২৯ মার্চ, সোমবার ১৯৭১
রেডিও আজ একচোটেই বলে দিয়েছে আটটা-পাঁচটা কারফিউ থাকবে না।
সকালেই গেলাম গুলশানে, রুমী-জামীকে বাড়ি নিয়ে আসতে। আজ রুমীর জন্মদিন, অন্তত দুপুরে কিছু রান্না করে খাইয়ে দিই। গিয়ে দেখি কিটি ওখানে বেড়াতে গেছে। গুলশানে বেশির ভাগ বাড়িতে বিদেশীদের বাস–সেখানে চলাফেরার একটু সুবিধে, আর্মির উৎপাতও একটু কম।
ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম, কাচাবাজার সব পুড়ে নিশ্চিহ্ন, কিছুই পাওয়া যায় না–আজও কি ডাল, আলু দিয়ে খাওয়া হবে? হঠাৎ চোখে পড়ল এয়ারপোর্ট রোডের সার সার বন্ধ দোকানের মাঝে ছোট্ট একটা গোশতের খোলা দোকানে মাত্র একটি খাসির রান ঝুলছে। তক্ষুণি গাড়ি থামিয়ে রানটা কিনে নিলাম। বললাম, রুমী তোর কপালে পেয়ে গেলাম।
বাড়ি পৌঁছে দেখি চিংকু আর কায়সার বসে আছে। বললাম, ভালোই হল তোমরা এসেছ। আজ রুমীর জন্মদিন। তোমরা দুপুরে ওর সঙ্গে খেয়ে যাও।
তারপর তিনটে চুলো ধরিয়ে কাসেম বারেক দুজনকে খাটিয়ে নিজেও দ্রুত খেটে তৈরি হল পোলাও, কোর্মা আর চানার হালুয়া। গুলশান থেকে আসার সময় রেবা তার বাগানের কিছু টম্যাটো তুলে দিয়েছিল। সেটা দিয়ে সালাদ বানানো হল।
খাওয়ার পর ঢেকুর তুলে জামী বলল, ভাইয়ার জন্মদিনের খাওয়াটা ভালোই হল। এমন দুর্দিনে এর বেশি আর কি চাই?
খাওয়া-দাওয়ার পর রুমী জামীকে আবার গুলশানে রেখে এলাম।