১৯১৪। বয়স ১৫ বছর
স্কুলজীবনের শেষের দিকে সতীর্থদের নিয়ে জীবনানন্দ একটি সাহিত্যসভা গড়ে তুলেছিলেন। এতে মা কুসুমকুমারীর প্রশ্রয় ছিল। সেই সভার প্রধান আকর্ষণ ছিলেন কুসুমকুমারী দাশ। ছেলে ও ছেলের বন্ধুদের সঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস, রামায়ণ-মহাভারতের নানা চরিত্র নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করতেন কুসুমকুমারী। জীবনানন্দের পড়ার জন্যে মা একটি নির্দিষ্ট ঘর করে দিয়েছিলেন। ঘরটি ছিল ছোট, কিন্তু খুব সাজানো গোছানো।
জীবনানন্দকে বাবা সত্যানন্দ কিনে দেন নেলসন এনসাইক্লোপিডিয়া। এই সময়েই জীবনানন্দ পরিচিত হয়েছিলেন বায়রন (১৭৮৮–১৮২৪), শেলী (১৭৯২–১৮২২), কীট্স (১৭৯৫–১৮২১), ওয়ার্ডসওয়ার্থ (১৭৭০–১৮৫০), সুইনবার্ন (১৮৩৭–১৯০৯)-এর কবিতার সঙ্গে। মা পড়ে শোনাতেন নবীনচন্দ্র সেন (১৮৪৭–১৯০৯), হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৩৮ –১৯০৩), গোবিন্দচন্দ্র দাস (১৮৫৫–১৯১৮), দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৫৮– ১৯২০), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১–১৯৪১) প্রমুখ কবিদের কবিতা 1
ভালো ছাত্র ছিলেন জীবনানন্দ। পড়াশোনায় খুব আগ্রহ ছিল। বার্ষিক পরীক্ষায় সবসময় পুরস্কার পেতেন। পাঠ্যবইয়ের বাইরের বইয়ের প্রতি তাঁর প্রবল ঝোঁক ছিল। সেই বয়সেই ‘রামায়ণ’, ‘মহাভারত’ অনেকবার পড়া হয়ে গিয়েছিল জীবনানন্দের।
রবীন্দ্রনাথের বয়স ৫৩। ২৯ জানুয়ারি গভর্নর লর্ড কারমাইকেল লাটভবনে সুইডেন থেকে প্রাপ্ত নোবেল প্রাইজের সোনার মেডেল ও ডিপ্লোমা রবীন্দ্রনাথের হাতে তুলে দিলেন। ওই দিনের ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’য় একটি বিজ্ঞপ্তি বের হয় —
‘Rabindranath Tagore-A musical ‘At Home’ will be given by His Excellency and Lady Carmichacl at Governor House, Calcutta on Thursday eening (today) when the governor will present the Nobel Prize to its distinguished recipient Mr. Rabindranath Tagor.’
সভায় উপস্থিত ছিলেন সুইডিশ কনসাল জেনারেল এবং বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পিয়ার্সন প্রত্যাবর্তন করে শান্তিনিকেতনের কাজে যোগ দিলেন। ‘বলাকা’ কাব্যের প্রথম কবিতা ‘সবুজের অভিযান’ লিখলেন রবীন্দ্রনাথ। প্রমথ চৌধুরীর সম্পাদনায় ‘সবুজ পত্র’ বের হলে তাতে ১২ মাসে ১২টি ছোটগল্প লিখলেন কবি।
লক্ষ্ণৌ-এ অতুলপ্রসাদ সেনের বাড়িতে বেড়াতে গেলেন রবীন্দ্রনাথ; গেলেন কলকাতায় রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর ৫০তম জন্মবর্ষ উদ্যাপন উৎসবেও।
কাজী রফিজুল্লাহ নজরুলকে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার দরিরামপুর হাইস্কুলে ফ্রি- স্টুডেন্ট হিসেবে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করান। বার্ষিক পরীক্ষার পর উক্ত স্কুল ত্যাগ করলেন নজরুল।
পূর্ববঙ্গে ইংরেজ, পাঠান, শিখ, রাজপুত, মারহাট্টা ও গুর্খা সৈন্যের কৃত্রিম-যুদ্ধ প্রদর্শন করায় ইংরেজ সরকার। লর্ড হার্ডিঞ্জের চেষ্টায় দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবাসী ভারতীয়দের ওপর থেকে ৪৫ টাকা ‘মুণ্ডকর’ রহিত হল।
ভারতীয় মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ বাহাদুর কলকাতায় মারা গেলেন। মৃত্যুবরণ করলেন উত্তর ভারতের প্রসিদ্ধ আলেম মৌলানা শিবলী নোমানী ও উর্দুকবি মৌলানা আলতাফ হুসাইন হালী।
অস্ট্রিয়ার যুবরাজ ফার্দিনান্দ স্ত্রীসহ বসনিয়ার রাজধানী সেরাজেভুর রাজপথে জনৈক সার্বিয়ান যুবকের হাতে নিহত হন। অস্ট্রিয়া-রাজ সার্বিয়া-রাজের কাছে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এর প্রতিকার চান। কিন্তু সার্বিয়া-রাজ এ প্রস্তাবে অসম্মতি জানালে অস্ট্রিয়া সার্বিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ফলে শুরু হয়ে যায় প্রথম মহাযুদ্ধ। রাশিয়া অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে, জার্মানি রাশিয়ার বিরুদ্ধে, ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্বযুদ্ধের লেলিহান অগ্নি ইউরোপের ৬টি দেশে বিধ্বংসী রূপ নেয়।
পাঞ্জাব বিপ্লবীদলের ৩ শত ৭২ জন শিখ কানাডা থেকে ‘কেমোগাটামারু’ নামক জাহাজে করে এসে কলকাতার দক্ষিণে বজবজ নামক স্থানে অবতরণ করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ১৮ জন শিখ নিহত হন। হরদয়াল নাগ, অবনী মুখার্জী প্রমুখ বিপ্লবী নেতা জার্মানির সঙ্গে এক গোপন চুক্তিতে আবদ্ধ হন।
পানামা খালের উদ্বোধন হল। ফোর্ড মোটরকার কোম্পানি পৃথিবীতে প্রথমবারের মতো শ্রমিকদের বোনাস দিল।
এ বছর জন্মেছেন বিরাম মুখোপাধ্যায়, আস্হাব উদ্দীন আহমদ, অদ্বৈত মল্লবর্মণ, জয়নুল আবেদিন।
১৯০৪ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী এইচ.পি. মিস্ত্রাল ও ১৯১০ সালে নোবেলজয়ী পল জোহান লাড়ুইগন হেইজ মৃত্যুবরণ করেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে এ বছর সাহিত্যে কোনো নোবেল প্রাইজ দেওয়া হয়নি।
প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রিকা : প্রকাশ পেল রবীন্দ্রনাথের ‘গীতিমাল্য’, ‘গীতালি’ ও ‘স্মরণ’; ইংরেজিতে বের হল ‘দি কিং অব দি ডার্ক চেম্বার’, ‘সাধনা’ ও ‘কবীর’। শরৎচন্দ্রের ‘বিন্দুর ছেলে’, ‘পরিণীতা’, ‘পণ্ডিত মশাই’ এবং রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর ‘বিচিত্র প্রসঙ্গ’ প্রকাশিত হল। প্ৰকাশ পেল পদ্মনাথ ভট্টাচার্যের ‘বৈজ্ঞানিকের ভ্রান্তিবিলাস’। ২৭ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে নগেন্দ্রনাথ বসুর ‘বিশ্বকোষ’ সমাপ্ত হল। বের হল প্রসন্নকুমার আচার্যের ‘প্রাচীন ভারতীয় স্থপতিবিদ্যার অভিধান’। এই গ্রন্থটির জন্যে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি.লিট উপাধি প্রদান করে। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের ‘বাঙ্গালা প্রাচীন পুঁথির বিবরণ’, দীনেশচন্দ্র সেনের ‘বঙ্গসাহিত্য পরিচয়’ প্রকাশিত হল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্কেচ বই রোদেনস্টাইনের ভূমিকায় সমৃদ্ধ হয়ে লন্ডন থেকে প্রকাশ পেল। বের হল ইয়েট্স-এর ‘রেসপনসিবিলিটিজ’।
প্রমথ চৌধুরীর সম্পাদনায় ‘সবুজ পত্র’ ও চিত্তরঞ্জন দাশের সম্পাদনায় ‘নারায়ণ’ পত্রিকা প্রকাশিত হল।