সকাল থেকেই মামুনের মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। তাঁর পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠার নিচের চার কলম জুড়ে গভর্নর মোনেম খাঁর প্রশস্তিমূলক একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। তাঁর সম্পাদিত কাগজ পড়তে গিয়ে মামুন নিজেই আঁতকে উঠলেন।
কাগজ বড় হয়েছে, কাজ অনেক বেড়েছে, এখন প্রত্যেকটি পৃষ্ঠা দেখে ছাড়া মামুনের পক্ষে সম্ভব হয় না। নিযুক্ত করা হয়েছে একজন অভিজ্ঞ নিউজ এডিটর। প্রত্যেকদিন বেলা একটার সময় মামুনের ঘরে সেই নিউজ এডিটর, চীফ রিপোর্টার ও দু’জন অ্যাসিস্টান্ট এডিটরের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়, সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে পত্রিকার পলিসি ঠিক করা হয়। আইয়ুব খাঁ-র নির্লজ্জ তাঁবেদার মোনেম খাঁ-র পায়ে তৈল মর্দন করা ‘দিন-কাল পত্রিকার নীতি নয়, তবু এরকম খবর ছাপা হয় কী করে? কুষ্টিয়ার এক কলেজের পুরস্কার বিতরণী সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে মোনেম খাঁ যা সব আবোল-তাবোল বকেছে, খবর হিসেবে তার কোনো মূল্যই নেই, ইংরিজি পত্রিকাগুলিতে সে খবর ছাপাই হয়নি, আর মামুনের কাগজে চার কলম! মানিক মিয়া বা অন্যান্য সম্পাদকদের সঙ্গে এর পর দেখা হলে মামুনকে নিশ্চিত বিদ্রূপ শুনতে হবে।
কাগজ পড়তে পড়তেই মামুন ফোন করলেন তাঁর নিউজ এডিটর নুরুল সাহেবকে। ফোন ধরেই নুরুল সাহেব দু’বার হাঁচলেন, তারপর যেভাবে কথা বলতে শুরু করলেন তা বুঝতে মামুনের বেশ অসুবিধে হলো। নুরুল সাহেবের নাক ভর্তি সর্দি, দন্ত্য ন গুলি ল হয়ে গেছে। মোটকথা তিনি জানালেন যে, জ্বর জ্বর বোধ হওয়ায় তিনি গতকাল রাত আটটার সময় অফিস থেকে বাড়ি চলে এসেছিলেন, মামুন সাহেব তখন ঘরে ছিলেন না বলে তিনি চার্জ দিয়ে এসেছিলেন চীফ সাব সুধীর দাসের ওপর। প্রথম পাতার অ্যাংকর নিউজটি কে লিখেছে তিনি জানেন না। তিনি নিজেও ঐ খবর পড়ে অবাক হয়েছেন।
মামুন ভুরু কুঁচকে বসে রইলেন। সুধীর দাসের বাড়িতে টেলিফোন নেই। আলতাফ হয়তো জানতে পারে। কিন্তু আলতাফ তো সাংবাদিক নয়, সে ম্যানেজার, আলতাফের কাছে কোনো সংবাদের সূত্র জানতে চাওয়া সম্পাদকের পক্ষে সম্মানজনক নয়। হাতের কাছে আর কারুকে না পেয়ে মামুন ফিরোজা বেগমের ওপরই উগ্র মেজাজ দেখাতে লাগলেন। তাঁর গোসলের জন্য গরম পানি দেওয়া হয়নি কেন? খেতে বসে তিনি মাছের বাটিটা ঠেলে সরিয়ে দিলেন।
শীতকালে ইলিশ মাছ তিনি একেবারে পছন্দ করেন না। ফিরোজা বেগম তা জানে না? তাঁর সেবা-যত্নের প্রতি বাড়ির লোকের কোনো নজরই নেই, তিনি তবু টাকা রোজগারের জন্য গাধার মতন খেটে চলেছেন। শেষ পাতে খানিকটা ডাল চুমুক দিয়ে খেতে মামুন ভালোবাসেন, আজ ডাল রান্নাই হয়নি।
তাড়াতাড়ি অফিসে পৌঁছে মামুন হাঁকডাক শুরু করলেন। সুধীর দাস কোথায়? এখনো আসেনি। রিপোটাররাও কেউ এখনো আসেনি, একজন মাত্র সাব এডিটর ও দু-তিনটি বেয়ারা ছাড়া আর কেউ নেই। দশটা থেকে শিফট শুরু হওয়ার কথা, বারোটার মধ্যেও অনেকেই এসে পৌঁছোয় না। মামুন তাঁর বেয়ারা আবদুলকে দিয়ে প্রফ ডিপার্টমেন্ট থেকে আগের দিনের কপির বাণ্ডিল আনালেন, আশ্চর্যের ব্যাপার, তার মধ্যে ঐ বিশেষ কপিটিই নেই। ইচ্ছে করেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
মামুন চেঁচিয়ে বললেন, আবদুল, সব কমপোজিটারদের ডেকে নিয়ায়! শান্ত প্রকৃতির মামুনকে এত রাগতে কেউ দেখেনি আগে। তাঁর চক্ষু দুটি যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। যে তিনজন কমপোজিটার এখন উপস্থিত, তারা কেউই ঐ নিউজ কমপোজ করেনি, কে করেছে তারা জানে না। মামুনের সন্দেহ হলো তাঁর বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র চলছে, তিনি তখুনি আলতাফকে টেলিফোন করতে গেলেন, কিন্তু আলতাফকেও পাওয়া গেল না।
মামুনের নিজস্ব সেক্রেটারি শওকতও এখনো এসে পৌঁছোয়নি। এই শওকত ইদানীং গানবাজনা নিয়ে খুব মেতে উঠেছে। অফিসে বসেও সে মাঝে মাঝে টেবিল বাজিয়ে গান গায়। মামুন তার গান শুনতে পছন্দই করেন, কিন্তু এখন তার ওপর রেগে উঠে ভাবলেন, এবার ঐ গায়ক ছোঁকরাটাকে তাড়াতে হবে! সবকটা অকর্মাকে তিনি আজ থেকে সমঝে দেবেন যে এই অফিসে যা খুশী করা চলবে না!
এই সময় উপস্থিত হলো সুধীর দাস। বেশ বয়স্ক মানুষ, সারা জীবন সাংবাদিকতা করে চুল পাকিয়েছেন, ধুতির ওপর সাদা শার্ট তাঁর প্রতিদিনের পোশাক। এমনই তাঁর নস্যি নেওয়ার বাতিক যে হাতে নস্যি না থাকলেও দুটি আঙুল সব সময় জুড়ে থাকে।
তাঁকে দেখে মামুন একেবারে ফেটে পড়লেন। সেদিনের কাগজটা তাঁর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে মামুন বললেন, এ কী ব্যাপার, সুধীরবাবু, কে এটা লিখেছে, কার হাত দিয়ে পাস হয়েছে, আমি জানতে চাই।
প্রথমেই মামুনের কথার উত্তর না দিয়ে সুধীর দাস পেছন ফিরে কমপোজিটারদের বললেন, যাও, তোমরা কাজে যাও।
তারপর এগিয়ে এসে একটা চেয়ারের পিঠ ধরে দাঁড়িয়ে তিনি অতি স্বাভাবিক গলায় বললেন, আমার হাত দিয়েই পাস হয়েছে। কিন্তু আপনি এত চটছেন কেন, মামুন সাহেব?
অতি নিরীহ নিউজ, এর মধ্যে দোষের কী দ্যাখলেন?
মামুন আরও উত্তপ্ত হয়ে বললেন, নিরীহ নিউজ? আপনার কী ভীমরতি হয়েছে? এবারে আপনার রিটায়ার করার বয়েস হয়ে গেছে দেখছি। পড়ে দেখে পাস করেছিলেন?
সুধীর দাস মৃদু হাস্যের সঙ্গে বললেন, জী, পড়ে দেখেই পাস করেছি।
–কে লিখেছে এই গর্ভস্রাব? তারে আইজই আমি সাসপেণ্ড করবো।
–সেটা বলতে পারবো না।
–তার মানে? আপনি কপি ছাড়লেন, অথচ আপনি জানেন না কে লিখেছে? এর মানে কি? কপিটা আপনার হাতে কে দিল?
–যে দিয়েছে, সে লেখে নাই।
–সুধীরবাবু, আপনি আমার সাথে রহস্য করতে আছেন? আপনি লিমিট ছাড়ায়ে যাচ্ছেন, আপনার বয়েস হয়ে গেছে, আমি বলে কয়ে আপনারে কাজে রেখেছি।
–মামুন সাহেব, একটু শান্ত হন, আপনার প্রেসার হাই, এত উত্তেজনা ভালো না। আপনারে আমি বুঝয়ে বলতেছি। কপি আমার হাতে এনে দিয়েছে ইয়াকুব।
–ইয়াকুব? সে কিছু দিলেও আপনি প্রেসে পাঠাবেন? আমার পত্রিকা এতখানি জাহান্নমে নেমেছে? সুধীরবাবু, এতদিন ধরে জানালিজম করতেছেন, নিউজ পেপারের কোনো এথিকস শেখেন নাই।
–শোনেন, শোনেন, ইয়াকুব হইলো হোসেন সাহেবের খাস বেয়ারা। হোসেন সাহেব নিউজটা ছাপাতে বলেছেন, আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে যে না বলি? আপনি অ্যাকটিং এডিটর, আর হোসেন সাহেব এই কাগজের প্রোপ্রাইটর ছাড়াও চীফ এডিটর, আপনার অনুপস্থিতিতে তিনি যদি কোনো নিউজ আইটেম ছাপার নির্দেশ দেন, আমি তা পালন করবো না?
–আমি অফিসে ছিলাম না, আমাকে টেলিফোনে কেন জানালেন না?
–টেলিফোন করেছিলাম, আপনি রাত্তির নয়টার সময় বাড়িতে ছিলেন না।
মামুন হঠাৎ চুপ করে গেলেন। হোসেন সাহেব ইদানীং আর কাগজের অফিসে বিশেষ আসেন না। সংবাদপত্র প্রকাশ করার সুফল তিনি ইতিমধ্যেই পেয়েছেন যথেষ্ট। অনেকেই এখন তাঁর নাম জানে, বার বার ছবি ছাপা হওয়ায় তাঁর চেহারাটাও পরিচিত, পূর্ব-পাকিস্তানে তিনি গণ্যমান্যদের একজন। এখন তিনি আবার ব্যবসা বৃদ্ধিতে মন দিয়েছেন, একটি জ্যাম-জেলি তৈরির ফ্যাকটরি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। আইয়ুব খাঁ এখন পূর্ব পাকিস্তানে কিছু কিছু লাইসেন্স ছড়াচ্ছেন, ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা লালায়িত হয়ে উঠেছে, এমনকি অনেক
অধ্যাপক বুদ্ধিজীবীরাও নানা রকম সুযোগ-সুবিধে পেতে শুরু করে সরকার-বিরোধী মনোভাব ঝেড়ে ফেলছে একেবারে।
তা হলে মোনেম খাঁর তোষামোদ করা এই খবর ছাপানোর পেছনে আছে হোসেন সাহেবের জ্যাম-জেলির ফ্যাকটরি?
কিন্তু এ তো শুধু সরকার-তোষণ নয়, এ যে বাঙালী জাতি ও বাংলা ভাষার সমূহ ক্ষতি করার চেষ্টায় সায় দেওয়া। ভবিষ্যতে এর কুফল কতদূর পর্যন্ত গড়াবে, তা কেউ ভেবে দেখছে না? মোনেম খাঁ সর্বত্র বলে বেড়াচ্ছে যে পূর্ব পাকিস্তানের সাহিত্যে ও পাঠ্যপুস্তকে পরদেশী সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ আর সহ্য করা হবে না? পরদেশী সংস্কৃতি মানে কী? পাকিস্তান সৃষ্টির আগে বাংলা ভাষায় যে-সব বই লেখা হয়েছে, তা আর পড়বে না এদিকের বাঙালীরা? পাঠ্যপুস্তকে রবীন্দ্রনাথ-শরৎচন্দ্রের রচনা থাকবে না? বেতারে এর মধ্যেই রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। বাংলা ভাষায় বেছে বেছে সংস্কৃত শব্দ বাদ দিয়ে আর্বি-ফার্সি শব্দ ঢোকানোর চেষ্টা হচ্ছে। জোর করে কোনো ভাষা বদলানো যায়? ঐতিহ্যকে বাদ দিয়ে কোনো ভাষা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে? দেশ ভাগ হয়েছে বলে ভাষাকেও ভাগ করার কথা যারা ভাবে, তারা উন্মাদ ছাড়া আর কী? দুই জার্মানির ভাষা কী বদলে গেছে? দুই কোরিয়ায়? দুই ভিয়েৎনামে?
মুখ তুলে মামুন আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করলেন, তবু, কপিটা কে লিখেছে, তা আমাকে বলবেন না, সুধীরবাবু?
সুধীর দাস বললেন, খুব সম্ভবত এটা একটা সরকারি হ্যাণ্ডআউট। যদিও টাইপ করা না, হাতের লেখা। ইয়াকুব প্রথমে কাগজখানা এনে দিয়েছিল নিউজ এড়িটর নুরুল সাহেবকে। তিনি সেখানা দেখেই শরীর খারাপের অজুহাতে বাড়ি চলে গ্যালেন। তিনি জানেন, আপনি এ খবর ছাপা হলে রাগ করবেন। তিনি আরও জানেন যে, আমার হাতে পড়লে, এ কপি চেপে রাখার সাহস আমার হবে না। সত্যই তো আমার তেমন সাহস নাই।
একটু পরে ঘর ফাঁকা করে মামুন সম্পাদকীয় লিখতে বসলেন। হোসেন সাহেব বা আলতাফের সঙ্গে বোঝাঁপড়া হবে পরে। আজ তিনি কলমের কালি দিয়ে যতখানি আগুন ছোটানো যায় তা দিয়ে তিনি ভস্মসাৎ করবেন সরকারি নীতি। এ চাকরি চলে গেলেও তাঁর খেয়ে মরার ভয় নেই, কিন্তু আদর্শভ্রষ্ট হয়ে এরকম চাকরি আঁকড়ে ধরে থাকলে তিনি মরমে মরে যাবেন।
লেখা যখন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, তখন তিনি হঠাৎ দেখতে পেলেন তাঁর টেবিলের ওপর একটা ছায়া। মুখ তুলে মামুন বিষম অবাক হলেন। কালো চশমা পরা দীর্ঘকায় একজন মানুষ, সেই মুসাফির। কী করে লোকটি ঢুকলো এই ঘরে? মামুন যখন সম্পাদকীয় লেখেন, তাঁর কড়া নির্দেশ আছে, সেই সময় কোনো দর্শনার্থীকে আসতে দেওয়া হবে না। আবদুল কী ঘুমোচ্ছে?
মামুন কিন্তু বিরক্ত বোধ করলেন না। এক-একজন মানুষের উপস্থিতিতেই একটা ভালো লাগার তরঙ্গ এসে গায়ে লাগে। মুসাফিরের হাস্যময় মুখ দেখে মামুন ভুরু কুঁচকোতে পারলেন না, অভিবাদন বিনিময় করে তিনি বললেন, বসেন, একটু বসেন, আমার আর দেরি নাই।
যে-রকম মনঃসংযোগ নিয়ে মামুন লিখছিলেন, তা যেন একটু নষ্ট হয়ে গেল, একটা সিগারেট ধরিয়ে কপাল চেপে ধরে তিনি আবার লেখার মধ্যে ফিরে এলেন। সমাপ্তিটা মোটামুটি পছন্দই হলো তাঁর, একবার রিভাইজ করতে হবে, তার আগে মুসাফিরের সঙ্গে কথা বলার জন্য তিনি কলম বন্ধ করলেন।
জেল থেকে সদ্য ছাড়া পেয়েছেন মুসাফির, কিন্তু তাঁর পোশাকে বা মুখমণ্ডলে তার কোনো ছাপ নেই। ধপধপে সাদা পোশাক, তার ওপরে একটি দামী শাল জড়ানো, মুখখানা প্রসন্নতা মাখা। তিনি একদৃষ্টিতে মামুনের মুখের দিকে চেয়ে আছেন।
মামুন জিজ্ঞেস করলেন, কবে ছাড়া পেলেন?
–পরশুদিন। বিকাল তিনটার সময়।
–খুব কষ্ট দিয়েছে? টচার করেছে? কিছু কিছু রিপোর্ট পেয়েছি, তবে আপনার মতন একজন মানী লোককে…।
–না, না, কোনো টচার করেনি, অসুবিধা কিছুই হয়নি, আপনাদের জেলখানায় খাদ্যও অতি উপাদেয়। দিব্যি বহাল তবিয়তে ছিলাম।
–ক্লাস ওয়ান প্রিজনার হিসাবে রেখেছিল নাকি আপনাকে?
–তা তো জানি না, এক হল ঘরে দশ বারো জন ছিলাম, সেটা ক্লাশলেস সোসাইটি বলা যায়।
মামুন বুঝলেন যে মুসাফির সাধারণ কয়েদী হিসেবেই জেলে ছিলেন কিন্তু তিনি সে সম্পর্কে কোনো অভিযোগ জানাতে চান না। হঠাৎ একটা কথা তাঁর মনে পড়লো। তিনি বেশ খানিকটা শ্লেষের সঙ্গে বললেন, আপনি তো মশায় দূরদর্শী মানুষ। ভবিষ্যৎ দেখতে পান। ইণ্ডিয়ার সাথে যুদ্ধ লাগবার কয়েকদিন আগেই আপনি ফোরকাস্ট করেছিলেন। কিন্তু আপনি নিজেও যে জেল খাটবেন তা কি আগে থেকে জানতেন?
এ কথার সরাসরি উত্তর না দিয়ে মুসাফির কয়েক মুহূর্ত নিঃশব্দে হাসলেন। কেউ প্রশ্ন করলেই তিনি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেন না, এতে যেন তাঁর চরিত্রে অতিরিক্ত ব্যক্তিত্ব আসে।
অপ্রত্যাশিতভাবে তিনি বললেন, আমার কয়েদ তো শেষ হয়ে গেছে, এবারে আপনার জেল খাটার পালা, মোজাম্মেল সাহেব।
মামুন আঁতকে উঠলেন। লোকটা বলে কী? তিনি আজ একটু আগে যে লেখাটি শেষ করলেন, সেটার জন্য সরকারের গোঁসা হওয়ার কথা, কিন্তু এই লোকটি জানলো কী করে তিনি কী লিখছেন?
–আপনি কী বলছেন, আমাকে জেল খাটতে হবে কেন? সবে যুদ্ধ শেষ হয়েছে, এর মধ্যেই আবার ধরপাকড় শুরু হবে? নাঃ, এটা আপনি ঠিক বলছেন না।
–আমি ঠিকই বলছি, আপনার ললাটে লেখা আছে।
–মুসাফির সাহেব, আমার ঐ সব ললাটের লেখা-টেখায় বিশ্বাস নাই। আপনি এর আগেও আমার সম্পর্কে বলেছিলেন…
–সেটাও ভুল বলি নাই। একটি। অল্পবয়েসী তরুণী মেয়ের ছায়া দেখতে পাচ্ছি আপনার মাথার পিছনে। সে আপনারে কষ্ট দেবে, আপনিও তারে কষ্ট দেবেন!
–আমার এত কাজ, আমি নিঃশ্বাস ফেলার সময় পাই না!
–বুঝেছি, আপনি ব্যস্ত, আমারে চলে যেতে বলছেন। চলেই তো যাবো আমি, ইণ্ডিয়ায় ফিরে যাবো, যাবার আগে একবার আপনার সাথে দেখা করতে এলাম। অযাচিত উপদেশ দিতে এসেছি ভাববেন না, জেলের মধ্যে বসেও আমি আপনার কথা চিন্তা করেছি। ভালো থাকবেন। খোদা হাফেজ!
মামুন নিরস গলায় বললেন, ধন্যবাদ। খোদা হাফেজ।
মুসাফিরকে দেখে মামুন প্রথম যে ভালো লাগার তরঙ্গটি অনুভব করেছিলেন, সেটা হঠাৎ যেন মিলিয়ে গেছে। তিনি ভেবেছিলেন, মুসাফিরকে তাঁর কাগজের জন্য কিছু লিখতে বলবেন। কিন্তু লোকটির জ্যোতিষীগিরির চেষ্টা দেখে কেমন যেন হামবাগ মনে হলো। তিনি আর লেখার প্রসঙ্গ তুললেন না। এমন কি, মুসাফির বিদায় নেবার সময় মামুন তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে এগিয়ে দিতেও এলেন না।
লোকটা বলে কি না, মামুনের জীবনে একটি তরুণী মেয়ের ছায়া পড়েছে। যতসব রাবিশ! লোকটা স্টান্ট দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করে। দৈবাৎ দুটো একটা মিলে যায়। যেমন পাক-ভারত যুদ্ধের ব্যাপারটা মিলেছে। ঐ যুদ্ধের ফলে সে নিজেও যে গারদে যাবে তা বোঝেনি?
ঐ মুসাফির অযাচিত ভাবে আজ এসেছিল কেন? এসেই বললো, এবারে মামুনের জেলে যাওয়ার পালা– অদ্ভুত কথা! একটা দৈনিক পত্রিকার সম্পাদককে জেলে দেবে, গভর্নর মোনেম খাঁ অত বোকা নয়।
রমনা পার্কের এক কোণে ঘাসের ওপরে বসে আছে বাবুল আর মণিলাল। শীতের জন্য পার্কে একেবারে ভিড় নেই, খানিক আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গিয়ে শীতটা আরও জাঁকিয়ে পড়েছে। বাবুলের হাতে একটা খবরের কাগজ ছিল, সেই কাগজ পেতে দু’জনে বসেছে ঘাসের ওপর, সামনে এক ঠোঙা বাদাম।
মণিলালকে সহজে চেনাই যায় না। তার মাথায় পাগলের মতন, উস্কোখুস্কো চুল, গাল ভর্তি দাড়ি, চোখ দুটি বসে গেছে কোটরের মধ্যে। কয়েক সপ্তাহের কারাবাস সে সহ্য করতে পারেনি।
দু’জনে বসে আছে বেশ কিছুক্ষণ, কিন্তু কথা বলছে সামান্যই, মাঝে মাঝে দু একটা কাটা কাটা কথা, বেশির ভাগ সময়েই নিস্তব্ধতা। এরকম ভাবে বসে থাকতে মণিলালের ভালো লাগছে না, কিন্তু বাবুল কিছুতেই উঠতে চাইছে না।
এক সময় বাবুল জিজ্ঞেস করলো, তুমি কি তা হলে ইণ্ডিয়াতেই চলে যাবে?
ঝাঁঝের সঙ্গে মণিলাল বললো, তুই বার বার ঐ কথা বলছিস কেন রে? কিসের জইন্য আমি ইণ্ডিয়াতে যাবো? সেখানে আমার কে আছে?
মণিলালের বাহুতে চাপড় মেরে বাবুল বললো, তুমি আমার ওপর মিছামিছি রেগে যাচ্ছো, মণিদা। যে-কোনো কথায় ফোঁস করে উঠছো কেন?
মণিলাল একই ভাবে বললো, আমি ইণ্ডিয়ায় চলে গ্যালে তোর কী লাভ? তুই আমার সম্পত্তি ভোগ করবি? আমার তো আছে কচু পোড়া!
বাবুল ঠোঙা থেকে কয়েকটা বাদাম বার করে বললো, নাও, বাদাম খাও। শরীরটার কী দশা করেছো এই কয়দিনে? রাগ করে খাওয়া-দাওয়া করো নাই বুঝি?
–ছাগলের খাদ্য মানুষে খাইতে পারে না। আমি ছাগল না।
–সেইজন্যই তো কইতাছি, আমার বাসায় চলো, মঞ্জু তোমারে বেঁধে খাওয়াবে। মঞ্জুর হাতের রান্না তুমি তো পছন্দ করো।
–না যাবো না, আমি কারুর বাসায় যামু না।
–তুমি পল্টন ভাই-এর ওপর রাগ করে আমার উপর সেইটা ফলাচ্ছো। শোনো, পল্টন ভাইয়ের অসুবিধার কথাটা তোমারে বলি। দিলারাকে মনে আছে তো তোমার? সেই দিলারা এক পাঞ্জাবী মিলিটারি অফিসারকে বিয়ে করেছে। সে লোকটা প্রায়ই এসে ঐ বাড়িতে বসে থাকে। সে যদি তোমারে দ্যাখে, যদি শোনে যে তুমি ওয়ারের সময় ডিটেইনড আছিলা, তা হলে যদি কিছু অশান্তি করে, সেই জন্যই পল্টন ভাই তোমারে বাসায় নিয়া যাইতে চায় নাই।
সে আমারে দ্যাখলেই বোঝবে যে আমি ইণ্ডিয়ার স্পাই? ক্যান, আমি পাকিস্তানের সিটিজেন না? একবার মাত্তর একটা বিয়ার নেমন্তন্ন ছাড়া আর কখনো ইণ্ডিয়াতে যাই নাই। ঠিক আছে, আমি কারুর বাসায় যাইতে চাই না, কারুরে বিপদে ফ্যালতে চাই না।
–তুমি আমার বাসায় চলো।
–না! এক কথা বার বার বলিস না, বাবুল। শুধু জেলে যাওয়ায় আমার ক্ষতি ছিল না, কিন্তু এর মধ্যে আমার বিজনেসটা ছারেখারে গ্যাছে। ঢাকায় আমার নিজের বাসায় রাত্তিরে থাকতে ভয় হয়।
–এখন কিছুদিন তোমার ওখানে না থাকাই ভালো। আমার সাথে চলো। কিছুদিন চুপচাপ থাকো। তারপর ধীরে-সুস্থে আবার বিজনেস শুরু করবা। তুমি একেবারে পানিতে পড়ো নাই, মণিদা, আমরা তো আছিই।
–বাবুল চৌধুরী, তোমার জেনারাস অফারের জন্য বহুৎ শুক্রিয়া; কিন্তু মণিলাল রায় এখনো মরে নাই। জেল থেকে যখন বেঁচে ফিরে এসেছি, আমি আবার ঠিক উঠে দাঁড়াবো। কামালের বাড়িতে গেছিলাম, ও আমার কাছে কিছু টাকা হাওলাৎ করেছিল, সে জইন্য না, আমি টাকা চাইতে যাই নাই, কিন্তু কামালের বউ আমারে ভিতরে ঢুকতেই দিল না এই বলে যে কামালের নাকি জ্বর।
–সত্যিই কামালের জ্বর।
–আরে রাখ। কামালের বুঝি আগে কোনোদিন জ্বরজারি হয় নাই, তখন তারে আমরা দ্যাখতে যাই নাই?
–হামিদা ভাবীর স্বভাবের কথা তো তুমি জানোই, সকলের উপরেই ম্যাজাজ দেখায় ধড়মড় করে উঠে দাঁড়িয়ে মণিলাল বললো, আমি চলি রে, বাবুল। বাবুল তার হাত ধরে টেনে বললো, কোথায় যাবে?
–তোরা ভাবোস, আমার কোথাও যাওনের জাগা নাই? গ্রামে একখান বুইড়া ঘর এখনো আছে।
বাবুলও উঠে দাঁড়িয়ে বললো, মণিদা, পল্টন ভাইরে তুমি ভুল বুইঝো না, সে তোমারে সত্যিই। ভালোবাসে। বেচারি নিজেই খুব অসুবিধার মধ্যে আছে। মণিদা, রাগ করো না, আর একটা কথা বলবো? তোমার টাকার দরকার থাকলে আমি কিছু দিতে পারি।
বাবুলের দিকে একটা জ্বলন্ত দৃষ্টি দিয়ে মণিলাল বললো, আমার এখনো ভিক্ষা করার স্টেজ আসে নাই।
বাবুল কোনোক্রমেই মণিলালকে নিরস্ত করতে পারলো না, সে একটা রিকশা ডেকে চলে গেল একা। এই মণিলাল সব সময় হাসি-মস্করা করার জন্য বন্ধুদের মধ্যে প্রিয় ছিল।
বাস স্ট্যাণ্ডে এসে মণিলাল নারায়ণগঞ্জের বাস ধরলো। আকাশ মেঘলা বলে দুপুর বেলাতেই ছায়া ছায়া ভাব। যথারীতি বাসে প্রচণ্ড ভিড়, মণিলাল বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার ঠোঁটে একটা তেতো তেতো ভাব, বুকের মধ্যে অনির্দিষ্ট জ্বালা। পাকিস্তান সরকার তাকে জেলে আটকে রেখেছিল, এ জন্য তার ক্ষোভ নেই, নিজস্ব যুক্তি দিয়ে সে ব্যাপারটা বুঝতে পারে, কিন্তু তার বন্ধুরাও তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে এখন, এটা সে সহ্য করতে পারছে না। বন্ধু না থাকলে আর এ দেশে রইলো কী? ইণ্ডিয়াতেও তার কোনো নিকট-আত্মীয় নেই, কে সেখানে তাকে আশ্রয় দেবে?
রাস্তায় একটা কিছু গোলমালে বাস থেমে যেতেই মণিলাল ভয় পেয়ে গেল। কিসের গণ্ডগোল? মুখে দাড়ি গোঁফ থাকলেও লোকে তাকে চিনে ফেলবে? যদি চিনতে পারে, যদি চিনতে পারে…
সেটা একটা ছাত্রদের মিছিল, কয়েক মিনিট পরেই বাসটা আবার ঠিকঠাক ছুটলো। বাস থেকে নেমে মণিলাল আবার একটা রিকশা নিয়ে চলে এলো শীতলক্ষা নদীর ধারে। খেয়া নৌকোয় পার হয়ে সে ওপারে নামলো যখন তখন বিকেল প্রায় শেষ হয়ে আসছে। এদিকে আগেই বৃষ্টি হয়ে গেছে বেশ খানিকটা, তাই আকাশ পরিষ্কার, পশ্চিম দিকে খুব গাঢ় রং করে সূর্য ডুবছে।
মণিলাল হাঁটা পথ ধরলো। কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছে, সে আলোয়ানটা গায়ে জড়িয়ে নিল ভালো করে, যদিও তার মাথাটা এখনো উত্তপ্ত হয়ে আছে। রাগের চেয়েও একটা প্রবল অভিমান দলা পাকিয়ে রয়েছে তার গলার কাছে। কামালের জ্বর, সেই জন্য হামিদা বেগম তাকে ওপরে যেতে দিল না? কয়েক বছর আগের দাঙ্গাতে এই কামালই তাকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিল। পল্টনের বাড়িতে সে যখন তখন গেছে, কত রাত ঐ বাড়িতেই কাটিয়েছে, সেই পল্টনের বাড়ির দরজা তার জন্য বন্ধ। তিন বার গিয়েও জহিরকে বাড়িতে পাওয়া গেল, সে কি সত্যিই এতখানি ব্যস্ত? এর আগে কত দুঃসময় গেছে, মণিলাল নিজেকে কখনো এমন নিবান্ধব মনে করেনি।
সে এগিয়ে চললো মুন্সিগঞ্জের দিক লক্ষ করে। রাস্তা ছেড়ে সে আলপথ ধরেছে, তবু দিক নির্ণয় করতে তার কোনোই অসুবিধে হয় না। দূরের গাছপালার সারি, এখানকার আকাশ, আলপথের কাটাকুটি, এই সবই তার খুব চেনা। ইণ্ডিয়ায় গিয়ে সে কি কোনো গ্রাম্য রাস্তায় এমন সাবলীলভাবে হাঁটতে পারবে?
চাষের সময় নয়, মাঠ একেবারে ফাঁকা। তার মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে একলা একজন অভিমানী মানুষ। প্রায় এক ঘণ্টা পরে, সন্ধের মুখে মুখে মণিলাল মাঠ ছেড়ে ঢুকে পড়লো সাঁইবাজার গ্রামে। সে গ্রামের প্রান্তেই একটি চৌকো দিঘির পাড়ে একটি বিশাল ভূতুড়ে বাড়ি। সে বাড়িতে একটাও দরজা-জানলা অক্ষত নেই, দোতলার একটি বারান্দা একদিকে ধসে পড়েছে, সেই অংশটা আধো-অন্ধকারে একটা হাঁ-করা দৈত্যের মতন মনে হয়।
এটা ছিল মল্লিকদের বাড়ি। মণিলালের মনে আছে, ছেলেবেলায় এই বাড়িটি সে কত জম-জমাট দেখেছিল, কালীপুজোর সময় এই মল্লিক বাড়ির বাজি পোড়ানো দেখতে আট দশখানা গ্রামের লোক এসে জড়ো হতো। দীঘিটার দু দিকে বাঁধানো ঘাট, একটা ঘাট ছিল মেয়েদের, মল্লিক বাড়ির ছোট কতা একবার এই ঘাটের কাছে একটা পাগলা কুকুরকে গুলি করে মেরেছিলেন।
এর পরের বাড়িটা সেনগুপ্তদের। কিছুদিন আগেও দু’জন বুড়োবুড়ি ছিল এখানে, তারা দু’জনেই মরে গেল নাকি, এ বাড়িতেও কোনো আলো জ্বলছে না!
পর পর সব খালি বাড়ি। এখন এটাকে আর গ্রাম বলা যায় না, একটা পরিত্যক্ত জনপদে যেমন কিছু কিছু ইঁদুর আর কুকুর বেড়াল থাকে, সেই রকম এখানে ওখানে কিছু মানুষ এখনো রয়ে গেছে। প্রায় নিষ্প্রাণ, নিষ্প্রদীপ। বামুন পাড়ায় একঘরও মানুষ নেই। ধোপা পাড়াতেও চার পাঁচ ঘর ছিল, তারা সব গেল কোথায়, ইণ্ডিয়ায়? ইণ্ডিয়া এত ধোপা নিয়ে কী করবে?
–কে যায়?
মণিলাল দারুণ ভাবে কেঁপে উঠলো। একটা বাঁশ ঝাড়ের পাশ দিয়ে মোটা গলায় কেউ একজন হাঁক দিয়েছে। লোকটা হিন্দু না মুসলমান?
আঃ এই চিন্তাটা কেন যে মন থেকে কিছুতেই তাড়ানো যায় না! মানুষ আর শুধু মানুষ নেই, যে-কোনো মানুষ দেখলেই প্রথমেই যেন জেনে নেওয়া খুবই জরুরি যে লোকটি মুসলমান
হিন্দু! নিজের গ্রামের রাস্তায় মণিলাল আগে কখনো এমন ভয় পায়নি। উত্তর না দিয়ে সে থমকে দাঁড়িয়ে রইলো। বাঁশ ঝাড়ের অন্ধকার ভেদ করে লোকটি এগিয়ে এলো কাছে। তাকে চিনতে পেরে মণিলাল যেন হাতে চাঁদ পেল, এর নাম ডোমরেল, বেশ বলিষ্ঠ জোয়ান পুরুষ, হাতে একটা ল্যাজা অর্থাৎ বর্শা।
ডোমরেলরা নিম্নবর্ণ এদের পল্লীটা এখনো অটুট রয়ে গেছে, এরা মাছ ধরে, বেতের চুবড়ি বোনে। এদের জল-চল নেই, আগে এরা মণিলালদের বাড়িতে এলেও উঠোনে দাঁড়িয়ে থাকতো, দাওয়ায় ওঠার অধিকার ছিল না। এই ডোমরেল একবার একটা গোসাপ ধরে দেখাতে এনেছিল তাদের বাড়িতে, মণিলালের তখন মাত্র সাত-আট বছর বয়েস, মণিলালের বাবা একটা টাকা ছুঁড়ে দিয়ে বলেছিলেন, যা বেটা, দূর হ! ওডারে তো মাইরা খাবি, দ্যাখলেও আমাগো পাপ হয়।
ডোমরেল আরও কাছে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো, কে?
মণিলাল তার হাত চেপে ধরে ব্যাকুলভাবে বললো, ডোমরেলদাদা, আমি মণি, আমারে চেনতে পারো না? আমারে এট্ট বাড়িতে পৌঁছাইয়া দাও।