চতুর্থ পরিচ্ছেদ
৺দোলযাত্রাদিবসে শ্রীরামকৃষ্ণ — গুহ্যকথা
বৈকাল হইয়াছে। ঠাকুর পঞ্চবটীতে গিয়াছেন। মাস্টারকে বিনোদের কথা জিজ্ঞাসা করিতেছেন। বিনোদ মাস্টারের স্কুলে পড়িতেন। বিনোদের ঈশ্বরচিন্তা করে মাঝে মাঝে ভাবাবস্থা হয়। তাই ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁহাকে ভালবাসেন।
এইবার ঠাকুর মাস্টারের সহিত কথা কহিতে কহিতে ঘরে ফিরিতেছেন। বকুলতলার ঘাটের কাছে আসিয়া বলিলেন — “আচ্ছা, এই যে কেউ কেউ অবতার বলছে, তোমার কি বোধ হয়?”
কথা কহিতে কহিতে ঘরে আসিয়া পড়িলেন। চটিজুতা খুলিয়া ছোট খাটটিতে বসিলেন। খাটের পূর্বদিকের পাশে একখানি পাপোশ আছে। মাস্টার তাহার উপর বসিয়া কথা কহিতেছেন। ঠাকুর ওই কথা আবার জিজ্ঞাসা করিতেছেন। অন্যান্য ভক্তেরা একটু দূরে বসিয়া আছেন। তাঁহারা এ-সকল কথা কিছু বুঝিতে পারিতেছেন না।
শ্রীরামকৃষ্ণ — তুমি কি বল?
মাস্টার — আজ্ঞা, আমারও তাই মনে হয়। যেমন চৈতন্যদেব ছিলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ — পূর্ণ, না অংশ, না কলা? — ওজন বল না?
মাস্টার — আজ্ঞা, ওজন বুঝতে পারছি না। তবে তাঁর শক্তি অবতীর্ণ হয়েছেন। তিনি তো আছেনই।
শ্রীরামকৃষ্ণ — হাঁ, চৈতন্যদেব শক্তি চেয়েছিলেন।
ঠাকুর কিয়ৎক্ষণ চুপ করিয়া রহিলেন। পরেই বলিতেছেন — কিন্তু ষড়ভুজ?
মাস্টার ভাবিতেছেন, চৈতন্যদেব ষড্ভুজ হয়েছিলেন — ভক্তেরা দেখিয়াছিলেন। ঠাকুর একথা উল্লখ কেন করিলেন?
[পূর্বকথা — ঠাকুরের উন্মাদ ও মার কাছে ক্রন্দন — তর্ক-বিচার ভাল লাগে না ]
ভক্তেরা অদূরে ঘরের ভিতর বসিয়া আছেন। নরেন্দ্র বিচার করিতেছেন। রাম (দত্ত) সবে অসুখ থেকে সেরে এসেছেন, তিনিও নরেন্দ্রের সঙ্গে ঘোরতর তর্ক করছেন। ঠাকুর দেখিতেছেন।
শ্রীরামকৃষ্ণ (মাস্টারের প্রতি) — আমার এ-সব বিচার ভাল লাগে না। (রামের প্রতি) — থামো! তোমার একে অসুখ! — আচ্ছা, আস্তে আস্তে। (মাস্টারের প্রতি) — আমার এ-সব ভাল লাগে না। আমি কাঁদতুম, আর বলতুম, “মা, এ বলছে এই এই; ও বলছে আর-একরকম। কোন্টা সত্য, তুই আমায় বলে দে!”