২.৬৬ সিঁড়ির মুখে ল্যান্ডলেডি

সিঁড়ির মুখে ল্যান্ডলেডিকে দেখে তুতুল বললো, গুড মর্নিং মিসেস সেফেরিস!

ল্যান্ডলেডিটি এক বিশাল বপু গ্রীক রমণী। প্রায় পৌনে ছ’ফিট লম্বা, চওড়াও প্রায় ততখানি, তার হাত দুটি গদার মত, স্তন দুটি যেন ঈষৎ চোপসানো ফুটবল, যে-কোনো পোশাকেই যেন তার শরীর ফেটে বেরিয়ে আসতে চায়। মিসেস সেফেরিসের বয়েস পঞ্চান্ন ছাপ্পান্ন হবে, কিন্তু শরীরে এখনও বার্ধক্যের ছায়া পড়েনি। দু’গালে মেচেতার দাগ, কিন্তু মুখখানা সব সময় হাসি-খুশি। এর স্বামীটি অতিশয় গোমড়ামুখো, তাকে দেখলেই তুতুল এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে।

ল্যান্ডলেডি সিঁড়িতে বসে ঘেঁড়া কার্পেট সেলাই করছিল, মুখ ফিরিয়ে বললো, মর্নিং দত্তর! ইউ আউট সো আর্লি? হোয়াটস দা ওয়েদার লাইক?

তুতুল বললো, আজ সকালে বাইরে রোদ ঝকঝক করছে!

কয়েকটা জিনিস কেনাকাটি করতে বেরিয়েছিল তুতুল, তার হাতে শপিং ব্যাগ। সেদিকে ঘন দৃষ্টি দিয়ে ল্যান্ডলেডি সোৎসাহে জিজ্ঞেস করলো, ইউ বাই ফিস টু দে? বিগ ইনদিয়ান ফিস?

তুতুল হেসে দু’দিকে মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, না, মাছ কিনিনি!

এই একটা মজার ব্যাপার। এ দেশে আসার পর থেকেই তুতুল শুনেছিল নিজের ঘরে মাছ রান্না করলেও ল্যান্ডলেডিরা চটে যায়। ডালে লঙ্কা ফোঁড়ন দিলে তো সেই ভাড়াটেকে তক্ষুনি নোটিস দেওয়া হবে। কিন্তু তাদের এই গ্রীক বাড়িউলীর কোনো কিছুতেই আপত্তি নেই। মাঝে মাঝে তুতুল যখন রান্না করে, বাড়িউলী এসে তার ঘরে নক করবেই। তুতুল কী রান্না করছে জানতে চাইবে, তারপর বলবে, মে আই তে ইত? তুতুল যা দেবে, সোনা মুখ করে খেয়ে নেবে মিস সেফেরিস। মাছ খেতে তো খুবই ভালো বাসে। সারাদিন ধরেই এই স্ত্রীলোকটি কিছু না কিছু খেয়ে চলেছে। খাওয়াটাই তার নেশা।

ল্যান্ডলেডি খানিকটা নিরাশ হয়ে বললো, নো ফিস? দেন হোয়ত ইউ বাই? তুতুল বললো, তোমার জন্য একটা আইসক্রিম এনেছি।

ল্যান্ডলেডির মুখখানা খুশিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। যেন একটি বাচ্চা মেয়ে, তুতুল যখনই বাজারে যাবে, তখনই এর জন্য কিছু না কিছু আনতেই হবে। অতি সাবধানে টিপে টিপে পয়সা খরচ করতে হয় তুতুলকে, তবু এই খরচটা সে ধরেই রেখেছে।

তুতুল রান্না খুবই কম করে। দিনের পর দিন শুধু স্যান্ডুইচ খেয়ে কাটায়। তার বাড়িউলীর স্যান্ডুইচে খুব আপত্তি, ঐ জিনিসটা সে পছন্দ করে না। গ্রীকরা যে পরোটা মাংস ও ভাত এত পছন্দ করে, তুতুলের জানা ছিল না। তুতুলকে স্যান্ডুইচ খেতে দেখলেই ল্যান্ডলেডি বলে, নো কুকিং? ইউ দতর, ইউ আর্ন স্যাকফুল অফ মানি!

মিসেস সেফেরিসের ধারণা, ডাক্তার মানেই বড়লোক। তুতুল যে রাত্রে সামান্য একটা চাকরি করে ও সেই টাকায় পড়াশুনো করতে হয় দিনের বেলায়, তা এই মহিলাটি কিছুতেই বুঝবে না!

এখনো এক বছর পুরো হয়নি, এর মধ্যেই অনেক অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে তুতুলের। লন্ডন শহরটা যে কতখানি কসমোপলিটন তা এখানে না এলে জানা যায় না। কত জাতের লোক যে এখানে রয়েছে তার ঠিক নেই। ইটালিয়ান, আর্মেনিয়ান, গ্রীক, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান, সিলেটী, পঞ্জাবী, গুজরাতি এই সব জাতিগোষ্ঠি বেশ স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। কতরকমের জীবিকা, জীবনযাত্রা। তাদের বাড়িওয়ালাবাড়িউলী এক সময় একটা মাংসের দোকান চালাতো, এখন দোকানটি বিক্রি করে দিয়ে এই বাড়িটি কিনেছে, ছোট ছোট চারটে অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া দিয়ে ওদের দিব্যি চলে যায়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার এই যে ভালো করে ইংরিজি না শিখেও এই ইংরেজদের দেশে ওরা বেশ চালিয়ে যাচ্ছে। মিসেস সেফেরিস লন্ডনে আছে টানা পঁয়তিরিশ বছর। এখনও তার ইংরিজি কলকাতার বউবাজারের জুতোর দোকানের চীনেদের মতন।

আরও দু’জায়গা ঘুরে, তুতুল এই বাড়িতে এসেছে মাত্র তিন মাস আগে। পুরো একটা অ্যাপার্টমেন্ট সে ভাড়া নেয়নি, সে ক্ষমতা তার নেই। একটি রেস্তোরাঁর দরজায় হাতে লেখা বিজ্ঞাপন দেখে সে এই জায়গাটার সন্ধান পেয়েছিল। একটি গুজরাতি মেয়ের সঙ্গে তাকে অ্যাপার্টমেন্টটা শেয়ার করতে হয়।

সেই মেয়েটির নাম ভাবনা প্যাটেল। দু’জনে যদিও সমান ভাড়া দেয়, কিন্তু ভাবনা আগে সম্পূর্ণ অ্যাপার্টমেন্টটি নিজের নামে ভাড়া নিয়ে তারপর তুতুলকে সাব-লেট করেছে বলে সে বেশি সুযোগের অধিকারিণী। ভাবনার খাটটি জানলার পাশে, আলমারিতে তার তিনটে তাক, তুতুলের দুটো, একটি মাত্র বেড-ল্যাম্প সে-ই ব্যবহার করে, তার ভাবভঙ্গি আর একটি বাড়িউলীর মতন। তুতুল এমনিতেই লাজুক ও মুখচোরা স্বভাবের, ভাবনা তার ওপর প্রায়ই এটা ওটা হুকুম চালায়।

অবশ্য ভাবনা মেয়েটি এমনিতে ভাল। প্রাণখোলা, স্পষ্ট বক্তা। তার গায়ের রং মাজা-মাজা ও চুলের রং কালো, এ ছাড়া তার মধ্যে আর কোনো ভারতীয়ত্ব খুঁজে পাওয়া শক্ত। ভাবনা প্যাটেলের পরিবার দুপুরুষ ধরে আফ্রিকায় উগান্ডার অধিবাসী। ভাবনার বাবা সেখানে মশলার ব্যবসায়ী, মেয়েকে লন্ডনে পাঠিয়েছেন বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পড়াতে।

ভাবনা ইংরিজি ছাড়া কথাই বলে না, ইংরিজি বলেও সে মেমসাহেবদের মতন, গুজরাতি সে জানেই না ভালো করে, সে শাড়ি পরতেও জানে না। একমাত্র গুজরাতি চরিত্র যেটুকু অবশিষ্ট আছে তার মধ্যে, তা হলো নিরামিষ খাওয়া, মাছ-মাংস সে ছোঁয় না, তবে কেকের মধ্যে ডিম থাকলে তার খেতে আপত্তি নেই। এবং সিগারেট ও মদ যেহেতু আমিষের মধ্যে পড়ে না, তাই বাড়িতে থাকলে অধিকাংশ সময় তার এক হাতে থাকে বিয়ারের টিন, অন্য হাতে লম্বা সিগারেট।

আজ শনিবার, ছুটির দিন, ভাবনা বিছানায় শুয়ে হেনরি মিলার পড়ছে। এখনো মুখও ধোয়নি। তুতুল কত আগে উঠে, বাথরুমটাথরুম সেরে, বাজার পর্যন্ত করে নিয়ে এলো। আজ অনেকদিন বাদে তুতুলের ভাত-ডাল-বেগুন ভাজা খেতে ইচ্ছে হয়েছে, সে রান্না করবে, মাছ-মাংস আনেনি, যদিও তুতুল এ ঘরের মধ্যে মাছ-মাংস এনে খেলে ভাবনা আপত্তি করে না। কিন্তু ভাবনা খায় না বলে তারও বিশেষ খেতে ইচ্ছে করে না। সে নিরামিষ রান্না করলে ভাবনা তার সঙ্গে খেয়ে নিতে পারে। সপ্তাহে দু’একদিন তুতুল কলেজ ক্যান্টিনে ফিস অ্যান্ড চিপস খেয়ে নেয়!

তুতুলকে দেখে ভাবনা বললো, হ্যালো, বহ্নি, এরমধ্যে কেনাকাটি করে এলে, তোমার জন্য কি দোকানগুলো আগে আগে খোলে? এখন ক’টা বাজে?

তুতুল হেসে বললো, পৌনে দশটা!

ভাবনা বইটা মুড়ে বললো, কিছুই না। ডার্লিং, তুমি নিশ্চয়ই আর একটু চা খাবে এখন? আমার জন্যও একটু বানাবে? আমার কৌটোয় ভালো চা আছে, সেটা তুমি ইউজ করতে পারো!

তুতুল জিজ্ঞেস করলো, শুধু চা, না একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট খেয়ে নেবে? আমি কর্নফ্লেকস আর কলা এনেছি, তৈরি করে দিতে পারি।

ভাবনা বললো, না, না, এখন শুধু চা। বেশি করে বানিও।

একটাই বড় ঘর। দুটি খাট ও দুটি টেবল ছাড়া, এক কোণে রয়েছে একটা সিঙ্ক, একটা গ্যাস স্টোভ। হাত-মুখ ধোওয়া ও চা ব্রেকফাস্ট, ছোটখাটো রান্না ঘরের মধ্যেই হয়ে যায়। বারান্দার এক কোণে আছে একটা কমন রান্না ঘর, অন্য কোনে বারোয়ারি বাথরুম। এ বাড়ির অন্যান্য অ্যাপার্টমেন্টে থাকে কয়েকটি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ছাত্র, এক বৃদ্ধ ইটালিয়ান দম্পতি ও দুই আইরিশ মোটর মেকানিক। রান্না ঘরটায় গেলেই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ছাত্রদের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়, তারা বড্ড গায়ে পড়ে ইয়ার্কি মারতে আসে বলে তুতুল পারতপক্ষে যায় না। তবে পচনশীল খাদ্য টাদ্য কিছু থাকলে রান্না ঘরের বড় ফ্রিজটায় রেখে আসতে হয়। এখানে কেউ অন্যের খাবারে ভুলেও হাত দেয় না।

ঘরে ফোন নেই, বারান্দায় সকলের জন্য একটি টেলিফোন। তুতুল চা বসিয়েছে, এমন সময় বারান্দায় ফোন বেজে উঠলো, ভাবনা অমনি বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে উঠে ছুটে গেল ফোন ধরতে। লজ্জায় কর্ণমূল রক্তিম হয়ে গেল তুতুলের। বাড়িতে যখন থাকে, তখন ভাবনা শুধু একটা ড্রেসিং গাউন ছাড়া তলায় আর কিছু পরে না। বোতামও লাগায় না ভালো করে। তার শরীরের যে-কোনো অংশ যখন তখন দেখা যায়। এমনকি পোশাক বদলাবার সময় তুতুলের সামনেই সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে যেতে তার বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। তুতুল মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না, কিন্তু তার খুব অস্বস্তি লাগে। ভাবনা বুকের বোতামগুলো খোলা অবস্থায় শুধু এক হাতে চেপে ঐ অবস্থায় বাইরে গেল, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ছেলেগুলো বারান্দা দিয়ে সর্বক্ষণ যাওয়া আসা করে, তুতুল এরকম ভাবতেই পারে না। সে আজও ড্রেসিং গাউন, হাউস কোট, বা শ্লিপিং স্যুট ব্যবহার করে না। শাড়ি পরে ঘুমোয়, সকালে উঠেই সেই শাড়ি বদলে অন্য শাড়ি পরে নেয়। বাইরে বেরুবার সময়েও সে প্যান্ট পরেনি আজ অবধি, সে বুঝে গেছে লন্ডনে শাড়ী পরে চলা ফেরায় কোনো অসুবিধে নেই, খুব শীতের সময় তলায় একটা ড্রয়ার পরে নিতে হয় শুধু।

ভাবনার টেলিফোন ছাড়তে ছাড়তে চা প্রায় জুড়িয়ে এলো। আবার জল গরম করতে হলো তুতুলকে। ঘরে ফিরে উৎসাহ-ঝলমল মুখে ভাবনা বললো, বহ্নি, বহ্নি, আজ নাইট শো-তে একটা মুভি দেখতে যাবে? আমাদের পাড়ার হলে মেরিলিন মনরোর একটা দারুণ, দুর্দান্ত ছবি এসেছে। মিসফিট, তুমি দ্যাখোনি নিশ্চয়ই? ইটস টেরিফিক, উইথ ক্লার্ক গেবল অ্যান্ড মন্টগোমারি ক্লিফট…তুমি চিন্তা করতে পারো, দুই নায়ক এক নায়িকা, ইউ মাস্ট সি ইট!

সিনেমা থিয়েটার প্রায় কিছুই দেখা হয় না তুতুলের। চাকরি আর পড়াশুনো, দুটোতেই প্রচণ্ড খাটুনি, এ দেশে চাকরিতে ফাঁকি দিলে এক কথায় ছাড়িয়ে দেয়, আর পড়াশুনোয় ফাঁকি দিলে নিজেরই টাকা নষ্ট, তাই একদমই সময় পাওয়া যায় না। ছুটির দিনে তুতুল তার। পড়াশুনো খানিকটা এগিয়ে রাখে।

ভাবনার উৎসাহ দেখে সে বললো, ঠিক আছে, যাবো। টিকিট পাওয়া যাবে? না, আমি দুপুরে গিয়ে অ্যাডভান্স টিকিট কেটে আনবো দু’খানা?

তুতুল মনে মনে হিসেব করলো, তার কাছে চার পাউন্ড আর কিছু খুচরো শিলিং আছে, দুটো টিকিটে অন্তত দু’পাউন্ড লাগবে, আর পপ কর্নের জন্য কিছু, তার মাইনে পেতে আরও পাঁচ দিন বাকি, তবু এই দিয়েই চালিয়ে দিতে হবে, দরকার হলে সন্ধেবেলা শুধু দুধ খেয়ে থাকবে, তবু ভাবনার পয়সায় সে সিনেমা দেখবে না।

ভাবনা তুতুলকে জড়িয়ে ধরে বললো, না। মাই সুইট গার্ল, তুমি টিকিট কাটবে কেন? আমি টিকিট কেটে দেবো! তোমাকে কষ্ট করতে হবে না, তোমার সঙ্গে আর কে যাবে সেটা তুমি ঠিক করো!

–আমার সঙ্গে আর কে যাবে মানে? তুমি দেখবে না সিনেমাটা?

সারা মুখে দুষ্টু হাসি ছড়িয়ে ভাবনা বললো, আমি কী করে যাবো, আজ সন্ধেবেলা যে আমার কাছে টম আসবে! তা ছাড়া ঐ ছবিটা আমার দেখা। আমি চাই ওরকম একটা ভালো ফিল্ম তুমিও দ্যাখো! ইউ মাস্ট নট মিস ইট।

ব্যাপারটা তুতুলের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। সন্ধের পর ভাবনা এই ঘরটা শুধু নিজের জন্য পেতে চায়, এই জন্যই তুতুলকে সিনেমায় পাঠাবার জন্য তার এত গরজ! এই এক উপদ্রব এখানে। এক একটা শনিবার ভাবনার ছেলে বন্ধু এসে পড়ে, সঙ্গে মদের বোতল, কিছু খাবার। তুতুলের সঙ্গে সে কিছুক্ষণ ভদ্রতার কথা বলে, তারপর ভাবনার সঙ্গে জড়াজড়ি শুরু করে দেয়। ভাবনা তখন তুতুলের দিকে এমনভাবে তাকায়, যার একটাই অর্থ। তুতুলকে তখন সিঁড়িতে কিংবা রান্নাঘরে গিয়ে বসে থাকতে হয়। সে এক অসহ্য অবস্থা। একদিন একটি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ছেলে মাতাল অবস্থায় রান্না ঘরে এসে তুতুলের হাত ধরে টানাটানি করেছিল। তারপর থেকে তুতুল রান্না ঘরে বসে থাকতে আপত্তি জানিয়েছিল, সেই জন্য আজ তাকে সিনেমায় পাঠানো হচ্ছে!

ছেলে বন্ধুকে নিয়ে বেমালুম দরজা বন্ধ করে দেয় ভাবনা। ওর জন্য তুতুলেরই যেন লজ্জায় মাথা কাটা যায়। ভাবনার একজন বয়-ফ্রেন্ড নয়, দু’জন, তারা বদলে বদলে আসে, এদের কারুর সঙ্গেই ভাবনার বিয়ের কিছু ঠিক নেই। টম নামে যে লোকটি আসে, সে আসলে ভারতীয় এবং নাকি বিবাহিত, তবু তার সঙ্গে শুতে একটুও দ্বিধা নেই ভাবনার! আফ্রিকায় জন্মেও সে খাঁটি মেমসাহেব হয়ে গেছে। সব মেমসাহেবরাও কি এরকম করে?

ভাবনার চরিত্রের এই দিকটা সে কিছুতেই সহ্য করতে পারে না, তবু এই অ্যাপার্টমেন্টটা সে ছাড়তে চায় না একটি মাত্র কারণে, এখান থেকে তার চাকরির জায়গা খুব কাছে। রাত্তিরে হেঁটে ফিরতে পারে।

তুতুল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, তা হলে দুটো টিকিটের দরকার নেই। আমি একাই যাবো, আমার টিকিট কেটে নেবো।

ভাবনা বললো, আজ শনিবার, আজ কোনো মেয়ে একা সিনেমা দেখতে যায়? যাঃ! কেন, তোমার কোনো ছেলে বন্ধুর সঙ্গে ফোনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করো!

–তার দরকার নেই, সেরকম কোনো বন্ধু নেই আমার!

–তুমি মাঝে মাঝে অনেক রাত্তির পর্যন্ত বাইরে থাকো, আমার ধারণা তোমার কোনো স্টেডি বয়ফ্রেন্ড আছে।

–মাঝে মাঝে রাত্তিরে আমি লাইব্রেরিতে পড়তে যাই!

–আর কত পড়াশুনো করবে, ডার্লিং! শোনো বহ্নি, তুমি লজ্জা করো না। তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড থাকলে তাকে এখানে ডাকতে পারো। আমি সেলফিস নই, সেদিন আমি তোমাদের জন্য ঘর ছেড়ে দেবো!

–বলছি তো আমার সেরকম কেউ নেই।

–তিনতলায় থাকে জেফ্রি, সে তোমার দিকে নরম চোখে তাকায়, আমি লক্ষ করেছি, সে তোমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চায়।

–ঐ দৈত্যের মতন নিগ্রোটা?

–ছিঃ, নিগ্রো বলতে নেই। তোমার কালোদের সম্পর্কে প্রেজুডিস আছে বুঝি?

–না, না, তা নয়, ওকে দেখলেই আমার ভয় করে।

–ঠিক আছে, তোমার দেশের কোনো ছেলে, তারও তো অভাব নেই। সেই যে একটি ছেলে প্রথম প্রথম দু’চারবার এসেছিল তোমার সঙ্গে দেখা করতে!

অমরনাথদের বাড়ি ছাড়বার পরও রঞ্জন কিছুদিন তুতুলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেছে, তার চোখের দৃষ্টিতে ছিল অতি ব্যস্ত লোভ। সে ধরেই নিয়েছিল তুতুল একটি অসহায় বোকাসোকা মেয়ে, চিন্ময়ী কলকাতায় ফিরে যাবার পরে সে বিপদের মধ্যে পড়ে গেছে, তাকে কিছু সাহায্য ও লন্ডনে পা রাখার জায়গা করিয়ে দেবার অছিলায় সম্পূর্ণ নিজের কজায় রাখা যাবে। তুতুল তার কোনো সাহায্য নেয়নি, তবু সে লেগেছিল আঠার মতন, তার ধারণা তার চেহারা দেখে যে-কোনো মেয়েই মুগ্ধ হবে এবং এক সময় বিছানায় যেতে চাইবে। তুতুলের পিঠে সে হাত রাখলে তুতুল পিছলে সরে গেছে, পরে সে সরাসরি তুতুলকে জড়িয়ে ধরবার চেষ্টা করলে তুতুল শান্ত, দৃঢ় গলায় বলেছে, প্লীজ, ওরকম করবেন না! একদিন সিনেমা দেখাতে গিয়ে রঞ্জন অন্ধকারে তার উরুতে হাত রেখেছিল, তুতুল উঠে চলে গেছে মাঝ পথে। তারপর থেকে রঞ্জন উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে তুতুল সম্পর্কে।

তুতুল ভাবনাকে বললো, হি ওয়াজ যাস্ট অ্যান অ্যাকোয়েনটেন্স!

ভাবনা বললো, তা হলে, তা হলে, একদিন পিকাডেলি সাকাসে তোমার সঙ্গে একজন ছিল, তুমি আমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলে, একজন মুসলিম ডক্টর, সে তোমার বন্ধু নয়?

তুতুল বললো, হ্যাঁ, সে একজন ভালো বন্ধু, শুধুই বন্ধু, তার বেশি কিছু নয়! কাজের ব্যাপারে মাঝে মাঝে দেখা হয়।

-–বহ্নি, ব্যাক হোম, তুমি কি একটি রেখে এসেছো? তুমি বিবাহিতা? ইন্ডিয়াতে শুনেছি অল্প বয়েসেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়।

তুমি তো ইন্ডিয়াতে যাওনি কখনো। এখন অনেক মেয়েরই বিয়ে করার বা না-করার স্বাধীনতা আছে।

–তবে কি তোমার কোনো ফিয়াসে আছে? কারুর প্রতি তুমি বাগদত্তা।

তুতুল হাসি মুখে দু’দিকে মাথা–ড়লো। ফস করে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে চোখ বড় বড় করে ভাবনা বললো, ইন্ডিয়াতে তোমার জন্য কেউ অপেক্ষা করে নেই। এখানে তোমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই, ডু ইউ মীন টু সে, ইউ আর স্টিল আ ভারজিন?

–এটা খুব আশ্চর্য ব্যাপার বুঝি?

–আর ইউ ক্রেজি অর হোয়াট? তুমি তোমার জীবনের সুন্দর সময়টুকু এভাবে নষ্ট করছো?

–সুন্দর সময় কাটানো সম্পর্কে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি আর আমার দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো আলাদা, ভাবনা।

–লিস্‌ন বহ্নি, তুমি লাজুক লাজুক আর ভীতু ভীতু ভাব করে থাকো, কিন্তু আমি জানি তুমি যথেষ্ট ইনটেলিজেন্ট আর স্মার্ট। আমার চেয়েও বেশি বুদ্ধি তোমার। তা ছাড়া তুমি ডাক্তারি পড়ছে, তোমার বোঝা উচিত এরকম লোনলি জীবন কাটানো অস্বাভাবিক। তোমার স্বাস্থ্য ভাললা, চেহারা সুন্দর, তুমি কেন জীবনটা ভোগ করবে না? হঠাৎ একদিন দেখবে শরীরটা নষ্ট হয়ে গেছে!

–পুরুষ বন্ধু ছাড়া বুঝি জীবন উপভোগ করা যায় না? পৃথিবীতে কত কী দেখবার আছে, শোনবার আছে, বোঝবার আছে।

–ডোন্ট টক ননসেন্স। এটা ইন্ডিয়া নয়, এটা ইওরোপ। এখানে মানুষ জানে স্বাধীনতা কাকে বলে। চিন্তার স্বাধীনতা, ইচ্ছে মতন জীবন কাটাবার স্বাধীনতা। যদি শুধু শুধু কয়েকটা ইনহিবিশান আঁকড়ে থাকো, অকারণে শরীরকে কষ্ট দাও, গান্ধীর মতন রিপ্রেশানেই আত্মার শুদ্ধি হয় মনে করো, তা হলে এক সময় পস্তাতেই হবে। নাইনটিথ সেঞ্চুরির মরালিটি নিয়ে বিংশ শতাব্দীতে বাঁচা যায় না। একটা ভালো সুইমিং পুলে সাঁতার কাটার মতনই একটি মনোমত পুরুষের সঙ্গে বিছানায় কিছুক্ষণ কাটানো একটা সুখকর অভিজ্ঞতা। তার বেশি কিছু নয়! এতে লজ্জা বা গ্লানির কি আছে?

তুতুল কৃত্রিম ভয়ের ভঙ্গি করে দু’হাতে কান চাপা দিয়ে বলে, রক্ষে কর! তোমার এই জীবন-দর্শন আমার একদম পোষাবে না! আমি বেশ আছি।

ভাবনা এক লাফে বিছানায় উঠে একটা হাত তুলে স্টাচু অফ লিবার্টির ভঙ্গিতে হুকুমের সুরে বলে, অবস্টিনেট গার্ল, আই বিসিচ ইউ, গো, গেট আ বয়ফ্রেন্ড রাইট নাও! প্রন্টো!

তুতুলকে সিনেমায় যেতেই হয়, ভাবনা ছাড়লো না। রাত্তিরের শো-তে একা একা সিনেমা দেখা যে কী কষ্টকর! এই সব শহরে ছুটির সায়াহ্নে যেন কারুর একা থাকার অধিকার নেই। সব একারাই দোকা খোঁজে। এখানকার সিনেমা হলে সীট নাম্বার থাকে না, অনেক সীট খালি থাকে প্রায়ই। তুতুল নিরিবিলিতে বসবার চেষ্টা করলেও কেউ না কেউ দূর থেকে তার পাশে এসে বসবেই। ফিস ফিস করে কথা বলবে। রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় কেউ চাঁছাছোলা অসভ্য প্রস্তাব দেবে।

সিনেমাটা ভালো, তবু তুতুলের মন বিষিয়ে রইলো। রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আস্তে আস্তে, একবার সে ঘড়ি দেখলো। ভাবনা বলে দিয়েছে বারোটার আগে ফেরা চলবে না, এখনো চল্লিশ মিনিট বাকি, এতক্ষণ কোথায় সময় কাটাবে সে! ঠাণ্ডা কনকনে হাওয়া দিচ্ছে, তুতুল গ্লাভস নিয়ে আসেনি, ওভারকোটের পকেটে হাত দুটো রেখেও আঙুলের ডগাগুলো যেন অসাড় হয়ে আসছে। এখন ভাবনা শুয়ে আছে গরম বিছানায়…

তুতুলের কান্না পেয়ে গেল। এক সময় সে বেশ জোরেই বলে উঠলো, উঃ মা, আমি আর পারছি না! কবে বাড়ি যাবো? আমার এই লন্ডন-ফন্ডন কিছু ভালো লাগছে না।

হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির সামনে দিয়ে একবার চলে গেল তুতুল। দোতলায় তাদের ঘরে আলো জ্বলছে। ভাবনার ছেলেবন্ধু এখনো যায়নি, সে সহজে যেতেই চায় না। ওর মুখোমুখি পড়তে চায় না তুতুল। তার খুব অস্বস্তি লাগে। তুতুল আবার এগিয়ে যায়, ঠাণ্ডায় তার মুখ বেঁকে যাচ্ছে, নাঃ, এরকমভাবে আর চলে না। এরপর ভাবনাকে বলতেই হবে! ইচ্ছে মতন সে নিজের বিছানায় শুতে পারবে না, অথচ প্রতি মাসে ভাড়া গুনছে? রান্না ঘরে বসে থাকার ব্যাপারে আপত্তি জানাতে ভাবনা হাসতে হাসতে বলেছিল, তা হলে তুমি ঘরের মধ্যেই থেকো, চোখ বুজে, দেয়ালের দিকে পাশ ফিরে শুয়ে থাকবে, আই ডোন্ট মাইন্ড! মেয়েটার মুখে কিছুই আটকায় না!

আরও খানিকটা দূর এগিয়ে যাবার পর তুতুল ফিরলো। খাঁ খাঁ করছে রাস্তা, অবিরাম ঝরে পড়ছে গাছের পাতা।

হঠাৎ কোথা থেকে একটা লোক এসে চলতে লাগলো তুতুলের পাশে পাশে। গায়ে লম্বা ওভারকোট, মাথায় টুপী। কালো নয়, কিন্তু কোন জাতের মানুষ বোঝা যায় না। লোকটি হেসে, জড়িত গলায় বললো, হ্যালো, সুইদার্ট, ফিলিং লোনলি? মি টু!

তুতুল কোনো উত্তর দিল না, দ্রুত সরে যাবার চেষ্টা করলো।

লোকটি তুতুলের গলা জড়িয়ে ধরে বললো, কাম অন, লেটস হ্যাভ ফান!

কুঁকড়ে গেল তুতুলের শরীর। যে-কোনো পুরুষের স্পর্শেই তার এরকম হয়। ঘেন্না ঘেন্না লাগে।

সে অসম্ভব আর্ত গলায় কেঁদে উঠে বললো, লেট মি গো প্লীজ, প্লীজ!

লোকটা হকচকিয়ে গেল। সে এরকম আশা করেনি। একলা একটা মেয়ে হাঁটছে, সে তাকে এই ঠাণ্ডার রাতে উষ্ণতা দিতে চেয়েছে। মেয়েটা যদি তাতে রাজি না থাকে, সে কথা বললেই পারে। কাঁদবার কী আছে? সে তো মেয়েটার ব্যাগ কেড়ে নেয়নি।

তুতুল ছুটতে ছুটতে নিজেদের বাড়ির কাছে পৌঁছে বাড়ির সিঁড়িতে বসে রইলো। দু’হাতে ঢাকলো মুখ, কেঁপে কেঁপে উঠছে শরীর।

একটু বাদে ফিরলো বাড়িওয়ালা। বেশ মাতাল অবস্থা। সন্ধের পর পাবে গিয়ে মদ খাওয়া ছাড়া তার আর কোনো কাজ নেই। তুতুলকে দেখে অবাক হয়ে সে বললো, হ্যাল্লো, দকতর!

তুমি এখানে বসে কী করছো?

নিজেকে সামলে নিয়ে তুতুল বললো, সদর দরজার চাবি নিতে ভুলে গিয়েছিলাম। বেল বাজাইনি, অন্যরা বিরক্ত হবে।

দারুণ মজা পেয়ে হো হো করে হাসতে লাগলো বাড়িওয়ালা। তারপর সহানুভূতির সুরে বললো, আই নো, আই নো, ইয়োর রুমমেট, নটি গার্ল, চলো, ভেতরে গিয়ে তুমি আর আমি একসঙ্গে একটু কফি খাই!

আস্তে আস্তে বেশ কিছু লোকজনের সঙ্গে আলাপ হয়েছে তুতুলের। দু’তিনটি বাঙালী পরিবার, বেশ কিছু ছাত্র। ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে গেলে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়। তুতুলদের ব্যাচের দু’জন ছাত্র ও একজন ছাত্রীও আছে লন্ডনে। ‘মিলনী’ নামে একটি বাঙালী ক্লাবের অনুষ্ঠানেও সে গেছে দু’একবার, সেখানে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র-ছাত্রীরাও আসে।

পরিচিতদের মধ্যে কেউ কেউ তাকে সত্যিকারের সাহায্য করেছে। আবার সে একা একটি মেয়ে বলেই কেউ কেউ তার সঙ্গে বেশি বেশি ঘনিষ্ঠতা করতে চেয়েছে, অনুপ নামে তার দু’বছরের সিনিয়র একজন প্রায়ই তুতুলকে তার গোল্ডার্স গ্রীনের সুসজ্জিত অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে যেতে চায়। অনুপের অনেক টাকা, সে নাকি স্ট্যাম্প জমাবার মতন, বিভিন্ন মেয়ের সঙ্গে বিছানায় শোওয়ার অভিজ্ঞতা জমায়। ইংরেজ মেয়েদের মাথার দু’একটি চুল দেখিয়ে বন্ধুদের কাছে গর্ব করে।

তুতুল সকলের সঙ্গেই ব্যক্তিগত সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা এড়িয়ে যায়। কেউ উইক এন্ড পার্টিতে নেমন্তন্ন করলে সে কোনো একটা ছুতো দেখিয়ে না বলে দেয়। অন্যের পয়সায় সে খেতে চায় না, অন্যদের নেমন্তন্ন করে খাওয়াবার ক্ষমতাও তার নেই। প্রতিটি পাউন্ড হিসেব করে চলতে হয় তাকে। প্রতাপ মামা ধার করে তার প্যাসেজ মানি দিয়েছেন। কলকাতায় তাদের সংসার কত কষ্ট করে চলছে সে বুঝতে পারে। একবার সে অতি কষ্টে পঞ্চাশ পাউন্ড পাঠিয়েছিল বাড়িতে, তাতে খুব ধমক দিয়ে চিঠি লিখেছেন প্রতাপ মামা। তুতুলের কিছুতেই টাকা পাঠাবার দরকার নেই, সে যেন তার পড়াশুনোর ক্ষতি না করে, অতিরিক্ত পরিশ্রম না করে। তুতুল ঠিক করে রেখেছে কোনোরকমে তিন বছরের মধ্যেই পড়াশুনো শেষ করে সে দেশে ফিরে যাবে!

কিন্তু সেই তিন বছর আরও কতদূর! এখনও এক বছরও পুরো হয়নি। মাঝে মাঝে তার অসহ্য লাগে, দেশের জন্য মন ছটফট করে। ইচ্ছে করে, সব ছেড়েছুঁড়ে একদিন দৌড়ে গিয়ে প্লেনে উঠে পড়তে। গত শীতটা কিছুতেই কাটতে চায়নি, আবার শীত আসছে! প্রথম তুষারপাতের সময়, চারদিক নির্জন, বিষণ্ণ, তখন দেশের প্রিয় মানুষদের কথা ভেবে মনের মধ্যে একটা আকুলি-বিকুলি ভাব হয়!

সারা সপ্তাহ ধরে শুধু যন্ত্রের মতন কাজ আর পড়াশুনো। সকালবেলা ঘর থেকে বেরুবার পর যার সঙ্গেই দেখা হয় তার সঙ্গেই শুকনো গুড মর্নিং, গুড মর্নিং বলতে বলতে সিঁড়ি দিয়ে নামা। ল্যান্ডলেডির সঙ্গে প্রত্যেকদিন প্রায় একই রসিকতা আর আবহাওয়া নিয়ে আলোচনা। তারপর হাঁটতে হাঁটতে টিউব স্টেশান। আটটা বাজলেই ভিড় শুরু হয়ে যায়, তাই তুতুলকে একটু আগে আসতে হয়। তুতুল খবরের কাগজ কেনে না, অন্যের ফেলে যাওয়া খবরের কাগজ কুড়িয়ে নিয়ে পড়ে। ট্রেন থেকে নামলেই জনস্রোতে মিশে যাওয়া।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *