভাবী ও
8१३
মেহনতী লোকদেরকেও ফকীর’ বলা যাইতে পারে যাহারা কোন জুলুম হইতে আত্মরক্ষা করার জন্য নিজেদের জন্মভূমি ত্যাগ করিয়া আসিয়াছে। অনুরূপভাবে কোন সামরিক এলাকা হইতে বিতাড়িত লোকদেরকেও ফকীর’ বলা যাইতে পারে। কুরাইশদের অত্যাচারে যে সকল মুসলমান হিজরত করিয়া মদীনায় গিয়া আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছেন এবং রুজী রোজগারের সন্ধানে ব্যতিব্যস্ত হইয়াছিলেন তাহাদিগকেও কুরআন মজীদে ফকীব বলিয়া সম্বােধন করা হইয়াছে (ইসলামের অর্থনীতি, পৃ. ২৭৪)।
ধারা-১০৬০
ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করা যাহারা নিজেদের ঋণ পরিশোধ করিতে অসমর্থ, বাইতুল মাল হইতে তাহাদের ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করিতে হইবে।
বিশ্লেষণ
যেসব লোক সঙ্গত কারণে ঋণগ্রস্ত হইয়া পড়িয়াছে এবং ঐ ঋণ পরিশোধে তাহারা অসমর্থ, সেক্ষেত্রে সরকার বাইতুল মাল হইতে ঐ ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করিতে পারে। ঋণগ্রস্ত লোক সাধারণত দুই প্রকারের। প্রথমতঃ যাহারা নিজেদের নিত্যনৈমিত্তিক প্রয়োজন পূরণ করিবার জন্য ঋণ গ্রহণ করে। এই ঋণগ্রস্ত লোক যদি ধনী না হয়, তবে বাইতুল মাল হইতে এই ঋণ পরিশোধে সহায়তা করিতে হইবে।
দ্বিতীয় ও সেইসব লোক যাহারা মুসলমানদের সামষ্টিক কল্যাণ সাধন ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ঋণ গ্রহণ করে। ইহারা ধনী হউক বা নির্ধন, ঋণ পরিশোধ করার পরিমাণ অর্থ যাকাতের অংশ হইতে তাহাদিগকে দেওয়া যাইতে পারে।
ইমাম আবু ইউসুফ (র) কিতাবুল খারাজে উল্লেখ করিয়াছেন, গারিমীন (ঋণগ্রস্ত) তাহাদিগকে বলা হয়, যাহারা নিজেদের ঋণ পরিশোধ করিতে অসমর্থ। হিদায়া গ্রন্থে উল্লেখ করা হইয়াছে, গারিম তাহাদেরকে বলে, যাহাদের নিজেদের ঋণের পরিমাণ অপেক্ষা অতিরিক্ত কোন অর্থ সম্পদ নাই। তাফসীরে তাবারীতে উল্লেখ করা হইয়াছে, “গারিম’ শব্দ দ্বারা সেইসব লোক বুঝানো হইয়াছে যাহারা ঋণের ভারে বন্দী ও অবনত মস্তক কিন্তু তাহাদের এই ঋণ অপচয়-অপব্যয়, অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি কিংবা দারিদ্র্য প্রভৃতি কারণে হয় নাই। যাহার বাড়ীঘর
৪৭৩
জ্বলিয়া ভষ্ম হইয়া গিয়াছে কিংবা বন্যা প্লাবনে মাল-সামান ভাসিয়া গিয়াছে, এইজন্য সে তাহার পরিবারবর্গের ভরণপোষণ করিত সমর্থ হইতেছে না। তাহাকেও ‘গারিম’ বা ঋণগ্রস্ত লোক বলা হয়।
ধারা-১০৬১
বাইতুল মালের আয় দারুল হারবের অধিবাসীদের নিকট হইতে সন্ধিসূত্রে অথবা উপহার হিসাবে প্রাপ্ত সম্পদ বায়তুল মালে জমা হইবে।
বিশ্লেষণ
বাইতুল মালের জন্য দারুল হারবের অধিবাসীদের নিকট হইতে সন্ধিসূত্রে অথবা তাহাদের উপহার-উপঢৌকন গ্রহণ করা যায়। যদি দারুল হারব সরকার ইসলামী রাষ্ট্রের সহিত বাৎসরিক অথবা মাসিক নগদ অর্থ অথবা নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ প্রদানের শর্তে সন্ধিতে আবদ্ধ হয় অথবা উপহার-উপঢৌকন হিসাবে কিছু সম্পদ পাঠায় তবে তাহা সকল ক্ষেত্রেই খাজনার বিধানের অন্তর্ভুক্ত হইবে। এই জাতীয় সন্ধিও বৈধ। রাসূলুল্লাহ (সা) নাজরান অঞ্চলের খৃস্টান ও অন্যান্য গোত্রের সহিত উক্তরূপ সন্ধিতে আবদ্ধ হইয়াছিলেন।
قال محمد لابأس للمسلم أن يعطي كافرا حربا أو ذميا وان يقبل الهدية منهم لما روي عن النبي صلى الله عليه وسلم بعث خمس مائة دينار الى مكة حين قحطوا وامر به بدفعها الى ابی سفيان بن حرب وصفوان بن اميه ليصرفا على فقراء اهل مكة ولان صلة الرحم محمودة في كل دین والاهداء الغير من مكارم الاخلاق.
