উনিশ
কিলাকে দেখা মাত্র খুরকির মুখে বিস্ময় ফুটে উঠল। আর সেই সময় কিলা খ্যাসখেসে গলায় বলল, তোর সঙ্গে আমার দরকার আছে।
খুরকির বিস্ময়ভাব খুব দ্রুত কেটে গিয়ে ঠোঁটে হাসি ফুটছিল, ‘আব্বে কিলা, বহুৎদিন পরে দেখা হল গুরু! পাড়ার হালচাল কেমন?’
কিলা তখনও একদৃষ্টিতে খুরকির মুখের দিকে তাকিয়ে। তার চোখ খুরকির হাতের ওপর স্থির, নেমে আয় খুরকি মাটিতে দাঁড়িয়ে হিস্যাটা বুঝে নিই।’
‘কিসের হিস্যা?’ খুরকির হাত চট করে কোমরের কাছে চলে গেল। আর সঙ্গে সঙ্গে কিলা চিৎকার করে উঠল, ‘খবরদার, হাত তোল, নইলে জান নিয়ে নেব।
চিৎকার শুনে বাসের লোকজন এত ঘাবড়ে গেল যে সঙ্গে সঙ্গে ওই জায়গাটা ফাঁকা হয়ে গেল। যত যাত্রী সব দুপাশে চলে গিয়ে জুলজুল করে ওদের দেখতে লাগল। বাসটা এতক্ষণ ফাঁকাই ছিল কিন্তু এখন দুপাশে ভিড়ের চাপ বাড়ল। কোনরকমে অর্ক ভিড় বাঁচিয়ে একটু সরে এসে ওদের দেখতে লাগল। এখন চেষ্টা করলেও খুরকিরা ওকে দেখতে পাবে না।
খুরকি খুব ধীরে ধীরে হাত তুলে উঠে দাঁড়াল। ওর পাশে যে লোকটা বসেছিল সে হুড়োহুড়িতে হাওয়া হয়ে গিয়েছে। খুরকিকে খুব রোগা এবং কাহিল দেখাচ্ছিল। সে কিলার মুখের দিকে তাকিয়ে শক্ত চোয়ালে বলল, ‘এসব নকশার মানে কি?
‘নকশা? তুই অ্যাদ্দিন কোথায় ছিলি?’
‘তাতে তোর দরকার কি?’
‘সতীশদাকে কে বলেছে আমি কংগ্রেসের লাড্ডু খাচ্ছি?’
‘সে সতীশকে জিজ্ঞাসা কর, আমি কি জানি।’
‘তুই জানিস না? আমি তোর সঙ্গে ওয়াগনের কারবারে গিয়েছিলাম?’
‘তোকে নিলে তো তবে যাবি।’
বাসটা তখন বেশ জোরে ছুটছে। স্টপেজে দাঁড়াচ্ছে কি দাঁড়াচ্ছে না! একজন কণ্ডাক্টর সাহস করে দু’পা এগিয়ে এল, ‘গুরু বাসের মধ্যে এসব কেন করছ, পাবলিক দেখছে—।’ সঙ্গে সঙ্গে কিলা গর্জে উঠল, ‘হ্যাততেরি তোর পাবলিক, পাবলিকের ইয়ে করি আমি!’ কথাটা শেষ হওয়া মাত্র কণ্ডাক্টর নিজের দরজায় চলে এল। কিলা কথাটা বলার সময়েও কিন্তু খুরকির দিক থেকে দৃষ্টি সরায়নি। এবার হিসহিসে গলায় বলল, ‘আমাকে সরিয়ে তুই সিপিএমে ঢুকতে চাস?’
খুরকি কাঁধ নাচাল, কোন কথা বলল না। এইসময়ে দূরে দাঁড়ানো এক বৃদ্ধ মিনমিনে গলায় বললেন, ‘কি হচ্ছে ভাই বাসের মধ্যে?’ কিলা সেইসময় ভুলটা করে ফেলল। রাগের মাথায় যেই সে মুখ ফিরিয়েছে অমনি খুরকির হাতে খুর উঠে এসেছে। চোখের কোণে সেটাকে দেখতে পেয়ে কিলা এক পা পিছিয়ে গিয়ে চিৎকার করে উঠল, ‘খুর নামা খুরকি, জান চলে যাবে, কোন ভেড়ুয়া তোকে বাঁচাতে আসবে না।’ খুরকি হাসল। এখন যেন সে অনেকটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে। তার আঙ্গুলে বিশ্বাসী কুকুরের মত খুরটা লেজ নাড়ছে। হাত নেড়ে সে বলল, ‘ফুটে যা, নইলে এটা আমার হাতে থাকবে না।’
আর তখনই কিলার হাত মাথার ওপরে উঠে এল। অর্ক কিছু বোঝার আগেই কিলা প্রচণ্ড আর্তনাদ করে বাসের সিটের ওপর গড়িয়ে পড়তে পড়তেই কিছু একটা ছুঁড়ে দিল। খুরকির চিৎকার পর্যন্ত শোনা গেল না কারণ বাস কাঁপিয়ে তখন বিস্ফোরণটা বেজেছে। ড্রাইভার প্রাণপণে ব্রেক কষেছে রাস্তার পাশে গাড়ি নামিয়ে। যাত্রীরা সবাই হুড়মুড়িয়ে গাড়ি থেকে নামতে লাগল। অর্ক দেখল কিলা বাসের মেঝেয় গড়াগড়ি খাচ্ছে। রক্ত গলগলিয়ে বের হচ্ছে ওর পেট থেকে। আর খুরকি—। অর্ক নিচে নেমে চোখ বন্ধ করল। এত বীভৎস দৃশ্য সে জীবনে দ্যাখেনি। হই হই করে দত্তবাগানের লোকজন ছুটে আসছিল বাসটার দিকে। মোড়ে দাঁড়ানো দুটো ট্রাফিক পুলিস ঘন ঘন হুইস্ল বাজাচ্ছে ভিড় সরাতে। তখন আর বিস্ফোরণের ধোঁয়া নেই কিন্তু একটা কটু গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। অর্ক একটু দূরে সরে গিয়ে দাঁড়াল। পুলিস দুটো পাবলিককে বাসের ভেতর উঠতে দিচ্ছে না কিন্তু ভেতরের দৃশ্য দেখবার জন্য পাবলিক যেন ছটফট করছে। খুরকি নেই, এটা পরিষ্কার। এক সেকেণ্ডেই হাওয়া হয়ে গেল একটা জীবন। কিলার পেটে অনেকখানি খুর টেনেছে খুরকি। নেমে আসার মুহূর্তেও মনে হয়েছিল বেঁচে আছে। এখনও আছে কিনা কে জানে। কিলা পেটো ছুঁড়েছিল অত কাছে দাঁড়িয়ে? পেটোটা কি ওর গায়েও লেগেছে? এতদিন তিন নম্বরে বহুৎ ঝামেলা হয়েছে, পেটো পড়েছে কিন্তু কখনও কোন লাস পড়তে সে নিজের চোখে দ্যাখেনি। হাতাহাতি মারামারিতে ভোগে যেতে যেতেও কি করে যেন কারোরই কিছু হয় না। কিন্তু এখানে হল। তিন নম্বরে নিশ্চয়ই খবরটা পৌঁছে যাবে হাওয়ায়। কিলা যদি মরে যায়! চোখের সামনে অর্ক মোক্ষবুড়ির মুখ দেখতে পেল। আর তখনই একটা পুলিস ভ্যান আর অ্যাম্বুলেন্স এসে দাঁড়াল বাসের পাশে। অর্ক শুনল লোকজন মুখে মুখে নানান গল্প তৈরি করছে। তার মধ্যে যে গুজবটা খুব প্রবল হল, সেটা হচ্ছে এরা দুজনেই কুখ্যাত ব্যাঙ্ক ডাকাত। মানিকতলায় যে ব্যাঙ্ক ডাকাতি হয়ে গেছে তারই ভাগ নিয়ে ঝগড়া এবং এই পরিণতি। অর্কর কোন অনুভূতি হচ্ছিল না এসব শুনে। কিলাকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হল। ওর দুটো হাত ঝুলে পড়েছে, শরীর স্থির। খুরকির বডির জন্যে অপেক্ষা না করে অ্যাম্বুলেন্স দ্রুত আর জি করের দিকে চলে গেল। অর্কর সামনে দাঁড়ানো লোকটা বলে উঠল ‘কি দেখলাম মশাই, জীবনে ভুলব না, পুরো বডিটা পোড়া কিমা হয়ে গিয়েছে। এঃ।’
বিরাট ট্রাফিক জ্যাম হয়ে গিয়েছে ততক্ষণে। পুলিস ভিড় সরিয়ে রাস্তা হালকা করছিল। অর্ক ভিড় থেকে সরে গেল। হঠাৎ সে বুঝতে পারল খুরকি মরে গেছে কিংবা মরে যাবে অথচ তার একটুও কষ্ট হচ্ছে না। কতদিন এক সঙ্গে আড্ডা দিয়েছে, নানান ফন্দী এঁটেছে কিন্তু খুরকি অথবা কিলা তাকে এখন একটুও টানছে না। এমনকি সে যে ওদের ভাল করে চেনে একথাও তো কাউকে বলল না। আপাতত ওদের হদিস যে কেউ জানছে না তাও তার খেয়ালে নেই। তার মানে এই যে ওদের দুজনকে সে কখনই ঠিক বন্ধু বলে গ্রহণ করেনি। ওর হঠাৎ মনে হল খুরকি এবং কিলার এরকম একটা ব্যাপার পাওনা ছিল, পেয়ে গেল।
এখান থেকে লেকটাউন খুব বেশী দূর নয়। কিন্তু আর হাঁটতে ইচ্ছে করছিল না অর্কর। আর একটা সাতচল্লিশ নম্বরে উঠে ও খালি জায়গা দেখে বসে পড়তেই কন্ডাক্টর জিজ্ঞাসা করল, ‘কি হয়েছে দাদা?’
অর্ক বলতে গিয়েও ঘাড় নাড়ল, জানে না। লোকটা বলল, ‘তিনটে মাডার হয়েছে শুনলাম। বহুৎ খারাপ হয়ে গেল দিনকাল। অর্ক দেখল লোকটা বুড়ো এবং খুবই নিরীহ চেহারার। কিন্তু মারামারির আগে কিলা বলেছিল খুরকি সতীশদার কাছে লাগিয়েছে যে সে কংগ্রেসের চামচে হয়ে গেছে। অভিযোগ সত্যি না মিথ্যে তা আর প্রমাণিত হবে না কিন্তু তাতে কিলা এত খচে গেল কেন? তারপরই অর্কর কাছে কয়েকটা ব্যাপারই স্পষ্ট হল। না সত্যি, খুরকি নিশ্চয়ই চুকলি খেয়েছিল। কি যে সিপিএমের হয়ে কাজকর্ম করে বলে রং নিত সেটা সহ্য করতে পারত না খুরকি। প্রায়ই বলত, আমাদের দিন এলে শালাকে জবাই করব। আবার সামনাসামনি খুব গুরু গুরু বলে খাতির করত। কিলা যে লোকাল থানায় একটু আধটু সুবিধে পায় তাতেই খুরকির রাগ। খুরকি ক’দিন পাড়ায় আসেনি। ওয়াগন ভাঙ্গার কাজ হলেই ও এরকম হাওয়া হয়ে যায়। সেটা এমন কিছু অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এবার টিকিট ব্ল্যাক করতে গিয়ে কিলা যখন ধরা পড়ল তখন সতীশদা তাকে ছাড়াতে যায়নি। কেন যায়নি? খুরকি কি তার আগেই সতীশদাকে বিগড়ে দিয়েছিল কিলা সম্পর্কে! এছাড়া আর কোন কারণ খুঁজে পেল না অর্ক। আর থানা থেকে বেরিয়ে কিলা পার্টি অফিসে গিয়ে ঝামেলা করে এল সতীশদার সঙ্গে। ততক্ষণে কিলা ভেগে চলে গিয়েছে। এই যে মিটিং হচ্ছে সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে জোট বেঁধে দাঁড়ানোর জন্যে তা কিলাকে কেন্দ্র করে এবং কিলা কংগ্রেসের হয়ে লাড্ডু খাচ্ছে এটা জানতে পেরেই। অর্ক চুপচাপ মাথা নাড়ল। সব শালা স্বার্থের ব্যাপার। কিলা নিশ্চয়ই জানতো খুরকি এই চুকলিবাজিটা করেছে। সেটা জেনেছে বলেই খুরকিকে দেখে অমন মরিয়া হয়ে গিয়েছিল ও। এখন তিন নম্বর ঈশ্বরপুকুর লেনে আর কোন বড় রংবাজ রইল না।
বিলাস সোমের বাড়ির সামনে একটা ঝকমকে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ঘিয়ে রঙের দোতলা বাড়িটার সব ঘরেই সুন্দর পর্দা। বাগানের মুখের গেটের গায়ে কুকুর সম্পর্কিত বিজ্ঞপ্তিটা আজও চোখে পড়ল। তারপর গেট খুলে নুড়ি দিয়ে সাজানো প্যাসেজে পা রাখল। কুকুরটার নাম কি যেন? ম্যাক। ওই রকম বিশাল চেহারার সঙ্গে নামটা যেন খাপ খেয়ে গেছে। ধমকের স্বরে ওকে ডাকলেই চুপ মেরে যায়। আজ গ্রিলের ফাঁকে ম্যাকের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। বোধহয় বাড়িতে লোকজন এসেছে বলে কুকুরটাকে অন্য কোথাও সরিয়ে রাখা হয়েছে। দরজা বন্ধ। অর্ক একটু ইতস্তত করছিল, এইসময় গেট খুলে আর একজন ঢুকল। ঢুকেই প্যাসেজ দিয়ে বাড়ির অন্যপাশের ছোট দরজার দিকে যেতে যেতে তাকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে বলল, ‘কি চাই?’
অর্ক লোকটাকে চিনতে পারল। একহাতে দুটো খাবারের প্যাকেট নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এই বাড়ির চাকর। কি যেন নাম, নলিন? সে হাসল, ‘আমাকে চিনতে পারছেন?’
লোকটা ঘাড় নাড়ল, না । অর্ক একটু ঘনিষ্ঠ হবার ভঙ্গীতে বলল, ‘আপনার নাম নলিন তো? আমাকে মনে পড়ছে না? আমি সেদিন এসেছিলাম।’
লোকটা বিরক্ত-গলায় বলল, ‘আমার নাম নবীন। কাকে চাই?’
‘বিলাসবাবু আছেন?’ অর্ক বিনীত গলায় প্রশ্ন করল।
‘বাবু অসুস্থ। বিছানায় শুয়ে আছে। কি নাম?’
‘আমার নাম অর্ক। আমি আপনার বাবুর অ্যাকসিডেন্টের খবর নিয়ে সেদিন এসেছিলাম। বিলাসবাবুর স্ত্রী আমার সঙ্গে ট্যাক্সিতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন।’ অর্ক বিশদভাবে বোঝাবার চেষ্টা করল।
এবার লোকটার মুখে হাসি ফুটল, ‘অ বুঝতে পেরেছি। মেমসাহেব আজ সকালে আমাকে আপনার কাছে যেতে বলেছিলেন। ভালই হল। কিন্তু এখন যে মেমসাহেবের অনেক বন্ধুবান্ধব এসে গিয়েছে। দাঁড়ান, আমি ভেতরে গিয়ে খবরটা নিই।’ ওপাশের দরজা দিয়ে সুড়ুৎ করে ঢুকে গেল নবীন। অর্ক শুনল ভেতরে বেশ সুন্দর বাজনা শুরু হল। ইংরেজি গানের সুরে, খুব মিষ্টি। মিনিট দুয়েক বাদেই নবীন ফিরে এল, ‘আসুন, এইদিক দিয়ে আসুন।’
পাঁচিলের পাশ দিয়ে যে প্যাসেজটা ভেতরে চলে গেছে যেটা টয়লেটের পাশের ছোট্ট সিঁড়ি ভেঙ্গে ওপরে উঠেছে, নবীন তাকে নিয়ে সেদিক দিয়েই ভেতরে ঢোকাল। দুপাশে কয়েকটা ঘর, সম্ভবত স্টোর কিচেন এইসব। তার পাশ দিয়ে একটা সরু সিঁড়ি দোতলায় চলে গেছে। সেই সিঁড়ির গায়ে কুকুরটাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। বিশাল চেহারাটা পথ জুড়ে রয়েছে। বাড়ির পেছন দিক বলেই বোধহয় এপাশে লোকজন নেই। নবীন বলল, ‘আসুন।’
ম্যাক তখন কান খাড়া করে মুখ তুলেছে। অর্কর মনে হল তার শরীর অসাড় হয়ে আসছে। সেটা বুঝতে পেরে নবীন বলল, ‘কোন ভয় নেই, চলে আসুন, ও কিছু বলবে না। একবার যাকে দেখেছে তাকে কামড়ায় না। এই ম্যাক, ম্যাক তুই চিনতে পারছিস না।’ জিভ দিয়ে একটা স্নেহজ শব্দ বের করে সে চেনটা টেনে ধরতেই অর্ক দ্রুত পাশ কাটিয়ে ওপরে উঠে এল। দোতলায় চলে এসে নবীন বলল, আপনি এই ঘরে বসুন, মেমসাহেব এখনি আসবেন।’
অর্ক বলল, ‘কিন্তু আমার যে বিলাসবাবুর সঙ্গে দরকার।’
‘বাবু ওপাশের ঘরে আছেন। মেমসাহেব এসে নিয়ে যাবেন।’ ঘরটা দেখিয়ে দিয়ে নবীন ছুটল। বাধ্য হয়ে অর্ক সেই ঘরে ঢুকল। এটা নিশ্চয়ই কারোর পড়ার ঘর। কারণ প্রচুর বইপত্র চারপাশে ছড়ানো। অর্ক একটা বই হাতে নিল। ইংরেজি। বেটসি। ওপরে যে মেয়েটির ছবি তার বুকের অনেকটাই দেখা যাচ্ছে। তার গায়ে ইংরেজিতে লেখা সু। অর্ক বইটা রেখে দিল। আচ্ছা, ওরা তাকে পেছনের দরজা দিয়ে ঢোকালো কেন? সামনের দরজা দিয়ে ঢোকানোই তো স্বাভাবিক ছিল। মিসেস সোম কি তার সঙ্গে পরিচয় আছে এটা ওই বন্ধুবান্ধবদের দেখাতে চান না? সম্মানহানি হবে? অর্কর মেজাজ খুব গরম হয়ে গেল। যদিও এই পথটুকু ভাঙ্গতেই তার মাথা ঝিমঝিম করছে, শরীর কাহিল হয়ে পড়েছে তবু মনে হল এখনই তার উঠে যাওয়া উচিত।
এইসময়ে সেই বিদেশী গন্ধটা নাকে এল এবং পরক্ষণেই, দরজায় মিসেস সোম। ‘ও মা, কি সৌভাগ্য। এতদিনে আসার সময় হল!’
অর্ক রাগতে গিয়েও রাগতে পারল না। মিসেস সোমকে এখন খুব সুন্দরী দেখাচ্ছে। হালকা কলাপাতা রঙা জমির ওপর গাঢ় সোনালী চওড়া পাড়ের সিল্ক শাড়ি, যেন শরীর নিকিয়ে জ্যোতি বের করে এনেছে। গায়ের কালো ব্লাউজ এত সংক্ষিপ্ত যে ঘিয়েরঙা চামড়া আর একটা রঙের মাদকতা ছড়াচ্ছে। অর্ক হাসল।
সুরুচি সোম বললেন, ‘কি মুশকিল ভাই, আজ আবার আমার কিছু বন্ধু এসে হাজির। নিচে যা হল্লা হচ্ছে না, তোমার সঙ্গে জমিয়ে গল্প করব তার উপায় নেই। কিন্তু তোমাকে এত রোগা দেখাচ্ছে কেন?’
‘অসুখ হয়েছিল।’ অর্কর নিঃশ্বাস সুগন্ধে ভারী হয়ে এল।
‘ইস! আমি তো ভেবে ভেবে সারা, ছেলের আবার কি হল?’ কাছে দাঁড়িয়ে অর্কর চুলে হাত বুলিয়ে দিলেন সুরুচি সোম পরম স্নেহভরে। খুব অস্বস্তি হচ্ছিল তার। চটপট বলল সে, ‘উনি কেমন আছেন?’
‘কে, বিলাস? ফাইন। খুব চটপট রিকভারী করছে। ডাক্তার বলেছে একমাস বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে, ড্রিঙ্ক করা চলবে না। খুব জব্দ হয়েছে। তুমি ওর সঙ্গে দেখা করবে?’
‘হ্যাঁ।’
‘কিন্তু—। আর একদিন এসো। এই ধরো সকাল সকাল—।’ মিসেস সোমের কথা শেষ হওয়া মাত্র দরজায় আর একজন এসে দাঁড়ালেন। অর্ক দেখল ভদ্রমহিলা মধ্যবয়সিনী, বেশ মোটাসোটা কিন্তু পোশাকে খুব আধুনিকা। মুখে যথেষ্ট প্রলেপ থাকা সত্ত্বেও একটা রুক্ষতা ছড়িয়ে আছে।
‘কি ব্যাপার? মিসেস সোম একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন যেন এঁকে দেখে।
‘হঠাৎ কোথায় পালালে তাই দেখতে এলাম। এ কে?’ চোখের ইশারায় অর্ককে দেখিয়ে দিলেন মহিলা।
‘ও হল, ও হল—।’, সুরুচি সোম ভেবে পাচ্ছিলেন না কি বলবেন।
‘মেয়ের বন্ধু?’ অর্কর দিকে তাকালেন ভদ্রমহিলা।
‘না, না, সুয়ের সঙ্গে ওর আলাপ নেই। আসলে ও আমাদের খুব পরিচিত।
‘আই সি। খুব হ্যাণ্ডসাম। তোমার আত্মীয় নয়?’
‘না, না।’
‘তা নিজের কাছে লুকিয়ে রেখেছ কেন, আমাদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দাও। আমরা এমন কিছু বুড়ো হয়ে যায়নি যে ইয়ংদের সঙ্গে মিশতে পারব না।’ চোখ ঘুরিয়ে দুই কাঁধ নাচালেন মহিলা।
বিব্রত হয়ে পড়েছেন মিসেস সোম। তারপর অর্ককে দেখিয়ে বললেন, ‘এ আর ইয়ং হল কোথায়, এখনও বাচ্চা ছেলে বলা যায়।’
‘বাচ্চা ছেলে? তাহলে আমার চোখে ছানি পড়েছে ভাই। দেখি নাক টিপলে দুধ বের হয় কিনা!’ ভদ্রমহিলা একপাও এগোলেন না কিন্তু বলার ভঙ্গীটা এমন মজার যে হেসে ফেলল অর্ক। মিসেস সোম কিন্তু হাসলেন না। তবে এবার পরিচয় করিয়ে দিলেন, ‘শানুদি, এ হল অর্ক। বিলাসের সঙ্গে পরিচয় আছে। অ্যাকসিডেন্টের সময় ওর গাড়িতে ছিল। খুব ভাগ্য যে বেঁচে গেছে। আর অর্ক না থাকলে বিলাসের খবর জানতে পারতাম কখন তা কে জানে।’
‘আচ্ছা! খুব ইন্টারেস্টিং। তুমি বিলাসের সঙ্গে গাড়িতে ছিলে?’
অর্ক মুখে কিছু না বলে মাথা নাড়ল। মিসেস সোম বললেন, ‘অর্ক, ইনি হলেন শানুদি। আমাদের খুব বন্ধু। ল্যান্সডাউনে থাকেন।’ পরিচিতি দেবার পর শানুদি মুখটা সামান্য নামিয়ে ওর দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে থাকলেন। ওই রুক্ষ মুখেও কিছুটা পেলব ব্যাপার যেন আনতে চাইছেন মহিলা। অর্কর খেয়াল হল। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করার কোন প্রশ্নই ওঠে না, সে উঠে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করল। শানুদি সেটা গ্রহণ করেছেন এমনভাবে মাথা নেড়ে বললেন, ‘বাঃ, চমৎকার ফিগার! আমার চেয়েও লম্বা? তোমাকে ভাই তুমি বলছি। কোথায় থাকো?’
‘বেলগাছিয়ায়।’
‘অ। কি কর? পড়ছ?’
‘হ্যাঁ।’
‘নাচতে পারো?’
‘নাচ? না, না।’
‘আই সি, গান গাইতে পারো?’
‘না।’
‘তাহলে কি পার?’
এইসময় মিসেস সোম হেসে ফেললেন, ‘শানুদি, ও কিন্তু চেপে যাচ্ছে। আমার বিশ্বাস ও খুব ভাল নাচতে পারে। তবে সেটা পাবলিক ড্যান্স। আর ওর একটা ল্যাঙ্গুয়েজ জানা আছে যার অনেক শব্দের মানে আমি নিজেই জানি না। শুনলে রাগ হয় আবার মজাও লাগে।’
‘ওমা, তাই?’ গালে হাত রাখলেন শানুদি! তাহলে তো তোমাকে ছাড়ছি না। সুরুচি, ওকে নিচে নিয়ে চল, বেশ জমবে।’
মিসেস সোম যেন বাধ্য হয়ে রাজি হলেন। বললেন, ‘চল অর্ক নিচে আমাদের আরও দুজন বন্ধু আছেন, আলাপ করবে চল।’
এইসময় নবীন এসে দাঁড়াল, ‘মেমসাহেবরা আপনাদের ডাকছেন।’
শানুদি ব্যস্ত হয়ে বললেন, ‘সুরুচি, আমি এগোচ্ছি, তুমি ওকে নিয়ে এস। খুব অবাক হয়ে যাবে সকলে।’ ব্যস্ত হয়ে শানুদি চলে গেলেন।
মিসেস সোম নবীনকে বললেন, ‘প্রত্যেককে খাবার দিয়েছ?’
‘হ্যাঁ, মেমসাহেব।’
‘ঠিক আছে, তুমি যাও।’ নবীন চলে গেলে মিসেস সোম বললন, ‘চল, নিচে যাই। এরা খুব বড়লোক, প্রচুর জানাশোনা। তবে তুমি বেশী মিশো না এদের সঙ্গে। ওই যে শানুদিকে দেখলে, অল্প বয়সী ছেলে দেখলে মুণ্ডু না চিবিয়ে ফেলা পর্যন্ত ওঁর শান্তি নেই। তোমাকে আমার কাছে দেখেছে, এখন না নিয়ে গেলে সবাইকে বলে বেড়াবেন আমিও—। চল।’
বারান্দা দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ অর্ক দাঁড়িয়ে পড়ল, ‘উনি কোন ঘরে আছেন? আমি একটু দেখা করেই চলে যাব।’
স্পষ্ট বিরক্তি বোঝালেন মিসেস সোম। তারপর সামনের পর্দাঝোলা ঘরটাকে দেখিয়ে বললেন, ‘ওই ঘরে। দেখা করেই সোজা নিচে চলে আসবে। আর যদি দ্যাখো ঘুমিয়ে আছে তাহলে একদম কথা বলবে না।’
অর্ক ঘাড় নাড়তেই মিসেস সোম নিচে নেমে গেলেন। পা সরিয়ে মুখ বাড়াতেই নীলচে আলোর ঘরটাকে দেখতে পেল। ওপাশের জানলার গায়ে যে খাট সেখানে বিলাস সোম শুয়ে আছেন। এর মধ্যে মশারি টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর মাথার পাশে একটা ইজিচেয়ারে বসে একজন নার্স বই পড়ছেন। অর্ককে দেখে নার্স মুখ তুলতেই অর্ক জিজ্ঞাসা করল, ‘উনি কি ঘুমাচ্ছেন?’
নার্স কিছু বলার আগেই বিলাস বললেন, ‘না। কে?’
অর্ক ধীরে ধীরে বিছানার পাশে এসে দাঁড়াল। হালকা নীল নাইলনের মশারি যত স্বচ্ছই হোক কেমন একটা অস্বস্তির আড়াল থাকে। ভেতরের মানুষ যে সুবিধে পায় বাইরে যে দাঁড়ায় সে তা পায় না। তবু অর্ক বিলাস সোমের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আমি অর্ক। আপনার অ্যাকসিডেন্টের সময় ছিলাম।’
‘ও! তুমি! তোমার তো অনেক আগে আসার কথা ছিল।’ বিলাস কথা বলতে বলতে নার্সের দিকে তাকালেন, ‘আপনি একটু বাইরে ঘুরে আসুন। ওর সঙ্গে আমার কিছু কথাবার্তা আছে।’
নার্স বললেন, ‘আপনার বেশী কথা বলা নিষেধ আছে।’ তারপর ধীরে ধীরে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। তার চলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে হাত বাড়ালেন বিলাস সোম, ‘কই, দাও।’
বিছানার সঙ্গে প্রায় মিশে গেছেন ভদ্রলোক। মুখ চুপসে রয়েছে। মাথায় এখনও ব্যাণ্ডেজ এবং চুলগুলো ঘেঁটে দেওয়া হয়েছে। অর্ক বলল, ‘আপনি কবে সুস্থ হয়ে উঠবেন?’
‘আরও দিন পনের। আমার যদ্দূর মনে পড়ছে তুমি আমাকে সেদিন বলেছিলে যে হারখানা তুমি পেয়েছ? বলনি?’ বিলাস সোম জিজ্ঞাসা করলেন।
অস্বীকার করার কোন কারণ নেই। অর্ক বলল, ‘হ্যাঁ।’
এবার মুখে হাসি ফুটল বিলাস সোমের। আমি কদিন থেকে ভাবছিলাম সেদিন কি আমি ভুল বুঝেছি! তুমি যদি অস্বীকার কর তাহলে আমার কিছুই করার থাকবে না। তুমি তিন নম্বর ঈশ্বর পুকুর লেনের বস্তিতে থাকো?’
‘হ্যাঁ।’
‘তোমাকে দেখে তো ভদ্রলোকের ছেলে বলে মনে হয়—।’
‘বস্তিতে যারা থাকে তারা ভদ্রলোক নয় একথা আপনাকে কে বলল?’
‘অবস্থা খারাপ হলে কেউ ওখানে থাকতে পারে। আমি তোমাকে আঘাত করতে চাইনি। যাক, হারখানা এনেছ?’
‘না।’
‘সেকি! আন নি কেন?’
‘ওটা যার হার তিনি নিয়ে নিয়েছেন।’
‘কে নিয়েছে? কার হার ওটা? তুমি সুরুচিকে দিয়েছ?’ প্রশ্নগুলো করার সময় উত্তেজিত হয়ে পড়লেন বিলাস সোম।
‘না।’ অর্ক তাড়াতাড়ি বলল, ‘এই নিন চিঠি।’ তৃষ্ণা পালের লেখা সেই চিঠিটা বের করে মশারি ফাঁক করে বিলাস সোমের হাতে দিল সে।
খুব অবাক হয়ে গেলেন বিলাস। তারপর ভাঁজ খুলে বললেন, ‘এ কার চিঠি? তুমি ওই আলোটা জ্বেলে দাও।’
অর্ক খাটের পাশে ঝোলা সুইচটা টিপতেই বেডল্যাম্প জ্বলে উঠল। এবার চিঠিটা পড়লেন বিলাস। অর্ক দেখল পড়া শেষ করে বিলাস সোম ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে শুয়ে রইলেন। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি ওকে চিনলে কি করে? হারখানাই বা ও পেল কোথায়?’
অর্ক খানিক ইতস্তত করল। তারপর মনে হল এই অসুস্থ মানুষটাকে সব কথা খুলে বলে দেওয়াই ভাল। সে ধীরে ধীরে সমস্ত ঘটনাটা বলল।
বিলাস সোমের মুখে এখন বিস্ময়। তারপর নিচু গলায় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কি আমার কাছে কিছু চাও? সঙ্কোচ করো না।’
‘না, না।’ অর্ক প্রতিবাদের ভঙ্গিতে বলল।
‘অদ্ভুত। যার হার তার কাছেই যখন সেটা পৌঁছে গিয়েছে তখন—! কিন্তু এসব কথা কাকে কাকে বলেছ তুমি?’
‘আমি কাউকেই বলিনি।’
‘গুড’ বিলাস সোমের মুখে হাসি ফুটল, ‘এই ঘরে তোমায় কে নিয়ে এল?’
‘আপনার স্ত্রী।’
‘সুরুচি তোমাকে নিয়ে এল? স্ট্রেঞ্জ! ওর তো নিচে গেস্ট এসেছে!’
‘হ্যাঁ। শানুদি আমাকে নিচে যেতে বলেছেন।’
‘শানুদি! তার সঙ্গেও আলাপ হয়েছে। বয়-ইটার। খুব সাবধানে ওর সঙ্গে মিশবে। মেশার দরকারই বা কি! এ বাড়ির একটা পিছন-দরজা আছে, সেইটে দিয়ে তুমি চলে যাও। আমি তোমার সঙ্গে পরে যোগাযোগ করব।’ বিলাস সোম চিঠিটাকে ভাঁজ করে নিলেন।
‘আমি চলে গেলে উনি রেগে যাবেন না?’ অর্ক ইতস্তত করল।
‘সেটাও একটা কথা বটে। ঠিক আছে, তুমি নিচে যাও। আর হ্যাঁ, তুমি তো আমার জন্যে অনেক করলে, এ খবরটাও যেন সুরুচি জানতে না পারে। আর, তুমি কি ওর কাছে যাবে?’ বিলাসের গলায় সঙ্কোচ।
‘না।’
‘ও। তবে তোমাদের বস্তিতে যে মেয়েটি থাকে তাকে দিয়ে তৃষ্ণাকে একটা খবর পাঠিয়ে দিও। আমি একটু সুস্থ হলেই ওর সঙ্গে দেখা করব। এরা আমার ঘরে টেলিফোনটাকেও রাখেনি। আমি তোমার ঋণ শোধ করব, বুঝলে!’ বিলাস সোম হাত বাড়াচ্ছিলেন ওর দিকে এমন সময় নার্সের সঙ্গে নবীন ঘরে ঢুকল, ‘বাবু, মেমসাহেব ওঁকে নিচে যেতে বলেছেন।’
বিলাস ঘাড় নেড়ে চোখ বন্ধ করলেন। অর্ক লক্ষ্য করল নবীন একে বাবু বলছে কিন্তু মিসেস সোমকে মেমসাহেব। কেন? এই পার্থক্য কেন?
অর্ক নবীনের পেছন পেছন বাইরে বেরিয়ে আসতেই নার্স তার জায়গায় ফিরে গেল। অর্ক নবীনকে বলল, তোমার বাবু তো এখন ভাল হয়ে গেছে।’
নবীন মাথা নাড়ল, ‘কোথায় আর ভাল। পিঠের হাড় ভেঙ্গে গিয়েছিল যে। অপারেশন হয়েছে তবে কোনদিন খাড়া হয়ে দাঁড়াতে পারবেন না বলে শুনেছি।’
অর্ক স্তম্ভিত হয়ে গেল। বিলাস সোম কি এ খবর জানেন না? নিশ্চয়ই অজানা থাকার কথা নয়। কিন্তু উনি এমনভাবে কথা বললেন যেন পনের দিন বাদেই বাইরে বের হচ্ছেন! অর্ক এর কোন মানে বুঝতে পারছিল না।
সিঁড়ি অবধি পৌঁছে দিয়ে নবীন ফিরে গেল। এই সিঁড়িটা বেশ চওড়া। বাঁক ঘোরার আগেই কানে বাজনার শব্দ আসছিল। খুব দ্রুত তালে বাজনা বাজছে। যে বাড়ির কর্তা অমন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে সে বাড়িতে এত বাজনা কি করে বাজছে! অর্কর মাথায় কিছুই ঢুকছিল না।
বাঁক ঘুরতেই ঘরটাকে দেখতে পেল। আর মানুষগুলোকে। বাজনার তালে তালে তিনজন বয়স্কা মহিলা নাচার চেষ্টা করছেন মুখে শব্দ করে। ওকে দেখা মাত্র শানুদি চিৎকার করে সঙ্গীদের থামতে বললেন, ‘স্টপ, স্টপ। গেজ, হু ইজ কামিং!’