1 of 2

৩৭. বিয়ের পর শ্রীলেখা

বিয়ের পর শ্রীলেখা প্রায় একটা অকুল সমুদ্রে এসে পড়ল। এর আগে সে কখনও মা বাবাকে ছেড়ে থাকেনি, বিয়ের পরই তাকে একেবারে কলকাতা ছাড়তে হল। খড়্গপুর শহরের প্রান্তে তার শ্বশুরবাড়িটি বেশ বড় এবং মানুষজনে ভরতি। শ্বশুর, শাশুড়ি, দেওর, ভাসুর, ননদ তাদের ছেলেপুলে, ঝি, চাকর, মালি সব মিলিয়ে এক এলাহি কাণ্ড। নতুন বউ হিসেবে কয়েক দিন সে একটু আলাদা খাতিরত্ন পাবার পর সেই ভিড়ের মধ্যে মিলিয়ে গেল।

এ বাড়ির লোকদের স্বভাব সর্বক্ষণ হুকুম করা। নতুন বউ, ভোয়ালেটা নিয়ে এসো তো! বউদি, মশলার কৌটোটা একটু দিন না। কাকিমা, আমার জামাটা একটু ওপর। থেকে এনে দিন–এইসব শুনতে শুনতেই সর্বক্ষণ তাকে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। শ্রীলেখা সবার হুকুম তামিল করার জন্যই তৈরি–কিন্তু মুশকিল হয় যখন একই সঙ্গে দু’জনের হুকুম হয়। একজন বললে, নীচতলা থেকে শাশুড়িকে ডেকে দিতে, আর একজন বললে, ওপর থেকে বাগানের গেটের চাবিটা এনে দিতে–তখন কোনটা আগে করতে হবে শ্রীলেখা বুঝতে পারে না।

এর ওপর আছে তার স্বামী। শ্রীলেখা তার মা কাকিমার মুখে শুনে শুনে বুঝে নিয়েছে যে, একান্নবর্তী পরিবারের বউরা দিনেরবেলা স্বামীর সঙ্গে দেখা করে না। সেই অনুযায়ী শ্রীলেখা সকালবেলা নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে পারতপক্ষে আর সেখানে ঢুকতে চায় না। কিন্তু তাকে বার বার আসতে হয়।

শ্রীলেখার স্বামী প্রভাসকুমার মানুষটি বিচিত্র প্রকৃতির। তার শখ হচ্ছে এম এ পরীক্ষা দেওয়া। ইতিমধ্যেই তিনি ইংরেজি ও বাংলায় এম এ পাশ করেছেন, এখন তৈরি হচ্ছেন ঐস্লামিক ইতিহাসে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। কী উদ্দেশ্যে এই ডিগ্রি অর্জন, তা কেউ জানে না। না জানুক, তবু প্রভাসকুমারের দারুণ সম্ভম সকলের কাছে। এ বাড়িতে আর কেউ গ্র্যাজুয়েট পর্যন্ত নেই, সেখানে এক ছেলে ডবল এম এ ছাড়িয়ে ট্রিপল এম এ হতে যাচ্ছে। তারপরও প্রভাসকুমার আবার সংস্কৃততে পরীক্ষা দেবার ইচ্ছে জানিয়ে। রেখেছেন। পড়াশুনোর কারণে প্রভাসকুমারকে বাড়ির কোনও কাজ কখনও করতে বলা হয় না।

