১৯১৯। বয়স ২০ বছর
কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন জীবনানন্দ, দ্বিতীয় শ্রেণিতে।
‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকার ১৩২৬ বঙ্গাব্দের বৈশাখ সংখ্যায় জীবনানন্দের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হল। কবিতার নাম’বর্ষ আবাহন’। কবিতাটির শেষে কবির নামের পরিবর্তে শুধু ‘শ্রী’ উল্লিখিত হয়। পরে এই পত্রিকার চৈত্র সংখ্যায় মুদ্রিত বার্ষিক সূচিপত্রে শ্রীজীবনানন্দ দাস বিএ’ হিসেবে ঘোষিত হন। সম্ভাবনাময় এক তরুণ কবির আত্মপ্রকাশের প্রোজ্জ্বল অভিব্যক্তিতে ‘বর্ষ আবাহন’ কবিতাটি তাৎপর্যপূর্ণ।
কবিতাটির পঙক্তি সংখ্যা ১৬। কবিতাটি এ রকম—
‘ওই যে পূর্ব তোরণ-আগে
দীপ্ত-নীলে, শুভ্র রাগে
প্রভাত রবি উঠল জেগে
দিব্য পরশ পেয়ে।
নাই গগনে মেঘের ছায়া
যেন স্বচ্ছ স্বৰ্গকায়া!
ভুবনভরা মুক্ত মায়া
মুগ্ধ হৃদয় চেয়ে।
অতীত নিশি গেছে চলে
চির-বিদায়-বার্তা বলে,
কোন আধারের গভীর তলে
রেখে স্মৃতি-লেখা।
এসো এসো ওগো নবীন,
চলে গেছে জীর্ণ মলিন
আজকে তুমি মৃত্যু-বিহীন
মুক্ত সীমা-রেখা।’
রবীন্দ্রনাথের বয়স ৫৮। সুরেন্দ্রনাথ করকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো দক্ষিণ ভারত সফরে যান কবি। বেশ কয়েকটি জনসভা ও ছাত্রসভায় রবীন্দ্রনাথ ভাষণ দিলেন। ঘুরলেন কোয়াম্বাতুর, পলিঘাট, সালেম, তরুচিরপল্লি, তাঞ্জোর, মাদুরা, মদনাপল্লি ইত্যাদি স্থান। কিন্তু মাদ্রাজের বর্ণহিন্দুরা কবির বিরুদ্ধে প্রতিকূলতা সৃষ্টি করলেন। কারণ, তিনি প্যাটেলের অসবর্ণ বিবাহ বিলে সমর্থন জানিয়েছিলেন। কলকাতায় ফিরে এম্পায়ার থিয়েটারে ইংরেজিতে বক্তৃতা করলেন কবি।
১৩ এপ্রিল অমৃতসরে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। ডায়ারের নির্দেশে পুলিশ গুলি চালিয়ে ৩৭৯ জনকে নিহত এবং ১২০০ জনকে আহত করে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ৩০ মে রবীন্দ্রনাথ ‘স্যার’ উপাধি বর্জন করে বড়লাট লর্ড চেমসফোর্ডকে খোলা চিঠি লিখলেন।
মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন সম্পাদিত ‘সওগাতে’ (জ্যৈষ্ঠ ১৩২৬) নজরুলের ‘বাউণ্ডেলের আত্মকাহিনী’ প্রকাশ পায়। এটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত গল্প এবং প্রথম মুদ্রিত রচনাও বটে। ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা’র শ্রাবণ ১৩২৬ সংখ্যায় নজরুলের ‘মুক্তি’ কবিতটি বের হয়। এ বছরেই ‘সওগাতে’ (কার্তিক ১৩২৬) তাঁর প্রথম প্রবন্ধ ‘তুর্ক মহিলার ঘোমটা খোলা’ প্রকাশিত হয়। এই বছরে করাচিতে থাকার সময় তিনি ‘রিক্তের বেদন’ গ্রন্থের গানগুলো এবং ‘বাঁধনহারা’ পত্রোপন্যাসের অনেকটা অংশ লেখেন। ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা’র কার্তিক সংখ্যায় (১৩২৬ বঙ্গাব্দ) ‘হেনা’ গল্প এবং মাঘ সংখ্যায় ‘ব্যথার দান’ গল্প প্রকাশিত হয়।
ভারতসচিব লর্ড মন্টেগু ও গভর্নর জেনারেল লর্ড চেমসফোর্ডের রিপোর্টের ভিত্তিতে ‘ভারত শাসন আইন’ রচিত হল। বিনা বিচারে আটক করার জন্যে ‘রাউলাট অ্যাক্ট’ বিধিবদ্ধ হল। ফলে সমগ্র ভারতব্যাপী হরতাল পালিত হল। এটাই ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রথম সর্বভারতীয় আন্দোলন। এ বছরেই শিক্ষা বিষয়ে স্যাডলার কমিশন গঠিত হয়। এম.এন. রায়ের উদ্যোগে সোভিয়েট রাশিয়ার বাইরে মেক্সিকোতে প্রথম কমিউনিস্ট পার্টি স্থাপিত হয়।
ফ্রান্সের ভার্সাই নগরে জার্মান ও মিত্রপক্ষের মধ্যে সন্ধিপত্র স্বাক্ষরিত হলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান হল। মহাযুদ্ধে জয়লাভ করায় সমগ্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে ‘বিজয় উৎসব’ পালিত হল। জার্মানির কাছ থেকে ইউরোপীয় উপনিবেশগুলো কেড়ে নেওয়া হল, জার্মানির সৈন্যসংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হল; ট্যাঙ্ক, কামান, বিষবাষ্প ও বিমাননির্মাণ জার্মানিতে নিষিদ্ধ করা হল। জার্মানিতে নাৎসি দলের অভ্যুত্থান হল। ভবিষ্যৎ-যুদ্ধ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ‘লীগ অব নেশনস্-এর জন্ম হল।
এ বছর জন্মেছেন মনীন্দ্র রায়, বাণী রায়, খ্যাতনামা নৃত্যশিল্পী বুলবুল চৌধুরী, সিকান্দার আবু জাফর, মুহম্মদ আবদুল হাই, আবু রুশদ।
মারা গেলেন অক্ষয়কুমার বড়াল, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, শিবনাথ শাস্ত্রী, ১৯১৭ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী কার্ল গিবল্লেরাগ।
এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন কার্ল স্পিটলার (১৮৪৫—১৯২৪)। কার্লকে পুরস্কার দেওয়ার পক্ষে নোবেল কমিটি লেখেন-
‘In special appreciation of his epic-’Olympian Spring.’’
তাঁর বিখ্যাত রচনাসমূহ হল’বাটার ফ্লাই’, ‘ওলিম্পিয়ান স্প্রিং’।
প্রকাশিত গ্রন্থ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জাপান যাত্রী’ প্রকাশিত হল। ইংরেজিতে প্রকাশ পেল ‘দি সেন্টার অব ইন্ডিয়ান কালচার’, ‘দি হোম অ্যান্ড দি ওয়ার্ল্ড’। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের সিন্দুর কৌটা’, যোগীন্দ্রনাথ সরকারের ‘ছোটদের মহাভারত’, চারু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পঙ্ক তিলক’, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাংলার ব্রত’, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘হসন্তিকা’ প্রকাশ পেল। বের হল ইয়েটস্-এর ‘দি ওয়াইল্ড সোয়ানস্ অ্যাট কুলি’।