1 of 2

২৬. যদু পণ্ডিতের পাঠশালা

যদু পণ্ডিতের পাঠশালা ছেড়ে আমি ভরতি হয়েছিলাম স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলে। এই স্কুলে বিষ্ণু আমার সহপাঠী। আমাদের আর একজন বন্ধু ছিল মৃত্যুঞ্জয়। কিন্তু ক্লাস পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোবার আগেই ও দুম করে মরে গেল। ওর কালাজ্বর হয়েছিল। আর একজন, অপূর্ব গুঁই, প্রত্যেক দিন জোর করে আমাদের পাশে বসে-কিন্তু ওকে আমরা পছন্দ করি না। অপূর্ব খুব বিচ্ছিরি বিচ্ছিরি কথা বলে। ও আমাকে একদিন ল্যাং মেরে ফেলে দিয়েছিল, ওকে আমরা একদিন খুব মারব ঠিক করেছি।’

বিষ্ণু আর আমি একটা আলাদা জগৎ তৈরি করে নিয়েছিলাম। আমরা অন্যদের সঙ্গে বেশি মিশি না, সব সময় একসঙ্গে থাকি, আমাদের গল্প কখনও ফুরোয় না। প্রত্যেক দিন টিফিনের সময় বিষ্ণুর বাড়ি থেকে চাকর খাবার নিয়ে আসে, আমরা দু’জনে ভাগ করে খাই। বিষ্ণুর মা দুজনের জন্যই খাবার পাঠান। আমি মার কাছ থেকে প্রতিদিন দু’পয়সা করে টিফিন পাই। তাই দিয়ে বিষ্ণু আর আমি আধপয়সা করে আলুকাবলি কিনি আর এক পয়সার লটারি। লটারির প্যাকেটে বেশ ঝাল ঝাল চাটনি থাকে– এ ছাড়া পেতলের আংটি কিংবা জলছবি। বিষ্ণুর এইসব খাওয়া একদম বারণ–কিন্তু বাড়ির কেউ তো জানতে পারছে না!

ইস্কুলে যাওয়ার ব্যাপারটা আমার এত প্রিয় ছিল যে ইস্কুল ছুটি থাকলে মনখারাপ লাগত। ইস্কুল মানেই কত রকম আনন্দ, কত গল্প। র‍্যাপিড রিডিং ক্লাসে উকিল মাস্টারমশাই আমাদের অনেক রকম গল্প শোনাতেন। ওঁর পুরো নাম ছিল সুরেন্দ্রনাথ উকিল–আমরা ওঁকে উকিল স্যার বলে বেশ মজা পেতাম। মানুষটি খুব রোগা, মুখোনি বিষণ্ণ, অথচ কত রকম বই পড়েছেন। ইউলিসিস-এর গল্প শুনতে শুনতে আমরা রোমাঞ্চিত হয়ে উঠতাম।

প্রায়ই সেই সময় ইস্কুলে খুব স্ট্রাইক হতে লাগল। স্ট্রাইকের কারণগুলো ঠিক বুঝতাম না। এক এক দিন স্কুলে গিয়ে দেখতাম, আগে থেকেই কয়েকটি অচেনা বড় বড় ছেলে ইস্কুলের গেট আটকে দাঁড়িয়ে আছে। একজন কী যেন সব চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছে। আমি আর বিষ্ণু রাস্তায় ওপারে দাঁড়িয়ে থাকতাম। ঢং ঢং করে ঘণ্টা পড়ে গেলেও কেউ ভেতরে না ঢুকলে বুঝতাম সে-দিনকার মতন ছুটি। তখন বাড়ি ফেরা।

স্ট্রাইক আমাদের পছন্দ হত না। এক একটা দিন স্কুল নষ্ট হলে আপশোস হত, ডাইনির দ্বীপে ইউলিসিস কী করে প্রাণে বাঁচল সেটা সে-দিন শোনা হল না!

একদিন দেখলাম, অন্যান্য কয়েকটি ছেলের সঙ্গে সূর্যদা এসেছে আমাদের স্কুলে ধর্মঘট করাতে। পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে হাত উঁচু করে সূর্যদা কী যেন বলছে। সে-দিন বিষ্ণু আর আমি কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। যুদ্ধ উপলক্ষে দেশের বড় বড় নেতাদের গ্রেপ্তার করার প্রতিবাদে ধর্মঘট।

সূর্যদা আমাদের দেখে বলল, এই বাদল, বাড়ি যাবি না। মিছিলে যেতে হবে।

মিছিলে যাওয়ার কথা শুনে আমি বেশ উত্তেজিত বোধ করলেও বিষ্ণু রাজি হল না। তার বাড়িতে ভীষণ কড়াকড়ি। স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও বাড়ি না-ফেরা তার পক্ষে অত্যন্ত অপরাধ। বাড়িতে গিয়ে বিষ্ণু বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে কথাও বলতে পারবে না। ও পারে না।

বিষ্ণু মিছিলের পাশে পাশে হাতিবাগান পর্যন্ত হেঁটে বাড়ি চলে গেল। আমি রয়ে গেলাম সূর্যদার সঙ্গে। সূর্যদা মিছিল পরিচালনা করছে, ও প্রথম বলছে বন্দে মাতরম্–তারপর আমরা সবাই গলা মেলাচ্ছি। আমাদের উদ্দেশ্য টাউন স্কুল, সরস্বতী স্কুল আর শ্যামবাজার এ ভি-তে স্ট্রাইক করানো।

টাউন স্কুলে বিশেষ কোনও অসুবিধে হল না, সেখানকার ছেলেরা আগে থেকেই ভিড় করে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল, ওখানেও সূর্যদার মতন একজন বক্তৃতা দিচ্ছিল। সেখান থেকে দল ভারী করে সরস্বতী স্কুলে এলাম–এখানে স্কুল শুরু হয়ে গিয়েছিল–আমরা বাইরে থেকে চেঁচামেচি করতেই ছাত্ররা বেরিয়ে এল হুড়হুড় করে। শ্যামবাজার এ ভি-তে গিয়েই গোলমাল। এখানেও স্কুল শুরু হয়ে গেছে এবং বাইরে দু’জন পুলিশ দাঁড়িয়ে। দিশি সেপাই, সুতরাং তাদের গ্রাহ্য না করে সূর্যদা চেঁচিয়ে উঠল, ছাত্রবন্ধুগণ, বেরিয়ে এসো! ব্রিটিশরাজ নিপাত যাক। ইনকিলাব। আমরা প্রবল ভাবে হইহই করতে লাগলাম।

কিন্তু হঠাৎ আর এক গাড়ি পুলিশ এসে গেল। তার মধ্যে তিন-চার জন লালমুখো। এসে তারা একটুও সময় দিল না, লাঠি চার্জ শুরু করল। চার-পাঁচজন ছেলে লাঠির বাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ল রাস্তায়। আমি দিশাহারা হয়ে গেলাম। সেই সময় কী করতে হয় কিছুই জানি না। পেছন ফিরে দৌড়োতে শুরু করেছি, একটা সবল হাত আমাকে ধরল। তাকিয়ে দেখি সূর্যদা। সূর্যদা বলল, এই দিকে আয়।

বড়রাস্তা পেরিয়ে উলটো দিকের একটা সরু গলির মুখে সূর্যদা আমাকে দাঁড় করাল। তীব্র গলায় বলল, এইখানে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাক। যদি দেখিস পুলিশ এ-দিকে আসছে তা হলে এই গলির মধ্যে যে-কোনও বাড়িতে ঢুকে পড়বি। ভয় পাবি না।

ওদিকে স্কুলৈর সামনে কুরুক্ষেত্র শুরু হয়ে গেছে। লাঠি খেয়ে একদল ছেলে দৌড়ে পালাচ্ছে। মিছিলের শেষ দিকের ছেলেরা ব্যাপারটা কী হচ্ছে বুঝতে না পেরে এগিয়ে আসছে, ওই স্কুলের ছেলেরা ক্লাস ভেঙে জানলায় দাঁড়িয়ে চাচাচ্ছে, ঝনঝন করে শব্দ হচ্ছে লোহার গেটে।

সূর্যদা বড় একটা ইটের টুকরো তুলে নিয়ে হুংকার দিল, ব্রিটিশ রাজত্ব নিপাত যাক। তারপর সেটা ছুঁড়ে মারল একজন সার্জেন্টের দিকে।

আমার মনে পড়ল একটা দৃশ্য। কয়েক বছর আগে হাতিবাগানের মোড়ে একজন গোরা সার্জেন্ট সূর্যদাকে মেরেছিলসূর্যদা সেদিন আহত হবার চেয়েও অবাক হয়েছিল বেশি। ইংরেজিতে কী সব বলেছিল বিড়বিড় করে। সেই সূর্যদা কত বদলে গেছে।

দেখতে দেখতে ইট ছোঁড়াছুড়ি শুরু হয়ে গেল প্রবল ভাবে। রাস্তায় অনেক লোকও যোগ দিল সেই রণে। সূর্যদার ও রকম উগ্র মূর্তি আমি আগে কখনও দেখিনি। অদ্ভুত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে সে এক একবার ইট হাতে নিয়ে পুলিশের অনেক কাছে চলে যাচ্ছে– মেরেই আবার দৌড়ে ফিরে আসছে এঁকেবেঁকে। সূর্যদাকে দেখেই আরও অনেকে উদ্দীপনা পেয়ে গেল। সূর্যদার দলের লোকদের পরিকল্পনা মতন এ সময় থেকেই যে ইচ্ছে করে পুলিশের সঙ্গে গণ্ডগোল পাকিয়ে আগস্ট আন্দোলনের সূত্রপাত হচ্ছে– আমি তখন তা বুঝিনি।

খানিকটা বাদে ফটফট শব্দ ও ধোঁয়া, আমার চোখ জ্বলতে লাগল। আমি গলির মধ্যে ঢুকে গেলাম। একজন বয়স্কা ভদ্রমহিলা তাঁর বাড়ির দরজা খুলে আমাকে বললেন, এই ছেলেটা, দাঁড়িয়ে রয়েছিস কেন? ভেতরে আয়!

আমি ইতস্তত করছিলাম, মহিলাটি নিজে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলেন। ধমক দিয়ে বললেন, বাড়িতে তোর মা বাবা নেই? এইটুকু ছেলেকে ছেড়ে দিয়েছে কী আক্কেলে?

এই সময় সূর্যদা এসে উপস্থিত হল ঝড়ের বেগে। মহিলার কাছ থেকে আমাকে একপ্রকার কেড়ে নিয়ে বলল, চল, দৌড়ো–।

সূর্যদার সঙ্গে কি আমি দৌড়ে পারি? হাঁপাতে হাঁপাতে কোনও রকমে পৌঁছোলাম কুমোরটুলির কাছে। তারপর দ্রুত পা চালিয়ে এসে পৌঁছোলাম গঙ্গার ধারে। একটা অশথ গাছের তলায় এসে সূর্যদা বলল, এখানে চুপ করে বসে থাক।

আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম, বাড়ি যাবে না?

এখন না। এখন বিপদ আছে।

গঙ্গার ধারে আমরা প্রায় ঘণ্টা দুয়েক সময় কাটালাম। গঙ্গার ধার আমার চেনা। জায়গা–মাকে নিয়ে অনেক বার এসেছি। কিন্তু এখন কোনও ভিড় নেই। এদিকে ও-দিকে দু-একটা অলস লোক শুয়ে আছে–স্নান করছে কয়েক জন। জলের ওপর মেঘের ছায়া। বিরাট বিস্ময়ের মতন দূরে দেখা যায় নতুন তৈরি হাওড়া ব্রিজ। কয়েকটা ইটের টুকরো কুড়িয়ে নিয়ে আমি জলে টুপটাপ করে ছুঁড়ে ফেলতে লাগলাম।

অনেক দিন বাদে সূর্যদার সঙ্গে এত ক্ষণ গল্প করা গেল। সূর্যদা আমাকে বোঝাতে লাগল, ব্রিটিশ শাসন কত খারাপ। যে-জাতি পরাধীন সে-জাতি ক্রীতদাসেরও অধম। জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধ লাগিয়ে ইংরেজ ভারতের ধনসম্পদ সেই যুদ্ধের জন্য খরচ করছে, ইত্যাদি অনেক কথা। সব আমি বুঝলাম না। কিন্তু শুনতে ভালো লাগছিল।

হঠাৎ আমি বোকার মতন বলে উঠলাম, সূর্যদা, বড়দি কী বলেছে জানো তো? বড়দি বলেছে তোমাকে ভুলে যেতে।

সূর্যদা ভুরু কুঁচকে বলল, কী?

আমি কথাটার পুনরাবৃত্তি করলাম। সূর্যদা শুনে কী যেন ভাবল। তারপর বলল, জানিস তো শ্রীলেখাকে আমি বিয়ে করব। এখন আমি সময় পাচ্ছি না।

এমন নিশ্চিন্ত ভাবে সূর্যদা কথাটা বলল, যেন সবকিছুর ঠিকঠাক হয়ে আছে–ওর সময়াভাবটাই একমাত্র বাধা। আমি বললাম, কিন্তু বড়দির তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।

সূর্যদা কথাটা উড়িয়ে দিয়ে বলল, তা হোকগে!

সামনের মাসে বড়দির বিয়ে।

ধুত! চল, ওঠ।

হাঁটতে হাঁটতে চিৎপুরে এসে সূর্যদা বলল, তুই এখান থেকে একা একা বাড়ি যেতে পারবি?

আমি ভয় পেয়ে বললাম, না। আমি রাস্তা চিনি না।

তোকে বাসে উঠিয়ে দেব, গিরিশ পার্কে নামবি।

আমি একা কখনও বাসে চাপিনি।

তা হলে চল আমার সঙ্গে। বাড়ি ফিরতে দেরি হবে কিন্তু।

সূর্যদা, বিষ্ণুদের বাড়িতে যাবে? ওখানে বেশ ক্যারাম খেলা যেত।

আমার এখন অন্য কাজ আছে।

সূর্যদার সঙ্গে আমি শিয়ালদার কাছে এলাম। আমাকে নিয়ে সূর্যদা একটা মেসবাড়ির অন্ধকার সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে এল। একটা ঘরের দরজায় ধাক্কা দিতেই সেটা খুলে গেল। ভেতরে চার জন লোক। এক জনকে দেখে সূর্যদা বলল, ব্রজদা আজ এ ভি স্কুলের সামনে পুলিশ লাঠি আর টিয়ার গ্যাস চালিয়েছে।

তিনি আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এই ছেলেটি কে?

সূর্যদা বলল, আমার ভাই হয়। ও আমার সঙ্গে ছিল।

ব্রজগোপাল বললেন, এইটুকু ছেলেকে নিয়ে না গেলেই পারতে।

সবাইকেই যেতে হবে।

ব্রজগোপাল চৌকির তলা থেকে একটা টিনের কৌটো বার করে ঢাকনা খুলে বললেন, খোকা, তোমার খিদে পেয়েছে নিশ্চয়ই? খাও।

তাকিয়ে দেখলাম, কৌটোর মধ্যে মুড়ি আর বাতাসা। আমি এক মুঠো তুলে নিলাম। ঘরের অন্যান্যরাও এক মুঠো এক মুঠো নিয়ে মুহূর্তে কৌটোটা ফাঁক হয়ে গেল।

এই ঘটনাটা আমার মনের মধ্যে একটা ছাপ রেখে যায়। তখন ঠিক না বুঝলেও পরে জেনেছিলাম, ওই ঘরে যারা উপস্থিত তারা সবাই দেশ উদ্ধার করার জন্য গৃহের সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে এসেছে। যে-কোনও সময় ওদের মৃত্যুও হতে পারে। তবু ওদের নেতা ব্রজগোপাল একটি ছোট ছেলেকে দেখে প্রথমেই কিছু খাবার খেতে দেবার কথা ভেবেছিলেন। সেই মুড়ি ও বাতাসার স্বাদ আমার জিভে লেগে আছে।

আমি খাটের ওপর চুপ করে বসে রইলাম। সূর্যদা ওদের সঙ্গে আলোচনা করতে লাগল। সে-দিন কলকাতার বিভিন্ন স্থানে পাঁচ জায়গায় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের গোলমাল হয়েছে। এতে সবাইকে বেশ উৎসাহিত দেখা গেল। বোঝা গেল, ছাত্ররা আপনা-আপনি স্ট্রাইক করেনি–এর পেছনে একটা সুস্পষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে।

সেই মেস থেকে বেরিয়ে সূর্যদা বলল, এক্ষুনি বাড়ি ফিরবি, না আর কোথাও যাবি?

প্রশ্ন শুনেই আমি বুঝতে পারলাম সূর্যদা কী বলতে চায়। শিয়ালদা স্টেশন দেখেই বুঝেছি কাছেই তালতলা। উৎসাহিত হয়ে বললাম, সূর্যদা বড়দিদের বাড়ি যাবে?

সূর্যদা যেন আমাকে খুশি করার জন্যই বলল, চল তা হলে!

তালতলায় জ্যাঠামশাইয়ের বাড়ির খুব কাছে এসে সূর্যদা মত বদলে ফেলল। থমকে দাঁড়িয়ে বলল, থাক, তুই যা। আমি আর যাব না!

আমি সূর্যদার মুখের দিকে তাকালাম। এ তো অন্য রকম মুখ। এই মুখে মিশে আছে খানিকটা ভয় ও অনেকখানি লজ্জা। এই দুটি ব্যাপার সূর্যদার চরিত্রে আগে কখনও দেখিনি। যে-মানুষ কিছুক্ষণ আগে অকুতোভয়ে পুলিশকে ইট মারছিল সে হঠাৎ ভয় পাবে কেন?

আমি বললাম, কেন, চলো না! কী হয়েছে!

সূর্যদা পথের মধ্যে দাঁড়িয়ে পড়ে উদাসীন ভাব দেখিয়ে বলল, নাঃ, আমার অন্য কাজ আছে। আজ যাব না।

আমি সূর্যদাকে ছাড়লাম না। হাত ধরে টানাটানি করতে লাগলাম। সূর্যদা যেন এইটাই চাইছিল। যেন আমিই ওকে জোর করে ধরে নিয়ে এলাম এ বাড়িতে।

দুপুরে সব সময় গেট বন্ধ থাকে। পাশেই দারোয়ানের ঘর। জ্যাঠামশাই তার বাড়িতে ক্রমশই জাঁকজমক বাড়াচ্ছেন–তিনি নানা প্রকারে দেখাতে চান যে তিনি এখন বড়বাবুর চেয়েও অবস্থাপন্ন। আমরা এখন ইস্কুলে বালি কাগজে লিখি–কাগজের দাম সাংঘাতিক।

দুপুরবেলা বাড়িতে বিশেষ কেউই থাকে না। জ্যাঠামশাই তো থাকবেনই না। দারোয়ান আমাকে চেনে। গেট খুলে দিল। সিঁড়ির নীচের ঘরখানাতেই সাধুকাকা থাকেন। সাধুকাকা কয়েক দিনের জন্য কলকাতায় এসেছিলেন, কিন্তু বেশ কিছু দিন থেকে গেলেন।

সাধুকাকার ঘরের দরজা খোলাই ছিল, খাটের ওপর ঘুমোচ্ছেন। খালি গা, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, দাড়িগোঁফ ঘামে ভিজে গেছে। এই ঘরখানাই সূর্যদার কাছে নিরাপদ মনে হল।

সন্ন্যাসীদের ঘুম কী ভীষণ পাতলা হয়। আমরা ঘরে ঢোকামাত্র সাধুকাকা চোখ মেলে তাকালেন। অথচ আমরা একটুও শব্দ করিনি। কাঁচা ঘুম ভাঙলে অনেকে রেগে যায়– সাধুকাকা হাসিমুখে উঠে বসে বললেন, কী খবর? সূর্যকুমারের কী খবর?

আমি সাধুকাকাকে প্রণাম করলাম, সূর্যদা জানলার শিক ধরে দাঁড়িয়ে রইল। সূর্যদা কারোকে পায় হাত দিয়ে প্রণাম করে না। সাধুকাকা আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন, জীব! জীব! তারপর সূর্যদার দিকে তাকিয়ে বললেন, সূর্যকুমার, এ-দিকে এসো তো!

সূর্যদা পায় পায় কাছে এগিয়ে এল, সাধুকাকা তার বাঁ করতল নিজের হাতে তুলে নিলেন। জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কী রাশি, তুমি জানো?

সূর্যদা ও-সব জানে না।

তোমার কোনও কোষ্ঠি নেই।

আছে কিনা শুনিনি।

তোমার জন্ম তারিখ কবে?

৭ই সেপ্টেম্বর।

তা হলে বাংলা কত তারিখ হল?

সাধুকাকা সূর্যদার হাত দেখতে লাগলেন। কিছুই বললেন না। হাত দেখা শেষ করে। ভারী মায়ার সঙ্গে সূর্যদার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, সাধুকাকা, সূর্যদার হাতে কী দেখলেন? সাধুকাকা বললেন, আমি ভালো হাত দেখতে জানি না। মনে হল সবই তো ভালো। ওপরে গিয়েছিলে?

না। এখনও যাইনি।

সাধুকাকার বিছানায় তোষক বা চাদর নেই, শুধু একটা কম্বল পাতা। আমরা তার ওপরে বসলাম। এই কুটকুটে কম্বলের ওপর শুয়ে উনি ঘুমোন কী করে?

সাধুকাকা বললেন, চোখ মেলে যখন সূর্যকে দেখলাম, হঠাৎ চমকে উঠেছিলাম। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আমি আমার ছোটভাইকে স্বপ্ন দেখছিলাম, ঘুম ভেঙে মনে হল সে-ই যেন দাঁড়িয়েছে। সূর্য, তুমি একটু সাবধানে থেকো।

কেন?

এই বয়সে তোমার একটা ফাড়াআছে।

সূর্যদা আর কিছু না বলে একটু হাসল। কে জানে সূর্যদা ফাড়াকথাটার মানে বুঝল কিনা। আমি বুঝেছি। আর দু’বছর বাদে আমার আগুনের ফাড়াআছে।

সূর্যদা জিজ্ঞেস করল, আপনি জন্মান্তর মানেন?

এ আবার মানামানির কী আছে? তুমি মানো বা না মানো–পাপ করলে আবার জন্মাতেই হবে।

পাপ কাকে বলে?

পাপ অনেক রকম। যেমন জীব-হিংসা একটা পাপ।

মাছ মাংস খাওয়াও কি পাপ?

এক হিসেবে তো বটেই।

বাইবেলেও পড়েছি, হিংসা করা পাপ। কিন্তু খ্রিস্টানরা তো মাছ-মাংস খাওয়া পাপ। মনে করে না।

তর্ক জমে উঠতেই আমি আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। উঠে এলাম ওপরে। সারা বাড়িতে সবাই ঘুমোচ্ছে। জ্যাঠাইমা ঘুমোচ্ছে ছোড়দিকে নিয়ে। জ্যাঠাইমার এক বোন কিছুদিন ধরে এখানে এসে আছেন, তিনিও পাশের ঘরে ঘুমন্ত। বড়দিকে খুঁজে পেলাম তিনতলায়–একখানা বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছে একসময়–বইয়ের ওপর তার চুলগুলো ছড়ানো।

গায় হাত দিয়ে ডাকলাম, বড়দি, এই বড়দি!

বড়দি ধড়মড় করে উঠে বসল। যেন ভয় পেয়েছে। বোধহয় কোনও দুঃস্বপ্ন দেখছিল।

আমাকে দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করল, কী রে, কখন এলি?

আমি ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললাম, চুপ!

বড়দি ভুরু কুঁচকে তাকাল। তারপর বলল, ও রকম করছিস কেন? কী হয়েছে কী?

আমি ফিসফিস করে বললাম, সূর্যদা এসেছে।

বড়দি একটু চমকে উঠল। তারপর বলল, কোথায়?

এই বাড়িতে। নীচে সাধুকাকার সঙ্গে গল্প করছে। ডেকে নিয়ে আসব ওপরে?

বড়দি একটুক্ষণ চুপ করে রইল। মুখ ফেরাল দেওয়ালের দিকে। সেই ভাবেই বলল, সূর্যদা কেন এসেছে? সুর্যদাকে চলে যেতে বল।

বড়দির কাছ থেকে এ রকম কথা আমি আশা করিনি। চট করে বললাম, চলে যাবে কেন? জ্যাঠাইমা তো ঘুমোচ্ছে!

বড়দি এক ধমক দিয়ে বলল, কী আজেবাজে কথা বলছিস! এক্ষুনি যা–ওকে চলে যেতে বল।

বড়দি আমাকে ধমকে ভয় দেখাবে ভেবেছিল। আমি বুঝি ভয় দেখাতে জানি না? চোখ গোল গোল করে বললাম, সূর্যদা কী বলেছে জানো? সূর্যদা বলেছে, ফাঁইভ হান্ড্রেড গোনার মধ্যে যদি তাকে ওপরে ডেকে না আনি–তা হলে সূর্যদা দুম দুম করে গুলি করবে?

কী করবে?

গুলি করবে! সূর্যদার কাছে বন্দুক আছে। সূর্যদা পুলিশের সঙ্গে লড়াই করেছে।

কবে? কবে?

এই তো আজকেই। আমি নিজে দেখেছি। সূর্যদা ভীষণ রেগে আছে। হ্যাঁ হ্যাঁ বাবা, ফাঁইভ হাড্রেডের মধ্যে যদি না ডাকি–

বড়দি সরু চোখে তাকাল আমার দিকে। একটু একটু যেন বিশ্বাস করল আমার কথা। মুখে একটা যন্ত্রণার চিহ্ন ফুটে উঠল। তারপর আঁচল গুছিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, এখানে ডাকতে হবে না। সূর্যদাকে গিয়ে বল, আমি নীচে যাচ্ছি।

আমি তরতর করে নীচে নেমে এলাম। সূর্যদা তখন সাধুকাকার সঙ্গে দারুণ তর্কে মেতে উঠেছে। সূর্যদার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম একটুক্ষণ, একটুও ভালো লাগছিল না ওই সব তর্ক। একটু ফাঁক পেয়েই বললাম, সূর্যদা, চলো এবার ওপরে যাই।

সাধুকাকা সঙ্গে সঙ্গে কথা থামিয়ে বললেন, ঠিক আছে, যাও ঘুরে এসো।

দোতলা আর একতলার সিঁড়ির মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে বড়দি। পাথরের মূর্তির মতন স্থির। আমি আর সূর্যদা ওপরে উঠে এলাম। সূর্যদা গম্ভীর ভাবে জিজ্ঞেস করল, কেমন আছিস?

তুমি কেন এলে?

তোর সঙ্গে আমার কথা আছে।

তুমি আর এসো না।

তোমার সঙ্গে আমার কথা আছে।

বড়দি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, বাদল, তুই ওপরে গিয়ে বোস তো।

আমি রাগের সঙ্গে বললাম, কেন?

এখন একটু ওপরে গিয়ে বোস। পরে আসবি।

না, আমি যাব না।

ছেলেমানুষি করিস না। যা বলছি শোন–

বাঃ, আমিই সব ব্যবস্থা করলাম। এখন আমি ছেলেমানুষ? সূর্যদা আর বড়দির ঝগড়া আমি দেখব না? আমি গোঁ ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম।

সূর্যদা আমার মাথায় হাত দিয়ে নরম ভাবে বলল, বাদল এখন একটু সাধুকাকার সঙ্গে গল্প কর গিয়ে। পরে তোকে ডাকব।

সূর্যদা বকুনি দিলে কিংবা মাথায় গাঁট্টা মারলেও আমি হয়তো যেতাম না। কিন্তু সূর্যদার নরম গলায় অনুরোধ উপেক্ষা করা যায় না। বিড়বিড় করতে করতে নেমে এলাম সাধুকাকার ঘরে। সাধুকাকা অবাক হলেন না, কোনও প্রশ্ন করলেন না, বললেন বোস। আজ তোদের ইস্কুল এত তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেল কেন?

.

বাদল চলে যাবার পর সূর্য আর এক সিঁড়ি উঠে এল। এখন সে আর শ্রীলেখা দোতলা ও একতলার সিঁড়ির মাঝখানে।

শ্রীলেখা জিজ্ঞেস করল, তুমি আজ পুলিশের সঙ্গে মারামারি করেছ?

কে বলল? ওসব বাজে কথা।

তুমি কি এমনি এমনি মরতে চাও!

শোন শ্রীলেখা। আমার এখন অনেক কাজ। কিন্তু তোর জন্য আমার মনটা স্থির করতে পারি না। তুই আমার সঙ্গে চল।

তুমি আবার এইসব কথা বলছ? তুমি জানো না যে এটা হয় না?

কেন হবে না? তুই আর আমি কেউই কারওর বাড়িতে থাকব না–আমরা ঘুরে বেড়াব।

কোথায়?

কখন কোথায় থাকব কোনও ঠিক নেই। আমাদের সামনে এখন অনেক কাজ। তোকেও কাজ করতে হবে।

এসব কী বলছ। আমি কিছু বুঝতে পারছি না।

তোকে আমি হরদার কথা বলেছিলাম। হরদা মৃত্যুর আগে আমাকে দিয়ে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নিয়েছিলেন, দেশ স্বাধীন করার জন্য হরদার বাকি কাজ আমাকে করতে হবে। সে প্রতিজ্ঞা যদি আমি না রাখি, তবে আমি মানুষ নয়! হরদা কীসের জন্য মরেছেন? কোনও দিন নিজের বাড়িঘরে থাকেননি, পুলিশের মার খেয়ে হাতের আঙুল ভেঙে গিয়েছিল–টি. বি. হয়েছিল, বিনা চিকিৎসায় আমার কোলে মাথা দিয়ে মরেছেন। সে-সব কীসের জন্য? এই দেশের জন্য। সে কথা আমাদের মনে রাখতে হবে না?

সেই জন্য তুমি পুলিশের সঙ্গে লড়াই করবে?

শুধু পুলিশ কেন, দরকার হলে মিলিটারির সঙ্গেও লড়তে হবে–গোটা ব্রিটিশ জাতের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। সারা পৃথিবীতে যুদ্ধ লেগেছে–এই তো সুযোগ। দেখিস, শিগগিরই ব্রিটিশরা এ-দেশ ছেড়ে পালাবে তার আগে ওদের প্রচণ্ড মার দিতে হবে। সে জন্য আমরা তৈরি হচ্ছি, বুঝলি। আর বেশি দিন দেরি নেই।

আমাকে এসব কথা বলছ কেন? আমি এর কী বুঝি?

শ্রীলেখা, তোর জন্য আমার মন ছটফট করে। শিগগিরই আমাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে। কলকাতা ছেড়ে দিয়ে কাজ করতে হবে গ্রামে গিয়ে। কিন্তু তোকে ছেড়ে আমি থাকব কী করে?

সূর্যদা আমার বিয়ে ঠিক গেছে।

ধুৎ তেরি বিয়ে! কী হবে বিয়ে করে? বিয়ে করে শুধু বাচ্চা মানুষ করবি আর মোটা হয়ে পান চিবোবি? তার চেয়ে চল আমার সঙ্গে। আমাদের কোনও বাড়িঘর থাকবে না। আমরা গাছতলায়, নদীর ধারে শুয়ে থাকব। যখন যা জুটবে, তাই খাব। বিপ্লবীদের সাহায্য করব, থানায় আগুন জ্বালব। দিনের বেলায় লুকিয়ে থাকব বনেজঙ্গলে। সেই জীবনটা ভালো নয়? হয়তো তুই কিংবা আমি কিংবা দুজনেই মরে যাব–কিন্তু তাতে কী হবে–মরার আগে একটা শান্তি থাকবে যে আমরা দেশের জন্য কিছু করেছি।

সূর্যদা, আমায় ক্ষমা করো। আমি এসব পারব না।

সূর্য একসঙ্গে এত কথা কখনও বলেনি। তার মুখ লাল হয়ে গেল। চাপা উত্তেজনায় সে কঁপছে। শ্রীলেখার চোখে চোখ রেখে ফিসফিস করে বলল, তুই ভয় পাচ্ছিস? কোনও ভয় নেই। চল আমার সঙ্গে বেরিয়ে চল। দেখবি, আর কোনও ভয় লাগবে না।

আমি পারব না। আমায় ক্ষমা করো।

তোর বিয়ে করতে এত শখ? বিয়ে তো অনেক মেয়েই করে। এর মধ্যে কী আছে?

না, শুধু সে জন্য নয়। আমি বাড়ি ছেড়ে যেতে পারব না। তুমি বুঝতে পারছ না– তোমরা ছেলে, তোমাদের কথা আলাদা। আমি মেয়ে–

কেন, প্রীতিলতা যায়নি? কেউ তার নিন্দে করে?

আমি খুব সাধারণ মেয়ে।

শ্রীলেখা, তোকে ছেড়ে আমি যেতে পারব না। অন্য কারওর সঙ্গে তোর বিয়ে হবে, এটা আমি সহ্য করতে পারব না। কিছুতেই পারব না। তোকে আমার চাই।

সূর্যদা, আমাকে ক্ষমা করো।

সূর্যদা একটা বিরাট দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করল। দ্বিধা বিভক্ত যাতনায় মুখখানা তার কুঁকড়ে গেছে! সে আর কথা খুঁজে পাচ্ছে না।

শ্রীলেখার শরীরে একখানা আটপৌরে শাড়ি জড়ানো। সদ্য ঘুম থেকে উঠে আসার চিহ্ন তার চোখেমুখে। এবং সে ভয় পেয়েছে। তার বিয়ের আর মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি–এই সময় সূর্যর চলে আসার পরিণাম যে কী সে বুঝতে পারছে না। এর আগে দু’বার তার বিয়ে ঠিক হয়েও ভেঙে গেছে। বাবা-মা সব সময় তার নিন্দামন্দ করে। সে আর কত সহ্য করবে।

সূর্যকে চুপ করে থাকতে দেখে শ্রীলেখা আবার আস্তে আস্তে বলল, সূর্যদা, আমি হয়তো অনেক দোষ করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করো। তুমি আমার সত্যি সত্যি দাদার মতন–তুমি ও-সব কথা আমাকে আর বোলো না।

সূর্য বিষণ্ণ ভাবে বলল, শ্রীলেখা তোকে আমার চাই!

আমি মনে মনে তোমারই থাকব। কিন্তু তুমি আর কোনও দিন এ ভাবে এসো না!

মনে মনে নয়–আমি তোকে সব সময় চাই। তুই পাশে থাকলে আমি অনেক কিছু করতে পারব।

ওসব আমার জন্য নয়।

আমি তোকে তৈরি করে নেব। তুই আমাকে বিশ্বাস করতে পারবি না? তোকে কোনও কষ্ট পেতে দেব না–তুই চলে আয় আমার সঙ্গে।

আমি ওপরে যাচ্ছি। তুমি আর এসো না।

সূর্যর মুখ থেকে বিষণ্ণতা মুছে গেল। আর দু’ সিঁড়ি উঠে এসে শ্রীলেখাকে বাঘের মতন জড়িয়ে ধরে অদ্ভুত তীব্র গলায় বলল, তোকে আমার চাই!

দিনেরবেলা সিঁড়ির মাথায় এই রকম ঘটনায় শ্রীলেখা এত অসম্ভব ভয় পেয়ে গেল যে ভয় তাকে প্রচণ্ড শক্তি এনে দিল। প্রাণপণে এক ধাক্কা দিল সূর্যকে! সূর্যের মতন বলশালী যুবাও সে ধাক্কা সইতে পারল না। হুড়মুড় করে গড়িয়ে পড়ে গেল দু-তিন সিঁড়ি। সেই আওয়াজ শুনে বাদল আর নিখিলরঞ্জন বেরিয়ে এলেন বাইরে।

সূর্য ওদের দিকে ভ্রূক্ষেপ করল না। শ্রীলেখার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল, তুই আমার কথা শুনলি না। তা হলে আমিও তোকে শান্তিতে থাকতে দেব না। আমি ফিরে আসি, তারপর তোর জীবনটাও আমি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেব।

নিখিলরঞ্জন উঠে এসে সূর্যর পিঠে হাত রেখে বললেন সূর্য, এ কী করছ! শান্ত হও শান্ত হও!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *