২৭ জুলাই, মঙ্গলবার ১৯৭১
আজ ইমনের জন্মদিন। বেচারা এখনো হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায় নি। কি যে দুর্দিন যাচ্ছে আনোয়ারের পরিবারের ওপর দিয়ে।
সকালে ডলি আপাকে সঙ্গে নিয়ে ইমনের জন্য পুতুল কিনলাম। আরো দুচারটে টুকিটাকি উপহারও কেনা হলো।
সাড়ে তিনটেয় ডলি আপা এসে আমায় তুলে নিয়ে হাসপাতালে গেলেন।
সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে এককাপ চা নিয়ে জুত করে বসতেই দাদাভাই আর মোর্তুজা ভাই এলেন। এম.জি. মোর্তুজা এসৃসো তেল কোম্পানির সিনিয়র এক্সকিউটিভ শরীফের বন্ধু। তার বড় ভাই এম.জি, মোস্তফা ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ম্যানেজার মোর্তুজার সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও দাদাভাই হয়ে গেছেন। সপ্তাহে কমপক্ষে চারদিন আমরা একে অন্যের বাড়িতে যাওয়া-আসা করি।
ঢুকেই দাদাভাই বলে উঠলেন, সাতটা তো বেজে গেছে। শুধু চা নিয়ে বসেছেন?
আমি হকচকিয়ে তাকাতেই দাদাভাই হেসে ফেললেন, রেডিও কই? স্বাধীন বাংলা শুরু হয়ে গেছে না?
স্বাধীন বাংলা বেতারের অনুষ্ঠান আমরা সবাই বেশ আগ্রহ নিয়ে শুনি বটে, তবে অন্য কাজের ধকলে মাঝে-মধ্যে কিছুক্ষণের জন্য বাদ পড়ে যায়। দাদাভাই আর শরীফের বেলায় তা হবার যো নেই। জামীকে রেডিও আনতে বলে বললাম, এত তাড়া কিসের? এইটাই তো আবার সকালে রিপিট হবে।
সকালে ম্যাডাম, আমরা চাকরি করি। আপনাদের মতো ঘরে বসে আরাম করার কপাল নিয়ে জন্মেছি নাকি?
মোর্তুজা জিগ্যেস করলেন, ভাবী ইমাম ভাই কই?
উনি একটা কাজে মার বাসায় গেছেন। এক্ষুণি এসে—
কথা শেষ হবার আগেই বেল বাজল। শরীফ এসে গেছে। রেডিওটা ডাইনিং টেবিলে রেখে আমরা চারধারে ঘিরে বসলাম।