1 of 2

২৮. আড়াল থেকে দেখতে পাচ্ছিল সজল

আড়াল থেকে দেখতে পাচ্ছিল সজল, রামলাখনকে ছোটমামা ঘাড় ধরে এনে ধাক্কা দিয়ে নিতাই খ্যাপার ঝোপড়ায় ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, বার কর তোর বেজি। বার কর!

রামলাখনের অবস্থা খুবই সঙ্গিন। মুখটা ভাবাচ্যাকা খেয়ে আছে। কাঁদো-কাদো ভাব। আবার রাগও থমথম করছে। কিন্তু শক্ত পাল্লায় পড়ায় কিছু করতে পারছে না।

ছোটমামার সঙ্গে যদি কোনওদিন সেজোকাকার ফাইট হয় তবে কে জিতবে তা এখন ভেবে ঠিক করতে পারছে না সজল। তার মন চায় সেজোকাকাই জিতুক। কিন্তু তা কি হবে? ছোটমামার গায়ের জোর ভীষণ, সাহসও সাংঘাতিক। এই তো মাত্র কয়েক মাস হল এ জায়গায় এসেছে, এর মধ্যেই তাকে সবাই ভয় খায়। তবু যদি কোনওদিন ফাইট লাগে, আর সজলকে যদি রেফারি করা হয় তবে সজল সেজোকাকুকেই জিতিয়ে দেবে।

রামলাখন ঝোপড়া থেকে ম্লান মুখে বেরিয়ে এল। সজল জানে, ঘরে বেজিটা পেয়ে গেলেও রামলাখনের লাভ হত না। ছোটমামা অত কাঁচা ছেলে নয়। সঙ্গে সঙ্গে বলত, ওটা তো আমাদের বেজি। পরশুদিনই গণি মিয়ার কাছ থেকে কিনেছি। তোর বেজি কই?

এসব সজলের জানা। বেশ কিছুদিন আগে শীতলাবাবুদের ময়না পাখিটা খাঁচা খোলা পেয়ে উড়ে পালায়। কিন্তু খাচায় থেকে থেকে ডানার জোর ছিল না বলে খানিক উড়ে এসে তাদের বড় ঘরের বারান্দায় চুপ করে বসে ছিল। বৃন্দা সেটাকে ধামাচাপা দিয়ে ধরে। পরে খবর পেয়ে শীতলাবাবুর মেয়ে টুটু যখন খোঁজ করতে এল তখন পাখিটা নতুন বড় একটা খাচায় নিতাইখ্যাপার পাখিটার পাশে দোল খাচ্ছে।

টুটু বলল, ও মা! এই তো আমাদের ময়না।

বৃন্দা অবাক হয়ে বলে, তাই নাকি? তা সে তোমরা গণি মিয়ার সঙ্গে বোঝো গে যাও। নগদ পচিশ টাকায় কালই তো বড়দিমণি কিনলেন।

ডাহা মিথ্যে। পরে শীতলাবাবুর বাড়িসন্ধু মেয়ে-মদ্দায় এলে সে কী কাউ কাউ করে ঝগড়া! জবাবে মা কিছুই বলল না। বৃন্দাকে এগিয়ে দিল। বৃন্দা একাই গলার জোরে সবাইকে হঠিয়ে দিয়েছিল।

গণি মিঞা মাঝে মাঝে পাখি বেচতে আসে। মা’র সঙ্গে তার একটা বন্দোবস্ত আছে। মা যা বলাবে সে তাই বলবে। কাজেই বৃন্দার ভয় ছিল না। তবু শীতলাবাবুদের পাখিটাকে ধরে রাখার একটা অন্য কারণও ছিল। কোন কালে যেন জেঠুর সঙ্গে জমি নিয়ে তাদের মামলা হয়। সেই রাগে জেঠুর তিনটে গোরুর একটাকে শীলাবাবু তার চাকরকে দিয়ে বিষ খাইয়ে মারে। গাভিন গাইটা সন্ধের মুখে বাড়ির উঠোনে দাপিয়ে মরল। গোরুর ডাক্তার এসে বলল, এ তো ক্লিয়ার পয়জনিং কেস। মা তবু ময়নাটাকে মারেনি। কেউ কেউ অবশ্য বলে যে, শীতলাবাবুদের ময়নাটা আসলে নিজে উড়ে আসেনি, নিতাই পাগলই সেটাকে চুরি করে আনে।

সত্যি মিথ্যে কে জানে!

তবে রামলাখন ব্যাটা এখন হাতজোড় করে ছোটমামার কাছে বোধহয় ক্ষমাই চাইছে। পুকুরপাড়ের ঝোপঝাড়ে গা ঢাকা দিয়ে বসে সজল সব দেখতে পাচ্ছিল। তার হাতের খাঁচায় বেজি।

হেলেদুলে নিতাই খ্যাপা এসে দাঁড়িয়ে হাত তুলে বলল, জয় কালী কলকাত্তাওয়ালি। নখদর্পণ জানিস ব্যাটা?

রামলাখন কী একটা তেজি জবাব দিল তার কথার।

নিতাই নেচে উঠে বলল, শাস্তর মন্তর জানলে তো মর্ম বুঝবি! পাঁচটা টাকা নিয়ে অমাবস্যায় আসিস, গুনে বলে দেব তোর বেজি কোথায় আছে।বলে খুব হাসতে থাকে বাহাদুরির হাসি।

ছোটমামা অবশ্য আর বাড়াবাড়ি করল না। বাগানের কাজ করার জন্য যেসব ফুরনের লোক হামেশা কাজ করে তাদের একজনকে ডেকে বলল, এটাকে লাইন পার করে দিয়ে আয় গে। এসে আমাকে খবর দিস।

রামলাখন বিদেয় হতেই সাবধানে চারপাশটা দেখে নিয়ে সজল এক দৌড়ে বেজির খাঁচা নিয়ে ভাবন-ঘরে পৌঁছে গেল। তালা খুলে ভিতরে ঢুকে সে দরজায় খিল তুলে দেয়।

ভাবন-ঘরের পিছন দিকে একটা দরদালানের মতো ঢাকা বারান্দা আছে। খুব বড় নয়, বরং খুবই ছোট। চারদিকে ঘষা কাচ বসানো জানালা। এ ঘরে কেউ কখনও আসে না। একটা অদ্ভুত ঢালু টেবিল আছে। এটাতে নাকি ড্রইং-বোর্ড রেখে জেঠু নানা আঁকজোঁক করত। ইঞ্জিনিয়ারদের ওরকম করতে হয়। এ ঘরে পুরু ধুলোর আস্তরণ পড়েছে, মাকড়সা জাল বুনেছে, ঘুলঘুলিতে চড়াই পাখি বাসা করেছে।

টেবিলের তলায় খাঁচাটা রেখে সজল ভাবতে লাগল, বেজিরা কী খায়?

ভেবে পেল না। তবে বাড়ি থেকে একটু বাদে গিয়ে কয়েকটা ছোলা, এক বাটি জল, কিছু চাল এনে খাঁচার মধ্যে ছড়িয়ে রেখে গেল। যেটা মন চায় খাবে। বিকেলে চিনেবাদাম কিনে এনে দেবে। মংলুকে বললে কাঁচা মাংসেরও ব্যবস্থা হবে। বাবা এলে জেনে নেবে বেজিরা কী খায়।

ভাবন-ঘরে ফের তালা দিয়ে বেরোচ্ছে, শুনতে পেল ঝোপড়ার দিক থেকে নিতাইখ্যাপা চেঁচাচ্ছে, জয় কালী, কালীশ্বরী, মহাবিদ্যা, প্রলয়ংকরী। মা। মা গো।

তাকে দেখেই নিতাই হাতছানি দিয়ে ডাকল।

মুখখানা নিপাট ভালমানুষের মতো করে এগোয় সজল।

কোথায় ছিলে সজলখোকা? কত কাণ্ড হয়ে গেল, দেখলে না?

কী কাণ্ড?

হি হি করে খুব হাসে নিতাই। তারপর গলা নামিয়ে চোখ ছোট করে খুব ষড়যন্ত্রের গলায় বলে, বাজারে পেয়ে ব্যাটা খুব ধরেছিল আমাকে। মা প্রলয়ংকরী এসে বাঁচায়।

কে ধরেছিল?

রামলাখন। ব্যাটা সাতদিনের মধ্যে মুখে রক্ত উঠে মরবে। বাণ মেরে দিয়েছি, কাজও শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু মায়ের কী লীলা বলো তো? আমাকে বাঁচাতে মা বেজিটা হাপিস করে দিল বটে, কিন্তু সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও শালাটাকে আর দেখতে পাচ্ছি না।

বেজি? কত বড় বেজি?

নিতাই চোখ কুঁচকে সজলের দিকে অনেকক্ষণ দেখে নিয়ে বলে, তোমার কাণ্ড নয় তো?

মাইরি না। চোখের দিব্যি।

আহা, বেজিটা তো তোমার জন্যই আনা। ব্যাটা দেহাতি কী মর্ম বুঝবে অবোলা জীবের?

পেলে আমাকে দিয়ে। আমার খুব বেজি পোষার শখ।

মুখটা একটু ম্লান হয় নিতাইখ্যাপার। আনমনে দূরের দিকে চেয়ে বলে, মা কত মায়াই না জানে। বেজিটা যে হাওয়া হয়ে গেল আর রূপ ধরল না। মেহনতটাই বৃথা।

তুমি বেজিটা চুরি করেছিলে নিতাইদা?

চুরি আবার কী? অবোলা জীবটাকে উদ্ধার করেছিলাম। তা মায়ের জীব মা নিজেই নিয়েছে। ভারী আশ্চর্য কাণ্ড। জলজ্যান্ত ঘরে রেখে গেলাম।

দুপুর পেরিয়ে গেল নিতাইদা, খাবে না?

আনমনে একটু হুঁ দিয়ে নিতাই মাটিতে একটা কাঠি দিয়ে আঁকিবুকি কাটতে থাকে।

সজল সরে আসে। বেজিটা কিছুদিন এখন লুকোনো থাক।

উঠোনের পুবধারে মস্ত নিমগাছের ঝিরঝিরে ছায়ায় ইজিচেয়ার পেতে বসে দীননাথ হোমিয়োপ্যাথ হরিপদ রায়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে একসময় বলেই ফেললেন, তোমার ওষুধ সত্যিই কথা কয় হে।

পড়ন্ত বিকেলের আলোয় হরিপদর মুখ একটু উজ্জ্বল হয়। মুখখানা এমনিতে শুকনো আর ভাঙা, রসকষ নেই, সর্বদাই চিন্তায় ভারাক্রান্ত। বলল, আগে তো বিশ্বাস করতেন না! রস

তোমার ওষুধের গুণও আছে, এ বাড়ির ভাল খাওয়াদাওয়া, সেবা যত্ন আছে। বউমার ব্যবস্থা সব খুব ভাল।

সে তো আছেই। কিন্তু খেলেই তো হবে না, হজম করবে কে?

সেও ঠিক। ছোট ছেলের কাছে যখন ছিলাম তখন মনে হত, বয়স বুঝি আশি-নব্বই কি শতেক পার হয়েছে। একটু ভীমরতিও যেন ধরেছিল। হাঁটতে চলতে পারতাম না নিজের জোরে।

আর এখন?

দেখছই তো, ওই ঘর থেকে একা এতদূর চলে এসেছি।

আস্তে আস্তে আরও পারবেন। আমি আপনাকে একদম ছোকরা বানিয়ে দেব।

দীননাথ হাসলেন। বেঁচে থাকতে একটা আলাদা স্বাদ পাচ্ছেন। বললেন, ওষুধ তো ভালই দাও, তবে আমার দাদুভাইয়ের কৃমি সারে না কেন?

সজলের কৃমি জন্মেও সারবে না। শুধু ওষুধ দিলে কী হবে? পথ্য কন্ট্রোল করবে কে? সারাদিন কুপথ্য করছে।

দীননাথ গম্ভীর মুখে খানিক ভেবে বললেন, আমার চার ছেলের মধ্যে বড় জন নেই, সেজো বিয়ে করবে কি না জানি না। ঘোটরও ছেলেপুলে হবে শুনছি, কিন্তু মেয়ে হলেই বা ঠেকায় কে? এখন পর্যন্ত বংশে বাতি দিতে ওই একমাত্র নাতি। তুমি খুব মন দিয়ে ওর চিকিৎসা করোত?

ওষুধ তো দিই। প্রায়ই খায় না, ভুলে যায়।

এখন থেকে আমি খেয়াল রাখব। আজকাল আর ততটা ভুলে যাই না।—বলে দীননাথ লাজুক মুখে হাসেন।

সজলের জন্য ভাববেন না। আমার চিকিৎসাতেই বড় হল। তবে মাঝে মাঝে অ্যালোপ্যাথিরও বিষ ঢুকেছে কিনা।

হরিপদ চলে যেতে দীননাথ গ্রীষ্মের বিকেলে এই নরম ছায়ায় বসে বসে সোমনাথের কথা ভাবতে লাগলেন। মেজো বউমা যত্ন করে বটে, এ বাড়ির পরিবেশও ভাল। তবু কেন যেন ছোট বউমার জন্য, ছোট ছেলের জন্য আর কলকাতার অন্ধকার সেই একতলা বাসাবাড়ির জন্য বড় মন কেমন করে। এখানে এসে অবধি শ্রীনাথের সঙ্গে ভাল করে দেখাই হয়নি। খুব পর মানুষের মতো। থাকে। ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছেন। কিন্তু চিন্তাশক্তি এখন আর তেমন জোরালো নয় বলে ভেবেও কিছু ঠিক করতে পারছেন না।

আজকাল ঘরে, বারান্দায়, উঠোনে টুকুস টুকুস করে হাঁটতে পারেন। আগে পারতেন না। মেজো বউমা অবশ্য বলে, হাঁটতে ঠিকই পারতেন, কেবল মনে জোর ছিল না। ভাবতেন, হাঁটতে গেলেই পড়ে যাব বুঝি। মেজো বউমার বুদ্ধি খুব সাফ। ঠিকই বুঝেছিল। একা বসে মাথায় দুশ্চিন্তা আসছিল বলে দীননাথ উঠে পড়লেন। বাচ্চা ছেলের যেমন নতুন হাটতে শিখে হাঁটার নেশায় পায়, তারও হয়েছে তেমনি।

বিকেলের দিকে বাড়িটা হাঁ-হাঁ করছে ফাঁকা। উঠোনটা জনমনিষ্যিহীন পড়ে আছে। ঘুরে ঘুরে হিসেবি চোখে দেখেন দীননাথ। ছোঢ় শয়তান বুলুটা মিছে কথা বলে না। মল্লি বেশ বড় সম্পত্তিই করেছিল। অনেকখানি জায়গা নিয়ে বাড়ি। কোনও কিছুরই অভাব নেই। উপচে পড়ছে। দেখে বুকের মধ্যে একটু ধাক্কা লাগে। তার আর-ছেলেরা কেউই তেমন কৃতী নয়। সকলেরই টানাটানি। ওরা যদি সবাই মিলে এই জায়গাটায় থাকতে পারত। ভেবে দীর্ঘশ্বাস পড়ে। হবে না। ওদের কারও সঙ্গে কারও মিল নেই।

উঠোনের পশ্চিমধারে এসে একটা ছাগলের ‘ম্যা’ শুনে দাঁড়ালেন দীননাথ। বাগানে ছাগল ঢোকেনি তো! পশ্চিমধারে একটা বাঁশের আগড়। সেটা ঠেলে উঁকি মারতেই দেখেন, একটা পুরুষ্ট ছাগল ঠ্যাং ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আর মংলু পেতলের মালসায় চড়াং চড়াং করে তার দুধ দুইছে।

ছাগলের দুধ কে খায় রে?

শুনে মংলু হাসে, আপনিই তো খান, আর কে খাবে?

ও বাবা, আমাকে বউমা রোজ ছাগলের দুধ দেয় বুঝি?

হ্যাঁ তো। ডাক্তার আপনাকে ছাগলের দুধ খেতে বলে গেছে না! মা ঠাকােন তাই ছাগলটা কিনে আনালেন।

দীননাথ হাঁ করে থাকেন। তাঁকে দুধ খাওয়ানোর জন্য বউমা ছাগল কিনেছে? এ যে ভাবা যায়। বলতে কী, এই বুড়ো বয়সে বেঁচে আছেন বলেই মাঝে মাঝে তার লজ্জা করে। যত্ন-আত্তি খাতিরের কথা মনেও আসে না। এ যে আজকাল নিজের মেয়েও করে না।

ছাগল দোয়ানো দেখতে দেখতে চোখে প্রায় জল এসে গেল। দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ দৃশ্যটা দেখলেন। মালসা ভরে উঠল দুধে, দীননাথের মনটাও ভরে গেল। দুনিয়াতে একটু আদর ছাড়া আর তাঁর কিছু চাওয়ার নেই।

ফিরে এসে বউমার ঘরের দাওয়ার সিঁড়িতে উঠে ডাকলেন, বউমা! ও মেজো বউমা!

ঘরে কেউ নেই। শ্রীনাথের তিন মেয়ের নাম ওদের ঠাকুমাই রেখে গেছেন রমলা, বিমলা আর কমলা। সে নাম অবশ্য আজ আর টিকে নেই। শুধু দীননাথই আজও ওদের এই নামে ডাকেন। রমলা এখানে থাকে না। তার এক মাসি তাকে দত্তক নিয়েছে। বিমলা আর কমলাকে বড় একটা দেখতে পান না দীননাথ। এখন দেখলে, মেজো বিমলা লাল একটা শাড়ি পরে খুব পাকা মেয়ের মতো সেজে এলোচুল খোপায় বাঁধতে বাঁধতে উঠোন পেরিয়ে কোথায় যাচ্ছে।

দীননাথ ডাকলেন, বিমলি।

কী দাদু?

কোথায় যাস?

কোথায় যাব? বাড়ির মধ্যেই।

তোর মা কোথায়?

মা বেরিয়েছে। কিছু লাগবে?

না, কী আর লাগবে।

তবে? কথা বলার লোক পাচ্ছি না বুঝি?

দীননাথ হেসে বলেন, তো তুই-ই আয় না, দুটো প্রাণের কথা বলি বসে বসে।

পাঠশালার মাঠে আমার বন্ধুরা বসে আছে যে।

তবে যা।

তুমি গিয়ে বাবার সঙ্গে কথা বলো না! বাবা ফিরেছে।

ফিরেছে? যাক।

বলে উঠলেন দীননাথ। লাঠিতে ভর দিয়ে বেশ ভালই হাঁটতে পারছেন। কাউকে না ধরে, কারও সাহায্য না নিয়ে পৌঁছে গেলেন ভাবন-ঘরে।

শ্রীনাথ একটু দূরের ছেলে। দীননাথ এমনিতেই ছেলেদের সমীহ করেন, শ্রীনাথকে আরও একটু। ছোট ছেলে ছাড়া আর কাউকে তুই-তোকারি করেন না। বাইরে দাঁড়িয়ে একটু গলা খাঁকারি দিয়ে সাবধানে ডাকলেন, শ্রীনাথ, আছে নাকি?

ভিতর থেকে গম্ভীর গলা এল, কে?

আমি দীননাথ।

শ্রীনাথ দরজায় এসে দাঁড়াল। খালি গা, পরনে একটা সবুজ লুঙ্গি। টকটক করছে ফর্সা রং। চুলগুলো এলোমেলো। চোখের নীচে একটু বসা ভাব, একটু কালচেও। ঠোঁট দুটো কেমন যেন ঢিলে হয়ে ফাঁক হয়ে আছে। শরীরের বাঁধুনি নেই। এক সময়ে খুবই সুপুরুষ ছিল শ্রীনাথ। এখনও আছে। বোধহয় এখন একটু বয়সের ছাপই পড়েছে চেহারায়।

শ্রীনাথ একটু অবাক এবং বিরক্ত হয়েছে। বলল, আপনি একা একা এতদূর এলেন কেন?

দীননাথ অপ্রতিভ হয়ে হাসলেন। বললেন, আজকাল একটু হাঁটতে-টাটতে পারি। বউমার কাছে এসে বেশ ভাল আছি। কত সেবা-যত্ন।

বলে বড় বড় চোখ করে ছেলের দিকে চাইলেন দীননাথ। কিন্তু শ্রীনাথ খুশি হয়েছে বলে মনে হল না, বরং বিরক্তিটা স্পষ্ট প্রকাশ পেল। বলল, তবু একা একা এতদূরে এসে ভাল করেননি।

দীননাথ ম্লান হয়ে বললেন, ভাবলাম অনেকদিন তোমার সঙ্গে দেখা হয় না। তুমি তো রাত করে ফেরো, আমি তখন ঘুমিয়ে পড়ি।

বিরক্ত শ্রীনাথ বলল, দেখা করার কী আছে?

তোমার শরীরটা কি ভাল নেই? আজ তাড়াতাড়ি ফিরলে যে।

না, শরীর ভালই আছে।

দীননাথ ঘরে ঢুকতে সাহস পেলেন না। অনেকটা হেঁটে এসে একটু কাহিল হয়ে পড়েছেন। লাঠিটা পাশে রেখে বড় একটা শ্বাস ছেড়ে ছেলের মন রাখার জন্য বললেন, অফিসে নাকি তোমার খুব নামডাক। খাটুনিও তাই বোধ হয় বেশি। নামডাক হলেই খাটুনি বাড়ে।

শ্রীনাথ ঠোঁট ফাঁক করে অসহায় বিরক্তি নিয়ে বাবার দিকে চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর বলে, চলুন আপনাকে রেখে আসি।

তোমাকে যেতে হবে না। আমি একাই পারব। একটু টা নিয়ে নিই।

অনিচ্ছের গলায় তখন শ্রীনাথ বলে, শানে বসছেন কেন? দাঁড়ান চেয়ার এনে দিই।

হাত তুলে দীননাথ বলেন, তার দরকার নেই। এই ভাল। বলছিলাম কি বউমার ব্যবস্থা তো খুবই সুন্দর, চারদিকে লক্ষ্মী শ্ৰী। একটু আগে বসে বসে ভাবছিলাম, এই জায়গায় তোমরা তিন ভাই যদি একসঙ্গে থাকতে পারতো।

শ্রীনাথ কথাটার জবাব দিল না। তবে অনেকটা দূরত্ব রেখে সেও বারান্দার শানে বসল উবু হয়ে।

দীননাথ আপন মনেই বললেন, এখানে হাঁস, মুরগি, গোরু, ছাগল, সবজি কত কী! অপর্যাপ্ত। বুটার কথা ভাবি। বড় কষ্টে আছে। সবাই মিলেমিশে থাকলে কারও তেমন কষ্ট থাকবে না।

শ্রীনাথ গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করে, বুলুর কষ্ট কিসের?

সংসারে বড় অভাব। আমি তো ওদের সংসারে কম দিন থেকে আসিনি।

অভাব হওয়ার তো কথা নয়। বুলু যা মাইনে পায় ওদের দু’জনের ভালভাবে চলবার কথা।

তবে চলে না কেন?

কঞ্জুসদের ওরকমই হয়। ওটা অভাব নয়, স্বভাব।

বুলু যে একটু কৃপণ তা দীননাথ জানেন। তবু কথাটা স্বীকার না করে মাথা নেড়ে বললেন, মিতব্যয়ী আর কী। তবে প্রয়োজন বুঝে খরচ করতে পিছছায় না।

শ্রীনাথ অন্যমনস্ক হয়ে দূরের দিকে চেয়ে ছিল। বলল, কষ্ট তো আমারও কিছু কম যায়নি একসময়ে। তখন বুলু ক’দিন খোঁজ করেছে?

দীননাথ আবার অপ্রতিভ হয়ে বললেন, ও খোঁজ করে কী করবে? ওর নিজেরই চলে না।

এ কথায় শ্রীনাথের মুখ বিকৃত হয়ে যায়। তীব্র বিরক্তির গলায় বলে, বুলুকে আপনি খুবই স্নেহ করেন, সেটা ভাল কথা। কিন্তু আপনার যে আরও দুটি ছেলে আছে সে কথাটা ভুলে যান কেন? এত একচোখোমি মোটেই ভাল নয়।

দীননাথ এ কথায় একেবারে বেহাল হয়ে গেলেন। খানিকক্ষণ চুপ করে বসে নিজের ঠোঁটে জিভ বুলিয়ে নিলেন। তারপর বললেন, কথাটা ঠিক তা নয়। বুলুর কাছেই ছিলাম তো, তোমরা কেউ খোঁজ নিতে না।

বাজে কথা। শ্রীনাথ ধমক দিয়ে বলে, আমরা সবসময়েই আপনার খোঁজ নিতাম, টাকাও পাঠানো হত।

সে সবই শুনেছি।

তবে বলছেন কেন?

বলে কিছুক্ষণ আক্রোশভরে দীননাথের দিকে চেয়ে রইল শ্রীনাথ। তারপর হঠাৎ তার চোখ উদাস হয়ে গেল। মুখটা লাল হয়ে উঠেছিল, আস্তে আস্তে বিবর্ণ হয়ে গেল। খুবই উদাস গলায় বলল, বুলু বা দীপু যদি এখানে এসে থাকতে চায় অনায়াসেই থাকতে পারে। আমি বলার কে? এ সম্পত্তি কার তা কি আপনি জানেন না?

কেন, মল্লিনাথের।

শ্রীনাথ মৃদু ম্লান হাসি হাসল। বলল, আপনার ভীমরতি ধরেছে। এ সম্পত্তি আপনার বউমার।

দীননাথ তাতে হটে গেলেন না। দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে বললেন, বউমার মানেই তো তোমার। স্ত্রীধনে স্বামীর পুরো অধিকার। তাছাড়া স্ত্রীলোকের আবার আলাদা সম্পত্তি হয় নাকি? আমি যদি একটা বাড়ি করতাম তবে তোমার মায়ের নামেই করতাম। সবাই আজকাল তাই করে।

শ্রীনাথ মাথা নেড়ে বলে, অন্যে কী করে তা দিয়ে আমার কী? আপনার বউমার সম্পত্তি আমি নিজের সম্পত্তি বলে মনে করি না।

দীননাথ একটু অবাক হয়ে বলেন, বউমা তো চমৎকার মেয়ে। আমার জন্য ছাগল পর্যন্ত কিনেছে। তোমার সঙ্গে তার বনিবনা হয় না কেন?

শ্রীনাথ বাবার দিকে অবাক হয়ে তাকাল। বলল, ছাগল কিনেছে?

শুধু তাই? দু’বেলা ডাক্তার আসছে। চমৎকার সব খাওয়াদাওয়া। আমার তো দশ বছর বয়স কমে গেছে।

শ্রীনাথ চুপ করে রইল।

দীননাথ বললেন, তুমি বরং বউমাকে একটু বলে দেখো। তুমি বললে বউমা দীপু আর বুলুকে এখানে আনতে অরাজি হবে না।

আপনার বউমা আমার কথায় চলেন না। আপনিই বলুন, তবে এটা জেনে রাখবেন, এ সম্পত্তিতে আমার অধিকার নেই। আমি অধিকার ফলাতেও চাই না।

বড় ভাইয়ের সম্পত্তিতে সকলের অধিকার আছে। মেয়েমানুষ যত ভালই হোক তাকে মাথায় উঠতে দিতে নেই।

বিরক্ত হয়ে শ্রীনাথ বলে, যা বোঝেন না তা নিয়ে কথা বলেন কেন? বউমা আপনার সেবা-যত্ন করছে, সে খুব ভাল কথা। আরামে থাকুন। খামোখা সংসারের পলিটিকসে মাথা দিতে যাবেন না। তা হলে আর বেশি দিন আরামে থাকতে হবে না। আপনার ভালর জন্যই বলছি। এখন আপনি যান, আমার কাজ আছে।

দীননাথ ম্লানমুখে উঠে পড়েন। তিন ছেলে এক জায়গায় থাকবে, তার এই স্বপ্নটা হয়তো কোনওদিন সত্য হবে না। ছেলেদের মধ্যে মিল নেই। তবু বউমাকে একবার বলে দেখবেন। বউমা বিবেচক।

 

গাছপালার ফাঁক-ফোকর দিয়ে ধীরে ধীরে দীননাথ চলে যাচ্ছেন, এই দৃশ্যটা খানিকক্ষণ দাওয়ায় বসে দেখল শ্রীনাথ। তারপর ঘরে এসে হেলানো চেয়ারটায় বসল। জীবনে কোথাও কোনও শান্তি নেই। মদ মেয়েমানুষ রেস খেলা কিছুতেই সে কোনও আনন্দ পায় না আজকাল। মনটা বিষাক্ত, বিরক্ত, ক্ষিপ্ত। মাথার মধ্যে পাগল-পাগল ভাব।

বহুক্ষণ চোখ বুজে ভিতরকার যন্ত্রণাটা অনুভব করে শ্রীনাথ। ভিতরে যেন একটা অর্থহীন পাগল কারখানা চলছে। বিপুল রোলার, পিনিয়ন শ্যাফট চলছে ঘুরছে শব্দ করছে, কিন্তু কিছুই তৈরি হচ্ছে না। একা হলেই নিজের ভিতরে এই পাগলা কারখানার কান্ড টের পায় সে। বহুকাল হল সে কোনও সৎ চিন্তা করে না, সৌন্দর্য উপভোগ করে না।

খুব তলিয়ে ভাবলে অবশ্য একটা কথা স্বীকার করতে হয়। এই যন্ত্রণাটাকে সে উপভোগ করে। এই বিষ থেকেই একটা নেশার আমেজ উঠে এসে তার মন আর মগজকে আচ্ছন্ন করে রাখে। একরকমের মৌতাত। তখন সে বাইরের পৃথিবীর কিছুই লক্ষ করে না, আপনমনে বিড় বিড় করে নানা কথা বলতে থাকে। কান পেতে শুনলে শোনে, বিড় বিড় করে সে যা বলে সেগুলো কুৎসিত অশ্লীল সব গালাগাল এবং আক্রোশের কথা। আর তার সমস্ত আক্রোশ ক্রমে ক্রমে জড়ো হয়েছে। এক জায়গায়। সেই জায়গাটার নাম তৃষা। তাই চোখ বুজলেই সে তৃষাকেই দেখতে পায়।

বাবা!–আচমকা ডাকে খুব চমকে উঠল সে।

কে রে?

আমি। আমি স্বপ্ন।–বলে স্বপ্নলেখা ঘরে আসে।

কত লম্বা হয়েছে স্বপ্ন। বহুকাল বাদে দেখল নাকি নিজের ছোট মেয়েটাকে! মুখের আদলটাও একটু বদলে গেছে। নিজের মুখের সুস্পষ্ট ছাপ মেয়ের মুখে দেখতে পায় শ্রীনাথ। এ মেয়ে দিনেকালে চিত্রার মতোই সুন্দর হবে।

মেয়েকে দেখে মনটা সামান্য নরম হল। গলার তেতো ভাব যতদূর সম্ভব কমিয়ে রেখে আস্তে করে জিজ্ঞেস করল, কী চাস?

স্বপ্না একটু ত্রস্ত। খুব ব্যস্ত জরুরি গলায় বলে, ভাইয়ের মাথা ফেটে গেছে। তোমার ওষুধের বাক্সটা নিয়ে একবার আসবে?

মাথা ফেটে গেছে? কীভাবে?–বলে হিম হয়ে থাকে শ্রীনাথ। রক্ত সে একদম সইতে পারে।

বেজি নিয়ে খেলা দেখাচ্ছিল পাঠশালার মাঠে। বেজিটা পালিয়ে যাচ্ছিল, ভাই তাড়া করতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে। ইটে মাথা লেগে কেটে গেছে।

তোর মা কোথায়?

মা বাড়ি নেই। ছোটমামাকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় গেছে সেই দুপুরবেলায়। ফিরতে রাত হবে। পিসেমশাইকে দেখতে যাবে বলে গেছে।

তৃষাকে ঘৃণা করলেও শ্রীনাথ জানে এসব অবস্থায় তৃষাই সবচেয়ে উপযুক্ত লোক। তার রক্ত সাপের মতো ঠান্ডা, কোনও বিপদে কখনও ঘাবড়ায় না।

আঁকুপাকু করে শ্রীনাথ উঠল বলল, খুব রক্ত পড়ছে নাকি?

খুব। ভেসে যাচ্ছে।

জ্ঞান ফিরেছে?

জ্ঞান ফিরবে কী? অজ্ঞান তো হয়নি। বরং হাসছে হি হি করে।

হাসছে?

ভাইকে তো চেনো না। গেছে বাঁদর একটা।

হাসছে শুনে খানিকটা ধাতস্থ হল শ্রীনাথ। একটা ফার্স্ট এইড বক্স বহুকাল ধরে এই ঘরে রাখা আছে। দাদা মল্লিনাথই কিনে রেখেছিল। ডেসকের লকার থেকে সেটা বের করে খুলে দেখল, ব্যান্ডেজ, কাঁচি থেকে ওষুধপত্র সব সাজিয়ে রাখা। দেখলেই কেমন লাগে। কেবল রক্ত, ক্ষত, যন্ত্রণার কাতর শব্দ মনে পড়ে। এইজন্যই না সে প্রীতমকে এতকাল দেখতে যায়নি!

বাক্সটা নিয়ে উঠল শ্রীনাথ, চল দেখি।

মায়াবশে স্বপ্না বলে, তোমাকে যেতে হবে না। বাক্সটা দাও।

পারবি?

ওমা, আমি তো ফাস্ট এইড জানি। মা’র ঘর তালাবন্ধ, নইলে ওঘরেও ফার্স্ট এইড বক্স ছিল।–বলে স্বপ্না বাক্স নিয়ে চলে গেল।

শ্রীনাথ বসে পড়ে। কিন্তু নিজের ভিতর এক অস্থিরতা বোধ করতে থাকে। একবার যাওয়া দরকার। তবে একটু পরে। আগে ওরা রক্ত-টক্ত মুছে ব্যান্ডেজটা বেঁধে ফেলুক।

ভিতরের কারখানাটা আবার ভীমবেগে চলতে শুরু করে। শ্রীনাথ বিড় বিড় করতে থাকে, মাগি। হারামজাদি! শুয়োরের বাচ্চা!

সন্ধে হয়ে আসতে শ্রীনাথ উঠে পড়ল। জামাকাপড় পরে ভিতরবাড়িতে এসে সজলকে দেখল। ব্যান্ডেজ বাঁধা মাথা নিয়ে শুয়ে শুয়েই মেকানো নিয়ে খেলছে। দেখেই বলল, বাবা দেখো, ঠিক হাওড়ার ব্রিজ হয়নি?

শ্রীনাথ আড়চোখে লোহার ছোট ছোট পাতে নাটবল্ট দিয়ে এঁটে তৈরি করা ব্রিজটা দেখে বলল, অনেকটা।

এই সেটটা দিয়ে ক্যান্টিলিভার ব্রিজ হয় না। তুমি আমাকে একটা বড় মেকানো কিনে দেবে?

দেওয়া যাবে।

আজই।

আজ কী করে হবে? ওসব তো কলকাতা ছাড়া পাওয়া যায় না।

তুমি কলকাতায় যাচ্ছো তো?

না। এখানেই একটু ঘুরে আসতে যাচ্ছি।

আমি যাব?

আজ নয়। সদ্য একটা ব্যথা পেয়েছ।

ব্যথা লাগেনি।

তোমার এ টি এস নেওয়া আছে?

হ্যাঁ।

তবু আজ আর না বেরোলেই ভাল।

তা হলে কী আনবে?

কী চাও?

কিছুমিছু এনো।–বলে সজল হি হি করে হাসে।

হাসছ কেন?

কিছুমিছু গল্পটা জানো না বাবা?

না।

নিতাইদা জানে। সওদাগর বাণিজ্যে যাচ্ছিল, সবাই সবকিছু আনতে বলল, শুধু ছোটবউ বলল, কিছুমিছু এনো।

সজল গল্প শুরু করছে দেখে শ্রীনাথ তাড়াতাড়ি বলে, গল্প পরে শুনব বাবা। তুমি এখন ঘুমোও।

সন্ধেবেলা কি ঘুম আসে? এখুনি মাস্টারমশাই আসবে যে।

আজ পড়বে?

পড়ব। আমার কিছু হয়নি।

চিন্তান্বিত মুখে শ্রীনাথ ছেলের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে। তারপর বলে, তা হলে পড়ো। উঠে পড়ি বাবা?

উঠবে?–বলে আবার ভাবে শ্রীনাথ।

তুমি দিদিদের ডেকে বলে দাও যে, আমাকে ওঠার পারমিশন দিয়েছ। নইলে ওরা আমাকে জোর করে শুইয়ে রাখবে।

শ্রীনাথ ষড়যন্ত্রটা বুঝতে পারল। তবু ঘাড় নেড়ে বলল, ঠিক আছে।

তা হলে উঠি?

শরীর ভাল লাগলে ওঠো।

সজল উঠেই পড়েছিল। এখন এক লাফে বিছানা থেকে নেমে পড়ল। হো হো হো’ বলে দু’হাত ওপরে তুলে চেঁচাতে চেঁচাতে ঘর থেকে বের হয়ে গেল এক ছুটে।

শ্রীনাথ বেরিয়ে এসে দেখে স্বপ্না কোথা থেকে এসে সজলকে পাকড়াও করে ধমকাচ্ছে, শিগগির গিয়ে শুয়ে থাক। নইলে মা এলে বলে দেব।

শ্রীনাথ গম্ভীর গলায় বলল, ওর তেমন কিছু হয়নি। ছেড়ে দে। বসে বইটই পড়ুক, মন ভাল থাকবে।

শ্রীনাথ বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল। হাতে টর্চ। রামলাখনের ঘরে ফুর্তির আসরটা কী রকম তা একবার দেখে আসবে আজ। খুবই নোংরা অস্বাস্থ্যকর নিশ্চয়ই। তবে শ্রীনাথের আজকাল বাছাবাছির মন নেই। তা ছাড়া এখানকার বদমাশ শয়তানগুলোর সঙ্গে একটু মেলেমেশা করা বড় দরকার।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *