1 of 3

১.২৬ প্রতাপ সিগারেট খেতে খেতে

একবার প্রতাপ সিগারেট খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, জ্বলন্ত সিগারেট আস্তে আস্তে তোশকের তুলোর মধ্যে ঢুকে গিয়ে প্রায় দক্ষ হতে যাচ্ছিল। মুন্নি ছিল পাশেই শুয়ে, আঁচ লাগতে সে চেঁচিয়ে উঠতেই মমতা ছুটে এসেছিলেন, তাই শেষ পর্যন্ত বড় কোনো বিপদ হয়নি। তারপর থেকে প্রতাপ প্রতিজ্ঞা করেছেন যে রাত্রে খাওয়া-দাওয়া করার পর শেষ সিগারেটটি তিনি হাঁটতে হাঁটতে ঘুরতে ঘুরতে যাবেন।

এ বাড়িতে একটা বারান্দাও নেই, তাই ঘরের মধ্যেই পায়চারি করতে হয়। মমতার রান্নাঘরের পাট চুকিয়ে আসতে সময় লাগে। অফিসের দিনে এই সময়টা ছাড়া মমতার সঙ্গে ভালো করে কথা বলার সুযোগই ঘটে না।

আজ সন্ধে থেকেই মুখ গম্ভীর, প্রতাপের সঙ্গে চোখাচোখি হলেই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিচ্ছেন মমতা। প্রতাপ সেইজন্য অস্বস্তিতে আছেন। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং জেদী পুরুষ হলেও স্ত্রীকে খানিকটা ভয় পান প্রতাপ। মমতা খুব কম চ্যাঁচামেচি করেন বলেই এই ভয়। মমতার অভিমান এতই চাপা যে প্রতাপ অধিকাংশ সময় তা টেরই পান না। বিশেষ কোনো কারণ না ঘটলে বাইরে ফুটে ওঠে না মমতার রাগ।

পুরুষ সম্মুখ যুদ্ধে বিশ্বাস করে কিন্তু স্ত্রী জাতির রণনীতি সম্পূর্ণ পরোক্ষ। এতদিনের বিবাহিত জীবনে প্রতাপ এটা বুঝেছেন। মমতার মুখ ভার দেখে প্রতাপ চিন্তা করবেন, আজ বা দু’একদিনের মধ্যে তিনি কোন্ ভুল বা অন্যায় করে ফেলেছেন। কিন্তু মমতা শুরু করবেন। হয়তো সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ভাবে পাঁচ বছর আগের কোনো ঘটনা দিয়ে।

মমতা ইচ্ছে করে বেশি দেরি করছেন আজ। প্রতাপ এখন ঘুমিয়ে পড়লে সেটা আরও একটা অপরাধ হবে। সিগারেট বেড়ে যাচ্ছে। প্রতাপ দরজার পাশে এসে দাঁড়ালেন, একটু লুকিয়ে। রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে মমতা সুপ্রীতির সঙ্গে কী একটা গল্পে মেতে আছেন। দু’জনেই হাসছেন খুব। প্রতাপ কি ইচ্ছে করলে বেরিয়ে ওদের গল্পে যোগ দিতে পারেন না? প্রতাপ জানেন, তিনি ওখানে গিয়ে দাঁড়ালেই আজ মমতার গল্প থেমে যাবে।

মমতা যখন শয়ন ঘরে এলেন, প্রতাপ তখন বসে আছেন খাটে পা ঝুলিয়ে।

মমতা প্রতাপের দিকে তাকালেন না, কোনো কথা বললেন না, খাটের পেছন দিক দিয়ে ঘুরে গিয়ে মুন্নির গায়ের চাঁদর টেনে দিলেন। এই শীতের মধ্যেও মুন্নি গায়ে চাপা রাখতে চায় না, ঠাণ্ডা লেগেছে তার, ক’দিন ধরে খুব কাশছে ঘুমের মধ্যে।

এই যে প্রতাপ এতক্ষণ জেগে থেকেও মুন্নির গায়ে চাপা আছে কি না সেটা লক্ষ করেন নি, মমতা প্রথমে এসে সেটাই বুঝিয়ে দিলেন।

তারপর মমতা ড্রেসিং টেবলের সামনে ফিরে এসে চিরুনি বসালেন চুলে।

তিনটি সন্তানের জননী হলেও মমতার শরীরটি এখনো তন্বী। তাঁর রূপের মধ্যে একটা স্নিগ্ধতা আছে। তাঁর দৃষ্টি ও ওষ্ঠরেখায় রয়েছে সতোর নির্ভুল চিহু। ঘন কালো চুল কোমর ছাড়িয়ে যায়।

মমতা এমন ভাবে প্রসাধন করছেন যেন ঘরে তিনি একা।

কিছুক্ষণ মমতার টুকিটাকি কাজকর্ম লক্ষ করার পর প্রতাপ আর ধৈর্য রাখতে পারলেন না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আজ কী হয়েছে বলো তো?

উত্তরটাও প্রতাপের জানাই ছিল।

মমতা মুখ না ফিরিয়েই বললেন, কী আবার হবে, কিচ্ছু হয় নি তো?

সরাসরি সমরে তো মেয়েরা আসবে না, তাদের আক্রমণ হবে অতর্কিতে।

–আমি কি কিছু গুরুতর দোষ করে ফেলেছি?

–না, তুমি কি দোষ করবে? তুমি তো কখনো দোষ করো না!

এ সম্পর্কে প্রতাপেরও বিশেষ দ্বিমত নেই। তাঁর অহমিকা বেশি, তিনি নিজের দোষ দেখতে পান না। কিংবা অন্য কেউ বললেও স্বীকার করতে চান না। তাঁর ধারণা, রাগের মাথায় তিনি কখনো কখনো কটু কথা বলে ফেলেন বটে, কিন্তু তাঁর মতন সব দিকে বিবেচনা আর ক’জনের আছে?

–তা হলে আমি শুয়ে পড়ি?

–হ্যাঁ, শোও, তোমাকে তো আমি জেগে থাকতে বলিনি!

প্রতাপের সত্যি ঘুম এসে গেছে, আজকের মতন কোর্ট অ্যাডজোন করে তিনি বালিশে মাথা রাখলেন। আলোটা ঠিক একেবারে সামনেই, তিনি হাত চাপা দিলেন চোখে।

একটুক্ষণের জন্য তন্দ্রা এলেও আবার ভেঙে গেল। মনের মধ্যে কী যেন একটা খচখচ করছে। মমতাকে সত্যি ভালোবাসেন প্রতাপ, কিন্তু সিনেমার নায়কদের মতন মুখে সেই কথা বারবার বলে তিনি আদিখ্যেতা করতে পারেন না। কিন্তু কোনো কারণে মমতার মধ্যে অশান্তি দেখলে তিনি নিজেও স্বস্তি বোধ করেন না।

কিন্তু মমতার এই কথা না বলা প্রতিরক্ষা ব্যুহ তিনি ভাঙবেন কী করে? মমতা কোনো অভিযোগ জানালে তিনি উত্তর দিতে পারতেন।

হঠাৎ প্রতাপের একটা কথা মনে পড়ে গেল। তিনি উঠে বসে ব্যস্ত ভাবে বললেন, দিদি আজ যে বালাদুটো দিয়েছে, তুমি আলমারিতে তুলে রেখেছো? ড্রেসিং টেবলের ড্রয়ারে ছিল!

প্রতাপ যে নিজেই মমতার হাতে একটা মারাত্মক অস্ত্র তুলে দিলেন তা তিনি বুঝলেন না। অথবা, মমতার নীরবতাই কি তাঁর মুখ দিয়ে এই সময়ে এই কথাটা বের করে আনলো?

এবারে মুখ ফিরিয়ে মমতা বললেন, তুমি দিদির গয়না হাত পেতে নিলে? ফিরিয়ে দিলে না কেন?

–পরে এক সময় দিয়ে দিলেই চলবে।

–তুমি এখন দিদির গয়না বিক্রি করে সংসার চালাবে? ছিঃ!

–তোমার মাথা খারাপ হয়েছে? আমি দিদির গয়না বিক্রি করতে যাবো?

–তবে কেন সঙ্গে সঙ্গে ফিরিয়ে দিলে না?

–দিদি জোর করতে লাগলো। দিদি কী বলতে চায়, তুমি তো জানোই। তাই দিদি যাতে অন্যরকম কিছু না ভাবে–

সুপ্রীতি মেয়েকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন প্রায় এক বছর হয়ে গেল। অসিতবরণের সম্পত্তির ভাগ নিয়ে সবে মাত্র মামলা শুরু হয়েছে। বরানগরের বাড়িতে দিদির অংশটা দখল হয়ে গেছে, ওখানে আর ফিরে যাবার পথ নেই, দিদির সে ইচ্ছেও নেই একটুও। সম্পত্তির ভাগ তাঁর আইনত প্রাপ্য ঠিকই। কিন্তু মামলা কত বছর চলবে তার ঠিক নেই।

ভাইয়ের সংসারে এসে থাকতে সুপ্রীতির সম্মানে লাগবারই কথা। তাঁর কিছু জমানো টাকা ছিল, এতদিন খরচ করেছেন মাঝে মাঝে। এখন নগদ ফুরিয়ে যাওয়ায় গয়নায় হাত পড়েছে। সুপ্রীতি অবশ্য সোজাসুজি গয়না বিক্রি করে টাকা দেওয়ার কথা বলেননি। পুরোনো ধাঁচের দু’খানি বালার একটিতে ফাটল ধরেছে, তাই ও-দুটি বিক্রি করে তিনি তুতুলের জন্য নতুন গয়না করিয়ে দিতে চান। তবে, এখনই নয়, সোনার দাম একটু কমলে। এখন সোনার দাম বেশ উঠেছে, এই সময় ঐ অকেজো বালা দুটি বিক্রি করে দেওয়াই ভালো।

সুপ্রীতি মুখে যা-ই বলুন, উদ্দেশ্যটা প্রতাপের কাছে স্পষ্ট। প্রস্তাবটা একেবারে প্রত্যাখ্যান। করলে সুপ্রীতি জোর করতেন, তাই প্রতাপ আপাতত কিছুদিনের জন্য বালাদুটো নিজের কাছে রেখে দিতে চেয়েছেন। দু’চারদিন বাদে ফেরত দিলেই হবে।

মমতা বললেন, প্রথম থেকেই তোমার উচিত ছিল, তোমার মাইনের টাকা দিদির হাতে তুলে দেওয়া। দিদিকেই সংসার চালাতে বলতে পারতে।

কথাটা প্রতাপের বেশ যুক্তিযুক্ত মনে হলো। দিদিই এ সংসারে বড়। সংসার চালাবার বুদ্ধিও যথেষ্ট, দিদিকেই এই সংসারের কর্তৃত্ব ভার দিলে ঠিক হতো। মমতা মাঝে মাঝে অবুঝের মতন বেশি খরচ করে ফেলেন। এই ব্যবস্থাটা প্রতাপের মাথায় আগে আসেনি কেন?

তিনি বললেন, তুমিও তো এ কথা আগে আমায় বলোনি।

–সামনের মাস থেকে তাই করো। দিদি বুঝেসুঝে চালাবেন!

এটা তো যুদ্ধ নয়, এ তো শান্তির সময় সীমান্ত আলোচনা। মমতা স্বেচ্ছায় অনেকখানি অংশ ছেড়ে দিতে চাইছেন। প্রতাপ এবার হৃষ্ট ভাবে পাশ ফিরে শুয়ে বললেন, ঠিক আছে, সেই রকমই করা যাবে!

আলো নিবিয়ে মমতা এসে মুন্নির ওপাশে শুয়ে পড়ার পর প্রতাপ হাত বাড়িয়ে তাঁর গালটা ছুঁলেন। মমতা আস্তে আস্তে হাতটা সরিয়ে দিয়ে বললেন, আমি দাদার কাছে কয়েকদিন গিয়ে থাকবো ভাবছি।

— প্রতাপ বললেন, গত মাসে যখন বিনতা এসেছিল, তখনই তো গিয়ে থেকে এলে ক’দিন। আবার যাবে?

–হ্যাঁ।

প্রতাপ উদারভাবে বললেন, তা যেতে পারো। ছেলে-মেয়েদের এখন ছুটি আছে। কদিন থাকবে?

–সে আমি বুঝবো। আমার এখানে থাকার দরকার তো কিছু নেই, দিদিই সংসার। দেখবেন।

প্রতাপের মাথায় সব কিছু গুলিয়ে গেল। খুব ধারালো অস্ত্রের আঘাতটা টের পেতে খানিকটা সময় লেগে যায়। এতক্ষণ তবে মমতা যা বলছিলেন, তার কোনোটাই শান্তি প্রস্তাব নয়?

প্রতাপ আহতভাবে বললেন, তুমি এ কথা কেন বলছো, মমো?

মমতা চুপ।

প্রতাপ আবার হাত বাড়িয়ে মমতার গাল ছুঁতে গেলেন। স্পর্শের ভাষা দিয়ে তিনি মমতাকে। তাঁর আন্তরিকতা বোঝাতে চান।

মমতার গাল থেকে গড়িয়ে নামছে উষ্ণ অশ্রু।

–তোমার কী হয়েছে? আমায় বলো!

–কিছু হয়নি!

এইবার প্রতাপ একটু একটু বুঝলেন। এই সংসারটা মমতার নিজস্ব ছিল। স্বামী-পুত্র কন্যা নিয়ে সুখে-দুঃখে তিনি এটা এতদিন ধরে গড়ে তুলেছেন, এখন সেই সংসারের ভার চলে যাবে দিদির হাতে।

কিন্তু মমতা নিজেই তো এই প্রস্তাবটা দিলেন। মেয়েরা এক এক সময় মুখে যা বলে, মনের কথাটা হয় তার ঠিক উল্টো। এসব সব সময় পুরুষের বোঝার অসাধ্য!

প্রতাপ চটপট এ সংকটের মীমাংসা করে দিলেন।

তিনি বললেন, তোমার সংসার তোমারই থাকবে। আমার মাইনের টাকা এত কাল বাদে দিদির হাতে তুলে দিতে যাওয়ার কোনো মানেই হয় না! যেমন চলছে সেই রকমই চলুক!

–মাইনের টাকাটা তুলে দেওয়াই বুঝি বড় কথা! তা না দিলেও তো…

–তার মানে?

–আমাকে সব সময় দিদির মতামত নিয়ে চলতে হয় না? ছেলেমেয়েরা সকালে কী খাবে না খাবে, সেটাও তো উনি ঠিক করে দেন।

আর একটা কঠিন অস্ত্রের আঘাত। প্রতাপ বেশ কয়েক মুহূর্ত কথাই বলতে পারলেন না।

দিদির উপস্থিতিটাও মমতার কাছে কষ্টকর? সেইজন্যই মমতা মাঝে মাঝেই বলছেন, এইটুকু ছোট ফ্ল্যাটে এতগুলো মানুষকে প্রতাপ বন্দী করে রেখেছেন। কয়েকদিন আগে বাবলুর খেলাধুলোর প্রসঙ্গেও বলেছিলেন।

দিদি তো গুরুজনের মতন পায়ের ওপর পা উঠিয়ে ভাইয়ের বউ-এর সেবার প্রত্যাশী নন। দিদি এই সংসারের জন্য অনেক খাটেন। বামুন দিদি অসুস্থ হলে রান্নার ভারও নিজেই নিয়ে নেন সুপ্রীতি। সেদিক থেকে বলবার কিছু নেই। কিন্তু সুপ্রীতির ব্যক্তিত্ব প্রবল, সেখানে মমতাকে সংকুচিত হয়ে থাকতে হয়, সব ব্যাপারে দিদির মতামত মমতা নিজে থেকেই জানতে চান, অথচ ভেতরে ভেতরে দগ্ধ হন!

এই খানিক আগেই তো দিদির সঙ্গে হেসে হেসে গল্প করছিলেন মমতা। অথচ দিদিকে তাঁর এত অপছন্দ! তুতুলকেও তো মমতা নিজের ছেলেমেয়ের মতনই ভালোবাসেন। তা হলে?

সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত হয়ে প্রতাপ জিজ্ঞেস করলেন, মমো, তুমি কী বলতে চাও?

মমতা বললেন, আমি তো তোমায় কিছু বলতে চাইনি?

প্রতাপের ইচ্ছে হলো তিনি চিৎকার করে বলে ওঠেন, ওঃ। তোমরা কি কিছুতেই মন খুলে কথা বলতে পারো না?

তিনি চাপা রাগের সঙ্গে বললেন, মমো, তুমি এমন ব্যবহার করছো–দিদি, তুতুল, এরা যাবে কোথায়?

–চুপ করো, আস্তে কথা বলো!

–মমো, লক্ষ্মীটি এ রকম করো না! যে-রকম চলছে, সেই রকমই চলতে দাও! এ ছাড়া অন্য উপায় নেই।

–হ্যাঁ, যে রকম চলছে, সেই রকমই চলুক। তাতেই তোমার সুবিধে। বাড়িতে কী ঘটছে ঘটছে তা নিয়ে তোমাকে মাথা ঘামাতে হবে না। তুমি নিশ্চিন্তে বুলার কথা ধ্যান করতে পারবে।

প্রতাপ এবারে হাসবেন না রাগ করবেন তাও বুঝতে পারলেন না। বুলা? এ রকম অবাস্তব অভিযোগের কোনো মানে আছে? সেই দেওঘরে দেখা হয়েছিল অনেক দিন বাদে, তারপর আর বুলার কোনো খবর নেওয়া হয়নি। দু’একবার ক্ষীণ ইচ্ছে হয়েছিল টালিগঞ্জে বুলার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে একবার দেখা করার, কিন্তু বুলার বর্বর ধরনের দেওরটির কথা মনে পড়তেই তিনি গুটিয়ে গেছেন।

তবু যা হোক বুলা সম্পর্কে মমতার ঈষা তিনি কোনো না কোনো সময়ে হেসে উড়িয়ে দিতে পারবেন, কিন্তু দিদির ব্যাপারটা অনেক গুরুতর। দিদিকে প্রতাপ নিজে নিয়ে এসেছেন এ বাড়িতে। তাছাড়া দিদি কোথায়ই বা যেতে পারতেন? তুতুলকে নিয়ে সুপ্রীতি আলাদা কোথাও বাড়ি ভাড়া করে থাকবেন, তা কি সম্ভব?

দিদি কি মমতার সঙ্গে সম্প্রতি কোনো খারাপ ব্যবহার করেছেন? না, তা হতেই পারে না। দিদির মধ্যে কোনো রকম ক্ষুদ্রর্তা নেই। তবু এক সংসারে দুই নারী। তাদের সম্পর্ক যাই-ই হোক না কেন, পাশাপাশি কিছুদিন থাকলে সংঘর্ষ বাঁধবেই। এই সংঘর্ষে বিজয়িনী কে হয়? মমতাকে খুশী করবার জন্য প্রতাপ সুপ্রীতিকে কী বলবেন?

প্রতাপ একটা অবর্ণনীয় কষ্ট বোধ করতে লাগলেন। তাঁর নিজের দিদি, সেই ছোটবেলা থেকে দিদি তাঁর বন্ধুর মতন, তারপর ছাত্র অবস্থায় কলকাতায় পড়তে এসে বরানগরে দিদি-জামাইবাবুর কাছে কত খাতির-যত্ন ভোগ করেছেন প্রতাপ। এখন দিদি অসহায় অবস্থায় পড়েছেন…

প্রতাপ মমতার হাত জড়িয়ে ধরে কাতর ভাবে বললেন, মমো, তুমি যদি অবুঝ হও..আচ্ছা আমি চেষ্টা করছি, শিগগিরই অন্য একটা বাড়ি ভাড়া করতে। অন্তত আর একখানা বেশি ঘর… মমতা বললেন, বাড়ি ভাড়া আরও বাড়লে, তুমি দিদির গয়না বিক্রি করবে।

–না, সে কথা তোমায় ভাবতে হবে না। আমি যেমন করে পারি চালাবো!

–আমার মাথার দিব্যি রইলো, দিদির গয়না বিক্রি করার আগে তুমি যদি আমার সব গয়না বিক্রি না করো, তা হলে আমি সব ছুঁড়ে ফেলে দেবো!

–কোনো গয়নাই বিক্রি করতে হবে না।

–সারাদিন খেটেখুটে এসে তুমি আবার রাত জেগে বই অনুবাদ কবে? আমি তাই। চোখের সামনে দেখবো?

–তা হলে তুমি কী চাও? আঃ। আমি আর পারছি না! পারছি না!

প্রতাপ উপুড় হয়ে বালিশে মুখ গুঁজে দিলেন। তারপর আর কোনো কথা হলো না।

অনেকক্ষণ বাদে প্রতাপ সেই অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়ার পর মমতা মুন্নিকে ডিঙ্গিয়ে এসে শুলেন প্রতাপের পাশে। আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন স্বামীর মাথায়।

একবার ঘুম ভেঙে মুখ ফিরিয়ে ঘোর লাগা চোখে প্রতাপ জিজ্ঞেস করলেন, কী? মমতা বললেন, কিচ্ছু না। তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। যেমন চলছে, সেই রকমই চলুক।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *