তৃতীয় পাঠ
কিরূপ লোক মোহ নিদ্রায় অভিভূত হয়
যে সকল লোক হিপ্নেটাইজড় হয়, তাহাদের প্রকৃতি সম্বন্ধে যাবতীয় বিষয় প্রথম খণ্ডের চতুর্দশ পাঠে বিস্তারিতরূপে বলা হইয়াছে, এখন যেরূপ প্রকৃতির লোকেরা মেস্মেরিক বা মোহ নিদ্রায় অভিভূত হয়, তাহাদের সম্বন্ধে আলোচনা করা যাইতেছে। পাত্রের প্রকৃতি সম্বন্ধে হিপোটষ্ট, ও মেস্মেরিষ্টদের মধ্যে দুই এক বিষয়ে মত ভেদ দৃষ্ট হয়। হোটিষ্টরা বলেন, যাহাদের সম্মোহন আদেশের প্রতি উপযুক্ত পরিমাণে সংবেদনা আছে এবং যাহারা মোহিত হইবার সময় আদিষ্ট বিষয়ে মনঃসংযোগ করিতে সমর্থ, তাহাদের প্রত্যেকেই হিপ্নেটাইজ করিতে পারা যায়। আর যাহারা সম্মোহনের সময় শক্তির গতি রোধ করিবার চেষ্টা করে বা অতিরিক্ত পরিমাণে উৎসুক বা অনুসন্ধিৎসু এবং ভীত হয় তাহাদিগকে মোহিত করা যায়না। এই সংবেদনা সম্বন্ধে হিপ্নোটিষ্ট, দের সহিত মেস্মেরিষ্টদের কোন মত ভেদ নাই। তাহারাও এই সংবেদনা মোহ নিদ্রা উৎপাদনের নিমিত্ত অত্যাবশ্যকীয় বলিয়া স্বীকার করেন এবং পাত্রের মনে উদ্বিগ্নতা, ঔৎসুক্য, রোষ প্রবণতা ইত্যাদি ভাব বর্তমান থাকিলেও তাহাকে মোহ নিদ্রায় আচ্ছন্ন করা যায়না বলিয়া থাকেন। আর তাহারা যে স্বভাব রূপ ও অভাব রূপের (positive and negative)* কথা বলিয়া থাকেন, হিপ্নটিষ্টরা সেরূপ কিছু বলেন না। মেস্মেরিষ্টরা বলেন, মানুষ স্বভাবরূপ বা অভাবরূপ গুণ বা ধর্ম বিশিষ্ট। উহাদের একটি অপরটির বিপরীত। স্বভাবরূপ ব্যক্তিরা অভাবরূপ ব্যক্তিদিগকে মেস্মেরাইজ্ করিতে পারে; কিন্তু অভাবরূপ ব্যক্তিরা স্বভাবরূপ ব্যক্তিদিগকে আয়ত্তাধীন করিতে সমর্থ হয়না। কোন এক ব্যক্তি সকলের নিকটেই স্বভাবরূপ বা অভাবরূপ নয়। অতএব ক, খ এর নিকট অভাবরূপ হইয়া গ ও ঘ এর নিকট স্বভাবরূপ হইতে পারে। গ বা ঘ আবার খ এর নিকট স্বভাবরূপ বা অভাবরূপ দুই-ই হইতে পারে। সমাজের উচ্চস্তরের ব্যক্তিদিগের নিকট নিম্নস্তরের অনেক লোককেই অভাবরূপ হইতে দেখা যায়। এই নিমিত্ত সময় সময় এরূপ ঘটিয়া থাকে যে, কোন একজন অভিজ্ঞ বা চতুর মেস্মেরিষ্ট, অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও যাহাকে মেসমেরাইজ করিতে পারেনা, সে হয়ত অপেক্ষা কৃত কম শক্তি সম্পন্ন অন্য একজন কাৰ্যকারকের দ্বারা সহজেই মোহিত হইয়া পড়ে।
মেসমেরিষ্টদের মতে দুৰ্বল লোকেরা উত্তম পাত্র। এই দুর্বল শারীরিক কি মানসিক তাহা স্পষ্ট নহে। যে সকল ব্যক্তি উদাসীন প্রকৃতির (passive) তাহারা সহজে মেস্মেরিক শক্তির আয়ত্তাধীন হইয়া থাকে। চোখ-মুখের ভাবে যাহাদিগকে স্থূলবুদ্ধি বা অসাবধান বলিয়া বোধ হয় এবং যাহাদের ওষ্ঠদ্বয় বহির্গামী (সামনের দিকে বাহির করা) ও শিথিল তাহারা সহজেই মেসমেরাইজড হয় বটে, কিন্তু তাহাদের নিকট হইতে কোন শিক্ষা লাভ হয়না। দীর্ঘসূত্ৰী ব্যক্তিরা মোহ নিদ্রায় সর্বদা অভিভূত হইলেও উত্তম শ্রেণীর পাত্র নয়। শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের মধ্যে যাহারা মোহ নিদ্রায় নিদ্রিত হইতে আন্তরিক ইচ্ছুক, তাহাদের মধ্যে অনেকে খুব তাড়াতাড়ি উহাতে অভিভূত হইয়া থাকে। কিন্তু অনেক সময় আবার এই শ্রেণীর কোন কোন লোককে আপাত দৃষ্টিতে সংবেদ্য বলিয়া বোধ হইলেও তাহারা উত্তম পাত্র হয়না। যখন কাৰ্যকারক, হাব-ভাব, কথা-বার্তা ইত্যাদি দ্বারা কোন পাত্রের মনে উদাসীন ভাব সৃষ্টি করিতে পারিয়াছে, তখনই সে তাহার উপর কোন পরীক্ষার প্রয়াস পাইতে পারে।
হিপ্নোটিজমের সহিত মেস্মেরিজমের আর একস্থলে প্রভেদ এই যে, হিপেটাইজ করিবার সময় পাত্রকে আদিষ্ট বিষয়ের প্রতি মনঃসংযোগ করিতে বলা হয়, আর মেসমেরাইজ করিবার কালীন তৎপরিবর্তে তাহাকে কেবল শূন্য মনে অবস্থান করিতে উপদেশ দেওয়া হয়।
যে সকল স্ত্রী বা পুরুষের চোখ কোটরগত (গর্তের মধ্যে অবস্থিত। এবং ঘন সন্নিবিষ্ট (নাসা-মূলের খুব নিকট স্থিত) সম্মোহন শক্তির প্রতি তাহাদের সংবেদনা অপরাপর লোকাপেক্ষা বেশী। গোলাকার অপেক্ষা দীর্ঘাকার মুখ মণ্ডল অধিক সংবেদনার পরিচায়ক। যাহাদের চক্ষু বড় এবং মণির উপরের অংশ সৰ্ব্বদা পাতা দ্বারা আবৃত থাকে (যাহাকে অর্ধনিমীলিত চক্ষু বলে) এবং চক্ষু বুজিবার সময় মণি প্রথম উপরের দিকে উটিয়া গিয়া পরে চোখের পাতা বন্ধ হয়, তাহারা দিব্যদৃষ্টি, দিব্যশ্রুতি, দিব্যানুভূতি ইত্যাদি বিকাশের উপযুক্ত পাত্র।**
—————
* স্বর্গীয় রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী এম-এ মহাশয়ের অনুবাদ।
** ফলিত জ্যোতিষের মতে জলরাশি (ককট, বৃশ্চিক ও মীন) লগ্ন হইয়া তাহাতে চন্দ্র অবস্থিতি থাকিলে কিম্বা উহাতে বৃহস্পতি বা ইউরেণাস (Uranus) এর যোগ থাকিলে জাত ব্যক্তির mediumistic susceptibility সুচনা করিয়া থাকে। এতদ্ব্যতীত রাশি ও ভাব বিশেষে গ্রহগণের দৃষ্টি ও যোগ দ্বারাও তাহার Psychic tendency and ability সূচিত হয়।