১৯০৬। বয়স ৭ বছর
বাগানের মালি পত্নী-পুত্রহীন অলি মামুদ জীবনানন্দকে নানারকম লতাপাতা, গাছগাছালির নাম শিখিয়েছিল; নানা ঋতুতে তাদের বৈশিষ্ট্যের কথাও শুনিয়েছিল সে পরম আন্তরিকতায়। অলি মামুদের মাধ্যমেই জীবনানন্দের সঙ্গে প্রকৃতির নিবিড় পরিচয় গড়ে উঠেছিল।
রবীন্দ্রনাথের বয়স ৪৫ বছর। কৃষি ও গো-পালন ক্ষেত্রে উন্নত শিক্ষা গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বন্ধুপুত্র সন্তোষচন্দ্রকে কলকাতা থেকে জাপানের পথে আমেরিকা রওনা করিয়ে দিলেন কবি। রবীন্দ্রনাথ ‘বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মিলনে’র প্রথম অধিবেশনের সভাপতি নির্বাচিত হলেন। কিন্তু ইংরেজ রাজপুরুষদের বসার জায়গা নিয়ে পুলিশ গুণ্ডামি করলে ‘সাহিত্য সম্মিলন’ পরিত্যক্ত হল।
কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের ২২তম অধিবেশনে দাদাভাই নৌরজীর ‘স্বরাজ’ ঘোষণা। বৈপ্লবিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্যে অর্থসংগ্রহের উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক ডাকাতি আরম্ভ হল। ‘যুগান্তর সমিতি’ গঠিত হয়। অরবিন্দ ঘোষ ও বারীন্দ্র ঘোষ—দু’ভাই ‘যুগান্তর সমিতি’ পরিচালনা করেন। বৈপ্লবিক জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মুখপত্র ‘যুগান্তর’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশে বৈপ্লবিকচিন্তা প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পত্রিকাটি।
ঢাকায় অনুশীলন সমিতি গঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক পুলিনবিহারী দাশ ও অধিনায়ক আনন্দ চক্রবর্তী। এই সমিতির দ্বারাই ভারতবর্ষের প্রথম রাজনৈতিক ডাকাতি সংঘটিত হয় ঢাকা জেলার শশীমোহন সরকারের বাড়িতে। স্বদেশি বিপ্লবীদের দ্বারা জাতীয় কলেজ স্থাপিত। অধ্যক্ষ অরবিন্দ ঘোষ।
বরিশালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মিলন সভায় ‘বন্দে মাতরম্’ ধ্বনি দিলে পুলিশ অকথ্য অত্যাচার করে। পূর্ববঙ্গের বড়লাট ফুলার ‘বন্দে মাতরম্’ ধ্বনির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। বঙ্গবিভাগ ও স্বদেশি কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে জামালপুর, কুমিল্লা ও পাবনায় ব্যাপক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠনকল্পে সবুজচন্দ্র মল্লিক ১ লক্ষ টাকা দান করেন। ৫০ বছর পর এই প্রতিষ্ঠান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ৪১ বছর বয়সে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষা ব্যবস্থার বিপুল উন্নতি সাধন করেন।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এশিয়াটিক সোসাইটির আজীবন সহকারী সভাপতি নির্বাচিত হন। হাওড়ার রেলস্টেশন তৈরির কাজ শেষ হয়। কলকাতায় তিলক ‘শিবাজী উৎসব’ উদ্বোধন করেন।
নওয়াব সলিমুল্লাহ বাহাদুরের উদ্যোগে ঢাকায় মুসলিম লীগ গঠিত হয়। নওয়াব সলিমুল্লাহর প্রস্তাবে এবং হাকিম আজমল খানের সমর্থনে ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। সভাপতি ছিলেন নওয়াব মনসুরুল মুলক।
ভীষণ ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ডে সানফ্রান্সিসকো নগর বিধ্বস্ত হয়ে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার জুলুরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে। ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টির জয় হয়। শ্রমিকদের কাজের সময় নির্ধারিত হয় দৈনিক ১০ ঘণ্টা।
এ বছর জন্মেছেন বিমলাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, হুমায়ুন কবির, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, আবদুল কাদির, আবু সয়ীদ আইয়ুব, সতীনাথ ভাদুড়ী, নাট্যকার নুরুল মোমেন, পাহাড়ী সান্যাল, বন্দে আলী মিয়া, মুহম্মদ এনামুল হক, রামকিঙ্কর বেইজ, শচীন দেববর্মন, স্যামুয়েল বেকেট।
ইবসেনের মৃত্যু হয় এ বছর। প্রখ্যাত বাঙালি ব্যারিস্টার আনন্দমোহন বসুরও মৃত্যু হয় এ বছর।
এ বছর সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পান জি. কারডুচি (১৮৩৫-১৯০৭)। ইতালির কবি তিনি।
তাঁর সম্পর্কে নোবেল কমিটির মন্তব্য ছিল—
‘Not only in consideration of his deep learning and critical research
but above all as a tribute to the creative energy, freshness of style.
And lyrical course which characterised his poetic masterpiece.’
তাঁর বিখ্যাত রচনাগুলো মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘Barbarian Odes’, ‘Hymn to Satan’, ‘New verses’.
প্রকাশিত গ্রন্থ ও পত্রিকা : এ বছর প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের ভারতবর্ষ’, ‘খেয়া’ ও ‘নৌকাডুবি, সুবলচন্দ্র মিত্রের ‘সরল বাংলা অভিধান’, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘বেণু ও বীণা’। প্রকাশ পায় যোসেফ কনরাডের ‘লর্ড জিম’ ও সাহিত্যে প্রথম নোবেল প্রাইজ বিজয়ী আর.এফ.এ. সুলী প্রুধোম-এর ‘দ্য সাইকোলজি অব ফ্রি উইল’।
বারীন্দ্রকুমার ঘোষ সম্পাদিত বিপ্লবীদের মুখপত্র ‘যুগান্তর’ প্রকাশিত হল। বের হল বিপিনচন্দ্র পাল সম্পাদিত ইংরেজি দৈনিক ‘বন্দে মাতরম্’।