১৯৪৭। বয়স ৪৮ বছর
জুনে ব্রজমোহন কলেজের চাকরিতে ইস্তফা দিলেন জীবনানন্দ। কলকাতায় চলে যাওয়ার পর পূর্ববঙ্গে আর ফিরে আসেননি তিনি।
১৯৪৭-এর ২৬ জানুয়ারি হুমায়ুন কবির (১৯০৬–১৯৬৭) এবং আরো কয়েকজনের প্রচেষ্টায় কলকাতার ক্রিক রো থেকে ‘স্বরাজ’ নামক একটি দৈনিক পত্রিকা বের হয়। এর সম্পাদক হলেন সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার (১৮৯১–১৯৫৪)। জীবনানন্দ দাশ এই পত্রিকায় রবিবাসরীয় বিভাগের সম্পাদনার কাজে নিযুক্ত হন। এই পত্রিকায় যোগদানের ব্যাপারে সাহায্য করেন সঞ্জয় ভট্টাচার্য ও সত্যপ্রসন্ন দত্ত। এখানে তাঁর কর্মকাল ছিল সাত মাস। যোগদানের অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই এই কাজের প্রতি বীতস্পৃহ হয়ে পড়েন তিনি। সংবাদপত্রে কাজ করার জন্যে যে মানসিক গঠন দরকার জীবনানন্দের তা ছিল না। এই পত্রিকায় কাজ করতেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (জন্ম. ১৯২৪)। তাঁর সঙ্গে কিছুটা ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন জীবনানন্দ। এই পত্রিকায় কাজ করতে করতে কবি অরুণ মিত্রের (জন্ম ১৯০৯) সঙ্গেও তাঁর পরিচয় হয়।
‘স্বরাজ’ পত্রিকায় জীবনানন্দের যোগদানের একটা ইতিহাস আছে। তিনি বরিশালের অধ্যাপকের চাকরিতে ক্রমান্বয়ে বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছিলেন। সেই বীতশ্রদ্ধার কথা তিনি চিঠিপত্রে ভ্রাতৃবধূ নলিনী দাশ, তরুণ বন্ধু প্রভাকর সেন, তরুণ সাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এবং অবশ্যই ‘পূর্ব্বাশা’র সম্পাদক সঞ্জয় ভট্টাচার্যকে ঘুরেফিরে জানাতেন। তাছাড়া, কলকাতার ‘বৃহত্তর পটভূমি’র নিমন্ত্রণও ছিল। তিনি তো সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহকে একটা ভদ্রমতো সাংবাদিকতার কাজ জোগাড় করে দেবার জন্যে সরাসরি নিবেদন করেছেন, ১৯৪৬ সালে। পরবর্তীকালে ‘স্বরাজ’ পত্রিকাতে রবিবাসরীয় সম্পাদকীয় বিভাগের কাজটি জীবনানন্দের জন্যে নির্ধারিত হয়। যতদিন ‘স্বরাজ’ থাকবে, ততদিন আপনার চাকরি থাকবে এই রকম প্রতিশ্রুতি সঞ্জয়-সত্যপ্রসন্ন-হুমায়ুন কবিরের কাছ থেকে পেয়ে জীবনানন্দ দেশভাগের আগেই ব্রজমোহন কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে ১৯৪৭-এর শুরুতেই ছোটভাই অশোকানন্দের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন এবং ‘স্বরাজ’-এ যোগদান করেন। ‘স্বরাজ’ সংবাদপত্রের অফিস ছিল ১০ ক্রিক রো-তে।
পরে ‘স্বরাজ’ পত্রিকার আর্থিক সংকট দেখা দিলে জীবনানন্দ কাজ ছেড়ে দেন। এখানে তিনি সাত মাস চাকরি করেন। তাঁর কর্মকাল সুখের ছিল না। বস্তুত, জীবনানন্দ এই পত্রিকা থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বরখাস্ত হন। সমস্যাটা জটিল হয়ে ওঠে নজরুল ইসলামকে নিয়ে লেখা জীবনানন্দের একটি প্রবন্ধকে ঘিরে। ‘নজরুল ইসলাম’ নামের ১৮টি পূর্ণবাক্যের এই লেখাটিতে জীবনানন্দ লেখেন-
‘ক্রমে ক্রমে বুঝতে হল যে, নজরুল ইসলামের লেখায় মহাকবিতার গভীর প্রসাদ নেই, তার প্রতিশ্রুতিও কম। — কাজীর কবিতা বিশেষ একটা মাত্রার দেশে তার অতীতের ভিতরে পরিসমাপ্ত। আজও তা পড়বার জিনিস হয়তো—আবৃত্তির জিনিস; পড়া শেষ করে সময় কেটে গেলে মানস-কর্ণ তৃপ্ত হতে চায় না—মন বিষয়ান্তর খোঁজে দিকনির্ণয়ী মহৎ কবিদের।’
জীবনানন্দকে ‘স্বরাজ’ থেকে বরখাস্ত করেন মূল সম্পাদক সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার। নজরুল ইসলামের কাব্যসিদ্ধি বিষয়ে জীবনানন্দের মূল্যায়ন সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদারের পছন্দ হয়নি। বরখাস্ত করার আগে তাঁর উদ্দেশে সত্যেন্দ্রনাথ বলেছিলেন—
‘Journalism’ তো জানেন না আপনি, Journalism-এর কী জানেন? কিছু জানেন না, শোনেন না আমার কথার ওপর কথা বলবেন না – এটা সাহিত্য না, এটা প্রফেসরি না। সাহিত্যিকরা Prostitute’. [জীবনানন্দের দিনলিপি : নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি ১৯৪৬-৪৭]।
বরখাস্ত হওয়ার পর জীবনানন্দ একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশের চেষ্টা করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। বছর দু’য়েকের জন্যে আবার কর্মহীন হয়ে পড়েন জীবনানন্দ।
১৯৪৭-এর (২৪ শ্রাবণ ১৩৫৪) ‘স্বরাজ সাময়িকী’তে জীবনানন্দ ‘রবীন্দ্রনাথ’ নামে একটি প্রবন্ধ লেখেন। এতে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে জীবনানন্দের মূল্যায়ন এ রকম—
‘রবীন্দ্র-প্রতিভার ভিতরে নিঃসংশয়ে দুইটি বিশিষ্ট দিক রয়ে গেছে। এই দুইটি ধারার অপূর্ব্ব সমন্বয়ই তাঁকে মানবসাহিত্যের ইতিহাসে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ কবিদের সঙ্গে এক পঙ্ক্তিতে আসন দিয়েছে। যদি তাঁর সাহিত্যে লিরিক-প্রতিভার শ্রেষ্ঠ বিকাশ দেখা যেত তাহলে চণ্ডীদাস বা বিদ্যাপতির চেয়ে তাঁকে কোনো শ্রেষ্ঠতর অভিধা দিতে শেষ পর্যন্ত গীতিকবিতার রাজ্যে তাঁর অশেষ বৈচিত্র্য সত্ত্বেও আমরা দ্বিধাবোধ করতাম। কিন্তু রবীন্দ্র-প্রতিভা শুধু স্বভাবজাত কল্পনামনীষায় গরীয়ান নয়, তাঁর প্রতিভার ভিতর এমন অলৌকিক ধীশক্তি ও তার নিপুণ প্রয়োগ-বৈচিত্র্যের বিশিষ্টতা রয়েছে যে, এই দুইটি ধারার নিবিড় সামঞ্জস্য তাঁকে একজন অসাধারণ গীতিকবির শ্রেণী থেকে অলোকসামান্য বিশ্বকবির পর্যায়ে উন্নীত করেছে।’ [‘বিভাব’, জীবনানন্দ দাশ জন্মশতবর্ষ স্মরণ সংখ্যা, ১৯৯৮, পৃ. ১২১]
প্রধানত জীবনানন্দ দাশের প্রণোদনায় ১৯৪৭ সালে ‘স্বরাজ’ পত্রিকার পুজোসংখ্যা প্রকাশিত হয়। এই সংখ্যার জন্যে পাঠানো ছাত্র নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি গল্প ফেরত দেন জীবনানন্দ। নারায়ণকে ডেকে এই গল্পকে উপন্যাসে রূপান্তরিত করতে বলেন তিনি। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় শিক্ষকের আদেশ মান্য করে এই গল্পকে উপন্যাসে রূপান্তর করেন এবং ‘বৈতালিক’ নাম দিয়ে ‘স্বরাজে’ জমা দেন। ওই নামে উপন্যাসটি পুজোসংখ্যা ১৯৪৭-এ বের হয়। ‘স্বরাজ’-এর পুজোসংখ্যার জন্যে জীবনানন্দ যৌবনের বন্ধু অচিন্ত্যকুমারের কাছে ‘একটি শ্রেষ্ঠ গল্প’ পাঠানোর অনুরোধ করেছিলেন। লিখেছিলেন—
‘সর্ব্বোচ্চ দক্ষিণা পঞ্চাশ টাকার কম হবে না। তোমাকে সর্ব্বোচ্চ দক্ষিণাই দেওয়া হবে।’ [৩০.৭.৪৭ তারিখে অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তকে লেখা পত্র। অচিন্ত্যকুমার তখন মুর্শিদাবাদের কান্দিতে মুন্সেফ]।
এ সময় জীবনানন্দ বাসস্থানের ঝঞ্ঝাটে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। কন্যা মঞ্জু তখন ছুটু মাসি নন্দিনী ঘোষের কাছে বেড়াতে গেছে। ওই ৩০.৭.৪৭ তারিখে জীবনানন্দ মঞ্জুকে লিখলেন—
‘কাকামণিরা ৩রা আগস্ট এ বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে। আমরা আগস্ট মাসটা এ বাড়িতেই থাকবো। সম্প্রতি অন্য কোথাও বাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। তুমি আগস্ট মাসের শেষের দিকে কলকাতায় ফিরতে পার।’ [স্মৃতিচারণ, সলিলকুমার গঙ্গোপাধ্যায়, দৈনিক কবিতা, শুক্রবার, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৩৭৩, পৃষ্ঠা ৩]।
জীবনানন্দ তখন থাকতেন ১৮৩ ল্যান্স ডাউন রোডের ভাড়াবাড়িতে।
দেশ বিভাগের কিছু আগে সপরিবারে জীবনানন্দ কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন। জীবনানন্দের আত্মীয়-পরিজনরাও একে একে দেশভাগের আগে-পরে চলে গেছেন কলকাতায়। অনেকেই তখন নিকটে-দূরে থাকেন। পণ্ডিতিয়া রোডে থাকেন দুই কাকা — ব্রহ্মানন্দ ও জ্ঞানানন্দ আর পিসিমা স্নেহলতা। কিড স্ট্রিট-এ খুড়তুতো ভাই—প্রেমানন্দের পুত্র অমলানন্দ, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে যোগানন্দ কাকার মেয়ে বেলা সেন। অতুলানন্দের পুত্র অরুণানন্দ থাকেন সার্কুলার রোডে।
সুকান্ত ভট্টাচার্য পরলোক গমন করেন। ১৩ মে ১৯৪৭ (২৯ বৈশাখ, ১৩৫৪) মঙ্গলবার সুকান্তের জীবনাবসান হয়। সুকান্ত যখন মারা যান তখন তাঁর বয়স ঠিক ২০ বছর ৯ মাস। মৃত্যুর আগে তাঁর একটি বইও প্রকাশিত হয়নি। দি বুকম্যান কোম্পানির প্রকাশনায় ‘ছাড়পত্র’ কাব্যটির কয়েকটি ছাপা পাতা মাত্র দেখে গিয়েছিলেন বন্ধু অরুণাচল বসুর চেষ্টায়। পরবর্তীকালে প্রকাশিত সুকান্তের গ্রন্থগুলো হল—’ছাড়পত্র’ (প্রথম প্রকাশ: আষাঢ় ১৩৫৪, উৎসর্গ: শ্রদ্ধেয় মুজফ্ফর আহমদকে, ভূমিকা: সুভাষ মুখোপাধ্যায়, প্রচ্ছদ: সত্যজিৎ রায়), ‘ঘুম নেই’ (প্রথম প্রকাশ: জ্যৈষ্ঠ ১৩৫৭, ভূমিকা: সুভাষ মুখোপাধ্যায়, প্রচ্ছদ: দেবব্রত মুখোপাধ্যায়), ‘পূর্বাভাস’ (প্রথম প্রকাশ: জ্যৈষ্ঠ ১৩৫৭, ভূমিকা: বিমলচন্দ্র ঘোষ, প্রচ্ছদ : দেব্রত মুখোপাধ্যায়), ‘মিঠে কড়া’ (প্রথম প্রকাশ: শ্রাবণ ১৩৫৭, ভূমিকা: সুভাষ মুখোপাধ্যায়, প্রচ্ছদ ও গ্রন্থমধ্যস্থ ২০টি রেখাচিত্র: দেবব্ৰত মুখোপাধ্যায়), ‘অভিযান’ (প্রথম প্রকাশ: জ্যৈষ্ঠ ১৩৬০, ভূমিকা: সুভাষ মুখোপাধ্যায়, প্রচ্ছদ ও অন্যান্য চিত্র: দেবব্রত মুখোপাধ্যায়), ‘হরতাল’ (প্রথম প্রকাশ: ভাদ্র ১৩৬৯, ভূমিকা: যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, প্রচ্ছদ ও অন্যান্য চিত্র: দেবব্রত মুখোপাধ্যায়), ‘গীতিগুচ্ছ’ (প্রথম প্রকাশ শ্রাবণ ১৩৭২, ভূমিকা: সুভাষ মুখোপাধ্যায়, প্রচ্ছদ: দেবব্রত মুখোপাধ্যায়)।
১৯২৬-এর ১৫ আগস্ট (৩০ শ্রাবণ ১৩৩৩) রবিবার দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাটে মাতামহ সতীশচন্দ্র ভট্টাচার্যের ৪২, মহিম হালদার স্ট্রিটের বাড়ির দোতলার একটি ছোট্ট ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। পিতা নিবারণচন্দ্র ভট্টাচার্যের দ্বিতীয় স্ত্রী সুনীতিদেবীর দ্বিতীয় পুত্র সুকান্ত। নিবারণচন্দ্রের আদিবাড়ি ছিল ফরিদপুর জেলার কোটালীপাড়া গ্রামে। সুকান্তের পূর্বপুরুষরা বংশপরম্পরায় সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত ছিলেন। শোনা যায় তখনকার জনপ্রিয় লেখক মনীন্দ্রলাল বসুর ‘রমলা’ উপন্যাসের নায়ক সুকান্তের নামানুসারে জ্যাঠতুতো বোন রানীদি সুকান্ত ভট্টাচার্যের নামকরণ করেন।
বিজনকুমার গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘শিখা’ পত্রিকায় সুকান্তের প্রথম মুদ্রিত লেখা প্রকাশিত হয়। এটি গদ্য রচনা-বিবেকানন্দের জীবনী। ১৯৪১ – ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সুকান্ত মার্কসবাদী চিন্তাধারার সংস্পর্শে আসেন। ১৯৪৪ সালে ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হন। জ্বর সারলেও শরীর ভাঙা অব্যাহত থাকে। শরীরের যত্ন নেননি তিনি কখনো। ১৯৪৬-এ গভীরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন সুকান্ত। ক্ষয়রোগ ধরা পড়ে।
মে মাসে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের অকালমৃত্যুতে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকায় লেখেন—
‘কবিও পেয়ে গেছে নতুন যুগ।’
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মি. এটলী পার্লামেন্টের কমন্স সভায় ভারতবাসীর হস্তে শাসন ক্ষমতা হস্তান্তরের সংকল্প ঘোষণা করেন।
ভারতে প্রচলিত পাঁচশ, এক হাজার ও দশ হাজার টাকার নোট বাতিল বলে ঘোষিত হল। লর্ড ওয়াভেল পদত্যাগ করলে ভাইসরয় হলেন লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন।
ভারত ও পাকিস্তানের ভিত্তিতে স্বাধীনতা দানের ঘোষণা। ১৪ ও ১৫ আগস্ট পাকিস্তান ও ভারত—দুটি রাষ্ট্রের জন্ম; কায়েদে আজম মুহম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের এবং লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন হিন্দুস্থানের গভর্নর জেনারেল পদে নিযুক্ত হন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলেন নওয়াবজাদা লিয়াকত আলী খান এবং ভারতের পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু। স্যার সিরিল র্যাড ক্লিফের সভাপতিত্বে বাঁটোয়ারা কমিশন দ্বারা পাঞ্জাব ও বঙ্গদেশ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হন স্যার ফ্রেডারিক বোর্ন এবং মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন।
ঢাকায় তমদ্দুন মজলিশ গঠিত হয়। ট্রানজিস্টার আবিষ্কৃত হয়।
এ বছর জন্মালেন সুব্রত রুদ্র, প্রদীপচন্দ্র বসু, অমিতাভ গুপ্ত, কৃষ্ণা বসু, আবুল হাসান, ফরহাদ মযহার, সেলিনা হোসেন, হুমায়ুন আজাদ।
মারা যান নলিনীকান্ত ভট্টশালী ।
এ বছর সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পান আঁদ্রে জিদ্ (১৮৬৯–১৯৫১)। কথাসাহিত্যিক। ফ্রান্সের অধিবাসী।
প্রাইজ দেওয়ার কারণ হিসেবে নোবেল কমিটি লেখেন—
‘For his comprehensive and artistically significant writing in which human problems and conditions have been presented with a fearless love of truth and keen psychological insight.’
জিদের বিখ্যাত গ্রন্থগুলো হল— ‘The Treatise of the Narcissus’, ‘The Attempt of Love’, ‘Saul’, ‘The Immoralist’, ‘Pastoral Symphony’, ‘The Counterfeiters’.
প্রকাশিত গ্রন্থ : প্রকাশ পায় অজিত দত্তের ‘পুনর্নবা’, বিষ্ণু দে’র ‘সন্দ্বীপের চর’ [কবিতার সংখ্যা: ৩৫, রচনাকাল: ১৯৪৪––১৯৪৭, উৎসর্গ: শ্রীযুক্ত তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে, প্রকাশক: চিন্মোহন সেহানবীশ, কলকাতা], জসীম উদ্দীনের ‘রঙিলা নায়ের মাঝি’, আহসান হাবীবের ‘রাত্রিশেষ’, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘চিহ্ন’, ‘আদায়ের ইতিহাস, গল্পগ্রন্থ ‘খতিয়ান’, নীহাররঞ্জন রায়ের ‘বাংলার নদনদী’, মোহিতলাল মজুমদারের ‘কবি শ্রীমধুসূদন’, তুলসী লাহিড়ীর ‘দুঃখীর ইমান’। ‘অরণি’ পত্রিকায় ফরাসি কমিউনিস্ট পার্টির তাত্ত্বিক নেতা, শিল্প সমালোচক ও লেখক রজের গারোদি রচিত নিবন্ধ ‘Artist without Trousers’-এর বিষ্ণু দে কৃত ‘উর্দিহীন শিল্পী’ শীর্ষক অনুবাদ প্রকাশিত হয়। এই প্রবন্ধ প্রকাশের ফলে সাম্যবাদীদের মধ্যে প্রচণ্ড বিতর্কের সূত্রপাত হয়।