প্রভাসকুমারের রোগাটে লম্বা চেহারা, রোগা বলেই তাকে দৈর্ঘ্যের চেয়েও বেশি লম্বা দেখায়। গায়ের রং এত ফরসা যে মনে হয় স্বচ্ছ। খাঁটি সোনার ফ্রেমের গোল চশমা, ঘাড় পর্যন্ত বাবরি চুল। মানুষটি শৌখিন, ধপধপে সাদা পাঞ্জাবি ও ধুতি ছাড়া আর কিছু পরেন।। সকালবেলা থেকেই সেজেগুঁজে থাকেন অথচ ঘর থেকে বেরোতে দেখা যায় কদাচিৎ। তার চা-জলখাবার এ-ঘরেই আসে। টেবিলে বহু বইপত্র ছড়িয়ে প্রভাকুমার। ছিমছাম ভাবে বসে থাকেন, চোখের দৃষ্টি খোলা গ্রন্থের দিকে স্থির নিবদ্ধ। যখন তার ঘন ঘন হাঁটু দোলে, তখন বোঝা যায়, তিনি কবিতা রচনা করছেন।

হ্যাঁ, প্রভাসকুমার একজন কবি। ভারতবর্ষ ও সচিত্র শিশির পত্রিকায় তার একাধিক কবিতাকণা ছাপা হয়েছে প্রবন্ধ ও গল্পের পাদদেশে। কলেজে পড়ার সময়েই তিনি বাতাসে কার ব্যাকুলতানামে একটি পাতলা কাব্যপুস্তক নিজ ব্যয়ে ছাপিয়ে ছিলেন এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা আড়াই লাইন শুভেচ্ছাবাণীও তার কাছে সযত্নে সংরক্ষিত আছে। প্রভাসকুমারের গোপন বাসনা কাব্যলক্ষ্মীর আরাধনাতেই জীবন অতিবাহিত করা। ইদানীং অবশ্য কাব্যলক্ষ্মী ও শ্রীলেখা মিলেমিশে গেছে।

পরীক্ষার পড়া করতে করতে প্রভাসকুমারের মন মাঝে মাঝে উদাস হয়ে যায়, চোখ চলে যায় বাইরে। এখান থেকে দেখা যায় রেললাইন, টেলিগ্রাফের তারে বসে ফিঙে ল্যাজ নাড়াচ্ছে, এইটুকু দৃশ্য দেখেই প্রভাসকুমারের হৃদয় এক অনির্বচনীয় আনন্দে ভরে যায়। ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি ডাকলেন, শ্রীলেখা–!

প্রভাসকুমার কখনও উচ্চকণ্ঠে কথা বলেন নাতাঁর গলার স্বর একটু দূর থেকে শোনা যায় না–সেই জন্যই কাছাকাছি একজন বাচ্চা চাকর থাকে সব সময়। সে শুধু প্রভাসকুমারের ফুটফরমাজ খাটার জন্যই নিযুক্ত। সে তক্ষুনি ছুটে চলে যায়, শ্রীলেখাকে ডেকে আনে। সারা দিনে এ রকম দশ বারো বার।

প্রভাসকুমারের টেবিলের কাঁচের নীচে একটি লম্বা কাগজে এই কয়েকটি শব্দ পর পর লেখা আছে:

রেখা
শেখা
দেখা
ব্যাঁকা
একা
কেকা
খাঁ খাঁ
জ্বলেখা
ঠেকা
আঁকা

বলাই বাহুল্য, এই শব্দগুলি শ্রীলেখার নামের সঙ্গে মিল দেবার জন্য। কবিতা রচনার সময় যদি হঠাৎ মিল না মনে আসে সেই জন্য আগে থেকেই এই ব্যবস্থা। এই তালিকা ক্রমেই বাড়ে।

শ্রীলেখাকে ডাকার পরেই প্রভাসকুমারের হাঁটুর দোলানি বেড়ে গেল। মোটা বাঁধানো খাতায় তিনি কবিতা রচনায় মগ্ন, এক এক বার তাকাচ্ছেন দরজার দিকে, অত্যন্ত উত্তেজনায় তার কপালে ও ওষ্ঠের ওপরে ঘাম জমে যাচ্ছে।

শ্রীলেখা লজ্জাবনত মুখে দরজার কাছে দাঁড়াল। শাশুড়ি-ননদ-ভাজদের মধ্যে গিয়ে চাকর তাকে বলে যে দাদাবাবু ডাকছেন, তখন লজ্জায় তার মাথা কাটা যায়। অন্যরা মুখ টিপে হাসে আর তাড়া দেয়, শিগগির যাও! দেরি হলে উনি রাগ করবেন!

প্রভাসকুমারের বয়স শ্রীলেখার অন্তত দ্বিগুণ। সেই জন্যই শ্রীলেখা এখনও ওঁর সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে পারে না। ব্যবহারের জড়তা কাটে না কিছুতেই।

প্রভাসকুমার মুখ তুলে বললেন, শ্রীলেখা, আজকের সকালটা কী সুন্দর?

শ্রীলেখা চুপ করে রইল। প্রভাসকুমার জানলা দিয়ে আকাশ, রেললাইন ও ভূ-প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। আবার বললেন, আজকের দিনটা কী সুন্দর!

শ্রীলেখা অস্ফুট গলায় বলল, আপনি আমাকে ডেকেছেন?

হ্যাঁ।

কিছু বলবেন?

না।

আমি তা হলে এবার যাই?

তুমি কী করছিলে?

আমি জলখাবারের লুচি বেলছিলাম।

প্রভাসকুমার ভুরু কোঁচকালেন। এমন সুন্দর সকালবেলা খাদ্যদ্রব্যের মতন গদ্যময় ব্যাপারের নাম উচ্চারণ তার পছন্দ হয় না। তিনি বললেন, এদিকে এসো। আমার কাছে। এসে একটু বোসো

মাকে বলে আসি?

বলতে হবে না। পরে যেয়ো। বার বার তোমাকে ডাকি কেন জানো? তোমার নামটা উচ্চারণ করতেই ভালো লাগে। আহা, কী সুন্দর নাম।

লজ্জায় শ্রীলেখার মুখ অরুণবর্ণ হয়ে গেল। চিবুক ঠেকল বুকে। এসব কথায় কী উত্তর দিতে হয় সে জানে না, কখনও তো এ রকম কথা শোনেনি।

প্রভাসকুমার কোঁচার খুট দিয়ে মুখের ঘাম মুছে বললেন, কী সুন্দর তোমার ভুরু দুটি। যেন দুটি পাখির ডানা- কালিদাস কী বলেছেন জানো?

বিয়ের পর এই চার মাসের মধ্যে শ্রীলেখা এইসব কথা কত বার যে শুনেছে তার ইয়ত্তা নেই–এমনকী কালিদাসের সংস্কৃত শ্লোকও তার মুখস্ত। সে ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়ে রইল।

প্রভাসকুমার উঠে এসে শ্রীলেখার কাছে দাঁড়ালেন। ক্যামেরাম্যানের ভঙ্গিতে বললেন, একটু হাসো, একটু কথা বলল।

কী বলব?

মন যা চায়। এমন সুন্দর সকালবেলা, মনের মধ্যে কি কোনও কলগুঞ্জন হয় না? আহা জয়দেব লিখেছেন

বদসি যদি কিঞ্চিদপি
দন্তরুচি কৌমুদি
হরতি দরতিমিরমতি ঘোরম
ফুরদধরসীধরে
তব বদনচন্দ্রমা
রোচয়তি লোচনচকোরম্‌!

শ্রীলেখা আমি চকোর, আমি চকোরের মতন চেয়ে আছি তোমার মুখের দিকে, একটু হাসো।

প্রভাসকুমার শ্রীলেখার খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকলেও তার অঙ্গ স্পর্শ করছেন না। দিনেরবেলা ওসব না–এ-সম্পর্কে প্রভাসকুমারের কঠোর নিয়ম আছে। তা ছাড়া, তিনি কবিমানুষ, রূপসুধা দু’চোখ দিয়ে পান করলেই তার মন ভরে যায়।

খানিকটা বাদে শ্রীলেখা বলল, আমি এবার যাই?

প্রভাসকুমার উদাস ভাবে বললেন, আচ্ছা যাও। লুচির সঙ্গে একটু ছানা পাঠিয়ে দিয়ো, আমি বেগুন ভাজাটাজা খাই না।

রাত্তিরেও প্রভাসকুমার শ্রীলেখাকে প্রায় ঘুমোতেই দেন না। তার নিজের ঘুমের প্রয়োজন খুব কম–তা ছাড়া, পড়াশুনোর ফাঁকে ফাঁকে, কিংবা কাব্যরচনার সময় যখন। তিনি খুবই ভাবে বিভোর হয়ে যান–তখন খানিকটা করে ঘুমিয়ে নেন। রাতের একটানা ঘুম তার না হলেও চলে। এদিকে, সারা দিন খাটাখাটনি করে রাত্তিরে বিছানায় শুলেই শ্রীলেখার চোখ জড়িয়ে আসে ঘুমে। দুপুরেও সে ঘুমোবার একটুও সুযোগ পায় না। কিন্তু প্রভাসকুমার শ্রীলেখার ঘুম দেখে আশ্চর্য হয়ে যান। এমন জ্যোৎস্না উঠেছে, এই সময় কেউ ঘুমিয়ে নষ্ট করে? শ্রীলেখার হাত ধরে তিনি নিয়ে আসেন বারান্দায়, আকুল ভাবে বলেন, ওঃ, দেখো দেখো, পুকুরের জলে চাঁদের আলো পড়েছে, কী অপূর্ব, কী অপূর্ব!

শ্রীলেখা ঘুমে আঠা হয়ে আসা চোখে তাকিয়ে থাকে সে দিকে। এক এক সময় তার দৃষ্টিভ্রম হয়। মনে হয় যেন মাঠের মধ্যে কে একজন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে, তারই দিকে চেয়ে আছে একদৃষ্টে। কখনও মনে হয়, এগিয়ে আসছে কে যেন। ভালো করে চোখ কচলে দেখে বোঝা যায়, কেউ না। নীরব বৃক্ষের ছায়া, নিথর জল–যা আবহমান কাল ধরে একই রকম।

প্রভাসকুমার আঙুল দিয়ে শ্রীলেখার থুতনিটা উঁচু করে তুলে বলেন, ওই দেখো, দেখো, চাঁদ তোমায় দেখছে। এই এক চাঁদ, ওই এক চাঁদ। শ্রীলেখা, একটু হাসো তোমার হাসিও জ্যোৎস্নার মতন।

হঠাৎ অকারণেই শ্রীলেখার চোখে জল এসে যায়। দৌড়ে সে চলে যায় শয়নঘরে, বিছানায় উপুড় হয়ে পড়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে। প্রভাসকুমার সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করেন না। পাশে দাঁড়িয়ে দেখেন। যুবতী মেয়ের কান্নাও সুন্দর লাগে তার চোখে, এ থেকেও তিনি কবিত্বের উপাদান খুঁজে পান। শ্রীলেখার নামের সঙ্গে অশ্রুরেখার মিল। তক্ষুনি তাঁর মাথায় আসে।

বিয়ের চার-পাঁচ মাসের মধ্যেও শ্রীলেখা এক বারও বাপেরবাড়ি যায়নি। প্রভাসকুমার কিছুতেই ছাড়তে চান না। শ্রীলেখা-বিহনে তিনি একটি দিনও থাকতে পারবেন না– একথা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন। আগামী বছর পরীক্ষা উপলক্ষে তিনি যখন। কলকাতা যাবেন, তখন শ্রীলেখা তার সঙ্গে যাবে, এই রকম সিদ্ধান্ত হয়ে আছে।

কয়েক দিন পর আকস্মিক ভাবে বাড়িটা ফাঁকা হয়ে গেল। দেওর, ভাসুর, ননদরা দল বেঁধে চলে গেল পশ্চিমে হাওয়া খেতে, প্রভাসকুমারের পড়াশুনোর ক্ষতি হবে বলে তিনি গেলেন না। শ্বশুর গেলেন ওড়িশায় বিষয়সম্পত্তির তদারক করতে। বাড়িতে শুধু স্বামী আর শাশুড়ি। তখন আবার শ্রীলেখার হাতে অখণ্ড অবসর। প্রভাসকুমারের ডাক এলে যেতেই হয়, একটু ফাঁক পেলেই পালিয়ে আসে। শ্রীলেখা তার অনুভূতি দিয়ে বুঝেছে যে তার স্বামীটি মোটামুটি ভালোমানুষ, অন্তর দিয়েই তাকে ভালোবাসে, এতখানি ভালোবাসা পেলে মানুষের অভিভূত হয়ে পড়ার কথা–অথচ যেন শ্রীলেখার অস্বস্তি কিছুতেই কাটে না।

প্রভাসকুমার বিশ্বসংসার সম্পর্কে নিরাসক্ত, যুদ্ধবিগ্রহ সম্পর্কে কোনও খবরও রাখেন না, দেশের কোথায় কী ঘটেছে সে সম্পর্কেও আগ্রহ নেই। কোনও দিন উলটে দেখেন না খবরের কাগজ, বাড়িতে রেডিয়ো চললে তার মানসিক শান্তির বিঘ্ন ঘটে।

সময় কাটাবার জন্য শ্রীলেখা চুপি চুপি রেডিয়ো শোনে। ছোট দেওরের ঘর এখন ফাঁকা, সেই ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করে সে রেডিয়োর কাটা ঘোরায়। রেডিয়োর নানা রকম কণ্ঠস্বর ও সংগীতের মধ্যে সে নিজের সঙ্গী খুঁজে পায়। কেন কে জানে, সব সময় তার একটু একটু মন খারাপ থাকে। এক এক রাত্রে রেডিয়োর কাটা ঘোরাতে ঘোরাতে আচমকা শোনা যায় সুভাষ বসুর গলার আওয়াজ। শ্রীলেখার সমস্ত রোমকূপ শিউরে ওঠে, ঝিমঝিম করে শরীর। মনে হয় যেন বহু বহু দূর থেকে ভেসে আসছে এই গলা, বড় তেজি ও নিশ্চিন্ত–একটাই সুর ফুটে বেরোচ্ছে, আমি আসছি, আমি আসছি, আমি আসছি। অত্যধিক আবেগে শ্রীলেখার কান্না পেয়ে যায়। এইসব সময়ে তার মনে পড়ে সূর্যদার কথা। তার মনের মধ্যে কোন এক অজ্ঞাত কারণে সুভাষ বসু ও সূর্যদার ছবি এক হয়ে আসে। এর ফলে নিজেই সে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে সবচেয়ে বেশি। সূর্যদার ছবিটা মুছে দিয়ে সে আবার রেডিয়োতে কান চেপে ধরে শুনতে পায়, আমি আসছি, আমি আসছি, আমি আসছি। সূর্যদা কোথায় আছে, বেঁচে আছে কি? ওই সব ছেলে বেশি দিন বাঁচে না, অত যাদের জেদ–পৃথিবী সহ্য করে না তাদের।

ইদানীং একটা নতুন ব্যাধি দেখা দিয়েছে শ্রীলেখার। হঠাৎ হঠাৎ সে চমকে উঠে তাকায় পেছন দিকে। কেন যেন তার মনে হয়, কেউ যেন তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। কেউ যেন তার কাঁধে রাখার জন্য হাত উদ্যত করেছে। ভয়ে বিবর্ণ হয়ে যায় তার মুখ। সদর দরজায় কোনও আওয়াজ হলেই সে ছুটে যায়। বাগানের গেটে কাঁচ করে একটু শব্দ হলেই সে উৎকর্ণ হয়ে ওঠে। কোনও দিন ভর দুপুরে সে ছাদে উঠে উদভ্রান্তের মতন চতুর্দিকে তাকিয়ে দেখে কেউ আসছে কিনা। কেউ আসে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *