একদিন আমির মুইন ইবন জাইদ শিকারে বেরিয়েছিলো। সে দেখতে পেলো। একজন আরব গাধার পিঠে চেপে মরুপ্রান্তর পার হয়ে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। কাছে আসতেই সে সালাম জানিয়ে বললো, কোথায় চলেছেন আরব ভায়া? আপনার পিছনে ঐ বস্তুটায় জড়ানো বস্তুটাই বা কী?
আমি আমির মুইনের কাছে যাচ্ছি। আমার জমিতে শসা ধরেছে। তারই কিছুটা তাকে দিতে নিয়ে যাচ্ছি। আমার ক্ষেতের প্রথম ফসল তাকে নিবেদন করে তবে আমি খাবো। এই গোটা সালতানিয়তে তিনিই সবচেয়ে সদাশয় ব্যক্তি। আমার বিশ্বাস তিনি আমাকে উচিৎ ইনাম দেবেন।
বলা বাহুল্য ইতিপূর্বে সে কখনও আমির সাহেবকে স্বচক্ষে দেখেনি।
আমির জিজ্ঞেস করে, কত দাম আশা করছেন?
—তা কমসে কম এক হাজার সোনার দিনার—
-কিন্তু আমির যদি বলেন, দামটা বড্ডো বেশি হচ্ছে-?
—তা হলে আমি বলবো, অন্ততঃ পাঁচশো দিন।
—তবুও তিনি যদি মনে করেন, দামটা চড়া-ই চাইছেন?
–বেশ তবে তিনশোই দিন।
–তাও যদি তার কাছে বেশি মনে হয়?
–যদি এই একশো দিনারও তিনি ন্যায্য মনে না করেন?
-এর পরেও যদি তিনি বলেন, না, এ দামও বেশি হচ্ছে?
—তিরিশ
—তাও যদি তাঁর মনমতো না হয়?
–তাও যদি মনমতো না হয়? তা হলে আমার গাধাটাকে তীর হারেমের মধ্যে ঢুকিয়ে দেবো।
আরব শেখের কথা শুনে মুইন হো হো করে হেসে ওঠে। দিল খোলা হাসি। তারপর ঘোড়ার পিঠে চাবুক চালিয়ে তীরবেগে ছুটে আসে নিজের প্রাসাদে। দেওয়ানকে ডেকে বলে, একজন আরব দেশের শেখ একটা গাধায় চেপে আমার প্রাসাদে আসছে। তার সঙ্গে আছে কিছু শস্যা। সে এলে তাকে আদর আপ্যায়ন করে আমার দরবারে নিয়ে আসবে।
কিছুক্ষণ পরে সেই আরব-শেখ এসে হাজির হলো। দেওয়ান তাকে খুব খাতির করে দরবার কক্ষে নিয়ে গেলো। সেখানে পরিষদ পরিবৃত হয়ে বসেছিলো আমির মুইন। দরবারে চারপাশে উন্মুক্ত আসি হাতে জবরদস্ত প্রহরীরা দণ্ডায়মান। এই সব জাঁকজমকের মধ্যে আরব শেখ সেই শিকারী বেশি আমির মুইনকে একদম চিনতে পারলো না।
প্রশ্ন হলো : ঐ বস্তাটায় কী নিয়ে এসেছ আমার জন্যে, আরব-ভাই?
লোকটি উত্তর দেয়ঃ হুজুরের ভোগের জন্য এই গরীব সামান্য কিছুকচি শশা নিয়ে এসেছে। আমার জমির প্রথম ফলন।
–থোফা-চমৎকার! তা কী ইনাম আশা করি?
–জী হুজুর, এক হাজার দিনার
—একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না?
—তা হলে পাঁচশোই দিন, হুজুর। g
–উন্থ, তাও বেশ বেশি।
—তিনশো?
–না, তাও বেশি।
–তা হলে একশো।
–না না, একশোও হয় না।
-পঞ্চাশ?
—তাও বেশি।
-অন্তত তিরিশ।
–তিরিশ দিনারও বেশি দাম।
এবার শেখ চিৎকার করে ওঠে। ওপরে খোদা আছেন। আজ আমার নসীবটাই খারাপ। মরুপ্রান্তরে একটা হোদলকুৎকুৎ লোকের সঙ্গে আমার মোলাকাৎ হয়েছিলো। তখনই জানি দিনটা ভালো যাবে না। না না, আমার শসা আমি তিরিশ দিনারের কমে কিছুতেই দিতে পারবো না আমিরাসাহেব।
আমির শুধুমাত্র মৃদু হাসলো। কোনও কথা বললো না। এবার আরব-শেখ তীক্ষু দৃষ্টিতে আমিরকে লক্ষ্য করতে থাকলো। একেই তো সে কিছুক্ষণ আগে মরুপ্রান্তরে দেখেছিলো না? এবারে সে প্রায় নিঃসন্দেহ হতে পেরেছে।
এতক্ষণ আমির নিজেকে চেপে রেখেছিলো, কিন্তু এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। হো হো করে হেসে গড়িয়ে পড়লো। একটু পরে নিজেকে সামলে নিয়ে তার এক গোমস্তাকে হুকুম করলো। এই শেখকে প্রথমে এক হাজার দিনার দাও। তারপর পাঁচশো, তারপর তিনশো, তারপর একশো, পরে পঞ্চাশ এবং সব শেষে তিরিশ দিনার গুণে গুণে দেবে। এবং বেশ ভালো করে বুঝিয়ে দেবে, আমির খুশি হয়ে এই এক হাজার নয়শো আশি সোনার দিনার তাকে বকশিস দিচ্ছেন—ঐ আধ বস্তা শসার দাম হিসাবে এটাকা তিনি দিচ্ছেন না। এরপর তাকে খাইয়ে ধুইয়ে তার গাধার পিঠে চাপিয়ে বিদায় করে দেবে। একজন আরব যে আমাকে বোকা বানিয়ে আধাবস্তা শসার দাম হিসেবে এই টাকা আদায় করে নিয়ে যাচ্ছে না সেটা তাকে বেশ ভালো করে বুঝিয়ে দিতে হবে। তাকে জানিয়ে দেবে এ হচ্ছে। আমিরের বদান্যতা।
এর পর শাহরাজাদ আর একটি নতুন কাহিনী বলতে শুরু করে :