1 of 2

২.১০ পাত্রের আত্মিক শক্তি বিকাশ করণ

দশম পাঠ
পাত্রের
আত্মিক শক্তি বিকাশ করণ

মোহিত ব্যক্তির আত্মিক শক্তি সমূহ বিকাশ করিতে সম্মোহনবিৎ হিপ্নোটিজমের প্রণালী অবলম্বন না করিয়া মেস্‌মেরিজমের সাহায্য গ্রহণ করিবে। কারণ হিপ্নোটিক্‌ নিদ্ৰাপেক্ষা মেস্‌মেরি মোহ নিদ্রা স্বভাবতঃ গাঢ়তর হয় বলিয়া উহাতে পাত্রের বাহজ্ঞান (objective consciousness) সমধিক পরিমাণে লোপ পায় এবং তাহার অন্তর চৈতন্য (subjective consciousness) সজাগ হইয়া উঠে। এই অন্তর চৈতন্য হইতেই মানব মনের নানা শক্তির বিকাশ হয়। মেস্‌মেরিজমের চতুর্থ স্তর, যাহা আত্মিকাবস্থা বলিয়া খ্যাত, হিপ্নোটিজমের প্রণালীতে কখনও তাহা উৎপাদন করা যায় না।

যে সকল ব্যক্তির আত্মিক সংবেদন অধিক, তাহাদের মধ্য হইতে একটি (পুরুষ বা স্ত্রী) পাত্র লইয়া তাহার শক্তি বিকাশের চেষ্টা পাইবে। যে সংবেদ্য নয়, তাহার উপর চেষ্টা করা বৃথা। মনোনীত পাত্রের বয়স ১৫ হইতে ২৫ বৎসরের মধ্যে হইবে এবং সে স্বাস্থ্যবান ও সৎভাব বিশিষ্ট এবং তাহার নৈতিক চরিত্র উন্নত হইবে। ১৫ বৎসরের কম এবং ২৫ বৎসরের অধিক বয়স্ক ব্যক্তিদিগের মধ্যে কখন কখন এই সকল শক্তি বিকাশ করিতে পারা গেলেও, উহাই সৰ্ব্বাপেক্ষা উপযুক্ত কাল। কেহ কেহ বলেন, পুরুষ পত্রিগণের আত্মিক শক্তি লাভ হইলে তাহারা তদ্বারা বৈজ্ঞানিক ও বিষয়-কৰ্ম্ম সম্বন্ধীয় প্রশ্ন সমাধানের বেশী উপযুক্ত হয়, আর স্ত্রী পাত্রিগণ উহা দ্বারা প্রত্যাদেশ ও অন্তদৃষ্টি সম্বন্ধেই অধিক যোগ্যতা প্রদর্শন করিয়া থাকে। এই মত অভ্রান্ত বলিয়া বোধ হয়না। কারণ পাত্রিগণের দ্বারাও নানাবিধ বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের আবিষ্কার ও বিষয়-কৰ্ম্ম সংক্রান্ত অনেক প্রশ্নের সমাধান হইয়াছে বলিয়া জানা গিয়াছে।

পাত্র সংগ্রহ হইলে পর কাৰ্যকারক তাহাকে এইরূপ বলিবে, “আমি এখন তোমার আত্মিক শক্তি—চিন্তা-পঠন, দিব্যদৃষ্টি ইত্যাদি বিকাশের জন্য তোমাকে গভীরতর মোহ নিদ্রায় নিদ্রিত করণান্তর নানা প্রকার প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিব। আমার কোন একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসার পর, তোমার মনে প্রথম যে ভাবটি উদয় হইবে, বা তুমি অন্তদৃষ্টি দ্বারা যাহা প্রথম দেখিতে বা বুঝিতে পাইবে, তুমি তাহাই করিবে বা উত্তর স্বরূপ আমাকে বলিবে। যদি তুমি তাহা না করিয়া অন্য কিছু বল বা কর, তবে তাহা ভুল হইবে এবং আমাদের চেষ্টা বিফল হইবে।” এরূপ উপদেশ দেওয়ার পর, তাহাকে মেস্‌মেরাইজ করতঃ তৃতীয় স্তরে আনয়ন করিবে। যখন সে উক্তাবস্থায় আসিয়া নানা প্রকার মায়া ও ভ্রমের অধীন হইয়াছে, তখন তাহাকে ৪র্থ স্তরে পৌছাইবার প্রয়াস পাইবে। পূর্বে বলা হইয়াছে যে, এই স্তরের বিকাশ সম্পূর্ণরূপে পাত্রের আত্মিক ক্ষমতার (psychic ability) উপর নির্ভর করে বলিয়া, কাৰ্য্যকারক স্বীয় শক্তি দ্বারা কোন পাত্রকেই এই অবস্থায় আনয়ন করিতে পারে না—কেবল গভীর নিদ্রা উৎপাদন করতঃ তাহার সাহায্য করিতে পারে মাত্র। সুতরাং সে উপযুক্ত পরিমাণে পাস, আকর্ষণী স্পর্শ, মোহিনী দৃষ্টি ও ইচ্ছা শক্তির প্রয়োগ দ্বারা পাত্রের নিদ্রা তাহার পাত্রের আত্মিক শক্তি বিকাশ করণ সাধ্য মত গভীর করিতে প্রয়াস পাইবে। কিছুক্ষণ উহাদিগকে প্রয়োগ করার পর, যখন উক্ত স্তরের লক্ষণগুলির দুই-একটি প্রকাশ পাইতে থাকিবে, তখন সে আরও বেশী উৎসাহের সহিত, সম্পূর্ণ লক্ষণগুলি প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত উহা করিবে। পরে যখন সে ঐ স্তরে পেীছিয়াছে বলিয়া বোধ হইবে, তখন তাহাকে আধ ঘণ্টা বা এক ঘণ্টা কাল ঐ ভাবে রাখিয়া আস্তে আস্তে জাগ্রত করিয়া দিবে; এই অবস্থা হইতে কখনও তাহাকে তাড়াতাড়ি জাগাইবার চেষ্টা করিবেনা। কারণ এই সময় তাহার চক্ষুর মণি উল্টা ভাবে (উটিয়া গিয়া) কপালের নীচে অবস্থিত থাকে বলিয়া, উহাদের স্বাভাবিকাবস্থায় ফিরিয়া আসিতে একটু সময়ের আবশ্যক হয়।

এই স্তরে উপনীত পাত্রকে দুই-তিন বৈঠক পৰ্যন্ত কোন পরীক্ষা করিবেনা; তৎপরিবর্তে প্রতি বৈঠকেই কিছুক্ষণ তাহার অবস্থা পৰ্যবেক্ষণ করতঃ তাহাকে জাগ্রত করিয়া দিবে। তাহাতে এই অবস্থার সহিত সে সুপরিচিত হইবে এবং কাৰ্যকারকের মনের সহিত তাহার মনের ঐক্য ও খুব বৃদ্ধি পাইবে। আর তাড়াতাড়ি ফল লাভের জন্য ব্যস্ত হইয়া প্রথম বা দ্বিতীয় বৈঠকেই কোন পরীক্ষা করার চেষ্টা পাইলে যদি সে উহাতে বিরক্ত হইয়া উঠে, তবে তাহার সহিত সাফল্য লাভের কোন সম্ভাবনা থাকিবে না। অতএব এই ক্ষেত্রে সম্মোহনবিদকে খুব ধীর ও সুবিবেচনার সহিত কাৰ্য্য করিতে হইবে।

চতুর্থ বৈঠকে পাত্ৰ এই স্তরে উপনীত হওয়ার পর, তাহার নাসা-মূলে আকর্ষণী স্পর্শ ও মেহিনী দৃষ্টি স্থাপন পূর্বক তাহাকে নিম্নোক্তরূপ দুইএকটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিবে-“তুমি কি এখন বেশ ভাল বোধ করিতেছ?” কিম্বা, “তুমি কি আমার কার্যপ্রণালী সম্বন্ধে আমাকে কোন উপদেশ দিবার অবস্থায় পৌছিয়াছ?” অথবা, “তুমি কি এখন চিন্তা-পঠন বা দিব্যদৃষ্টি সম্বন্ধীয় কোন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত আছ?” এইরূপ প্রশ্ন জিজ্ঞাসার পর তাহার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করিবে। যদি তাহার উত্তর দিতে বিলম্ব হয়, তবে উহাদের পুনঃ পুনঃ আবৃত্তি দ্বারা তাহার শান্তি ভঙ্গ করিবে না। কারণ তাহাতে সে বিরক্ত হইতে পারে। আর যদি দে আদৌ কোন উত্তর না দেয়, তবে সে তখনও গভীর মোহ নিদ্রাচ্ছন্ন হয় নাই বলিয়া বুঝিবে। সুতরাং তখন তাহাকে আরও কয়েকটি পাস দিবে এবং পুনর্বার ঐরূপ প্রশ্ন করিবে। অনেক সময় পাত্ৰ কাৰ্যকারকের এই সকল প্রশ্নের উত্তরে, যে প্রণালীতে কাৰ্য্য করিলে তাহার নিদ্রা গাঢ়তর বা তাহার শক্তি বিকশিত হইবে, তাহা বলিয়া দিয়া থাকে। কাৰ্যকারক পাত্রের নিকট হইতে ঐরূপ কোন উপদেশ পাইলে, সে অবশ্য তদনুযায়ী কাৰ্য্য করিবে; তাহাতে সে সহজে সাফল্য লাভে সমর্থ হইবে। পাত্র উক্ত প্রশ্নগুলির সম্মতি সূচক জবাব দিবার পর, প্রথম তাহার উপর চিন্তা-পঠন বিষয়ক পরীক্ষার চেষ্টা পাইবে।

 

পাত্রের চিন্তাপঠন শক্তি বিকাশ করণ

এই বিষয়ের পরীক্ষা আরম্ভ করিবার পূর্বে সম্মোহনবিৎ পাত্রকে বলিয়া রাখিবে যে, সে (নিজে)১ হইতে ৯ পর্যন্ত সংখ্যাগুলির মধ্যে কোন একটি সংখ্যা চিন্তা করিবে এবং তাহাকে (পাত্রকে) তাহা বলিয়া দিতে হইবে। তৎপরে সে নিজের ইচ্ছামত কোন একটি সংখ্যার চিত্র মনের মধ্যে আঁকিয়া এরূপ ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করিবে যে, ঐ সংখ্যার চিত্রটি পাত্রের নাসা-মূলের মধ্য দিয়া তাহার মনে প্রবেশ করুক। এই সঙ্গে তাহার কপালের উপর ও উহার উভয় পার্শ্বে হাতখানা একবার আস্তে চালনা করিবে ও মনে করিবে যে, এই পাস দ্বারা তাহার মনে প্রেরিত চিন্তাটির প্রবেশের সাহায্য হইতেছে। এই সময় কাৰ্যকারক মুহূর্তের জন্য ও অন্যমনস্ক হইবেনা; অন্যথায় পরীক্ষাটি পুনরায় আরম্ভ করিতে হইবে। মোহিত ব্যক্তি ঐ সংখ্যাটি বলিতে পারিলে, এই রকমের আরও কয়েকটি পরীক্ষা করিবে। পাত্র এই পরীক্ষাগুলিতে কৃতকার্য হওয়ার পর, কাৰ্যকারক অপেক্ষাকৃত কঠিন বিষয়,—দুই বা তিন সংখ্যার একটি রাশির চিত্র লইয়া পরীক্ষা করিবে এবং যখন সে তাহাও বলিতে পারিবে, তখন কাৰ্যকারক একটি অক্ষর, শব্দ, বাক্য বা কোন পুস্তকের অংশ বিশেষ ও পরীক্ষার জন্য মনোনীত করিতে পারে। পাত্র এই শেষোক্ত পরীক্ষা গুলিতেও কৃতকার্য হইলে, তখন সে নানা বিষয়ের জটিল চিন্তা সকল ও বলিয়া দিতে সমর্থ হইবে।

তৎপরে সম্মোহনবিৎ ঘরের কোন একটা জিনিষ মনোনয়ন পূৰ্ব্বক স্বীয় চিন্তাশক্তি (thought-power) দ্বারা পাত্রকে চালনা করতঃ তাহা বাহির করিবার চেষ্টা পাইবে। এই পরীক্ষায় সে পাত্র হইতে দূরে অবস্থান পূর্বক চিন্তা প্রেরণ করিবে, আর পাত্র মোহ নিদ্রার অবস্থাতেই ঐ শক্তি দ্বারা চালিত হইয়া মনোনীত বস্তুটি বাহির করিয়া দিবে। বলা বাহুল্য যে, পাত্র মোহ নিদ্রাচ্ছন্ন থাকিলেও সে নির্দিষ্ট স্থানে গমন পূৰ্ব্বক মনোনীত বস্তুটি অনায়াসে বাহির করিয়া দিতে পারিবে। কাৰ্যকারক চিন্তা প্রেরণের পর, যখন পাত্র তাহার চিন্তানুযায়ী পথে চলিতে আরম্ভ করিয়াছে, তখন সে (কাৰ্যকারক) মুহূর্তের জন্যও অন্যমনস্ক হইবে না; যদি তখন তাহার চিন্তাসূত্র ছিন্ন হইয়া যায়, তবে পাত্র চলিতে চলিতে হঠাৎ থামিয়া যাইবে, এবং পুনরায় উহার ঠিক ভাবে প্রেরণ না হওয়া পর্যন্ত সেইখানেই দাঁড়াইয়া থাকিবে। এই শ্রেণীর পরীক্ষার পূর্বেও কথিত নিয়মে পাত্রের কপালের উপর পাস দিতে হয়।

পাত্রের দিব্যদৃষ্টির বিকাশ করণ

সম্মোহন বিৎ পাত্রের চিন্তা-পঠন শক্তির সন্তোষজনক প্রমাণ পাইবার পর, তাহার দিব্যদৃষ্টি বিকাশের প্রয়াস পাইবে এবং তজ্জন্য সে উক্ত প্রণালীই অবলম্বন করিবে। কিন্তু চিন্তা-পঠনের পরীক্ষার সময় যেমন সে স্বীয় চিন্তা দ্বারা পাত্রকে চালিত করিয়াছে, দিব্যদৃষ্টি বিকাশ করিতে কদাপি তাহা করিবে না। চিন্তা পঠনে পাত্র কার্যকারক বা অপরের মনের ভাব তাড়িত বার্তার ন্যায় গ্রহণ করতঃ উহা প্রকাশ বা কার্যে পরিণত করিয়া থাকে, আর দিব্যদৃষ্টিতে সে জড় দর্শনেন্দ্রিয়ের সাহায্য ব্যতিরেকে নিকট বা দূরের বস্তু বা ঘটনা মনশ্চক্ষু দ্বারা দর্শন বা প্রত্যক্ষ করিয়া থাকে। অতএব চিন্তা-পঠনে সে যন্ত্রের ন্যায় পরাধীন, আর দিব্যদৃষ্টিতে সম্পূর্ণ স্বাধীন। এই ক্ষেত্রে কার্যকারক তাহার কাছে জিজ্ঞাসু মাত্র। চিন্তা-পঠন পরীক্ষার সময় কাৰ্যকারক চিন্তাযুক্ত মনে রহিয়াছিল, এখন তাহাকে তদ্বিপরীত ভাবে অর্থাৎ ভাবনা-শূন্য মনে (with a blank mind) অবস্থান করিতে হইবে; অন্যথায় সে পাত্রের নিকট হইতে যথার্থ সংবাদ অবগত হইতে পারিবে না। কারণ সে যদি পাত্রকে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিয়া তাহার নিকট হইতে নিজের মনের মত একটি উত্তর পাইবার জন্য আশান্বিত থাকে, তবে তাহার সেই মনাভাব বা চিন্তা মানসিক আদেশের ন্যায় তাহার (পাত্রের) মনে প্রবেশ করিবে এবং সে (পাত্র) সম্মোহন বিজ্ঞানের বিধি অনুসারে তাহাই বলিতে বাধ্য হইবে। দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যাইতে পারে যে, যদি কাৰ্যকারক নিজের হাতে একটা টাকা রাখিয়া পাত্রকে এরূপ জিজ্ঞাসা করে, “বলত আমার হাতে কি রহিয়াছে?” এবং পাত্র উহার উত্তরে “টাকাই” বলিবে এরূপ চিন্তা করে, তবে সে তাহাই বলিতে বাধ্য হইবে। অতএব কাৰ্যকারক তাহাকে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিয়া সম্পূর্ণ শূন্য মনে তাহার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করিবে; যদি সে উপযুক্ত অবস্থায় পৌছিয়া থাকে, তবে সে স্বীয় আত্মববোধ (intuition) হইতে যাহা উত্তর দিবে, তাহা ঠিক হইবে। সুতরাং কাৰ্যকারক এই সময় তাহাকে যে সকল বিষয় জিজ্ঞাসা করিবে, তাহা সৰ্বোতভাবে প্রশ্নবোধক হইবে; কখনও আদেশাত্মক কোন ভাব উহাতে থাকিবে না। সময় সময় দক্ষ সম্মোহনবিদগণেরও প্রশ্নের এই দোষে আত্মিকাবস্থায় উপনীত পাত্রের প্রদত উত্তরও মিথ্যা বলিয়া প্রমাণিত হয়।

পাত্র খুব গভীর মোহ নিদ্রায় অভিভূত হওয়ার পর কাৰ্যকারক তাহার মুখমণ্ডলের উপর কয়েকটি পাস দিয়া জিজ্ঞাসা করিবে—“তুমি কি এখন (তোমার চক্ষু বন্ধ অবস্থায় আমাকে দেখিতে পাইতেছ?” কিম্বা “আমার হাতে কি আছে, তাহা কি তুমি বলতে পার?” যদি সে সম্মতি সূচক উত্তর দেয়, তবে তাহার উপর নিমোক্ত পরীক্ষাগুলি সম্পাদন করিবার প্রয়াস পাইবে। আর যদি সে উত্তর না দেয়, বা অস্বীকার করে, তবে তাহার নিদ্রা আরও গভীর করতঃ আবার ঐ প্রশ্ন করিবে। পাত্রের নিদ্রা যখনই গভীর হইতে গভীরতর করিবার আবশ্যক হইবে, তখনই “ঘুম—গভীর নিদ্রা-গাঢ় নিদ্র।” এইরূপ দুইএকবার মৌখিক আদেশ এবং তৎসঙ্গে পাস দিবে। তৎপরে তাহার সম্মতি সূচক উত্তর পাওয়ার পর, কাৰ্যকারক একখানা হাত নিজের মাথা, গলা, বুক, কাঁধ বা অন্য কোন স্থানে রাখিয়া জিজ্ঞাসা করিবে—“বলত, আমার হাত খান এখন কোথায় রহিয়াছে?” যদি সে ঠিক উত্তর দিতে সমর্থ হয়, তবে তাহার উপর এই মত আরও কতকগুলি পরীক্ষা করিবে। এরূপ অভ্যাস দ্বারা তাহার শক্তি আরও স্ফুরিত হইলে, কাৰ্যকারক ঐ ঘরের এক স্থান হইতে অন্যস্থানে গমন কিম্বা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কোন প্রকার চালনা করিলে, সে তাহা বলিয়া দিতে পারিবে। এখন কাহার ঘড়িতে কয়টা বাজিয়াছে?” সেই স্থানে কয়জন লোক উপস্থিত আছে? কোন্ ব্যক্তির নিকট কি কি জিনিষ রহিয়াছে? উপস্থিত ব্যক্তিদের পোষাকপরিচ্ছদ কি রূপ? ইত্যাদি জিজ্ঞাসা করিবে। যখন সে এই সকল প্রশ্নেরও ঠিক উত্তর দিতে পারিবে, তখন তাহার শক্তির বেশ স্ফুরণ হইয়াছে বলিয়া বুঝিবে। এখন সে পাশের ঘরে বা বাড়ীতে কিম্বা রাস্তার উপর কি ঘটিতেছে না ঘটিতেছে, তাহাও যথার্থরূপে বলিয়া দিতে পারিবে। তৎপরে সে দূর-দূরান্তরের বস্তু, বিষয় বা ঘটনাও সবিস্তারে ঠিকরূপে বর্ণনা করিতে সমর্থ হইবে। স্থানের দূরত্ব বা মধ্যবর্তী পদার্থ সকলের বিদ্যমানতা বা অবস্থিতি, আর তখন তাহার শক্তির বাধা জন্মাইতে পারিবে না। তথন কাৰ্যকারক তাহাকে ভূত এবং ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে সহজ সহজ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলে সে তাহার যথার্থ উত্তর দিতে পারিবে।

যে সকল পাত্রের আত্মিক সংবেদনা অত্যন্ত অধিক, তাহাদের কেহ কেহ চতুর্থ স্তর হইতে সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে পঞ্চম স্তর বা উচ্চাবস্থায় পাত্রের আত্মিক শক্তি বিকাশ করণ উপনীত হইয়া থাকে। অবশ্যই এরূপ পাত্রের সংখ্যা নিতান্ত বিরল। এই অবস্থায় পাত্রের আত্মিক শক্তি সকল পূর্ণ মাত্রায় বিকশিত হইয়া উঠে এবং সে ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্তমান সম্বন্ধে যাবতীয় প্রশ্নের সত্য উত্তর দিতে সমর্থ হইয়া থাকে। তদ্ভিন্ন সে জটিল রোগাদির প্রকৃত কারণ নির্ণয়, ব্যক্তি বিশেষের মনোভাব অবগত, বা তাহার জীবনের ঘটনাবলীর রহস্য পরিজ্ঞাত এবং বিশেষ কোন বস্তু, বিষয় বা ঘটনার অভ্যন্তরীণ বিষয় প্রত্যক্ষ করিতে পারে। উক্তাবস্থায় কাৰ্যকারক নিজের কাৰ্য-প্রণালী সম্বন্ধে বা স্বীয় শারীরিক, মানসিক, বৈষয়িক বা আধ্যাত্মিক উন্নতি বিষয়ে জিজ্ঞাসু হইলে, তাহার নিকট হইতে যথার্থ মূল্যবান উপদেশ লাভ করিতে পারে। যে সকল পাত্র একবার এই অবস্থায় উপনীত হয়, তাহাদের কাহার কাহারও এই শক্তি স্থায়ীরূপে লাভ হইয়া থাকে। তখন সে কোন কাৰ্যকারকের সাহায্য ভিন্ন, কেবল নিজের ইচ্ছাশক্তি বলেই উহাকে জাগ্রত করিয়া প্রয়োজনীয় কাৰ্য্যে নিয়োগ করিতে পারে।

কাৰ্যকারক সম্মোহন বিজ্ঞানের এই উচ্চতর শাখায় সাফল্য লাভের অভিলাষী হইলে, তাহাকে পাত্রের আত্মিক শক্তি এবং স্বীয় ক্ষমতার প্রতি আস্থাবান হইয়া চৰ্চ্চা বা অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত থাকিতে হইবে। সে সংকল্পশীলতা, অধ্যবসায় ও ধীরতার সহিত উপযুক্ত বিচার-বুদ্ধি লইয়া কাৰ্যে প্রবৃত্ত হইবে এবং তৎকালে সন্দেহ, বিরক্তি ও ভয় পরিত্যাগ করিবে। তাহার ন্যায় পাত্ৰও স্বীয় শক্তি সমূহের প্রতি দৃঢ় আস্থাবান থাকিবে এবং মোহ নিদ্রার সাহায্যে যে উহারা স্ফুরিত হইতে পারে, তাহা বিশ্বাস করিবে এবং তদ্ব্যতীত শক্তি বিকাশের জন্য তাহার আন্তরিক আগ্রহ এবং যত্নও থাকা চাই। কাৰ্যকারক দুই-চার দিনের চেষ্টাতেই কাহার চিন্তা-পঠন বা দিব্যদৃষ্টি বিকাশের আশা করিবে না; যেহেতু কোন কোন স্থলে সাফল্য লাভ করিতে ক্রমাগত সপ্তাহের পর সপ্তাহ বৈঠক দিতে হয়। প্রত্যহ বা একদিন অন্তর একটি নির্দিষ্ট সময়ে বৈঠক দিবে এবং বিশেষ কোন অন্তরায় না ঘটিলে কোন দিন উহা বন্ধ রাখিবে না। যদি সে ক্রমাগত দুই-তিন মাসের চেষ্টাতেও কোন একটি পাত্রের এই শক্তি বিকাশ করিতে সমর্থ হয়, তথাপি তাহার পরিশ্রম সার্থক হইবে। কারণ সে পাত্রের মধ্যবর্তিতায় সময় সময় এমন মূল্যবান উপদেশ লাভ করিতে পারিবে, যাহা অপর কোন লোকের নিকট হইতেই পাইবার আশা নাই। আত্মিক শক্তি বিকাশের জন্য যাহাকে পাত্র মনোনীত করিবে, তাহাকে সাধারণ পাত্রের ন্যায় হিরোটাইজ, বা মেস্‌মেরাইজ, করিয়া (অর্থাৎ তাহার মনে মায়া ও মাদি উৎপাদন করিয়া) কখনও কোন খেলা দেখাইবে না, কারণ তাহাতে তাহার সূক্ষ্ম আত্মিক সংবেদনা নষ্ট হইয়া যাওয়ার বিশেষ সম্ভাবনা আছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *