১৯১১। বয়স ১২ বছর
ঘরকুনো স্বভাব জীবনানন্দের। নিরিবিলিতে থাকতে পছন্দ করেন বেশি। আবার খেলাধুলোতেও তাঁর যথেষ্ট আগ্রহ। হা-ডু-ডু, কুস্তি, মার্বেল – সব রকম খেলাতে জীবনানন্দের দোসর অশোকানন্দ। সেজকাকা চাকরি করতেন বনবিভাগে। একবার তাঁকে চিঠি লিখে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার সমস্ত সরঞ্জাম আনিয়ে নিয়েছিলেন জীবনানন্দ। দুই ভাই মিলে পাড়ার ছেলেদের নিয়ে একটা ক্লাব গড়েছিলেন। বাড়ির পাশে হা-ডু-ডু, ফুটবল, ক্রিকেট খেলা হতো। জীবনানন্দ এসব খেলায় অংশগ্রহণ করতেন না। কিন্তু অন্যান্যদের খেলা দেখে ভীষণ আনন্দ পেতেন। বাড়িতে তাস খেলার আসর বসত। এই একটি খেলাতে অধিক বয়স পর্যন্ত অংশগ্রহণ করে গেছেন জীবনানন্দ।
গ্রীষ্মের দুপুরে ঠাকুরমা প্রসন্নকুমারী উঠানে আচার-আমসত্ত্ব শুকাতে দিতেন। পাহারাদার নিযুক্ত করতেন জীবনানন্দ ও অশোকানন্দকে। রক্ষকরাই ভক্ষক হতেন ওই আচার-আমসত্ত্বের। রোজই একটু একটু করে কমে যেত। ঠাকুরমা টের পেতেন। কিন্তু দুই নাতিকে কিছু বলতেন না। অন্য বিষয়ে ঠাকুরমায়ের প্রখর দৃষ্টি থাকলেও আমসত্ত্ব চুরির ব্যাপারে প্রশ্রয় দিতেন।
রবীন্দ্রনাথের বয়স ৫০। শান্তিনিকেতনে কবির ৫০তম জন্মোৎসব পালিত হয়। কলকাতায় অবনীন্দ্রনাথের বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ব্রিটিশ চিত্রশিল্পী উইলিয়াম রোদেনস্টাইন ও জার্মান দার্শনিক কাউন্ট হেসান কাইসার লিঙের চাক্ষুষ পরিচয় ঘটে।
আনন্দকুমার স্বামী অজিতকুমার চক্রবর্তীর সহায়তায় রবীন্দ্র-কবিতার ইংরেজি অনুবাদ করেন। ‘রাজা’ নাটকের প্রথম অভিনয় হল। রচিত হল ‘অচলায়তন’ ও ‘ডাকঘর’।
শিয়ারসোল হাইস্কুলে নজরুল প্রথমবার ভর্তি হন এবং ওই স্কুল ত্যাগ করেন। তারপর বর্ধমান জেলার মাথরুন গ্রামের নবীনচন্দ্র ইনস্টিটিউশনে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। তখন এই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন কুমুদরঞ্জন মল্লিক। এই বিদ্যালয়েও নজরুল বেশিদিন অধ্যয়ন করেননি।
ব্রিটিশ সরকার হরপ্রসাদ শাস্ত্রীকে ‘Companion of the Indian Empire’ উপাধি দিলেন।
‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি’ প্রতিষ্ঠিত হল। শিবদাস ভাদুড়ীর নেতৃত্বে খালি পায়ে ফুটবল খেলে মোহনবাগানের ছেলেরা বুটপরা সাহেবদের দল ইস্ট ইয়র্ককে হারিয়ে প্রথমবারের মতো আইএফএ শিল্ড পেলেন।
সত্যেন্দ্রনাথ বসু (১৮৯৪ সালের ১ জানুয়ারি উত্তর কলকাতা গোয়াবাগান অঞ্চলে ঈশ্বরমিল লেনের পৈতৃকগৃহে জন্ম) প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে আইএসসি পরীক্ষা পাস করেন।
সমগ্র ব্রিটিশ ভারতে পঞ্চমবারের মতো লোকসংখ্যা গণনা করা হয়। ভারতসম্রাট পঞ্চম জর্জ ও সম্রাজ্ঞী মেরী ‘মদিনা’ নামক জাহাজে করে ইংল্যান্ড থেকে দিল্লি আসেন। দিল্লি দরবারে পঞ্চম জর্জের অভিষেক অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন হয়। সম্রাটের আদেশে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়। কলকাতা থেকে দিল্লিতে রাজধানী স্থানান্তরের কথা ঘোষিত হয়।
ইতালি তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ত্রিপলি দখল করে। স্বদেশপ্রেমিক মিশরীয় বীর এরাবি পাশা ৬৯ বছর বয়সে মারা যান।
এ বছর জন্মগ্রহণ করেছেন নীহাররঞ্জন গুপ্ত, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ মৈত্র, সুফিয়া কামাল, আবু জাফর শামসুদ্দীন, ওহীদুল আলম, আ.ন.ম. বজলুর রশীদ, আশালতা সিংহ, দেবব্রত বিশ্বাস, শশিভূষণ দাশগুপ্ত।
মারা গেলেন ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভগিনী নিবেদিতা। বহুভাষাবিদ হরিনাথ দে’র মৃত্যু হল।
এ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান বেলজিয়ামের নাট্যকার মরিস মেটারলিঙ্ক (১৮৬২–১৯৪৯)।
মেটারলিঙ্ক সম্পর্কে নোবেল কমিটির মন্তব্য –
‘In appreciation of his many sided literary activities and especially of his dramatic works which are distinguishing by a wealth of imagination and by a poetic fancy which reveal sometimes in the guise of a fairy tale a deep inspiration while in a mysterious way they appeal to the readers’ own feelings and stimulate their imagination.’ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ হল—’দ্য ইন্ট্রডার’, ‘দ্য ব্লাইন্ড’, ‘দ্য সেভেন প্রিন্সেস’, ‘দ্য ব্লু বার্ড’, ‘দ্য লাইফ অব দ্য বী’।
প্রকাশিত গ্রন্থ : রবীন্দ্রনাথের ‘শান্তিনিকেতন’ (১২-১৩) ও ‘আটটি গল্প’ বের হল। ‘প্রবাসী’র ভাদ্র সংখ্যা থেকে ‘জীবনস্মৃতি’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ পেতে থাকল। প্রকাশিত হল দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘চন্দ্রগুপ্ত’, কুমুদরঞ্জন মল্লিকের কাব্যগ্রন্থ ‘উজানি’, ‘বনতুলসী’ ও শতদল’, অজিতকুমার দত্তের ‘রবীন্দ্রনাথ’ ও ‘কাব্য পরিক্রমা’। গ্রন্থাকারে প্রকাশ পেল দীনেশচন্দ্র সেনের ‘History of Bengali Language and Literature’.
শৈলেন্দ্রকুমার সরকারের নাটক ‘সখের জলপান’কে ব্রিটিশ সরকার নিষিদ্ধ করে। নিষিদ্ধ হয় দেবীপ্রসন্ন রায়চৌধুরীর ‘প্রসূন’ নামক নিবন্ধ গ্রন্থটি, অম্বিকাচরণ গুপ্তের ‘দেবসমিতি বা সুরলোকে স্বদেশকথা’, ভুবনমোহন দাশগুপ্তের ‘আমরা কোথায়’, গিরিশচন্দ্র ঘোষের নাটক ‘সিরাজদ্দৌল্লা’, ‘মীর কাসিম’ ও ‘ছত্রপতি শিবাজী’।