১৯৩৩। বয়স ৩৪ বছর
এ বছর জীবনানন্দ দাশ ছোটগল্প লিখেন ২৩টি। উপন্যাস লিখেন ৩টি— ‘কারুবাসনা’, ‘জীবন প্রণালী’ ও ‘বিভা’। উপন্যাসত্রয় তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়।
লাবণ্য দাশ আইএ পাস করলেন এ বছর।
‘কালি কলম’ পত্রিকার সিম্পাদক : মুরলীধর বসু (১৮৯৭–১৯৬০), প্রেমেন্দ্র মিত্র (১৯০৪–১৯৮৮) ও শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় (১৯০১ – ১৯৭৬)] দ্বিতীয় সংখ্যায় (জ্যৈষ্ঠ ১৯৩৩) জীবনানন্দ দাশের ‘পতিতা’ নামের কবিতাটি প্রকাশিত হয়।
রবীন্দ্রনাথের বয়স ৭২। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কমলা বক্তৃতামালা’ প্রদান করলেন রবীন্দ্রনাথ, শিরোনাম—মানুষের ধর্ম’।
পণ্ডিত বিজয়প্রসাদ সিংহ শান্তিনিকেতন পরিদর্শনে গেলেন, উদ্বোধন করলেন—জলের কল। শান্তিনিকেতনে কোনো মন্ত্রীর এটাই প্রথমবারের মতো আগমন। অধ্যাপক বিজন ভট্টাচার্যকে নিয়ে বাংলা পরিভাষা প্রণয়নে রত হলেন রবীন্দ্রনাথ। রামতনু লাহিড়ী অধ্যাপক’ হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছন্দ সম্পর্কে বক্তৃতা দিলেন কবি। উদয়শঙ্কর শান্তিনিকেতনে এসে নাচ দেখিয়ে গেলেন।
বাংলায় গান্ধীবিরোধী মনোভাব প্রকট হতে থাকে। সূর্যসেন এবং আরও কয়েকজন বিপ্লবী পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। সূর্য সেনের মৃত্যুর আগেই বিশ্বাসঘাতক-বিপ্লবী ক্ষেত্র সেন ও গ্রেপ্তারকারী পুলিশ অফিসার মাখনলালকে হত্যা করেন বিপ্লবীরা। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার মি. কুই বিপ্লবীদের হাতে নিহত হয়। খেলার মাঠে মেদিনীপুরের ম্যাজিস্ট্রেট বার্ড নিহত হল। জাতীয় কংগ্রেস বেআইনি ঘোষিত হল।
জ্যোতির্ময় গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতা কর্পোরেশনের প্রথম মহিলা অল্ডারম্যান হন। ট্রেনে সাহেব ও অ্যাংলোদের পৃথক ব্যবস্থা উঠে গেল। ভারতে শিশু (শ্রমবন্ধক) আইন প্রবর্তিত হল।
হের হিটলার জার্মানির সর্বাধিনায়ক (Chancellor) হন। জার্মানি থেকে ইহুদি ও কমিউনিস্টদের উচ্ছেদের জিগির তুললেন হিটলার। গোপনে জার্মানিতে রণসজ্জা শুরু হল। বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫০০০ বই পুড়িয়ে দেওয়া হল।
এ বছর জন্মালেন অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, ভূমেন্দ্র গুহ, আনন্দ বাগচী, সন্জীদা খাতুন, জহির রায়হান, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ।
মারা গেলেন অ্যানী বেশান্ত, কামিনী রায়, দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, কবি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক।
এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন রাশিয়ার কথাশিল্পী ইভান বুনিন (১৮৭০ – ১৯৫৩)।
পুরস্কার দেওয়ার কারণ হিসেবে নোবেল কমিটি লেখেন—
‘For the strict artistry with which he has carried on the classical Russian tradition in prose writing.’
বুনিনের বিখ্যাত গ্রন্থ হল—’লাইফ অব আর্সেনিভ’, ‘দ্য ডাক্ অ্যালিস’ ইত্যাদি।
প্রকাশিত গ্রন্থ : রবীন্দ্রনাথের ‘দুইবোন’, ‘মানুষের ধর্ম’, ‘বিচিত্রিতা’, ‘চণ্ডালিকা’, ‘তাসের দেশ’, ‘বাঁশরি’, ‘ভারত পথিক রামমোহন’, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ’, ‘শিক্ষার বিকিরণ’ প্রকাশ পায়। বের হয় অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের ‘আমরা’, অন্নদাশঙ্কর রায়ের ‘কালের শাসন’, প্রমথনাথ বিশীর ‘প্রাচীন আসামি হইতে’, প্রবোধকুমার সান্যালের ‘প্রিয় বান্ধবী’, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাস’, কাজী ইমদাদুল হকের ‘আবদুল্লাহ’, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘রবীন্দ্রজীবনী-১ম খণ্ড’, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জাতিস্মর’, বুদ্ধদেব বসুর ‘পৃথিবীর পথে, ‘যেদিন ফুটলো কমল’, প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘উপনয়ন’ ও ‘মিছিল’, আবদুল কাদিরের ‘দিলরুবা’। প্রকাশ পায় জসীম উদ্দীনের ‘ধানখেত’ কাব্য।
পিতার প্রত্যক্ষ উৎসাহ ও আর্থিক সহায়তায় বিষ্ণু দে-র প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘উর্বশী ও আর্টেমিস’- এর প্রকাশ। কবিতার সংখ্যা ২৬; রচনাকাল : ১৯২৮– ১৯৩৩; প্রকাশক : বুদ্ধদেব বসু। কাব্যটি পাঠ করে ২৯ আষাঢ় ১৩৪০ বঙ্গাব্দে রবীন্দ্রনাথ লিখিত একটি পত্রে প্রশংসিত মন্তব্য করেন। কিন্তু ১ শ্রাবণ ১৩৪০ বঙ্গাব্দে লিখিত পত্রে তাঁর মন্তব্য প্রত্যাহার করে নেন।