“ইমাম মুহাম্মদ (রা) বলেন, দারুল হারবের কাফির ও যিম্মীদের দান-খয়রাত করিতে মুসলমানদের কোন দোষ নাই এবং তাহাদের পক্ষ হইতে পাঠানো উপহার উপঢৌকন গ্রহণ করিতেও কোন দোষ নাই। যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সা) হইতে বর্ণিত আছে যে, মক্কায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি ৫০০ (পাঁচ শত) দীনার দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে আবু সুফিয়ান ইবন হারব এবং সাফওয়ান ইবন উমাইয়া -এর নিকট পাঠাইয়াছিলেন, যেন তাহা দুস্থ দুর্গত মানুষদের মাঝে বিতরণ করা হয়। কেননা পরস্পরের প্রতি সাহায্য ও সহানুভূতি প্রদর্শন প্রতিটি ধর্মেই প্রশংসনীয় কাজ। অন্যকে উপহার উপঢৌকন পাঠানো উন্নত ও মহৎ চরিত্রের পরিচায়ক” (আস সিরাজুল কবীর -এর বরাতে ইসলামের রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক উত্তরাধিকার, পৃ. ১০১)।
৪৭৪
ধারা—১০৬২ সরকারী ভূ-সম্পত্তির ভাড়া আদায় সরকারী ভূ-সম্পত্তি জনগণের নিকট ইজারা দিয়া তাহা হইতে অর্জিত অর্থ বাইতুল মালের জন্য গ্রহণ করা যায়।
বিশ্লেষণ
যে সকল ভূ-সম্পত্তির মালিক সরকার তাহা নাগরিকের নিকট নির্দিষ্ট অর্থের ভিত্তিতে ইজারা প্রদান করিতে পারেন। উক্ত ইজারা বাবদ সংগৃহীত অর্থ বাইতুল মালে জমা করিতে পারিবেন। আল্লামা শামী এ সম্পর্কে বলেন।
هذا نوع ثالث يفى لا عشرية ولا خراجية من الأرض تسمی اراضي المملكة والحوز والماء خوز منها من الزراعين تسمى اجرة في حق الأكرة وخراجها في حق الامام كان حكمه حكم الخراج قال ابن العليم واصله ما ذكره البلاذري في فتوح البلدان والامام ابو يوسف فی کتاب الخراج ان عمر رضی الله تعالى عنه ان فتح العراق اصطفى من ارضه كل ما كان لكرى ومرازبته واهل بيته مما لم يكن في يد احد او لرجل قتل في الحرب او لحق بارض
• ••••••••• ১।LA LAIL Law c59
“ইহা তৃতীয় প্রকারের জমি যাহা ওশরভুক্ত নয়, আবার খারাজভুক্তও নয়। ইহা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি যাহা রাষ্ট্রপ্রধান জনগণকে নির্দিষ্ট মূল্যের ভিত্তিতে প্রদান করিয়া থাকেন। গ্রন্থকার ইবনুল আলীম বলেন, ইহার উৎস যাহা বালজুরী ফাতহুল বুলদানে এবং ইমাম আবু ইউসুফ কিতাবুল খারাজে বর্ণনা করিয়াছেন যে, হযরত উমার ফারুক (রা) ইরাক বিজয়ের পর যেসব জমি পারস্য সম্রাটের বংশাবলী এবং তাহার গর্ভনর ও সুবেদার যুদ্ধে নিহত হইয়াছে ও পালাইয়া অন্য মুসলিম দেশে আশ্রয় গ্রহণকারী ব্যক্তির মালিকাধীন ছিল, সবই রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ঘোষণা করিয়া রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাধীনে লইয়া আসেন। আর এই জাতীয় সম্পত্তির পরিমাণ ৪০ লক্ষ জারীব। হযরত উমার (রা) শুধু ইরাক ভূখণ্ডকে চল্লিশ লক্ষ জারীব জমি রাষ্ট্রীয় ভূসম্পত্তি হিসাবে ঘোষণা করেন এবং তাহা দেশের জনগণের মাঝে নির্দিষ্ট মূল্যের ভিত্তিতে প্রদান করিয়াছিলেন এবং উক্ত জমি হইতে সংগৃহীত অর্থ বাইতুল মালে জমা রাখিতেন”।
৪৭৫
এ সম্পর্কে হযরত উমার (রা) আরও বলেনঃ অতঃপর এতদসম্পর্কিত সকল তর্ক-বিতর্ক সমাপ্তির পর হযরত উমার (রা) হযরত উসমান ইবন হানিফ (রা)-কে সমগ্র ইরাক ভূখণ্ড জরিপের জন্য পাঠান। তিনি গভীর নিষ্ঠা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা সহকারে জরীপ কাজ পরিচালনা করেন। এই কাজে তিনি দীর্ঘ কয়েকটি মাস অতিবাহিত করেন। পাহাড় ময়দান, নদ-নদী এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ব্যাতিরেকে শুধু কৃষিযোগ্য জমির পরিমাণই হইয়াছিল তিন কোটি ষাট লক্ষ একর। ইবন খুরদুজবাহ বলেন, উক্ত জমি থেকে বাইতুল মাল বাৎসরিক বারো কোটি আশি লাখ দিরহাম রাজস্ব হিসাবে লাভ করিত (আত তাখরীজ ইমাম যায়লায়ী, পৃ. ৭৯)।
তথ্য নির্দেশিকা ১. ইসলামী রিয়াসাত কামালী নিযাম, পৃ. ৪০-৫০। ২. মুকাদ্দিমা ইবন খলদূন, তরজমা নফীস একাডেমী, করাচী, পৃ. ৩৬৯।
الحراج في الدولة الاسلاميه اسناد محمد ضیاءالدين الرئيس مطبوعه مصر في
YA-১৫
৪. মুকাদ্দিমা ইন খালদূন (উর্দু, পৃ. ৩৯২।
كتاب الخراج امام ابو یوسف مطبوعه مصر صفحة 43 .4
৬. কিতাবুল খিরাজ, মিসর হইতে প্রকাশিত, পৃষ্ঠা নম্বর ৪১। ৭. ইসলামী রিয়াসাত কা মালী নিজাম, পৃ. ৫৮। ৮. নাযুলল আওতার, ৪ খ, পৃ. ১৬৫। ৯, নাইনুল আওতার, শাওকানী, চতুর্থ খণ্ড, পৃ. ১৬৬। ১০. নাইলুল আওতার, শাওকানী, চতুর্থ খণ্ড, পৃ. ১৬৭। ১১. নাইলুল আওতার, শাওকানী, চতুর্থ খণ্ড, পৃ. ১৬৮। ১২. পূর্বোক্ত বরাত দৃ.। ১৩. কিতাবুল খারাজ, পৃ. ৬০ ও ১১৭।
الموسوعة الفقهية الجزء الثامن ص ۲٤۰ الطبعة الثانوبة ۱۹۸۹ .28
১৫. ইবন ফারহুন, তাবসিরাতুল হুক্কাম, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ১৪১-১৫৮, মাধ্যম ইসলামী বিশ্বকোষ,
পঞ্চদশ খণ্ড, পৃ. ৫৯৫, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত। ১৬. আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ৮ম খণ্ড, পৃ. ২৪৫; ইসলামী বিশ্বকোষ ১৫শ খণ্ড, পৃষ্ঠা,
৫৯৫।
وغيره .۹د
۲۲۸
/
۳
احکام السلطانية لابی یعلی ص ۲۳۰ وابن عابدين
৪৭৬
.لا
۱۹۱
/ ۲
القليوبي على شرح المنهاج
১৯. ০•^^ ২০. L
JI -r 14/ 4:// tag r৭ ২ill Le -LJI l
•• Lal
l ১৮+L –
– ১১
وغيره .5 ۱۸۸
/
۲
الدر المختار وحاشية ۲/ ۲۰۰ و شرح المنهاج
২২. /A rially ry – 3r/Yc4all। ২৩. ইসলামী বিশ্বকোষ, ১৫শ খণ্ড, পৃ. নম্বর ৫৯৮। ২৪. ৫০ Je J91 9s, 185 Je! ২৫. বুখারী। ২৬. Y৭Y/ L TV০/ soul Lil > ১- u c ১ » « ২৭. Y০০ ১৯ ১- ১ ও iiiews
২৮. আল-মিনহাজ এবং তাহার শাহ, তৃতীয় খণ্ড, পৃ. ১২১-১২৮। ২৯. আল-জাওয়াহেরুল আকিল, প্রথম খণ্ড, পৃ. ২৬০ এবং আল-কালয়ূবী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ১৯০,
মাধ্যমঃ আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়া, অষ্টম খণ্ড, পৃ.২৫৫।
الماوردی ص ۲۱۰ وابو یعلی ص ۲۳۸ وشرح المنهاج بحاشية القلیوبی .20
১৭১/r, মাধ্যম আল-মাওসূয়াতুল ফিকহিয়া, অষ্টম খণ্ড, পৃ. ২৫৫। ৩১. ইবন আবেদীন, ২খ, পৃ. ৫৬। ৩২. নিহায়াতুল আরাব, নববী, ৮ খ, পৃ. ১৯২। ৩৩. আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ৮ খ, পৃ. ২৪৫।
الموسوعة الفقهية الجزء الثامن صفحه ص ۲۰۹ .08
৩৫. t1 = J+১=
l d is all ৩৬, r। ১৪ ৫apLall v Je a r iaLadies, ৩৭. পূর্বোক্ত বরাত, ৩খ, পৃ. ২৫৫-২৫৮। ৩৮. পূর্বোক্ত বরা, ৩খ, পৃ. ২৫৫-২৫৮।
.25 ۱۱
/
۳
حاشيه القليو بي على شرح منهاج النووي
৪০. নিহায়াতুল মুহতাজ, ৫ খ, পৃ. ১১৮। ৪১. হাশিয়া শারহুল মিনহাজ, ৩ খ, পৃ. ২০। ৪২. আল-কামিল, ৩ খ, পৃ. ২৯। ৪৩. আবু দাউদ, তৃতীয় খণ্ড, পৃ. ৩২৮। ৪৪. ইবন আবেদীন, ২য় খণ্ড, পৃ. ৫৭। ৪৫. পূর্বোক্ত বরাত, পৃ. ৫৭।
8११
৪৬. জাসসাস, আহকামূল কুরআন, ইসরামের রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক উত্তরাধিকার, পৃ. ১২১
হইতে। ৪৭. হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগার বরাতে ইসলামের রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক উত্তরাধিকার, পৃ. ১২৭। ৪৮. আবু ইউসুফ, কিতাবুল খিরাজ এর বরাতে ঐ গ্রন্থ, পৃ. ১২৮। ৪৯. তাবারী, ৩ খ, পৃ. ৯৫। ৫০. রাসূল মুহাম্মদ (সা)-এর সরকার কাঠামো, পৃ. ২৭৮। ৫১. ঐ, পৃ. ২৭৯। ৫২. ইবন ইসহাক, পৃ. ৬৪৪; ওয়াকিদী, পৃ. ৯৭৪; ইবন সাদ, ২ খ, পৃ. ১৬০। ৫৩.মাজমূআতুল ওয়াছাইক, পৃ. ১৬৫। ৫৪. যুরকানী, ৩ খ, পৃ. ১৭৪। ৫৫. ওয়াকিদী, পৃ. ৯৭৩-৪; ইবন সাদ, ২খ, পৃ. ১৬৪। ৫৬, ওয়াকিদী, পৃ. ৯৭৩-৪; ইবন সাদ, ২২, পৃ. ১৬০। ৫৭. তাবারী, ৩খ, পৃ. ৩৮৯-৯০। ৫৮. সহীহ মুসলিম এর বরাতে রাসূল মুহাম্মদ (সা)-এর সরকার কাঠামো, পৃ ২৮১। ৫৯. ওয়াকিদী, পৃ. ৯৭৩। ৬০. ঐ, পৃ. ৬৯১। ৬১. কিতাবুল খারাজ, পৃ. ১৪৪। ৬২. ইসলামের অর্থনীতি, মাওলানা মোঃ আব্দুর রহিম, পৃ.২৮৯। ৬৩. ইসলামী অর্থনীতি, মাওলানা আব্দুর রহিম, পৃ. ২৯২। ৬৪, তাবাকাতে ইবন সাদ, তৃতীয় খ-এর বরাতে ইসলামের অর্থনীতি, পৃ. ২৯৩। ৬৫. ইসলামের অর্থনীতি, মাওলানা আব্দুর রহিম, পৃ. ২৯৪। ৬৬, ইসলামের অর্থনীতি, মাওলানা আবদুর রহীম, পৃ. ২৯৫। ৬৭. ইসলামের অর্থনীতি, পৃ. ২৮৬।
৮. আল-মাওয়াতুল ফিকহিয়া, অষ্টম খণ্ড, পৃ. ২৫৯। ৬৯. জাওয়াহিরুল আকীল, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ২২০। ৭০. ইবন মাজা, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ.৮৬৪। ৭১. মুসনাদ আবদুর রায্যাক, ১০, পৃ. ২১২। ৭২. শারহু ফাতহিল কাদীর, ৫, পৃ. ১৩৮। ৭৩. ইবন আবেদীন, তৃতীয় খণ্ড, পৃ. ২২৬-২৫৯ পর্যন্ত।