তমিজের বাপ, কথা কও না? হাজেরানে মজলিশ পুস করে, জবাব দাও।–হাজেরান মজলিশ নামে কাউকে সনাক্ত করতে না পেরে বিচলিত হয়ে কিংবা অপরিচিত এই ব্যক্তির প্রশ্নের জবাব খুঁজতে কিংবা প্রশ্নটিকে ভালো করে বুঝতে কিংবা মাথা থেকে ঘুমের ময়লা কাটাতে চোখজোড়া বড়ো বড়ো করে তমিজের বাপ তাকিয়ে থাকে মাঝিপাড়ার জুম্মঘরের সিলিংবিহীন চালের জংধরা টিনের দিকে।
শরাফত মণ্ডলের হাতে তমিজের বাপের মার খাওয়ার কথা বেশ তারিয়ে তারিয়ে বলে একটু-আগে-পড়া নামাজের টানটান ভক্তি থেকে খালাস পাওয়ায় কালাম মাঝির মাথাটা এখন বেশ হালকা; তমিজের বাপের নীরবতায় তাই সে রাগ করে না। পোড়াদহ মেলার একদিন বাদে শুক্রবার, পরের শুক্রবার আসতে আরো একটি সপ্তাহ। মোট আটটা দিনের অষ্টপ্রহর দোকানদারি আফসারের ওপর ছেড়ে দিয়ে বিক্রিবাটা সব লাটে তুলে কালাম মাঝি কেবল ঘোরাঘুরিই করলো মাঝিপাড়ার ঘরে ঘরে। কুদ্স মৌলবিকে লাগিয়ে দিয়েছিলো ভালো করে। কালাম মাঝির পয়সাও বেরিয়ে গেলো মেলা। নইলে জুম্মায় এতোগুলো মানুষ কি আর এমনি এমনি জোটে? মাঝির জাতের মানুষ আবার আল্লারসুলের নাম করে নাকি? তা যেভাবে হোক, মানুষ যখন জোটানো হলো, তখন তমিজের বাপ অতো চুপচাপ থাকলে চলবে কেন? কালাম মাঝি তাগাদা দেয়, ক্যা গো, কথা কও। শরাফত মণ্ডল খড়ম দিয়া তোমার মাথাত বাড়ি মারিছিলো? না কি তামাম শরীলেতই কোবান দিছে, মনে আছে?
তমিজ কিন্তু অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে, বাজান, তুমি মুখ খোলো না কিসক গো? তোমার ভয় কী? অতো ভয়পাদুরা হলে ক্যাংকা করা হবি?
তমিজের তেজ গলায় তুলে নেয় কুদুস মৌলবি, আল্লার বিচার আল্লাই করবি। কালাম মিয়া তোমাক ভরসা দেয়, তোমার ভয় কিসের? কালাম মিয়া আল্লার নেকি বান্দা, এই জুম্মাঘর পাকা করার ওয়াদা করিছে। এমন একজন নেকি পরহেজগার মানুষ সাথে থাকলে–।
কালাম মাঝি উসখুস করে, জুম্মাঘর পাকা করার কথা সে একদিন এমনি বলেছিলো, সেটা ঠিক ওয়াদা করা নয়। জুম্মাঘরের টিনের চাল দিয়া পানি পড়ে, নতুন দেড় বান টিন হামি দিবার নিয়ত করিছি। আল্লা তৌফিক দিলে হামি না হয় টিন কিন্যা দেমো। তা সে কথা এখন তোলার দরকার কী?
কালাম মাঝির বিবৃতিকে বিনয় বিবেচনা করে কুদুস মৌলবি আরো উৎসাহ পায়, আল্লার ঘর মজবুত করার নিয়ত করলেন, বেহেশতে আপনার জায়গা ঠিক হয়া থাকলো। এখন আপনের ওয়াদার কথা এলান করলে আর দশজনে আল্লার কামে আগায়া আসবি। না কী কন?
কেরামত আলি তাকে আমল না দিয়ে আরেকটু ঝুঁকে পড়ে তমিজের বাপের দিকে, চাচামিয়া, তুমি তো সাদাসিধা সৎ মানুষ। প্যাচঘোচের মধ্যে নাই। মিছা কথা কও না। মন খুল্যা কও তো কী হছিলো।
খয়েরি টিনের চালে বাঙালি নদীর স্রোত কিংবা ভবানীর জন্যে চোখের জল গচ্ছিত রাখা মরা মানাসের দ কিংবা কাৎলাহার বিলের ধীর ঢেউয়ের ছবি কিংবা আওয়াজ বুঝতে বুঝতে তমিজের বাপ নিচু গলায় বলে, উদিনকা বাঘাড় একটা ধরিছিলাম। তা বাপু দেড় মণ তো হবিই, বেশিও হবার পারে। লাওয়েত তুলিছি তো তার দাপটে —
আসল কথা কও। মণ্ডল তোমাক কী করলো? তমিজের ধমকে তার বাপ ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, দমে না গিয়ে ধমক-দেওয়া মুখে সে বরং দেখতে পায় অন্য কোনো চেহারা। কেরামতের কোমল তাগাদায় সে শুরু করে, বাঘাড় মাছ ধরিচ্ছিলো। হামার দাদা। উদিনকার বাঘাড়টা মনে হয় দাদাই খপ করা ধরা দিলো। মাছ তো ব্যামাকই মুনসির সম্পত্তি; বাঘাড় কও, রুই কাৎলা মিরকা, পাবদা ট্যাংরা, মাগুর শিঙি,-ব্যামাকই মুনসির মাছ। বিলের মধ্যে তখন আন্ধার ঘুটঘুট করে, ওরই মধ্যে দেখনু ভেড়াগুলান সাঁতার কাটা যাচ্ছে উত্তরমুখে।
উত্তরের কথা আমরা পরে শুনমু। কালাম মাঝি তার বিবরণ সম্পাদনার উদ্যোগ নেয়, দখিনমুখে কী হলো আগে সেই বিত্তান্ত কও।
তমিজের বাপ এবার বসে সোজা হয়ে, মুসল্লিদের দিকে তাকায় এবং বলে বিলের দখিনমুখে ডাঙার উপরে শিমুলগাছ, শিমুলগাছ থাকা কয় হাত তফাত বিলের ধারত খাড়া হয়া আছে, তার হাতোত নোয়ার পান্টি, পান্টির আগাত কাতল মাছের নকশা। নোয়ার হলে কী হয়, মাছখান খালি দাপাচ্ছে। গলা তার নিচু হতে হতে এতোই ঝাপসা হয়ে আসে যে শ্রোতাদের ধৈর্য থাকে না, কে একজন চেঁচিয়ে বলে, গলা ছাড়া কথা কও গো। চিপা চিপা আও করো, কানোত সান্ধায় না।
তমিজের বাপের গলা আগের মতোই নিচু, সে বিড়বিড় করে, আগে তো দেখি নাই। পাকুড়গাছ থ্যাকা তো নামে নাই কোনোদিন। আর সেই মুনসি উদিনকা খাড়া হয়া আছে শিমুলগাছের কাছে। কী নম্বা গোয় একটু থেমে সে ফের বলে, ধলা ফকফকা দাড়ি, দাড়ি খালি ওড়ে, মনে হয় দাড়ি দিয়া মুনসি আসমানোক সাট মারে। দাড়ি তার আগুনের শীষ, আগুনা দাড়ি দিয়া কুয়াশা পুড়ায়া আসমান সাফ করে। শিমুলগাছেতও বুঝি আগুন ধরিছিলো। হামার লাওয়েত বাগাড় মাছ দেখ্যা তার খুব কোদ্দ হলো। সাট দিয়া কয়, মাছ লিস? হামার বিলের মাছ লিস?
কেবল শেষ ছয়টি শব্দ ছাড়া তার আর কোনো কথাই স্পষ্ট নয়। কেরামত আলি উঁচু গলায় তার বিবৃতির ভাষ্য ছাড়ে, শোনেন, মুণ্ডল খাড়া হয়া আছিলো বিলের ধারে। তমিজের বাপোক দেখ্যা ধমক মারলো, তুই মাছ নিস কেন রে? শালা, এই বিল কি তোর বাপের?
জুম্মাঘরের শ্রোতাদের মনোযোগী মুখগুলো দেখে তমিজের বাপ চোখ ফেরায় নিচের দিকে। হেঁড়া মাদুরের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে কালো মাটির মতো পোড়া কুয়াশা। মুনসির দাড়ির আগুনে পোড়া আকাশের আঁচে তমিজের বাপের গলা শুকিয়ে আসে, শুকনা গলায় সে আওয়াজ করে, হামাক কয়, তুই আমার মাছ লিস? কয়া তার হাতের নোয়ার পান্টিখান দিয়া বাড়ি মারলো হামার ঘাড়োত, হামি আগে বাঘাড়টাকে ঠেলা বিলের মধ্যে ফ্যালা দিছি। হামাক পান্টির বাড়ি মারলো তো দেখি, পান্টির মাথাত ঐ বাঘাড়ের লকশা ফুটা উঠিছে। তার গলার শিকল ঝনঝন করা বাজে। বলতে বলতে তমিজের বাপ হঠাৎ চুপ করে, তার কানে তখন বাজছে ফকির চেরাগ আলির গলা, হাতেতে লোহার পান্টি গলাতে শেকল।
চেরাগ আলির গান আর কেউ শুনতে পায় কি-না সন্দেহ কারণ তমিজের বাপের কথা কেরামত বয়ান করে অনেক চড়া গলায়, তমিজের বাপ বিলের ধারে নামলো। পাও দুইখান কেবল কাদোর মধ্যে রাখিছে আর মণ্ডলও অ্যাসা তমিজের বাপের মাথাত মারলো খড়মের এক বাড়ি। কলো, শালা, মাঝির বাচ্চা, ডাইঙা শালা, ছোটোলোকের। জাত, মাছ চুরি না করলে প্যাটের ভাত হজম হয় না।
কী কলো? ক্যা গো তমিজের বাপ, মণ্ডল তোমাক কী কলো? বলতে বলতে লাফিয়ে ওঠে আধ বয়েসি এক মাঝি। তার উত্তেজিত মাথার তাপে ঝরে পড়ে তার কালচে সাদা কিস্তি টুপি। প্রায় সঙ্গেসঙ্গে উঠে দাড়ায় আরো কয়েকজন। তাদের শরীরও কাঁপে, অনেকের টুপি না থাকায় মাথায় জড়ানো গামছাগুলোই থরথর করে কাঁপে, কেউ কেউ মাথা থেকে গামছা খুলে কোমরে পেঁচায়। আপাতত তাদের উত্তেজনার সবটাই তারা নিয়োগ করে নানা ধরনের বাক্য গঠনে, যেমন, শালা হালুয়া চাষার বেটা, আজ ট্যাকা হয়া দুনিয়াত লয়া অঙ দেখিচ্ছে।
শালার বাপ তো নেংটি পিন্ধা থাকিচ্ছিলো। মাঘ মাসের জাড়োত গায়ের ওপরে পিরান ওঠে নাই।।
আরে শালারা সারা জেবন খাছে খালি শুধা ভাত। মাঝিরা মাছ মাগনা না দিলে মাছ মুখখাত তুলিছে কোনোদিন?
শালারা ভাত খায়া হাত ধোয় নাই, খায়া হাত মুছিছে নেংটির সাথে।
শরাফত মণ্ডলের পূর্বপুরুষের দারিদ্র, নিম্নমানের জীবনযাপন ও নীচু রুচির কথা ঘোষিত হতে থাকলে সবাই স্বস্তি পায় এবং অনেকেই ফের বসে পড়ে। তখন মুখ খোলে আবিতনের বাপ, আরে চুপ করো। তোমরা উদিনকার চ্যাংড়া তোমরা কী দেখিছো? সবার অর্বাচীন মূখতা সম্বন্ধে তাদের নিঃসন্দেহ করে এবং এই ব্যাপারে নিজে দ্বিগুণ নিশ্চিত হয়ে আবিতনের বাপ জানায়, চাষাদের পেটে ভাত জুটেছে খালি পৌষ মাঘ এই দুটি মাসে। ঐ সময় তারা চিড়ামুড়ি খেয়েছে, পিঠেপুলিও খেয়েছে। আর কী করেছে?-ঐ সময় হামাগোরে বাপদাদাক বাড়িত লিয়া ত্যালপিঠা আর চিতই পিঠা খিলায়া জমি লেখ্যা লিছে লিজেগোরে নামে। না হলে কাৎলাহারের দুই পাড়ের জমিজমা গাছপালা ব্যামাক তো হামাগোরে দখলেতই আছিলো।
আবার এখন লায়েবেক ঘুষ দিয়া বিলটাও দখল করিছে, দেখলা তো? কালাম মাঝি এই কোলাহলটির উপসংহার ঘটবার উদ্যোগ নেয়, ঠিক আছে। জমিদারে পত্তন দিবি তো পত্তন লেওয়ার হক আছে কার? মাঝিগোরে বিল পত্তন লিবি মাঝি। না কী কও?
কালাম মাঝির সঙ্গে সবাই একমত, কিন্তু কালাহার বিলের পত্তন কাকে দেওয়া উচিত এ নিয়ে কারো তেমন মাথ্যব্যথা নাই। বিল মাঝিদের, মাঝিরাই মাছ ধরবে, তাদের কথা হলো পত্তন উত্তন আবার কী?
তারা সবাই কথা বলে এবং পরস্পরের কথায় কিছুমাত্র কান না দিলেও সবার কলরব থেকে যে সিদ্ধান্তটি বেরিয়ে আসে তা হলো এই চলো শালা মণ্ডলের বাড়িত চলো। পাটের গোছের মাথাত আগুন লিয়া চলো। শালার বাড়িত আজ আগুন দেওয়া হোক। মণ্ডলের বেটা শালা বাড়িত দালান তোলার হাউস করিছে গো, কাল গোরুর গাড়িত করা ইট লিয়া আসিচ্ছিলো দেখলাম। শালার দালান তোলার হাউস হামরা মিটায়া দেই চলো।
মাঝিদের উত্তেজনায় গা গরম হলেও এদের সংকল্পে কালাম মাঝির ভয় হয়, তার গা শিরশির করে। মাঝির জাত, তার নিজের জাত, একই রক্ত, কালাম এদের হাড়ে হাড়ে চেনে। বড়ো মাথাগরম জাত। জীব হত্যা করে পেট চালায়, তাও আবার পানির নিরীহ প্রাণী। এরা কখন যে কী করে বসে কেউ জানে না। কালাম মাঝির প্রথম পক্ষের ছেলে পুলিসের চাকরি পেয়েছে, বর্ধমান জেলার কালনায় পোস্টিং। চাকরি পাবার পর ছেলে একবার বাড়ি এসেছিলো। বিলের অন্যায় পত্তন সম্বন্ধে কালাম তাকে ওয়াকিবহালও করেছে। তা ছেলে বলে গেছে, সরকারি আইনে এদিক ওদিক করার জো নাই। বৃটিশের শাসনে হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। তবে আইনের ফাঁক আছে, আইনের ফাঁকফোকর জানলে আইন না মানাটা পানির মতো সোজা। এই মাঝির বাচ্চারা আইনই বা জানে কী, তার ফাঁকই বা দেখবে কোত্থেকে? মণ্ডলের বাড়িতে চড়াও হয়ে আগুন ধরালে শরাফত মণ্ডল যে কোন ধারায় ঠুকে দেয়, তখন সামলাবে কে? আবার আবদুল কাদেরের যা দাপট, টাউনের নেতাদের ধরে সে কি না করতে পারে? চড়া গলা নামিয়ে কালাম মাঝি মিনতি করে, তোমরা দুইটা দিন সবুর করো। তহসেনেক একটা টেলিগ্রাম কর্যা দেই তো তিন দিনের মাথাত হাজির হবি। পুলিসের লোক, ওর শলাপরামর্শ শুন্যা কাম করলে বিপদের কিছু থাকে না।
ভাইজান দরকার হলে ফোর্স লিয়া হাজির হবি। আফসারের এমন তেজি ভরসায় কালাম মাঝি সায় দেয় না। একজন কনস্টেবল কি আর ইচ্ছা করলেই ফোর্স নিয়ে আসতে পারে। এখন এদের ঠেকাবে কী করে সেই ভাবনায় কালাম মাঝি কাতর।
এই সময়ে উঠে দাঁড়ায় কেরামত আলি। তার ঠোট একটু একটু কাঁপে। গত আটদিন ধরে কালাম মাঝির মুখে মাঝিদের ওপর মণ্ডলের জুলুমের কথা শুনে শুনে সে একটা পদ্য লিখে ফেলেছে। কাগজটা তার পকেটেই, কিন্তু কাগজ না দেখে পড়তে পারলে ভালো হতো। পদ্যের কোনো চরণই তার মনে আসছে না। তাই তাকে বয়ান করতে হয় তার প্রেরণার গদ্যরূপ, শোনেন, একটা কথা কই। সবার কথাবার্তা একটু কমলে সে বলে, শোনেন। আধিয়াররা তো চাষ করে জোতদারের জমি। কী কন? তারা জান দিয়া খাটে, ফসল পায় আধাআধি। এখন তারা তিন ভাগের দুই ভাগ ফসল চায়া জোতদারের সাথে লড়াই করে। আধিয়ার ভয় পায় না। পশ্চিমের খিয়ার এলাকায়–।
উগল্যান কথা হামরা জানি। তোমার কেচ্ছা থামাও। আফসার তাকে থামিয়ে দিতে উঠে দাঁড়ালে কালাম মাঝি রাগ করে ভাস্তের ওপর, আঃ। কেরামতের কথাটা শোনো না বাপু। তারপর কেরামতের পিঠে হালকা চাপ দিয়ে সে তাকে অভয় দেয় এবং নিজেও ভয় কাটাবার পথ খোঁজে, কও বাপু। তোমার মাথা ঠাণ্ডা। বুঝায়া কও, মানুষের বাড়িত আগুন দেওয়া বড়ো গুনার কাম। বুঝায়া কও।
কালাম মাঝির পৃষ্ঠপোষকতায় কেরামত আলি পিঠে তো বটেই বুকেও বেশ বল পায়। তার এলোমেলো মাথায় মাঝিদের নিয়ে লেখা পদ্যটা দানা বাঁধে। কিন্তু অন্ত্যানুপ্রাসগুলো মনে না পড়ায়, কিংবা বিনয়ে বা দ্বিধাতেও হতে পারে, তাকে সেঁটে থাকতে হয় সাদামাটা গদ্যের সঙ্গেই, আপনারা জানেন তো সবই। কিন্তু শেখেন না কিছুই। না শিখলে জানার ফল কী? সেই জানার ফায়দা কী? জয়পুরে দেখিছি, বর্মণী মা পুলিসের গুলি খায়াও হিরদয়ে বল রাখে। তার হুকুমে চাষারা তীর চালায়। আর এটি, এই গিরিরডাঙা গাঁয়ে দেখি, মাঝিদের চোদ্দপুরুষের বিল দখল করে ভিন্ন জাতের মানুষ আর মাঝিরা বস্যা বস্যা খালি বাল ছেঁড়ে।
কেরামত আলি কথা বলেই চলে, আর জুম্মাঘরের মাঝিরা সব দাঁড়ায় সোজা হয়ে। তমিজের বাপ পর্যন্ত উঠে দাঁড়িয়ে দরজার বাইরে চোখ রেখে খুঁজতে থাকে কাৎলাহার বিলের উত্তর সিথান। জুম্মাঘরের জংধরা টিনের চাল হাতখানেক ওপরে ওঠে, সেখানে ঢংঢং ঘণ্টা বাজে। কিন্তু এই বিকট ঘণ্টাধ্বনি চাপা পড়ে তমিজের চিৎকারের নিচে, কিসক? হামরা বাল ছিঁড়মু কিসক? চলো! সোগলি চলো গো! সোগলি বাড়িত যায়া জাল পলো যা আছে লিয়া আসো। আজ কাৎলাহার মুখে চলো।