1 of 2

৩৭. সুদীপের মাথায় ব্যাপারটা

সুদীপের মাথায় ব্যাপারটা কিছুতেই ঢুকছিল না। সে মদ খেয়েছিল ঠিক, মদ খেয়ে আস্তানা ছেড়ে বেরিয়েও ছিল কিন্তু ওই মেয়েটা কি করে তার পায়ের ওপর এসে পড়েছিল? কখন ঘটেছিল ব্যাপারটা? মদের বোতলটা মেয়েটা পেল কি করে? সেই সঙ্গে তার খুব আফসোসও হচ্ছিল। সে নিশ্চয়ই পুরো বোতল খেতে পারে না। ওটায় যা ছিল তা মেয়েটা যদি শেষ করে না দিত তাহলে আর এক দিন। এই পর্যন্ত ভাবার পর সুদীপের মনে হয়েছিল মদ ততক্ষণই খাওয়া উচিত যতক্ষণ জ্ঞান ঠিক থাকে। তাহলে শীতবোধ থাকে না, বরং এক ধরনের মজা পাওয়া যায়।

বারান্দার দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বসেছিল সে। এখনও মাথার ভেতরটা দপদপ করছে। এটাকেই বোধ হয় হ্যাংওভার বলে। সে দেখল জয়িতা আর একটা বাচ্চা মুরগিগুলোকে খাওয়াচ্ছে। শুধু মুরগি নয়, ছাগলও আছে। এদের চেহারা সমতলের মত নয়। স্বাস্থ্য বেশ ভাল। সে জয়িতার দিকে তাকাল। আজ সকালে ঝড় বইয়ে দিয়েছে জয়িতা। অবনী তালুকদার তাকে ওইভাবে শাসন করার সাহস পায়নি কখনও। মেয়েরা গালাগালি ব্যবহার না করেও কি করে কলজেচেরা শব্দ ছুঁড়তে পারে কে জানে? গতকাল যদি এই গ্রামের মানুষ তাকে পুঁতে ফেলত তাহলে কিছু বলার ছিল না। সে নাকি এই মানুষগুলোর কাছে তাদের ভাবমূর্তি একেবারে নষ্ট করে দিয়েছে। যারা দেশের বস্তাপচা সিস্টেমের প্রতিবাদ করতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল তাদের একজন মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পড়ে আছে একটা মেয়েকে নিয়ে, ভাবা যায়? যেহেতু তাদের পোশাক ঠিক ছিল এবং মদ খাওয়া নিয়ে এদের কোন নাক কেঁচকানো ব্যাপার নেই তাই এযাত্রায় রক্ষে পেয়েছে সুদীপ। কিন্তু মেয়েটা যদি কল্যাণ ফেরার আগেই মারা যায় তো এসবই ওরা ব্যবহার করবে। জয়িতা সমানে বকে গিয়েছিল। মানুষের রুচি এত নিচে নেমে যায় কি করে? যেখানে ওরা চেষ্টা করছে একটা কিছু করার সেখানে সে মদ খাওয়া পছন্দ করল? ওই মেয়েটাকে জুটিয়ে? এই সুদীপকে তো সে কখনও জানত না। মেয়েদের সম্পর্কে এই দুর্বলতা তার মনে লুকিয়ে ছিল? এই শব্দবর্ষণ চুপচাপ শুনে গিয়েছিল সুদীপ। সে লক্ষ্য করেছিল আনন্দ তাকে কোন কথা বলেনি। একটু আগে পালদেমের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়ার আগে অল্প কথায় জানিয়ে গিয়েছিল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কি ভাবে সমস্ত জিনিসপত্র ওরা কিনে নিয়েছে। এই ছাগল মুরগি এবং অন্যান্য জিনিসপত্র এখন তাদের সম্পত্তি যা এই গ্রামের মানুষদের কাজে লাগবে।

