1 of 2

২৭. কাফালা (যামিন) ও হাওয়ালা (দায় সমর্পণ)

অধ্যায় : ২৭ কাফালা (যামিন) ও হাওয়ালা (দায় সমর্পণ)

ধারা-৬৭৩

সংজ্ঞা (ক) কোন দাবির ক্ষেত্রে এক ব্যক্তির দায়বদ্ধতার সহিত অপর ব্যক্তির দায়বদ্ধতা সংযুক্ত করাকে কাফালা” বলে।

(খ) যে ব্যক্তি দায়িত্ব গ্রহণ করে তাহাকে কাফিল (Li) বা যামিনদার ( L.)বলে।

(গ) যে ব্যক্তির পক্ষে দায়িত্ব গ্রহণ করা হয় তাহাকে মাকফুল আনহু (4c JiKo) বা মাদমূন আনহু ( 4__) বলে।

(ঘ) যে ব্যক্তির জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করা হয় তাহাকে মাকফুল লাহু (4 JiK০)বা মাদমূন লাহু (U 54 ০ বলে।

(ঙ) যে জিনিসের দায়িত্ব গ্রহণ করা হয় তাহাকে মাকফুল বিহ (4_ J45Ko বা মাদমূন বিহ (4— ৬৭-৭০) বলে।

বিশ্লেষণ

কাফালা (

as) শব্দের আভিধানিক অর্থ “মিলাননা” বা “সংযুক্ত করা”। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে ও ২; 13 <3 “যাকারিয়া তাহাকে নিজের সহিত মিলাইল বা যোগ করিল” (সূরা আল ইমরান : ৩৭)। পারিভাষিক

অর্থে কোন বিষয়ের দায়িত্ব গ্রহণ বা জামিন হওয়া (to become surety)

৩৯২

বুঝায়। অর্থাৎ এক ব্যক্তির বাধ্যতামূলক দায়িত্বের সহিত অপর ব্যক্তির যুক্ত হওয়া। যেমন যায়েদ আমরের পক্ষ হইতে খালিদের জন্য এক হাজার টাকার যামিন হইল।

ধারা-৬৭৪

কাফালার শ্রেণীবিভাগ (ক) কোন ব্যক্তির সত্তার অনুকূলে যামিন হওয়াকে “কাফালা বিন” নাফস বা ব্যক্তির যামিন (wiJL < ) বলে।

(খ) কোন জিনিস পরিশোধের যামিন হওয়াকে “কাফালা বিল-মাল” বা মালের যামিন (JUL AJS বলে।

(গ) কোন মাল সমর্পণের জন্য যামিন হওয়াকে “কাফালা বিত-তাসলীম” বা সমর্পণের যামিন (LL < বলে।

(ঘ) বিক্রেতার সত্তার অনুকুলে অথবা বিক্রীত মাল অর্পণের এবং উহার মূল্য পরিশোধের জন্য যামিন হওয়াকে ‘কাফালা বিদ-দিরক”

(4,JL < বলে।

(ঙ) যামিন হওয়ার বিষয়টি কোন শর্তাধীন বা ভবিষ্যত নির্ভর না হইলে তাহাকে “কাফালা আল-মুনজিয়া” (১১ <IT)।

বিশ্লেষণ

‘কাফালা বিন-নাফস অর্থাৎ কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির জামিন হইলে যে যাহাং যামিন হইয়াছে তাহাকে হাযির করা তাহার বাধ্যতামূলক কর্তব্য হইয়া দাঁড়ায়। এভাবে এক ব্যক্তির অপর ব্যক্তির অনুকূলে যামিন হওয়া বৈধ। মহানবী (স) বলেন,,, * “যামিনদার (সেই জিনিসের) যিম্মাদার (যাহার (যাহার যিম্মাদারি সে গ্রহণ করিয়াছে)”।

কাফীল যে ব্যক্তির যামিন হইয়াছে (অর্থাৎ মাকফুল আনহ) তাহার নাম-ঠিকানা মাকফুল লাহকে জানাইয়া দেওয়া কাফীলের কর্তব্য। মাকফুল আনহু আদালতে হাযির হইতে অথবা পাওনা পরিশোধ করিতে অস্বীকার করিলে কাফীল তাহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ বিভাগের বা বিচারকের শরণাপন্ন হইবে।

৩৯৩

ধারা—৬৭৫

কাফালার রুকন (উপাদান) (ক) কাফীলের প্রস্তাব প্রদানের দ্বারা কাফালা চুক্তি সম্পন্ন হয় এবং তাহা আইনত বলবৎযোগ্য হয়;

(খ) মাকফুল লাহু কাফীলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করিতে পারে, প্রত্যাখ্যান না করিলে চুক্তি বলবৎ থাকিবে;

(গ) কাফীল মাকফুল লাহুর অনুপস্থিতিতে প্রস্তাব প্রদান করিলে এবং মাকফুল লাহু প্রস্তাব সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পূর্বে মারা গেলে কাফীলের যিম্মাদারী বহাল থাকিবে;

(ঘ) সাধারণ অথবা প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী যিম্মাদারী গ্রহণের ভাব প্রকাশক যে কোন বাক্য দ্বারা প্রস্তাব প্রদান করা যায়;

(ঙ) শর্তযুক্ত প্রতিজ্ঞা দ্বারাও প্রস্তাব প্রদান করা যায়; ‘ (চ) নির্দিষ্ট কালের জন্যও যামিন হওয়ার প্রস্তাব করিলে তাহা উদ্ধৃত সময়কাল পর্যন্ত বহাল থাকিবে;

(ছ) তাৎক্ষণিক অথবা বিলম্বে মূল্য পরিশোেধ বা মাল হস্তান্তর করার জন্যও যামিন হওয়া যায়;

(জ) কাফীলের জন্যও কাফীল হওয়া বৈধ; (ঝ) একই বিষয়ের জন্য একাধিক জনের কাফীল হওয়াও বৈধ।

বিশ্লেষণ

কাফালা চুক্তি অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য কাফীল অর্থাৎ দায়িত্ব গ্রহণকারী ব্যক্তির প্রস্তাব প্রদানই যথেষ্ট, মাকফুল লাহুর সম্মতি প্রদান জরুরী নহে, যদিও সে সম্মতি প্রদান করিতে বা কাফীলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করিতে পারে। অবশ্য ইমাম আবু হানীফা ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে চুক্তি অনুষ্ঠানের জন্য মাকফুল লাহর সম্মতি প্রদানও জরুরী, তাহা মানবসত্তার যামিন হউক অথবা মালের যামিন। ইমাম আবু ইউসুফ (র)-ও প্রথমে এই মত পোষণ করিতেন। (আল-মুহীত)। তাহার মতে মাকফুল লাহুর সম্মতি প্রকাশ করা শর্ত নহে এবং ইহাই গ্রহণযোগ্য মত (আল-কাফী)। তবে কোন কোন ফকীহ বলিয়াছেন যে,

৩৯৪

আবু ইউসুফের বক্তব্যের অর্থ এই যে, কাফীলের প্রস্তাব মাকফুল লাহুর সম্মতির উপর মওকুফ থাকিবে।

যদি কোন ব্যক্তি বলে, ‘আমি যামিন হইলাম’, ‘আমি যিম্মাদারী গ্রহণ করিলাম’, ‘আমি প্রদান করিতে বাধ্য থাকিব’, তবে এইরূপ শব্দের দ্বারা যামিন হওয়া বুঝাইবে। প্রতিজ্ঞা করিয়াও যামিন হওয়া যায়। যেমন কোন ব্যক্তি বলিল, ‘অমুক ব্যক্তির নিকট তুমি যাহা পাইবে তাহা সে তোমাকে প্রদান না করিলে আমি তাহা আদায় করিয়া তোমাকে প্রদান করার প্রতিজ্ঞা করিতেছি। এই অবস্থায় পাওনাদার যামিনদারের নিকট তাহার পাওনা দাবি করিতে পারিবে। একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বা সাময়িক কালের জন্যও যামিন হওয়া যায়। যেমন কোন ব্যক্তি বলিল, “আমি আজ হইতে তিন মাসের জন্য যামিন হইলাম।” এই ক্ষেত্রে সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটিবে। অনির্দিষ্ট সময়সীমার জন্যও যামিন হওয়া যায়।

ধারা-৬৭৬

কাফালার শর্তাবলী: (ক) কাফালার শর্তাবলী চারি শ্রেণীতে বিভক্ত—(১) কাফীলের সহিত সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী;

(২) মাকফুল আনহুর (আসীল) সহিত সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী; (৩) মাকফুল লাহুর সহিত সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী এবং (৪) মাকফুল বিহির সহিত সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী।

(খ) কাফীলের সহিত সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী নিম্নরূপ —(১) কাফীলকে বালেগ হইতে হইবে;

(২) কাফীলকে বুদ্ধিমান হইতে হইবে; (৩) কাফীলের মাকফুল বিহি সোপর্দ করার ক্ষমতা থাকিতে হইবে।

(গ) মাকফুল আনহুর সহিত সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী নিম্নরূপ—(১) মাকফুল আনহুকে স্বয়ং অথবা তাহার প্রতিনিধিকে মাকফুল বিহি কাফীলের নিকট সোপর্দ করিতে সক্ষম হইতে হইবে;

(২) মাকফুশ আনহুকে সুপরিচিত হইতে হইবে।

!jl•• হলামী আইন

(গ) মাকফুল লাহুর সহিত সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী নিম্নরূপ—(১) মাকফুল লাকে সুনির্দিষ্ট হইতে হইবে;

(২) মাকফুল লাহুকে বুদ্ধিমান হইতে হইবে। (৩) মাকফুল বিহির সহিত সংশ্লিষ্ট শর্তাবলী নিম্নরূপ —(১) মাকফুল শাহ মানবসত্তা হইলে তাহাকে সুনির্দিষ্ট হইতে হইবে;

(২) মাকফুল বিহি কাফীলের যিম্মায় যামানত হিসাবে থাকিতে হইবে; (৩) মাকফুল বিহি ঋণ হইলে তাহা সঠিক ঋণ হইতে হইবে।

বিশ্লেষণ

কাফালা চুক্তি যথার্থ হওয়ার জন্য কাফীল অর্থাৎ যে ব্যক্তি যামিন হয় তাহাকে বালেগ ও জ্ঞানবুদ্ধি সম্পন্ন হইতে হইবে। অতএব নাবালেগ ও পাগল কাফীল হইতে পারে না (বাহরুর রাইক)। কোন ব্যক্তি বালেগ হওয়ার পর যদি বলে যে, সে নাবালেগ অবস্থায় কাফীল হইয়াছিল তবে তাহাকে এজন্য দায়ী করা যাইবে না। কারণ সে বাতিল কাফালার স্বীকারোক্তি করিয়াছে অর্থাৎ সে নাবালেগ

অবস্থায় কাফীল হইয়া থাকিলে তাহা ছিল আইনত বাতিল।

মাকফুল আনহু (আসীল) অর্থাৎ যাহার দায়দায়িত্ব গ্রহণ করা হইয়াছে তাহার বা তাহার প্রতিনিধির কাফীলের নিকট দায়বদ্ধ জিনিস সোপর্দ করার সামর্থ্য থাকিতে হইবে। আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হইয়াছে এমন ব্যক্তির মৃত্যুর পর কেহ তাহার দেনার কাফীল হইলে তাহা ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে শুদ্ধ হইবে, কিন্তু ইমাম আবু হানীফা (র)-র মতে শুদ্ধ হইবে না (বাদাইউস সানাই)। এই শেষোক্ত মত যথার্থ বলিয়া গ্রহণ করা হইয়াছে। তবে দেউলিয়া ব্যক্তির কিছু পরিত্যক্ত সম্পদ থাকিলে সেই পরিমাণের উপর কাফীল, হওয়া বৈধ হইবে (মুহীত)

মাকফুল আনহুকে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি হইতে হইবে। এক ব্যক্তি যদি অপর ব্যক্তিকে বলে, তুমি কোন ব্যক্তির নিকট যাহা বিক্রয় করিবে আমি তোমার জন্য তাহার পক্ষে কাফীল, তবে ইহা বৈধ হইবে না। কিন্তু সে যদি এভাবে বলে যে, তুমি অমুক ব্যক্তির (নাম-ঠিকানা উল্লেখপূর্বক) নিকট যাহা বিক্রয় করিবে আমি তোমার জন্য তাহার পক্ষে কাফীল, তবে ইহা বৈধ হইবে (মুহীত, যাখীরা)।

৩৯৬

মাকফুল আনহুর বালেগ ও বােধশক্তি সম্পন্ন হওয়া শর্ত নহে (বাহরুর রাইক)। অতএব কোন ব্যক্তি যদি নাবালেগ অথবা পাগলের নিকট কিছু পাইবে বলিয়া দাবি করে এবং অপর ব্যক্তি ঐ নাবালেগ বা পাগলের অভিভাবকের সম্মতি ছাড়াই তাহাদের সত্তার বা তাহাদের ঋণের কাফীল হয়, তবে তাহা বৈধ হইবে (মুহীত)।

মাকফুল লাহু অর্থাৎ পাওনাদার বা দাবিদারকেও সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি হইতে হইবে (বাদাই)। অতএব কোন ব্যক্তি যদি বলে যে, অমুক ব্যক্তির নিকট এই দুই ব্যক্তির যে পাওনা রহিয়াছে আমি তাহাদের একজনের পাওনার কাফীল হইলাম, তবে ইহা বাতিল গণ্য হইবে। কারণ সে ঐ দুই ব্যক্তির মধ্যে কাহার পাওনার কাফীল হইয়াছে তাহা সুনির্দিষ্ট নহে (যাখীরা)। অবশ্য নির্দিষ্ট কয়েক ব্যক্তিকে দেখাইয়া কোন ব্যক্তি যদি অপর ব্যক্তিকে বলে যে, তাহাদের মধ্যে যাহার নিকটই তুমি মাল বিক্রয় করিবে আমি তাহার কাফীল হইব, তবে ইহা বৈধ হইবে ( খিনাতুল মুফতিঈন)।

ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে, মাকফুল লাহুকে বালেগ ও বােধশক্তি সম্পন্ন হইতে হইবে। অতএব নাবালেগ অথবা পাগল ব্যক্তি কাফীলের প্রস্তাবে সম্মতি প্রকাশ করিলে তাহা শুদ্ধ হইবে না।

মাকফুল বিহি অর্থাৎ ‘মাল’ মাকফুল আনহুর (আসীলের দায়িত্বে যামানত হিসাবে গণ্য হইবে এবং তাহা কাফীলের নিকট সোপর্দ করিতে তাহাকে আইনত বাধ্য করা যাইবে (যাখীরা)। অতএব বিক্রীত মাল, ঋণ, যামানতী জিনিস, যেমন অপহরণকৃত জিনিসের বিনিময়, মোহর বাবদ প্রাপ্য, খােলার বিনিয়ম, কাতলে আম্‌দ-এর দিয়াত, ফাসিদ ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে হস্তান্তরিত মালের কাফীল হওয়া বৈধ। পছন্দ হইলে ক্রয় করিবে এই শর্তে বিক্রেতার নিকট হইতে মাল গ্রহণ করিলে এবং তাহার মূল্য নির্ধারণ করা হইয়া থাকিলে তাহার কাফীল হওয়া বৈধ্য, মূল্য নির্ধারণ করা না হইলে উহা আমানত হিসাবে গণ্য হইবে এবং তাহার কাফীল হওয়া বৈধ নহে (নাহরুল ফাইক)। আমানত যেমন ওদীআ ( 51), মুদারাবার মাল ইত্যাদির কাফীল হওয়া বৈধ নহে। কারণ উহা যামানত হিসাবে গণ্য নহে (যাখীরা)। অনুরূপভাবে বন্ধক (A), আরিয়া। (, ), ইজারা (১২) ইত্যাদির কাফীল হওয়া বৈধ নহে কাফী)।

‘:14 হলামী আইন

৩৯৭

ধারা—৬৭৭

ব্যক্তির কাফীল হওয়া (ক) যামিনদার (কাফীল) বিবাদী (মাকফুল বিহি)-কে চুক্তির শর্ত মাবেক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাদীর (মাকফুল লাহুর) নিকট উপস্থিত করতে বাধ্য, অন্যথায় তাহাকে হাযির করিতে যামিনদারের উপর চাপ সৃষ্টি

করা যাইবে।

(খ) বিবাদী স্বেচ্ছায় হাযির না হইলে যামিনদার তাহাকে জোরপূর্বক oারি করিবে এবং প্রয়োজনবােধে আদালতের সহায়তা গ্রহণ করিবে।

(গ) যামিনদার বিবাদীকে হাযির করিতে অস্বীকার করিলে আদালত ‘তাহাকে কয়েদ করিতে পারে।

(ঘ) বিবাদী আত্মগোপন করিলে আদালত যামিনদারকে অবকাশ দান করিবে; অবকাশ কালের মধ্যে বিবাদীকে হাযির করিতে না পারিলে গামিনদার কয়েদযোগ্য হইবে।

(ঙ) বিবাদী মারা গেলে যামিনদার দায়মুক্ত হইয়া যাইবে।

ধারা-৬৭৮

মালের যামিন (ক) যামিনদার যে মালের যামিন হইয়াছে সে তাহা প্রদান করিতে বাধ্য। (খ) দেনাদার ও যামিনদার উভয়ের নিকট মাল দাবি করিবার পাওনাদারের এখতিয়ার রহিয়াছে এবং তাহাদের একজনের নিকট দাবি করার কারণে অপরজনের নিকট তাহার দাবি করার এখতিয়ার বাতিল হইবে না।

(গ) একজন যামিনদারের অনুকূলে অপরজন যামিন হইলে পাওনাদার তাহাদের মধ্যে যাহার নিকট ইচ্ছা মালের দাবি করিতে পারিবে।

(ঘ) একই ঋণের দেনাদারের সংখ্যা একাধিক হইলে এবং তাহাদের একে অপরের যামিন হইলে তাহাদের প্রত্যেকে পাওনার পূর্ণ অংশ পরিশোধের জন্য দায়ী থাকিবে।

(ঙ) একই পাওনার জন্য একাধিক ব্যক্তি একের পর এক যামিন হইলে প্রত্যেক ব্যক্তি সম্পূর্ণ পাওনার জন্য দায়ী থাকিবে।

৩৯৮

(চ) একই পাওনার জন্য একাধিক ব্যক্তি একত্রে যামিন হইলে তাহারা তাহাদের সংখ্যানুপাতে আংশিক পাওনার জন্য দায়ী হইবে।

(ছ) একই পাওনার জন্য একাধিক ব্যক্তি পরস্পরের যামিন হইলে তাহাদের প্রত্যেকে সম্পূর্ণ পাওনার জন্য দায়ী হইবে।

(জ) ঋণগ্রস্তকে ঋণ হইতে মুক্ত করিয়া দেওয়ার শর্ত থাকিলে ঐ যামিনদারের দায় হাওয়ালা বলিয়া গণ্য হইবে।

(ঝ) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি ঋণ হাওয়ালা করিয়াও দায়বদ্ধ থাকিলে উক্ত হাওয়ালা কাফালা হিসাবে গণ্য হইবে। ( () কোন আমানতদার আমানতের মাল দ্বারা আমানতকারীর ঋণ পরিশোধের যামিন হইলে সে তাহা দ্বারা ঋণ পরিশোধ করিতে বাধ্য, আমানত ধ্বংস বা লুপ্ত হইয়া গেলে সে দায়মুক্ত হইয়া যাইবে; কিন্তু আমানত আমানতকারীর নিকট ফেরত দিলে দায়মুক্ত হইবে না।

(ট) কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট সময়ে হাযির করার এবং তাহার ঋণের যামিন হইলে এই অবস্থায়-(১) সে তাহাকে নির্দিষ্ট সময়ে হাযির করিতে না পারিলে উক্ত ঋণ পরিশোধের জন্য বাধ্য থাকিবে;

(২) যামিনদার মারা গেলে এবং তাহার ওয়ারিসগণ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হাযির করিলে বা সে নিজে হাযির হইলে ঋণের জন্য যামিনদারের উপর কিছু বর্তাইবে না;

(৩) যামিনদারের ওয়ারিসগণ তাহাকে নির্দিষ্ট সময়ে হাযির না করিলে বা সে নিজে হাযির না হইলে উক্ত ঋণ যামিনদারের পরিত্যক্ত সম্পত্তি দ্বারা পরিশোধ বাধ্যকর হইবে;

(৪) যামিনদার তাহাকে নির্দিষ্ট সময়ে হাযির করিলে এবং ঋণদাতা আত্মগোপন করিলে বা অনুপস্থিত থাকিলে সে (যামিনদার) আদালতে তাহার পরিবর্তে একজন প্রতিনিধি নিয়োগের আবেদন করিবে এবং তাহাকে প্রতিনিধির নিকট সমর্পণ করিবে।

(ঠ) শর্তহীন কাফালার ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা তৎক্ষণাৎ ) অথবা বিলম্বে (১৯৫০) ঋণ পরিশোধে বাধ্য থাকিলে যামিনদারও পর্যায়ক্রমে তাহা তৎক্ষণাৎ অথবা বিলম্বে পরিশোধের জন্য দায়ী থাকিবে।

(ড) শর্তযুক্ত কাফালার ক্ষেত্রে যামিনদার তদনুযায়ী দায়ী হইবে।

৩৯৯

(ঢ) পাওনাদার দেনাদারকে বিলম্বে ঋণ পরিশোধের অবকাশ দিলে তাহা যামিনদার অথবা যামিনদারের যামিনদারের বেলায়ও প্রযোজ্য হইবে; প্রথম যামিনদারকে বিলম্বে ঋণ পরিশোধের অবকাশ দিলে তাহা দ্বিতীয় যামিনদারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হইবে; কিন্তু তাহা দেনাদারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না।

(ণ) দেনাদার ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত সময় আসার পূর্বে বিদেশে যাইতে চাহিলে এবং পাওনাদার আদালতের নিকট যামিনদার নিয়োগের আবেদন করিলে দেনাদার তাহার অনুকূলে যামিন দিতে বাধ্য।

ধারা-৬৭৯

মালের যামিনদারের দায়মুক্তি (ক) পাওনাদারের মৃত্যুর পর দেনাদার তাহার একমাত্র ওয়ারিস হইলে যামিনদার দায়মুক্ত হইয়া যাইবে; কিন্তু দেনাদার ছাড়াও পাওনাদারের আরও ওয়ারিস থাকিলে যামিনদার কেবল দেনাদারের অংশের পরিমাণ দায়মুক্ত হইবে এবং অন্যদের কাছে দায়বদ্ধ থাকিবে।

(খ) দেনাদার অথবা যামিনদার পাওনাদারের সহিত আংশিক ঋণ পরিশোধের সমঝোতা (সুলহ) করিলে এবং তাহাতে তাহাদের উভয়ের অথবা দেনাদারের দায়মুক্ত হওয়ার শর্ত করিলে অথবা অনুরূপ কোন শর্ত না করিলেও উভয়ে দায়মুক্ত হইয়া যাইবে; কিন্তু শুধু যামিনদারের দায়মুক্তির শর্ত থাকিলে সে-ই দায়মুক্ত হইবে এবং পাওনাদার ইচ্ছা করিলে দেনাদারের নিকট হইতে সম্পূর্ণ পাওনা আদায় করিতে পারে, অথবা সমঝোতার পরিমাণ অর্থ যামিনদারের নিকট হইতে এবং অবশিষ্ট পাওনা দেনাদারের নিকট হইতে আদায় করিতে পারে।

(গ) যামিনদার পাওনাদারকে তাহার পাওনা নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির নিকট হইতে বুঝিয়া লইতে বলিলে এবং তাহাতে উভয়ে (পাওনাদার ও তৃতীয় ব্যক্তি) সম্মত হইলে দেনাদার ও যামিনদার উভয়ে দায়মুক্ত হইয়া যাইবে।

(ঘ) কোন ব্যক্তি কোন মাল সমর্পণের জন্য যামিন হওয়ার পর মারা গেলে উক্ত মাল তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তি হইতে পরিশোধযোগ্য হইবে।

৪০০

(ঙ) কোন ব্যক্তি বিক্রীত মালের মূল্য পরিশোধের যামিন হইলে এবং ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি রদ (ফাসখ) হইয়া গেলে, অথবা কোন ব্যক্তি ক্রীত মাল বৈধ সূত্রে দখল করিয়া নিলে, অথবা ত্রুটির কারণে মাল ফেরত দেওয়া হইলে যামিনদার দায়মুক্ত হইয়া যাইবে।

(চ) কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির নিকট নির্দিষ্ট মেয়াদে কোন মাল ভাড়া দিলে এবং অন্য কোন ব্যক্তি ভাড়ার জন্য যামিন হইলে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সংগে সংগে সে দায়মুক্ত হইয়া যাইবে; পরে ভাড়ার বিষয়টি নবায়ন করা হইলে তাহার জন্য যামিনদার দায়বদ্ধ হইবে না।

(ছ) কোন ব্যক্তি মালের ক্রয় মূল্য অথবা বিক্রীত মাল বুঝাইয়া দেওয়ার জন্য যামিন হইলে এবং দায়বদ্ধ ব্যক্তি অথবা যামিনদার তাহা পাওনাদারের নিকট বুঝাইয়া দিলে যামিনদার দায়মুক্ত হইয়া যাইবে।

(জ) পাওনাদার যদি বলে, “আমি যামিনদারকে মুক্ত করিলাম”, অথবা “মিনদারের উপর আমার কোন অধিকার নাই”, তাহা হইলে যামিনদার দায়মুক্ত হইয়া যাইবে।

ধারা—৬৮০ মানুষের যামিনদারের দায়মুক্তি

( البراءة من الكفالة بالنفس)

(ক) কোন ব্যক্তি বিবাদীর যামিন হইলে সে তাহাকে আদালতের সীমার মধ্যে বাদীর নিকট উপস্থিত করিলে সে (যামিনদার) দায়মুক্ত হইয়া যাইবে, বাদী তাহাকে (বিবাদীকে) গ্রহণ করুক বা না করুক।

(খ) কোন ব্যক্তি বিবাদীকে নির্দিষ্ট কোন শহরে বাদীর নিকট উপস্থিত করিবার জন্য যামিন হইলে সে (যামিনদার) তাহাকে (বিবাদীকে) উল্লেখিত শহরে বাদীর নিকট উপস্থিত না করা পর্যন্ত দায়মুক্ত হইবে না।

(গ) কোন ব্যক্তি বিবাদীকে আদালতে হাযির করিবার জন্য যামিন হইলে সে তাহাকে আদালতে অথবা পুলিশে সোপর্দ না করা পর্যন্ত দায়মুক্ত হইবে না।

(ঘ) বাদীর দাবির প্রেক্ষিতে যামিনদার বিবাদীকে হাযির করিলে দায়মুক্ত হইয়া যাইবে; কিন্তু বাদীর দাবি ব্যতীতই যামিনদার বিবাদীকে হাযির করিলে দায়মুক্ত হইবে না যতক্ষণ না সে (যামিনদার) বলিবে, “আমি আমার যামিন

৪০১

মোতাবেক তাহাকে হাযির করিলাম”।

(ঙ) কোন ব্যক্তি কোন নির্দিষ্ট দিবসে বিবাদীকে বাদীর নিকট হাযির করার জন্য যামিন হইলে উক্ত দিবসের পূর্বে তাহাকে হাযির করিলেও যামিনদার দায়মুক্ত হইয়া যাইবে, বাদী তাহাকে (বিবাদীকে) গ্রহণ করুক বা

করুক।

(চ) বিবাদী মারা গেলে যামিনদার এবং যামিনদারের যামিনদার উভয়ে দায়মুক্ত হইয়া যাইবে।

(ছ) যামিনদার মারা গেলে সে নিজে এবং তাহার যামিনদার উভয়ে দায়মুক্ত হইয়া যাইবে।

(জ) বাদী মারা গেলে যামিনদার দায়মুক্ত হইবে না, বাদীর ওয়ারিসগণ বিবাদীকে হাযির করার জন্য যামিনদারের নিকট দাবি করিতে পারিবে।

ধারা-৬৮১

হাওয়ালার সংজ্ঞা (ক) ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণের দায়কে অপর কাহারও দায়ে সমর্পণ করাকে হাওয়ালা (দায় সমর্পণ) বলে।

(খ) যিনি দায় সমর্পণ করেন তাহাকে দায় সমর্পণকারী (মুহীল) বলে। (গ) ঋণ প্রদানকারী ব্যক্তিকে দায়ের অধিকারী (মুহাল লাহু) বলে। . (ঘ) দায় সমর্পণ গ্রহণকারী ব্যক্তিকে দায়বদ্ধ (মুহাল আলাইহি) বলে।

(ঙ) যে বস্তু বা মালের জন্য দায় সমর্পণ (হাওয়ালা) করা হয় তাহাকে দায়ের মাল (মুহাল বিহ) বলে।

(চ) দায়বদ্ধ ব্যক্তির (মুহাল আলাইহি) কাছে বা তাহার তত্ত্বাবধানে দায় সমর্পণকারী ব্যক্তির (মুহীল) যে মাল আছে তাহা হইতে দায়ের অর্থ পরিশোধ করিবার শর্ত করা হইলে তাহাকে শর্তযুক্ত দায় সমর্পণ (হাওয়ালা মুকায়্যিদাহ) বলে।

(ছ) দায়বদ্ধ ব্যক্তির কাছে দায় সমর্পণকারী ব্যক্তির যে মাল আছে দায়ের ঋণের অর্থ তাহা হইতে পরিশোেধ করিবার শর্ত যুক্ত না হইলে তাহাকে নিঃশর্ত দায় সমর্পণ (হাওয়ালা মুতলাকাহ) বলে।

৪০২।

ধারা-৬৮২ দায় সমর্পণের (হাওয়ালার) উপাদান। দায় সমর্পণকারী দায় সমর্পণের প্রস্তাব দিলে এবং দায়ের অধিকারী তাহা গ্রহণ করিলে দায় সমর্পণ সম্পাদিত হয়।

বিশ্লেষণ

দায় সমর্পণকারী যদি দায়ের অধিকারীকে বলে, দায় ওয়াসিল করিবার জন্য আমি তোমাকে অমুকের দায়ে সমর্পণ করিলাম অর্থাৎ আমি তোমার নিকট হইতে যে ঋণ গ্রহণ করিয়াছি আমার পক্ষ হইতে অমুকে তাহা পরিশোধ করিবে, ঋণদাতা এই প্রস্তাব গ্রহণ করিলে দায় সমর্পণ সম্পাদিত হইবে।

ধারা—৬৮৩ যাহাদের মধ্যে দায় সমর্পণ চুক্তি সম্পাদিত হইতে পারে কেবলমাত্র দায়ের অধিকারী ও দায়বদ্ধ ব্যক্তির মধ্যে দায় সমর্পণ সম্পাদিত হইতে পারে।

বিশ্লেষণ

ক যদি খ-কে বলে, আমার কাছে তোমার যে প্রাপ্য রহিয়াছে তাহা তুমি গ-এর নিকট আমার প্রাপ্য হইতে গ্রহণ কর, খ যদি তাহা মানিয়া লয় তাহা হইলে দায় সমর্পণ (হাওয়ালা) সম্পাদিত হইবে।

ধারা—৬৮৪ দায় সমর্পণকারী ও দায়ের অধিকারীর মধ্যে সম্পাদিত দায় সমর্পণ (হাওয়ালা)

(ক) শুধুমাত্র দায় সমর্পণকারী ও দায়ের অধিকারী ব্যক্তির মধ্যে সম্পাদিত দায় সমর্পণ দায় গ্রহণকারীকে অবগত করিবার পর তিনি যদি তাহা মানিয়া লন তবে উক্ত দায় সমর্পণ সম্পাদিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।

(খ) দায় সমর্পণকারী ও দায় গ্রহণকারী ব্যক্তির মধ্যে সম্পাদিত দায়

৪০৩

সমর্পণ দায়ের অধিকারী ব্যক্তির অনুমোদন সাপেক্ষে গ্রহণযোগ্য হইবে।

(গ) দায় সমর্পণের শর্তাবলী চারি প্রকারের (১) দায় সমর্পণের যোগ্যতা সম্পর্কিত শর্তাবলী;

(২) দায়ের অধিকারীর যোগ্যতা সম্পর্কিত শর্তাবলী; (৩) দায় গ্রহণকারীর যোগ্যতা সম্পর্কিত শর্তাবলী; এবং (৪) দায়ের মালের সহিত সম্পর্কিত শর্তাবলী। (ঘ) দায় সমর্পণকারীর যোগ্যতা সম্পর্কিত শর্তাবলী এই যে, দায় সমর্পণকারীকে বুদ্ধিমান, বালেগ ও সুস্থমস্তিষ্ক হইতে হইবে।

(ঙ) দায়ের অধিকারীর যোগ্যতা সম্পর্কিত শর্তাবলী এই যে, তাহাকে বুদ্ধিমান, দায় সমর্পণের ব্যাপারে সম্মত ও দায় সমর্পণের মজলিসে উপস্থিত থাকিতে হইবে।

(চ) দায়গ্রহণকারীর যোগ্যতা সম্পর্কিত শর্তাবলী এই যে, তাহাকে বুদ্ধিমান, বালেগ ও দায়গ্রহণে সম্মত হইতে হইবে।

(ছ) দায়ের মালের সহিত সম্পর্কিত শর্তাবলী এই যে, দায় গ্রহণকারীর নিকট দায় সমর্পণকারী মাল পাওনা থাকিতে হইবে এবং সুনির্দিষ্ট হইতে হইবে।

বিশ্লেষণ

দায় গ্রহণকারী যদি পাগল কিংবা শিশু হয় তাহা হইলে দায় গ্রহণ বৈধ হইবে না। দায় গ্রহণ যথাযথ ও কার্যকর হইতে হইলে দায় গ্রহণকারীকে বালেগ হইতে হইবে। সগীর মুমায়্যিযের দায় গ্রহণ বৈধ ও গ্রহণযোগ্য হইবে। সে দায় গ্রহণ করিলে এবং তাহার ওয়ালী তাহাতে অনুমতি দান করিলে তাহা বৈধ – হইবে। তাহা ছাড়া তাহাকে সন্তুষ্ট চিত্তে দায় গ্রহণে সম্মত হইতে হইবে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও দায় গ্রহণে বাধ্য করা হইলে তাহা বৈধ হইবে না।

ধারা—৬৮৫ দায় গ্রহণকারীর দায় সমর্পণকারীর নিকট ঋণ থাকা শর্ত নহে। (ক) দায় গ্রহণকারীর নিকট দায় সমর্পণকারীর ঋণের অর্থ পাওনা না থাকিলে তাহা উত্তম দায় সমর্পণ হিসাবে পরিগণিত হইবে।

৪০৪

(খ) দায় সমর্পিত হইবার পর দায় সমর্পণকারীর ও তাহার জামিনদার, যদি কেহ থাকে, দায় হইতে অব্যাহতি লাভ করিবে এবং দায়ের অধিকারী দায় গ্রহণকারীর কাছে দায়ের মাল দাবি করিবার অধিকার লাভ করিবে।

(গ) দায় সমর্পণকারী দায় সমৰ্পণ করিলে এবং দায় গ্রহণকারী দায় গ্রহণে সম্মত হইলে এবং দায় গ্রহণকারীর নিকট দায় সমর্পণকারীর কোন পাওনা না থাকিলে দায় গ্রহণকারী দায় পরিশোধের পর দায় সমর্পণকারীর নিকট তাহা দাবি করিতে পারিবে।

(ঘ) যে দায় সমর্পণের ক্ষেত্রে দায় গ্রহণকারীর নিকট দায় সমর্পণকারীর মাল পাওনা আছে এবং সেই মাল বিনষ্ট হইয়া গেলে যদি দায় গ্রহণকারীকে

ক্ষতিপূরণ দিতে না হয় তবে উক্ত দায় সমর্পণ বাতিল হইয়া যাইবে এবং দায় পুনরায় দায় সমর্পণকারীর উপর বর্তাইবে, কিন্তু যদি ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। তাহা হইলে দায় সমর্পণ বাতিল হইবে না।

বিশ্লেষণ

দায় সমর্পণকারী ক দায়ের অধিকারী খ-কে বলিল, গ-এর নিকট আমার যে প্রাপ্য মাল বা আমানতের মাল আছে তাহা হইতে সে তোমার দায় পরিশোধ করিবে। কিন্তু গ তাহা পরিশোধ করিবার পূর্বেই তাহার কাছে ক-এর প্রাপ্য বা আমানতের মাল যদি নষ্ট হইয়া যায় এবং সেজন্য গ কর্তৃক ক-কে কোন ক্ষতিপূরণ দিতে না হয় তাহা হইলে এই দায় সমর্পণ বাতিল হইয়া যাইবে এবং দায় সমর্পণকারী ক-এর উপর দায়ের অধিকারী খ-এর দাবি পুনরায় বর্তাইবে। কিন্তু উক্ত মাল নষ্ট হইবার কারণে খ যদি ক-কে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকে তাহা হইলে দায় সমর্পণ বাতিল হইবে না।

ধারা—৬৮৬

দায়ের অধিকারীর দায়কে সমর্পণ (ক) কেহ যদি তাহার দায়ের অধিকারীর দায়কে অপর কোন ব্যক্তির কাছে এই মর্মে সমর্পণ করে যে, সে (দায় গ্রহণকারী) দায় সমর্পণকারীর নির্দিষ্ট সম্পদ বিক্রয় করিয়া তাহার মূল্য হইতে দায় পরিশোধ করিবে এবং দায়ের অধিকারী যদি তাহা মানিয়া লয় তবে দায় সমর্পণ সম্পাদিত হইবে। দায় গ্রহণকারীকে উক্ত মাল বিক্রয় করিয়া তাহার মূল্য হইতে দায় পরিশোধে বাধ্য করা যাইবে।

৪০৫

(খ) দায় সমর্পণকালে দায় পরিশোধের সময়সীমা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা

হইয়া থাকিলে, দায় সমর্পণকারী যে দায় তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধ করিতে বাধ্য, দায় গ্রহণকারীও তাহা তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধ করিতে বাধ্য থাকিবে এবং দায় সমর্পণকারী যে দায় বিলম্বে পরিশোধ করিতে পারে, দায় গ্রহণকারীও তাহা বিলম্বে পরিশোধ করিতে পারিবে।

(গ) দায় গ্রহণকারী দায় পরিশোধের পূর্বে তাহা দায় সমর্পণকারীর নিকট দাবি করিতে পারিবে না এবং কেবলমাত্র পরিশোধিত বস্তুই দাবি করিতে পারিবে অর্থাৎ তাহাকে যে বস্তুর দায় সমর্পণ করা হইয়াছে তাহাই সে দাবি করিতে পারিবে।

বিশ্লেষণ

তাহাকে যদি রৌপ্য পরিশোধের দায় সমর্পণ করা হইয়া থাকে তাহা হইলে সে দায় সমর্পণকারীর নিকট হইতে রৌপ্যই দাবি করিতে পারিবে। রৌপ্যের দায় সমর্পণ করা হইয়া থাকিলে যদি সে স্বর্ণ পরিশোধ করিয়া থাকে সেই ক্ষেত্রে স্বর্ণ দাবি করিতে পারিবে না।

ধারা—৬৮৭

দায় গ্রহণকারীর দায়মুক্তি (ক) দায় গ্রহণকারী দায় হইতে মুক্ত হইবে যদি সে তাহা পরিশোধ করে অথবা দায়ের অধিকারীর সম্মতিক্রমে তাহা কোন ব্যক্তিকে সমর্পণ করে অথবা দায়ের অধিকারী ব্যক্তি তাহাকে দায়মুক্ত করিয়া দেয়—দায়ের বন্ধু হে ৰা সাদাকা হিসাবে তাহাকে দান করার মাধ্যমে।

(খ) দায়ের অধিকারী যদি মৃত্যুবরণ করে এবং দায় গ্রহণকারী তাহার উত্তরাধিকারী হয় তাহা হইলে দায় সমর্পণ কার্যকর থাকিবে না।

৪ ০৬

তথ্য নির্দেশিকা ১. হিদায়া, কিতাবুল কাফালা, ৩খ, পৃ. ৯৫ ৬ ৭JAUT, AL। দাবির প্রেম

‘দায়িত্বের সহিত দায়িত্বের সংযুক্তিকে কাফালা বলে। আলামগীরীতেও হিদায়ার সংজ্ঞা গ্রহণ করা হইয়াছে” (কিতাবুল কাফালা, আল-বাবুল আওয়াল, ৩থ, পৃ. ২৫২)। তুর্কী মাজাল্লা, পৃ. ১৩৬, ধারা নং ৬১২ : দাম্মু যিম্মাতিন ইলা যিম্মাতিন ফী মুতালিবাতি শায়ইন (Kefalet is to add obligation to obligation in respect of a demand for

some thing)। ২. হিদায়া, কিতাবুল কাফালা, ৩খ, পৃ. ৯৫। ৩. তিরমিযী, আবওয়াবুল ওয়াসায়া, বাব মা জাআ লা ওয়াসিয়্যাতা লি-ওয়ারিছিন। ৪. হিদায়া, ৩খ, পৃ. ৯৫। ৫. হিদায়া, ৩থ, পৃ. ৯৫; আলামগীরী, কিতাবুল কাফালা, ৩খ, পৃ..২৫২। ৬. তুর্কী মাজাল্লা, পৃ. ১৩৮; আলামগীরী, কাফালা, আল-বাবুস সানী, ৩২, পৃ. ২৫৫। ৭. সম্পূর্ণ আলোচনাটি আলামগীরী হইতে গৃহীত, কিতাবুল কাফালা, আল-বাবুল আওয়াল, ৩২, পৃ:

২৫৩-২৫৫ ১. কিতাবুল ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবাআ, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২১২; ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়া, ৩য়

খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৯৫।

রাহন (বন্ধক)

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *