২৮ এপ্রিল, বুধবার ১৯৭১
আজকের কাগজে একটা খবর দেখে চমকে উঠলাম। নিউইয়র্কে পাকিস্তান দূতাবাসের ভাইস কনসাল মাহমুদ আলীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বুঝলাম আরেকজন দেশপ্রেমিক বাঙালি পাকিস্তান সরকারের পক্ষ ত্যাগ করলেন।
বাঙালি কূটনীতিক বাংলাদেশ সরকারের আনুগত্য ঘোষণা করেছে–এটা খুশির খবর। তবে কি না মাহমুদ আলী আমাদের আত্মীয়–নাতজামাই। ওর শ্বশুর আবদুল খালেক শরীফের ভাগনে। এখন ডিস্ট্রিক্ট জজ হিসেবে সিলেটে রয়েছে। ২৫ মার্চের পর রটে ছিল পাকি আর্মি ওদের সবাইকে গুরি করে মেরেছে। পরে খবর পাওয়া গেছে খালেক বাবাজি আর লেবু বউমা প্রাণে বেঁচে আছে। ওদের কাছাকাছি বাড়ির এক ইঞ্জিনিয়ারকে আর্মি গুলি করে মেরে ফেলার পর ওরা গ্রামে পালিয়ে যায়। মাহমুদ আলী ওদের জামাই। কি জানি মাহমুদ আলীর কারণে পাক আর্মি ওদের আবার কোন অত্যাচার না করে।
কলিম এসেছিল। ওরা সবাই এখনো নিজ নিজ বাড়িতেই আছে–প্রাণ হাতে করে। ওর কাছে শহরে মিলিটারিদের অব্যাহত তৎপরতার কথা আরো কিছু শুনলাম। ট্রাকভর্তি চোখ বাঁধা, হাত বাঁধা যুবকদের এখনো দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রায়। কলিম আরো বলল, মিরপুর-মোহাম্মদপুরে মাঝে-মাঝে ছুটকোছটকা গোলমাল হয়েছে। কিছু ছুরি মারামারি, কিছু ঘরবাড়িতে আগুন দেয়াদেয়ি।
রঞ্জু এসে একটা মজার খবর দিল। গ্রীন রোড যেখানে ময়মনসিংহ রোডে গিয়ে মিশেছে, সেইখানে আজ বিলে চারটার সময় শান্তি কমিটির অন্যতম সদস্য জনাব আবদুল জব্বার খদ্দর বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। শ্রোতামণ্ডলী : তিনটি ট্রাফিক পুলিশ, একটি মিলিটারি পুলিশ এবং একটি আর্মির জওয়ান।