উনবিংশ অধ্যায় – শিপ্রানদীর উৎপত্তি-বিবরণ
মার্কণ্ডেয় বলিলেন; তখন মহাদেব, বিজয়াকে পতিত দেখিয়া দক্ষতনয়াকে স্মরণ করত শোকজনিত উদ্বেগভার বহনে অসমর্থ হইলেন।১
তখন শিব, সকল দেবতার সমক্ষেই ধৈৰ্য্যচ্যুত ও বাষ্পাকুল লোচন হইয়া গাঢ় চিন্তাবিষ্ট হইলেন। ২
তখন ব্রহ্মা, শোককাতরা বিজয়াকে আশ্বাসিত করিয়া মহেশ্বরকে আশ্বাস প্রদান করত সান্ত্বনাপূর্বক এই কথা বলিতে লাগিলেন। ৩
ভগবন্! পুরাণ-যোগিন্! শোক করা তোমার অনুপযুক্ত, পরমজ্যোতিই তোমার একমাত্র ধ্যেয় বস্তু ছিলেন; প্রভো! এখন একি? রমণী-ধ্যানে নিযুক্ত হইলেন কেন? ৪
তোমার স্বভাব, প্রভবিষ্ণু পরম শান্ত এবং স্থূল-সূক্ষ্ম-বহির্ভূত; শোকে তাহা বিক্ষিপ্ত হইতেছে কেন? ৫
যতিগণের ধ্যেয়, পরাৎপর নিরঞ্জন নির্মল, সৰ্বত্ৰগ, রাগদ্বেষাদি-গুণবর্জিত যে রূপ তোমার শ্রুতি-সিদ্ধ, তাহা একবার বুদ্ধি-সাহায্যে গ্রহণ কর। ৬
শোক, লোভ, ক্রোধ, মোহ, হিংসা, মান, দম্ভ, মদ, আমোদ, ব্যসনাসক্তি, ঈর্ষা, অসূয়া, অসহিষ্ণুতা এবং অসত্যভাষণ এই চতুর্দশ দোষ জ্ঞাননাশক। ৭
যোগিগণ, ধ্যান যোগদ্বারা তোমার চিন্তা করেন; তুমি বিষ্ণুরূপী এবং তুমিই এ ভুবনের বিধাতা। এখন, যিনি সতীনাম্নী হইয়া তোমার মোহবিধান করিতেছেন, তিনি শোকমোহ-কারিণী তোমারই মায়া। ৮।
যিনি সকল লোককে বিমোহিত করত গর্ভাবস্থান-পৰ্য্যন্ত স্থিত তাহাদিগের পূর্ব-জন্ম-জ্ঞান জন্মকালে বিলুপ্ত করিয়া, অন্য জ্ঞান জন্মাইয়া দেন; আজ তিনিই শোকাতুর তোমাকে বিমোহিত করিতেছেন। ৯
পূৰ্বকাল হইতে প্রতিকল্পেই এরূপ হইয়া আসিতেছে; তুমি সহস্র সহস্র সতী বিসর্জন দিয়াছ; সহস্র সহস্র সতী মরিয়াছেন, আবার চরাচর জগতের হিতের জন্য পুনরায় তুমি তাহাকে গ্রহণ করিয়াছ। ১০
যত সহস্ৰ সতী মরিয়াছেন, যত বার তুমি তাহার বিরহ বেদনা পাইয়াছ এবং যেরূপে তিনি আছেন–হে বৃষধ্বজ। তাহা একবার ধ্যানযোগে অবলোকন কর। ১১
হে ঈশ! তিনি যাহা হইতে উৎপন্ন হইয়া সুরগণেরও দুর্লভ বস্তু তোমাকে প্রাপ্ত হইবেন এবং তোমার পক্ষে তিনি যাদৃশী হইবেন তৎসমস্তই তুমি ধ্যানযোগে অবলোকন কর। ১২
মার্কণ্ডেয় বলিলেন,–ব্রহ্মা শঙ্করকে এইরূপ বহুবিধ সান্ত্বনা বাক্য বলিয়া তাহাকে সেই গিরিরাজ নগরী হইতে নির্জন স্থানে লইয়া গেলেন। ১৩
অনন্তর, ব্ৰহ্মাদি দেবগণ হিমালয়-প্রস্থে এবং হিমালয় নগর ওষধি-প্রন্থের পশ্চিমে শিপ্রনামক জলপূর্ণ সবোবর দেখিতে পাইলেন। ১৪।
ব্ৰহ্মা ও ইন্দ্র প্রভৃতি দেবগণ তথাকার নির্জন স্থানে, মহাদেবকে অগ্রে করিয়া যথারীতি উপবেশন করিলেন। ১৫
সকল প্রাণীদিগের মনোহর নির্মল-শীতল-সলিলপূর্ণ সর্বগুণে মানসসরোবর সদৃশ সেই সরোবর দেখিয়া মহাদেব তাহা ভাল করিয়া দেখিবার জন্য ক্ষণ কাল উৎসুক হইলেন। তিনি দেখিলেন; জগজ্জনতৃপ্তি-বিধায়িনী শিপ্রা নামে নদী সেই সরোবর হইতে নিঃসৃত হইয়া দক্ষিণ সমুদ্রে গমন করিলেন। ১৬-১৭
শিব দেখিলেন, নানা দেশাগত বহুবিধ মনোহর বিহঙ্গকুল সেই জলপূর্ণ সরোবরে বিচরণ করিতেছে। ১৮
তিনি দেখিলেন; অনতি-প্রবল-পবনবেগ-সম্ভূত তরঙ্গমালার উপরে বিরাজমান কতিপয় চক্রবাকযুগল যেন নৃত্য করিয়া বেড়াইতেছে। ১৯
শিব দেখিলেন; কোন কোন স্থানে সমস্ত পক্ষীদিগের চঞ্চু পুটে তরঙ্গ লাগিতেছে; কোন স্থলে বা বিহগকুল, তরঙ্গাঘাতে জল হইতে উড্ডীন হইতেছে। ২০
সেই সরোবরতীরে শ্রেণী-বদ্ধ হংস কলহংস ও সারসবৃন্দ থাকাতে, তীরে তীরে তরঙ্গ-বিক্ষিপ্ত-শঙ্খমণ্ডলী-সজ্জিত সাগরের ন্যায় প্রতীয়মান হইতে লাগিল। ২১
দেখিলেন; বৃহৎ বৃহৎ মৎস্যকুলের আঘাত-বিক্ষুব্ধ-সলিল-শব্দে বিত্ৰাসিত বিহঙ্গগণ ভয়সূচক শব্দ করিয়া সরোবরের স্থানে স্থানে মনোহরতার পূর্নাবয়বতা করিতেছে। ২২
দেখিলেন; সেই সরোবর ফুল্ল-কমল ও কমল-কলিকা-যোগে স্থূল-বৃহৎ-ক্ষুদ্র তারকাখচিত গগনমণ্ডলের ন্যায় শোভা পাইতেছে। ২৩
শ্বেত-শতদল-বনমধ্যে এক-আধটী নীলোৎপল; নক্ষত্রপুঞ্জমধ্যে নীলজলদ খণ্ডের ন্যায় শোভা পাইতেছে। ২৪
স্বর্গবাসিগণ, কমল-বন-মধ্যে নিস্পন্দভাবে অবস্থিত কতিপয় হংসকে, প্রফুল্ল-কমল-ভ্রম হওয়াতে হংস বলিয়া বুঝিতে পারেন নাই। ২৫
বিধাতা, তথায় রক্ত ও শুক্ল এই দ্বিবিধ পদ্ম প্রস্ফুটিত দেখিয়া নিজ দেহের অরুণতা এবং আসনের প্রফুল্লতাকে নিন্দা করিতে লাগিলেন। ২৬
শঙ্কর, সেই সরোবরের প্রফুল্ল শতদল অবলোকন করিয়া নিজ শিরোভূষণ শশধরের কিরণ-সম্পর্কে মলিন ভাবাপন্ন হস্তস্থিত কমলের আর তাহার সহিত তুলনা করিলেন না। ২৭
বিষ্ণু চারিদিক দেখিয়া নিজ চক্ররূপী সূর্যের কিরণজালে প্রফুল্ল আপনার হস্তস্থিত কমল উভয়কেই সদৃশ বোধ করিলেন। ২৮
বিবিধ বিহঙ্গম কুলে পরিব্যাপ্ত, শত শত কমলিনী এবং নীল কমলচয়ে সংবৃত সেই হৃদয়মোহন পূর্ণসরোবরের বিমল জলরাশি তীরস্থিত দেবদারুতরু নিকরের পুষ্পপরাগে সুবাসিত, আর তাহার তীরে তীরে হরিত বর্ণ বৃহৎ বৃহৎ বনস্পতি,–শিব ঔৎসুক্যসহকারে ইহা দেখিয়া ক্ষণকালের জন্য শোকহীন হইলেন। ২৯-৩১
শিব, যেমন চন্দ্রমণ্ডল হইতে গঙ্গা, সুমেরু হইতে জম্বুনদী, সেইরূপ শিপ্র সরোবর হইতে বিনিঃসৃত শিপ্রানদী অবলোকন করিলেন। ৩২
ঋষিগণ বলিলেন, শিপ্র সরোবর কোথা হইতে হইল? শিপ্রানদীই বা তাহা হইতে নিঃসৃত হইল কিরূপে? এই সরোবরের কিরূপ প্রভাব? বিস্তৃতরূপে তৎসমস্ত কীর্তন করুন। ৩৩
মার্কণ্ডেয় বলিলেন; মহাভাগ মুনিগণ সকলে শ্রবণ করুন, আমি শিপ্রা নদীর নিঃসরণবৃত্তান্ত ও শিপ্র-সরোবরের প্রভাবাদি কীৰ্ত্তন করিতেছি। ৩৪
হে দ্বিজগণ! যখন বসিষ্ঠ অরুন্ধতী দেবীকে বিবাহ করেন, তখন তাহার বৈবাহিক জলে শিপ্রানদীর উৎপত্তি হয়। ৩৫
যেমন বিষ্ণুপাদপ্রসূতা প্রসন্ন-পুণ্য-সলিলা গঙ্গা সাগরে পতিত হইয়াছেন, সেইরূপ শিপ্রানদীও বিধিনিয়োগে শিপ্রসরোবরে আসিয়া পতিত হয়। ৩৬
ব্ৰহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর, অরুন্ধতী ও বশিষ্ঠের বিবাহকালে গায়ত্রী ও “দ্রুপদাদিব” ইত্যাদি মন্ত্র পাঠপূর্বক যে জলদ্বারা শান্তি করেন, তৎসমস্ত মিলিত হইয়া মানসপৰ্ব্বতের গুহা হইতে সাগর-সদৃশ শিপ্রসরোবরে আসিয়া পতিত হইতেছে। ৩৭-৩৮
পূৰ্বে বিধাতাই দেবগণের উপভোগার্থ হিমালয়পর্বতে শিপ্রনামে মহা সরোবর সৃজন করেন। ৩৯
ইন্দ্র, আজিও অরোগণসহ শচী সমভিব্যাহারে, শিপ্রসরোবরের প্রসন্ন পুণ্য সলিলে বিহার করেন। ৪০
আজিও দেবগণ, সেই সরোবরকে রত্নের মত রক্ষা করেন। মুনি ব্যতীত অন্য কোন মনুষ্য তথায় যাইতে পারে না। ৪১
মুনিগণ তপঃপ্রভাবে মহাযত্নে সেই শিপ্রনামক শুভ সরোবরে গমন, তদীয় জলপান এবং তথায় স্নান করিতে পারেন। ৪২
মনুষ্যগণ, দৈবযোগে কোন রকমে তথায় স্নান ও সেই জল পান করিলে চিরকাল সবলেন্দ্রিয় থাকে এবপং নিশ্চয়ই অমরত্ব প্রাপ্ত হয়। ৪৩
হে দ্বিজোত্তমগণ! এই সরোবর বর্ষাকালে বাড়ে না, গ্রীষ্মকালে শুষ্ক হয় না, সর্বদা একভাব। ৪৪
ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের কর-কমল-নির্গত বশিষ্ঠ-বিবাহের যে শান্তি-জল তথায় পতিত হয়, হে দ্বিজসত্তমগণ! শিপ্রসরোবরগর্ভস্থ সেই জল প্রত্যহ বাড়িতে লাগিল। তখন বিষ্ণু চক্রদ্বারা গিরিশৃঙ্গ ছেদনপূর্বক লোকহিতাভিলাষে সেই প্রবৃদ্ধ জলরাশিকে পুণ্যতমা নদী করিয়া পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। ৪৫-৪৭
সেই নদী মহেন্দ্র পর্বত ঘুরিয়া দক্ষিণসাগরে প্রবিষ্ট হইয়াছে। এই শিপ্রা নদী গঙ্গার ন্যায় ফলদায়িনী স্নানকারীদিগের পবিত্রতাবিধায়িনী। ৪৮
সেই মহানদী শিপ্রসরোবর হইতে নিঃসৃত হইয়াছে বলিয়া তাহার নাম “শিপ্রা”; ব্রহ্মা পূর্বেই এই নামকরণ করিয়াছেন। ৪৯
যে মানব, কার্তিকপূর্ণিমাতে তথায় স্নান করেন, তিনি অতি সমুজ্জ্বল বিমানে আরোহণ করিয়া বিষ্ণুলোকে গমন করেন। ৫০
মনুষ্য সম্পূর্ণ কার্তিকমাস শিপ্রাজলে স্নান করিলে, প্রথমে ব্ৰহ্মলোকে গমন করে, পশ্চাৎ মুক্তিলাভ করিয়া থাকে। ৫১
ঋষিগণ বলিলেন,–হে ব্ৰহ্মন! বসিষ্ঠ অরুন্ধতী দেবীকে বিবাহ করেন কেন? আর অরুন্ধতী কাহার কন্যা তাহা আমাদিগকে বলুন। ৫২
যিনি শ্রেষ্ঠপতিব্রতা বলিয়া ত্রিলোকে বিখ্যাত, ভর্তৃচরণযুগল ব্যতীত যিনি অন্যের দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন না। স্ত্রীলোকে যাহার মাহাত্ম্য-কথা শ্রবণ করিলে ইহজন্মে ও পরজন্মে পাতিব্ৰত্য লাভ করে। ৫৩-৫৪
আর আসন্ন-মৃত্যু অশুচি এবং পাপিষ্ঠ পুরুষ যাহাকে (যাহার নক্ষত্র মূর্তিকে) দেখিতে পায় না, আমাদিগের নিকট তাঁহার জন্মবৃত্তান্ত বলুন। ৫৫
মার্কণ্ডেয় বলিলেন,–তিনি যেরূপে যাহার তনয়া হইয়া উৎপন্ন হন, যেরূপে তিনি বসিষ্ঠকে প্রাপ্ত হন, যেরূপে তিনি পতিব্রতা হন-তৎসমস্ত শ্রবণ কর। ৫৬
সেই যে সন্ধ্যা, পূর্বে ব্রহ্মার মন হইতে উৎপন্ন হন, তিনিই তপস্যা দ্বারা দেহত্যাগ করিয়া মুনিবর মেধাতিথির ঔরসে জন্মগ্রহণপূর্বক অরুন্ধতী হন। ৫৭
সেই ব্রতচারিণী সতী অরুন্ধতী, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের বাক্যে সংশিত ব্ৰত মহাত্মা বসিষ্ঠকে পতিত্বে বরণ করেন। ৫৮
ঋষিগণ বলিলেন,–সন্ধ্যা, কোথায় কিজন্য কিরূপ তপস্যা করিয়া ছিলেন? ৫৯
কেনই বা তিনি দেহ ত্যাগ করিয়া মেধাতিথির কন্যা হন? কিরূপে তিনি ব্ৰহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের কথিত কঠোর ব্ৰতানুষ্ঠানে মহাত্মা বসিষ্ঠকে পতিত্বে বরণ করেন। ৬০
হে দ্বিজোত্তম! বিস্তারিতরূপে তৎসমস্ত আমাদিগকে বলুন। ৬১
হে দ্বিজসত্তম! মহাসতী অরুন্ধতীর চরিত্র শ্রবণ করিবার জন্য আমাদিগের অত্যন্ত কৌতূহল হইতেছে। ৬২
মার্কণ্ডেয় বলিলেন,–পূৰ্বে ব্রহ্মা নিজ তনয়া সন্ধ্যাকে দেখিয়া সকামচিত্ত হন। পরে কন্যা বলিয়া তাহাকে ত্যাগ করেন। ৬৩
ব্ৰহ্মার মানসপুত্র মহাত্মা ঋষিগণের সমক্ষে সন্ধ্যারও স্মর-শর-বিলোড়িত চিত্ত চঞ্চল হইয়াছিল। ৬৪
তৎপরে বিধাতার প্রতি শিবের সোপহাস বাক্য শ্রবণ করিয়া সন্ধ্যা বুঝিলেন, তাঁহার নিজের চিত্তও ঋষিগণের জন্য অন্যায় চঞ্চল হইয়াছে। ৬৫
সন্ধ্যা, তখন বারম্বার কামের তাদৃশ মুনিমোহকর ভাব অবলোকন করিয়া অত্যন্ত দুঃখিতা ও লজ্জিত হইলেন। ৬৬,
অনন্তর, ব্রহ্মা মদনকে শাপ দিয়া অন্তর্হিত হইলে এবং শিব নিজালয়ে গমন করিলে, সন্ধ্যা রোষাবিষ্ট হইয়া চিন্তা করিতে লাগিলেন। ৬৭
তখন মনস্বিনী সন্ধ্য্য, ক্ষণকাল ধ্যান করিবামাত্র এইরূপ যথার্থ পূর্ব-বৃত্তান্ত জানিতে পারিলেন। ৬৮
তিনি জন্মগ্রহণ করিবামাত্র ব্রহ্মা তাঁহাকে কামবশে সানুরাগে যুবতি দেখিয়া তাহার প্রতি অভিলাষ করেন। ৬৯-৭০
আর তাহাকে দেখিয়া ভাবিতাত্মা সকল মানসমুনিগণেরই চিত্ত অন্যায়রূপে সকাম হইয়া উঠে। দুরাত্মা মদন, তাহার নিজের চিত্তও মথিত করে। ৭১
এইজন্য সেই সকল ঋষিবৃন্দকে দেখিয়া তাহার মনও অত্যন্ত চঞ্চল হয়। স্বয়ং মদন এই পাপের ফল প্রাপ্ত হইয়াছে। ৭২।
কেননা ব্রহ্মা, শিবের সাক্ষাতে তাহাকে শাপ দিয়াছেন। সন্ধ্যা তখন বিবেচনা করিলেন; আমি এখন আমার উচিত ফল পাইতে ইচ্ছা করি। ৭৩।
যখন পিতা ও ভ্রাতৃগণ, কামবশে আমাকে দেখিয়া অভিলাষ করিয়াছেন, অথচ তাহা আবার অসাক্ষাতে নহে; তখন আমা অপেক্ষা পাপচারিণী আর কেহই নাই। ৭৪
আপনার পিতা ও ভ্রাতৃগণকে দেখিয়া স্বামীর প্রতি যেরূপ হয় সেইরূপ অন্যায় কামভাব আমারও উপস্থিত হইয়াছিল। ৭৫
আমি স্বয়ংই এই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করিব। বেদবিধি অনুসারে আমি নিজদেহ অনলে আহুতি দিব। ৭৬
এই ভূতলে এক নিয়ম স্থাপন করিয়া যাইব;–প্রাণিগণ জন্মিবামাত্র যাহাতে কামবশ না হয়। ৭৭
এই জন্য আমি অতি কঠোর তপস্যা করিয়া এই নিয়ম স্থাপন করিব, পরে প্রাণত্যাগ করিব। ৭৮
আমার যে শরীরে পিতা ও ভ্রাতৃগণ কামভাবে অভিলাষ করিয়াছেন, তাহাতে আমার কিছুমাত্র প্রয়োজন নাই। ৭৯
আমার যে শরীরে নিজ জনক ও ভ্রাতার প্রতি কামভাব উৎপন্ন হইয়াছে, তাহা পুণ্য-সাধন নহে। ৮০
সন্ধ্যা, মনে মনে এইরূপ চিন্তা করিয়া চন্দ্রভাগা নদীর উৎপাদক চন্দ্রভাগ নামক গিরিবরে গমন করিলেন। ৮১
পর্বতরাজ চন্দ্রভাগ, উত্তম প্রভাশালিনী স্বর্ণবর্ণা সন্ধ্যার অধিষ্ঠানে, সন্ধ্যা কালীন শশধরের উদয়ে উদয়-পর্বতের ন্যায় সাতিশয় শোভা পাইয়া ছিলেন। ৮২
উনবিংশ অধ্যায় সমাপ্ত। ১৯