2 of 3

২.৩৩ টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর কাছে

টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর কাছে সন্ধেবেলা একলা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন প্রতাপ। সিগারেট টানছেন আপন মনে, চোখের দৃষ্টি ভাসা ভাসা। এক এক সময় মানুষ কোনো একটা জায়গায় যাওয়ার কার্যকারণ ভুলে যায়, নিজেই যায় কিন্তু নিজেকেই প্রশ্ন করে, কেন এলাম? সেই সময় তার মুখের চেহারাও হয় অন্যরকম।

আদালত থেকে প্রতাপ কিছু জরুরি কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছিলেন, বাড়ি ফেরারই কথা ছিল, হঠাৎ কেন যেন তাঁর ভাবান্তর হলো, আদালির হাতে ফাঁইলপত্তর দিয়ে বললেন, কাল সকালে এগুলো আমার বাড়িতে নিয়ে আসিস। তারপর তিনি চড়ে বসেছিলেন একটি

বিপরীতমুখী বাসে। দু’বার যানবাহন বদল করে প্রতাপ এ পর্যন্ত এসেছেন। কিন্তু কেন এসেছেন?

উত্তরটা প্রতাপ জানেন। কিন্তু নিজের কাছেও সেটা স্বীকার করতে চান না। অনেক রকম মানসিক প্রক্রিয়া থেকে উদ্ভুত একটা টানেই প্রতাপকে হঠাৎ এতদূর আসতে হয়েছে এবং সেই প্রক্রিয়া বেশ জটিল।

সাদা রঙের প্যান্ট শার্টের ওপর প্রতাপ একটা পাতলা নীল সোয়েটার পরে আছেন, পায়ে শু-মোজা। অন্যদিন প্রতাপ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি ফিরে এই সব বদলে, স্নান সেরে, লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পরার জন্য ব্যস্ত হয়ে থাকেন। তাঁর মাথাটি কদম ফুলের মতন, মাতৃশ্রাদ্ধের পর এখনো ভালো করে চুল গজায়নি। বয়েস হয়ে গেলে চুল গজাতে দেরি লাগে।

দেওঘরে মায়ের মৃত্যুর কয়েকদিন পরেই প্রতাপ আর একটি নিদারুণ মৃত্যু সংবাদ পেয়েছিলেন। মৃত্যু নয়, আত্মহত্যা, দিল্লিতে সুলেখা শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে, নিজের রূপ নিজে নষ্ট করে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে।

সে সংবাদে প্রতাপ দারুণ আঘাত পেলেও তার প্রতিক্রিয়া যেন খুব গভীরে প্রবেশ করেনি। মায়ের মৃত্যুতে প্রতাপ তখন খুবই আচ্ছন্ন হয়ে ছিলেন। তখন দিল্লিতে গিয়ে ত্রিদিবের পাশে দাঁড়ানোও সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে। কী কারণে, কিসের দুঃখে, কোন যন্ত্রণায় সুলেখা এমন একটা সাঙ্ঘাতিক সিদ্ধান্ত নিল তাও তিনি জানেন না।

মাসখানেক আগে ত্রিদিব এসেছিলেন কলকাতায়, তাঁর সঙ্গেও কথা হলো না ভালো করে। প্রতাপ আশঙ্কা করেছিলেন ত্রিদিবের মতন সূক্ষ্ম অনুভূতিসম্পন্ন মানুষ এত বড় আঘাত সামলাতে পারবেন না, ভেঙে পড়বেন একেবারে। কিন্তু ত্রিদিবকে দেখে প্রতাপ একেবারে অবাক। এ যেন একজন, সম্পূর্ণ পরিবর্তিত মানুষ, সেই লাজুক, ধীর স্থির ভাবটি একেবারেই নেই। কাটা কাটা পরিষ্কার কথা, শোকের সামান্য চিহ্নও নেই মুখের ভাবে, ভুরু দুটি কোঁচকানো, যেন সুলেখা এ রকম একটা নাটকীয় কাজ করে ফেলায় তিনি অত্যন্ত বিরক্ত।

সুলেখার সেই চরম দিনের ঘটনা নিয়ে কোনো আলোচনাই করলেন না ত্রিদিব, তিনি কলকাতায় এসেছিলেন একটা অদ্ভুত প্রস্তাব নিয়ে। তালতলার বাড়িটি তিনি বিক্রি করে দিতে চান, প্রতাপ কিনে নিতে রাজি থাকলে তিনি যে-কোনো দামে দিয়ে দিতে রাজি, এমনকি প্রতাপ পুরো টাকা এখন দিতে না পারলেও চলবে। ত্রিদিব লন্ডনে একটা চাকরি পেয়েছেন, আগে থেকেই অফার ছিল, এখন সেখানে যাওয়ার সব বন্দোবস্ত পাকা করতেই তিনি যেন খুব ব্যস্ত।

স্বপ্নেও বিলাসিতা করে প্রতাপ বাড়ি কেনার কথা ভাবতে পারেন না। সরকার তাঁকে এমন মাইনে দেন না যাতে সংসার খরচ চালাবার পরও কিছু সাশ্রয় করা যাবে। দুই ছেলে-মেয়ের পড়ার খরচ, তুতুলের ডাক্তারি পড়ার খরচ, এই সবে প্রতাপ একেবারে ঝাঁঝরা হয়ে গেছেন। আগেকার চক্ষুলজ্জা আর নেই, সুপ্রীতি গয়না বিক্রির প্রস্তাব দিলে তিনি শেষে আর অরাজি হন নি। তবে, সুপ্রীতির গয়নাও আর বিশেষ অবশিষ্ট নেই। বিমানবিহারীর কাছেও প্রতাপের অনেক ঋণ জমে গেছে।

খুব তাড়াহুড়ো করে, প্রায় জলের দরেই বাড়িটি এক মাড়োয়ারির কাছে বিক্রি করে দিলেন ত্রিদিব। তারপর সেই টাকার কিছু অংশ তিনি দিতে চাইলেন তাঁর দুই বোনকে। সে কথা শোনা মাত্র প্রতাপ বললেন, এ প্রশ্নই ওঠে না। বাড়ির মালিক একা আপনি, আপনার বাবা আপনার নামে উইল করে দিয়ে গিয়েছিলেন, আপনার বোনদের কোনো রকম লিগ্যাল রাইট নেই…

প্রতাপের কথা মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে ত্রিদিব বলেছিলেন, আপনি আমাকে ল দেখাচ্ছেন কেন, টাকাটা তো আপনাকে দিচ্ছি না, দিচ্ছি আমার বোনেদের।

মমতাও সে টাকা প্রত্যাখ্যান করলেন। মমতা খুব ভালো ভাবেই জানেন, এখন তাঁর হাতে পাঁচ-দশ হাজার টাকা এলেও তা সংসারের কত প্রয়োজনে লাগবে, কিন্তু পাছে অভাবের তাড়নায় লোভর একটা নগ্ন রূপ বেরিয়ে পড়ে এবং পরে তার জন্য আত্মগ্লানিতে ভুগতে হয়, সেই জন্যই তিনি তাড়াতাড়ি না বলে দিলেন। তাঁর বোন বিনতারও সেই এক কথা। বিনতার স্বামী সুকেশের বদলির চাকরি, এখন ওরা রয়েছে কোচিন শহরে, তাদের অবস্থাও ভালো। ত্রিদিবের চিঠি পেয়ে বিনতা জানালো যে দিদি যা ঠিক করবে সে তাই-ই মেনে নেবে, তার স্বামীও প্রতাপদার সঙ্গে একমত যে ঐ বাড়ির ওপর তাদের কোনো দাবি নেই।

ত্রিদিব যেন বেশ ক্ষুণ্ণ হলেন বোনেদের এই ব্যবহারে। মমতাদের বাড়িতে তীর একদিন খেতে আসার কথা, সেদিন এলেন না। দু’দিন পরে এলেন, গম্ভীর হয়ে রইলেন আগাগোড়। সুপ্রীতি সুলেখার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে গেলেন, কী জানি কী হয়েছিল বলে? এক সময় তিনি শুধু প্রতাপকে বলেছিলেন, আমার বন্ধু শাজাহানকে পুলিসে আটকে রেখেছে জানেন তো? পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ তো মিটে গেছে, এখনও ওদের ছাড়ে না কেন? আপনি একটু দেখুন না, চেষ্টা-চরিত্র করে শাজাহানকে ছাড়াতে পারেন কি না!

প্রতাপ শুকনো ভাবে হেসে বলেছিলেন, আমি সামান্য সাব জজ। আমার কী ক্ষমতা আছে? ওসব তো স্টেট গভর্নমেন্ট, সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের ব্যাপার!

ত্রিদিব দেওয়ালের উঁচুর দিকে চোখ তুলে বলেছিলেন, যাওয়ার আগে শাজাহানের সঙ্গে দেখা হলো না!

ত্রিদিব সব সম্পর্ক চুকিয়ে চলেই গেলেন শেষ পর্যন্ত। বিলেতের গ্লাসগো শহর থেকে সংক্ষিপ্ত দু’লাইনের পৌঁছ-সংবাদ পাঠিয়েছেন।

প্রবাসী ত্রিদিবের সেই চিঠিখানা হাতে নেবার পরেই প্রতাপের চোখে প্রথম ভেসে উঠলো ছবিটা। প্রজ্বলন্ত সুলেখা, ঘরের মধ্যে নয়, বাড়ির ছাদে, সেই বাড়ি যেন কুতুব মিনার সংলগ্ন, চারপাশে ইতিহাসের সাক্ষ্য, অন্ধকার আকাশের নিচে সুলেখা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে, তার সঙ্গে লকলকে আগুনের শিখা। রূপের আগুন নয়, সত্যিকারের আগুন, যা মায়া-দয়াহীন, যা তীব্র যন্ত্রণা দিয়ে শরীরের মাংস-মজ্জা পোড়ায়! কেন সুলেখা চলে গেল অমনভাবে, কার ওপর অভিমানে? এইটুকু জেনেছেন প্রতাপ যে সুলেখার অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য ত্রিদিকে পুলিসের হাঙ্গামায় পড়তে হয়নি, সুলেখা নিজের হাতে আত্মহত্যার স্বীকারোক্তি লিখে গিয়েছিল, সে কারুকে দায়ী করেনি।

ঐ ছবিটা কল্পনা করেই প্রতাপের বুকটা মুচড়ে মুচড়ে উঠেছিল। অসহ্য এক ব্যথা, ঠিক যেন শরীরিক, বুকের ব্যথা। যেন সহ্য করা যাবে না। সুলেখা সত্যিই চলে গেল, আর তার সঙ্গে কোনো দিন দেখা হবে না? সুলেখার সঙ্গে তাঁর প্রেম-ভালোবাসা ছিল না। আবার শুধু আত্মীয়তাও নয়, একটা অন্য সম্পর্ক, চোখে চোখে কিছু একটা কথা, কোনোদিন সুলেখার শরীর ছুঁতে হয়নি প্রতাপকে, তবু সূলেখা ঠিকই জানতো! তালতলার বাড়িতে এখন অন্য লোক থাকে। ত্রিদিব তাড়াহুড়ো করে চলে গেল ইংল্যান্ডে, সুলেখার সব চিহ্নও কি মুছে গেল তা হলে?

কয়েকটা দিন সুলেখার স্মৃতিতে বিভোর হয়ে রইলেন প্রতাপ। সুলেখার দু’একটা টুকরো কথা, নিষ্কলুষ হাসি, তার যত্নময় হাত, এই সব কিছুই যেন এখনো জীবন্তু। সুলেখা দিল্লিতে ছিল, অনেকদিন তার সঙ্গে দেখা হয়নি, তবু প্রতাপ কোনো অভাব বোধ করেননি, এ পৃথিবীর কোনো একটা প্রান্তে সুলেখার থাকাটাই যথেষ্ট ছিল। এই পৃথিবী তাকে সহ্য করতে পারলো না? গড়-মানুষের চেয়ে যারা অনেক উঁচুতে, যাদের রূপ-গুণ-ব্যবহার অন্য অনেকের চেয়ে অনেক বেশি মনোমুগ্ধকর, তাদেরই কেন অকালে চলে যেতে হয়। যেমন তার ছেলে কি? রাস্তায় ঘাটে অনেক ছেলেকেই তো দেখেন প্রতাপ, কিন্তু পিলর মতন অমন নম্র, ভদ্র, প্রতিভার দীপ্তিতে উজ্জ্বল একজনকেও তো মনে হয় না। নিজের ছেলে বলে কি তিনি বাড়িয়ে ভাবছেন? পিকলুকে সবাই ভালোবাসতো, এখনো তো কেউ কেউ পিকলুর নাম উঠলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তাঁর ছোট ছেলে বাল্লুও তো পিকলুর তুলনায় কিছুই না। সামান্য জলে ডুবে ওরকম একটা প্রাণ নষ্ট হয়ে গেল, প্রকৃতির কি কোনো যুক্তিবোধ নেই?

সুলেখার মৃত্যুর তিন মাস বাদে সুলেখার শোকে এমন আহত হলেন প্রতাপ, তা যেন মাতৃশোকের চেয়েও বেশি। মায়ের জন্য নয়, মায়ের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মালখানগরের বাড়ি, প্রতাপের বাল্য-কৈশোর-যৌবনের বহু স্মৃতির সঙ্গে সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন হয়ে গেল। সেইজন্যই প্রতাপ যেন বেশি মোহ্যমান হয়ে পড়েছিলেন। মায়ের যথেষ্ট বয়েস হয়েছিল, মা চলে যাবেন, এজন্য কি প্রতাপ মনে মনে কিছুটা তৈরি হয়ে ছিলেন না? বিশেষত আগেরবার ওস্তাদজীর পাগলামি আর মায়ের স্তব্ধ, জড় ভাব দেখেই কি তাঁর মনে হয়নি যে আর বেশিদিন দেরি নেই? আর দু’চার বছর বাঁচলেও মা কি আর আনন্দ পেতেন, প্রতাপই বা কী দিতে পারতেন মাকে? মৃত্যুর আগে মা যে একবার মালখানগরে নিয়ে যাবার জন্য ছেলের কাছে কাকুতি মিনতি করেছিলেন, তখন প্রতাপ নিজের অসহায় অবস্থার জন্যই কষ্ট পেয়েছিলেন বেশি।

বাড়িতে, আদালতে, বাথরুমে, ঘুমের আগে, ঘুমের মধ্যেও কয়েকদিন প্রতাপ সুলেখার স্মৃতিতে কাতর হয়ে কাটালেন। সত্যিকারের দুঃখ তিনি নিবেদন করলেন সুলেখাকে। তারপর সুলেখার বদলে অন্য একটা মুখের ছবি এসে পড়লো।

এ যে কী এক বিচিত্র রসায়ন! কোন স্মৃতি যে অন্য কাকে কোথা থেকে টেনে আনে, তা কিছুতেই বোঝা যায় না। ডার্ক রুমে একটি নেগেটিভ প্রসেস করতে গিয়ে যেন সেখানে ফুটে উঠলো অন্য একটি ছবি।

সুলেখার কথা ভাবতে ভাবতে প্রতাপের হঠাৎ একদিন মনে পড়লো বুলার কথা।

বুলাও কি সুলেখার মতন চলে গেছে পৃথিবী ছেড়ে? কিংবা সে কোথায় কী ভাবে আছে? এই চিন্তা প্রতাপকে উদ্বেলিত করে তুললো। এবারে দেওঘর গিয়ে প্রতাপ বুলার খোঁজ করেননি, সে প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু বুলা দেওঘরে থাকলে কি মায়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে একবারও আসতো না? না, তা হতেই পারে না। তাছাড়া অত ব্যস্ততার মধ্যেও বুলার নাম একবার প্রতাপের কানে এসেছিল। বুলাকে কে যেন ডাকতে গিয়েও ফিরে এসেছে।

সুলেখার মতুন বুলার সঙ্গেও যদি তার দেখা না হয়? কী ভাবে যেন বুলা সম্পর্কে প্রতাপের মনের মধ্যে একটা দায়িত্ববোধ রয়ে গেছে। যদিও এ কথাটা মমতাকে বলা যায় না। কিসের দায়িত্ব, বাস্তবিক ব্যাপারে কিছুই না তো!

বুলার শ্বশুরবাড়ি টালিগঞ্জে। বুলার দেওর সত্যেন বেশ একজন কেউকেটা হয়েছে, কাগজে টাগজে মাঝে মাঝে তার নাম দেখা যায়। ক্যালকাটা ক্লাব, রোটারি ক্লাব, মুখ্যমন্ত্রীর বন্যাত্রাণ তহবিলে দান এই সব ব্যাপারে সে যুক্ত। বুলার শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা প্রতাপ জানতেন না। কিন্তু টেলিফোন গাইড খুললেই তো যে কেউ সত্যেনের ঠিকানা পেতে পারে!

প্রতাপ কি বুলার সঙ্গে দেখা করার জন্য এতদূর এসেছেন? যে কেউ এই প্রশ্ন করুক, প্রতাপ দৃঢ় স্বরে উত্তর দেবেন, কক্ষণো না! নিজে থেকে, বিনা আমন্ত্রণে সত্যেনের মতন ঐ স্কাউনড্রেলটার বাড়িতে যাবেন তিনি? প্রতাপ মজুমদারের ব্যক্তিত্বের এখনও অত অধঃপতন হয়নি!

মনকে চোখ ঠারার জন্য প্রতাপ আর একটা যুক্তিও তৈরি রেখেছেন। দিন তিনেক আগে প্রতাপ খবর পেয়েছেন যে তাঁর মেজোমামা খুব অসুস্থ। ইনি প্রতাপের আপন মামা নন, তাঁর সৎ মায়ের ভাই, অর্থাৎ কানুর মামা। এই ভন্তু মামা অর্থাৎ জলধি বোসের সঙ্গে প্রতাপের কোনোকালেই ঘনিষ্ঠতা ছিল না, ইনি কানুকে নিজের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন, এর ব্যাঁকা ব্যাঁকা কথা বলার ধরনটা প্রতাপ এককালে খুবই অপছন্দ করতেন। কিন্তু বয়েস হলে মানুষ হয়তো কিছুটা বদলায়। প্রতাপের মায়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে ইনি দেখা করতে এসেছিলেন এবং সুহাসিনীর নাম করে অশু বর্ষণ করেছেন। প্রতাপের মাকে তিনি নাকি নিজের বোনের মতনই। দেখতেন, যদিও দেশ বিভাগের পর এতগুলি বছরে তিনি প্রতাপদের সঙ্গে কোনো সম্পর্কই রাখেননি, ছেলে-মেয়ের বিয়েতে নেমন্তন্ন করা ছাড়া। কুম্ভীরাশু হোক আর যাই-ই হোক, তবু বয়স্ক মানুষটি এসেছিলেন তো সুহাসিনীর শ্রাদ্ধে। তাঁর দুই ছেলে রাস্তা তৈরির কন্ট্রাকটরি করে এর মধ্যে বেশ ধনবান হয়েছে, জলধি বোস গাড়ি কিনেছেন, প্রতাপের সঙ্গে তিনি পুরোপুরি সম্পর্ক ছেদ করতেও তো পারতেন। এখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ভদ্রতার বিনিময়ে প্রতাপের একবার দেখতে যাওয়া উচিত। অবশ্য, জলধি বোসের বাড়ি টালিগঞ্জের দিকে না হলে কি প্রতাপের মনে এই কর্তব্যবোধ জাগতো?

কিন্তু টালিগঞ্জ পর্যন্ত চলে এসেও প্রতাপের এখন এই সন্ধেবেলা একজন ব্যাধিগ্রস্ত বৃদ্ধের বিছানার পাশে গিয়ে বসতে একটুও ইচ্ছে করছে না। তিনি বেকার ছেলে ছোঁকরাদের মতন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে একটার পর একটা সিগারেট টেনে যাচ্ছেন। ঘনিয়ে এসেছে সন্ধে, শীতের প্রাক্কালে সমস্ত বাড়ির উনুনের ধোঁয়া ওপরে উড়ে যেতে চায় না, ঝুলে থাকে জমাট বেঁধে, রাস্তার আলোগুলো ফ্যাকাসে মনে হয়। এখানে রাস্তা বেশ সরু। তারই মধ্য দিয়ে ট্রাম, বাস, ঘোড়ার গাড়ি, রিকশা জড়ামড়ি করে শ্লথগতিতে চলেছে। বেশ কয়েকদিন বৃষ্টি হয়নি তবু এখানে সেখানে কাদা, সব মিলিয়ে বিশৃঙ্খল, নোংরা নোংরা ভাব। এই জায়গাটায় বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কোনো দৃশ্য উপভোগ করার উপযোগী নয়। প্রতাপ অবশ্য পথের কোনো চলন্ত দৃশ্যই দেখছেন না।

বুলা কেমন আছে, এইটুকুই শুধু জানতে চান প্রতাপ, আর কিছু না। কিন্তু হুট করে বুলার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়াও তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। সত্যেনকে তিনি কিছুতেই পছন্দ করতে পারেননি, সত্যেনও তা জানে। ও বাড়ির আর কেউ প্রতাপকে চিনবে না। প্রতাপ কী করে মুখ ফুটে বলবেন, আমি বুলার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি!

ভন্তু মামা অসুস্থ, কিন্তু তিনি কি মৃত্যুশয্যায়? তা না হলে আর তাঁকে দেখতে যাওয়া নিয়ে আদিখ্যেতা করার কী আছে? উনি মারা টারা গেলে ওঁর শ্রাদ্ধ বাসরে উপস্থিত হলেই প্রতাপের কর্তব্য সারা হবে। এখন ভন্তু মামাকে খুশী করার কোনো দায় নেই প্রতাপের।

প্রতাপ ফিরে যাবার চিন্তা করেও ফিরতে পারলেন না, ধরা পড়ে গেলেন। একটা সাইকেল রিকশা থেমে গেল তাঁর অদূরে, একটি তরুণ দম্পতি তার থেকে নেমে এগিয়ে এলো তাঁর দিকে। যুবকটি ডেকে উঠলো, প্রতাপদা! তারপর দু’জনেই নিচু হয়ে প্রণাম করলো প্রতাপের পায়ে হাত দিয়ে। প্রতাপ তাদের একেবারেই চিনতে পারলেন না।

যুবকটি বললো, প্রতাপদা, তুমি এখানে? এই আমার বউ জয়ন্তী, তুমি তো ওকে দেখোনি, আমাদের বিয়েতে তুমি আসতে পারোনি, কিন্তু বড়দি এসেছিল তুতুলকে নিয়ে। তারপর তো আর কোনো যোগাযোগই নেই।

প্রতাপ অনেকটা আন্দাজে বুঝলেন যে এই যুবকটি তার এক বৈমাত্রেয় মামাতো ভাই। খুব ছোট বয়েসে দেখেছেন নিশ্চয়ই। পনেরো কুড়ি বৎসরের ব্যবধানে সেই সব বাল্যকালের মুখ আর চেনা যায় না। প্রতাপ আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ব্যাপারে উদাসীন, সুতরাং তাদের চেহারা ও নামও নিজের স্মৃতিতে জায়গা জুড়ে রাখেননি।

প্রতাপ এখানে কেন দাঁড়িয়ে আছেন, তার উত্তর দেওয়াও সহজ নয়। এই যুবকটিকে মামাতো ভাই হিসেবে নিশ্চিত জানলে অনায়াসে বলা যেত যে, তোমাদের বাড়িতে যাবার জন্যই তো এখানে এসেছি। কিন্তু সে রকম উত্তর দিলে মিথ্যে বলা হতো। প্রতাপের মনের মধ্যে সত্য-মিথ্যের বিভাজন রেখা অতি স্পষ্ট। ভন্তু মামার কথা আংশিক মনে রেখে এ পর্যন্ত এলেও একটু আগেই প্রতাপ তাঁর বাড়িতে আজ যাবেন না ঠিক করেছিলেন।

আর দু’একটি কথার পর প্রতাপ বুঝতে পারলেন, এই ছেলেটি ভন্তু মামার বড় ভাই, অর্থাৎ তাঁর নন্তুমামার সন্তান। এর নাম অনিরুদ্ধ। সে তাদের বাড়িতে প্রতাপকে নিয়ে যাবার জন্য পীড়াপীড়ি করতে লাগলো। প্রতাপ তবুও বললেন না, তিনি ওদের বাড়িতে যাওয়ার কথা ভেবেই এতদূর এসেছেন!

অনিরুদ্ধের স্ত্রী জয়ন্তী বললো, দাদা, আমার বিয়ের আগে আমাকে আপনার ছেলে বাড়িতে এসে পড়াতো। অসীম মজুমদার, অঙ্কের খুব ভালো ছাত্র, আমার দাদার সঙ্গে এক ক্লাসে পড়তেন, তখন তো জানতাম না…

প্রতাপ চমকে উঠলেন। অসীম মজুমদার–তার মানে পিকলু। হ্যাঁ, হাত খরচ চালাবার জন্য পিকলু দু’এক জায়গা টিউশনি করতো বটে। এই মেয়েটিকে পড়াতো পিকলু। এই মেয়েটির দিকে তাকিয়ে তিনি যেন পিকলুর খানিকটা যোগসূত্র পেয়ে গেলেন। এই মেয়েটির স্মৃতিতে পিকলু রয়ে গেছে।

অনিরুদ্ধর কথা শুনে প্রতাপ দোনামনা করছিলেন, জয়ন্তীর কথা শুনে তিনি রাজি হয়ে গেলেন, বললেন, চলো, তোমাদের বাড়ি তাহলে ঘুরেই আসা যাক। তোমাদের এই নতুন বাড়ি তো আমি দেখিনি!

আর একটা সাইকেল রিকশা ডাকা হলো। ট্রাম-ডিপো থেকে বেশ দূরে অনিরুদ্ধদের বাড়ি, একেবারে রিফিউজি কলোনির মধ্যে। আশেপাশে অনেকগুলি টিনের চালার ঘর, তার মধ্যে এই একটা তিনতলা পাকা বাড়ি। প্রতাপের এই মামারা আগে থাকতেন ভাড়া বাড়িতে, বছর তিনচারেক হলো এই নতুন বাড়ি হয়েছে। এই জবরদখল রিফিউজি কলোনিতে নন্তু মামা, ভন্তু মামারা কী করে যেন নিজেদের জন্য খানিকটা জমি দখল করে রেখেছিলেন।

এ বাড়িতে এখনও একান্নবর্তী পরিবার। নন্তু মামা মারা গেছেন, তাঁর স্ত্রী ছেলেমেয়েরা রয়েছেন এ বাড়িতেই, ভন্তু মামার দু’ছেলে টাকা রোজগার করছে চার হাতে, গিট্ট নামে আরও একজন মামা আছেন এ বাড়িতে, যিনি প্রতাপের প্রায় সমবয়েসী, তিনি বিয়ে করেননি। প্রতাপের মনে পড়লো, এই গিট্টুমামার বেশ মাথার দোষ আছে, প্রায়ই এর কোমর থেকে ধুতি খুলে যেত, একটা অস্বাভাবিক বড় পুরুষাঙ্গ দেখার স্মৃতি প্রতাপের এতদিন পরেও মনে পড়ে। গেল। গিট্ট মামা এখন প্যান্ট পরেন, অগেকার দিনের সাহেব শ্রমিকদের মতন শোলডার স্ট্র্যাপ দিয়ে সেই প্যান্ট টেনে রাখা হয়েছে।

সবাই মিলে বেশ খাতির যত্ন করতে লাগলো প্রতাপকে। মধ্য বয়স্ক পুরুষ হলেও প্রতাপের এটা তো মামার বাড়ি। এ বাড়িতে বাঙাল রীতিনীতি সবই পুরোপুরি চলছে। মহিলারা নির্ভেজাল বাঙাল কথা বলেন, ঘর-দোর অগোছালো, বসবার ঘরের মেঝেতে মুড়ি ছড়িয়ে আছে, কথাবার্তার অধিকাংশই অমুক কেমন আছে আর তমুক এখন কোথায়!

ভন্তুমামা তেমন কিছুই অসুস্থ নন, মাত্র দু’সপ্তাহ আগে একটা হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল বটে, কিন্তু এখন দিব্যি হাঁটাচলা করছেন এবং মাঝে মাঝে গড়গড়ায় তামাক টানছেন। গ্রামের বয়স্ক পুরুষদেরও প্রতাপ কখনো অসুখ নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে দেখেননি। এই অবস্থায় ভন্তু মামাকে একজন অসুস্থ মানুষ হিসেবে দেখতে আসা খুব লজ্জার ব্যাপার হতো।

ইচ্ছের বিরুদ্ধেও প্রতাপকে গুটি তিনেক সন্দেশ খেতে হলো মামীদের উপরোধে। এর পর চায়ের প্রস্তাব শুনে তিনি আরও সঙ্কিত বোধ করলেন। যে বাড়িতে অনেক লোক, সে বাড়িতে সাধারণত চা বেশ বিস্বাদ হয়। পেয়ালা-পিরিচ ঠিক মতন ধোওয়া থাকে না। কিন্তু জয়ন্তী নামের মেয়েটি একটি পাতলা, পরিচ্ছন্ন কাপে বেশ সুন্দর সৌরভময় চা এনে তাঁকে চমকে দিল। জয়ন্তীকে কাছে বসিয়ে তিনি তার বাপের বাড়ি গল্প শুনতে লাগলেন। জয়ন্তীর বাপের বাড়ি স্কটিশ চার্চ কলেজের কাছেই, গোয়াবাগানে, পিকলু তাকে পড়াতে যেত সপ্তাহে তিনদিন সন্ধেবেলা…।

এক সময় ভমামা জিজ্ঞেস করলেন, খোকন, তুমি বাড়ি টাড়ি করেছে নাকি কোথাও? প্রতাপ মাথা নেড়ে বললো, আজ্ঞে না।

ভন্তুমামা গড়গড়ার নল ঠোঁটে দিয়ে বললেন, জমি কিনে রেখেছিস? জমির যা দাম বাড়ছে দিন দিন।

প্রতাপ বললো, না, জমিও কিনিনি কোথাও। বাড়ি করার কথা ভাবিনি কখনো।

বাড়ি না হয় পরে হবে, কিন্তু জমি কিছুটা রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। তোরা রিফিউজি কার্ড করেছিস না? এই রকম কোনো রিফিউজি এরিয়ায় যদি অন্তত পাঁচ-দশ কাঠা জমিও রেখে দিতিস, দ্যাখ না, আমাদের এ বাড়ির জন্য এক আধলাও জমির দাম দিতে হয় নাই!…

হঠাৎ দপ্ করে প্রতাপের মাথায় জ্বলে উঠলো রাগ। ভন্ডুমামার এই ধরনের কথার জন্যই প্রতাপ তাঁকে কোনোদিন পছন্দ করতে পারেননি। মালখানগরের মজুমদার বংশের ছেলে প্রতাপ মজুমদার সামান্য ভিখিরির মতন অন্যের জমি দখল করবেন? রিফিউজি কার্ড, কিসের রিফিউজি কার্ড? প্রতাপরা তো রিফিউজি নন, পূর্ববঙ্গে বাড়ি ছিল ঠিকই, সে বাড়ি ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে তাও ঠিক, কিন্তু পার্টিশানের আগে থেকেই তিনি কলকাতায় বাড়ি ভাড়া করে থেকেছেন, এখনও সেইভাবেই থাকেন, সরকারের কাছ থেকে তিনি এক পয়সা সাহায্য প্রত্যাশী নন।

জুতোর শব্দ করে প্রতাপ উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আমি এবার যাবো! ভ্যুমামা বললেন, হ্যাঁ তা তো যাবিই, অনেক দূরের পথ, এসেছিস বড় খুশী হয়েছি। আবার আসিস। আমি যা বললাম, মনে রাখিস। নিজের নামে একটা জমি, বুঝলা না, ইন্ডিয়ায় এক টুকরো জমি করে না রাখলে সিটিজেনশীপ রাইট ঠিক মতন জন্মায় না। ওরে মালু, ভূতো, পুনি তোরা প্রতাপদাদাকে গোটা বাড়িটা একবার ঘুরিয়ে দেখিয়ে দে। একটু দেখে যা থোকন, কেমন বাড়ি করিছি। দক্ষিণখোলা, প্রত্যেক ফ্লোরে মোজেইক…

রিফিউজি কার্ডের সুযোগ নিয়ে জবরদখল জমিতে এ রকম তিনতলা বাড়ি হাঁকানো, প্রতাপের ঘৃণা হতে লাগলো। কিন্তু উপায় নেই, ভদ্রতার চাপে মুখ বুজে থাকতেই হবে। প্রতাপকে একতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে দেখতে হলো, অনিরুদ্ধ আর জয়ন্তী এমন কি ছাদেও নিয়ে এলো তাঁকে। প্রতাপের ছাদ দেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। তবু অনিরুদ্ধ বারবার বলতে লাগলো, আসুন না, ছাদটা দেখলে ভালো লাগবে।

ছাদের সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে আছে গিট্ট মামা। মুখখানা নড়ছে, কী যেন চিবোচ্ছেন। মাথার চুল উস্কোখুস্কো, চোখে কৌতূহলের হাসি, প্যান্টের দু’পকেটে হাত ঢোকানো। প্রতাপকে দেখে তিনি বললেন, খোকন, আজ রাত্তিরে এখানেই থেকে যা না! খাওয়া-দাওয়া করবি, অনেকদিন তো আমাদের সাথে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করিস না, তারপর আমার সাথে শুয়ে থাকবি…

বাল্য স্মৃতি আবার ঝিলিক দিয়ে ওঠায় প্রতাপ প্রায় আঁতকে উঠে বললেন, না না, আমার এখানে থাকার উপায় নেই, আমাকে এক্ষুনি চলে যেতে হবে, দেরি হয়ে গেছে।

গিট্টুমামা থপ থপ্ করে ওদের পেছন পেছন ছাদে উঠে এলেন। বেশ প্রশস্ত ছাদ, এখানে আরও একটি ঘর তোলার কাজ শুরু হয়েছে, সরঞ্জামগুলি এক পাশে স্থূপ করে রাখা।

অনিরুদ্ধ আর জয়ন্তী প্রতাপকে নিয়ে এলো কার্নিসের ধারে। জয়ন্তী একদিকে হাত তুলে বললো, এই দিকটা খুব সুন্দর, একেবারে ফাঁকা, এদিকে একটা খাল আছে।

অনিরুদ্ধ বললো, এই দিকটা পুরোপুরিই ছিল একজন মুসলমানের সম্পত্তি, বুঝলে প্রতাপদা। ভদ্রলোক ধনী ছিলেন খুব, এ দিকটায় নাকি বাগান ছিল, প্রায় দুশোটা ফ্যামিলি এখানে সেক্স করেছে। ঐ যে বাড়িটা দেখছেন, একটু ডান দিকে তাকান, ঐ যে রেডিওর এরিয়ালওয়ালা বাড়ি, ঐটা ছিল সেই মুসলমানের বসত বাড়ি।

প্রতাপ জয়ন্তীর কথা মতন ফাঁকা দিকটায় দিকেই তাকিয়ে ছিলেন, এক ঝলকের জন্য বাড়িটার দিকে মুখ ফেরালেন।

অনিরুদ্ধ বললো, নারায়ণগঞ্জের এক ভদ্রলোক ঐ বাড়িটা এক্সচেঞ্জ করে পেয়েছেন। ভদ্রলোকের নাম সত্যেন রায়, বেশ নাম করা লোক।

প্রতাপের শরীরে কথাটায় বিদ্যুৎ শিহরন হলো। ঐ সেই বাড়ি! ঠিকানা দেখে বোঝা যায় কি যে এই দুটি বাড়ি এত কাছাকাছি হবে। সত্যেনদের বাড়িটার পেছন দিক দেখা যাচ্ছে, বেশি দূর নয়, দোতলার কয়েকটি ঘরে আলো জ্বলছে, কয়েকটি ঘর অন্ধকার। ওর কোনো একটি ঘরে বুলা থাকে। এখনো আছে বুলা? তাকে দেখা যাবে না।

গিট্টুমামা কী যেন বলছেন বিড়বিড় করে, প্রতাপের সেদিকে কান নেই। তিনি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন দূরের বাড়িটার দিকে। মাঝখানে কিছুক্ষণ বুলার কথা ভুলে গিয়েছিলেন, এখন বুলার কথা ভাবতেই সুলেখার কথা মনে পড়লো। তারপর দুটি মুখ মিলে মিশে এক হয়ে গেল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *