১৯১৫। বয়স ১৬ বছর
বোন সুচরিতার জন্ম : ১ এপ্রিল ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ চৈত্র ১৩২১ বঙ্গাব্দ; বৃহস্পতিবার। সুচরিতা মৃত্যুবরণ করেন ২২ মে ১৯৮০, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৩৮৭ বঙ্গাব্দ; বৃহস্পতিবার। সুচরিতার জন্মের সময় সত্যানন্দ দাশের বয়স ৫২ আর কুসুমকুমারীর ৪০। সুচরিতার ডাক নাম খুকু। জীবনানন্দ তাঁকে মাঝে মাঝে খুকি বলে ডাকতেন। খুকি চিরকুমারী। এমএ বিটি। ব্যক্তিজীবনে তমলুকের ‘রাজকুমারী সান্ত্বনাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ে’র প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। এই বৃহদায়তন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন তিনি। শেষ বয়সে ভারত সরকার প্রদত্ত শিরোপাও পেয়েছিলেন সুচরিতা। ১৯৫২ সালে ৩৭ বছর বয়সী সুচরিতার বর্ণনা পাওয়া যায় এরকম—
‘ছোটখাট চেহারার মাঝারি মাপের ভদ্রমহিলা, চোখে পুরু চশমা, ব্যক্তিত্বদীপ্ত, পোশাকে আশাকে সুরুচিশোভন, বাঁ দিকে ঘাড় একটু কাৎ করে হাঁটেন।’ [‘আলেখ্য: জীবনানন্দ’, ভূমেন্দ্র গুহ, পৃষ্ঠা. ১৩]
এ বছরই বরিশাল ব্রজমোহন ইনস্টিটিউশন থেকে জীবনানন্দ ম্যাট্রিক পাস করেন। প্ৰথম বিভাগে পাস করেন তিনি। পরীক্ষা দেওয়ার বয়স পূর্ণ হয়নি বলে এক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাঁকে।
রবীন্দ্রনাথকে স্বরচিত কয়েকটি কবিতা পাঠিয়েছিলেন জীবনানন্দ, দেখবার জন্যে। কবিতাগুলো সম্পর্কে রূঢ় মন্তব্যের উত্তর এল। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন—
‘তোমার কবিত্বশক্তি আছে, তাতে সন্দেহমাত্র নেই। কিন্তু ভাষা প্রভৃতি নিয়ে এত জবরদস্তি কর কেন বুঝতে পারিনে। কাব্যের মুদ্রাদোষটা ওস্তাদীকে পরিহসিত করে। বড়ো জাতের রচনার মধ্যে একটা শান্তি আছে, যেখানে তার ব্যাঘাত দেখি সেখানে স্থায়িত্ব সম্বন্ধে সন্দেহ জাগে। জোর দেখানো যে জোরের প্রমাণ তা নয়, বরঞ্চ উল্টো।’
রবীন্দ্রনাথের বয়স ৫৪। শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতা এসে পিতার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেন কবি। গান্ধীজী দক্ষিণ আফ্রিকা হতে ইংল্যান্ড হয়ে প্রথমবারের মতো শান্তিনিকেতনে আসেন।
বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল শান্তিনিকেতন আশ্রম পরিদর্শনে আসেন ২০ মার্চ। এর আগে কোনো ব্রিটিশ রাজপুরুষ আশ্রমে আসেননি।
এন্ড্রুজ কলেরায় আক্রান্ত হলে রবীন্দ্রনাথের চিকিৎসা ও শুশ্রূষায় ভালো হয়ে ওঠেন। বহু পরিজনসহ রবীন্দ্রনাথ কাশ্মীর গেলেন। বিতস্তার নৌকাগৃহে রচনা করলেন ‘বলাকা’ কবিতাটি।
৩ জুন সম্রাটের জন্মদিনে রবীন্দ্রনাথকে ‘Sir’ উপাধি প্রদান করা হয়।
রানিগঞ্জের শিয়ারশোল রাজস্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন নজরুল। মোহামেডান বোর্ডিং-এ নিখরচায় থাকতেন তিনি। দশম শ্রেণি পর্যন্ত এই স্কুলে পড়েছেন। রাজবাড়ি থেকে মাসিক সাত টাকার বৃত্তি পেতেন। এই সময়েই নজরুলের সঙ্গে শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের বন্ধুত্ব হয়।
সত্যেন্দ্রনাথ বসু এমএসসি পরীক্ষায় মিশ্রগণিতে ১ম স্থান অধিকার করেন।
ভারতরক্ষা আইনের বিরোধিতা করতে গিয়ে শত শত যুবক গ্রেপ্তার হল। কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে মিলন সাধনের চেষ্টা শুরু হল এ সময়। এম.এন. রায় অস্ত্র সংগ্রহার্থে বিদেশ গেলেন। উড়িষ্যা প্রদেশের উপকূলে জার্মান জাহাজ হতে অস্ত্র নামাতে গিয়ে বিপ্লবীদের সঙ্গে পুলিশের বন্দুক যুদ্ধ হয়। এতে বাঘা যতীন ও চিত্ত নিহত হন। এ ধরনের সশস্ত্র আন্দোলন সাধারণ জনগণ দ্বারা নিরুৎসাহিত হচ্ছে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দ্বিতীয় বছর চলছে। রাশিয়া জার্মানি আক্রমণ করে পরাজিত হল। ইতালি আগমনকালে আমেরিকান বাণিজ্য জাহাজ জার্মান সাবমেরিন দ্বারা আক্রান্ত হয়ে জলমগ্ন হয়। যুক্তরাষ্ট্র জার্মানির নিকট তীব্র প্রতিবাদ জানায়। ধীরে ধীরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
এ বছর জন্মেছেন প্রতিভা বসু, দিনেশ দাস, সুশীল রায়, চারু মজুমদার। মারা গেলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী।
এ বছর সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পান রোমা রোলাঁ (১৮৬৬–১৯৩৯)। ফ্রান্সের অধিবাসী। উপন্যাসকার, জীবনীকার ও দার্শনিক।
তাঁর সম্পর্কে নোবেল কমিটির মন্তব্য—
‘As a tribute to the lofty idealism of his literature production and to the sympathy and love of truth, which he has described different types of human beings.’
রোমা রোলাঁর বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখনীয় ‘জাঁ ক্রিস্তফ’, ‘ডন’, ‘মর্নিং’, ‘বিপ্লব’, ‘দ্য মার্কেট প্লেস’, ‘লাভ অ্যান্ড ফ্রেন্ডশিপ’, ‘দ্য হাউস’।
প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রিকা : রবীন্দ্রনাথের ‘শান্তি নিকেতন’ (১৪), কাব্যগ্রন্থ (১-৬ খণ্ড) প্রকাশ পেল। ইংরেজিতে বের হল দি মহারানি অব আরাকান’। প্রকাশ পেল কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কাশীর কিঞ্চিৎ’, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার বাল্যকথা ও আমার বোম্বাই প্রবাস’, দ্বিজেন্দ্রলালের ‘গান’, হরিসাধন মুখোপাধ্যায়ের ‘কলিকাতা : সেকালের ও একালের, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘রত্নদীপ’, কালিদাস রায়ের ‘ব্রজবেণু’, শশাঙ্কমোহন সেনের ‘বঙ্গবাণী’, জগদানন্দ রায়ের ‘গ্রহ নক্ষত্র’, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বাঙ্গালার ইতিহাস’, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘মণিমঞ্জুষা’। প্রকাশিত হল রোদেনস্টাইনের ‘সিক্স পোর্ট্রেটস্ অব রবীন্দ্রনাথ’, ডি.এইচ. লরেন্সের ‘দি রেইনবো’। ‘দি রেইনবো’ অশ্লীলতার দায়ে ইংল্যান্ডে নিষিদ্ধ হল।
সুকুমার রায়ের সম্পাদনায় ‘সন্দেশ’ পত্রিকা ও মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় ‘ভারতী’ পত্রিকা বের হল।