এখন সকাল। কিন্তু রোদ ওঠেনি। তবে শীত বাড়ছে। পা ছড়িয়ে বসেছিল সুদীপ। সকালে ওর ভাগ্যে চা জুটেছে। একনাগাড়ে কথা শুনিয়েও জয়িতা তাকে চা খাইয়েছে। সে দেখল জয়িতা মেয়েটার সঙ্গে কথা বলছে। অথচ দুজন দুজনের ভাষা স্পষ্ট বুঝছে না কিন্তু বলার চেষ্টায় খামতি নেই। জয়িতাকে মেয়ে বলে কোনদিনই মনে হয়নি তার। এখানে আসার পর কারোরই তো স্নান করা হয়নি। ফলে জয়িতার চেহারায় মেয়েদের বাকি কোমলতাটুকুও উধাও। ও শালা তো উলটোপালটা বলবেই। যেন বিবেকের কাজ করে মাঝে মাঝে। পৃথিবীতে যারা বিপ্লবের জন্যে জীবন দিয়েছে তারা কি কখনও মদ খায়নি? হ্যাঁ, মদ খেয়ে হুঁশ হারানোটা অবশ্য অন্যায় হয়ে গিয়েছে কিন্তু মদ খাওয়াটা যে অন্যায় এটা সে মানতে পারে না। এবং তখনই তার মেয়েটার কথা মনে পড়ল। সে মেয়েটাকে দ্যাখেনি। তাকে যখন ওরা এখানে তুলে এনেছিল তখন তার জ্ঞান ছিল না। সে নিশ্চিত যে জ্ঞান হারাবার আগে মেয়েটা তার কাছে আসেনি। তাজ্জব ব্যাপার! জয়িতাকে বোঝানো যাবে না যে মেয়েটা নিশ্চয়ই তক্কে তক্কে ছিল। সে বেহুঁশ হয়ে পড়েছে দেখে বোতলটা হাতিয়েছিল। কিন্তু একেবারে তার গায়ের ওপরে পড়বে কে ভেবেছে? আচ্ছা, মেয়েটাকে দেখতে কেমন? খুব হিম্মতওয়ালী বলে মনে হচ্ছে। সুদীপের খুব ইচ্ছে করছিল মেয়েটাকে দেখতে। গ্রামের লোকেরা নিশ্চয়ই মেয়েটাকে কোন শাস্তি দেয়নি। দিলে জয়িতা বলত। সে ইচ্ছেটা চেপে রাখতে পারল না। বসে বসেই ডাকল, এই জয়িতা, শোন!

জয়িতা একটু থমকে গেল। তারপর আবার মেয়েটার সঙ্গে কথা বলতে লাগল।

সুদীপ বিরক্ত হল, কি রে, শুনতে পাচ্ছিস না?

জয়িতা আবার কথা থামাল, আগে তোর খোয়াড়ি ভাঙুক তারপর কথা বলিস।

আমি এখন ঠিক হয়ে গিয়েছি। ব্যাপারটা ভুলে যেতে পারছিস না?

কি বলতে চাইছিস?

মেয়েটা কেমন দেখতে রে?

মানে? জয়িতার গলার স্বর চড়ায় উঠল। ওর চোখ ছোট হয়ে এল।

বাঃ, একটা মেয়ে আমার পায়ের ওপর উপুড় হয়ে রইল আর আমি তাকে দেখব না?

পালদেমকে জিজ্ঞাসা কর, ও তোকে চিনিয়ে দেবে। সুদীপ, তুই কি চাস?

কি চাস মানে?

তুই এখানে প্যারাডাইসের বিকল্প জীবন খুঁজছিস?

সুদীপ কোন উত্তর দিল না। সে উঠে নিচে নেমে এল! মাথার ভেতরটা এখনও দপদপ করছে। আর এক কাপ চা পেলে হত। কিন্তু নিজে বানিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে না! সে কোমরে হাত রেখে জন্তুগুলোকে দেখল। মালিকানা বদল হয়েছে কিন্তু ওদের কোন ভ্রক্ষেপ নেই। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক আমরা আমাদের মত আছি এমন ভাব। গতকালই খুঁটি পুঁতে কিছুটা জায়গা ঘিরে ওদের আটকে রেখেছে আনন্দ। মাথার উপরে খুবই পলকা ছাউনি। মুরগিগুলোর জন্যে একটু আলাদা ব্যবস্থা। সারারাত এই ঠাণ্ডায় কাটিয়েও ওরা মরে যায়নি। আজ একটাকে কাটলে কিরকম হয়? এই সময় বুক চিতিয়ে বসা একটা মুরগি কোঁক কোঁক করে ডেকে উঠতেই বাচ্চা মেয়েটা চঞ্চল হল। তারপর চটপট ঘেরার মধ্যে ঢুকে যেতেই মুরগিটা অত্যন্ত আপত্তি জানিয়ে সরে দাঁড়াল। খপ করে মাটি থেকে একটা ডিম তুলে ছুটে ফিরে এল মেয়েটা। এনে হাত খুলে জয়িতাকে দেখাল। জয়িতা হাতে তুলে ডিমটাকে দেখল। সুদীপ এই প্রথম চোখের সামনে মুরগির ডিমপাড়া দেখল। সে খুব সিরিয়াস গলায় বলল, ডিমটা মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আসতে বল। তাহলে আমরা আর একটা মুরগি পাব।

কথাটা শুনে জয়িতা বাচ্চাটার কাঁধে হাত বুলিয়ে ডিমটা ফিরিয়ে দিয়ে ইশারায় জানাল সে ওটা নিয়ে যেতে পারে।

সুদীপ হাঁটছিল। ওই মুহূর্তেই সে জয়িতার সামনে থেকে সরে এসেছে। এখন যা বলবে জয়িতা ঠিক তার উলটোটা করবে। একা একা হাঁটতে তার নোক চেপে যাচ্ছিল। সে কোন অন্যায় করেনি। খামোখা এরা তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে। হাঁটতে হাঁটতে সুদীপ ঢালু পথ বেয়ে সেই ঝরনার কাছে পৌঁছে গেল। একটা পাথবের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে চারপাশে তাকাতে তার আবছা আবছা মনে পড়তে লাগল। সে এই ঝরনা দেখেছিল। মেয়েটা তাহলে এখানেই কোথাও লুকিয়েছিল। সে ভাল করে তাকাল। একটা মেয়ে কেন খামোখা এখানে লুকিয়ে থাকতে যাবে? হয়তো কোন কাজে সে এখানে এসেছিল। আজও যদি কোন কাজ, সেই কাজটাই পড়ে যায়। কোন ভিত্তি নেই কিন্তু সুদীপের মনে হল অপেক্ষা করলে মেয়েটার দেখা পাওয়া যাবে। সে পাথরটার আড়ালে চুপচাপ বসে পড়ল। ঠিক পায়ের সামনে দিয়ে স্রোত নামছে নিচে। পাথরে ধাক্কা খেয়ে জল ছিটকে উঠছে, ওপরে। সুদীপ হাত বাড়িয়ে জল স্পর্শ করল। যতটা ঠাণ্ডা বলে ভেবেছিল ততটা নয়। সে মুখে চোখে ঘাড়ে জল বোলাতে বেশ আরাম লাগল। বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল একইভাবে। শুধু জলের শব্দ, কোন পাখির গলাও নেই! ঠাণ্ডায় বোধহয় পাখিরাও ডাকে না। আর এই নিস্তব্ধতায় সুদীপের চোখ বন্ধ হয়ে এল। কিন্তু সেই সময় যেন পাতা মাড়ানোর আথবা মানুষের কথা বলার আওয়াজ তার কানে প্রবেশ করল। খুব চাপা গলা কেউ কথা বলছে। যেন সতর্ক করে দিচ্ছে একে অন্যকে। সুদীপ চোখ খুলে চারপাশে তাকাল। কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু কাছাকাছি মানুষ আছে। সুদীপ আরও কিছুক্ষণ স্থির বসে বইল। যাবা কথা বলছে তারা। নিশ্চয়ই সামনে আসবে।

কিন্তু তারপরেই সব চুপচাপ। একমাত্র জলেব শব্দ কানে। সুদীপ উঠল। পাথরের আড়ালে আড়ালে কিছুটা এগোতেই সে থমকে দাঁড়াল। একটা লোক ঝরনার ওপাশে নিজেকে যতটা সম্ভব লুকিয়ে রেখে ওপরদিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ দেখার পর মুখ ফিরিয়ে নিচে কাউকে কিছু বলল। তারপর আবার মুখ তুলতেই সুদীপের সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে গেল।

একটু হতভম্ব ভাব, তারপরেই ঝট করে আড়ালে চলে গেল মূর্তিটা। এবং সেইসঙ্গে দ্রুত পায়ের আওয়াজ ওপাশের পাহাড়ে মিলিয়ে গেল। লোকটা ভাবভঙ্গি খুব সন্দেহজনক! চেহারাতেও বিশেষত্ব আছে। সরু দুটো গোঁফ মুখের দুপাশে অনেকটা ঝুলে আছে। সুদাপেব ইচ্ছে হচ্ছিল ওকে অনুসরণ করে। কিন্তু ঝরনাটা পার হবার কথা চিন্তা করে সে থমকে গেল। তাছাড়া ওই লোকটা একা ছিল না। একা একা পাগল কিংবা প্রেমে পড়া মহিলা ছাড়া কেউ কথা বলে না। এই অবস্থায় ঝরনা পাব হতে পারলেও অনুসরণ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

কিন্তু ওরা কারা? এই গ্রামের কেউ লুকিয়ে দেখবে কেন? তাকে দেখামাত্র পালাবার কোন কারণ নেই। তাছাড়া এই কদিনে গ্রামের যত মানুষ দেখেছে তাদের কাবও অমন ছুঁচলো ঝোলা গোঁফ চোখে পড়েনি। ব্যাপারটা অবশ্যই সন্দেহজনক।

সুদীপ ধীরে ধীরে গ্রামে উঠে এল। এখন হেঁটে গেলে গ্রামের মানুষ আগের মত অবাক হয়ে তাকায়। কিন্তু তাদের দেখার মধ্যে যে কৌতূহল নেই তাও বলা যায় না। সুদীপকে দেখে বাচ্চা ছেলে আঙুল তুলে দূরের একটা বাড়ি দেখাল। খানিকটা যেতেই সে আনন্দ আর পালদেমকে দেখতে পেল। আনন্দর মুখ গম্ভীর। পালদেমও অন্যদিকে তাকিয়ে। এই সময় কাহুন ঘরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে পালদেমকে কিছু বলতেই সে মাথা নাড়ল নিঃশব্দে। সুদীপ সামনে দাঁড়াতেই আনন্দ মুখ তুলে ওকে দেখল, মেয়েটাকে আর বাঁচানো গেল না। মনে হচ্ছে লাস্ট স্টেজ। আমি খুব ভুল করেছি।

কি ভুল? সুদীপ নিচু গলায় জিজ্ঞাসা করল।

ওকে প্রথম দিনেই এদের দিয়ে দার্জিলিং-এ পাঠানো উচিত ছিল। এই কদিনে তো পৌঁছে যেত। হসপিটাল ট্রিটমেন্ট পেলে হয়তো বেঁচে যেত।

ওরা দার্জিলিঙে যেত না। এই গ্রামে মৃত্যু নিশ্চয়ই নতুন ব্যাপার নয়। কিন্তু যারা কখনই গ্রামের বাইরে যায়নি তাদের দার্জিলিঙে অসুস্থকে নিয়ে যাওয়া সংস্কারে আটকাবে। কথাটা বলে সুদীপ দরজার দিকে তাকাল। সেখানে মোটামুটি ছোট ভিড়। সেই ভিড় ঠেলে বেরিয়ে এল মেয়েটির মা। এবার তার চোখ পড়ল সুদীপের ওপর। পড়ামাত্র তার চোখ জ্বলে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে ঘরের পাশে রাখা একটা মোটা ডাল তুলে তীব্র চিৎকার করে সে ছুটে এল সামনে। কিছু বোঝার আগে সে আঘাত করল সুদীপকে। একটা হাত তুলে কোনরকমে ডালটা ধরলেও সুদীপের মনে হল তার আঙুলগুলো বোধহয় ভেঙে গেল। পাগলের মত মহিলা এবার ঝাঁপিয়ে পড়ল খালিহাতে সুদীপের ওপর। সেইসঙ্গে চিৎকার আর কান্না চলছিল। পালদেমরা ওকে জোর করে সরিয়ে না নিলে কি হত বলা যায় না। কারণ সুদীপ এতটা হকচকিয়ে গিয়েছিল যে আত্মরক্ষা করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। শোক থেকে জন্ম নেওয়া ক্রোধ মহিলার শরীরে হাতির শক্তি এনে দিয়েছিল। সে এটুকু বুঝতে পেরেছিল আশেপাশের বেশির ভাগ মানুষের সহানুভূতি রমনীটি পাচ্ছে। অতএব পালটা আঘাত করে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করলে হিতে বিপরীত হবে। রমণীটিকে ওরা যখন খানিকটা দূরে নিয়ে গেল তখন তার বিলাপ শুরু হল। ভাষা বুঝতে না পারলেও মেয়েটির চলে যাওয়ার সম্ভাবনার জন্যে তাকে দায়ী করা হচ্ছে অনুমান করল সে। এখন রাগ করে কোন লাভ নেই। সুদীপ নিজের মুখে হাত দিল! প্রচণ্ড জ্বলছে। এবং সেইসঙ্গে সে কয়েক ফোঁটা রক্ত আঙুলে উঠে আসতে দেখল। এবার পালদেম এগিয়ে এল, মেয়েটা হয়তো এমনিতেই মরত কিন্তু বেঁচে থাকত। তবে যতক্ষণ না ওর প্রাণ বের হচ্ছে ততক্ষণ কিছু কবার নেই। কাহুন এখন প্রার্থনা করবে ওর জন্যে।

কিন্তু সুদীপের মনে হল পালদেম বলছে এখন নিজেদের জন্যে প্রার্থনা কর। মেয়েটি মরে গেলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলে যে হুমকি দেওয়া হয়েছে তা এখনও প্রত্যাহার করেনি ওরা। সে আনন্দর দিকে তাকাল। আনন্দ কথা বলছে না। তাকে যে আক্রমণ করল রমণীটি তা দেখেও আনন্দ এক চুলও নড়েনি।

এই সময় কাহুনের দুই শিষ্য ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে যাত্রা শুরু করল। কানের পিছু পিছু সমবেত জনতা উঠে যাচ্ছিল মন্দিরের দিকে। সুদীপ অবাক হয়ে দেখল আনন্দ ওদের সঙ্গ নিয়েছে। গম্ভীর মুখে পালদেমের পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছে। ক্রমশ ভিড় সরে গেল। সুদীপ দখল রমণীটি তখন ঘরের সামনে উবু হয়ে বসে আছে। সে কিছু না ভেবে এগিয়ে গিয়ে হিন্দিতে বলার চেষ্টা করল, আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন, আমি আপনার মেয়ের উপকার করতে চেয়েছিলাম।

রমনীটি চোখ খুলল। যেন সে সুদীপকে দেখল না, দেখতে পেল না। তারপর আবার মুখ নামিয়ে নিল। সুদীপ আর পড়ল না। নিজেকে হঠাৎ খুব ফালতু বলে মনে হচ্ছিল তার।

 

দার্জিলিং শহরের বাসস্ট্যান্ডে যখন কল্যাণ নামল তখন তাকে দেখে যে কেউ বলে দিতে পারত পুবে হিমালয়টা হেঁটে এসেছে। রিম্বিকের নিচে বাসে ওঠার পর থেকে সে ঘুমিয়েছে আর এই ঘুম তার ঘোর আরও বাড়িয়েছে। তাপল্যাঙ থেকে ফালুট, ফালুট থেকে সান্দাকফু হয়ে বিকেভঞ্জন পর্যন্ত হেঁটে আসার সময় অনেকরার গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করেছিল ওর। কুঁচকি পর্যন্ত পা ফুলে ঢোল, শরীরে আর রক্ত নেই, দুটো রাত পাহাড়ের খাঁজে হিমে জমে থাকা। তারপর বিকেভঞ্জন থেকে ঢালু পাহাড়ী জঙ্গল দিয়ে একা একা প্রায় গড়িয়ে রিম্বিকে চলে আসা। যা হিসেব ছিল তার চেয়ে একটা দিন বেশি লাগল কিন্তু কল্যাণের মনে হল সে ছিবড়ে হয়ে গিয়েছে।

নিচুমানের একটা হোটেলে পেটভর্তি ভাত খেয়ে সে সারা দুপুর ঘুমল। বিকেলে যখন তার হুঁশ ফিরল তখন সমস্ত শরীরে বেদনা। বিছানা ছাড়ার বিন্দুমাত্র বাসনা হচ্ছিল না। কল্যাণের মনে হল এইভাবেই যদি সারাজীবন শুয়ে থাকা যেত। ছেলেটা যেমন বলা হয়েছিল, সান্দাকফুর কাছেই রয়ে গেল পাহাড়ের আড়ালে। ওই বকম একটা জায়গায় কি করে একটা মানুষ কাটাতে পারে তা তখন খেয়াল হয়নি, এখন মনে হল তাকে যদি কয়েক লক্ষ টাকাও দেওযা হয় সে থাকত না। ওরকম বীভৎস ঠাণ্ডা সে কখনও কল্পনা করেনি। তাই ওকে ছেড়ে আসার সময় সে আনন্দর নির্দেশ অমান্য করেছে। টেন্ট এবং খাবারদাবারের সবটাই দিয়ে এসেছে ছেলেটাকে। ছেলেটা কৃতজ্ঞ হয়েছে কিন্তু সে নিজে বেঁচেছে। যেখানে নিজের শরীরের ওজনই শত্রুতা করছিল সেখানে ওই বোঝা বইবার কোন ক্ষমতা আর অবশিষ্ট ছিল না। অনেকগুলো আতঙ্ক ছিল অবশ্য কিন্তু তখন মনে হয়েছিল ছেলেটাকে না দিয়ে দিলে মাঝপথে তাকেই ওসব ফেলে যেতে হত। সান্দাকফু থেকে রিম্বিকে পৌঁছতে পুরো দিন লেগে গিয়েছিল। ওই সময় কিছুই খায়নি সে খাবার না থাকায়। যদি পথ ভুল হত, যদি রিম্বিকের ইয়ুথ হোস্টেলে জায়গা না পাওয়া যেত তাহলে আর দার্জিলিং-এ জীবনে পৌঁছানো যেত না। দুনম্বর ঝামেলা ছিল মানেভঞ্জনের সেই ব্যবসায়ীকে নিয়ে যে তাদের টেন্ট ভাড়া দিয়েছিল। ওয়াংদের কাছে খবর পেয়ে লোকটা নিশ্চয়ই ওৎ পেতে আছে। ফালুটের রাস্তায় ওঠার পর থেকেই সে অবশ্য আশঙ্কা করেছিল যে কোন মুহূর্তে ভারতীয় পুলিশকে দেখতে পাবে। ওরকম নির্জন সরু পাহাড়ি পথে পুলিশের সামনে পড়লে দুটো হাত আকাশে তুলে দেওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল না। অথচ কিছুই হল না। একটা লোকও তাকে চ্যালেঞ্জ করেনি। রিম্বিকের ফরেস্ট অফিসার তাকে ট্রেকার বলেই ভেবেছেন এবং মিনিবাসটা যখন মানেভঞ্জনে থামল তখন পেছনের সিটে বসে কল্যাণ চোখ বন্ধ করে মাথা হেলিয়ে বসেছিল। অনেক লোক নামল উঠল, ব্যবসায়ী গাড়িতে তল্লাস করতে উঠেছিল কিনা জানা নেই কিন্তু কেউ তাকে টেনে নামায়নি।

আজ হোটেলের ঠাণ্ডা জলেই স্নান করেছে কল্যাণ এবং তখন নিজেকে দেখে সে আঁতকে উঠেছে। সমস্ত শরীরে গুড়ি গুড়ি অ্যালার্জি, পায়ে ফোস্কা, চুলে এত আঠা যে আঙুল পর্যন্ত ভাল করে ঢুকছে না। কম্বলের তলায় শুয়ে কল্যাণের মনে হল এখন পৃথিবীতে সমস্ত মানুষ আরাম করছে, প্রত্যেকে সামান্য সুখের জন্যে একটুও স্বার্থত্যাগ করতে রাজি নয় যেখানে সেখানে মূখের মত এইভাবে কষ্ট যন্ত্রণা সংগ্রহ করার কোন মানে হয় না। এবং তখনই তার মনে হল সে নিজে মুখদের সেরা। কি দরকার ছিল উট দেখিয়ে আগ বাড়িয়ে দার্জিলিং-এ আসার জেদ ধরার? আনন্দ আসছিল, আসত। আর এসে হাড়ে হাড়ে বুঝত। নিজেকে হিরো প্রমাণ করতে গিয়ে এখন মাশুল দিতে হচ্ছে। মাশুলই, না হলে এখন বিছানা ছাড়তে এত কষ্ট হবে কেন? তাছাড়া শরীরের ব্যথার সঙ্গে মনে হচ্ছে জ্বর আসছে।

কল্যাণ চোখ বন্ধ করতেই সুদীপকে দেখতে পেল। ওখানে একটাই কষ্ট, খাবারের। কিন্তু ওছাড়া সুদীপ নিশ্চয়ই বেশ আরামে আছে। আচ্ছা, জয়িতাটা শেষ মুহূর্তে অমন ছুটে এল কেন? জয়িতার ভাব বেশি সুদীপের সঙ্গে। কিন্তু ওই মুহূর্তে মনে হচ্ছিল তাকে যেন কিছু বলতে চেয়েছিল। সাত দিন সাত দিনে ফিরতে বলা হয়েছে তাকে। অসম্ভব। এবং ফেরার কথা মনে হতেই সে স্থির হয়ে গেল। ওই পথে অত ঠাণ্ডায় এবং সভ্যতাবর্জিত পর্বতে আবার তাকে ফিরে যেতে হবে বিছানার এই আরাম ছেড়ে? কেন? কল্যাণের মনে তীব্র অনিচ্ছা জন্মাল। সাতদিনের চারটে দিন শেষ হয়ে গেছে। নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছানো যাবে না। এমনও হতে পারে সেই মেয়েটি মারা গেছে, সাত দিনের মধ্যে সে ওষুধ নিয়ে না ফেরায়। ক্ষিপ্ত গ্রামবাসী ওদের মেরে ফেলেছে। আর এই অবস্থায় সে যদি ফিরে যায় তাহলে জ্বলন্ত কড়াই-এ পা বাড়ানো। জেনেশুনে কেউ ফাঁদে পড়ে!

আরও কিছুক্ষণ স্থির হয়ে পড়ে থাকার পরে কল্যাণ আবিষ্কার করল তার ঘুম আসছে না। অথচ ক্লান্তি চেপে বসেছে সমস্ত শরীরে। যতক্ষণ হেঁটেছে ততক্ষণ একটা ঘোরের মধ্যে ছিল, এখন আরাম পাওয়ামাত্র সবকিছু বিকল হতে বসেছে। নিজের জন্যেই কিছু ওষুধ দরকার। কোনমতে উঠে বসল সে।

বাস থেকে নেমে দালালের সঙ্গে এই হোটেলে আসার সময় থানার সামনে দিয়ে আসতে হয়েছিল। কয়েকটা অস্ত্রধারী সেপাই দাঁড়িয়েও ছিল সেখানে। কিন্তু কেউ কিছু বলেনি তাকে। এখন কি দার্জিলিং শহরে তাদের খোঁজ চলছে না? একটা খবরের কাগজ পেলে হত। আসবার সময় পথে একটা ওষুধের দোকান চোখে পড়েছিল। কোনরকমে পোশাক পরে দরজায় তালা দিয়ে কাঁধে ব্যাগটা নিয়ে বের হল কল্যাণ। অনেকদিন বাদে চটি পরায় মনে হচ্ছে ফুলের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। পায়ের ফোসকাগুলো অবশ্য জানান দিচ্ছে। সে বাইরের ঘরে আসতে একটা গলা শুনতে পেল, খুব ঘুম হল ভাস্করবাবু। সে প্রথমে বুঝতে পারেনি। এবার ডাকটা জোরে এল, ও ভাস্করবাবু!

এবং তখনই কল্যাণের মনে পড়ল হোটেলের খাতায় সে ওই নামটা লিখিয়েছে। অতএব ঘুরে দাঁড়িয়ে তাকে হাসতে হল, ওহো বলুন।

কি ভাবছিলেন মশাই? ম্যানেজার চশমার ফাঁকে তাকালেন।

না, শরীরটা খারাপ। একটা কিছু ওষুধ কিনব বলে বেরিয়েছি।

দার্জিলিং-এ এসে শরীর খারাপ করে ফেললেন! খুব হেঁটেছেন?

অ্যাঁ! কল্যাণ চমকে উঠল।

আপনাকে দেখেই বুঝতে পেরেছি ট্রেক করে এলেন। কোনদিকে? সান্দাকফু?

হ্যাঁ। কল্যাণ আর কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছিল না।

ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছেন কেন? আমার এখানে চুরিচামারি হয় না মশাই।

কাধে ব্যাগ বওয়া আমার অনেকদিনের অভ্যেস।

অ। কিন্তু অমন আলপটকা ওষুধ খাচ্ছেন কেন? একজন ডাক্তার দেখিয়ে প্রেসক্রাইব করিয়ে নিন। আজকাল সবাই যেন ডাক্তার হয়ে গেছে। বিদেশবিভুঁই-এ বড় অসুখ বাধানোর কোন মানে আছে? সোজা বেরিয়ে হলুদ একটা বাড়ি দেখতে পাবেন। সেটা ছাড়িয়ে ডান হাতে হরেকৃষ্ণ ডাক্তারের চেম্বার। আমার কথা বলবেন, যত্ন করে দেখবে।

অতএব কল্যাণ বেরিয়ে এল, এখনও দার্জিলিং-এ সন্ধ্যে হয়নি। রাস্তায় কিছু পর্যটকের আনাগোনা। হাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছিল কল্যাণের। কিন্তু পা বাড়িয়ে ক্রমশ ভাল লাগা শুরু হল। জিপের হেলপার চিৎকার করে আগামী কাল টাইগার হিলে যাওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে। দার্জিলিং-এর ওপরে মেঘ নেই, ফলে পাহাড়গুলো বড় সুন্দর দেখাচ্ছে এখান থেকে। শহরটাকে ছবির মত মনে হচ্ছে। সে এই প্রথম দার্লিলিং-এ এল। শহরটাকে ঘুরে দেখার লোভ হচ্ছিল তার। কিন্তু কেবলই মনে হচ্ছিল কেউ না কেউ তার দিকে তাকাচ্ছে। আর কিছু না হোক প্রচুর টাকা আছে তার কাছে। আচ্ছা, এখন যদি কোন বাস ধরে সোজা নিউ জলপাইগুড়িতে চলে যাওয়া যায়। তার পরে ট্রেন ধরে কলকাতা। যাওয়ামাত্র কি তাকে অ্যারেস্ট কববে? কলকাতার বদলে যদি কানপুরে যাওয়া যায়? সঙ্গে যা টাকা আছে তাতে বেশ কিছুদিন সময় পাওয়া যাবে একটা চাকরি খুঁজে পাওয়ার। কথাটা মাথায় আসামাত্র স্থির হয়ে দাঁড়াল সে। জীবন মানে যদি এই তাহলে তো সেটা কলকাতায় বসেই পাওয়া যেত। কোন প্রয়োজন ছিল না এত ঝামেলা তৈরি করার।

হাঁটতে হাঁটতে ক্রমশ কল্যাণের মনে একটা জেদ চেপে বসছিল। কিছুই হবে না তার। কেউ তাকে ধরবে না। পুলিশ জানে তারা নেপালে আশ্রয় নিয়েছে। এবং তখনই তার জয়িতার মুখ মনে পড়ল। সে আনন্দকে থামিয়ে দায়িত্বটা নেবার পর জয়িতার ঠোঁটে কি হাসি ফুটেছিল? সুদীপ নিশ্চয়ই ভাবছে এই সুযোগে কল্যাণ হাওয়া হয়ে যাবে। না। যাই হোক না কেন, ওষুধগুলো নিয়ে তাপল্যাঙে ফিরে যেতেই হবে। এবং এই যাওয়াটা তাকে চিরকাল বাকি তিনজনের থেকে আলাদা প্রতিপন্ন করবে। তবে যাওয়ার সময় আর হাঁটা নয়। সান্দাকফু পর্যন্ত একটা জিপ ভাড়া করবে সে। জিপ ছাড়া মালপত্র বইবার প্রশ্ন ওঠে না।

হঠাৎ কল্যাণের খেয়াল হল ম্যানেজারের নির্দেশিত হলুদ বাড়িটা সে ছাড়িয়ে এসেছে। সে আর একটু এগোল। রাস্তাটা এখান থেকে খাড়াই উঠেছে। কিন্তু উঁচুতে উঠতে বিন্দুমাত্র ইচ্ছে করছিল না তার। সে আর একটু হাঁটামাত্র নিরিবিলি জায়গায় চলে এল। ক্রমশ আলো নিভে আসছে। এখানকার শীতকে আর শীত বলে মনেই হচ্ছে না। এপাশে কোন দোকানপাট নেই। দুধারে বাগানওলা বাড়ি। এবং একটি বাড়ির নেমপ্লেটে ডাক্তারের নাম দেখতে পেল। ডক্টর এস. কে. দস্তিদার। এই লোকটা কিসের ডাক্তার? কল্যাণ থমকে দাঁড়াল কয়েক মুহূর্ত। তারপর গেট খুলে ভেতরে ঢুকল। পর্দা ঢাকা দরজার ওপাশে আলো জ্বলছে। কল্যাণ ডাকল, ডাক্তারবাবু!

ভেতর থেকে গলা ভেসে এল, কে? ভেতরে আসতে পারেন।

পর্দা সরিয়ে কল্যাণ দেখল একজন বৃদ্ধ সাহেবী প্যাটার্নের মানুষ টেবিলে বসে সানডে পড়ছিলেন। চোখ তুলে ইঙ্গিত করলেন বসতে। চেয়ার টেনে কল্যাণ বসে বলল, আমি এই শহরে নতুন। অসুস্থবোধ করছি, নেমপ্লেটটা দেখে এলাম।

অ। আমি তো রিটায়ার করেছি। আজকাল প্র্যাকটিস করি না। তবে নিজে থেকে কেউ এলে–। বলুন কি প্রব্লেম? আমার ফি কিন্তু বত্রিশ টাকা।

কল্যাণ তার অসুবিধের কথা জানাল। ডাক্তার নাড়ি দেখলেন। তারপর বললেন, অতিরিক্ত পরিশ্রম থেকে এমনটা হয়েছে। আমি ওষুধ লিখে দিচ্ছি। তবে আপনাকে সাজেস্ট করব যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিচে নেমে যেতে। বৃদ্ধ ডাক্তার প্যাড টেনে জিজ্ঞাসা করলেন, নাম?

ভাস্কর দস্তিদার।

আঁ। বাঃ, আপনিও দস্তিদার! ওষুধের নাম লিখে ডাক্তার বললেন, আপনি আমাকে বরং পঁচিশ দিন। সেম টাইটেল!

কল্যাণ প্রেসক্রিপশনটা দেখল। তারপরে সেটাকে ভাঁজ করে পকেটে পুরে ব্যাগ খুলল, আপনাকে আমি আর একটু বিরক্ত করব।

কি ব্যাপার?

আমি একটা গ্রাম থেকে আসছি। সেখানকার মানুষ খুব অসুস্থ। আমি তাদের অসুস্থতার বিবরণ লিখে এনেছি। এক এক জন সম্পর্কে শুনে আপনি নাম্বার দিয়ে প্রেসক্রাইব করে যান। সেইমত ওষুধ কিনে আমি পৌঁছে দিয়ে আসব।

হোয়াট ড়ু থু মিন? আমি রোগী দেখলাম না আর প্রেসক্রাইব করব?

হ্যাঁ। কারণ ওদের ওষুধ দরকার।

কজন রোগী?

অনেক। নিন, শুরু করছি।

পার পেশেন্ট বত্রিশ করে লাগবে।

এই যে পঁচিশে ঠিক হল।

সেটা আপনার জন্যে। তাছাড়া আমি সব ডিটেলস না জেনে–।

যেটুকু জানছেন তাতেই লিখতে হবে। কল্যাণেব চোয়াল শক্ত হল, কেউ কথা না শুনলে আমার খুন চেপে যায়।

ডাক্তার বিড়বিড় করলেন, এ কি অন্যায় জুলুম! কলকাতার সেই চারটে ছেলে-মেয়ে কি আপনাদের মাথা খারাপ করে দিয়েছে?

এবার হেসে ফেলল কল্যাণ, না। কাদের কথা বলছেন আমি জানি না। কিন্তু আপনার প্রেসক্রিপশন আমার দরকার। সে রোগবৃত্তান্ত শুরু করল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *