৩১ মার্চ, বুধবার ১৯৭১
সকালে শরীফ নিজেই বেরোলো মার বাজার করার জন্য। অজিত নিয়োগীও বাড়িতে আছেন, একটু বেশি করে বাজার করে দিয়ে আসবে।
শরীফ বেরিয়ে যাবার একটু পরেই দেখি, ওমা! মা নিজেই রিকশা করে এসে হাজির! কি ব্যাপার?
মা বললেন, আমি যদি অজিত নিয়োগীর দুবেলার খাবারটা রান্না করে পাঠাই, তাহলে খুব ভালো হয়। কারণ একটাও কাজের লোক নেই, মার শরীর অশক্ত। নিজেরা অনেক সময় এক তরকারি দিয়ে খেয়ে নেন। নিয়োগীকে তো সেভাবে দেওয়া যাবে না।
আরেকটা কাজ বাড়ল। তাতে কোনো ঝামেলা নেই, সমস্যা হল রোজ দুবেলা টিফিন-ক্যারিয়ারে খাবার নেওয়ার সময় ও বাড়ির সামনে কেউ দেখে না ফেলে। এ বাড়িতেও বারেক-কাসেমরা যেন বুঝতে না পারে, কোথায় খাবার যাচ্ছে। ওদের বলা হল হাসপাতালে অসুস্থ আত্মীয়য়ের জন্য খাবার পাঠানো হচ্ছে।
৩১ তারিখে আরো দুটো পত্রিকা বেরিয়েছে–দৈনিক পাকিস্তান ও পূর্বদেশ। চারটে পত্রিকাতেই ইস্ট পাকিস্তানের পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হওয়ার পথে–এ কথা ফলাও করে লেখা হয়েছে। পূর্বদেশের লেখার মাঝখানে একটা লাইন একেবারে বুকে এসে ঘা মারল : শান্তিপ্রিয় বেসামরিক নাগরিকদের যেসব সশস্ত্র দুষ্কৃতকারী হয়রানি করছিল, তাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তা সাফল্যের সঙ্গে সমাপ্ত হয়েছে।
মর্নিং নিউজ হেডলাইন দিয়েছে:ইয়াহিয়াজ স্ট্যান্ড টু সেভ পাকিস্তান প্রেইজড। পাকিস্তান রক্ষায় ইয়াহিয়ার দৃঢ় সঙ্কল্প প্রশংসিত।
ইয়াহিয়া লডেড ফর রাইট স্টেপস টু সেভ কান্ট্রি দেশরক্ষায় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ইয়াহিয়া নন্দিত।
অক্ষম রাগে আর অপমানে ফালাফালা করে ছিড়ে ফেললাম কাগজ দুটো। এ ছাড়া আর কিইবা করার ক্ষমতা আছে আমাদের।