একত্রিশ
অনিমেষ হো হো করে হেসে উঠল। যেন খুব মজার কথা শুনছে এমন ভঙ্গীতে বলল, ‘আপনাদের মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি?’
ছোটমা একটু থিতিয়ে গেলেন। কিন্তু সন্দেহটা স্পষ্টই প্রকাশ করলেন এবার, ‘তোমরা কালীঘাটে গিয়ে মালাবদল করোনি?’
কথা বলার সময়েই অনিমেষ ঠাওর করতে চাইছিল ছোটমা এসব কথা বললেন কেন? মাধবীলতার সঙ্গে কি এ বিষয়ে কোন আলোচনা হয়েছে। কি বলেছে সে? আর যাই হোক মাধবীলতা কালীঘাটের বিয়ের কথা নিশ্চয়ই বানিয়ে বলতে যাবে না। সে হাসিহাসি মুখেই বলল, ‘এসব কে শোনালো?’
‘যেই শোনাক আমি তোমার মুখেই সত্যি কথাটা শুনতে চাই।’
ছোটমার মুখ দেখে এবার অনিমেষের মনে হল ব্যাপারটা আর হাসিঠাট্টার মধ্যে নেই। কিন্তু সেই সঙ্গে তার মনটা তেতো হয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ তাদের বিয়ে নিয়ে এঁদের এত চিন্তার কি প্রয়োজন? সে ধীরে ধীরে খাটের ওপর বসল, কালীঘাটের বিয়েতে আপনার আপত্তি আছে?’
‘হ্যাঁ আছে। ওটা কোন বিয়েই নয়।’
অনিমেষ এবার মুখ তুলল সরাসরি, ‘না, আমাদের কালীঘাটে বিয়ে হয়নি। ওসব খুব ছেলেমানুষী।’
ছোটমার বুক থেকে যেন একটা রুদ্ধ বাতাস বেরিয়ে এল, ‘কিন্তু তোমার বউ যেন সেরকমই—। কোথায় বিয়ে হয়েছিল?’
অনিমেষ বলল, ‘এসব কথা নিয়ে আর আমি আলোচনা করতে চাই না। আমাদের বিয়ে হয়েছে। অতবড় ছেলে রয়েছে, ব্যাস, সেটাই শেষ কথা। কোথায় হয়েছে কিভাবে হয়েছে তা এত বছর বাদে জেনে লাভ কি!’
ছোটমার মুখ এবার গম্ভীর, ‘আমি চেয়েছিলাম তোমার জ্যাঠামশাই আর তুমি যেন এক না হয়ে যাও। ভগবান!’
‘মানে?’ অনিমেষ ঈষৎ চমকালো।
‘তোমার জ্যাঠামশাই কোথায় কিভাবে বিয়ে করেছিলেন এ বাড়ির কেউ তা জানেন না। তোমার দাদু কখনই তাঁর সেই বিয়েকে মানেননি তাই ওদের জায়গা হয়নি এখানে। এখন তো সম্পত্তি নিয়ে মামলা চলছে। তোমার কাকার সঙ্গে তিনি দেখা করেছিলেন। তোমার বিয়ের কথা নাকি তিনি জেনেছেন। আর তারপর থেকে বলে বেড়াচ্ছেন একটা অজাত কুজাতের মেয়েকে ধরে এনে ঘরে তুলেছ তুমি। তাঁর বেলায় যদি শাস্তি দেওয়া হয় তাহলে তোমাকে কেন খাতির করা হবে।’ কথাগুলো বলতে বলতে ছোটমার চোখ জলে ভরে গেল।
অনিমেষ মুখ ফেরাল, ‘আমি তো তোমাদের খাতির চাইনি।’
‘এভাবে কথা বলতে পারছ? তোমার মনে কি একটুও দয়ামায়া নেই। শুনেছি তুমি মানুষ খুন করতে—।’
‘মানুষ খুন করতাম! কে বলল?’
‘শুনেছি। তুমি খুন করেছ বলেই পুলিশ তোমার এই অবস্থা করেছে।’
‘হয়তো। তা জেনেশুনে আমাকে ডেকে আনলে কেন? এত বছর তো আমি তোমাদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ করিনি। আমি আমার মত ছিলাম। বাবা অসুস্থ এই টেলিগ্রাম পাঠিয়ে আসতে বললে কেন?’
‘আমি কি ভেবেছি তুমি এত দূরে সরে গেছ? এত!’ খাবারের থালাটাকে ঘরে রেখে ছোটমা বেরিয়ে গেলেন। অনিমেষ সেই যাওয়াটা দেখল। খিদে পেয়েছে, অনর্থক এসব নিয়ে মাথা গরম করার কোন মানে হয় না। অনিমেষ খাবারের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল, সে কি সত্যি পাল্টে গেছে? এরকম পরিস্থিতিতে সে কি আগে খেতে পারত? জ্যাঠামশাই হলে কিছু গায়ে মাখতো না। অবলীলাক্রমে খেয়ে নিত। সত্যি তো, দুজনের ক্ষেত্রে দুরকম শাস্তি হবে কেন?
মাধবীলতা একটা লুচি ভেঙে কোনরকমে গলা দিয়ে নামিয়েছিল। তার সামনে বসেছিলেন হেমলতা। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কি হল, আর খাবে না?’
‘আর ভাল লাগছে না পিসীমা।’
‘কেন?’
মাধবীলতা মুখ নামাল। সত্যি, তার শরীর গোলাচ্ছিল। সেই কষ্টটাই খোলামনে বলল সে। সঙ্গে সঙ্গে সরল গলায় হেমলতা শুধালেন, ‘ওমা, বাচ্চাকাচ্চা হবে নাকি তোমার?’
ভূত দেখার মত চমকে উঠল মাধবীলতা। সোজা হয়ে বসে বলল, ‘না, না।’
‘তাহলে গা গোলাচ্ছে কেন? খেয়ে নাও। কখন ভাত হবে কে জানে!’
মাধবীলতা এই বৃদ্ধার দিকে তাকাল। মানুষটির যে গল্প সে অনিমেষের মুখে শুনেছে তার সঙ্গে কোন অমিল নেই। এত সরল এবং সহজেই কাছের মানুষ করে নেওয়ার ক্ষমতা আজকাল খুব কম লোকের থাকে। কিন্তু ছোটমার বর্ণনার সঙ্গে এখনকার চেহারা এবং চরিত্র মোটেই মিলছে না। বিয়ে নিয়ে উনি এমন নাছোড়বান্দা হলেন যে কিছুতেই সেটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না সে। হেমলতার মুখের দিকে তাকিয়ে মাধবীলতার এবার মনে হল ছোটমা অন্যায় কিছু করেননি। ওঁদের তো কৌতূহল থাকতেই পারে। হাজার হোক অনিমেষ এ বাড়ির একমাত্র ছেলে। সম্পর্ক না রাখলেও আজ যখন এঁরা ওকে চোখে দেখতে পাচ্ছেন তখন—। হঠাৎ মাধবীলতার মনে হল সে অন্যায় করেছে। জেল থেকে বের হবার পর অনিমেষকে জোর করে ধরে রাখার কোন কারণ ছিল না। শুধু তাকে ভালবাসার জন্যে অনিমেষকে এতবছর ধরে বস্তির ওই ঘরে কষ্ট পেতে হয়েছে। এতবড় বাড়ি, এই সুন্দর বাগান যার, তাকে ওই অন্ধকূপে আটকে রাখার কোন মানে হয় না।
হেমলতা চা ঢালতে ঢালতে বললেন, ‘আমাদের বাড়িতে অনেকদিন বাদে আজ চা হল। এই চা পাতাগুলো অনেক পুরোনো। কেমন হবে কে জানে। আমি বাবা চা বাগানে জন্মেও ভাল চা বানাতে পারি না।’
মাধবীলতা দ্বিতীয় লুচিটি মুখে দিয়েছিল, জিজ্ঞাসা করল, ‘আপনারা চা খান না বুঝি!’
‘না। মহী তো শুয়েই আছে। ছোট বউ খায় না। আমার অভ্যেস নেই।’
‘তাহলে আমাদের জন্যে মিছিমিছি করতে গেলেন কেন?’
‘ওমা, আমরা খাই না বলে তোমরা খাবে না কেন? তোমার ছেলে চা খায়?’
মাধবীলতা মাথা নাড়ল, ‘ওর তেমন ঝোঁক নেই।’
‘তাহলে ওকেও দিই একটু। হ্যাঁ গো, কালীঘাটের বিয়েতে কি কি হয়?’
মাধবীলতা গম্ভীর হতে গিয়েও হেসে ফেলল, ‘পিসীমা, বিশ্বাস করুন, আমি ওই ব্যাপারে কিছুই জানি না। কালীঘাটে আমাদের বিয়ে হয়নি।’
‘সে কি কথা! তখন যে ছোটবউ বলল?’
‘উনি বললেন, কিন্তু আমি কিছু বলার আগেই—!’ মাধবীলতা কথা শেষ করল না। কারণ ছোটমা এসে দাঁড়িয়েছিলেন দরজায়। তাঁকে দেখে হেমলতা বললেন, ‘এই ছোট, অনি কালীঘাটে গিয়ে বিয়ে করেনি।’
‘শুনলাম। চা হয়েছে?’
‘হ্যাঁ। এই যে। লোকে যে কেন মিছিমিছি বদনাম ছড়ায়—।’
‘লোকে নয়, আপনার ভাই।’
‘ওঃ, কি বদমাস, কি বদমাস। জানো, বাড়ির জন্যে মামলা করছে আবার মাঝে মাঝে এসে কথা শুনিয়ে যাচ্ছে।’
একটা থালায় দুটো কাপ তুলে নিয়ে ছোটমা বললেন, ‘মুখে এসব বলছেন আর তিনি এলে তো ভিজে কাদা হয়ে যান।’ তারপর চা নিয়ে বেরিয়ে গেলেন বড় বাড়ির দিকে। আর সঙ্গে সঙ্গে ডুকরে কেঁদে উঠলেন হেমলতা, ‘কী করব! নিজের ভাই হাজার হলেও। মুখের ওপর খারাপ কথা বলতে পারি না যে। ভগবান যে আমাকে আর কত যন্ত্রণা দেবেন কে জানে!’
মাধবীলতা কি করবে বুঝতে পারছিল না। হেমলতাকে কাঁদতে দেখে ওর শরীরের অস্বাভাবিকতা যেন চট করে মিলিয়ে গেল। সে শুধু বলতে পারল, ‘পিসীমা কাঁদবেন না।’
হেমলতা আঁচলে মুখ চোখ মুছতে মুছতে বললেন, ‘কোথায় কাঁদছি!’ আর তারপরেই খুব স্বাভাবিক গলা বেরিয়ে এল তাঁর, ‘কি রান্না হবে জানি না।’
মাধবীলতা জিজ্ঞাসা করল, খানিকটা ভেবেই, ‘আপনাদের বাজার কে করেন?’
‘কে আর করবে? একে ধরে ওকে ধরে আনাতে হয়। বাজার তো অনেক দূর। বাবা বেঁচে থাকতে নিজেই করতেন। শেষের দিকে আর পারতেন না। তখন থেকে পাশের এক নেপালি ছোঁড়াকে ধরে আনানো হয়। আর বাজারই বা কি। আলু পটল কুমড়ো। মহীতোষ ব্যাঙ্ক থেকে যে সুদ পায় তাতেই চালাতে হয়। মাসে সাতশ টাকা। মাছ মাংস ডিম তো এ বাড়িতে হয় না। তার ওপর মামলার খরচ আছে।’ হেমলতা এখন একদম স্বাভাবিক। একটু আগের ডুকরে কেঁদে ওঠার সঙ্গে এই চেহারা একদম মেলে না। মাধবীলতা ওই ছোট্ট পাখির মত শরীরটার দিকে অপলক তাকিয়েছিল। কথাটা শুনেই তার মাথায় চিন্তাটা ঢুকে পড়ল। অর্ককে পাওয়া দরকার। কিন্তু এ বাড়ির অনেকটাই তার এখনও অচেনা। সে ছেলে কোথায় গিয়ে বসে আছে কে জানে! তাছাড়া প্রথম দিনেই আগ বাড়িয়ে কিছু করতে গেলে এঁদের সেটা কেমন লাগবে তাও সে বুঝতে পারছে না।
হেমলতা বললেন, ‘তাড়াতাড়ি চা খাও, ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। মহীর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই।’
একা একা খাবারগুলো শেষ করতে করতে অর্ক ভাবছিল, জায়গাটা অদ্ভুত। কোথাও কোন শব্দ নেই শুধু পাখির ডাক ছাড়া। কি করে যে ওঁরা এখানে থাকেন তা সে বুঝতে পারছিল না। এই বাড়িতে সে বেশীদিন থাকতে পারবে না। পাশের ঘরের দিকে তাকাল অর্ক। দাদুর কোন শব্দ শোনা যাচ্ছে না। মানুষটা বিছানায় পাথরের মত পড়ে আছেন। এরকম বেঁচে থাকার কি মানে? কিন্তু লোকটা বোধহয় ভাল। ওঁর হাতটা কিন্তু খুব ঠাণ্ডা। এইসময় ছোটমা চা নিয়ে এলেন। সামনে রেখে বললেন, ‘তোমার স্কুল এখন খোলা?’
‘হ্যাঁ। অর্ক চায়ের দিকে তাকাল। চায়ের বদলে ওটাকে দুধ বলাই ভাল। ও বুঝতে পারছিল না এঁরা তাকে ছোট ভেবে ওইরকম চা দিচ্ছেন কিনা।
ছোটমা অর্ককে দেখছিলেন। লম্বা, মুখের আদলে কিশোর অনিমেষ আছে কিন্তু কেমন যেন একটা চোয়াড়ে চোয়াড়ে ভাব। তাকানো স্বাভাবিক নয়। মাথার চুলে কেমন একটা যেন অস্বস্তিকর ব্যাপার আছে। চা খেয়ে অর্ক বলল, ‘আমি বাড়িটা ঘুরে দেখতে পারি?’
কথা না বলে ছোটমা ধীরে ধীরে মাথা নাড়লেন, হ্যাঁ। অর্ক যেন বেঁচে গেল। ছোটমা দাঁড়িয়ে রইলেন সেখানেই। অর্ক কিছুক্ষণ আগে একটা সিঁড়ি দেখতে পেয়েছিল। ডানদিকের কোনায় সেই সিঁড়ি বেয়ে সে ওপরে উঠতে লাগল।
অনেককাল বোধহয় কেউ এখানে পা দেয়নি। পুরু ধুলো, পাখির ময়লা ছড়িয়ে আছে। এটা ছাদে ওঠার সিঁড়ি। সিঁড়ির মুখের দরজাটা বন্ধ। বেশ চাপ দিয়ে সেটাকে খুলে পা বাড়াতেই অর্ক অবাক হল। এত বড় ছাদ! বাড়িটার ভেতরে ঢুকলে বোঝা যায় না যে এত বড়। তার পরেই নজরে এল দুপাশের সবুজ গাছপালা। মাথার ওপর এখন কড়া রোদ। অর্ক ছাদের মাঝখানে এসে দাঁড়াল। ওপাশে একটা ফাঁকা মাঠ, মাঠের গায়েই বাঁধ। আর বাঁধের ওপারে নদী। বিশাল নদী। কিন্তু জল খুব অল্প। যতদূর নজর যায় শুধু বালি আর বালি। তাহলে ওটাই তিস্তা নদী। আর এই প্রথম জায়গাটাকে ভালবেসে ফেলল অর্ক। তার মনে হল ঊর্মিমালা যদি এখানে আসতো তাহলে দেখে দেখে সুন্দর ছবি আঁকতে পারত। ঊর্মিমালার মুখটা মনে পড়তেই অর্ক একটু থতিয়ে গেল। হঠাৎ ঊর্মিমালা চোখের সামনে এল কেন? সে ধীরে ধীরে ছাদের কিনারায় গিয়ে দাঁড়াতেই মাধবীলতাকে দেখতে পেল। নিচের বাগান, বাগানের এপাশে রান্নার ঘরের দরজায় মাধবীলতা দাঁড়িয়েছিল। হঠাৎ চোখ পড়তেই সে বিস্মিত হল। তারপর দ্রুত হাত নেড়ে ছেলেকে নিচে ডাকল। মায়ের ভঙ্গীতে এত চাপা-দ্রুততা ছিল যে অর্ক চিৎকার করে জিজ্ঞাসা করল, ‘কেন?’
সেই সময় রান্নারঘর থেকে হেমলতা বেরিয়ে এলেন। মাধবীলতার দৃষ্টি অনুসরণ করে চোখের ওপর হাতের আড়াল রেখে অর্ককে দেখলেন, ‘কে? তোমার ছেলে না? ওখানে কি করছে? একা একা ছাদে বেড়ানো ঠিক নয়। নেমে আসতে বল।’
মাধবীলতা যতটা সম্ভব নিচুগলায় বলল, ‘নেমে আয়।’
অর্ক বুঝতে পারছিল না সে কি অন্যায় করেছে। হেমলতা তখন মাধবীলতার হাত ধরলেন, ‘ওহো, একদম খেয়াল ছিল না। চলো, চলো, মহীর সঙ্গে দেখা করবে চলো। বাড়ির বউ বাড়িতে এসে শ্বশুরের সঙ্গে কথা বলল না, এ কি রকম ব্যাপার। ছোটবউ ছোটবউ—।’ মাধবীলতার হাত ধরে টানতে টানতে হেমলতা বড় বাড়ির দিকে এগিয়ে চললেন।
অর্ক ছাদের মাঝখানে চলে এল। ঘুঘু ডাকছে কাছাকাছি। ওটা যে ঘুঘুর ডাক সে অনুমানে বুঝেছে। ওদের ক্লাশের একটি ছেলে গালে হাত চাপা দিয়ে নানান পাখির গলা নকল করতে পারে। পাখিটাকে দেখবার জন্যে সে ছাদের উল্টোদিকে চলে এল। বিরাট কাঁঠালগাছটার আড়ালে বসে ডাকছে পাখিটা। অর্ক ঠাওর করতে পারছিল না। সে মুখ ফেরাতেই থমকে গেল। ওপাশে একটা কাঠের বাড়ি। বাড়িটার কুয়োতলা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। সেখানে দাঁড়িয়ে একটি মেয়ে মাথায় বালতি থেকে জল ঢালছে। একটা ভেজা সায়া সেঁটে আছে নিচের শরীরে, ওপরে খুব ছোট সাদা ব্লাউজ। অর্কর মনে হল মেয়েটা বাঙালি নয়। স্বাস্থ্যবতী এবং প্রচণ্ড ফর্সা মেয়েটার মুখ নাক কেমন থ্যাবড়া। ফর্সা বলেই শরীরের সঙ্গে লেপ্টে যাওয়া ভিজে কাপড়ের দিকে তাকাতে সঙ্কোচ হচ্ছিল অর্কর। কিন্তু সে চোখ ফেরানোর আগেই মেয়েটি তাকে দেখতে পেল। তার হাত থেমে গেল, চোখে বিস্ময়। এই বাড়ির ছাদে যে কোন পুরুষ দাঁড়িয়ে থাকবে তা সে কল্পনা করেনি। কিন্তু তার বিস্ময়ের ঘোর কাটবার আগেই অর্ক সরে এল। দরজার দিকে যেতে যেতে তার হঠাৎ মনে হল মেয়েটা আবার এ বাড়িতে নালিশ করবে না তো! সে তো জেনেশুনে ছাদের কোণে যায়নি, হঠাৎই চলে গিয়েছিল। একথা এঁরা বিশ্বাস করবেন তো!
অনিমেষ খাবার খেয়ে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই ছোটমাকে দেখতে পেল। ছোটমা এখন তার পায়ের দিকে তাকিয়ে আছেন অদ্ভুত চোখে। সে সেটা উপেক্ষা করে সরাসরি জিজ্ঞাসা করল, ‘টেলিগ্রামটা কে করেছিল?’
ছোটমা যেন অবাক হলেন। তারপর স্বাভাবিক গলায় বললেন, ‘আমি।’
‘কেন?’
‘এসে বুঝতে পারছ না কেন?’
‘না। বাবা অসুস্থ, ইনভ্যালিড। কিন্তু এখনই কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই। টেলিগ্রামে তুমি সেই মিথ্যে কথাটা জানিয়েছিলে। আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে আমাদের তোমরা ঠিক মেনে নিতে পারছে না। বাবার অসুস্থতা যখন এমন নয় তখন এভাবে আমাদের ডেকে আনলে কেন? এত বছর যখন কেটে গেল—।’
ছোটমা আপনমনে বললেন, ‘তুমি কেমন পাল্টে গিয়েছ!’
‘আশ্চর্য! প্রত্যেকটা দিনই তো মানুষের চেহারা একটু একটু করে পাল্টে দিয়ে যায়। মনের কি দোষ। আর এসে দেখলাম তোমরাও তো কম বদলে যাওনি। এইভাবে তাড়াহুড়ো করে টেনে আনার সঙ্গে ব্যবহারের মিল পাচ্ছি না।’
ছোটমা যেন কথাটা কিভাবে বলবেন ভাবতে পারছিলেন না। এবার অনিমেষের কথা শেষ হওয়ামাত্র তিনি সরাসরি বলে ফেললেন, ‘আমি আর পারছি না। অনেকদিন, অনেকদিন তো তোমাদের এই সংসারটাকে বইলাম। আমার যখন বিয়ে হয়েছিল তখন তো তুমি যথেষ্ট বড়। এত বছর ধরে আমি কি পেয়েছি? তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে সেসব কথা। আমার কথা কখনও ভেবেছ?’
অনিমেষ সত্যি অবাক হয়ে গেল। ছোটমার মুখে এমন প্রশ্ন সে আশা করেনি।
ছোটমা যেন হতাশায় মাথা নাড়লেন, ‘এখন এই বাড়িতে একজন অথর্ব হয়ে শুয়ে রয়েছেন আর একজন বয়সের ভারে কখন কি বলছেন ঠিক নেই। একটাও পুরুষ নেই যার ওপর নির্ভর করতে পারি। ব্যাঙ্ক থেকে যে সামান্য কটা টাকা সুদ পাই তা ওঁর চিকিৎসার পেছনেই চলে যায়। কিভাবে খাচ্ছি, বেঁচে আছি তা আমিই জানি। আমি কেন এই দায় একা বইবো? তুমি এই বাড়ির ছেলে, তোমার কোন কর্তব্য নেই? তোমার জ্যাঠা মামলা করছেন তাও আমাকে সামলাতে হচ্ছে। আমি আর পারছি না, একদম পারছি না।’ ছোটমার গলার স্বর জড়িয়ে গেল।
ঠিক সেইসময় হেমলতা মাধবীলতাকে টানতে টানতে ওই ঘরে ঢুকলেন, ‘এই যে ছোটবউ, বাড়ির নতুন বউ-এর সঙ্গে শ্বশুরের কেউ পরিচয় করিয়ে দিল না, এ কেমন কথা। এ্যাঁ? চল, আমি তোমায় নিয়ে যাচ্ছি।’
বিব্রত মাধবীলতা নরম গলায় বলল, ‘হাতটা ছাড়ুন, আমি যাচ্ছি।’
‘ও হ্যাঁ। বেশ বেশ, চল। শোন, প্রণাম করবে না। শুয়ে থাকা মানুষকে প্রণাম করতে নেই। দূর থেকে নমস্কার করো।’
হেমলতার পেছন পেছন যাওয়ার সময় মাধবীলতা একবার আড়চোখে অনিমেষের দিকে তাকাল। অনিমেষের কোন প্রতিক্রিয়া হল না। মহীতোষের ঘরের দরজায় গিয়ে হেমলতা গলা তুলে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ও মহী, মহী! ঘুমুচ্ছিস নাকি?’
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে অর্ক দাঁড়িয়ে গেল। দাদুর দরজায় মা এবং দিদা দাঁড়িয়ে। দিদা এমন ভঙ্গীতে ডাকছেন যেন দাদুর কিছুই হয়নি। হেমলতাকে সে এই প্রথম দিদা বলে ভেবে নিল।
ঘরের ভেতর একটা গোঙানি উঠলে হেমলতা বললেন, ‘না, ও এখন ঘুমোয়নি। এসো। মহী, দ্যাখ কে এসেছে! আমি প্রণাম করতে নিষেধ করেছি। শুয়ে থাকলে প্রণাম করতে নেই। এ বাড়ির বউ রে! অনির বউ।’
মাধবীলতা ধীরে ধীরে ঘরের মধ্যে গিয়ে দাঁড়াল। তারপর মুখ তুলে তাকাতেই মহীতোষকে দেখতে পেল। মানুষটা অসুস্থ, খুবই অসুস্থ। দুটো চোখের তলা ফোলা, মুখ বাঁকানো। শরীর স্থির। শুধু ডান হাতটা একটু উঠে আছে। মাধবীলতা বুঝতে পারছিল না তার কি করা উচিত। পিসীমা নিষেধ করেছেন প্রণাম করতে। নমস্কার করাটা তার খুব সাজানো বলে মনে হচ্ছিল। মহীতোষের দুটো চোখ যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। মাধবীলতা চোখ নামিয়ে নিল। পিসীমার গলা শোনা গেল, ‘খুব সুন্দর বউ হয়েছে না মহী? এম এ পাশ! স্কুলে চাকরি করে। আমাদের অনিকে ও বাঁচিয়েছে। বড় ভাল মেয়ে। অনির জন্যে নিজের বাবা মার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। এরকম প্রেম দেখা যায় না।’
মাধবীলতার মনে হল এর চেয়ে মরে যাওয়া ঢের আনন্দের ছিল। পিসীমা যে শ্বশুরের সামনে এই ভাষায় কথা বলবেন সে ঘুণাক্ষরে আঁচ করেনি। আর এত জোরে বলছেন যে কারো কান এড়াবে না। অথচ তার কিছুই করার নেই। এই মুহূর্তে কোন কথা বলা শোভন নয়। হেমলতার কথা শেষ হওয়ামাত্র মহীতোষের মুখ থেকে গোঙানি বের হল। হেমলতা দুপা এগিয়ে ঝুঁকে মুখের কাছে কান নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কি বলছিস? বউ পছন্দ হয়েছে?’ তারপর মাধবীলতার দিকে মুখ ফিরিয়ে সরল গলায় বললেন, ‘আমি কিছু বুঝতে পারি না ও কি বলে। কানে কম শুনি তো। ছোটবউ সব বুঝতে পারে। ও ছোট বউ, ছোট বউ!’ চিৎকার করলেন হেমলতা।
মাধবীলতা দেখল মহীতোষের মুখের কোণ বেয়ে একটা লালার ধারা বেরিয়ে এসেছে। তার মনে হল ওটা মুছিয়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু কি দিয়ে দেবে? তাছাড়া দিতে গেলে পিসীমা কিভাবে নেবেন তাও জানা নেই। এইসময় ছোটমা দরজায় এসে দাঁড়ালেন, ‘কি বলছেন?’
হেমলতা মহীতোষকে দেখিয়ে বললেন, ‘দ্যাখ তো কি বলছে!’
ছোটমার ঠোঁটদুটো সামান্য বেঁকে গেল। আড়চোখে মাধবীলতাকে দেখে তিনি একটু ঘুরে মহীতোষের অন্যপাশে গিয়ে দাঁড়াতেই মহীতোষ যেন স্বস্তি পেলেন। তড়বড়িয়ে যা বললেন তার মর্ম মাধবীলতার অবোধ্য রইল। ছোটমার মুখ কিন্তু বিস্ময়ে চুরমার। তিনি হেমলতার দিকে তাকালেন। তারপর চোখ বন্ধ করে সামান্যক্ষণ দাঁড়িয়ে ‘আনছি’ বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
হেমলতা বললেন, ‘বাবা থাকলে খুব খুশি হতো না মহী?’
মহীতোষের মুখে এখন কোন শব্দ নেই। শুধু ডানহাতটা নেড়ে মাধবীলতাকে ইশারা করলেন এগিয়ে আসতে। মাধবীলতা পাশে এগিয়ে এল। মহীতোষের চোখদুটো স্থির। হেমলতা বললেন, ‘ওর নাম হল মাধবীলতা।’
মহীতোরে কপালে ভাঁজ পড়ল। তাঁর মুখ হেমলতার দিকে ঘুরে গেল সামান্য। হেমলতা যেন এবার চাহনির অর্থ ধরতে পারলেন, ‘মাধবীলতা। মাধুরী না রে।’
এই সময় ছোটমা আবার ফিরে এলেন। তাঁর হাতে একটা রঙচটা ছোট বাক্স। সেটা তিনি মহীতোষের ডান হাতে ধরিয়ে দিলেন। মহীতোষের হাতটা উঠল। ধীরে ধীরে প্রসারিত হল মাধবীলতার সামনে। মুখ থেকে গোঙানি বের হয়ে এল।
ছোটমা বললেন, ‘তোমাকে ওটা নিতে বলছেন।’
মাধবীলতার হাত কেঁপে গেল। সে বাক্সটাকে ধরতেই মহীতোষের মুখে হাসির চেষ্টা এল। হেমলতা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কি আছে ওতে?’
ছোটমা বললেন, ‘হার। নতুন বউ-এর মুখ দেখবে বলে—।’
‘দেখি দেখি কোন হারটা। বাক্সটা খোল।’ হেমলতা উদগ্রীব হলেন।
মাধবীলতা বাক্সটা খুলতেই একটা পুরোনো আমলের ভারী হার চোখে পড়ল সবার। হেমলতা ছোটমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এটা কার হার? তোমার?’
ছোটমা মাথা নাড়লেন, ‘না, দিদির।’
‘ওমা, সে হার এতদিন ছিল নাকি? ভাল ভাল। দিদি কে জানো? মহীর বড় বউ, অনির মা। এই বাড়িতেই মরে গেছে সে। বড় ভাল মেয়ে ছিল সে। ওই হার তুমি পরলে তার আত্মা সুখী হবে। আমার তো কিছুই নেই যে তোমাকে দেব। না, না আছে। দাঁড়াও।’ হঠাৎ যেন মনে পড়ে গেল হেমলতার। তড়িঘড়ি করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বললেন, ‘এই ছোঁড়া আবার এখানে দাঁড়িয়ে আছে কেন?’ কিন্তু কথা শেষ করে আর অপেক্ষা করলেন না।
ছোটমা মাধবীলতাকে বললেন ‘ওটা পরো তো।’
মাধবীলতা দেখল অর্ক দরজায় দাঁড়িয়ে হাসছে। ওর আরও অস্বস্তি বাড়ল। মুখে বলল, ‘এখন থাক না।’
‘থাকবে কেন? যিনি দিলেন তিনি দেখবেন না কেমন মানাচ্ছে!’ ছোটমার গলার স্বর শীতল। মাধবীলতা মহীতোষের দিকে তাকাল। দুটো চোখ এখন বেশ শান্ত। সে আর উপেক্ষা করতে পারল না। হারটা খুলে গলার পরে নিল। পুরোনো ডিজাইন, ভারী, হার। অনেক, অনেক দাম হবে।
ছোটমা বললেন, ‘সধবার গলা খালি না থাকাই উচিত। ওটা খুলো না।’
মাধবীলতা বলল, ‘এত দামী জিনিস—।’
‘তা অবশ্য।’ ছোটমা এবার ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
মাধবীলতার সমস্ত শরীর সিরসির করছে। এই হার তাকে দেওয়া মানে এই বাড়ির বধূ হিসেবে মেনে নেওয়া। মহীতোষকে প্রণাম করতে ইচ্ছে করছিল তার। কিন্তু—। সে এগিয়ে গেল আর একটু। তারপর আঁচলের কোণ দিয়ে মহীতোষের লালা সযত্নে মুছিয়ে দিল। মহীতোষ নিশ্চয়ই বিস্মিত হয়েছিলেন। কিন্তু মাধবীলতা আর দাঁড়াল না। ঝটপট ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এল সে। পেছনে অর্ক।
অনিমেষের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে খুব লজ্জা হচ্ছিল ওর। কিন্তু বড়ঘরে যেতেই মুখোমুখি হতে হল। গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়েছিল অনিমেষ। অর্ক পেছন থেকে বলল, ‘এখানে এসে মায়ের খুব লাভ হল।’
অনিমেষের ভ্রূ কুঁচকে গেল, ‘মানে? আর তখনই সে হারখানা দেখতে পেল, ‘ও, কে দিল?’
‘বাবা।’
অনিমেষ মাধবীলতার মুখ দেখল। বাবা শব্দটা ওর কানে খট করে বেজেছে। কিন্তু সেকথা মুখে না বলে ও হাসবার চেষ্টা করল।
অর্ক বলল, ‘তোমার মায়ের হার। জানো বাবা।’
‘তাই নাকি! এ হার এতদিন ছিল? শোন, তোমার সঙ্গে কথা আছে।’
মাধবীলতা হারখানা ছুঁয়েছিল খুলবে বলে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি সেটা উচিত হবে না বুঝতে পারল। অনিমেষের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘কি ব্যাপার?’
‘ঠিক আছে, পরে বলব।’ অনিমেষ অর্কর দিকে তাকাল।
হঠাৎ মাধবীলতার খেয়াল হল, ‘তুই হুটহাট ছাদে উঠিস না।’
অর্কর বুকটা ধড়াস করে উঠল, ‘কেন?’
‘পিসীমা আপত্তি করছিলেন। আর হ্যাঁ। তোকে বাজারে যেতে হবে।’
‘বাজারে?’
‘এখানে কোন লোক নেই। আমি টাকা দিচ্ছি তুই খোঁজ নিয়ে তাড়াতাড়ি বাজার করে আনবি। কি আনতে হবে বলে দিচ্ছি। এই শোন, পিসীমা তখন বলছিলেন একটা লোক নাকি প্রায়ই তোমার খোঁজ করতে আসে।’ মাধবীলতা অনিমেষকে বলল।
অনিমেষ অবাক হল, ‘আমার খোঁজ করে?’
‘হ্যাঁ। পিসীমা তাকে বলেছেন যে তোমাকে টেলিগ্রাম করা হয়েছে।’
‘কে আবার?’ অনিমেষ তার ছেলেবেলার বন্ধুদের মুখ মনে করল। এইসময় হেমলতা দ্রুত চলে এলেন। তাঁর ছোট্ট রোগা এবং ভাঙা শরীর মাধবীলতার কাছে এসে কাঁপছিল, ‘দ্যাখো তো, এটা পরা যায় কি না!’
মাধবীলতা একটু দ্বিধাগ্রস্ত হাতে প্যাকেটটা নিল। অনিমেষ দেখল খবরের কাগজটা লালচে এবং তার ওপর জওহরলাল নেহরুর ছবি ছাপা। খুব সতর্ক হাতে প্যাকেটটা খুলতেই একগাদা ন্যাপথলিনের গুঁড়ো মাটিতে ছড়িয়ে গেল। মাধবীলতা দেখল সুন্দর কাজ করা একটা নীল রঙের বেনারসী। হেমলতা ফোকলা দাঁতে হেসে বললেন, ‘অনেক বছর আগের শাড়ি। তখনকার দিনে দেড়শ টাকা দাম নিয়েছিল। আমি প্রত্যেক বছর রোদে দিই। এখনও ছেঁড়েনি। এটা দিয়ে আমি তোমার মুখ দেখলাম মাধবীলতা।’
অনিমেষ নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। পিসীমার সংগ্রহে যে এরকম একটা সুন্দর শাড়ি আছে তা সে ছেলেবেলায় জানতো না। পিসীমা আসা অবধি তার সঙ্গে কথা বলছেন না। কিন্তু এই মুহূর্তে সে মুখ বুজে থাকতে পারল না, ‘এটা আপনার শাড়ি?’
হেমলতা অনিমেষের দিকে তাকালেনই না। মাধবীলতাকে বললেন, ‘এ তোমার নিজের শাশুড়ির বিয়ের বেনারসী। আমার কাছে ছিল। থাক থাক প্রণাম করতে হবে না।’ তারপর ওঁর গলা রুদ্ধ হয়ে এলো, ‘আমার বিয়ের বেনারসী তোমাকে দেব কেন? বিধবার বেনারসী কি কাউকে দিতে আছে!’