সপ্তবিংশ পাঠ
স্বাভাবিক নিদ্রা মোহিতাবস্থায় পরিবর্তিত করণ
যে ব্যক্তি মোহিত হইতে অনিচ্ছুক কিম্বা যাহার সংবেদনা অল্প, তাহাকে মোহিত করিবার আবশ্যক হইলে কাৰ্যকারক বর্তমান পাঠের উপদেশানুসারে তাহার স্বাভাবিক নিদ্রা সম্মোহন নিদ্রায় পরিবর্তিত করিতে সমর্থ হইবে। স্বাভাবিক নিদ্রা সম্মোহন নিদ্রায় পরিবর্তিত হইলে, নিদ্রিত ব্যক্তিকে তখন সমস্ত প্রকার মায়া ও ভ্রমের অধীন এবং তাহার অনেক প্রকার শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক রোগ আরোগ্য করিতে পারা যায়। এই নিয়মে যে সকল প্রকৃতির লোকই বশীভূত হইবে, তাহার নিশ্চয়তা না থাকিলেও, কাৰ্যকারক নিম্নোক্ত উপদেশানুসারে কাৰ্য্য করিতে পারিলে অনেক লোককে স্বীয় আয়ত্তাধীন করিতে পারিবে।
যাহার স্বাভাবিক নিদ্রা সম্মোহন নিদ্রায় পরিবর্তিত করিতে হইবে, সে ব্যক্তি যখন গভীর নিদ্রায় নিদ্রিত, তখন কাৰ্যকারক নিঃশব্দে ঘরে প্রবেশ করিয়া, তাহার শয্যা হইতে দেড়-দুই হাত দূরে দাঁড়াইবে। যদি সম্ভব হয়, তবে তাহার নাসিকা-মূলে স্থির ও প্রখর দৃষ্টি স্থাপন করিয়া, আর সুবিধা না হইলে, কেবল তাহার দিকে তাকাইয়া অত্যন্ত একাগ্রতার সহিত খুব মৃদু ও এক ঘেয়ে সুরে (যেন কথার শব্দে তাহার ঘুম না ভাঙ্গে) নিম্নলিখিত আদেশ দিবে। বলিবে—“ঘু-উ-ম যু-উ-ম ঘু-উ-ম গভীর নিদ্রা; যু-উ-ম ঘু-উ-ম গভীর নিদ্রা; গাঢ় নিদ্রা-শান্তিজনক নিদ্রা। তমার খুব ঘুম হউক-অত্যন্ত গাঢ় নিদ্রা হউক।” তিন-চার মিনিট এইরূপ আদেশ দিবে। যদি এরূপ বোধ হয় যে, কথার শব্দে তাহার ঘুমের কোন ব্যাঘাত হইতেছেনা, তবে কাৰ্য্যকারক গলার স্বর অল্প একটু বাড়াইয়া পুনরায় বলিবে—“তোমার খুব ঘুম হয়েছে;-গভীর নিদ্রা-শান্তিজনক নিদ্রা হয়েছে। তুমি এখন আর জাগিতে পারিবেনা,কিছুতেই তোমার ঘুম ভাঙ্গিবে না,যতক্ষণ আমি তোমাকে জাগিতে আদেশ না করিব, ততক্ষণ কিছুতেই তোমার ঘুম ভাঙ্গিবেনা; ঘুম-ঘুম-ঘুম-গভীর নিদ্রা” ইত্যাদি। এইরূপ কয়েকবার বলিয়া সে তাহার নিকট আরও অগ্রসর হইবে এবং তাহার শরীরের উপর স্পর্শহীন নিম্নগামী লম্বা পাস (অর্থাৎ মাথা হইতে পা পর্যন্ত) দিবে। উক্ত পাসের সহিত ৪৫ মিনিট কাল ঘুমের আদেশ দিলেই তাহার স্বাভাবিক নিদ্রা সম্মোহন নিদ্রায় পরিবর্তিত হইবে। কাৰ্যকারক ইচ্ছা করিলে তাহার মোহিতাবস্থা অষ্টাদশ পাঠের উপদেশানুসারে পরীক্ষা করিয়া লইতে পারে, কিন্তু কোন রোগ আরোগ্যের সঙ্কল্প থাকিলে তাহা করিবার আবশ্যকতা নাই। পাত্র সম্মোহিত হইয়াছে বলিয়া বোধ হইলেই তাহাকে অভীষ্ট বিষয়ে আদেশ দিবে।
দ্বিতীয় নিয়ম :–যাহারা মোহিত হইতে অনিচ্ছুক নয়, কিন্তু অল্প সংবেদ্য বলিয়া সাধারণ নিয়মে মোহিত হয় না, সম্মোহনবিৎ তাহাদিগকে নিম্নোক্ত নিয়মে আয়ত্ত করিবার চেষ্টা পাইবে। উক্ত প্রকৃতির কোন লোক যখন স্বাভাবিক নিদ্রায় নিদ্রিত, তখন সে তাহার ঘরে প্রবেশ করিয়া স্বীয় আগমন জ্ঞাপনার্থ তাহাকে জাগ্রত করিবে। ঐ ব্যক্তি একবার তাহার দিকে তাকাইয়া ঘুমের অলসতা বশতঃ যখন আবার চোখ বুঝিবে, সেই সময় হইতে সে তাহাকে পাস ও ঘুমের আদেশ দিতে আরম্ভ করিবে। উক্তরূপে আট-দশ মিনিট পাস ও আদেশ দিলেই তাহার স্বাভাবিক নিদ্রা সম্মোহন নিদ্রায় পরিবর্তিত হইবে।