২০।৩ বিংশ কাণ্ড : তৃতীয় অনুবাক

তৃতীয় অনুবাক
প্রথম সূক্ত
[ঋষি : মেধাতিথি, প্রিয়মেধ, বসিষ্ঠ দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : গায়ত্রী]

বয়মু ত্বা তদিদৰ্থা ইন্দ্র ত্বায়ত্তঃ সখায়ঃ। কথা উথেভিঞ্জরন্তে ॥১॥ ন ঘেমন্যদা পপন জিন্নপসো নবিষ্টে। তবেদু স্তোমং চিকেত ॥ ২॥ ইচ্ছন্তি দেবাঃ সুম্বতং ন স্বপ্নায় স্পৃহয়ন্তি।  যন্তি প্রমাদমতা ॥৩ বয়মি স্বয়বোহভি প্র পোনুমো বৃষ। বিদ্ধী ত্বস্য নো বসো॥ ৪৷ মা নো নিদে চ বক্তবেহুর্যো রন্ধীররাণে। ত্বে অপি ক্রতুমর্ম ॥৫৷৷ ত্বং বর্মাসি সপ্রথঃ পুরোয়োধশ্চ বৃহন। ত্বয়া প্রতি ব্ৰুৰে যুজা ॥৬॥

বঙ্গানুবাদ –হে ইন্দ্রদেব! আমরা কম্বগোত্রোৎপন্ন মহর্ষিগণ (কথাঃ) আপনার স্তোত্রের প্রয়োজনে আপনার সখা-রূপ বা মিত্রত্ব কামনা পূর্বক উথ অর্থাৎ স্তোত্রের দ্বারা আপনার স্তবন করছি (জরন্তে)। ১।

 হে বজ্ৰধাবী ইন্দ্র! আমি এই নবীন যাগের কর্তা (নবিষ্টো); আপনাকে স্তোত্রসমূহের দ্বারা পূজা করছি; আপনি ব্যতীত অন্য কোন দেবতাকে নয়। কিন্তু আপনার স্তোত্র আমি জ্ঞাত আছি (তবেদু স্তোমং চিকেত); অর্থাৎ আপনি এই যজ্ঞকে লাভ করুন। ২।

 ইন্দ্র প্রমুখ দেবগণ (দেবাঃ) সোমাভিষবকারী যজমানকে রক্ষা করতে ইচ্ছা করেন, সেই বিষয়ে কোন অনাদর অর্থাৎ ঔদাসীন্য করেন না। বরং প্রকর্ষের দ্বারা তুষ্টিকারী যজমানের বা মত্ততাদায়ক সোমের উদ্দেশ্যে অনালস্যে গমন করে থাকেন (অতন্দ্রাঃ যন্তি) ৷৷ ৩৷

হে কামব্যর্ণকারী (বৃষ) ইন্দ্র! আপনার প্রতি ইচ্ছাবন্ত হয়ে, অর্থাৎ আপনার কৃপাকাঙ্ক্ষী হয়ে (ত্বায়বঃ) আমরা প্রকর্ষের সাথে আপনার স্তুতি করছি (অভি প্র ননানুমঃ)। হে ধনবান্ (বসো) ইন্দ্র! আপনিও আমাদের এই স্তোত্রের কামনা করুন (অস্য বিদ্ধি)। ৪।

 হে ইন্দ্র! আপনি আমাদের স্বামী (অঃ)। আমাদের নিন্দক (নিদে), বক্তব্যে আমাদের প্রতি কঠোর বাক্য প্রয়োগকারী, অদাতা অর্থাৎ দানকর্মরহিত যে সকল শত্রু আছে (অরাবণে), আমাদের তাদের বশীভূত বা অধীনস্থ করে দেবেন না (মা রন্ধীঃ)। অধিকন্তু, আমার সঙ্কল্প বা স্তুতিলক্ষণ কর্মসমূহ (ক্রঃ) আপনারই উদ্দেশে নিবেদিত (ত্বে)। (অতএব নিন্দক ইত্যাদির অধীনে আমাদের স্থাপিত করবেন না–এটাই বক্তব্য) ॥ ৫॥

 হে বৃত্র-হন্তারক (বৃহ) ইন্দ্র! আপনি সর্বতঃ মহান্ (সপ্রথঃ), সংগ্রামে অগ্ৰযোদ্ধা (পুরোয়োধঃ) অর্থাৎ আপন সৈন্যগণের পুরোভাগে অবস্থানপূর্বক শত্রুর বিরুদ্ধে সংগ্রামশালী; আপনি আমার কবচ স্বরূপ (ত্ব বর্ম অসি)। এই হেন সহায়ভূত (যুজা) আপনার দ্বারা আমি শত্রুগণকে ভর্ৎসনা করবো (ত্বয়া প্রতি ব্রুবে), অর্থাৎ প্রতিহনন করবো। ৬।

বিনিয়োগ টীকা— ষোড়শ সূক্ত সম্বলিত তৃতীয় অনুবাকের উপযুক্ত সূক্তটি সহ প্রথম চারটি সূক্ত অতিরাত্র ক্রতুতে প্রথম পর্যায়ে ব্রাহ্মণাচ্ছংসী শস্ত্রে বিনিযুক্ত হয়। চতুর্থ সূক্তের শেষ (য উদৃচীন্দ্র ইত্যাদি) মন্ত্রটি পরিধানীয়া। বৈতানিকে (৪২) আরও বিস্তৃত পরিচয় উক্ত হয়েছে। (২০কা, ৩অ. ১সূ.)।

.

দ্বিতীয় সূক্ত

 [ঋষি : বিশ্বামিত্র দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : গায়ত্রী]

বার্তহত্যায় শবসে পৃতনাহ্যায় চ। ইন্দ্র ত্বা বর্তয়ামসি ॥১॥ অর্বাচীনং সু তে মন উত চক্ষুঃ শতক্রতো। ইন্দ্র কৃথন্তু বাঘতঃ ২নামানি তে শতক্রতো বিশ্বাভিগীর্ভিরীমহে। ইন্দ্রাভিমাতিহ্যে ৷ ৩৷৷ পুরুষ্টুতস্য ধামভিঃ শতেন মহয়ামসি। ইন্দ্রস্য চৰ্ষণীধৃতঃ ॥ ৪ইন্দ্রং বৃত্ৰায় হস্তবে পুরুতমুপ ব্রুবে। ভরেষু বাজসাতয়ে ॥৫॥ বাজে সাসহির্ভব ভ্ৰামীমহে শতক্রতো। ইন্দ্র বৃত্রায় হস্তবে ॥৬॥ দ্যুম্নেষু পৃতনাজ্যে পৃৎসুক্ষু শ্ৰবঃসু চ। ইন্দ্র সাহ্মাভিমাতিষু ॥৭॥

বঙ্গানুবাদ –বৃত্ৰ-হননের নিমিত্ত (বার্তহত্যায়), বলের নিমিত্ত (শবসে), অধিকন্তু বিপক্ষীয় সেনাগণের অভিভবের নিমিত্ত (পৃতনাষাহ্যায়), হে ইন্দ্র! আপনাকে আবর্তিত করছি (ত্বা আ বর্তয়ামসি) অর্থাৎ আমাদের অভিমুখী করছি ॥১॥

হে শতসংখ্যক অশ্বমেধ যজ্ঞকারী বা বহুজী (শতক্রতো) ইন্দ্রদেব! আপনার মনকে আমরা হেন সুষ্ঠু অর্বাচীন যজ্ঞনির্বাহক ঋত্বিকগণের (বাঘতঃ) অভিমুখী করুন, এবং আপনার দৃষ্টিকেও আমাদের প্রতি কৃপাবতী করুন। ২।

হে শতক্রতু! শত্রুগণের সংগ্রামে আপনার দ্বারা সহযোগ্যতার উদ্দেশ্যে (অতিমাতিহ্যে) অথবা আপনার দ্বারা সহনযোগ্যকৃত পাপক্ষয়ের নিমিত্ত, আপনার নামসকল, অর্থাৎ সহস্রাক্ষ-পুরন্দর ইত্যাদিরূপ নামগুলি, অথবা বৃত্রবধ ইত্যাদি কর্মসমূহ, স্তুতিলক্ষণ সকল বাক্যের দ্বারা (বিশ্বাভিঃ গীর্ভিঃ) আমরা সঙ্কীর্তন করছি (ঈমহে) ॥ ৩ ৷৷

 বহুজনের দ্বারা বা বহুভাবে স্তুত (পুরুস্তুতস্য), শতসংখ্যক অর্থাৎ অপরিমেয় তেজোযুক্ত অথবা সংখ্যাতীত স্থানযুক্ত (শতেন ধামভিঃ), মনুষ্যবর্গের ধারক (চর্ষণীধৃতঃ) ইন্দ্রের পূজা করছি অথবা শতসংখ্যক স্তোত্রের দ্বারা ইন্দ্রের স্তুতি করছি (মহুয়ামসি)। ৪৷৷

 বহু যজমানের বা স্তোতৃবর্গের দ্বারা আহূত অথবা সংগ্রামে আপন আপন জয়ের নিমিত্ত বহুজন কর্তৃক আহূত (পুরুহুতং), ইন্দ্রদেবের উদ্দশে বৃত্র নামক অসুরকে বধের জন্য বা পাপকে বিনাশের জন্য। অথবা অন্নলাভের নিমিত্ত (বাজসাতয়ে) আমরা স্তুতি করছি (উপ ব্রুবে) ৷৷ ৫৷৷

হে ইন্দ্র! সংগ্রামে (বাজেযু) আপনি শত্রুগণের অভিভবিতা অর্থাৎ আক্রমণকারী হয়ে থাকেন (সাসহিঃ ভব); এই নিমিত্ত, হে শতক্রতু! আপনার নিকট এই প্রার্থনা করছি (ত্বা ঈমহে)। অধিকন্তু, ইন্দ্রদেব বৃত্রাসুরকে হনন করুন বা পাপকে নিবারণ করুন (বৃত্রায় হন্তবে)-(এই নিমিত্ত তাঁর সঙ্কীর্তন করছি–এটাই। বক্তব্য ৷৷ ৬ ৷

 হে ইন্দ্র! সংগ্রামে (পৃতনাজ্যে) ধনপ্রাপ্তির সময়ে (দ্যুম্নেষু), শত্রুসেনাগণকে অতিক্রম করার সময়ে (পৃৎসুতৃষ্ণু, অন্নলাভের সময়ে (শ্ৰবঃসু) এবং শত্রুকে বধ বা পাপকে বিনাশের সময়ে (অভিমাতিযু) আপনি আমাদের অনুসরণ করুন অর্থাৎ সহযোগী হোন (সা)। ৭৷

টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি অতিরাত্রে প্রথম পর্যায়ে ব্রাহ্মণাচ্ছংসীশস্ত্রে বিনিয়োগ উক্ত হয়েছে। (২০কা, ৩অ. ২সূ.)।

.

 তৃতীয় সূক্ত

[ঋষি : বিশ্বামিত্র গৃৎসমদ দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : গায়ত্রী]

শুষ্মিতমং ন উতয়ে দুনিং পাহি জাগৃবি। ইন্দ্র সোমং শতক্রতো॥১॥ ইন্দ্রিয়াণি শতক্রতো যা তে জনেষু পঞ্চসু। ইন্দ্র তানি ত আ বৃণে ॥২॥ অগন্নি এবো বৃহদ দ্যুম্নং দধিষ দুষ্টর উৎ তে শুষ্ম তিরামসি ৷৩৷৷ অর্বাবতো ন আ গহ্যথো শক্র পরাবতঃ। উ লোকো যন্তে অদ্রিব ইন্দ্ৰেহ তত আ গহি॥৪॥ ইন্দ্রো অঙ্গ মহত্তয়মভী ষদপ চুচ্যবৎ। স হি স্থিররা বিচৰ্ষণিঃ ॥৫॥ ইন্দ্রশ মৃলয়াতি নো ন নঃ পশ্চাদং নশৎ। ভদ্রং ভবাতি নঃ পুরঃ ॥৬॥ ইন্দ্র আশাভ্যম্পরি সর্বাভ্যো অভয়ং করৎ। জেতা শক্ৰ বিচৰ্ষণিঃ ॥৭॥

বঙ্গানুবাদ –হে শতক্রতু ইন্দ্র! আমাদের সম্বন্ধিত অর্থাৎ আমাদের দ্বারা নিবেদিত (নঃ) অতিশয় বলবন্ত (শুষ্মিন্তমং), দ্যোতনবন্ত (দ্যুনিং ) জাগরণশীল অর্থাৎ স্বপ্ননিবারক (জাগৃবি) সোম আমাদের রক্ষণের নিমিত্ত পান করুন (উতয়ে পাহি)। ১।

হে শতক্রতু ইন্দ্র! আপনার সম্বন্ধী যে প্রসিদ্ধ ইন্দ্রিয়সমূহ (ইন্দ্রিয়াণি) অর্থাৎ আপনার সৃষ্ট বা আপনা কর্তৃক দত্ত যে বীর্য সমুদায় অর্থাৎ দর্শন-শ্রবণ ইত্যাদি লক্ষণান্বিত সামর্থ্য পঞ্চ জনে (পঞ্চসু জনে্যু) অর্থাৎ দেব-মনুষ্য-পিতৃ-অসুর রাক্ষসে অথবা ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য-শূদ্র-নিষাদে বিদ্যমান, সেগুলি যেন আমরা লাভ করতে পারি (তানি তে আ বৃণে)। ২।

হে ইদ্র! আপনার সম্বন্ধী প্রভূত অন্ন (বৃহৎ শবঃ) আমাদের নিকট আগত তোক (অগন) অর্থাৎ আমরা যেন তা লাভ করতে পারি অথবা উক্তরূপ সোমলক্ষণ অন্ন আপনার সমীপে গমন করুক, অর্থাৎ আপনি প্রাপ্ত হোন। আপনি শত্রুগণের তরণের বা পরিহারের অযোগ্য (দুস্তরং) দ্যোতমান (দ্যুম্নং) যশ বা স্বর্ণ ইত্যাদি সম্ভার আমাদের মধ্যে স্থাপন করুন (দধি); আমরা সোমের দ্বারা ও স্তোত্রের দ্বারা আপনার বলবৃদ্ধি করছি (তে শুষ্মং উৎ তিরামসি) ॥ ৩॥

 হে বলবান্ ইন্দ্র (শ)! আপনি সমীপবর্তী দেশ হতে (অর্বাবতঃ) কিংবা (অথথা) অতি দূরবর্তী কোন দেশ হতে (পরাবতঃ) আমাদের অভিলক্ষ্যে (নঃ) আগমন করুন (আ গহি)। হে বজ্রধারী (অদ্রিবঃ) ইন্দ্র! আপনার যে উত্তম লোক আছে (তে যঃ লোকঃ), সেই স্থান হতে এই দেবযজন দেশে অর্থাৎ যজ্ঞস্থানে (ইহ) সোমপানার্থে আগমন করুন। ৪

হে আত্মা বা ঋত্বিক (অঙ্গ)! ইন্দ্রদেব আমাদের নিমিত্ত অন্যের দ্বারা উৎপন্ন প্রভূত (মহৎ) ভয় পরিহার পূর্বক (অভী যৎ) আমাদের নিকট হতে পৃথক করে দূরে অপসারিত করে দেন (অপ চুচ্যবৎ)। সেই ইন্দ্র (সঃ হি) অবশ্যই স্থির, অন্যের দ্বারা বিচলিত নন এবং বিশ্বের দ্রষ্টা (বিচর্ষাণিঃ)। ৫।

আমাদের আশ্রয় স্বরূপ, সর্বপ্রাণীর রক্ষক পরমৈশ্বর্য-গুণবিশিষ্ট ইন্দ্রদেব আমাদের সুখী করুন (মৃলয়াতি)। তাহলে পশ্চাৎ দিক হতে আমাদের নিকট কোন পাপ বা দুঃখ (পশ্চাৎ অঘ) প্রাপ্ত না হই (ন নশৎ), অধিকন্তু আমাদের সম্মুখে (নঃ পুরঃ) মঙ্গল হোক (ভদ্রং,ভবাতি)। ৬৷৷

সেই ইন্দ্রদেব সকল দিক হতে (সর্বাভ্যঃ আশাভ্যঃ পরি) অর্থাৎ দিক-বিদিক হতে ও ঊর্ধ্ব-অধঃ দিক হতে আমাদের অভয় করুন; (সকল দিক্-গত ভয় পরিহারের সামথ্য সম্ভাবিত করুন–এটাই প্রার্থনা)। সেই ইন্দ্র সকল দিকে আমাদের ভয়প্রদায়ী যে সকল শত্রু আছে, তাদের সকলের অভিভবিতা (জেতা) ও তাদের বিরূপভাবে দ্রষ্টা (বিচৰ্ষণিঃ) ॥৭

বিনিয়োগ টীকা— এই সূক্তটির অতিরাত্রে ব্রাহ্মণাচ্ছংসীগণের প্রথম পর্যায়শস্ত্রে বিনিয়োগ উক্ত হয়েছে। (২০কা, ৩অ, ৩সূ.)।

.

 চতুর্থ সূক্ত

 [ঋষি : সব্য দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : জগতী ত্রিষ্টুপ]

 নষু বাচং প্র মহে ভরামহে গির ইন্দ্রায় সদনে বিবস্বতঃ। নূ চিদ্ধি রত্নং সসতামিবাবিন্ন দুষ্টুতিবিপোদেষু শস্যতে ॥১॥ দুরো অশ্বস্য দুর ইন্দ্র গোরসি দুরো যবস্য বসুন ইনস্পতিঃ। শিক্ষানরঃ প্রদিবো অকামকৰ্শনঃ সখা সখিভ্যন্তমিদং গৃণীমসি ॥ ২॥ শচীব ইন্দ্র পুরুকৃৎ দ্যুমত্তম তবেদিদমভিতশ্চেকিতে বসু। অতঃ সংগৃভ্যাভিভূত আ ভর মা জ্বায়তত জরিতুঃ কামমূনয়ী ॥৩॥ এভিভিঃ সুমনা এভিরিভির্নিরুন্ধানো অমতিং গোভিরশ্বিনা। ইন্দ্ৰেণ দস্যুং দরয়ন্ত ইন্দুভিযুতদ্বেষসঃ সমিষা রভেমহি॥৪॥ সমিন্দ্র রায়া সমিষা রভেমহি সং বাজেভিঃ পুরশ্চরৈভিদভিঃ। সং দেব্যা প্রমত্যা বীরশুম্ময়া গোঅগ্রয়াশ্বাবত্যা রভেমহি॥৫॥ তে ত্বা মদা অমদ তানি বৃষ্ণ্যা তে সোমাসো বৃত্ৰহত্যেষু সৎপতে। যৎ করবে দশ বৃত্ৰাণ্যপ্রতি বহিম্মতে নি সহস্রাণি বহঁয়ঃ ॥ ৬ যুধা যুধমপ ঘেদেসি খৃষ্ণুয়া পুরা পুরং সমিদং হংস্যোজসা। নম্যা যদি সখ্যা পরাবতি নিবৰ্হয়ো নমুচিং নাম মায়িন।৭৷ ত্বং করঞ্জমুত পর্ণয়ং বধীস্তেজিষ্ঠয়াতিথিশ্বস্য বর্তনী। ত্বং শতা বদস্যাভিনৎ পুরোইনানুদঃ পরিমূতা ঋজিশনা ॥৮ তমেতাং জনরাজ্ঞো দ্বিদশাবন্ধুনা সুশ্রবসোপজগুষঃ। ষষ্টিং সহস্রা নবতিং নব শ্রুততা নি চক্রেণ রথ্যা দুষ্পদাবৃণ॥৯॥ ত্বমাবিথ সুশ্রবসং তবোতিভিস্তব ত্রামভিরিন্দ্র তূর্বয়াণ। ত্বমস্মৈ কুৎসমতিথিঘুমায়ুং মহে রাজ্ঞে যুনে অরন্ধনায়ঃ ॥ ১০৷ য উদৃচীন্দ্র দেবগোপাঃ সোয়স্তে শিবতমা অসাম। ত্বং স্তোষাম ত্বয়া সুবীরা দ্রাঘীয় আয়ুঃ প্রতরং দধানাঃ ॥১১।

বঙ্গানুবাদ –আমরা মহান (মহে) ইন্দ্রদেবের নিমিত্ত (ইন্দ্রায়) সুন্দর স্তোত্র (সু বাচম) নিরন্তর প্রযুক্ত বা প্রয়োগ করছি (নি প্র ভরামহে)। যেহেতু পরিচর্যাকারী যজমানের (বিবস্বতঃ) যজ্ঞমণ্ডপে (সদনে) তাঁর উদ্দেশে স্তুতি করা হয়, (গিরঃ)। সেই ইন্দ্র (হি) ক্ষিপ্রতার সাথে (নূ চিৎ) অসুরগণের রমণীয় ধন (রত্নং) লাভ করেন (অবিদৎ); (তার দৃষ্টান্ত কি? না–) সসতামিব অর্থাৎ চোর যেমন নিদ্রিত মনুষ্যের ধন ক্ষিপ্রতার সাথে লাভ করে, সেই রকম। (ভাব এই যে, এই কারণে ইন্দ্রদেব আমাদের ধনপ্রদানে সমর্থ)। ধনদাতা পরুষের প্রতি (দ্রোবিপণাদে) অসমীচীনা স্তুতি (দুস্তুতি) বচনীয় নয় বা ফলপ্রসূ নয় (ন শস্যতে)। (বক্তব্য এই যে, সেই জন্যই আমরা সুন্দর স্তোত্রের দ্বারা স্তুতি করছি)। ১।

 হে ইন্দ্র! আপনি অশ্ব-গজ ইত্যাদি বাহন সমূহের দাতা (অশ্বস্য দুরঃ) এবং গো-মহিষ ইত্যাদি সম্পদ ও ব্রীহি ইত্যাদি ধান্যজাত অন্নের দাতা (গোঃ যবস্য দুরঃ অসি)। এইমতো আপনি হিরণ্য-মণিমুক্তা ইত্যাদিরূপ ধনের (বসুনঃ) স্বামী (ইনঃ) ও পালক (পতিঃ)। আপনি দানের নেতাস্বরূপ অথবা মনুষ্যগণের শিক্ষকস্বরূপ (শিক্ষানরঃ), অত্যন্ত প্রাচীন বা আদিমতম (প্রদিবঃ), আপন সেবকদের প্রতি অভীষ্টবর্ষক (অকামকৰ্শনঃ), সখিভূত অর্থাৎ সখ্যতাসম্পন্ন ঋত্বিকগণের মিত্রভূত (সখা সখিভ্যঃ)–এই হেন মহিমময় আপনার (তং) উদ্দেশে আমরা স্তোত্র উচ্চারণ করছি (ইদং গৃণীমসি)। ২।

 হে প্রজ্ঞানী (শচীবঃ)! হে পরমেশ্বর্যশালী (ইন্দ্র)! আপনি বহু কর্মকারী (পুরুকৃৎ), শ্রেষ্ঠ দীপ্তিমান্ (দ্যুমত্তম)। সর্বত্র যে ধন বিদ্যমান (অভিতঃ যৎ বসু), তার সবেরই আপনি অধিকারী বলে আমরা জ্ঞাত আছি (তৎ ইদং তব ইৎ চেকিতে)। হে শত্রুগণের অভিভবকারী ইন্দ্র! এই কারণে (অতঃ) সকল ধন সংগ্রহ পূর্বক (সংগৃভ্য) আমাদের প্রদান করুন (আ ভর)। আপনাতে ইচ্ছাকারী (ত্বায়তঃ), অর্থাৎ আপনার কৃপাভিলাষী, স্তোতারূপী আমার কামনা (জরিতুঃ কাম) নিষ্ফল করবেন না (মোনয়ীঃ); (অর্থাৎ পূর্ণ করুন–এটাই প্রার্থনা) ৷ ৩৷৷

হে ইন্দ্র! আমাদের প্রদত্ত (এভিঃ) দীপ্ত চরু-পুরোডাশ ইত্যাদি (দ্যুভিঃ) এবং আমাদের প্রদত্ত (এভিঃ) সোমের দ্বারা (ইন্দুভিঃ) প্রসন্ন হয়ে আপনি আমাদের বহু গো-অশ্ববৎ ধনের দ্বারা (গোভিঃ অশ্বিনা) আমাদের দারিদ্র্য (অমতিং) নিবারণ পূর্বক (নিরুন্ধানঃ) শোভন মনোভাবাপন্ন (সুমনাঃ) হোন। আমরা আমাদের প্রদত্ত সোমের দ্বারা প্রীত ইন্দ্রের দ্বারা (ইন্দুভিঃ ইন্দ্ৰেন) উপপয়িতা অর্থাৎ হানিকারক শত্রুদের (দস্যুং) বিদারক হবো (দরয়ন্ত) এবং অপগতশত্রু হয়ে (যুতদ্বেষসঃ) ইন্দ্রদত্ত অন্নের দ্বারা (ইষা) সঙ্গত অর্থাৎ যুক্ত হবো (সং রভেমহি) ॥ ৪

হে ইন্দ্র! আমরা আপনার ধনের (রায়া) সাথে যুক্ত হবো (সং রভেমহি)। তথা সকলের ইষ্যমাণ অর্থাৎ অভিলষিত অন্নের সাথে যুক্ত হবো। তথা আপনার বলের সাথে (বাজেভিঃ) যুক্ত হবো। (কিরকম বল? না) পুরুশ্চন্দ্রৈঃ অভিদ্যুভিঃ অর্থাৎ বহু প্রজার আহ্লাদক, ও তাদের অভিমুখে দীপ্যমান বল। অধিকন্তু, ইন্দ্রদেব। ( সম্বন্ধিনী প্রকৃষ্ট অনুগ্রহরূপা বুদ্ধির (প্রমত্যা) সাথে যুক্ত হবে। (কিরকম অনুগ্রহ বুদ্ধি? না) বীরশুষ্ময়া অর্থাৎ বিবিধ ক্লেশ নিবারক বল, এবং গোঅগ্রয়া অশ্বাবত্যা অর্থাৎ গাভী ও অশ্বের দানসমন্বিত অনুগ্রহ বুদ্ধি। ৫।

 হে সাধুজনের রক্ষক (সৎপতে) ইন্দ্র! শত্রুগণের বিনাশের নিমিত্তভূত (বৃহত্যে) প্রসিদ্ধ মদকর সামগ্ৰীসমূহ (তে মদাঃ) অর্থাৎ আজ্য-পুরোডাশ ইত্যাদি আপনাকে হর্ষান্বিত করে (অমদ)। তথা প্রসিদ্ধ (তানি) হর্ষসাধনত্ব সম্বন্ধিনী স্তোত্রের দ্বারা প্রবুদ্ধ হয়ে আপনি আমাদের নিমিত্ত অভীষ্ট ফলের বর্ষক (খৃষ্ণা) হোন। প্রসিদ্ধ (তে) সেই সোমসমূহও আপনাকে হর্ষান্বিত করে (সোমাসঃ অমদ, যখন (যৎ) স্তোতৃগণ (কারবে) যাগরত যজমানের (বহিষ্মতে) দশ সহস্ৰসংখ্যক আবরক পাপসমূহ (বৃত্রাণি) বা শত্রুগণকে আপনি নিশ্চিহ্ন (অপ্রতি) করে বধ করে থাকেন (বয়ঃ) ৬

হে ইন্দ্র! আপনি প্রহরণসাধন বজ্রের দ্বারা (যুধা) শত্রুর প্রহরণের বা ধর্ষক যোদ্ধার (ধৃষ্ণুয়া) সম্মুখে গমন করেন। (এখানে দ্বন্দ্বযুদ্ধের কুশলত্ব উক্ত হয়েছে)। স্বকীয় মরুৎ প্রভৃতি যোদ্ধৃবৃন্দের বলের দ্বারা (ওজসা) ইদানীং (ইদ) শত্রু-নগরে বাসকারী বীরবর্গকে সম্যক বিনাশ করিয়ে থাকেন (সং হংসি)। যে কারণে সকলের নমনীয় (যৎ নম্যা) আপনার সখিভূত (সখ্যা) অস্ত্রের দ্বারা দূরদেশে (পরাবতি) নমুচি নামধেয় মায়াবী (মায়িন) অসুরকে নিরন্তর বিনাশ করেছেন। (অতএব সেই কারণে আপনার স্তুতি করছি–এই বক্তব্য)। ৭

হে ইন্দ্র! আপনি করঞ্জ নামক অসুরকে বধ করেছেন। অধিকন্তু (উত) পর্ণয় নামক অসুরকেও বধ করেছেন। (কি জন্য? না–) অতিথিথ নামক সেই রাজার প্রয়োজনে, যাঁর গাভীগুলি অতিথির সেবার্থে রক্ষিত। (কিসের দ্বারা অসুরকে নিধন করেছেন? না–) তেজিষ্ঠয়া বর্তনী অর্থাৎ অতিশয় তেজোবত্যা অর্থাৎ সুতীক্ষ্ণ বর্তনী নামক আয়ুধের দ্বারা। আরও, আপনি ঋজিশ্বনা নামক রাজার নিমিত্ত সর্বতোভাবে আবেষ্টনকারী (পরিদূতা) শতসংখ্যক বদ নামক অসুরের নগরসমূহ (পুরঃ) আপনি অসহায়ভূত অবস্থায় অথবা একাকীই ধ্বংস করেছেন ॥ ৮।

হে বিখ্যাত (তঃ) ইন্দ্র! আপনি সহায়বর্জিত অর্থাৎ বন্ধুহীন (অবন্ধুনা) সুশ্রবা নামক রাজার নিমিত্ত প্রসিদ্ধ প্রতিরোধকারী (এতান উপজম্মুষঃ) জনরাজার দ্বিগুণিত দশসংখ্যক অর্থাৎ বিংশতি সংখ্যক (দ্বির্দশ), ষষ্টিসহস্ৰসংখ্যক অর্থাৎ ষাট সহস্র (যষ্টিং সহস্রা), তথা নবোত্তরনবতিসংখ্যক অর্থাৎ নিরানব্বই সংখ্যক (নবতিং নব) সেনানায়কগণকে শত্রুর অগম্য (দুষ্পদা) মার্গে (রথ্যা) চক্রের দ্বারা বিনাশ করেছেন (চক্রেণ নি অবৃণ) ॥৯॥

 হে ইন্দ্র! আপনি সুশ্রবা নামক দুর্বল রাজার রক্ষার নিমিত্ত (পূর্ব মন্ত্রে বন্ধুহীন সুশ্রবা নামক রাজা এই মন্ত্রে পুনরায় উল্লেখিত হচ্ছেন তবে এই স্থলে উতিভিঃ অর্থাৎ রক্ষার নিমিত্ত কথাটি যুক্ত হয়েছে) তুর্বয়াণ নামক রাজাকে পালন করেছেন (তব ভ্রামভিঃ)। এইভাবে আপনি মহৎ (মহে) যুবরাজভূত (শূনে) সুশ্রবা রাজার নিমিত্ত কুৎস, অতিথিথ ও আয়ু নামধেয় রাজগণকে বশে আনয়ন করেছেন (অরন্ধনায়ঃ)। ১০

হে ইন্দ্র! এই যজ্ঞের সম্পন্নতার সময়ে বর্তমান (উদৃচি) আপনি হেন দেবতা দ্বারা রক্ষিত বা পালিত (দেবগোপাঃ) আমরা, আপনার বন্ধুর ন্যায় (তে সখায়ঃ) অতিশয় প্রিয়রূপে কল্যাণ লাভ করবো (শিবতমা অসাম)। আমরা যজ্ঞসমাপ্তির উত্তরকালেও আপনার স্তব করবো (ত্বম স্তোষাম)। আমাদের দ্বারা স্তুত আপনার দ্বারা (ত্বয়া) আমরা শোভন পুত্রবন্ত (সুবীরাঃ) হয়ে অতিশয় দীর্ঘ আয়ু (দ্রাঘিয়ঃ আয়ুঃ) প্রকৃষ্টরূপে ধারণ করবো (প্রতরং দধানাঃ)। ১১

বিনিয়োগ টীকা –উপযুক্ত সূক্তটির বিনিয়োগ ব্রাহ্মণাচ্ছংসীর প্রথমপর্যায়শস্ত্রে উক্ত হয়েছে। এই সূক্তের ১১শতম মন্ত্রটি (য উদৃচি ইত্যাদি) পরিধানীয়া ॥ (২০কা, ৩অ. ৪সূ.)।

.

পঞ্চম সূক্ত

[ঋষি : ত্রিশোক, প্রিয়মেধ দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : গায়ত্রী]

অভি ত্বা বৃষভা সুতে সুতং সৃজামি পীতয়ে। তৃম্পা ব্যশ্নহী মদ৷৷ মা ত্বা মূরা অবিষ্যবো মোপহস্থান আদভ। মাকীং ব্রহ্মদ্বিমো বনঃ ॥ ২॥ ইহা ত্বা গোপরীণসা মহে মন্তু রাধসে। সরো গৌরো যথা পিব৷ ৩ অভি প্র গোপতিং গিরেন্দ্রমর্চ যথা বিদে। সূনুং সত্যস্য সৎপতিম্ ॥৪॥ আ হরয়ঃ সসৃজ্বিরেরুষীরধি বহিষি। যত্রাভি সন্নবামহে॥ ৫৷৷ ইন্দ্রায় গাব আশিরং দুদুহ্রে বজিণে মধু। যৎ সীমুপহুরে বিদৎ ॥৬॥

বঙ্গানুবাদ –হে অভীষ্টবষক (বৃষভ) ইন্দ্র! সোম অভিযুত হলে (সুতে) সেই অভিষব ইত্যাদির দ্বারা শোধিত বা সংস্কৃত সোম পানের নিমিত্ত (সুতং পীতয়ে) আপনাকে (ত্বা) সংযোজিত বা নিয়োজিত করছি (সৃজামি)। সেই সোমের দ্বারা আপনি তৃপ্তি লাভ করুন (তৃম্প) এবং মদকর সোম (মদং) ব্যাপ্ত করুন (বি অশ্নহি)। ১।

 হে ইন্দ্র! আপনার অনুগ্রহ ব্যতিরেকে (ত্বা অবিষ্যবঃ) নিজেকে রক্ষার অভিলাষ করে আমরা আত্মহিতের উপায় অজ্ঞাত (মুরাঃ–মূঢ়াঃ) হয়েছি। অতএব আমাদের হিংসা করবেন না (মা দভ)। তথা আপনাকে উপহাসকারীগণও (উপহস্বানঃ) যেন আপনাকে হিংসা করতে না পারে। এবং আপনি ব্রাহ্মণবিদ্বেষীগণের ভজন করবেন না অথবা তাদের সেবা স্বীকার করবেন না (ব্রহ্মদ্বিষঃ মাকী বনঃ)। ২।

হে ইন্দ্র! এই যুগে (ইহ) গোরস (অর্থাৎ গো-বিকারের দ্বারা প্রস্তুত দুগ্ধ) মিশ্রিত সোমের দ্বারা (গোপরীণসা) ঋত্বিগণ মহতি ধনের নিমিত্ত আপনাকে প্রসন্ন করুন (মহে রাধসে ত্বা মন্তু)। যেমন (যথা) সরণশীল জলে বা সরোবরে (সরঃ) গমন পূর্বক পিপাসার্ত গৌরমৃগ (গৌরঃ) জল পান করে, আপনিও তেমনই (সোমরস) পান করুন (পিব) ৷ ৩৷

 হে স্তুতিকারীগণ! স্বর্গের বা গাভীবর্গের স্বামী (গোপতিং) ইন্দ্র যাতে তার সেবকরূপী আমাদের পালকরূপে নিজেকে জ্ঞাত হন (যথা সৎপতিম বিদে), সেই রকমে প্রকর্ষের সাথে তার অর্চনা করো (গিরা অভি প্র অর্চ)। (কিরকম ইন্দ্র? না) সত্যস্য সূনুম অর্থাৎ সত্যের ফলস্বরূপ যজ্ঞের বা সত্যের পুত্রস্থানীয়। (যেখানে যজ্ঞ সেখানেই ইন্দ্রের অবস্থান হেতু তাদের পিতা-পুত্রবৎ অব্যবহিত সম্বন্ধ লক্ষণার দ্বারা বোধিত)। ৪।

ইন্দ্রের আরোচমান অর্থাৎ দীপ্তিমান চ অশ্বগুলি (অরুষীঃ হরয়ঃ) তার রথে যোজিত হয়ে কুশাস্তীর্ণ স্থলে (আ সমৃজ্বিরে অধি বহিষি) অর্থাৎ যজ্ঞস্থলে তাঁকে নীত করুক। সেই কুশের দ্বারা (যত্র) আমরা ইন্দ্রের স্তুতি করছি (অভি সন্নবামহে)। ৫।

 যখন (যৎ) নিকটে (উপরে) বিদ্যমান মধুর ন্যায় স্বাদুভূত সোম ইন্দ্র সর্বতঃ লাভ করেন (সীম্ বিদৎ), তখন বজ্রযুক্ত ইন্দ্রের উদ্দেশে (বর্জিণে ইন্দ্রায়) গাভীগণ মধুর আশ্রয়ণসাধন দুগ্ধ ক্ষরণ করছে (মধু আশিরং দুদুহ্রে) ॥ ৬৷

বিনিয়োগ টীকা –অতিরাত্ৰ ক্ৰতুতে মধ্যমপর্যায়ে ব্রাহ্মণাচ্ছংসী শস্ত্রে উপযুক্ত সূক্তটি সহ পর পর চারটি (অর্থাৎ ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম) সূক্ত বিনিযুক্ত হয়। বলা বাহুল্য উল্লিখিত সূক্তগুলির শেষে এইরকমেই বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। (২০কা, ৩অ. ৫সূ.)।

.

ষষ্ঠ সূক্ত

 [ঋষি : বিশ্বামিত্র দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : গায়ত্রী]

আ তু ন ইন্দ্র মদ্রগঘুবানঃ সোমপীতয়ে। হরিভ্যা যাহ্যদ্রিবঃ ॥১॥ সত্তো হোতা ন ঋত্বিয়স্তিস্তিরে বহিরানুষ। অযুজন প্রাতরদ্রয়ঃ ॥২॥ ইমা ব্ৰহ্ম ব্ৰহ্মৰাহঃ ক্রিয়ন্ত আ বর্হিঃ সীদ। ব্রীহি শূর পুরোলাশ ৷৩৷ রাবন্ধি সবনেষু ণ এষু স্তেমেষু বৃত্রহ। উথেন্দ্রি গির্বণঃ ॥৪॥ মতয়ঃ সোমপামুরুং রিহন্তি শবসম্পতি। ইন্দ্রং বৎসং ন মাতরঃ ॥৫৷৷ স ম হান্ধসো রাধসে তম্বা মহে। ন স্তোতারং নিদে করঃ ॥৬॥ বয়মি দ্বায়বো হবিষ্মন্তো জরামহে। উত ত্বমস্ময়ূর্বসো॥৭॥ মারে অম্মৎ বি মুমুচো হরিপ্রিয়াবা যাহি। ইন্দ্র স্বধাবো মৎস্বেহ। ৮। অর্বাঞ্চং ত্বা সুখে রথে বহতামিন্দ্র কেশিনা। ঘৃত বহিরাসদে॥৯॥..

বঙ্গানুবাদ –হে বজ্ৰবান্ (অদ্রিবঃ) ইন্দ্র! হুয়মান অর্থাৎ আহূত (হুবানঃ) আপনি আমাদের যজ্ঞের অভিমুখে (নঃ মদ্র) অশ্বের দ্বারা বাহিত হয়ে (হরিভ্যা) সোমপানের নিমিত্ত। ( (সোমপীতয়ে) আগমন করুন (আ যাহি) ॥১।

 হে ইন্দ্র! আমাদের যজ্ঞে হোতা নামক ঋত্বিক প্রাপ্তকাল হয়ে (ঋত্বিয়) অর্থাৎ উপস্থিত হয়ে বেদীতে পরস্পর সম্বন্ধিত করে অর্থাৎ ঘনিষ্ঠভাবে কুশ আস্তীর্ণ করেছেন (বৰ্হি আনুষ তিস্তিরে); সেইমতো প্রাতঃসবনে (প্রাতঃ) প্রস্তরগুলি (অদ্রয়ঃ) সোমাভিষবের নিমিত্ত সঙ্গত বা সজ্জিত করা হয়েছে (অযুজন)। ২।

 হে ব্রহ্মবাহ (স্তোত্ররূপ মন্ত্রের প্রাপক) ইন্দ্র! আপনার উদ্দেশে এই স্তোত্ৰসমূহ (ইমা ব্রহ্ম) প্রয়োগ করা হচ্ছে (ক্রিয়ন্তে)। সেই হেতু আপনি এই কুশসমূহের উপরে উপবেশন করুন (বৰ্হি আ সীদ)। হে শৌর্যশালী (শূর) ইন্দ্র! আমাদের দীয়মান ব্রীহি বা হবিঃ ভক্ষণ করুন (পুরোলাশ)। ৩ ৷৷

হে স্তুতির দ্বারা বর্ণনীয় (গির্বণঃ) ইন্দ্র! হে বৃত্রের হন্তা (বৃহ) ইন্দ্র! আমাদের তিনটি সবনে ক্রিয়মাণ (সবনেষু এষু) স্তোত্র ও উথ শস্ত্রে (স্তেমেষু চ উকথেযু) আপনি প্রীত হোন (ররন্ধি)। ৪

আমাদের ক্রিয়মাণ স্তুতিগুলি (মতয়ঃ), মহান (উরুং), সোমপানকারী (সোমপাম), ও বলের প্রভুস্বরূপ (শবসঃ) ইন্দ্রকে প্রাপ্ত হোক (রিহন্তি); (তার দৃষ্টান্ত কি? না) বৎসং ন মাতরঃ অর্থাৎ মাতা গাভী যেমন বৎসগাত্র লেহন করে, সেইরকম ॥ ৫৷৷

হে ইন্দ্র! তথাবিধ আপনার (সঃ) শরীরের বলের নিমিত্ত (তন্ব) ও প্রভূত ধনের অর্থাৎ ধন দানের নিমিত্ত (মহে রাধসে) সোমলক্ষণ অন্নের দ্বারা অর্থাৎ সোমপানের দ্বারা (অন্ধসঃ) আপনি হর্ষিত হোন (মন্দস্ব)। আমি হেন স্তুতিকারী জনকে (স্তোতার)। পরকৃত নিন্দাভাজন করবেন না (নিদে ন করঃ) ॥ ৬৷৷

 হে ইন্দ্র! তোমাতে কাময়মান আমরা (ত্বায়বঃ) (তোমাকে প্রদানের নিমিত্ত) সোমলক্ষণ হবির দ্বারা সম্পন্ন হয়ে (হবিষ্মন্তঃ) আপনার স্তুতি করছি (জরামহে)। (উত) হে সকলের নিবাসরূপ (বসো) ইন্দ্র! আপনি (ত্বম) অভিমত ফল প্রদানের নিমিত্ত আমাদের কাময়িতা হোন (অস্মান অন্ত্ৰয়ুঃ ভব)। ৭।

হে হরিপ্রিয় (হরী নামক দুই অশ্বের প্রতি প্রতিমান) ইন্দ্র! আমাদের নিকট হতে দূরে (আরে) আপনার রথযুক্ত অশ্বদ্বয়কে মুক্ত করবেন না (মা বি মুমুচঃ), বরং রথারূঢ় হয়ে আমাদের অভিমুখে আগমন করুন (অর্বাঙ যাহি)। হে হবিলক্ষণ অন্নের দ্বারা যুক্ত (স্বধাবঃ) ইন্দ্র! আমাদের এই দেবযজনে (ইহ) সোমপানের দ্বারা হর্ষে পূর্ণ হোন (মৎস্ব) ৮

হে ইন্দ্র! আপনাকে আপন শরীরপীড়নের দ্বারা সুখকর (সুখে) রথে বহন পূর্বক (বহতাম), স্কন্ধপ্রদেশে লম্বমান কেশযুক্ত (কেশিনা), শ্রমজনিত কারণে স্বেদাবী অশ্বদ্বয় (ঘৃত) আমাদের যজ্ঞাগ্নির নিকটে বা আস্তীর্ণ কুশসমূহের উপরে (বহি) বিরাজমান করার নিমিত্ত আনয়ন করুক (আসদে)। ৯৷৷

বিনিয়োগ টীকা –উপযুক্ত সূক্তটির অতিরাত্রে মধ্যমে রাত্রিপর্যায়ে ব্রাহ্মণাচ্ছংসী শস্ত্রে বিনিয়োগ উক্ত হয়েছে ৷ (২০কা, ৩অ. ৬সূ.)।

.

সপ্তম সূক্ত

[ঋষি : বিশ্বামিত্র দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : গায়ত্রী]

 উপ নঃ সুতমা গহি সোমমিন্দ্র গবাশিরম। হরিভ্যাং যন্তে অস্ময়ুঃ ॥১॥ তমিন্দ্র মদমা গহি বহিষ্ঠাং গ্রাবভিঃ সুত৷ কুবিন্বস্য তৃষ্ণবঃ ॥ ২॥ ইন্দ্ৰমিখা গিরো মমাচ্ছাগুরিষিতা ইতঃ। আবৃতে সোমপীতয়ে ॥ ৩৷৷ ইং সোমস্য পীতয়ে স্তোমৈরিহ হবামহে৷ উথেভিঃ কুবিদাগমৎ ॥৪॥ ইন্দ্র সোমাঃ সুতা ইমে তা দধিম্ব শতক্রতো৷ জঠরে বাজিনীৰসো॥৫৷৷ বিদ্মা হি ত্বা ধনঞ্জয়ং বাজেযু দধৃষং কবে। অধা তে সুম্নমীমহে৷৷ ৬ ৷৷ ইমমিন্দ্র গবাশিরং যবাশিরং চ নঃ পিব। । আগত্যা বৃষভিঃ সূতম্ ॥ ৭৷ তুভ্যেদিন্দ্র স্ব ওক্যে সোমং চোদামি পীতয়ে। এষ রারন্তু তে হৃদি ॥ ৮ ত্বং সুতস্য পীতয়ে প্রত্নমিন্দ্র হবামহে। কুশিকাসসা অবস্যবঃ ॥৯॥

বঙ্গানুবাদ –হে ইন্দ্র! আমাদের অভিযুত (সুতং) গব্যদুগ্ধের আশ্রয়সাধন (গবাশিরঃ) অর্থাৎ গব্যদুগ্ধমিশ্রিত সোমের প্রতি বা সমীপে আপনি আগত হোন (উপা গহি), যেহেতু (যঃ) আপনার অশ্বযুক্ত (হরিভ্যাং) রথ আমাদের এই স্থানে আগমনের নিমিত্ত কামনা করছে ৷৷ ১।

হে ইন্দ্র! আপনার প্রসিদ্ধ (তং) মদকর (মদ), বিস্তৃত কুশের উপরে স্থিত বা রক্ষিত (বহিষ্ঠাং) পাষাণের দ্বারা অভিযুত অর্থাৎ শিলে পিষ্ট সোম (গ্রাবভিঃ সুতং) অভিলক্ষ্য করে আগমন করুন (আ গহি) এবং ক্ষিপ্রতার সাথে (নু) এই সোমপানের দ্বারা (অস্য) প্রভূত (কুবি) তৃপ্ত হও (তৃষ্ণবঃ)। ২।

আমাদের স্তুতিরূপা বাণীসমূহ ইন্দ্রের অভিলক্ষ্যে (ইন্দ্রং অচ্ছ মম গিরঃ) আমাদের দ্বারা প্রেরিত হয়ে (ইষিতা) এই যজ্ঞস্থলী হতে উচ্চাৰ্যমাণ প্রকারে প্রাপ্ত হচ্ছে অর্থাৎ উচ্চারণ করা মাত্রই ইন্দ্রাভিমুখে উপনীত হতে চলেছে (ইতঃ ইস্থা অগুঃ)। (কি জন্য? না–) আবৃত সোমপীতয়ে অর্থাৎ আমাদের প্রতি আগমনের জন্য এবং সোমপানের জন্য ৷৷ ৩৷৷

ইন্দ্রদেবকে সোমপানের নিমিত্ত (সোমস্য পীতয়ে) এই যজ্ঞস্থলে (ইহ) ত্রিবৃৎ ইত্যাদি স্তোমসাধ্য স্তোত্রসমূহে (স্তোমৈঃ) ও আজ্য ইত্যাদি শস্ত্রসাধ্য স্তুতিমন্ত্রের দ্বারা (উথেভিঃ) আমরা আহ্বান জ্ঞাপন করছি (হবামহে)। এবং আমাদের দ্বারা আহূত হয়ে ইন্দ্রদেব বহুবার (কুবি) আগমন করুন (আগমৎ), অর্থাৎ আমাদের যজ্ঞে যুক্ত হোন ॥ ৪।

হে ইন্দ্র! এই গ্রহচমসস্থিত (ইমে) সোমরাশি আপনার নিমিত্ত অভিষব ইত্যাদির দ্বারা সংস্কৃত (সুতাঃ) হয়েছে। হে বহু যজ্ঞসাধনকারী ইন্দ্র (শতক্রতো)! হে অন্নধনশালী বা কর্মফলদাতা (বাজিনীবসো) ইন্দ্র! আপনার নিমিত্ত অভিযুত, সোমসমূহ (তান) জঠরে ধারণ করুন (দধিম্ব) ॥৫

হে ত্রিকালজ্ঞ বা সূক্ষ্মার্থদর্শী (কবে) ইন্দ্র! আপনি সংগ্রামে অতিশয় শত্রুধর্ষক (বাজেষু দধৃষং) ও শত্রুধনের জয়শীল (ধনঞ্জয়ং)–আমরা জ্ঞাত আছি (বিদ্য)। এই কারণে (অধ) আপনার সুখ বা সুখকর ধন (তে সুম্নং) আমরা যাচনা করছি। ৬।

হে ইন্দ্র! গো-দুগ্ধের আশ্রয়ভূত অর্থাৎ গো-দুগ্ধে মিশ্রিত এবং যবলক্ষণ-মিশ্রণদ্রব্যোপেত (গবাশিরং যবাশিরং চ), পাষাণে পেষণ-নিষ্পন্ন (বৃষভিঃ) এই সোম (সুম) আমাদের অভিমুখে আগমন পূর্বক পান করুন (নঃ আগত্য পিব)।৭৷

হে ইন্দ্র! এই সোম পান করে (পীতয়ে) আপনি আপন উদরস্থ করুন (তুভ্য ইৎ স্বে ওক্যে), সেই নিমিত্ত এই সোম প্রেরণ করছি (চোদামি)। এই পীত অর্থাৎ পানকৃত সোম (এষঃ) আপনার হৃদয়ে (তে হৃদি) অত্যন্ত রম্যক্রীড়া করুক, অর্থাৎ হর্ষোৎপাদন করুক (ররন্তু)। ৮।

হে ইন্দ্র! আমরা হেন কুশিক- গোত্রোৎপন্ন জন (কুশিকাসঃ) নিজেদের রক্ষাকামী হয়ে (অবস্যবঃ) আপনার নিমিত্ত অভিযুত পুরাতন সোম পানের নিমিত্ত (ত্বাং প্রত্ন সুতস্য পীতয়ে) আপনাকে আহ্বান করছি (হবামহে)। ৯।

বিনিয়োগ ও টীকা– অতিরাত্র এবং মধ্যম রাত্রিপর্যায়ে ব্রাহ্মণাচ্ছংসিশস্ত্রে উপযুক্ত সূক্তটির বিনিয়োগ হয়। (২০কা, ৩অ, ৭সূ.)।

.

অষ্টম সূক্ত

[ঋষি : গোতম অষ্টক দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ]

 অশ্বাবতি প্রথমো গোষু গচ্ছতি সুপ্রাবরিন্দ্র মন্তবোতিভিঃ। তমিৎ পৃক্ষি বসুনা ভবীয়সা সিন্ধুমাপো যথাভিতো বিচেতসঃ ॥১॥ আপোন দেবীরুপ যন্তি হোত্রিয়মবঃ পশ্যন্তি বিততং যথা রজঃ। প্রাচৈর্দেৰ্বাসঃ প্রণয়ন্তি দেবয়ুং ব্ৰহ্মপ্রিয়ং জোষয়ন্তে বরা ইব। ২। অধি দ্বয়োরদ উথ্যং বচো যতসুচা মিথুনা যা সপৰ্যতঃ। অসংযতত্তা ব্ৰতে তে ক্ষেতি পুষ্যতি ভদ্রা শক্তিজমানায় সুন্বন্তে ॥৩॥ আদঙ্গিরাঃ প্রথমং দধিরে বয় ইদ্ধাগ্নয়ঃ শম্যা যে সুকৃত্যয়া। সর্বং পণেঃ সমবিন্দস্ত ভোজনমশ্বাবন্তং গোমমা পশুং নরঃ ॥৪॥ যজ্ঞেরথবা প্রথমঃ পথস্ততে ততঃ সূর্যো ব্রতপা বেন আজনি। আ গা আজদুশনা কাব্যঃ সচা যমস্য জাতমমৃতং যজামহে ৫৷৷ বহির্বা যৎ স্বপত্যায় বৃজ্যতের্কো বা শ্লোকমাঘোষতে দিবি। গ্রাবা যত্র বদতি কারুরুথ্যস্তস্যেদিা অভিপিত্বে রণ্যতি ॥৬॥ প্রোগ্রাং পীতিং বৃষ্ণ ইয়র্মি সত্যাং প্রয়ৈ সুতস্য হর্য তুভ্য। ইন্দ্ৰ ধেনাভিরিহ মাদয়স্ব ধীভির্বিশ্বাভিঃ শচ্যা গৃণানঃ ॥৭॥

 বঙ্গানুবাদ –হে ইন্দ্র! যে মনুষ্য (মঃ) আপনার দ্বারা সুষ্ঠুভাবে রক্ষিত (সুপ্রাবীঃ) হয়, সে বহু অশ্ববান্ হয় এবং গো-স্বামীগণের মধ্যে মুখ্য হয় (প্রথমঃ গচ্ছতি)। (অর্থাৎ বহু পশুর অধিকারী হয়, এটাই বক্তব্য)। আপনি সেই মনুষ্যকে বহু ধনের দ্বারা সম্পৃক্ত করে থাকেন (বসুনা অভিতঃ তমিৎ পৃক্ষি); যেমন বিনিষ্টিজ্ঞানসাধন জলরাশি সর্বতোভাবে সমুদ্রকে পূর্ণ করে থাকে বা প্রাপ্ত হয় (বিচেতসঃ আপঃ সিন্ধু ভবীয়সা)।১৷

 হে হোত্রিয় (অর্থাৎ হবির্যোগ্য) ইন্দ্র! দ্যোতমানা ও জলরাশি (ন দেবীঃ আপঃ) যেমন নিম্ন প্রদেশে বা সমুদ্রের দিকে গমন করে (উপ যন্তি), তেমনই স্তুতিগুলি বা স্তোতৃগণ আপনার দিকে গমন করছে, অর্থাৎ অনায়াসে আপনাকে লাভ করছে। তথা আপনার স্বরূপ দর্শনে অসমর্থ হয়ে স্তোতাগণ নিম্নাভিমুখে দৃষ্টি ক্ষেপণ করছে (অবঃ পশ্যন্তি) যেমন সর্বতো ব্যাপ্ত (যথা বিততং) সবিতাদেবের জ্যোতি (রজঃ) দর্শনে অপারগ হয়ে লোকে দৃষ্টি অবনত করে। অধিকন্তু ঋত্বিকগণ (দেবাসঃ) আপনাকে প্রাচীন (প্রাচৈঃ) বেদির অভিমুখে নীত করছেন (প্রণয়ন্তি); অথবা আপনার নিমিত্ত সোম ও অগ্নিকে পূর্বস্থ বেদিতে স্থাপন করতে গমন করছেন। ব্রহ্ম পরিবৃঢ় স্তোত্র বা কর্মপ্রিয় (ব্রহ্মপ্রিয়) আপনাকে ঋত্বিকগণ সেবা করছেন, যেমন জামাতাগণ কন্যার সেবা করে (বরা ইব জোষয়ন্তে)। ২৷৷

 হে ব্রাহ্মণাচ্ছংসি! দুটি হবিধানের মধ্যবর্তী তৃতীয় ছদিস্থানের উপরে (দ্বয়োহবির্ধানয়োচ্ছদিষ্মতেরধি উপরি) উথ্য স্তোত্রের যোগ্য বচন নিহিত রয়েছে (অধি অদধাঃ)। সেই উভয় হবির্ধানে গ্রহ-চমস-ইত্যাদি লক্ষণ-সমন্বিত যজ্ঞসাধন পাত্ৰসমূহ যুগলরূপে বর্তমান (যতসুচা মিথুনা যা)। এই হেন হবির্ধানে ইন্দ্র সম্পূজিত হন (সপৰ্যতঃ); (অর্থাৎ সোমপানের উপযুক্ত পাত্র ইন্দ্রের উদ্দেশে নিবেদিত হয়–এটাই ভাব)। অধিকন্তু, হে ইন্দ্র! আপনার কর্মে, অর্থাৎ আপনার উদ্দেশে অনুষ্ঠিত যাগে (তে ব্রতে) যজমান অবিরামভাবে (অসংযত্তঃ) পুত্র-পশু ইত্যাদির দ্বারা নিজের পোষণ করেন (ক্ষেতি পুষ্যতি)। আপনার নিমিত্ত সোম অভিষবকারী (সুন্বতে) যজমানের কল্যাণী (ভদ্রা) শক্তি হোক। (অর্থাৎ যজমান আপনার অনুগ্রহ লাভ করুন)। ৩।

হে ইন্দ্র! অঙ্গিরা মহর্ষিবর্গ অগ্রে (প্রথমং) আপনার উদ্দেশে হবিলক্ষণ অন্ন সম্পাদিত করেছিলেন (বয়ঃ); (কখন? না) যখন পণিনামক অসুরগণ গাভী অপহরণ করেছিল, তারপর (আৎ)। (কিরকম অঙ্গিরাগণ? না–) সুকৃত্যয়া অর্থাৎ করণব্যাপারে শোভনশালী, এবং অগ্নিষ্টোম ইত্যাদি যাগকর্মের নিমিত্ত (শম্যা) আহ্বানীয় ইত্যাদি অগ্নি প্রজ্বলনকারী (ইদ্ধাগ্নয়ঃ) নেতা (নরঃ) অঙ্গিরা ঋষিগণ, যাঁরা বপু অশ্ববন্ত ও বহু গো-সমৃদ্ধ এবং অজা-অবি ইত্যাদি অন্য পশুজাতের অধিকারী (পশুম আ) সেই অসুরগণের সকল ধন (সর্বং ভোজন) লাভ করেছিলেন (সম্ অবিন্ত) ॥ ৪

অথবা নামক মহর্ষি ইন্দ্রের উদ্দেশে ক্রিয়মাণ যজ্ঞ সাধনের দ্বারা (যজ্ঞৈঃ) প্রথমে অপহৃত গাভীর পথ অর্থাৎ গাভীগুলির বিস্তারিত সন্ধান জ্ঞাত হয়েছিলেন, তারপর (ততঃ) কান্ত অর্থাৎ স্পৃহণীয় (বেনঃ) ও গবানয়ন কর্মের পালয়িতা (ব্রতপাঃ) সূর্য প্রাদুর্ভূত হয়েছিলেন (আজনি)। (অর্থাৎ অন্ধকারাবিষ্ট গো-সমূহকে প্রকটিত করে দিয়েছিলেন–এটাই বক্তব্য)। অনন্তর কবির পুত্র (কাব্য) উশনা অর্থাৎ ভৃগু ইন্দ্রের সহায়তায় (সচা) গাভীগুলিকে লাভ করেছিলেন। সর্বনিয়ন্তা সূর্যের প্রয়োজনে (যমস্য) প্রাদুর্ভূত (জাতং) অথবা সকলের নিয়ন্তা ঈশ্বর হতে সৃষ্ট, অমরণধর্মা অর্থাৎ অবিনাশী (অমৃতং) ইন্দ্রের পূজা করছি (যজামহে) ॥ ৫৷৷

 যে যজ্ঞে (যৎ) শোভন অপত্যলাভরূপ ফলের নিমিত্ত অথবা শোভনায়তন যজ্ঞপাত্রের নিমিত্ত কুশ আস্তীর্ণ করা হয় (বহিঃ স্বপত্যায় বৃজ্যতে), অর্চনসাধন মন্ত্রোপেত হোতা (অর্কো বা) যে দ্যোতমান যজ্ঞে (দিবি) বাগাত্মক শস্ত্র ইত্যাদি উচ্চারণ করেন (শ্লোক আঘোষতে) এবং যে যজ্ঞে (যত্র চ) অভিষবসাধন পাষাণ (গ্রাবা) উথাহঁ স্তোতার মতো শব্দ করে (কারুরুকথ্য বদতি), সেইরকম যজ্ঞের (তস্যেৎ) সমীপস্থানে ইন্দ্রদেব সহর্ষে বিরাজমান হয়ে থাকেন (অভিপিত্বেযু রণ্যতি) ৬

হে হরি নামক অশ্বোপেত (হযর্শ্ব) ইন্দ্র! অভীষ্ট ফলবর্ষণকারী (বৃষ্ণে) ও প্রকৃষ্ট গমনশালী (প্রয়) আপনার উদ্দেশে উদ্যত বল (উগ্ৰাং) ও যথার্থ সামথ্যসম্পন্ন (সত্যা) সোমরস (সুতস্য) পানের নিমিত্ত (পীতিং) প্রেরণ করছি (প্র ইয়র্মি)। হে ইন্দ্র! আপনি এই যজ্ঞে (ইহ) সকল প্রীতিকর (বিশ্বাভিঃ ধেনাভিঃ) স্তোত্ৰাত্মক কর্মের দ্বারা (ধীভিঃ) অর্থাৎ যাগের দ্বারা বা বলের নিমিত্ত স্তয়মান হয়ে (গৃণানঃ) হৃষ্ট হোন (মাদয়স্ব) ৭

বিনিয়োগ টীকা –উপযুক্ত সূক্তটির বিনিয়োগ পূর্ববর্তী সূক্তের অনুরূপ। এই সূক্তের ষষ্ঠ (বহিবা যৎ ইত্যাদি) মন্ত্রটি এর পরিধানীয়া। (২০কা, ৩অ, ৮সূ)।

.

নবম সূক্ত

 [ঋষি : শুনঃশেপ মধুচ্ছন্দা দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : গায়ত্রী]

যোগেযোগে তবস্তরং বাজেবাজে হবামহে৷ সখায় ইন্দ্রমূতয়ে ॥১॥ আ ঘা গমদ যদি শ্রবৎসহশ্রিণীভিরূতিভিঃ। বাজেভিরুপ নো হব ৷৷২৷৷ অনু প্রত্নসৌকসো হুবে তুবিপ্রতিং নরম। যং তে পূর্বং পিতা হুবে ৷ ৩৷৷ যুঞ্জন্তি ব্ৰধমরুষং চরন্তং পরি তস্তুষঃ। রোচন্তে রোচনা দিবি ॥৪৷৷ যুঞ্জন্ত্যস্য কাম্যা হরী বিপক্ষা রথে। শোণা ধৃষ্ণু নৃবাহসা॥ ৫৷৷ কেতুং কৃথন্নকেতবে পেশশা মর‍্যা অপেশসে। সমুষরিজায়থাঃ ॥৬

বঙ্গানুবাদ –শত্রুসেনাদের সঙ্গমে সঙ্গমে বা প্রতিটি যাগকর্মে (যোগেযোগে) আমরা অতিশয় বলবন্ত ইন্দ্রের নিকট (তবস্তর) রক্ষার নিমিত্ত (উতয়ে) আহ্বান জ্ঞাপন করছি (হবামহে)। তথা যখন যখন অন্নপ্রাপ্তি ঘটে (বাজেবাজে) তখন তখনই আমরা সখিভূত (সখায়ঃ) ইন্দ্রকে আহ্বান করছি ॥১॥

তিনি অর্থাৎ সেই ইন্দ্রদেব যদি আমাদের আহ্বান শ্রবণ করেন (নঃ হবং শ্রবৎ), তাহলে তাঁর সহস্ৰসংখ্যাযুক্ত অর্থাৎ অসীম রক্ষাশক্তি ও অন্ন সহ (সহশ্ৰিণীভিঃ উতিভিঃ বাজেভিঃ) আগত হোন (উপ আ গমদ)। ২

হে ইন্দ্রদেব! আপনি প্রাচীন স্বৰ্গনামক স্থানের অধিপতি (প্রত্নস্য ওকসঃ), বহু যোদ্ধার প্রতিনিধিভূত (তুবিপ্রতিম) নেতা (নরং)–এই হেন আপনাকে আমি অনুক্রমানুসারে আহ্বান করছি (অনু হুবে)। আপনি হেন যাঁকে (যং তে) পূর্বকালে (পূর্বং) আমাদের পিতা আপন অভীষ্ট সিদ্ধির উদ্দেশে আহ্বান করেছিলেন (হুবে)। (বক্তব্য এই যে, পূর্বকালে আমাদের পিতৃ-পিতামহ ইত্যাদি পূর্বপুরুষগণ যেমন আপনাকে আহ্বান জানিয়েছিলেন, তারই পরম্পরাক্রমে আমরাও আপনাকে আহ্বান জ্ঞাপন করছি)। ৩

মহৎ নামান্বিত (ব্ৰধং), আরোচমান (অরুষং), স্থারব-জঙ্গমের উপরে অর্থাৎ স্বর্গ ইত্যাদিতে বিচরণশীল বা সূর্যাত্মক (তস্থূষঃ পরি চরন্তম) ইন্দ্রের হরি নামক অশ্বসমূহকে রথে যযাজিত করা হচ্ছে। রথ ও রথযুক্ত অশ্বসমূহের রশ্মিরাশি দিব্যলোকে দীপ্ত হয়ে রয়েছে (রোচন্তে রোচনা দিবি)। [পরবর্তী মন্ত্রে যুঞ্জন্ত্যস্য কাম্যা হরী ইত্যাদি শব্দাবলীর অনুসরণে ইন্দ্ররথে হরিনামক অশ্বগণের যোজনা ব্যাখ্যাত হয়েছে]। ৪।

উক্তলক্ষণসম্পন্ন ইন্দ্রের রথে হরিনামক অশ্বদ্বয়কে সারথিগণ যোজিত করছে (হরী যুঞ্জন্তি অস্য রথে)। (কিরকম অশ্বদ্বয়? না–) কাম্যা বিপক্ষ অর্থাৎ সেই অশ্বদ্বয় সকলের কাম্য ও রথের উভয় পার্শ্বে স্থিত; রক্তবর্ণশালী (শোণা) ও সারথি ইত্যাদি মনুষ্যগণের বাহক (ধৃষ্ণু নৃবাহসা)। ৫।

হে মরণশীল মনুষ্যবর্গ (মর্যা)! এই সূর্যস্বরূপ ইন্দ্রকে দর্শন করো। ইনি অন্ধকারে লুক্কায়িত রূপহীন পদার্থসমূহকে আপন প্রকাশের দ্বারা রূপ-দানশীল (অপেশসে পেশঃ), প্রজ্ঞানরহিত জনকে প্রজ্ঞাদানশীল (অকেতবে কেতুং কৃথন) এবং রশ্মিসমূহের সাথে (উষট্টি সহ) সস্তৃত (সং অজায়থাঃ)। (অর্থাৎ এই হেন সূর্যাত্মক সস্তৃত ইন্দ্রকে দর্শন করো–এটাই মন্ত্রণা)। ৬৷৷

 বিনিয়োগ টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি সহ পর পর চারটি সূক্ত (অর্থাৎ ৯ম, ১০ম, ১১শ ও ১২শ সূক্ত), অতিরাত্র ক্রতুসমূহে তৃতীয় রাত্রিপর্যায়ে ব্রাহ্মণাচ্ছংসিশস্ত্রে বিনিযুক্ত হয়। বৈতানে (৪২) এগুলি বিস্তারিতভাবে সূত্রিত আছে। যেমন–যোগেযোগে তবস্তরং ও যুঞ্জন্তি ব্ৰধুমরুষং এই সূক্তের এই ঋদ্বয় স্তোত্রিয়ানুরূপ। আবার, ১৫শ সূক্তের (আ রোদসী ইত্যাদি সূক্তের) অন্তিম মন্ত্রটি অর্থাৎ অপাঃ পূর্বেষাং ইত্যাদি মন্ত্রটি পরিধানীয়া। আবার ১৬শ সূক্তের অন্তিম মন্ত্রটি অর্থাৎ উতী শচীবঃ ইত্যাদি মন্ত্রটি যাজ্য।…ইত্যাদি। (২০কা, ৩অ. ৯সূ.)।

.

দশম সূক্ত

[ঋষি : গোষূক্তি অশ্বসূক্তি দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : গায়ত্রী]

যদিন্দ্রাহং যথা ত্বমীশীয় বস্ব এক ইৎ। স্তোতা মে গোষখা স্যাৎ ॥১॥ শিক্ষেয়মস্মৈ দিৎসেয়ং শচীপতে মনীষিণে। যদহং গোপতিঃ স্যাম্ ॥ ২॥ ধেনুষ্ট ইন্দ্র সূতা যজমানায় সুম্বতে। গামশ্বং পিপুষী দুহে৷ ৩৷৷ ন তে বর্তাস্তি রাধস ইন্দ্র দেবো ন মর্তঃ। যৎ দিসসি স্তুতো মঘম ॥৪॥ যজ্ঞ ইন্দ্রমবর্ধয়দ যদ ভূমিং ব্যবৰ্তয়ৎ। চক্ৰাণ ওপশং দিবি ॥৫৷৷ বাবৃধানস তে বয়ং বিশ্বা ধনানি জ্যিষঃ। ঊতিমিন্দ্রা বৃণীমহে ॥৬॥

বঙ্গানুবাদ –হে পরমেশ্বর্যশালী ইন্দ্রদেব! যেমন দেবগণের মধ্যে আপনিই একমাত্র ধনের ঈশ্বর (যথা ত্বং এক ইৎ বস্ব ঈশীয়), আমিও যেন তেমন হই (অহং)। (অর্থাৎ আপনার অনুগ্রহে আমিও যেন শ্রেষ্ঠ ধনস্বামী হতে পারি)। আপনার স্তোতৃবর্গ যেমন বহু গাভীর স্বামী অর্থাৎ পালয়িতা হয়ে থাকেন (স্তোতা গোষখা স্যাদ), তেমনই আমার হোক (মে)। (অর্থাৎ আমারও স্তোতৃবর্গ বা প্রশংসাকারীগণ যেন আপনার অনুগ্রহে তেমনই বহু গাভীর অধিপতি হয়, অথবা আমি হেন আপনার স্তোতা যেন বহু গো-সমৃদ্ধি লাভ করতে পারি)। ১।

 হে শচীপতি ইন্দ্রদেব! যখন (যৎ) আমি আপনার কৃপায় গোস্বামী হবো (অহং গোপতিঃ স্যাং), তখন যেন স্তুতিকারী জ্ঞানীজনবর্গকে (মনীষিণে অস্মৈ) দান করতে অভিলাষী হই (দিৎসেয়ং), এবং প্রার্থিত ধনও দান করতে পারি (শিক্ষেয়ং চ)। (অর্থাৎ আমাকে সেইরকম সামর্থ্য প্রদান করুন)। ২।

হে ইন্দ্রদেব! আমাদের প্রিয়, সত্যগর্ভা বাণী (সুতা), দুগ্ধবতী গাভীর ন্যায় আপনার প্রীণয়িত্রী হয়ে (তে ধেনুঃ) সোমাভিষব কর্মরত (সুম্বতে) যজমানকে বর্ধন পূর্বক (পিপুষী) তাঁর গো-অশ্ব ইত্যাদি সকল অভিলষিত সামগ্রীকে দোহন করছে (দুহে)। অর্থাৎ গো-অশ্ব ইত্যাদি প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষাকে পূর্ণ করছে। ৩

হে ইন্দ্রদেব! যদি (যৎ) আমাদের স্তুতি প্রাপ্ত হয়ে (স্তুতঃ) অর্থাৎ প্রখ্যাপিতগুণ হয়ে প্রভূত ধন (মঘং) দানের নিমিত্ত ইচ্ছা করেন (দিৎসসি) তাহলে দেবতা বা মনুষ্যগণের মধ্যে (দেয়ো ন মর্ত) কেউই আপনার সেই ধনের (রাধসঃ) নিবারক নেই (বর্তা ন অস্তি), অর্থাৎ আপনাকে কেউই বাধা দিতে। সক্ষম হবে না। ৪

আমাদের দ্বারা অনুষ্ঠীয়মান যজ্ঞ ইন্দ্রদেবকে বর্ধিত করে, অর্থাৎ হবিঃ বা স্তুতির দ্বারা ইন্দ্রের মহিমা বৃদ্ধিলাভ করে, যখন (যৎ) অন্তরিক্ষে (দিবি) মেঘ সর্বত বিদারিত করে (ওপশং চক্রাণঃ) ভূমিকে বৃষ্টির জলের দ্বারা সিক্ত করে (বি অবর্তয়ৎ), অর্থাৎ ইন্দ্রদেবই বর্ষার জলে ভূমি সিক্ত করে ধান্য ইত্যাদি শস্যের সমৃদ্ধি ঘটান ৷৷ ৫৷৷

হে ইন্দ্রদেব! আপনি স্তুতির দ্বারা প্রবৃদ্ধমান (বধূধানস্য) ও শত্রুসম্বন্ধিনী ধনরাশি (বিশ্বা ধনানি) জয়কারী (জিগুবঃ)। এই হেন আপনার রক্ষণ (ঊতিং) আমরা আমাদের আভিমুখ্যে বরণ করছি (আ বৃণীমহে) ॥ ৬ ৷৷

বিনিয়োগ টীকা— উপযুক্ত সূক্তের বিনিয়োগ অতিরাত্রে তৃতীয় পর্যায়ে ব্রাহ্মণাচ্ছংসী শস্ত্রে উক্ত হয়েছে। (২০কা, ৩অ. ১০)।

.

একাদশ সূক্ত

 [ঋষি : গোষূক্তি অশ্বসূক্তি দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : গায়ত্রী] 

ব্যন্তরিক্ষমতিরন্মদে সোমস্য রোচনা। ইন্দ্রো যদভিন বল॥১॥ উদগা আজঙ্গিরোভ্য আবিষ্কৃথন্ গুহা সতীঃ। অর্বাঞ্চং নুনুদে বল ॥ ২॥ ইন্দ্রেণ বোচনা দিবো দৃনি দৃংহিতানি চ। স্থিরাণি ন পরাণুদে ॥ ৩ ৷৷ অপামূর্মিমদন্নিব স্তোম ইন্দ্রাজিরায়তে। বি তে মদা অরাজিঃ ॥৪॥

বঙ্গানুবাদ— সোমরস পানে উৎপন্ন শক্তির মত্ততায় ইন্দ্রদেব যখন (যৎ সোমস্য মদে ইন্দ্ৰঃ) সবকিছুকে আবৃতকারী বল নামক অসুরকে বা উক্তলক্ষণ মেঘকে বিদীর্ণ করেছিলেন (বলং অভিনৎ), তখন দীপ্যমান (রোচনা) অন্তরিক্ষ বর্যার জলে তাকে প্রবৃদ্ধ করেছিল (ব্যতিরৎ)। [ অন্তরিক্ষ কর্তৃক সহায়তা দানের কথাই এখানে বলা হয়েছে] ১৷

 ইন্দ্রদেব অঙ্গিরা ঋষিদের নিমিত্ত কন্দরস্থিত (অঙ্গিরোভ্য গুহা সতী) অর্থাৎ গুহায় অপ্রকাশ্যভাবে বিদ্যমান, গাভীগুলিকে (গাঃ) প্রকাশযুক্ত করে বহির্দেশে অর্থাৎ গুহার বাহিরে প্রেরণ করেছিলেন (আবিষ্কৃথন উৎ আজত); এবং সেই গাভীগণের অপহর্তা বল নামক অসুরকে অধোমুখ করে পাতিত করেছিলেন (অর্বাঞ্চং নুনুদে বলং)। ২

ইন্দ্রদেব দ্যুলোকস্থিত দীপ্তিমান্ গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদিকে (দিবঃ রোচনা) বলবন্ত ও দৃঢ়ীকৃত করেছিলেন (দৃানি দৃংহিতানি চ); অতএব স্থিরভাবে অবস্থিত (স্থিরানি) তাদের অর্থাৎ গ্রহ-নক্ষত্রগুলিকে কেউই স্থানচ্যুত অর্থাৎ পাতিত করতে পারে না (ন পরাণুদে)। ৩

হে ইন্দ্রদেব! আপনার বিষয়ভূত স্তোত্রসমূহ (স্তোমঃ) জলাশয়ভূত সমুদ্রের তরঙ্গরাশির ন্যায় (অপাম্ উর্মিঃ) আপনার অভিমুখে ক্ষিপ্রতার সাথে প্রধাবিত হচ্ছে (স ইব অজিরায়তে), অর্থাৎ মুখ হতে নির্গত হওয়া মাত্রই আপনার নিকট গমন করছে। আপনার সোমপানজনিত মত্ততা (তে সদাঃ) বিশেষভাবে দীপ্যমান হয়ে উঠছে, অর্থাৎ প্রকটিত হচ্ছে (বি অরাজিঃ )। ৪

বিনিয়োগ টীকা –উপযুক্ত সূক্তটির বিনিয়োগ পূর্ব সূক্তের অনুরূপ ৷৷ (২০কা, ৩অ. ১১সূ.)।

.

দ্বাদশ সূক্ত

 [ঋষি : গোষূক্তি অশ্বসূক্তি দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : গায়ত্রী]

ত্বং হি স্তোমবর্ধন ইন্দ্রাস্যুথবর্ধনঃ। স্তোতৃণামুত ভদ্রকৃৎ ॥১৷৷ ইন্দ্রমিৎ কেশিনা হরী সোমপেয়ায় বক্ষতঃ। উপ যজ্ঞং সুরাধসম্॥২॥ অপাং ফেনেন নমুচেঃ শির ইন্দ্রোদবর্তয়ঃ। বিশ্বা যদজয় স্মৃধঃ ॥৩৷৷ মায়াভিরুৎসিত ইন্দ্র দ্যামারুরুক্ষতঃ। অব দস্যুরধুনুথাঃ ॥৪॥. অসুন্বামি সংসদং বিমূচীং ব্যনাশয়ঃ সোমপা উত্তরো ভবন্ ॥ ৫

বঙ্গানুবাদ –হে ইন্দ্র! আপনি ত্রিবৃৎ ইত্যাদি স্তোমের দ্বারা বর্ধনীয় (স্তোমবর্ধনঃ) তথা উথ অর্থাৎ সামবেদীয় মন্ত্রসমূহের দ্বারা বর্ধনীয় (উথবর্ধনঃ)। অধিকন্তু (উত) আপনি স্তোতৃগণের কল্যাণকর্তা (ভদ্রকৃৎ) ৷৷ ১।

 স্কন্ধপ্রদেশস্থিত কেশযুক্ত (কেশিনা) হরি-নামক অশ্বদ্বয় (হরী) শোভন ধনফলোপেত হয়ে (সুরাধসম্) আমাদের যজ্ঞের প্রতি (যজ্ঞং) সোমপানার্থে (সোমপেয়ায়) ইন্দ্রকেই বহন পূর্বক আনয়ন করছে (ইন্দ্রম্ ইৎ উপবক্ষতঃ), অথবা যজ্ঞাহ্ (যজ্ঞং) শোভন ধনের দাতা (সুরাধসং) ইন্দ্রকে অশ্ব দুটি বহন করছে। ২।

হে ইন্দ্র! আপনি জলের ফেনার দ্বারা বজ্র নির্মাণ পূর্বক (অপাং ফেনেন) নমুচি নামক অসুরের শির শরীর হতে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন, (উৎ অবর্তয়ঃ); (কখন করেছিলে? না) যখন (যৎ) সকল সকল স্পর্ধাশালী অসুরসেনাকে জয় করেছিলেন (বিশ্বাঃ স্মৃধঃ অজয়ঃ)। ৩।

 হে ইন্দ্র! আপনি আপন মায়ার দ্বারা উর্ধর্গমনশীল (উৎসিঙ্গতঃ), দ্যুলোকে আরোহণেচ্ছুক (দ্যা আরুরুক্ষতঃ) দস্যুগণকে নিম্নাভিমুখে পাতিত করেছিলেন (অব অধূনথাঃ)। ৪

হে ইন্দ্র! আপনি সোমপানে অভ্যস্থ (সোমপাঃ); সুতরাং সোমপানজনিত বলের দ্বারা উৎকৃষ্টতর হয়ে অর্থাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশী শক্তিমত্ত হয়ে (উত্তরঃ ভবন) সোমাভিষবহীন অর্থাৎ সোমযজ্ঞহীনগণের (অসুম্বাম) সমাজকে অর্থাৎ অজ্ঞীয় সভাকে (সংসদং) বিশেষভাবে বিনাশ করেছিলেন (বিসূচীং বি অনাশয়ঃ) ॥ ৫৷৷

বিনিয়োগ টীকা –উপযুক্ত সুক্তের বিনিয়োগ অতিরাত্রে ব্রাহ্মণাচ্ছংসীগণের তৃতীয় পর্যায়ে বিহিত হয়ে থাকে। এই সূক্তটির ৩য় মন্ত্রে জলের ফেনার দ্বারা বজ্র নির্মাণ পূর্বক নমুচি দৈত্যকে নিহত করা প্রসঙ্গে আচার্য সায়ন তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে (১৭।১।৬) উল্লেখিত একটি উপাখ্যানের কথা বলেছেন।–পূর্বকালে একদা দেবশত্রু নমুচিকে অবরোধ করতে ব্যর্থ ইন্দ্রকেই নমুচি অবরুদ্ধ করেছিল। তখন ইন্দ্রের অনুরোধে নমুচি তাকে মুক্ত করার সময়ে সর্ত করিয়ে নিয়েছিল যে, ইন্দ্র যেন দিনে বা রাত্রের ক্ষণে, শুষ্ক বা আর্দ্র বস্তুর দ্বারা নমুচিকে আঘাত করতে পারবেন না। ইন্দ্র এই সর্তে সম্মত হলে নমুচি তাকে মুক্তি প্রদান করে। সেই কারণে দেবাসুর সংগ্রামে স্পর্ধান্বিত সকল অসুরদের বিনাশ করার পর ইন্দ্র অহোরাত্রির সন্ধিক্ষণে (অর্থাৎ দিনও নয়, রাত্রিও নয়, এমনই কালে), সমুদ্রের ফেনাকে (অর্থাৎ শুষ্কও নয়, আর্দ্রও নয়, এমনই পদার্থকে) মন্ত্রের দ্বারা বজ্রময় করে তার আঘাতে নমুচিকে বধ করেছিলেন। (২০কা, ৩অ. ১২সূ)।

.

ত্রয়োদশ সূক্ত

 [ঋষি : বরু বা সর্বহরি দেবতা : হরি (ইন্দ্র) ছন্দ : জগতী]

প্র তে মহে বিদথে শংসিষং হরী প্র তে বম্বে বনুযো হতং মদম। ঘৃতং ন যো হরিভিশ্চারু সেচত আ ত্বা বিশ হরিবর্পসং গিরঃ ॥ ১৷৷ হরিং হি যোনিমভি যে সমস্বর হিন্বন্তো হরী দিব্যং যথা সদঃ। আ যং পৃণন্তি হরিভিন ধেনব ইন্দ্রায় শূষং হরিবমৰ্চত৷ ২ সো অস্য বজ্রো হরিতো য আয়সো হরির্নিকানো হরির্নিকামো হরিরা গভস্ত্যোঃ দুমী সুশিলপ্রা হরিমোসায়ক ইন্দ্রে নি রূপা হরিতা মিমিক্ষিরে ৷৩৷৷ দিবি ন কেতুরধি ধায়ি হতে বিব্যচ বজ্রো হরিতো ন রংহ্যাঁ। তুদদহিং হরিশিতো য আয়সঃ সহস্ৰশোকা অভবদ্ধরিত্তরঃ ॥৪॥ অথর্ববেদ-সংহিতা তন্তুমহর্যথা উপস্তুতঃ পূর্বেভিরিন্দ্র হরিকেশ যজ্বভিঃ। ত্বং হসি তব বিশ্বমুকৃথ্যমসামি রাধো হরিজাত হৰ্যতম্ ॥ ৫

বঙ্গানুবাদ –হে ইন্দ্র! এই মহতি যজ্ঞে (বিদথে) শীঘ্রতাপূর্বক আগমনের নিমিত্ত আপনার হরি নামক অশ্বদ্বয়ের প্রশংসা করছি (প্রশংসিষ) অর্থাৎ স্তুতি করছি। সেইরকমে শত্রুর হননকর্তা বা যাচ্যমান (বনুষঃ) আপনার সোনাপানজনিত কমনীয় অর্থাৎ কাম্য শক্তির মত্ততা (হতং মদং) যাচনা করছি (প্র বন্বে), অর্থাৎ সেই শক্তির দ্বারা আমি আপন অভীষ্ট ফল প্রার্থনা করছি। ধৃত যেমন হোমাৰ্থে অগ্নিতে সিঞ্চিত হয়, সেইরকম যে ইন্দ্র (যঃ) হরিতবর্ণ অশ্বের সহযোগে আগমন পূর্বক (হরিভিঃ) রমণীয় ধন বর্ষণ করেন (চারু সেচতে), সেই হরিতরূপ (হরিবল্পসং) আপনার নিকট আমাদের স্তুতিবচনসমূহ (ত্বা গিরঃ) প্রবেশ করুক (আ বিশন্তু), অর্থাৎ আপনার বোধগম্য হোক। ১।

প্রাচীন মহর্ষিবর্গ (যে) হরণশীল বা হরিতবর্ণ (হরি) সকলের মূলকারণ ইন্দ্রের স্তুতি করেছিলেন (যোনিং হি সমস্বর)। (কখন? না) দিব্যং অর্থাৎ দেবসম্বন্ধি সদঃ অর্থাৎ যাগগৃহে যথা অর্থাৎ যে প্রকারে বা যাতে ইন্দ্র গমন করেন, সেই নিমিত্ত হরি নামক অশ্বদ্বয়কে রথে যোজনা করেন (হরী হিন্বন্তঃ)। নবপ্রসূতিকা গাভীগণ (ধেনবঃ) যেমন তাদের আপন পালককে ক্ষীর ইত্যাদির দ্বারা পূর্ণ তৃপ্তি প্রদান করে (পৃণন্তি), সেইরকম যজমানবৃন্দ হরিতবর্ণ সোমরসের দ্বারা সেই ইন্দ্রকে পূর্ণতৃপ্তি প্রদান করেন (আ অর্থাৎ পৃণন্তি)। হে ঋত্বিকগণ! শত্রুশোষণসাধন বলযুক্ত (শূষ), হরণশীল (হরিবং ) সেই ইন্দ্রের ইন্দ্রায়) পূজা করুন (অৰ্চত); অথবা ইন্দ্রের হরণশীল প্রীণনসাধন বলের (শূষং) অর্চনা করুন। ২।

ইন্দ্রের (অস্য) যে লৌহময় বজ্র আছে (যঃ আয়সঃ বজ্রঃ) সেই বজ্ৰ হরিতবর্ণ (হরিতঃ) এবং নিরন্তর কমণীয় (স নিকামঃ)। ইন্দ্রও হরিতবর্ণ (হরিঃ); উক্তরূপ (স হরিঃ) ইন্দ্র হস্তে বত্র ধারণ করে থাকেন (গভস্ত্যোঃ আ)। অধিকন্তু ইন্দ্র অন্নবান্ বা ধনবান্ (দ্যুম্নী), সুন্দর হনু বা সুন্দর নাসিকাসম্পন্ন (সুশিঃ )। তিনি হরণশীল মনুলক্ষণ সায়কোপেত অর্থাৎ গ্রহণক্ষম যজ্ঞরূপ বজ্রযুক্ত বা হরিতবর্ণময় বাণযুক্ত (হরিমোসায়কঃ)। যতরকম রূপময় (রূপা) আভরণ আছে, তার সবগুলিই হরিতবর্ণের এবং তার নিযোজক, অর্থাৎ ইন্দ্রের উপযুক্ত (নি মিমিক্ষিরে) ॥ ৩৷৷

ইন্দ্রসম্বন্ধী বজ্ৰ অন্তরিক্ষে (দিবি) কেতুর ন্যায় বা প্রজ্ঞাপক আদিত্যের ন্যায় (কেতুঃ ন) কান্তিময় হয়ে নিহিত রয়েছে (হ্যতঃ অধি ধায়ি)। অধিকন্তু সেই বজ্র হরিতবর্ণশালী আদিত্যের অশ্বের ন্যায় (হরিতঃ ন) বেগে গমন করে (রংহ্যা) অথবা বেগের দ্বারা সবকিছুকে ব্যাপ্ত করে (বিব্যচৎ)। অপিচ যে হরিতবর্ণ বজ্র আছে (য আয়সো), সেই বজ্রের দ্বারা সোমপানে হরিতবর্ণ হবিশিষ্ট ইন্দ্র (হরিশিপ্রঃ) বৃত্রাসুরকে (অহি) ব্যথিত করেছেন (তদুৎ)। হরি-নামক অশ্বদ্বয়ের ভর্তা বা অধিপতি ইন্দ্র (হরিম্ভরঃ) সেই বজ্রের সাধনে সহস্ৰসংখ্যক শত্রুর শোকের কারণভূত হয়েছেন (সহস্ৰশোকাঃ অভবৎ), অথবা অপরিমিত দীপ্তিশালী হয়েছেন (অপরিমিতদীপ্তিরভবৎ সায়ণ)। ৪।

হে হরিকেশ অর্থাৎ হরিতবর্ণ কেশযুক্ত বা হরিতবর্ণ কেশসম্পন্ন অশ্বযুক্ত ইন্দ্র! যথায় যথায় সোম ইত্যাদি হবিঃ বর্তমান, সেই সকল স্থানেই আপনি বর্তমান (ত্বত্ত্বং)। পূর্ববর্তী যজমানগণের দ্বারা স্তুত হয়ে (পূর্বেভিঃ যজ্বভিঃ উপস্তুতঃ) আপনি যেমন কামনা করেছিলেন, অর্থাৎ যেমন সোম ইত্যাদি প্রাপ্তির অভিলাষ করেছিলেন (অহৰ্যর্থঃ), তথা এখনও সেইরকম হবিঃ কামনা করেন (ত্বং হর্যসি)। অতএব হে হরিজাত (অর্থাৎ হরিতবর্ণ অশ্বদ্বয়ের সাথে যজ্ঞে প্রাদুর্ভূত বা হরিতবর্ণত্বের দ্বারা প্রাদুর্ভূত) ইন্দ্র! এই সকল সোম ইত্যাদিরূপ (বিশ্বং) প্রশস্য (উথ্যম), অনল্প বা অর্থাৎ প্রচুর (অসামি), কমনীয় (হতং) অন্ন (রাঃ) তোমারই (তব)। ৫৷৷

বিনিয়োগ টীকা –উপযুক্ত সূক্তটির অতিরাত্রে ব্রাহ্মণাচ্ছংসীর তৃতীয় পর্যায়শস্ত্রে বিনিয়োগ অভিহিত।–মূল পুঁথি অনুসারে এই তৃতীয় অনুবাকের মোট সূক্ত সংখ্যা ষোড়শ। কিন্তু স্বর্গীয় দুর্গাদাস লাহিড়ী মহাশয় তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থে ১৩শ সূক্তের মধ্যে মূলের ১৪শ, ১৫শ ও ১৬শ সূক্ত অন্তর্ভূক্ত করে নেওয়ায় মূলের সাথে সূক্তসংখ্যার বিচারে বৈষম্য ঘটেছে। ফলে সেখানে এই ১৩শ সূক্তটির মন্ত্রসংখ্যা দেখানো হয়েছে ষোড়শটি। অর্থাৎ মূল পুঁথির ১৩শ সূক্তের ৫টি মন্ত্র + ১৪শ সূক্তের ৫টি মন্ত্র + ১৫শ সূক্তের ৩টি মন্ত্র + ১৬শ সূক্তের ৩টি মন্ত্র নিয়ে মোট মন্ত্রসংখ্যা ১৬টি। বলা বাহুল্য সেখানে ১৪শ থেকে ১৬শ সূক্ত বলে কোন উল্লেখ নেই। যদিও অর্থ বা ভাষ্যের ক্ষেত্রে উপযুক্ত অনুল্লেখিত সূক্তগুলির মন্ত্রাবলী উপেক্ষিত না হওয়ায় পাঠকদের কোন অসুবিধা ঘটেনি। আমরা অবশ্য মূল পুঁথি অবলম্বনে এই অনুবাকের মোট সূক্তসংখ্যা ১৬টি দেখিয়েছি। (২০কা, ৩অ. ১৩সূ.)।

.

 চতুর্দশ সূক্ত

 [ঋষি : বরু বা সর্বহরি দেবতা : হরি (ইন্দ্র) ছন্দ : জগতী]

তা বর্জিণং মন্দিনং স্তোম্যং মদ ইন্দ্রং রথে বহতো হ্যত হরী। পুরূণ্যস্মৈ সবনানি হর্যত ইন্দ্রায় সোমা হরয়ো দধন্বিরে ॥১॥ অরং কামায় হরয়ো দধন্বিরে স্থিরায় হিন্ হরয়ো হরী তুরা। অর্বদ্ভির্যো হরিভিজোষমীয়তে সো অস্য কামং হরিবন্তমানশে ॥ ২॥ হরিশ্মশারুহরিকেশ আয়সস্তুরস্পেয়ে যো হরিপা অবর্ধত। অর্বদ্ভির্যো হরিভিবাজিনীবসুরতি বিশ্বা দুরিতা পারিষদ্ধরী ৷৷ ৩৷৷ সুবেব যস্য হরিণী বিপেততুঃ শিপ্রে বাজায় হরিণী দবিধ্বতঃ। প্র যৎ কৃতে চমসে মজদ্ধরী পীত্বা মদস্য হতস্যান্ধসঃ ॥৪॥ উত স্ম সদ্ম হর্ষতস্য পস্ত্যোরতো ন বাজং হরিবাঁ অচিক্রদৎ। মহী চিদ্ধি ধিষণাহদোজসা বৃহৎ বয়ো দধিষে হতশ্চিদা ॥৫॥

বঙ্গানুবাদ –গমনশীল বা কমনীয় (হর্যতা) সেই প্রসিদ্ধ হরি-নামক অশ্বদ্বয় (হরী) বজ্রযুক্ত (বজিং ), হৃষ্যমান অর্থাৎ হৃষ্টচিত্ত (মন্দিনং), স্তুতির যোগ্য (স্তোম্যং)–এই হেন মহানুভাব ইন্দ্রকে সোমপানজনিত উন্মাদনায় (মদ) রথে বহন পূর্বক আমাদের যজ্ঞে আনয়ন করছে। কান্ত অর্থাৎ কমনীয় (হতে) এই ইন্দ্রের উদ্দেশে প্রাতঃ ইত্যাদি বহু বা তিনটি সবনে (পুরূণি সবনানি) হরিতবর্ণ সোম (হরয়ঃ সোমা) ধারণ করা হয় (দধন্বিরে) ১

কমনীয় (কামায়), সংগ্রামে স্থিরতাসম্পন্ন (স্থিরায়) ইন্দ্রের উদ্দেশে অত্যন্ত হরিতবর্ণ (অরং হরয়ঃ) সোমসমূহ সবনে ধারণ করা হয়েছে (দধন্বিরে)। সেই হরিতবর্ণ সোমসমূহ (হরয়ঃ) ত্বরমাণ অর্থাৎ শীঘ্রগামী অশ্বদ্বয়কে (তুরা হরী) যজ্ঞের প্রতি প্রেরণ করছে (হিন্ব)। যে ইন্দ্র (যঃ) বেগবান (অদ্ভিঃ) অশ্বদ্বয়ের দ্বারা  (হরিভিঃ) যজ্ঞে গমন করে থাকেন (জোষ ঈয়তে), সেই ইন্দ্র (সঃ) এই যজ্ঞের (অস্য) কাময়িতব্য অর্থাৎ অভিলাষকারী (কামং) সোমবান্ যজমানকে ব্যাপ্ত করে থাকে (হরিবং আনশে)।–অথবা যে বেগবান্ রথ যজ্ঞে গমন করে, সেই রথ ইন্দ্রের স্বভূত সোমরসের কামনা প্রাপ্ত হয় ॥ ২।

হরিতবর্ণ শ্মশ্রুসম্পন্ন (হরিশ্মশারুঃ), হরিতবর্ণ কেশযুক্ত (হরিকেশঃ), লৌহসারের ন্যায় কঠিন হৃদয়শালী (আয়সঃ) প্রসিদ্ধ ইন্দ্র (যঃ) শীঘ্র পানীয়রূপে সোম সংস্কারিত হলে অর্থাৎ অভিযুত হলে (তুরস্পেয়ে) সেই হরিতবর্ণ সোমের পানকর্তা হয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হন (হরিপাঃ অবধত)। হবিলক্ষণ অন্নরূপ বা অশ্বরূপ ধনে সমৃদ্ধ (বাজিনীবঃ) ইন্দ্র (যঃ) আপন দ্রুতগাগী অশ্বের সাথে সোমপানের নিমিত্ত আগমন করেন। সেই হেন ইন্দ্র তাঁর হরি-নামক অশ্বদ্বয়কে রথে যোজিত করে আগমন পূর্বক আমাদের সকল পাপ বা অনিষ্ট (বিশ্বা দুরিতা) বিনাশ করুন বা সকল পাপ হতে আমাদের উত্তীর্ণ করুন (পারিষৎ) ৷ ৩৷৷

ইন্দ্রের (যস্য) হরিতবর্ণ হন্ বা চোয়াল (হরিণী শিপ্রে) যখন সুব নামক ঘৃতাধার যজ্ঞীয় পাত্রের ন্যায় (সুবেব) যজ্ঞে সঞ্চরণ করে অর্থাৎ সোমপানের নিমিত্ত চলিত হয় (বিপেততুঃ), সম্মুখস্থ সোমপানের নিমিত্ত কম্পিত হতে থাকে (দবিধ্বতঃ) এবং যজ্ঞীয় চমস পাত্ৰ সংস্কৃত সোমের দ্বারা পূর্ণ হলে (চমসে কৃতে) মদকর (মদস্য), কমনীয় (হস্য) সোমলক্ষণ অন্নের অংশ (অন্ধসঃ) পান পূর্বক (পীত্ব) যখন (যৎ) ইন্দ্র হরিতবর্ণঅশ্বদ্বয়কে চালিত করেন (হরী প্র মন্থজৎ) (তখন ইন্দ্র সকলের স্তুতি প্রাপ্ত হন–এটাই বক্তব্য)। ৪।

অধিকন্তু (উত স্ম) কমনীয় বা গমনশীল ইন্দ্রের (হযঁতস্য) নিবাসস্থান (সদ্ম) হলো দ্যাবাপৃথিবী-সম্বন্ধী (পস্ত্যো)। অশ্ব যেমন যুদ্ধের নিমিত্ত অগ্রসর হয় (অত্য না বাজ), তেমনই আপন অশ্বে আরোহিত হয়ে (হরিবান) ইন্দ্র যজ্ঞগৃহের প্রতি গমন করছেন (অচিক্রদৎ)। আরও, আমাদের মহতী স্তুতিও (মহী চিৎ ধিষণা) বলের দ্বারা যুক্ত (ওজসা) ইন্দ্রকে কামনা করছে (ওজসা অহযৎ)। অতএব হে ইন্দ্র! কাময়মান যজমানেরও নিমিত্ত (হ্যতঃ চিৎ) আগত হয়ে (আ) প্রভূত অন্ন (বৃহৎ বয়ঃ) ধারণ করুন (দধিষে) অর্থাৎ প্রদান করুন ৷৷ ৫৷৷

বিনিয়োগ টীকা –উপযুক্ত সূক্তটির বিনিয়োগ ত্রয়োদশ সূক্তের অনুরূপ। (২০কা. ৩অ. ১৪সূ.)।

.

পঞ্চদশ সূক্ত

 [ঋষি : বরু বা সর্বহরি দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : জগতী ত্রিষ্টুপ]

আ রোদসী হৰ্যমাণো মহিত্বা নব্যন্নব্যং হর্যসি মন্ম নু প্রিয়। প্র পস্ত্যমসুর হতং গোরাবিষ্কৃধি হরয়ে সূর্যায় ॥১॥ অ ত্বা হর্যন্তং প্রযুজো জনানাং রথে বন্তু হরিশিপ্রমিন্দ্র। পিবা যথা প্রতিভৃতস্য মধ্বো হর্য যজ্ঞং সধমাদে দশোণিম্ ॥ ২॥ অপাঃ পূর্বেষাং হরিবঃ সুনামথো ইদং সবনং কেবলং তে। মমদ্ধি সোমং মধুমমিন্দ্ৰ সত্ৰা বৃষং জঠর আ বৃষস্ব ॥৩॥

বঙ্গানুবাদ –হে ইন্দ্র! আপনি কাময়মান (হমানঃ) অর্থাৎ সকলেই আপনাকে কামনা করে। আপনি আপন মহিমায় (মহিত্বা) আকাশ ও পৃথিবীকে অর্থাৎ দ্যাবাপৃথিবীকে (রোদসী) পূর্ণ করেছেন (আ)। তথা হে ইন্দ্র! আপনি সর্বদা নূতন নূতন (নব্যন্নব্যং) হৃদয়ঙ্গম (প্রিয়ং) স্তোত্র (মন্ম) ক্ষিপ কামনা করে থাকেন (নু হসি)। হে প্রকৃষ্ট বলবান্ (প্র অসুর) ইন্দ্র! আপনি পণিগণের দ্বারা অপহৃত স্পৃহণীয় গাভীগণের (হতং গোঃ) নিবাসস্থান (পস্ত্যং) প্রকটিত করুন (আবিঃ কৃধি) সূর্য যাতে স্তোতৃগণকে সেই হরণশীল বা হরিতবর্ণ (সূর্যায় হরয়ে) গাভীগুলিকে প্রত্যর্পণ করেন। (অথবা গো শব্দের দ্বারা উদক অর্থাৎ জল বোঝালে, অর্থ হয়–) সূর্য যাতে জলের স্থান আবিষ্কার করেন এবং তিনি যাতে বৃষ্টি প্রদান করেন, তেমন করুন ৷ ১।

হে ইন্দ্র! সোমপানের দ্বারা হরিতবর্ণ হনুযুক্ত (হরিশিপ্রং), সেই হেন সোমপান-কামনাকারী আপনাকে (হর্যন্তং ত্ব) যজমানগণের নিমিত্ত (জনানাং) রথে প্রকর্ষের সাথে সংযুক্ত অশ্বগুলি (প্রযুজঃ) বহন পূর্বক আনয়ন করুক (আ বহন্তু)। হে ইন্দ্র! কাময়মান (হর্য) যজ্ঞসাধনভূত (যজ্ঞং) গ্রহ-চমস ইত্যাদিতে ধৃত (প্রতিভৃতস্য) মধুর ন্যায় প্রিয়ভূত সোম (মধ্বঃ) দশ অঙ্গুলির দ্বারা নিপীড়িত করে (দশোণিম) যাতে যজ্ঞে পান করতে পারেন (যথা পিব সধমাদে)। (সেইভাবে আপনাকে রথে বহন করুক–এটাই বক্তব্য)। ২।

হে হরিবঃ (অর্থাৎ হরি-নামক অশ্ববাহিত) ইন্দ্র! আপনি পূর্ববর্তী প্রাতঃসবনে (পূর্বেষাং) (অর্থাৎ এই মাধ্যন্দিনসবনের পূর্বে সম্পাদিত) অভিযুত সোম (সুতানাং) পান করেছেন (অপাঃ); অপিচ, এই মাধ্যন্দিনসবন (ইদং সবনং) অসাধারণ (কেবলং) আপনারই (তে অর্থাৎ তবৈব)। অতএব মাধ্যন্দিনসবনে মাধুর্যোপেত (মধুমন্তং) সোম পান করে আন্তরিক মদান্বিত হোন (মমদ্ধি)। হে অভীষ্টবর্ষক (বৃষ) ইন্দ্র! একেবারে (সা) আপন উদরে (জঠরে) এই সোম আসিঞ্চন করুন (আ বৃষস্ব), অর্থাৎ উদর পূরণ করে পান করুন। ৩৷৷

বিনিয়োগ টীকা— এই সূক্তিটির বিনিয়োগ পূর্ববৎ ॥ (২০কা, ৩৩অ ১৫সূ.)।

.

ষোড় সূক্ত

 [ঋষি : অষ্টক দেবতা : ইন্দ্র ছন্দ : ত্রিষ্টুপ]

অষ্ণু ধূতস্য হরিবঃ পিবেহ নৃভিঃ সুতস্য জঠরং পূণস্ব। মিমিক্ষুদ্ৰয় ইন্দ্র তুভ্যং তেভিবর্ধর্ষ মদমুথ্যবাহঃ ॥১॥ প্রোগ্রাং পীতিং বৃষ্ণ ইয়র্মি সত্যাং প্রয়ৈ সুতস্য হ্যশ্ব তুভ্য। ইন্দ্ৰ ধেনাভিরিহ মাদয়স্ব ধভির্বিশ্বাভিঃ শচ্যা গৃণানঃ ॥ ২॥ উতী শচীবস্তব বীর্ষেণ বয়ো দখানা উশিজ ঋতজ্ঞাঃ। প্রজাবদি মনুষো দুবরাণে তস্তুৰ্গণন্তঃ সধমাদ্যাসঃ ॥৩৷৷

বঙ্গানুবাদ –হে হরিবঃ ইন্দ্র! এই যজ্ঞে (ইহ) অধ্বর্য প্রভৃতি ঋত্বিকগণের দ্বারা (নৃভিঃ) জলে মিশ্রিত (অষ্ণু খুঁতস্য) অভিযুত সোম (সুতস্য) পান পূর্বক জঠর পূর্ণ করুন (পিব জঠর পৃণস্ব), অর্থাৎ জঠরপূর্তি পর্যন্ত পান করুন। হে ইন্দ্র! যে অভিষব-সাধন প্রস্তরসমূহ (যং অদ্রয়) আপনার। নিমিত্ত (তুভ্যং) সোম অভিষবের ইচ্ছা করছে (মিমিঃ ), হে উথ শস্ত্রের দ্বারা আকৃষ্যমাণ ও ই (উথবাহঃ) ইন্দ্রদেব! সেই অভিযুত সোমরসে (তেভিঃ) অর্থাৎ সেই সোমরস পান করে আপনি মদিরাকৃত মনোবিকারের (মদং) অভিবৃদ্ধি সাধিত করুন (বর্ধস্ব); অর্থাৎ মদান্বিত হোন। ১।

হে হশ্ব (অর্থাৎ হরি-নামক অশ্বসমন্বিত) ইন্দ্রদেব! অভীষ্টফলবর্ষক আপনার উদ্দেশে (বৃষ্ণে তুভ্যং) প্রকর্ষের দ্বারা অভিযুত, উদঘূর্ণবলপূর্ণ অর্থাৎ প্রচণ্ড শক্তিরূপী (উগ্রাং), যথার্থ মত্ততাকারক (সত্যাং) সোমকে পানের নিমিত্ত প্রেরণ করছি (পীতিং প্র ইয়র্মি)। হে ইন্দ্র! যজ্ঞ কর্মের নিমিত্ত (শচ্যা) সকল স্তুতির দ্বারা (বিশ্বাভিঃ বীভিঃ) স্কুয়মান হয়ে (গৃণানঃ) প্রীণয়িত্ৰী স্তুতিবাক্যে (ধেনাভিঃ) এই যজ্ঞে তৃপ্ত হোন (ইহ মাদয়স্ব) ৷ ২

হে শচীবঃ (অর্থাৎ শক্তিমা) ইন্দ্র! আপনার রক্ষণের ও সামর্থ্যের দ্বারা (তব ঊতি বীর্যেণ চ) পুত্র ইত্যাদিরূপ প্ৰজাগণের সাথে (প্রজাবৎ) অন্নের ধারণকারী (বয়ঃ দধানা), আপনাকে কামনাকারী (উশিজঃ), সতভূতফলসাধন যজ্ঞের জ্ঞাতা অর্থাৎ ঋত্বিকবর্গ (ঋতজ্ঞাঃ) যজমানের যাগগৃহে (মনুষঃ দুরোণে) সমবেতভাবে হৃষ্ট হয়ে (সধমাদ্যাসঃ) আপনার স্তবে মুখরিত হয়ে (গৃণন্তঃ) অবস্থান করছে (তস্থঃ) ॥৩॥

বিনিয়োগ টীকা— পূর্বেই উক্ত হয়েছে যে, একই রকম বিনিয়োগের নিমিত্ত ১৩শ থেকে ১৬শ পর্যন্ত সূক্ত চারটিকে স্বর্গীয় দুর্গাদাস একটি সূক্তের মধ্যে বিধৃত করেছেন। সুতরাং এই চারটি সূক্তের মন্ত্রগুলির বিনিয়োগ একই ॥ (২০কা, ৩অ. ১৬সূ.)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *