তৃতীয় খণ্ড
নিয়তি – রহস্যময়ী
Mme-de Mon [aside], A clue-another clue-that I
will follow,
Until it lead to the throne?
Lord Lytton- The Duchess de la Vulliere. Act III, Scene III.
প্রথম পরিচ্ছেদ
আর এক উদ্যম
দেবেন্দ্রবিজয় বাটীতে পৌঁছিয়া বস্ত্রাদি পরিবর্ত্তন করিলেন। তখনই ডাক্তারের কাছে খবর গেল। ডাক্তার আসিয়া তাঁহার মস্তকের ক্ষতস্থান বাঁধিয়া দিয়া গেলেন।
অপরাহ্নে দেবেন্দ্রবিজয় শ্রীশচন্দ্রকে নিকটে ডাকিলেন। তিনি লতিমন বাইজীর বাটীতে যে ছুরিখানি পাইয়াছিলেন আল্মারীর ভিতর হইতে সেই ছুরিখানি বাহির করিয়া বলিলেন, “আমার হাতে এটা দেখিতে পাইতেছ?”
শ্রীশচন্দ্র মাথাটা একপার্শ্বে খুব অবনত করিয়া মনোভাব প্রকাশ করিল-মুখে কিছু বলিল না।
দেবেন্দ্রবিজয় বলিতে লাগিলেন, ” তোমাকে এবার একটা বড় শক্ত কাজ করিতে হইবে। কল্যকার সেই মজিদের কথা তোমার খুব মনে আছে বোধ করি।
সেই ভদ্রলোকের বাড়ীতে ঠিক এই রকম আর একখানি ছুরি আছে; যে কোন প্রকারে সেই ছুরিখানি বাহির করিয়া আনিতে হইবে। পারিবে?”
শ্রীশচন্দ্রের ওষ্ঠাধর কুঞ্চিত হইল। মুখে একবার গভীর চিন্তার রেখা ফুটিয়া উঠিল। ক্ষণপরে পাকা বুদ্ধিমানের ন্যায় মস্তক সঞ্চালনপূর্ব্বক বলিল, “খুব পারিব?”
নবীন গোয়েন্দা শ্রীশচন্দ্র কিরূপ কৌশলে কার্যে্যাদ্ধার করিবে, ঠিক করিতে না পারিয়া, প্রবীন দেবেন্দ্রবিজয় সবিস্ময়ে শ্রীশের মুখের দিকে চাহিলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, “কিরূপে?”
শ্রীশ বলিল,”যেরূপে পারি। যদি ছুরিখানি মজিদ খাঁর বাড়ীতে থাকে, আমি নিশ্চয়ই সন্ধান ক’রে বাহির করিব। ত’ যদি না পারি, তবে এতদিন আপনার কাছে প’ড়ে আছি কেন? আজ সন্ধ্যার পর মুসলমান ছেলেদের মত কাপড়-চোপড় প’রে, তার দরজায় হত্যা দিয়ে পড়ব-মড়ার মত প’ড়ে থাক্ব। যেন না খেতে পেয়ে মরতে বসেছি, ঠিক এমন ভাব দেখাব। অবশ্যই ছেলে-মানুষ দেখে ,মজিদ আমাকে কিছু খেতে দিবার জন্য বাড়ীর ভতরে নিয়ে যাবে। একবার বাড়ীর ভিতরে যেতে পারলে শর্ম্মারামকে আর পায় কে-কাজ না শেষ ক’রে, শর্ম্মারাম সে বাড়ী থেকে সহজে বেরুবে না।”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “যেরূপে পার, কার্য্যোদ্ধার করা চাই। খুব সবধান, ছুরিখানা যদি পাওয়া যায়, খুব সবধানে রাখিবে; বিষাক্ত ছুরি-একটুখানি কাটিয়া গেলে আর রক্ষা নাই-মনে থাকে যেন।”
শ্রীশচন্দ্র বলিল, “খুব মনে থাকিবে।”