অধ্যায় : ৩৪ উশর (কৃষিজ পণ্যের যাকাত) ও খারাজ (খাজনা)
ধারা—৮১৯
উশর ( ) (ক) ভূমি হইতে উৎপাদিত ফসলের যাকাতকে উশর” বলে। (খ) উশর প্রদান করা ফরয (বাধ্যতামূলক)।
বিশ্লেষণ
আরবী আশারা ১৯০,শব্দ হইতে উশর ) শব্দের উৎপত্তি। আশারা অর্থ দশ এবং উশর অর্থ এক-দশমাংশ। জমিতে উৎপাদিত ফসলের দশ ভাগের এক ভাগ যাকাত হিসাবে প্রদান করিতে হয়। তাই ফসলের যাকাতকে “উশর” নামকরণ করা হইয়াছে। নগদ অর্থ, সোনা-রূপা, গবাদি পশু ও ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত প্রদান যেমন বাধ্যকর, জমি হইতে উৎপাদিত ফসলের যাকাতদানও তদ্রূপ ফরয। মহান আল্লাহ বলেনঃ
ايها الذين آمنوا أنفقوا من طيبت ما کسبتم
و مما أخرجنالكم من الأرض –
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা যাহা উপার্জন কর এবং আমি যাহা ভূমি হইতে তোমাদের জন্য উৎপাদন করিয়া দেই তন্মধ্যে যাহা উৎকৃষ্ট তাহা ব্যয় কর” (সূরা বাকারাঃ ২৬৭)।
৫৬৪
گنوا من ثمره إذا أثمر و اوا حقه يوم حصادم
ولا تسرفوا ۔
“উহার ফল আহার কর এবং ফসল তুলিবার দিনে উহার দেয় প্রদান কর এবং অপচয় করিও না”- (সূরা আনআমঃ ১৪১)।
মহানবী (স) বলেনঃ
ماسقت السماء ففيه العشر وما سقى بقرب
او دالية ففيه نصف العشر .
“বৃষ্টির পানিতে সিক্ত জমির (ফসলের যাকাত) দশ ভাগের এক ভাগ এবং সেচ ব্যবস্থার সাহায্যে সিক্ত জমির (ফসলের যাকাত) বিশ ভাগের এক ভাগ।”
ধারা-৮২০
উশর বাধ্যকর হওয়ার শর্তাবলী নিম্নলিখিত শর্তাবলী বিদ্যমান থাকিলে কোন ব্যক্তির উপর উশর প্রদান বাধ্যকর হইবে—(ক) জমির মালিক বা আবাদকারীকে মুসলমান হইতে হইবে;
(খ) জমি উশরযোগ্য হইতে হইবে; (গ) জমিতে ফসল উৎপাদিত হইতে হইবে;
(ঘ) উৎপাদিত ফসল এমন প্রকৃতির হইতে হইবে, সাধারণত যাহা চাষাবাদ করিলে বৰ্দ্ধিত হইয়া থাকে।
(ঙ) ফসলের উপর মালিকানা বিদ্যমান থাকিতে হইবে;
বিশ্লেষণ
উশর বাধ্যকর হওয়ার শর্তাবলী দুই ভাগে বিভক্ত। ব্যক্তির সহিত সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী এবং জমির সহিত সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী। ব্যক্তির সহিত যুক্ত শর্তাবলী-যেমন তাহাকে মুসলমান হইতে হইবে। কারণ ইহাও যাকাতের অন্তর্ভুক্ত এবং যাকাত অমুসলিম ব্যক্তির উপর আরোপ করা যায় না। এমনকি
৫৬৫
কোন অমুসলিম ব্যক্তি মুসলিম ব্যক্তির উশরযোগ্য জমি ক্রয় করিয়া চাষাবাদ করিলেও ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে প্রথমোক্ত ব্যক্তির উপর উশর ধার্য হইবে না। কোন ব্যক্তি ফসল রাখিয়া এবং উশর পরিশোধ না করিয়া মারা গেলে উক্ত ফসলের উশর পরিশোধ করিতে হইবে।
উশর বাধ্যতামূলক হওয়ার জন্য ফসল উৎপাদনকারীর বালেগ ও বুদ্ধিমান হওয়া শর্ত নহে। অতএব নাবালেগ ও পাগলের জমিতে ফসল উৎপাদিত হইলে উহার উপর উশর ধার্য হইবে। কারণ পূর্বোক্ত হাদীসের বক্তব্য সাধারণ অর্থ জ্ঞাপক। উহাতে বালেগ, নাবালেগ, বুদ্ধিজ্ঞান সম্পন্ন ও বুদ্ধিশূন্য সকলের জমি অন্তর্ভুক্ত। অনন্তর উশর জমীর মালিকের সহিত নহে, জমির সহিত, অন্য কথায় বলা যায়, উহার উৎপাদনের সহিত সম্পর্কিত।২
উশর বাধ্যকর হওয়ার জন্য জমির মালিকানাস্বত্ব বিদ্যমান থাকা শর্ত নহে; বরং উৎপাদনের উপর মালিকানাস্বত্ব বিদ্যমান থাকাই শর্ত। অতএব মালিকানাহীন জমি যে ব্যক্তি চাষাবাদ করিবে তাহার উপর উশর প্রদান বাধ্যকর হইবে। এমনকি কেহ ওয়াকফকৃত জমি চাষাবাদ করিলে তাহাকে উহার উ ৎপাদনে তাহার অংশের উশর প্রদান করিতে হইবে। অতএব মালিকানাভুক্ত ও মালিকানাহীন সব জমির ফসলেরই উশর প্রদান করিতে হইবে। কারণ কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে, “যাহা ভূমি হইতে তোমাদের জন্য উৎপাদন করিয়া দেই” এবং “ফসল তুলিবার দিনে উহার দেয় প্রদান কর।” অনন্তর পূর্বোক্ত হাদীসের বক্তব্যও সাধারণ অর্থ জ্ঞাপক।৩।
জমি উশরযোগ্য না হইলে উহার ফসলের উপর উশর ধার্য হইবে না। হানাফী মাযহাবমতে করযোগ্য জমির ফসলের উশর প্রদান করিতে হইবে না। মহানবী (স) বলেনঃ
لا يجتمع عشر وخراج في أرض مسلم۔
“কোন মুসলমানের জমিতে একইসংগে উশর ও খাজনা একত্র হইতে পারে। অবশ্য ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে একই জমিতে কর ও উশর একত্রে ধার্য করা যাইবে। কারণ উশর ও কর দুই প্রকৃতির দেয় (যেমন যাকাত ও আয়কর দুই প্রকৃতির দেয়)। যে এলাকার লোকেরা স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করিয়াছে এবং যে এলাকা মুসলিম সেনাবাহিনী যুদ্ধের মাধ্যমে জয় করিয়াছে তাহা উশরী জমির অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে কোন মুসলিম বা অমুসলিম নাগরিক অনাবাদী জমি আবাদ
‘ বিধিবদ্ধ ইসলামী আই।
করিলে অথবা সরকার কোন জমি অমুসলিম নাগরিকের মধ্যে বণ্টন করিলে অথবা কোন মুসলিম অমুসলিম নাগরিকের জমি ক্রয় করিলে তাহা করযোগ্য জমি হিসাবে গণ্য হইবে। অমুসলিম নাগরিকের জমি সর্বাবস্থায় করযোগ্য হইবে।
পাকিস্তান সরকার ১৯৮০ খৃ. যে যাকাত ও উশর অধ্যাদেশ জারী করিয়াছে তাহাতে বলা হইয়াছে : যে জমির ফসলের উপর বাধ্যতামূলকভাবে উশর বা উহার পরিবর্তে অনুরূপ কিছু আদায় করা হয় সেই জমির উপর খাজনা বা উন্নয়ন কর আরোপিত হইবে না।
উশর বাধ্যতামূলক হওয়ার জন্য জমির ফসল বিদ্যমান থাকিতে হইবে। চাষাবাদ করার পর জমিতে ফসল উৎপাদিত না হইলে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বা অন্য কোন আপদে নষ্ট হইয়া গেলে উগ্র বাধ্যকর হইবে না। কারণ উৎপাদিত ফসলের একটি নির্দিষ্ট অংশ প্রদান বাধ্যকর হয়। ফসল না থাকিলে উহার অংশ প্রদান সম্ভব নহে।
উৎপাদিত ফসল এমন প্রকৃতির হইতে হইবে, সাধারণত যাহার চাষাবাদ করিলে বর্ধিত হইয়া থাকে। যাহা জমিতে চাষাবাদ ব্যতীতই প্রাকৃতিকভাবে জন্মায় তাহার উপর উশর ধার্য হইবে না। যেমন ঘাস, লতাগুলা, নল-খাগরা, জ্বালানী কাঠ ইত্যাদি। কারণ ইহাতে জমির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি পায় না, বরং কমিয়া যায়। কিন্তু কেহ যদি জমিতে জ্বালানী কাঠ বা এমন গাছ-গাছরার চাষাবাদ করে যাহা তিন-চার বৎসর অন্তর কাটিয়া ফেলা হয় তবে সেই ক্ষেত্রে উশর ধার্য হইবে।”
ধারা—৮২১ ইজারা, ভাগচাষ, আরিয়াহ ও অবৈধ দখলী জমির উশর (ক) ইজারার জমিতে উৎপাদিত ফসলের উশর ইজারাদার (ইজারা গ্রহীতা) প্রদান করিবে;
(খ) ভাগচাষের ক্ষেত্রে জমির মালিক ও ভাগচাষী ফসলে নিজ নিজ অংশ মোতাবেক উশর প্রদান করিবে;
(গ) ধার (আরিয়াহ) লওয়া জমির ফসলের উশর আরিয়াহ গ্রহীতা প্রদান করিবে;
৫৬৭
(ঘ) কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির জমি জবরদখল (গসব) করিয়া চাষাবাদ করিলে জবরদখলকারী উশর প্রদান করিবে।
বিশ্লেষণ
কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির জমি ইজারা লইয়া চাষাবাদ করিলে ইজারাদারের উপর উশর প্রদান বাধ্যকর হইবে। কারণ এই অবস্থায় ফসলের মালিক হয় ইজারাদার, ইজারাদাতা নহে। ইহা ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মত। ফসল তোলার পূর্বে অথবা পরে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা দুর্ঘটনায় ফসল নষ্ট হইয়া গেলে ইজারাদার উশরের দায় হইতে অব্যাহতি পাইবে।
কোন ব্যক্তি তাহার জমি অপর ব্যক্তিকে ভাগচাষের শর্তে চাষাবাদ করার জন্য প্রদান করিলে, মালিক ও ভাগচাষী উভয়কেই ধারা (৮২০) মোতাবেক নিজ নিজ অংশমত উশর প্রদান করিতে হইবে, যদি পৃথক পৃথকভাবে তাহাদের প্রাপ্য ফসল ধারা (৮২২) মোতাবেক নেসাব পরিমাণ হয়। তাহাদের মধ্যে কোনও পক্ষের ফসল নেসাব পরিমাণ না হইলে উশর প্রদান করিতে হইবে না। ইহাও ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মত। ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে ভাগচাষ বৈধ নহে, এই জাতীয় চুক্তি ফাসিদ গণ্য হইবে। তাই উশর বাধ্যকর হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।
কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির জমি ধার লইয়া চাষাবাদ করিলে ধার গ্রহীতার উপর উশর প্রদান বাধ্যকর হইবে। ইহা ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর অভিমত।১২।
কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির জমি জবরদখল (গসব করিয়া চাষাবাদ করিলে জবরদখলকারী উশর প্রদান করিতে বাধ্য, যদি জবরদখলের কারণে জমির কোন ক্ষতি সাধিত না হইয়া থাকে। জমির ক্ষতি সাধিত হইলে জবরদখলকারী মালিককে ক্ষতিপূরণ করিতে বাধ্য থাকিবে। ইহাও ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর অভিমত।১৩
ধারা—৮২২
উশরের নেসাব ও প্রদেয়-এর পরিমাণ (ক) উশরের নেসাব হইল পাঁচ ওয়াসাক অর্থাৎ ৯৪৮ কিলোগ্রাম;
৫৬৮.
(খ) প্রাকৃতিকভাবে যে জমিতে পানি সরবরাহ হয় সেই জমিতে উৎপাদিত ফসলের এক-দশমাংশ উশর হিসাবে প্রদান করিতে হইবে।
(গ) সেচব্যবস্থার সাহায্যে যে জমিতে পানি সরবরাহ হয় সেই জমিতে উৎপাদিত ফসলের বিশ ভাগের এক ভাগ উশর হিসাবে প্রদান করিতে হইবে।
(ঘ) যে ব্যক্তি আইনত যাকাত পাইতে পারে সে উশরের দায় হইতে অব্যাহতি পাইবে।
(ঙ) একই জমিতে বৎসরে একাধিক বার ফসল উৎপাদিত হইলে প্রত্যেক বার উৎপাদিত ফসলের উশর প্রদান করিরে হইবে।
(চ) উশর নগদ অর্থের দ্বারাও পরিশোধ করা বৈধ।
বিশ্লেষণ
কোন ব্যক্তি যে পরিমাণ ফসলের মালিক হইলে তাহার উপর উশর প্রদান বাধ্যকর হয় সেই পরিমাণ (অর্থাৎ পাচ ওয়াসাক বা ৯৪৮ কিলোগ্রাম) ফসলকে “নেসাব” বলে। কোন ব্যক্তির মালিকানাধীন ফসলের পরিমাণ পাঁচ ওয়াসাকের কম হইলে সে উশর প্রদানের দায় হইতে অব্যাহতি পাইবে। যেমন অর্থ-সম্পদের যাকাতের বেলায় তাহা নেসাব পরিমাণ না হইলে উহার উপর যাকাত ধার্য হয় না। (ইহা ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মত, ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে উশর বাধ্যকর হওয়ার জন্য নেসাব পরিমাণ হওয়া শর্ত নহে, উৎপাদন কম-বেশী যাহাই হউক, উহার উশর প্রদান করিতে হইবে-বাদাই, ২খ, পৃ. ৫৯]। অনুরূপভাবে শরীআতের বিধান মোতাবেক যে ব্যক্তি যাকাত পাইতে পারে সেও উশরের দায় হইতে অব্যাহতি পাইবে। উশরের নেসাব সম্পর্কে মহানবী (স) বলেনঃ
و ليس في حب ولا تمر صدق حتى تبلغ خمسة
آوسق
“খাদ্যশস্য ও খেজুরের পরিমাণ পাঁচ ওয়াসাক না হওয়া পর্যন্ত যাকাত নাই।”১৪
ليس فيما دون خمسة أوسق صدقة الوسق
ستون خوا۔
৫৬৯
“পাঁচ ওয়াসাকের কম পরিমাণ ফসলে যাকাত নাই। এক ওয়াসাকের পরিমাণ হইল ষাট সা”।১৫
যে জমিতে প্রাকৃতিকভাবে পানি সিঞ্চিত হয় অর্থাৎ বৃষ্টি বা নদীর পানি দ্বারা উর্বরতা লাভ করে অথবা এমনিতেই আর্দ্র থাকে, সেই জমিতে উৎপাদিত ফসলের এক-দশমাংশ (উশর) যাকাত হিসাবে প্রদান করিতে হইবে। আর যে জমিতে সেচ ব্যবস্থার মাধমে পানি সিঞ্চিত হয় সেই জমির উৎপাদিত ফসলের বিশ ভাগের এক ভাগ (অর্ধ উশর) যাকাত হিসাবে প্রদান করিতে হইবে। এই প্রসংগে মহানবী (স) বলেনঃ
ماسقت السماء والأنهار والعيون أو كان بق؟ العشر فيما سقى بالسواني أو النضح نصف الشر
“যে জমি বৃষ্টি, নদী বা কূপের পানি দ্বারা সিঞ্চিত হয় অথবা যে জমিতে পানিসেচের আদৌ প্রয়োজন হয় না, সেই জমির যাকাত হইল উৎপন্ন ফসলের এক-দশমাংশ। আর যে জমিতে পানিসেচের প্রয়োজন হয় সেই জমির যাকাত হইল উৎপন্ন ফসলের বিশ ভাগের এক ভাগ।”১৬
ইসলামী শরীআর ভিত্তিতে কৃত পাকিস্তানের যাকাত ও উশর অধ্যাদেশে বলা হইয়াছে যে, কোন ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ শস্যের মালিক হইলে সে উহা হইতে উৎপাদন খরচ বাবদ ২৫% রেয়াত পাইবে, অতঃপর অবশিষ্ট শস্যের এক-দশমাংশ উশর হিসাবে প্রদান করিবে। এই অধ্যাদেশে জমিকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয় নাই। (While so computing his Usher liability, shall be entitled to reduce as an allowance for expenses on production one-fourth of the total value of his produce)। এই উশর ফসলের মূল্য নিরূপণ করিয়া নগদ অর্থে আদায় করার ব্যবস্থা রাখা হইয়াছে।১৭ যেমন কোন ব্যক্তির উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ ৯৪৮ কিলোগ্রাম। সে উহা হইতে উৎপাদন খরচ বাবদ এক-চতুর্থাংশ পরিমাণ বাদ দিবে, অতঃপর অবশিষ্ট ফসলের এক-দশমাংশ উশর বাবদ প্রদান করিবে। (৯৪৮-=৭১১-১০ কিলোগ্রাম উশর বাবদ প্রদান করিতে হইবে)। কিন্তু হানাফীগণ উৎপাদন খরচ বাদ দেওয়া বৈধ মনে করেন না। ১৮
৫৭০
কোন জমিতে বৎসরে একাধিক বার ফসল উৎপাদিত হইলে প্রতিবার উৎপাদিত ফসলের উশর পৃথক পৃথকভাবে প্রদান করিতে হইবে। কারণ অন্যসব সম্পদের যাকাতের বেলায় তাহা এক বৎসর মালিকের মালিকানায় থাকা যেরূপ আবশ্যকীয়, ফসলের যাকাতের বেলায় তদ্রূপ শর্ত নাই। ফসল সংগৃহীত হইলেই উশর প্রদান করিতে হইবে। ১৯
সংশ্লিষ্ট ফসল দ্বারা যেমন উশর পরিশোধ করা বৈধ, তদ্রূপ নগদ অর্থ দ্বারাও উহা পরিশোধ করা বৈধ। এই বিকল্প পন্থার ক্ষেত্রে নগদ অর্থ প্রদেয় ফসলের বাজার দরের সমপরিমাণ হইতে হইবে। ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে উশর নগদ অর্থের দ্বারা পরিশোধ করা বৈধ নহে।২০
ধারা—৮২৩
যৌথ মালিকানাভুক্ত জমির উশর (ক) যৌথ মালিকানাভুক্ত জমিতে উৎপাদিত ফসল শরীকগণের মধ্যে বণ্টন করার পর প্রত্যেকের প্রাপ্য অংশ ধারা (৮২২) মোতাবেক নেসাবের সম-পরিমাণ হইলে উশর প্রদান বাধ্যকর হইবে।
(খ) কোন ব্যক্তির বিভিন্ন এলাকায় জমি থাকিলে এবং উহার সম্মিলিত উৎপাদন ধারা (৮২২) মোতাবেক নেসাব পরিমাণ হইলে উশর প্রদান বাধ্যকর হইবে।
বিশ্লেষণ
কোন জমির একাধিক শরীক থাকিলে এবং তাহা একত্রে বা ভিন্ন ভিন্নভাবে চাষাবাদ করার পর যে ফসল পাওয়া যাইবে তাহা অংশীদারগণের মধ্যে নিজ নিজ অংশ মোতাবেক বণ্টন করার পর যাহার প্রাপ্ত অংশ নেসাব পরিমাণ হইবে তাহার উপর তাহার অংশের উশর প্রদান বাধ্যকর হইবে। কোন ব্যক্তির শরীকানা জমি হইতে প্রাপ্ত অংশ নেসাব পরিমাণ না হইলে এবং তাহার একক মালিকানাধীন জমির ফসলের সহিত উহা যোগ করিয়া নেসাব পূর্ণ হইলে তাহার
৫৭১
উপর উশর প্রদান বাধ্যকর হইবে।২১
বিভিন্ন উশর এলাকায় কোন ব্যক্তির জমি থাকিলে এবং উহার সম্মিলিত উৎপাদন নেসাব পরিমাণ হইলে তাহার উপর উশর প্রদান বাধ্যকর হইবে। ইহা ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর অভিমত। ইমাম আবু ইউসুফ (র)-এর মতে একই উশর অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে কোন ব্যক্তির জমি থাকিলে উহার উৎপাদিত ফসল একত্র করা হইবে এবং তাহা নেসাব পরিমাণ হইলে উশর প্রদান করিতে হইবে কিন্তু উহা দুই বা ততধিক উশর অঞ্চলে অবস্থিত হইলে উহার উৎপাদিত ফসল একত্রে হিসাব করা যাইবে না; বরং প্রতিটি উশর অঞ্চলের উৎপাদন পৃথকভাবে হিসাব করিতে হইবে। ইহাতে নেসাব পূর্ণ হইলে উশর প্রদান বাধ্যকর হইবে,
অন্যথায় নহে।২২
ধারা—৮২৪
উশরযোগ্য ও উশর অযোগ্য ফসল (ক) যেসব খাদ্যশস্য ওজনযোগ্য তাহার উপর উশর ধার্য হইবে;
(খ) যেসব কৃষিজ উৎপাদন দ্রুত পচনশীল নহে, বরং গুদামজাত করিয়া রাখা সম্ভব, তাহার উপর উশর ধার্য হইবে;
(গ) যে ফল শুকাইয়া গোলাজাত করিয়া রাখা সম্ভব, সেই ফলের উপর উশর ধার্য হইবে;
(ঘ) চিনি উৎপাদনের জন্য ইক্ষুর চাষ করা হইলে উহার উপর উশর ধার্য হইবে;
(ঙ) তৈলবীজের উপর উশর ধার্য হইবে;
(চ) একই প্রজাতিভুক্ত বিভিন্ন ফসল একত্রে যোগ করিয়া নেসাব পূর্ণ হইলে উহার উপর উশর ধার্য হইবে।
(ছ) জমিতে উৎপাদিত যেসব উপকরণ দ্বারা খােশবু অথবা ঔষধ তৈরি করা হয় তাহার উপর উশর ধার্য হইবে না।
বিশ্লেষণ
যেসব ফসল ওজনযোগ্য (কায়লী) এবং খাদ্যশস্য হিসাবে ব্যবহৃত, যেমন
৫৭২
ধান, গম, ডাল, যব ইত্যাদি, তাহার উপর উশর ধার্য হইবে। ইহা ইমাম আবু ইউসূফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর অভিমত।
ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে যেসব কৃষিজ উৎপাদন দ্রুত পচনশীল নহে, বরং স্বাভাবিকভাবে গোলাজাত করিয়া রাখা যায়, যেমন হলুদ, মরিচ, গরম মসলা, ধনিয়া ইত্যাদি, তাহার উশর প্রদান করিতে হইবে। কিন্তু যেসব উৎপাদন দ্রুত পচনশীল, যেমন পিয়াজ-রসুন, শাক-সবজি, তরিতরকারি, শসা, ফুট, তরমুজ ইত্যাদি, তাহার উশর প্রদান করিতে হইবে না। মহানবী (স) বলেনঃ
ما ليس في الخضروات صدق
“সবজিতে যাকাত নাই।” কিন্তু ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে পচনশীল ফসলেরও উশর প্রদান করিতে হইবে। তাহার মতে যে ফসলই উৎপাদিত হউক, তাহা নেসাব পরিমাণ
হইলেও উশর প্রদান বাধ্যকর হইবে।
যেসব ফল প্রাকৃতিক পন্থায় শুকাইয়া গোলাজাত করিয়া রাখা সম্ভব, যেমন আঙ্গুর, ডুমুর, কুল, পীচফল, খােবানী ইত্যাদি, তাহার উশর প্রদান করিতে হইবে। ইহার উপর উশর নির্ধারণের পন্থা এই যে, সংশ্লিষ্ট ফল শুকাইবার পর নেসাব পরিমাণ হইবে কি না তাহা অনুমানের ভিত্তিতে নির্ণয় করিতে হইবে। নেসাব পরিমাণ হইলে উশর প্রদান বাধ্যকর হইবে।
গুড় বা চিনি উৎপাদনের জন্য ইক্ষুর চাষ করা হইলে উহার উপর উশর ধার্য হইবে।
তৈলবীজ, যেমন তিল, তিসি, সরিষা, বাদাম, ইত্যাদির উপর উশর ধার্য হইবে। কারণ এইগুলি প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গোলাজাত করিয়া রাখা সম্ভব।
একই প্রজাতিভুক্ত ফসল পৃথক পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না হইলে, কিন্তু একত্রে যোগ করিয়া নেসাব পূর্ণ হইলে উহার যাকাত প্রদান করিতে হইবে। যেমন আমাদের দেশে একই প্রজাতিভুক্ত বহু রকমের ধান, ডাল, তৈলবীজ ইত্যাদি উৎপাদিত হয়। কিন্তু ফসল একই প্রজাতিভুক্ত না হইলে তাহা একত্রে যোগ করিয়া নেসাব পূর্ণ করা যাইবে না। যেমন ধান ও তৈলবীজ একই
৫৭৩
প্রজাতিভুক্ত নহে। পশুর যাকাতের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করিয়াছি যে, ছাগল, ভেড়া ও মেষকে এক প্রজাতি এবং গরু ও মহিষকে এক প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত করা হইয়াছে। কিন্তু উট ও গরুকে একই প্রজাতিভুক্ত গণ্য করা হয় নাই।
যেসব জিনিস ওজনের আওতায় আসে না, যেমন কার্পাস, পাট ইত্যাদি, তাহার গাঁট বাধিয়া ওজন করা হইলে এবং পাঁচ ওয়াসাক পূর্ণ হইলে উশর প্রদান বাধ্যকর হইবে। ইহা ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর অভিমত। ইমাম আবু ইউসুফ (র)-এর মতে উহার মূল্য নিরূপণ করিয়া উশর ধার্য হইবে।
যেসব কৃষিজ ফসল দ্বারা খােশবু ও ঔষধ প্রস্তুত করা হয় সেইগুলির উপর উশর ধার্য হইবে না। ২৩
ধারা-৮২৫ উশর বাধ্যকর হওয়ার পর রহিত হওয়া উশর প্রদান বাধ্যকর হওয়ার পর নিম্নোক্ত যে কোন কারণে তাহা রহিত হইয়া যাইবে—(ক) ফসল নষ্ট বা ধ্বংস হইয়া গেলে (খ) উশদাতা মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) হইয়া গেলে;
(গ) উশরদাতা ফসল নষ্ট বা ধ্বংস করিয়া ফেলার পর উশর প্রদানের ওসিয়ত না করিয়া মারা গেলে।
বিশ্লেষণ
প্রাকৃতিক দুর্যোগে অথবা অন্য কোন কারণে ফসল ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে এবং তাহাতে মালিকের কোন ভূমিকা না থাকিলে মালিক উশরের দায় হইতে অব্যাহতি লাভ করিবে। ফসল আংশিক অবশিষ্ট থাকিলে এবং তাহা নেসাব পরিমাণ হইলে উশর প্রদান বাধ্যকর হইবে। মালিক স্বেচ্ছায় ফসল ধ্বংস করিলে অথবা অন্য কেহ ধ্বংস করিলে মালিকের উপর উশুর প্রদান বাধ্যকর থাকিবে এবং ধ্বংসকারীর নিকট হইতে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হইবে। কিন্তু মালিক আহার করার মাধ্যমে ফসল নিঃশেষ করিয়া ফেলিলে উশর বাধ্যকর হইবে না।
উশর বাধ্যকর হওয়ার পর ফসলের মালিক মুরতাদ হইয়া গেলে সে উশরের দায় হইতে মুক্ত হইয়া যাইবে। কারণ উশরের মধ্যেও যাকাতের মত ইবাদতের
৫৭৪
ভাবধারা বিদ্যমান এবং অমুসলিম ব্যক্তি ইসলামী পন্থায় ইবাদত করিতে বাধ্য নহে। কিন্তু ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে কোন ব্যক্তি মুরতাদ হইলেও সে উশরের দায় হইতে অব্যাহতি পাইবে না।
উশরদাতা স্বেচ্ছায় ফসল নষ্ট বা ধ্বংস করিয়া ফেলার পর এবং উশর প্রদানের ওসিয়ত করিয়া যাওয়ার পূর্বে মারা গেলে উশর রহিত হইয়া যাইবে। কিন্তু ফসল অবশিষ্ট থাকিলে এবং উশর প্রদানের পূর্বে কোন ব্যক্তি মারা গেলে
ওয়ারিসগণ উক্ত ফসল হইতে উশর প্রদান করিবে। ২৪
ধারা-৮২৬
উশর ব্যয়ের খাতসমূহ উশর সেইসব খাতে ব্যয় করা হইবে ধারা (৮১৩) মোতাবেক যেইসব খাত যাকাত ব্যয়ের জন্য নির্ধারিত।
বিশ্লেষণ
উশর যেহেতু যাকাতেরই একটি শ্রেণী তাই উহা যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত লোকদের মধ্যে বণ্টিত হইবে। ২৫।
ধারা-৮২৭
উশর আদায়কারী কর্তৃপক্ষ ধারা (৮১০) মোতাবেক যাকাত আদায়কারী কর্তৃপক্ষই উশর আদায় করিবে।
ধারা—৮২৮
উশরী জমি (ক) কোন এলাকার অধিবাসীগণ ইসলাম গ্রহণ করিলে তাহাদের মালিকানাধীন জমি উশরী হইবে;
(খ) মুসলিম যোদ্ধাগণ কোন অমুসলিম এলাকা দখল করার পর সরকার
৫৭৫
উহা মুসলিমগণের মধ্যে বন্টন করিলে উক্ত জমি উশরী হইবে;
(গ) কোন মুসলিম ব্যক্তি সরকারের অনুমতি লইয়া অনাবাদী জমি আবাদ করিলে এবং তাহা উশরী ভূমির নিকটতর হইলে উহা উশরী জমি হিসাবে গণ্য হইবে;
(ঘ) মুসলিম ব্যক্তি তাহার বসতবাড়িকে কৃষি জমিতে পরিণত করিলে এবং তাহা উশরী পানি দ্বারা চাষাবাদ করিলে উহা উশরী জমি হিসাবে গণ্য হইবে;
(ঙ) খারাজী জমি উশরী পানি দ্বারা চাষাবাদ করা হইলে উহা উশরী জমি হিসাবে গণ্য হইবে;
(চ) উশরী জমি বংশ পরম্পরায় উশরীই গণ্য হইবে; (ছ) কোন মুসলিম ব্যক্তি ক্রয়সূত্রে উশরী জমির মালিক হইলে উহা উশরীই গণ্য হইবে;
(জ) মুসলিম ব্যক্তির যে জমি সম্পর্কে নিশ্চিতরূপে জানা যায় না যে, পূর্বে উহা খারাজী জমি ছিল না উশরী জমি, সেই ক্ষেত্রে উক্ত জমি উশরী গণ্য হইবে।
ব্যাখ্যা। (১) উশরী জমিতেসঞ্চিত বৃষ্টির পানি, উশরী জমিতে অবস্থিত কৃপ ও পুকুরের পানি এবং ব্যক্তি মালিকানাহীন খাল-বিল, নদী ও সমুদ্রের পানিকে “উশরী পানি” বলে।
(২) খারাজী জমিতে অবস্থিত কূপ, পুকুর ও ঝর্নার পানিকে “খারাজী পানি” বলে।
বিশ্লেষণ
কোন এলাকার অধিবাসীগণ স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করিলে তাহাদের দখলিভুক্ত জমির উপর খারাজ (কর) ধার্য না হইয়া বরং উশর বা অর্ধ-উশর ধার্য
হইবে। ২৬
৫৭৬
. মুসলিম সরকার সামরিক অভিযানের মাধ্যমে কোন এলাকা জয় করার পর তথাকার জমি সামরিক বাহিনীর মুসলিম সদস্যদের মধ্যে অথবা মুসলিম জনগণের মধ্যে বণ্টন করিয়া দিলে তাহাও উশরী জমি হিসাবে গণ্য হইবে। ২৭।
কোন এলাকার পতিত ভূমি সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে কোন মুসলিম ব্যক্তি চাষবাসের উপযোগী করিলে তাহা উশরী জমি গণ্য হইবে। এই ক্ষেত্রে ইমাম আবু ইউসুফ (র) বলেন, উক্ত জমি উশরী জমির সীমার মধ্যে হইলে উশরী এবং খারাজী জমির সীমার মধ্যে হইলে খারাজী জমি হিসাবে গণ্য হইবে। ইমাম মুহাম্মাদ (র) বলেন, উহা বৃষ্টির পানি অথবা আবাদকারীর খননকৃত কূপের পানি অথবা মুসলিম দেশের নদীর পানি দ্বারা চাষাবাদ করা হইলে উশরী জমি হইবে, অন্যথায় খারাজী জমি গণ্য হইবে। ২৮
কোন ব্যক্তি ক্রয়সূত্রে অথবা উত্তরাধিকারসূত্রে উশরী জমির মালিক হইলে তাহার উপর উশর ধার্য হইবে। উশরী জমি যে কোন বৈধ পন্থায় (যেমন হেবা, ওসিয়াত) মুসলিমগণের মধ্যে হস্তান্তরিত হইলে উহা উশরীই থাকিয়া যাইবে, খারাজী হইবে না। ২৯
মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (র) বলিয়াছেন, যে জমির অবস্থা কিছুই জানা যায় না এবং যাহা এখন মুসলমানদের মালিকানায় আছে তাহা মুসলমানদের নিকট হইতেই পাওয়া গিয়াছে বলিয়া গণ্য করিতে হইবে।
ফকীহগণ চাষাবাদে ব্যবহৃত পানিকে দুই ভাগে বিভক্ত করিয়াছেনঃ উশরী পানি ও খারাজী পানি। উশরী পানি সম্পর্কে বলা হইয়াছেঃ
وماء العشر هو ماء السماء والابار والعيون والانهار
العظام التي لا تدخل تحت الايدي کسيحون
وجيحون ودجلة والفرات ونحوها اذ لا سبيل الى اثبات اليد عليها وادخالها تحت الحماية
“ বৃষ্টি, কূপ, ঝর্না ও নদীর পানি, যাহা কাহারও ব্যক্তি মালিকানাধীন নহে, তাহাকে উশরী পানি বলে। যেমন সায়ন, জায়ন, দাজলা, ফুরাত ইত্যাদি নদীর পানি। কারণ উহা ব্যক্তির দখলিভুক্ত করা বা মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা যায় না।”
৫৭৭
খারাজী পানি সম্পর্কে বলা হইয়াছেঃ
و ماء الخراج هو ماء الأنهار الصغار التي حفرتها الاعاجم مثل نهر الملك و نهريزدجرد وغير ذالك مما يدخل تحت الايدى وماء العيون والقنوات المستنبطة من مال بیت المال –
“অমুসলিম সরকার কর্তৃক খননকৃত এবং তাহাদের মালিকানাভুক্ত কৃত্রিম হ্রদ, খাল এবং সরকারী অর্থ ব্যয়ে খননকৃত কূপ ও খালের পানিকে খারাজী পানি বলে।” ৩২ পানিকে এই দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করার গুরুত্ব রহিয়াছে। কেননা মুসলমানদের খারাজী জমি উশরী পানি দ্বারা চাষাবাদযোগ্য করা হইলে উহা উশরী জমিতে এবং উশরী জমি খারাজী পানি দ্বারা চাষাবাদযোগ্য করা হইলে উহা খারাজী জমিতে পরিণত হয় এবং তদনুযায়ী উশর বা খাজনা প্রদান বাধ্যকর হয়। অবস্থা ও পরিস্থিতির পর্যালোচনা করিলে এদেশে নিম্নোক্ত শ্রেণীর জমি পাওয়া যায়ঃ
১. মুসলিম শাসকগণের সময় হইতে উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জমি। ২. বাদশাহী আমলে ওয়াকফকৃত জমি।
৩. উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জমি, কিন্তু উহা কিভাবে পূর্বপুরুষদের অধিকারে আসিয়াছে তাহা অজ্ঞাত।
৪. যেসব জমি মুসলমানরা ক্রয় করিয়াছে অথবা দান কিংবা ওসিয়াতের মাধ্যমে লাভ করিয়াছে। যাহারা এই জমি বিক্রয়, দান অথবা হেবা করিয়াছেন তাহারাও উহা মুসলমানদের নিকট হইতে লাভ করিয়াছেন এবং এভাবে বংশ পরম্পরায় চলিয়া আসিয়াছে অথবা উহার পূর্ব অবস্থা অজ্ঞাত।
৫. যেসব জমি মুসলমানদের মালিকানাভুক্ত ছিল, কিন্তু ইংরাজ সরকার তাহা অন্যদেরকে দিয়াছে।
৬. যেসব জমি ইংরাজ সরকার মুসলমানদের দিয়াছে, কিন্তু পূর্বে উক্ত জমির মালিক কে ছিল তাহা অজ্ঞাত।
৭. যেসব অনাবাদী জমি মুসলমানরা আবাদয়োগ্য করিয়াছে এবং তাহা পূর্বে কাহারও মালিকানাভুক্ত ছিল না।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে মুসলমানদের যে জমি সম্পর্কে জানা
৫৭৮
যাইবে যে, উহা উশরী প্রকৃতির জমি, তাহাতে সন্দেহাতীতভাবেই উশর ধার্য হইবে। আর যে জমি সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে জানা যাইবে না যে, তাহা উশরী কৃতির না খারাজী প্রকৃতির, সেই জমিতেও খাজনার পরিবর্তে উশর ধার্য করাই
ম। এই সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জওয়াবে মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (র) ২ য়াছেন, “যে জমির অবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না এবং যাহা এখন
লমানদের মালিকানায় রহিয়াছে তাহা মুসলমানদের নিকট হইতে পাওয়া নি: ‘ছে বলিয়া বিবেচনা করা হইবে।
মুফতী শফী মরহুম বলেন, “পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা এবং উভয় দেশের সরকারের ভূসম্পত্তি বিনিময় সংক্রান্ত চুক্তির ফলে এসব জমি প্রথমত বায়তুল মালের আওতাভুক্ত হইয়াছে। অতঃপর সরকার কর্তৃক ভাগ-বাটোয়ারা হইয়া তাহা মুসলমানদের মালিকানাভুক্ত জমিতে পরিণত হইয়াছে। আর মুসলমানদের জমিতে তো উশরই ধার্য করিতে হয়। অতএব এইগুলি সব উশরযোগ্য জমি।৩৯
মুফতী আযীযুর রহমান বলেন, “ভারতে এই উপমহাদেশে যেসব জমি মুসলমানদের মালিকানায় রহিয়াছে তাহা উশরযোগ্য। কেননা মুসলমানদের ভূ-সম্পত্তিতে উশরই মূল কথা। কোন সন্দেহ দেখা দিলেও উশর দেওয়াই নিরাপদ।” অন্যত্র তিনি বলিয়াছেন, “ভারতের সকল জমিতে একই বিধি প্রযোজ্য নহে। তবে যে জমি মুসলিম মালিকানাভুক্ত, তাহাতে উশর দিতে হইবে।৩৫.
মাওলানা মুহাম্মাদ আমজাদ আলী কাদিরী স্বীয় গ্রন্থে বলেন, “উপমহাদেশে মুসলমানদের জমি খারাজযোগ্য সাব্যস্ত হইবে না, যতক্ষণ কোন সুনির্দিষ্ট জমির খারাজযোগ্য হওয়া শরীআত সম্মত দলীলের সাহায্যে প্রমাণিত না হয়। অর্থাৎ ঐ জমির উপর খারাজ ধার্য না হইয়া উশর ধার্য হইবে। কারণ মুসলমানদের জমিনে প্রথমত উশর ধার্য হওয়া উচিত। কেননা উশরের মধ্যে ইবাদতের ভাবধারা নিহিত রহিয়াছে, খাজনার মধ্যে উহা বিদ্যমান নাই।
ধারা-৮২৯
একত্রে খাজনা ও উশর ধার্যকরণ সরকার জমির উপর খাজনা ধার্য করিলেও উশর প্রদান বাধ্যকর থাকিবে।
৫৭১
বিশ্লেষণ
বর্তমান কালে উশর আদায়ের কোন সরকারী ব্যবস্থা নাই। বরং সরকারী ব্যবস্থাপনায় কেবল খাজনা (খারাজ) আদায় করা হইয়া থাকে। এইজন্য প্রশ্ন উঠিয়াছে যে, খাজনা দেওয়ার পরও উশর প্রদান করিতে হইবে কি না। এই বিষয়ে মুফতী মুহাম্মাদ শফী মরহুম বলেন, “সরকার জমির যে সরকারী খাজনা আদায় করে তাহা “উশর ও খারাজ”-এর শরীআত প্রবর্তিত নীতি অনুযায়ী আদায় করে না এবং উশর ও খারাজ নামেও আদায় করে না। উপরন্তু উহা উশর ব্যয়ের খাতে খরচ করারও কোন ঘোষণা সরকারের পক্ষ হইতে করা হয় নাই। তাই মুসলিম রাষ্ট্র কর্তৃক ধার্যকৃদ আয়কর অথবা জমির সরকারী খাজনা পরিশোধ করিলেও যাকাত ও উশরের ফরয দায় হইতে রেহাই পাওয়া যাইবে না, তাহা বহাল থাকিবে। বরং সম্পদের মালিকের নিজ নিজ যাকাত ও উশর হিসাব করিয়া নির্ণয় করিয়া তাহা উহার খাতসমূহে ব্যয় করা অবশ্য কর্তব্য।৩৮
একই গ্রন্থে মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (র)-এর একটি, ফতোয়া উদ্ধৃত করা হইয়াছে। তাহাকে জানানো হয় যে, কোন কোন আলেম সরকারী খাজনা দিলে উশর আদায় হইয়া যাইবে বলিয়া অভিমত দিয়াছেন। আপনার দৃষ্টিতে সঠিক মত কি? তিনি উত্তরে বলেন, “আমি তো ইহাই জানি যে, ইহাতে উশর আদায় হইবে না, যেমন আয়কর দিলে যাকাত আদায় হয় না। উক্ত আলেমগণ কিসের ভিত্তিতে উপরোক্ত কথা বলিয়াছেন তাহা আমার জানা নাই।” উক্ত গ্রন্থের পরবর্তী এক স্থানে মুফতী আযীযুর রহমানের একই অভিমত উল্লেখ করা হইয়াছে। ৩৯।
মাওলানা আবদুশ শাকূর লাখনাবী তদীয় গ্রন্থে লিখিয়াছেন, “সরকারী ভূমিরাজস্ব বাবদ যাহা প্রদান করা হয় তাহা উশর হিসাবে গণ্য হইতে পারে না। কেননা তাহা উশরের নিৰ্দ্ধারিত খাতে ব্যয় করা হয় না। কাজেই খাজনা দিলেও উশরের দায় হইতে অব্যাহতি পাওয়া যাইবে না।৪০
মাওলানা মুহাম্মাদ আমজাদ আলী স্বীয় গ্রন্থে লিখিয়াছেন, “সরকারকে যে খাজনা দেওয়া হয়, তাহা দ্বারা শরীআত আরোপিত খারাজ আদায় হয় না। বরং তাহা জমির মালিকের দায় হিসাবে থাকিয়া যাইবে এবং তাহাকে খারাজ দিতে হইবে।৪১
৫৮০
ইমাম মালেক, শাফিঈ, আহমাদ ইবন হাম্বলসহ জমহর ফকীহগণের মতে মুসলমানদের মালিকানাভুক্ত জমির উৎপাদনের উশর প্রদান করিতে হইবে, উক্ত জমি উশরীই হউক অথবা খারাজী। এই সকল ইমামের মতে মুসলমানদের মালিকানাভুক্ত জমিতে খারাজ আরোপের কারণে উশরের দায় হইতে অব্যাহতি পাওয়া যাইবে না।৪২ বরং খারাজী জমির উৎপাদনেরও উশর প্রদান করিতে হইবে। কারণ উশর সম্পর্কিত আয়াত ও হাদীসের বক্তব্য সাধারণ অর্থ জ্ঞাপক। তাহাতে এই কথা বলা হয় নাই যে, খাজনা দিলে উশরের দায় হইতে মুক্তি পাওয়া যাইবে। তাহাদের মতেঃ ১. মূল বা প্রকৃতিগত (315), ২, পাত্রগত (১১), ৩. কারণগত ( L), ৪. ব্যয়ের খাতগত ( ৯০), ও ৫. যুক্তিগত (13) দৃষ্টিকোণ হইতে উশর ও খাজনার মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। যেমন উশরের মধ্যে মূল বা প্রকৃতিগতভাবেই ইবাদতের ভাবধারা বিদ্যমান, কিন্তু খাজনার মধ্যে অপমান বা নীচতার ভাবধারা বিদ্যমান। পাত্রগত দিক হইতে উশর ধার্য হয় উৎপাদিত ফসলের উপর, আর খাজনা ধার্য হয় মালিকানার উপর। কারণগত পার্থক্য এই যে, জমিতে ফসল উৎপাদিত হওয়ার কারণে উশর প্রদান বাধ্যকর হয় অন্যথায় নহে, কিন্তু খাজনা ধার্য হয় জমির উৎপাদন ক্ষমতার কারণে। উশর ব্যয়ের খাত সুনির্দিষ্ট অর্থাৎ যাকাত ব্যয়ের খাতসমূহই, কিন্তু খাজনা ব্যয়ের খাতসমূহ সুনির্দিষ্ট নহে, উহা যেমন যাকাত ব্যয়ের খাতসমূহে খরচ করা যায়, তেমনি অন্যসব প্রয়োজনীয় খাতেও ব্যয় করা যায় যাহার দ্বারা ধনী-দরিদ্র, মুসলিম-অমুসলিম সকলে সমানভাবে উপকৃত হইতে পারে। উশর বাধ্যকর হওয়ার দলীল কুরআন ও সুন্নায় বিদ্যমান এবং খাজনা আরোপের দলীল বুদ্ধিভিত্তিক অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে সমাজের কল্যাণসাধন নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত
( المبني على مراعاة المصالح)
হানাফী ফকীহগণ তাহাদের মতের সমর্থনে যে হাদীস (“মুসলমানের জমিতে একই সংগে উশর ও খাজনা আরোপিত হইতে পারে না”) পেশ করিয়াছেন তাহা অত্যন্ত যঈফ। ইবন হিব্বান বলিয়াছেন, উহা মহানবী (স)-এর বক্তব্য নহে। ইমাম নববী (র) ইহাকে বাতিল বলিয়াছেন। বায়হাকী (র) বলিয়াছেন, উক্ত হাদীসের এক রাবী ইয়াহ্ইয়া ইবন আনবাসা যে দুর্বল তাহা সর্বজনবিধিত। কেননা তিনি মওযু (মনগড়া) হাদীস সিকাহ রাবীদের নামে বর্ণনা করার
৫৮১
অভিযোগে অভিযুক্ত। ইমাম সুয়ূতী (র) ইবন আব্বাস (রা) ও ইবন আদী (র) সম্পর্কে উল্লেখ করিয়াছেন যে, তাহারা দুইজনেই উপরোক্ত কথাটিকে বাতিল ঘোষণা করিয়া বলিয়াছেন যে, ইয়াহ্ইয়া ব্যতীত আর কেহই তাহা বর্ণনা করে নাই, সে ডাহা মিথুক (দাজ্জাল) ১৪৩
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে বর্তমানে যাহাকে খাজনা বলা হয় তাহার অস্তিত্ব নাই। তাহার পরিবর্তে ভূমি উন্নয়ন কর সকল ভূমির মালিকদের জন্য প্রদেয় হইয়াছে। বিষয়টি পরিষ্কার করিয়া বর্ণনা করা প্রয়োজন। এই উপমহাদেশে এবং পৃথিবীর প্রায় সব দেশে খাজনা বলিতে তাহাই বুঝায় যাহা প্রজা রাজা বা ভূম্যাধিকারীকে প্রদান করে। অর্থাৎ ভূমির মালিক হইল রাজা, ভূম্যাধিকারী এবং প্রজা খাজনা প্রদানের পরিবর্তে উহা ভোগ করে মাত্র। এই নীতি যখন কঠোরভাবে বিদ্যমান ছিল তখন এই উপমহাদেশে কোন প্রজা তাহার ভূমি বিক্রয় করিতে পারিত না, এমনকি দালান নির্মাণ, পুকুর খনন, বৃক্ষ রোপনও করিতে পারিত না। ঐগুলির জন্য রাজা বা ভূম্যাধিকারীর অনুমতির প্রয়োজন হইত এবং অনুমতি লইতে সেলামী দিতে হইত। নীতিগতভাবে বা আম্দর্শগতভাবে খাজনা ভূমির মালিকানার অবিচ্ছেদ্য অংশ বিবেচিত হইতে থাকিলেও ক্রমে ক্রমে প্রজার উন্নতি ঘটে এবং প্রায় সর্বক্ষেত্রে প্রজা আইনগতভাবে জমির মালিক হইয়া পড়ে। তাহারা হস্তান্তর, উত্তরাধিকার এবং সর্বপ্রকারের ভূমি ভোগ করিবার অধিকার প্রাপ্ত হয়। তবুও খাজনা না দিলে চরম অবস্থায় ভূমিখানি নিলামে বিক্রয় করিয়া ভূম্যাধিকারী তাহার প্রাপ্য আদায় করিবার হকদার থাকে।
১৯৫০ সালে এই অবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়। ঐ সালে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ এবং প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হয়। ইহার দ্বারা জমিদারী প্রথার উচ্ছেদ করা হয় এবং প্রজার সহিত রাষ্ট্রের সরাসরি সম্পর্ক স্থাপিত হয়। ক্রমান্বয়ে অবস্থা আরও পরিবর্তিত হয় এবং প্রজাকে জমির মালিক ঘোষণা করা হয়। ভূমির মালিক হইয়া যাইবার পর আর দখলকারকে প্রজা বলিয়া চিন্থিত করার মত নৈতিক অবস্থা থাকে না। সর্বশেষ আইন দ্বারা তাই খাজনা প্রথা লোপ করিয়া তদস্থলে ভূমি উন্নয়ন করের বিধান প্রবর্তিত হয়।
‘সুতরাং বর্তমান অবস্থায় বাংলাদেশে যাহা রাষ্ট্রকে দেওয়া হইতেছে তাহা
৫৮২
আইনের দৃষ্টিতে যেমন খারাজ নয়, তেমনি উশরও নয়। রাষ্ট্র ভূমি উন্নয়ন করিয়া দিবে এবং মালিক সেইজন্য কর প্রদান করিবে ইহাই বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিধান।
ধারা-৮৩০
খারাজী জমি নিম্নবর্ণিত অবস্থায় এবং নিম্নবর্ণিত প্রকৃতির জমি খারাজী জমি হিসাবে গণ্য হইবে—(ক) মুসলিম রাষ্ট্র কর্তৃক কোন এলাকা দখলের পর তথাকার জমি খাজনা প্রদানের শর্তে স্থানীয় অমুসলিমদের মধ্যে বণ্টন করা হইলে;
(খ) কোন অমুসলিম ব্যক্তি মুসলিম সেনাবাহিনীর সহিত মিলিত হইয়া যুদ্ধ করিলে এবং সেইজন্য তাহাকে জমি প্রদান করা হইলে;
(গ) কোন অনাবাদী জমি কোন অমুসলিম নাগরিক সরকারের অনুমতি লইয়া আবাদযোগ্য করিলে;
(ঘ) কোন এলাকার অমুসলিমগণ মুসলিম সরকারের সহিত খাজনা প্রদানের শর্তে চুক্তিবদ্ধ হইলে উক্ত এলাকার জমি;
(ঙ) অমুসলিম নাগরিকের নিকট হইতে ক্রয়কৃত মুসলিম ব্যক্তির জমি;
(চ) অমুসলিম নাগরিক কর্তৃক মুসলিম নাগরিকের নিকট হইতে ক্রয়কৃত উশরী জমি;
(ছ) যে উশরী জমি খারাজী পানি দ্বারা চাষাবাদ করা হয় সেই জমি;
(জ) মুসলিম ব্যক্তি তাহার বসতবাড়িকে কৃষি জমিতে পরিণত করিলে এবং তাহা খারাজী পানি দ্বারা চাষাবাদ করিলে সেই জমি।
বিশ্লেষণ
অমুসলিম রাষ্ট্রের কোন এলাকা মুসলিম রাষ্ট্রের দখলে আসার পর মুসলিম সরকার উক্ত এলাকার জমি তথাকার অমুসলিম মালিকগণের মধ্যে বণ্টন করিলে তাহা খারাজী জমি হিসাবে গণ্য হইবে। এই জমি ক্রয়-বিক্রয়, দান বা অন্য কোন বৈধ পন্থায় মুসলমানদের নিকট হস্তান্তরিত হইলেও তাহা খারাজী জমি
৫৮৩
হিসাবে গণ্য হইবে। এমনকি মালিকগণ পরে ইসলাম গ্রহণ করিলেও উক্ত জমি খারাজীই থাকিয়া যাইবে। যেমন সাওয়াদ এলাকার জমি খারাজী, উহার সীমা আযীব হইতে আকাবায় হুলওয়ান এবং আলাছ হইতে আবাদান পর্যন্ত। উক্ত এলাকা আয়ত্তে আসার পর উমার (রা) তথাকার অমুসলিম নাগরিকগণের জমিতে খাজনা আরোপ করেন, অতঃপর হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান ও উসমান ইব্ন হুনায়ফ (রা)-কে সেখানকার কর্মকর্তা নিয়োগ করেন। তাঁহারা ঐ এলাকার জমি জরিপ করার পর খাজনা নির্ধারণ করেন। নীতিগতভাবে মক্কা মুআজ্জমার উপরও খাজনা ধার্য হওয়া উচিৎ ছিল। কারণ তাহা সামরিক অভিযানের মাধ্যমে দখল করা হয় এবং তাহা সামরিক বাহিনীর মধ্যে বণ্টন না করিয়া তথাকার বশিন্দাগণের মধ্যেই বণ্টন করা হয়। মহানবী (স) বিশেষ কারণে অর্থাৎ হেরেম শরীফের সম্মানার্থে তথাকার জমির উপর খাজনা আরোপ করেন নাই। ৪
কোন এলাকার অমুসলিমদের সহিত কর প্রদানের শর্তে সরকার চুক্তিবদ্ধ হইলে তাহাদের জমিও খারাজী জমি হিসাবে গণ্য হইবে। মহানবী (স) নাজরানের খৃস্টানদেরকে নিয়মিত খাজনা প্রদানের শর্তে তাহাদের এলাকার কৃষিভূমি তাহাদের মালিকানায় সোপর্দ করেন এবং বৎসরে দুই কিস্তিতে তাহা পরিশোধের সুযোগ দান করেন।৫
সরকার কোন কারণে কোন এলাকার অমুসলিমদেরকে উচ্ছেদ করিয়া তাহাদের জমি আরেক দল অমুসলিমের মধ্যে বণ্টন করিলে উক্ত জমিও খারাজী হিসাবে গণ্য হইবে। মালিকের পরিবর্তনে খারাজী জমির বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হইবে না অর্থাৎ খারাজী ভূমি খারাজীই থাকিবে।৪৬
অমুসলিম নাগরিকগণ সরকারের অনুমতি লইয়া কোন অনাবাদী জমি চাষাবাদযোগ্য করিলে তাহাও খারাজী জমি হিসাবে গণ্য হইবে। সরকার সামরিক অভিযানের মাধ্যমে দখলকৃত জমি অমুসলিম নাগরিককে দান করিলে তাহাও খারাজী জমি হিসাবে গণ্য হইবে। কোন মুসলিম নাগরিক সরকারের অনুমতি লইয়া অনাবাদী জমি আবাদযোগ্য করিলে এবং তাহা খারাজী পানি দ্বারা চাষাবাদ করিলে উহাও খারাজী জমি হিসাবে গণ্য হইবে। মুসলমানদের উশরী জমি অমুসলিম ব্যক্তি ক্রয় করিলে তাহাও খারাজী জমি হিসাবে গণ্য হইবে। ৭
নদী সিকস্তি জমি জাগিয়া উঠিলে তাহা পূর্বের মালিকগণ ফিরাইয়া পাইবে
৫৮৪
এবং তাহারা মুসলমান হইলে তাহা উশরী পানি দ্বারা চাষাবাদ করা হইলে উশরী এবং খারাজী পানি দ্বারা চাষাবাদ করিলে খারাজী জমি হিসাবে গণ্য হইবে। অনুরূপভাবে নূতন জাগিয়া উঠা চরাভূমি মুসলিম নাগরিকগণের মধ্যে বণ্টন করা হইলে তাহা উশরী এবং অমুসলিম নাগরিকগণের মধ্যে বর্ণনা করা হইলে খারাজী জমি গণ্য হইবে।
একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, অমুসলিমদের মালিকানাভুক্ত জমি সর্বাবস্থায় খারাজী হইবে, তাহারা তাহা ক্রয়, দান, উত্তরাধিকার ইত্যাদি যে সূত্রেই মালিক হউক। পক্ষান্তরে মুসলমানদের মালিকানাভুক্ত জমি সর্বাবস্থায় উশরী হইবে, যতক্ষণ উহাকে খারাজী জমি হিসাবে গণ্য করার কোন কারণ না পাওয়া যায়।
ধারা-৮৩১
খারাজ ও উহার শ্রেণীবিভাগ (ক) জমির ভোগ-ব্যবহারের বিনিময়ে রাষ্ট্রকে প্রদত্ত অর্থ বা মালকে “খারাজ” বলে।
(খ) খারাজ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত—(১) জমির পরিমাণের ভিত্তিতে নগদ অর্থে যে খাজনা ধার্য করা হয় তাহাকে “খারাজে ওয়াজীফা” বলে;
(২) উৎপাদিত ফসলের “নির্দিষ্ট পরিমাণ” খারাজ হিসাবে নির্ধারণ করা হইলে তাহাকে “খারাজে মুকাসামা” বলে।
বিশ্লেষণ
ধারায় উল্লেখিত খারাজের সংজ্ঞা আবু উবায়দ ইবন সাল্লাম তাঁহার কিতাবুল আমওয়াল-এ প্রদান করিয়াছেন। তাঁহার মতে কোন ব্যক্তি কোন জমি নিজ মালিকানাধীন রাখিয়া উহা ভোগ-ব্যবহারের যে একচ্ছত্র অধিকার প্রাপ্ত হয়, তাহার জন্য সে রাষ্ট্রকে যে বিনিময় প্রদান করে উহাই খারাজ হিসাবে গণ্য। ৮।
মুফতী আমীমুল ইহসান বলেন, জমির উৎপাদন বা ভাড়া বাবদ যাহা অর্জত হয় তাহাকে খারাজ বলে।* মুজামু লুগাতিল ফুকাহা গ্রন্থে বলা হইয়াছে, “সামরিক অভিযানের মাধ্যমে দখলকৃত জমি সরকার অমুসলিম নাগরিকগণকে চাষাবাদ করিতে দেওয়ার বিনিময়ে তাহাদের নিকট হইতে যাহা গ্রহণ করে
৫৮৫
তাহাকে ‘খারাজ” বলে।৫° ইমাম আবু ইউসুফ (র)-এর মতে খারাজ ফাই-এর
শ্রেণীভুক্ত।৫১
খারাজকে আবার দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করা হইয়াছে। যেমন খারাজে ওয়াজীফা ও খারাজে মুকাসামা। রাষ্ট্র জমি জরিপ করিয়া উহার পরিমাণের ভিত্তিতে যদি খারাজ নির্ধারণ করে এবং তাহা নগদ অর্থে পরিশোধযোগ্য হয় তবে উহাকে খারাজে ওয়াজীফা (16, ) বা খারাজ বিল-মুসাহা ( ৭L UL) বলে।৫২ মহানবী (স)-এর যুগ হইতে আব্বাসী শাসক . আল-মাহদীর রাজত্বকালের সূচনা পর্যন্ত এই ধরনের খারাজই প্রচলিত ছিল। ৩ হযরত উমার (রা) হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান ও উসমান ইবন হুনায়ফ (রা)-র সাহায্যে ইরাকের সমগ্র এলাকার জমি জরিপ করাইয়া উহার উপর খারাজে ওয়াজীফা ধার্য করেন এবং ফসলের শ্রেণীবিভাগের ভিত্তিতে খারাজের পরিমাণে তারতম্য করেন।৫৪ অতঃপর আব্বাসী খলীফা মাহ্দী এই নীতি বদল করিয়া দ্বিতীয় প্রকারের খারাজ অর্থাৎ উৎপাদিত ফসলের এক-তৃতীয়াংশ বা এক-চতুর্থাংশ নির্ধারণ করেন। ইহাতে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিলে আব্বাসী খলীফা হারুনুর রশীদের অনুরোধক্রমে ইমাম আবু ইউসুফ (র) জমির উর্বরতা, পানির সহজলভ্যতা ও ফসলের শ্রেণীবিভাগের তারতম্যের ভিত্তিতে এই নীতির পুনর্বিন্যাস করেন এবং ২ ১ ১ ১ ৪. অংশ খারাজ ধার্য
৫, ৫, ১০, ৩ ১।
জমিতে যে ফসল উৎপন্ন হয় উহার একটি নির্দিষ্ট অংশ (যেমন এক-তৃতীয়াংশ, এক-চতুর্থাংশ, এক-পঞ্চমাংশ বা এক- দশমাংশ) খারাজ বাবদ প্রদান করা হইলে উহাকে খারাজে মুকাসামা বলে। মুসলিম রাষ্ট্র কোন এলাকা জয় করার পর তথাকার জমি স্থানীয় অধিবাসীগণকে উৎপাদিত ফসলের একটি নির্দিষ্ট অংশ সরকারকে প্রদান করার শর্তে চাষাবাদ করিতে দিলে উক্ত প্রদেয় অংশই খারাজে মুকাসামা হিসাবে গণ্য। মহানবী (স) খায়বার এলাকা জয় করার পর সেখানকার জমি ও ফলের বাগান উপরোক্ত শর্তে স্থানীয় অধিবাসীদের চাষাবাদ করিতে দেন।
আলাউদ্দীন খালজী (ভারতে) তাঁহার শাসনামলে খারাজে মুকাসামা প্রবর্তন
করেন। ৫৫
করেন।৫৮
খারাজের বৈধতা সম্পর্কে কুরআন মজীদের নিন্মােক্ত আয়াত পেশ করা হইয়াছেঃ।
ما أقاء الله على رسوله من أهل القرأی قلته وللرسول ولذي القربى و التمی و المساكين و ابن السبيل گي لا يكون دول بين الأغنياء
-২: “আল্লাহ এই জনপদবাসীদের নিকট হইতে তাঁহার রাসূলকে যাহা কিছু দিয়াছেন তাহা আল্লাহর, তাঁহার রাসূলের, রাসূলের স্বজনদের, ইয়াতীমদের, অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরদের, যাহাতে তোমাদের মধ্যে যাহারা বিত্তবান কেবল তাহাদের মধ্যেই ঐশর্য আবর্তন না করে”- (সূরা হাশরঃ ৭)।
‘খারাজ বৈধ হওয়ার দ্বিতীয় প্রমাণ পাওয়া যায় মহানবী (স)-এর কার্যক্রম হইতে। তিনি খায়বার এলাকার জমি খারাজ প্রদানের শর্তে স্থানীয় অধিবাসীদেরকে চাষাবাদ করিতে দেন। ফুতূহল বুলদান গ্রন্থে উল্লেখ আছে?
ثم رفعها رسول الله صلى الله عليه و سلم بارضها ونخلها الى اهلها مقاسمة على النصف مبايخرج من الثمر والحب وولى عليهم في ذالك عبد الله
– – – “অতপর রাসূলুল্লাহ (স) খায়বারের জমি ও খেজুর বাগান উহার মালিকগণের নিকট ফল ও ফসলের অর্ধেক খারাজ হিসাবে প্রদানের চুক্তিতে অৰ্পণ করিলেন এবং তাহাদের নিকট হইতে উহা আদায় করার জন্য আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা – (রা)-কে প্রশাসক নিয়োগ করেন।”
তৃতীয়ত, হযরত উমার (র) ইরাকের সাওয়াদ এলাকা এবং সিরিয়ার কৃষিভূমি খারাজ প্রদানের বিনিময়ে উহার মালিকগণের অধীনে ছাড়িয়া দেন।৬০
: ধারা—৮৩২
খারাজের নেসাব ও উহা ব্যয়ের খাত (ক) খারাজের নেসাব হইল পাঁচ ওয়াসাক অর্থাৎ ৯৪৮ কিলোগ্রাম ফসল
বা উহার সম-মূল্য।
(খ) সরকার প্রয়োজনমত যে কোন খাতে খারাজ ব্যয় করিতে পারিবে, এমনকি খারাজী ভূমির উন্নয়নের জন্যও উহা ব্যয় করিতে পারিবে।
(গ) সরকার ইচ্ছা করিলে খারাজের পরিমাণে হ্রাস-বৃদ্ধি করিতে পারে, এমনকি ইহা মওকুফও করিতে পারে।
বিশ্লেষণ
কোন ভূমিতে উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ পাঁচ ওয়াসাক বা উহার সমমূল্যের কম হইলে খারাজ প্রদান বাধ্যকর হইবে না। অর্থাৎ উক্ত পরিমাণের ফসলের ক্ষেত্রে জমির মালিক খারাজ প্রদান হইতে অব্যাহতি লাভ করিবে। ইহা ইমাম আবু ইউসূফ (র)-এর মত। ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে, জমিতে ফসল কম-বেশী যাহাই হউক, উশরের মত খারাজ প্রদানও বাধ্যকর
থাকিবে। ৬১
খারাজ ধার্য করা হয় সাধারণত সামরিক ব্যয়, রাষ্ট্র পরিচালন ব্যয় ও জনকল্যাণমূলক কার্যাবলীর ব্যয়ভার বহনের জন্য। খারাজী ভূমির উন্নয়নের জন্যও খারাজ ব্যয় হইতে পারে অর্থাৎ খারাজ ব্যয়ের ব্যাপারে সরকারের নিরংকুশ স্বাধীনতা রহিয়াছে। সরকার যেখানেই প্রয়োজন বােধ করিবে সেখানেই তাহা ব্যয় করিতে পারিবে। কিন্তু যাকাত ও উশর সরকার যে কোন খাতে ব্যয় করিতে পারে
, উহার নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় করিতে বাধ্য।
সরকার প্রয়োজন বােধ করিলে খারাজের পরিমাণ বাড়াইতে বা কমাইতে পারে। আব্বাসী খলীফা মাহদীর সময় যে হারে খারাজ ধার্য করা হইয়াছিল, হারুনুর রশীদ ইমাম আবু ইউসুফ (র)-এর পরামর্শে উহার পরিমাণ হ্রাস করেন।৬২ খারাজ যেহেতু যাকাত ও উশরের মত কুরআন ও সুন্নাহ কর্তৃক অলংঘনীয় ফরয দেয় হিসাবে ধার্য করা হয় নাই, বরং ইহার ভিত্তি হইল ইজতিহাদ, তাই সরকার জনগণের সামর্থ্য ও কল্যাণের দিক বিবেচনা করিয়া খারাজ মওকুফও করিতে পারে।
৫৮৮
ধারা-৮৩৩
খারাজ রহিত হওয়া (ক) নিম্নোক্ত যে কোন কারণে খারাজ রহিত হইয়া যাইবে—(১) কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বা শত্রুবাহিনীর আক্রমণে ফসল নষ্ট বা ধ্বংস হইয়া গেলে।
(২) জমি জলাবদ্ধ থাকায় অথবা জলমগ্ন হওয়ায় অথবা পানির অভাবে ফসল ফলানো সম্ভব না হইলে।
(৩) জমির উর্বরাশক্তি নষ্ট হইয়া যাওয়ার অথবা লবণাক্ত হইয়া পড়ার কারণে ফসল উৎপাদিত না হইলে।
(খ) ফসল উৎপাদনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও জমি অনাবাদি ফেলিয়া রাখিলে খারাজ রহিত হইবে না।
(গ) মালিক স্বেচ্ছায় ফসল ধ্বংস বা নষ্ট করিয়া ফেলিলে খারাজ রহিত হইবে না।
বিশ্লষণ কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে, যেমন জলোচ্ছাস, বন্যা, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, বজ্রপাত, পোকার আক্রমণ, অথবা মালিকের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কোন কারণে ফসল নষ্ট হইয়া গেলে খারাজ প্রদান বাধ্যকর হইবে না।’
জমি জলাবদ্ধ থাকিলে অথবা জলমগ্ন হইয়া পড়িলে এবং পানি নিষ্কাশনের কোন সহজসাধ্য ব্যবস্থা না থাকার কারণে অথবা পানির অভাবে জমি চাষাবাদ করা সম্ভব না হইলে খারাজ প্রদান বাধ্যকর হইবে না।
জমির উৎপাদন ক্ষমতা অর্থাৎ উর্বরাশক্তি নষ্ট হইয়া গেলে অথবা জমিতে লবণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসল উৎপাদিত না হইলে খারাজ প্রদেয় হইবে
।৬৫
জমি চাষাবাদ করিয়া ফসল উৎপাদনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ভূমি অনাবাদী ফেলিয়া রাখিলে মালিক উহার খারাজ প্রদান করিতে বাধ্য। কারণ তাহার
৫৮৯
ইচ্ছাকৃত অবহেলার কারণে জমিতে ফসল উৎপাদিত হইতে পারে নাই।
কোন ব্যক্তি ইচ্ছা করিয়াই অকারণে নিজ জমির ফসল নষ্ট করিয়া ফেলিলে সে খারাজের দায় হইতে রেহাই পাইবে না।
ধারা—৮৩৪
জবরদখলী জমির খারাজ জবরদখলী জমি, দখলদারের অধীনে থাকা অবস্থায়— (ক) ক্ষতিগ্রস্ত না হইলে দখলদারের উপর খারাজ প্রদান বাধ্যকর হইবে;
(খ) ক্ষতিগ্রস্ত হইলে মালিকের উপর খারাজ প্রদান বাধ্যকর হইবে।
বিশ্লেষণ
কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির মালিকানাভুক্ত জমি জবরদখল ( A) করার পর তাহা চাষাবাদ করার কারণে বা অন্য কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হইলে দখলদার উক্ত জমির খারাজ প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবে। জমিতে উৎপাদিত ফসল দখলদার পাইবে এবং মালিক ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকারী হইবে। জমি চাষাবাদ করার কারণে বা অন্য কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হইলে মালিক খারাজ প্রদান করিবে। ইমাম মুহাম্মাদ (র) বলেন, ক্ষতিপূরণের সম্ভাব্য পরিমাণ খারাজের তুলনায় অধিক হইলে মালিক খারাজ প্রদান করিবে এবং খারাজ বাবদ প্রদত্ত অর্থ জবরদখলকারীর নিকট হইতে আদায় করিয়া লইবে। ক্ষতিপূরণেন সম্ভাব্য পরিমাণ খারাজের তুলনায় কম হইলে জবরদখলকারী খারাজ প্রদান করিবে এবং সে ক্ষতিপূরণ প্রদানের দায় হইতে অব্যাহতি পাইবে।
ধারা—৮৩৫
খারাজী বা উশরী জমি ইজারা দিলে (ক) খারাজী জমি ইজারায় প্রদান করা হইলে ইজারাদাতা অর্থাৎ জমির মালিক খারাজের দায় বহন করিবে।
(খ) উশরী জমি ইজারায় প্রদান করা হইলে ফসলের মালিক উশর প্রদান করিবে।
বিশ্লেষণ
জমির খারাজ অর্থাৎ খাজনা জমির মালিকই বহন করিবে, জমি ইজারা বা ভাগচাষে প্রদান করা হইলেও। ইমাম মুহাম্মাদ (র) তাঁহার কিতাবুস সিয়ার-এ বলেনঃ
فان الخراج يجب على المستاجر ولا يجب على
الأجر.
• জমির খারাজ প্রদান ইজারাদাতার উপর বাধ্যকর হইবে, ইজারাদারের উপর বাধ্যকর হইবে না।”৬৮
ولوا أن حزبيا دخل دار الإسلام بأمان فاستأجر رضا من أرض الخراج فزرعها فخراج الأرض
على صاحبها وليس على الثراع شیئ۔
–
“শত্রু রাষ্ট্রের কোন নাগরিক নিরাপত্তামূলে ইসলামী রাষ্ট্রে প্রবেশ করিয়া খারাজী জমি ইজারা লইয়া চাষাবাদ করিলে উক্ত জমির খারাজ প্রদান উহার মালিকের উপর বাধ্যকর হইবে, চাষাবাদকারীর উপর নহে। ৩৯
উঃ জমি ইজারা প্রদান করা হইলে ইজারাদারকে উশর প্রদান করিতে হইবে। কারণ উশর উৎপাদিত ফসলের ভিত্তিতে প্রদান করা হয়। অতএব যে ফসল পাইবে সে উশর প্রদান করিবে।
তথ্য নির্দেশিকা ১. বাদাই, ২খ, পৃ. ৫৬। ২. ঐ, ২খ, পৃ. ৫৫। ৩. বাদাই, ২, পৃ. ৫৬। ৪. বাদাই, ২, পৃ. ৫৭। ৫. বাদাই, ২খ, পৃ. ৫৭। ৬. বাদাই, ২খ, পৃ. ৫৭। 9. Land revenue and development cess shall not be levied on land on the
produce of which ushrx or contribution in lieu thereof, has been charged on compulsory basis (যাকাত ও উশর অধ্যাদেশ, ১৯৮০ খৃ., অধ্যাদেশ নং ১৮, ১৯৮০
খৃ., ধারা নং ২৫ (বি), পৃ. ৯৮)। ৮. বাদাই, ২খ, পৃ. ৫৮। ৯. বাদাই, ২খ, পৃ. ৫৮। ১০. বাদাই, ২খ, পৃ. ৫৬। ১১. বাদাই, ২খ, পৃ. ৫৬। ১২. বাদাই, ২, পৃ. ৫৬। ১৩. বাদাই, ২খ, পৃ. ৫৬। ১৪. নাসাঈ, যাকাত, বাব যাকাতিল হক্ব। ১৫. আবু দাউদ, যাকাত, বাব মা তাজিবু ফীহিয়- যাকাত, নং ১৫৫৮, ১৫৫৯; বুখারী, যাকাত, ২খ,
পৃ. ১৩৩; মুসলিম, যাকাত, নং ১৭৯; তিরমিযী, যাকাত, বাব সাদাকাতিয-যারই, নং ৬২৬; নাসাঈ, যাকাত, বাব যাকাতিল ইবিল, নং ২৪৪৭; ইন মাজা, যাকাত, বাবা মা তাজিব ফীহিয়
যাকাত মিনাল আমওয়াল, নং ১৭৯৪, ১৮৩২। ১৬. আবু দাউদ, যাকাত, বাব সাদাকাতিয যারই, নং ১৫৯৬; বুখারী, যাকাত, বাবুল উশর ফীমা সুকিয়া
মিন মাইস-সামা; তিরমিযী, যাকাত, বাবুস সাদাকা ফীমা ইয়াসকী বিল-আনহার, নং ৬৪০; নাসাঈ, যাকাত, বাব মা ইউজিবুল উশর, নং ২৪৯০; ইবন মাজা, যাকাত, বাব সাদাকাতিয-যুরুই,
নং ১৮১৭। আরও দ্র. আবূ দাউদ, নং ১৫১৭; মুসলিম, নং ৯৮১; নাসাঈ, নং ২৪৯১। ১৭. যাকাত ও উশর অধ্যাদেশ, ১৯৮০ খৃ., অধ্যাদেশ নং ১৮/১৯৮০ খৃ., ধারা নং ৫(২), পৃ. ৮৫। ১৮. বাদাই, ২, পৃ. ৬২।. তবে অন্য মাযহাবে উৎপাদন খরচ বাদ দেওয়া বৈধ (ইসলামের যাকাত
বিধান, ১, পৃ. ৪৬৪-৯)। ১৯. বাদাই, ২২, পৃ. ৬২। ২০. বাদাই, ২২, পৃ. ৬২। ২১. বাদাই, ২খ, পৃ. ৬১।
৫১২
২২. বাদাই, ২খ, পৃ. ৬০-৬১। ২৩. পূর্ণ আলোচনার জন্য দ্র. বাদাই, ২খ, পৃ. ৫৮-৬১; ইসলামের যাকাত বিধান, ১৩, পৃ. ৪২৯ প.। ২৪. বাদাই, ২২, পৃ. ৬৫। ২৫. ইসলামের যাকাত বিধান, ১খ, পৃ. ৪৮৯। ২৬. বাদাই, ২খ, পৃ. ৫৭; ইসলামের যাকাত বিধান, ১খ, পৃ. ৪৭৭। ২৭. বাদাই, ২খ, পৃ. ৫৭; ইসলামের যাকাত বিধান, ১খ, পৃ. ৪৭৮। ২৮. বাদাই, ২খ, পৃ. ৫৮; ইসলামের যাকাত বিধান, ১খ, পৃ. ৪৭৮। ২৯. সাইয়েদ মুহাম্মাদ আলী, উশর, পৃ. ৫-৬। ৩০. ইমদাদুল ফাতাওয়া, তাতিমা উলা, পৃ. ৫০। ৩১. বাদাই, ২খ, পৃ. ৫৮। ৩২. বাদাই, ২খ, পৃ. ৫৮। ৩৩. ইসলাম কা নিজামে আরাদী, পৃ. ১৬৩-এর বরাতে রাসায়েল ও মাসায়েল (বাংলা অনু, ৬খ, পৃ. ১০৪। ৩৪. ইমদাদুল ফাতাওয়া, তাতিমা উলা, পৃ. ৫০। ৩৫. ঐ গ্রন্থ, পৃ. ১৭০-এর বরাতে রাসায়েল ও মাসায়েল, ৬খ, পৃ. ১০৪-১০৫। ৩৬. বাহুরে শারীআত, ৫খ, পৃ. ৪০-এর বরাতে রাসায়েল ও মাসায়েল, ৬খ, পৃ. ১০৬। ৩৭. বাদাই, ২খ, পৃ. ৫৭। ৩৮. ইসলাম কা নিজামে আরাদী, পৃ. ১৮৩। ৩৯. ইসলাম কা নিজামে আরাদী। ৪০. ইলমুল ফিকহ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৯-এর বরাতে রাসায়েল ও মাসায়েল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ১০৫। ৪১. বাহুরে শারীআত, ৫খ, পৃ. ৫৪। ৪২. সায়্যিদ আহমাদ উক্লজ কাদিরী, উশর ওয়া যাকাত আওর সূদ কে চান্দ মাসাইল, দিল্লী ১৯৮২ খৃ.
(২য় সং), পৃ. ৮৮-৯। ৪৩. ইসলামের যাকাত বিধান, ১খ, পৃ. ৪৯০। ৪৪. বাদাই, ২খ, পৃ. ৫৮। ৪৫. বাদাই, ২, পৃ. ৫৮। ৪৬. ঐ, ২খ, পৃ. ৫৮। ৪৭. ঐ, ২খ, পৃ. ৫৮; ইসলাম কা কানূনে মাহাসিল, পৃ. ১০০-১০১। ৪৮. আবু উবায়দ, কিতাবুল আমওয়াল, পৃ. ৭৩-এর বরাতে ইসলাম কা কানূনে মাহাসিল, পৃ. ১০৪। ৪৯. আমীমুল ইহসান, কাওয়াইদুল ফিকহ, পৃ. ২৭৫৪
الخراج ما حصل من ربيع ارض او كرائها.
৫০. মুজামু লুগাতিল ফুকাহা, পৃ. ১৯৪৪
৫৯৩
من الضرائب على الأرض المفتوحة عنو ة الخراج ما تاخذه الدولة
او الارض التي صالح اهلها عليها .
আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ২৩ খ, পৃ. ৫২৪
الضريبة التي يفرضها الامام على الارض الخراجية فهو الوظيفة او
…।
৫১. ইমাম আবু ইউসূফ (র), কিতাবুল খারাজ, পৃ. ২৩৪
فاما الف فهو الخراج عندنا خراج الارض.
৫২. কাওয়াইদুল ফিকহ পৃ. ২৭৫ :
هي الوظيفة المعينة التي توضع على ارض .
মুজামু লুগাতিল ফুকাহা, পৃ. ১৯৪৪
الضرابية المقطوعة المفروضة على الارض.
আরও দ্র. বাদাইউস-সানাই, ২খ, পৃ. ৬২। ৫৩. ইসলাম কা কানূনে মাহাসিল, পৃ. ১০৩-৪। ৫৪. বাদাইউস-সানাই, ২খ, পৃ. ৬২। ৫৫. ঐ গ্রন্থ, পৃ. ১০৩। ৫৬. কাওয়াইদুল ফিকহ, পৃ. ২৭৬৪
و خعين جزء من الخارج يضع الامام عليه ه
মুজামু লুগাতিল ফুকাহা, পৃ. ১৯৪৪
سرابية المأخوذه من انتاج الارض بنسبة معينة.
৫৭. বাদাইউস সানাইস, ২য় খণ্ড, পৃ. ৬৩ ৫৮. ইসলাম কা কানূনে মাহাসিল, পৃ. ১০৪। ৫৯. আবুল হাসান আল-বালাযুরী, ফুতুহল বুলদান, কায়রো ১৩৫০/১৯৩২, পৃ. ৩৪। ৬০. কিতাবুল থারাজ, পৃ. ২৫। ৬১. আবু ইউসুফ, কিতাবুল খারাজ, পৃ. ৫২৪,
الى هذه الصفة واذا لمع فيه الخراج و اذا كان في ارض الخراج ف
تبلغ قيمة ذلك قيمة خمسة أوسق فلا مثيئ فيه.
৬২. ইসলাম বা কানে মাহাসিল, পৃ. ১০৩। ৬৩. বাদাই, ২খ, পৃ. ৫৪। ৬৪. বাদাই, ২খ, পৃ. ৫৪। ৬৫. ইসলামের যাকাত বিধান, ১খ, পৃ. ৪৮৭।
৫৯৪
“
৬৬. বাদাই, ২, পৃ. ৫৪। ৬৭. বাদাই, ২খ, পৃ. ৫৬।
৮. ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর কিতাবুস সিয়ার আল-কাবীর, ৪খ, পৃ. ৩৫৪-এর বরাতে ইসলাম কা
কানে মিহনাত ওয়া উজরাত, পৃ. ৩৭-৮। ৬৯. পূর্বোক্ত বরাত।