পঞ্চম অনুবাক
প্রথম সূক্ত : জঙ্গিড়মণিঃ
[ঋষি : অঙ্গিরা। দেবতা : জঙ্গিড় বনস্পতি। ছন্দ : অনুষ্টুপ।]
জঙ্গিাহসি জঙ্গিড়ো রক্ষিতাসি জঙ্গিড়ঃ। দ্বিপাচ্চতুষ্পদস্মাকং সর্বক্ষতু জঙ্গিড়ঃ ॥১৷৷ যা গৃৎস্যস্ত্রিপঞ্চাশীঃ শতং কৃত্যাকৃতশ্চ যে। সর্বান্ বিন তেজসোহরসাং জঙ্গিড়স্করৎ৷৷ ২। অরসং কৃত্রিমং নাদমরসাঃ সপ্ত বিস্রসঃ। অপেতো জঙ্গিড়ামতিমিষুমস্তেব শাতয় ॥ ৩॥ কৃত্যাদূষণ এবায়মথো অরাতিদূষণঃ। অথো সহস্বাঞ্জঙ্গিড়ঃ প্র ণ আয়ুংষি তারিষৎ ৷৷ ৪. স জঙ্গিড়স্য মহিমা পরিণঃ পাতু বিশ্বতঃ। বিষ্কন্ধং যেন সাসহঁ সংস্কন্ধমোজ ওজসা ॥৫৷৷ ত্রিষ্টা দেবা অজনয় নিষ্ঠিতং ভূম্যামধি। তমু ত্বাঙ্গিরা ইতি ব্রাহ্মণাঃ পূৰ্য্যা বিদুঃ ॥৬৷৷ ন ত্বা পূর্বা ওষধয়ো ন ত্বা তরন্তি যা নবাঃ। বিবাধ উগ্রো জঙ্গিড়ঃ পরিপাণঃ সুমঙ্গলঃ ॥৭॥ অথোপদান ভগবো জঙ্গিড়ামিতবীয়। পুরা ত উগ্রা গ্রসত উপেন্দ্রো বীর্যং দদৌ ॥ ৮ উগ্র ইৎ তে বনস্পত ইন্দ্র ওক্সনমা দধেী। অমীবাঃ সর্বাশ্চাতয়ং জহি রক্ষাংস্যোষধে ॥৯॥ আশরীকং বিশরীকং বলাসং পৃষ্ট্যাময়। তক্মানং বিশ্বশারদমরসাং জঙ্গিড়স্করৎ ১০
বঙ্গানুবাদ –[ জঙ্গিড় কোনও একটি ওষধি বিশেষের নাম এবং এটি উত্তর দেশে প্রসিদ্ধ ] হে জঙ্গিড় নামক ওষধি হতে নির্মিত মণি! তুমি জঙ্গিড় হতে জাত হয়ে আভিচারিক ক্রিয়াকর্মের নিগরণকর্তা অর্থাৎ ভক্ষক বা নাশক হওয়ার কারণে জঙ্গিড় নামে অভিহিত (জঙ্গিড়ঃ অসি জঙ্গিড়ঃ); সেই জঙ্গিড়ত্বের কারণে তুমি সকল ভয় হতে রক্ষাকারী হয়েছে (রক্ষিতা অসি)। আমাদের যত পদদ্বয়োপেত মনুষ্য ইত্যাদি লক্ষণ প্রাণী আছে (দ্বিপাৎ), তথা পাদচতুষ্টয়োপেত গো-মহিষ ইত্যাদি লক্ষণ পশু আছে (চতুষ্পদ), সেই সকলকে এই জঙ্গিড় (জঙ্গিড়ঃ) অর্থাৎ জঙ্গিড় নামে খ্যাত মণি পালন করুক (সর্বং রক্ষতু জঙ্গিড়ঃ) ॥১॥
যে গর্ধনশীল অর্থাৎ লোভাতুর (গৃৎস্য) ত্রি-অধিক পঞ্চাশৎসংখ্যক অর্থাৎ তিপ্পান্নসংখ্যক (ত্রিপঞ্চাশীঃ) কৃত্যা অর্থাৎ মৃৎ বা দারু ইত্যাদি দ্বারা নির্মিত পুত্তলী অর্থাৎ প্রতিমূর্তি ইত্যাদি ও তাদের যে শতসংখ্যক কর্তা (কৃতঃ) রয়েছে, তাদের সকলকে এই জঙ্গিড় অর্থাৎ জঙ্গিরাশ্য ঔষধিনির্মিত মণি বিনষ্টতেজঃ (বিন তেজসঃ) অর্থাৎ হতবীর্য বা আপন ব্যাপারে কুণ্ঠিতশক্তি করুক ও রসরহিত অর্থাৎ নরকবিশেষে প্রয়াণ করাক (অরসা করৎ)। [ আভিচারিক কর্মের কর্তা বিপক্ষীয় জনের ক্ষতিসাধনের উদ্দেশে তার মূর্তি গঠন করে সেই মূর্তির উপর অভিচার-মন্ত্র প্রয়োগ করে থাকেন। এখানে সেই মূর্তি ও তার গঠনকর্তার বিনাশ প্রার্থনা করা হয়েছে ] ২
আভিচারিক কর্মের দ্বারা নিষ্পন্ন ধ্বনি (কৃত্রিমং নাদং) শিরঃ-কর্ণ ইত্যাদি অঙ্গসমূহে স্থিত এই জঙ্গিড় মণি গতসার (অরসঃ) করে দিক; এই রকমে শরীরস্থ নাসারন্ধ্রদ্বয়-চক্ষুগোলকদ্বয় শ্রোত্রছিদ্রদ্বয় ও মুখকুহররূপ সপ্তসংখ্যক ছিদ্রসমুদায় (সপ্ত বিস্রসঃ) হতে অভিচার-প্রক্রিয়ার দ্বারা উৎসারিত ধ্বনি এই জঙ্গিড়মণির মাহাত্মে নিঃসার হয়ে যাক, অর্থাৎ অভিচার কর্মের অনিষ্ট হতে। মুক্ত হয়ে যাক। হে জঙ্গিড়! তোমার ধারণকারীর সন্নিকট হতে (ইতঃ) তুমি দারিদ্র বা দুর্বুদ্ধি (অমতিং) নিক্ষিপ্ত বাণের মতো অপসারিত করে (অপ ইমুম অস্তেব) সুখ সম্পাদন করো (শাতয়) ৷৷ ৩৷৷
এই জঙ্গিড় মণি অপরের দ্বারা উৎপাদিত দূষণের নিরাকরণকারী (কৃত্যাদূষণঃ); আরও (অথো) শত্রুর প্রযোজ্য দূষণের নাশকারী (অরাতিদূষণঃ); আরও (অথো) এই জঙ্গিড় উক্ত ব্যাপারোচিত বলসম্পন্ন (সহস্বা)। সেই হেন মণি কৃত্যাদূষণ ইত্যাদি সম্পাদিত করে আমাদের আয়ু (নঃ আয়ুংষি) বর্ধন করুক (প্র তারিষৎ) ॥ ৪৷
সেই হেন (স) জঙ্গিড়ের মহত্ত্ব (মহিমা) আমাদের সকল ভয়জাত হতে সর্বতোভাবে রক্ষা করুক (বিশ্বতঃ পরি পাতু)। (কি সেই মহিমা? না–) যে মহিমা বিষ্কন্ধ অর্থাৎ বিশ্লিষ্টস্কন্ধ নামক বাতবিশেষ মহারোগ আপন তেজঃপ্রভাবে (ওজসা সহ) বিনাশ করে অর্থাৎ বিশষ্কন্ধীকরণের সামর্থ্য বিনষ্ট করে। যে মহিমা স্কন্ধ সংলগ্নকারী অর্থাৎ সংস্কন্ধ নামে অভিহিত বাতলক্ষণ মহাব্যাধির সামর্থ্য সহ বিনাশ করে ৷৷ ৫৷৷
ইদানীং ভূমিতে অবস্থানকারী তোমাকে (ত্বা) দেবগণ তিনবার (ত্রিঃ) অর্থাৎ তিনলোকে স্থিত করার নিমিত্ত (নিস্থিত) তিনবার সৃষ্টি করেছেন (অজনয়) অথবা প্রথম ও দ্বিতীয়বার প্রযত্ন করেও তুমি অনুৎপাদিত থাকায় অত্যন্ত প্রয়োজনের নিমিত্ত তৃতীয়বারে তোমাকে উৎপাদন করেছেন। এই কথা অঙ্গিরা নামক ব্ৰহ্মণোঙ্গসস্তৃত (ব্রাহ্মণাঃ) পূর্বতন মহর্ষিগণ বলে থাকেন (বিদুঃ)। ৬।
হে জঙ্গিড়! তোমার সৃষ্টির পূর্বে উৎপন্ন ওষধিসমূহ (ত্বা পূর্বাঃ ওষধয়ঃ) তোমাকে অতিক্রম করতে পারেনি (ন ত্বা তরন্তি) এবং যে ওষধি নূতন (যাঃ নবাঃ), তারাও তোমাকে অতিক্রম বা প্রভাবিত করতে পারেনি (ত্বা ন তরন্তি)। (কেন?–না) তুমি শত্ৰু, রোগ ইত্যাদির বিশেষভাবে বাধক (বিবাধঃ); তুমি উগ্র্ণ বলশালী (উঃ), সর্বতোভাবে রক্ষক (পরিপাণঃ) ও সুষ্ঠু মঙ্গলকারী (সুমঙ্গলঃ) ৭
হে কৃত্যানিৰ্হরণ ইত্যাদি ব্যাপারের উপাদান (অথ উপদান)! হে ভগবন্ (ভগবঃ)! (অর্থাৎ অতিশয়িত মাহাত্মবা)! হে অমিতবীর্য! (অর্থাৎ অসীম সামর্থশালী)! হে জঙ্গিড়! প্রচণ্ড বলশালী কোন প্রাণী তোমাকে গ্রাস করতে পারে (তে উগ্রা পুরা গ্রসতে), তা জ্ঞাত হয়ে ইন্দ্র তোমাকে পরের দ্বারা অনভিভাব্য সামর্থ্য (বীর্যং) প্রদান করেছেন (উপ দদৌ), অর্থাৎ ইন্দ্র কর্তৃক প্রদত্ত বীর্যত্বে তুমি অতিশয় শৌর্যশালী ॥ ৮
হে জঙ্গিড় নামক বনস্পতি! তুমি অতিশয় বীর্যশালী, এতে বিচারণার কিছু নেই, অর্থাৎ এতে সন্দেহের কোনমাত্র অবকাশ নেই (উগ্রঃ ইৎ); কারণ ইন্দ্র তোমাতে তেজঃ বা বল স্থাপন করেছেন (ওত্মানং আ দধৌ)। অতএব, হে বনস্পতি (ওষধে)! তুমি সাধ্য বা অসাধ্য বিভাগ না করে সকল রোগ নাশ করো (সর্বাঃ অমীবাঃ চাতয়ন) এবং রক্ষিত আমাদের রক্ষা করো (রক্ষাংসি), অথবা ভয়ের উপাদানভূত রাক্ষসদের বধ করো। ৯।
সর্বতো হিংসক আশরীক নামক রোগ, তথা বিশেষভাবে হিংসক বিশরীক নামক রোগ, বলক্ষয়কারক বলাস নামক রোগ, সর্বাঙ্গে ব্যাপ্ত পৃষ্ট্যাময় রোগ, কৃচ্ছজীবনযাপনকারী (তক্মানং) যেভাবে থাকেন সেইরকম সকলের বা সর্বদা বিশরণকারী বিশ্বশারদ ইত্যাদি রোগসমূহকে এই জঙ্গিরমণি পীড়নে অসমর্থ করে দিক (অরসা করৎ)। ১০
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –পঞ্চমেনুবাকে দ্বাদশ সূক্তানি। তত্র জঙ্গিড়োসি ইতি প্রথম-দ্বিতীয়াভ্যাং সূওাভ্যাং..বায়ব্যাখ্যায়াং মহাশূন্তেী জঙ্গিড়বৃক্ষনির্মিতং মণিং বধীয়াৎ। ৩থা নক্ষএকল্পে সূত্রিতং। বাতাঞ্জা৩ঃ (৪কা, ১০সূ.) ইতি শঙ্খং বারুণ্যাং। জঙ্গিভোসি জঙ্গিদ্যে রক্ষিতাসি (১৯কা, ৩৫সূ.) ইতি জঙ্গিড়ং বায়ব্যায়াং ॥ (১৯কা, ৫অ. ১সূ.)।
টীকা— পঞ্চম অনুবাকের দ্বাদশটি সূক্তের মধ্যে উপযুক্ত সূক্তটি এবং এর পরবর্তী দ্বিতীয় সূক্তটির দ্বারা বায়ব্যাখ্য মহাশান্তি যাগকর্মে জঙ্গিড়নির্মিত বন্ধন করা হয়। নক্ষত্রকল্পে (১৭) এটি সূত্রিত আছে। নক্ষএকল্পের (১৯) সূত্রানুসারে ৪র্থ কাণ্ডের ২য় অনুবাকের ৫ম সূক্তটি (বাতাজ্জাতে ইত্যাদি) বারুণাখ্য মহাশাওি কর্মে শঙ্খমণি বন্ধনে যেমন বিনিয়োগ হয়, উপযুক্ত সূক্ত তেমনই বাতরোগে বায়ব্য নামক মহাশান্তি কর্মে বিনিয়োগ হয় ॥ (১৯কা. ৫অ. ১সূ.)।
.
দ্বিতীয় সূক্ত : জঙ্গিড়ঃ
[ঋষি : অঙ্গিরা। দেবতা : জঙ্গিড় বনস্পতি। ছন্দ : অনুষ্টুপ, পংক্তি, ত্রিষ্টুপ।]
ইন্দ্রস্য নাম গৃহুন্ত ঋষয়ে জঙ্গিড়ং দদুঃ। দেবা যং চক্রুর্ভেষজমগ্রে বিষ্কন্ধদূষণম্ ॥১॥ স নো রক্ষতু জঙ্গিড়ো ধনপালো ধনেব। দেবা যং চক্রুব্রাহ্মণাঃ পরিপাণমরাতিহ৷৷ ২ দুহার্দঃ সংঘোরং চক্ষুঃ পাপকৃত্বানমাগম। তাংস্তুং সহস্রচক্ষো প্রতীবোধেন নাশয় পরিপাাহসি জঙ্গিড়ঃ ॥ ৩ পরি মা দিবঃ পরি মা পৃথিব্যাঃ পর্যন্তরিক্ষাৎ পরি মা বীরুদ্ভ্যঃ। পরি মা ভূতাৎ পরি মোত ভব্যাৎ দিশোদিশো জঙ্গিড়ঃ পাত্বস্মন্ ॥৪॥ য ঋষ্ণবো দেবকৃতা য উততা ববৃতেহন্যঃ। সর্বাংস্তান্ বিশ্বভেষজোহরসাং জঙ্গিড়স্করৎ ॥৫॥
বঙ্গানুবাদ –পূর্বকালে অতীন্দ্রিয়দ্রষ্টা অঙ্গিরা প্রমুখ ঋষিগণ (ঋষয়ঃ) ইন্দ্রদেবের নাম উচ্চারণ পূর্বক (গৃহন্তঃ) জঙ্গিরাখ্য মণিকে অতিশয় বীর্যমণ্ডিত করে রক্ষাকামী বা পরম বীর্যাকাঙ্ক্ষী পুরুষদের দান করেছিলেন (দঃ)। (সেই কারণে এখনও রক্ষাবন্ধনকালে ইন্দ্রদেবের নাম স্মরণ করে জঙ্গিড়মণি ধারণ করা হয়ে থাকে)। অধিকন্তু, সৃষ্টির আদিতে (অর্থে) ইন্দ্র প্রমুখ দেবগণ (দেবাঃ). জঙ্গিড়াখ্য ঔষধিকে (যং) বিষ্কন্ধ নামক মহারোগের ভেষজরূপে নির্দেশ করেছিলেন (বিস্কন্ধদূষণ চক্রু), অর্থাৎ অতঃপর এই জঙ্গিড়মণি বিষ্কন্ধ রোগের ভেষজরূপে প্রযুক্ত হয়ে থাকে ১॥
সেই হেন জঙ্গিড়মণি (সঃ) আমাদের রক্ষা করুক (নঃ রক্ষতু), যেমন লোকজগতে কোনও ধনাধ্যক্ষ রাজা প্রযত্নের সাথে ধন রক্ষা করে থাকেন (ধনপালঃ ধনা ইব)। যে জঙ্গিড় (যং) দেবগণ (দেবাঃ) ও ব্রাহ্মণগণ (ব্রাহ্মণাঃ), অথবা বেদাধ্যয়নের দ্বারা দ্যোতমান (দেবাঃ) ভৃগু-অঙ্গিরা প্রভৃতি মহর্ষিগণ (ব্রাহ্মণাঃ), কর্তৃক সর্বতোভাবে রক্ষকরূপে (পরিপাণং) ও শক্ৰহন্তারূপে (অরাতিহং) নিযুক্ত হয়েছিল (চঃ), সে আমাদের রক্ষা করুক। ২।
হে জঙ্গিড়মণি! তুমি দুষ্টহৃদয়শালী শত্রুগণের (দুহাদঃ) অত্যন্ত ক্রুর চক্ষু এবং হিংসা ইত্যাদি লক্ষণসমন্বিত সমীপাগত পাপকারীগণকে (পাপকৃত্বানম্ আ অগম) বিনাশ করো। হে বহুধা দ্রষ্টা (সহস্রচক্ষো)! উক্ত লক্ষণসম্পন্ন (অর্থাৎ দুষ্টহৃদয়শালী বা পাপকর্মকারী) সকলের (তা) প্রতিবন্ধকতা বা হন্তব্যতা পরিজ্ঞাত হয়ে (প্রতীবোধেন) তাদের বিনাশ করো (নাশয়), অথবা তাদের কৃত অপরাধ উদ্বাটন পূর্বক তাদের বিনাশ করো। হে জঙ্গিড়! তুমি সকলকে সর্বদিক হতে রক্ষা করে থাকো ৷ ৩৷
এই জঙ্গিড়মণি আমাদের (মা) দ্যুলোক-সম্ভুত ভয় হতে পরিত্রাণ করুক (পরি দিবঃ); এইভাবে পৃথিবী-সস্তৃত প্রতিবন্ধকতা হতে আমাদের পরিত্রাণ করুক (পরি পৃথিব্যাঃ); এইভাবে অন্তরীক্ষস্থায়ী রাক্ষস ইত্যাদি হতে আমাদের পরিত্রাণ করুক (পরি অন্তরিক্ষাৎ); এইভাবে তৃণগুল্ম ইত্যাদি সস্তৃত সম্ভাব্য বিষ ইত্যাদি দোষ হতে আমাদের পরিত্রাণ করুক (পরি বীরুত্তভ্যঃ); এইভাবে অতীতকাল-সম্বন্ধী (ভূতাৎ) এবং ভবিষ্যকাল-সম্বন্ধী (ভব্যাৎ) প্রাণী সঞ্জাত ভীতি হতে আমাদের রক্ষা করুক। এইভাবে পূর্ব ইত্যাদি সকল দিকের সম্ভাবিত আতঙ্ক হতে জঙ্গিড়মণি আমাদের সংরক্ষণ করুক (দিশোদিশো জঙ্গিড়ঃ পাতু অম্মান)। ৪
দেবগণ কর্তৃক নিষ্পদিত (দেবকৃতাঃ) যে হিংসক পুরুষবর্গ (যে ঋষ্ণবঃ) আছে, অধিকন্তু মনুষ্য ইত্যাদি কর্তৃক প্রেরিত যে প্রতিবন্ধকতাসমূহ (যঃ অন্যঃ ববৃতে) আছে, সেই সবই এই সর্বরোগ ইত্যাদির পরিহারক (বিশ্বভেষজঃ) জঙ্গিড় মণি গতসামর্থ করে দিক (অরসা করৎ); অর্থাৎ দৈব-দুর্বিপাক বা রাক্ষস পিশাচ ইত্যাদির ভয় ও বিপক্ষীয় হিংসাপরায়ণ মনুষ্যগণ কর্তৃক আভিচারিক কর্মের দ্বারা সমূহ বিনাশের আশঙ্কা যেন জঙ্গিড়মণির তেজে বা প্রভাবে আমাদের স্পর্শ করতে না পারে। ৫
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –..তস্য জঙ্গিড়মণিবন্ধনে পূর্বসূক্তেন সহ উক্তে বিনিয়োগঃ ॥ (১৯কা. ৫অ, ২সূ.)।
টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি পূর্ব সূক্তের সাথে একই উদ্দেশ্যে অর্থাৎ জঙ্গিড়মণি বন্ধনে বিনিয়োগ করা হয় ৷ (১৯কা. ৫অ. ২সূ.)।
.
তৃতীয় সূক্ত : শতবারোমণিঃ
[ঋষি : ব্রহ্মা। দেবতা : শতবার। ছন্দ : অনুষ্টুপ।]
শতবারো অনীশদ যক্ষ্মান রক্ষাংসি তেজসা। আরোহন বচসা সহ মণিদুর্ণামচাতনঃ ॥১॥ শৃঙ্গাভ্যাং রক্ষো নুদতে মূলেন যাতুধান্যঃ। মধ্যেন যক্ষ্মং বাধতে নৈনং পাতি তত্রতি ॥ ২॥ যে যাসো অর্ভকা মহান্তো যে চ শব্দিনঃ। সর্বাং দুর্ণামহা মণিঃ শতবারো অনীনশৎ ॥ ৩৷৷ শতং বীরানজনয়চ্ছতং যক্ষ্মানপাবপৎ। দুর্ণাশ্নঃ সর্বান্ হত্বাব রক্ষাংসি ধূনুতে ॥৪॥ হিরণ্যশৃঙ্গ ঋষভঃ শাতবারো অয়ং মণিঃ। দুর্ণামঃ সর্বাংস্তৃত্বাব রক্ষাংস্যক্ৰমীৎ ॥৫৷৷ শতমহং দুর্ণাক্ষ্মীনাং গন্ধর্বারসাং শত। শতং শশ্বন্বতীনাং শতবারেণ বারয়ে ॥ ৬
বঙ্গানুবাদ –[শতবার বা শতং বারা অর্থে শতমূলী লতাবিশেষ, যা ওষধিরূপে বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শত শত মূলবিশিষ্ট হওয়ার কারণেই যে এর এই নাম, তা-ই নয়; শতসংখ্যক রোগ-নিবারক হওয়ার কারণেও এই ওষধিবিশেষের এই নাম। সেই শতবার নামক ওষধির বিকারভূত মণির কথা এখানে ব্যক্ত হয়েছে]–শতবারাত্মক মণি আপন তেজে বা মহিমায় (তেজসা) যক্ষ্মারোগ সমূহ (যক্ষ্মান) নিরন্তর নাশ করুক (অনীনশৎ)। দুর্ণাম নামক চর্মরোগের দোষনাশক এই মণি (দুর্ণামচাতনঃ মণিঃ) তেজঃ বা দীপ্তির সাথে (বচসা সহ) পুরুষের বাহু ইত্যাদি স্থানে অধিষ্ঠান করুক, অর্থাৎ মনুষ্যের বাহুতে কবচরূপে ধার্যমান হয়ে তার চর্মরোগ নাশ করুক। ১।
এই শতবার নামক ওষধি তার শৃঙ্গবৎ অবস্থিত (শৃঙ্গাভ্যাং) দুটি সূক্ষ্ম অগ্রভাগের বা শীষের দ্বারা রাক্ষসগণকে অন্তরীক্ষস্থান হতে অপসারিত করে থাকে (রক্ষো নুদতে); অধোভাগের অর্থাৎ মূলের দ্বারা নিশাচরীগণকে অপসারিত করে থাকে (যাতুধানীনুদতে); মধ্যভাগের অর্থাৎ কাণ্ডের দ্বারা সকল যক্ষ্মারোগ প্রতিবন্ধিত করে থাকে (যক্ষ্মং বাধতে)। এই হেন সকল ব্যাধির প্রতিবন্ধক শতবার মণিকে এই পাপ বা পাপী অতিক্রম করতে পারে না (পাপ্ল্যা ন অতি তত্রতি) বা উক্তবিধ মণিবিশিষ্ট পুরুষকে কোন পীড়া আক্রমণ করেত পারে না ॥ ২॥
উৎপন্নমাত্র (অর্ভকাঃ) যে প্রসিদ্ধ যক্ষ্মারোগ (যক্ষ্মাসঃ), আছে, সর্বতোভাবে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত (মহান্তঃ) যে যক্ষ্মারোগ আছে, দুরারোগ্য বলে শব্দ্যমান বা শব্দবন্ত (শব্দিনঃ) যে যক্ষ্মারোগ আছে, উক্ত লক্ষণযুক্ত সেই সকলকে দুর্ণাম রোগের হন্তা (দুর্ণামহা) এই শতবার মণি নিরন্তন নাশ করুক৷ ৩৷
এই ধার্যমান (ধারণ করা হয়েছে, এমন) মণি শত সংখ্যক পুত্র উৎপাদন করুক বা প্রদান করুক (বীরাঃ অজনয়ৎ); শত সংখ্যক যক্ষ্মা অর্থাৎ ব্যাধি বিনাশ করুক, (যক্ষ্মান্ অপাবপৎ); সকল চর্মদোষমূলক ব্যধি নাশ পূর্বক (সর্বান্ দুর্ণাম্বো হত্বা) রাক্ষসগণকে নিকৃষ্টভাবে অর্থাৎ যাতে তারা পুনরায় উদ্ভব হতে না পারে, তেমনভাবে, বিনাশ করুক (রক্ষাংসি অব ধুনুতে)। ৪৷
যার অগ্রভাগ হিরণ্যবৎ অবভাসিত অর্থাৎ সুবর্ণের ন্যায় দীপ্ত (হিরণ্যশৃঙ্গঃ), যা ওষধীসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ (ঋষভঃ), সেই হেন এই শাতবার নামক মণিবিশেষ সকল চর্মদোষমূলক ব্যাধি (দুর্ণাঃ) বিনাশ পূর্বক সকল হিংসাশীল (তৃদ্বা) রাক্ষসগণকে আক্রমণ করুক (রক্ষাংসি অব অক্রমীৎ) ৫
আমি দুর্ণান্নী নামক শত শত বিভিন্ন চর্মরোগ (যথা–ধবলরোগ, কুষ্ঠ, দাদ, ছুলি, পাঁচড়া ইত্যাদি) এই শতবার নামক মণির দ্বারা শত শত বার নিবারণ করছি (শতবারেণ বারয়ে)। এই মতো শত শত গন্ধর্ব ও অপ্সরাগণকে অর্থাৎ অন্তরীক্ষে সঞ্চারশীল অগণিত দেবযোনিবর্গ যারা মনুষ্যগণকে বলির নিমিত্ত অপহরণ করে, তাদের (শতং গন্ধর্ব অপ্সরসাং), এবং মুহুর্মুহুঃ পীড়নার্থে আগত গ্রহণি অর্থাৎ উদরভঙ্গ ও অপপ্যার অর্থাৎ মূর্ছা বা মৃগী ইত্যাদি ব্যাধিসমূহকে (শশ্বন্বতীনাং) শত শত বার (শতং) শতবার-নামক মণির দ্বারা নিবারণ করছি (শতরারেণ বারয়ে)। ৬।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— …তেন সন্ততিং কুলক্ষয়ে প্রযুঞ্জীত ইতি বিহিতায়াং সত্যাখ্যায়াং মহাশান্তেী শতবারং মণিং অভিমন্ত্র বধীয়াৎ। সূত্রিতং হি।–ইত্যাদি!! (১৯কা, ৫অ. ৩সূ.)।
টীকা— নক্ষত্রকল্পের সূত্রানুসারে (১৭, ১৯) উপযুক্ত সক্তটি সন্ততি নামক মহাশান্তি যাগে শতবার নামক ওষধির বিকার সম্ভুত মণির অভিমন্ত্রণে ও ধারণে প্রযুক্ত হয়ে থাকে। সূক্তের প্রথম মন্ত্রেই শতবার ওষধির পরিচয় দেওয়া হয়েছে ৷ (১৯কা, ৫অ. ৩সূ.)।
.
চতুর্থ সূক্ত : বলপ্রাপ্তিঃ
[ঋষি : অথর্বা। দেবতা : অগ্নি। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, পংক্তি, বৃহতী, উষ্ণিক।]
ইদং বর্চো দত্তমাগ ভর্গো যশঃ সহ ওজো বয়ো বল। ত্রয়স্ত্রিংশদ যানি চ বীর্যাণি তান্যগ্নিঃ প্ৰ দদাতু মে ॥১॥ বর্চ আ ধেহি মে তাং সহ ওজো বয়ো বল। ইন্দ্রিয়ায় ত্বা কর্মণে বীর্যায় প্রতি গৃহূমি শতশারদায় ২ঊর্জে ত্বা বলায় ত্বৌজসে সহসে ত্বা। অভিভূয়ায় ত্বা রাষ্ট্রভৃত্যায় পর্যহামি শতশারদায় ॥ ৩৷৷ ঋতুভ্যষ্টার্তবেভ্যো মাদ্ভ্যঃ সম্বৎসরেভ্যঃ। ধাত্রে বিধাত্রে সমৃধে ভূতস্য পতয়ে যজে॥৪
বঙ্গানুবাদ –অগ্নিদেব কর্তৃক সমর্পিত ইদানীং বা এই তেজঃ বা দীপ্তি আমার মধ্যে আগত হোক (আ অগন)। এইভাবে তেজঃ (ভর্গঃ), কীর্তি (যশঃ), পরাভিভাবুক তেজঃ (সহঃ), ওজঃ (শরীরস্থ ওজস্ নামক অষ্টম ধাতু), নিত্যযৌবন (বয়ঃ), অপরকে পরাভবক্ষম সামর্থ্য (বল) ইত্যাদি আমার পক্ষে লব্ধ হোক। অধিকন্তু, ত্রয়স্ত্রিংশ (তেত্রিশ) সংখ্যক যে বীর্যসমূহ আছে, সেগুলি অগ্নিদেব আমাকে প্রদান করুন (মে অগ্নিঃ প্ৰ দদাতু)। ১।
হে অগ্নি! আমার দেহে তোমার শত্রু-হনন তেজঃ, পরাভিভাবুক তেজঃ, ওজঃ, নিত্যযৌবন ও অপরকে পরাভবক্ষম সামর্থ্য স্থাপন করো (আ ধেহি)। জ্ঞানেন্দ্রিয় ও কর্মেন্দ্রিয়ের দৃঢ়তার নিমিত্ত, হে হিরণ্য ইত্যাদি প্রতিগৃহ্যমাণ পদার্থ। তোমাকে স্বীকার করছি (ত্বা প্রতি গৃহূমি)। কেবল ইন্দ্ৰয়সামর্থ্যের নিমিত্তই নয়, অধিকন্তু অগ্নিহোত্র ইত্যাদি লক্ষণান্বিত কর্মসিদ্ধির নিমিত্ত (কর্মণে), বীর্যের দ্বারা শত্ৰুজয় ইত্যাদির সিদ্ধির নিমিত্ত (বীর্যায়) এবং শত সম্বৎসর জীবন লাভের নিমিত্ত (শতশারদায়) তোমাকে স্বীকার করছি। ২
হে প্রতিগ্রহবিষয়ভূত পদার্থ! তোমাকে অন্নলাভের নিমিত্ত প্রতিগ্রহ করছি (ত্বা ঊর্জে)। এইবাবে শরীরসামর্থ্যের নিমিত্ত (বলায়), শরীরস্থ ওজস্ নামক অষ্টম ধাতুর নিমিত্ত (ওজসে), শত্রুজয়ের প্রয়োজনে (অভিভূয়ায়), রাজ্যভরণের অর্থাৎ রাষ্ট্রপরিচালনের প্রয়োজনে (রাষ্ট্রভৃত্যায়) এবং শতসম্বৎসর পর্যন্ত জীবন যাপনের নিমিত্ত তোমাকে প্রতিগ্রহ করছি (শতশারদায় পরি ঊহামি)। ৩৷৷
হে পদার্থ। গ্রীষ্ম ইত্যাদি ঋতুসমূহের প্রীতির নিমিত্ত তোমাকে সঙ্গত করছি বা দান করছি (ঋতুভ্যঃ যজে)। এইভাবে ঋতুসম্বন্ধী দেবতাগণের উদ্দেশে (আর্তবেভ্যঃ), তথা চৈত্র ইত্যাদি দ্বাদশসংখ্যক মাসের অভিমানী দেবতাগণের উদ্দেশে (মাদ্ভঃ), তথা সম্বৎসরের অভিমানী দেবতাগণের উদ্দেশে (সম্বৎসরেভ্যঃ), তথা স্রষ্টার উদ্দেশে (ধাত্রে), তথা বিবিধ ভূতজাতের কর্তার উদ্দেশে (বিধাত্রে), তথা জাত প্রাণীর সম্যক্ বৃদ্ধিসাধক দেবতার উদ্দেশে (সমৃধে), তথা উৎপন্ন পদার্থসমূহের পালক (ভূতস্য পতয়ে) দেবতার উদ্দেশে তোমাকে সঙ্গত করছি বা দান করছি৷৷ ৪৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— ইদং বর্চ ইতি চতুর্থং সূক্তং৷৷ (১৯কা. ৫অ. ৪সূ.)।
টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি বলপ্রাপ্তি নামে অভিহিত। এই সূক্তটি অগ্নির উদ্দেশে তেজঃ, যশঃ, ওজঃ ইত্যাদি দুর্লভ পদার্থ সমুদায়ের প্রার্থনায় বিনিযুক্ত হয়ে থাকে ৷ (১৯কা, ৫অ. ৪সূ.)।
.
পঞ্চম সূক্ত : যক্ষ্মনাশনম
[ঋষি : অথর্বা। দেবতা : গুলগুল বা গু্লগুলু বা গুগ্গুল। ছন্দ : অনুষ্টুপ, উষ্ণিক।]
ন তং যক্ষ্মা অরুন্ধতে নৈনং শপথো অশ্রুতে। যং ভেষজস্য গুন্ডুলোঃ সুরভির্গন্ধো অশ্রুতে১৷ বিম্বঞ্চস্তমাদ যক্ষ্মা মৃগা অশ্বা ইবেরতে। যদ গুলু সৈন্ধবং যদ বাপ্যাসি সমুদ্রিয়ম্ ॥ ২॥ উভয়োরগ্রভং নামাম্মা অরিষ্টতাতয়ে ॥ ৩৷৷
বঙ্গানুবাদ –সেই রাজাকে (তং) যক্ষ্মা ব্যাধি অবরুদ্ধ করতে পারে না (ন অরুন্ধতে) অর্থাৎ পীড়িত করতে পারে না এবং কোন পরকৃত অভিশাপ ব্যাপ্ত বা স্পর্শ করতে পারে না (শপথঃ নৈনং অণুতে), যে রাজাকে (যং) ভেষজব্দপ গুগগুলের ঘ্রাণসন্তর্পক গন্ধ (সুরভিঃ গন্ধঃ) ব্যাপ্ত করে থাকে (অণুতে)। ১
ভেষজরূপ গুলের গন্ধ আঘ্রাতবান ব্যক্তি বা রাজার নিকট হতে (তস্মাৎ) যক্ষ্মাব্যাধি নানা দিক্-অভিমুখে বেগে ধাবিত হয় (বিম্বঞ্চঃ ঈরতে); (কেমন বেগে?–না) আশুগামী অশ্ব কিংবা দ্রুতধাবী মৃগের মতো (মৃগা অশ্ব ইব)। গুগুল ঔষধ যদি (যুৎ) সিন্ধুদেশজাত হয়, অথবা যদি সমুদ্ৰোদ্ভব হয় (সৈন্ধবং যৎ বা অপি অসি সমুদ্রিয়) ২
তবে, হে গুগুল! উভয়বিধ স্বরূপসম্পন্ন তোমার নাম (উভয়েঃ নাম) আমি গ্রহণ বা কীর্তন করছি (অগ্রভং)। (কি জন্য?-না) প্রবর্তমান অরিষ্ট অর্থাৎ ব্যাধি পরিহারের জন্য বা দ্বেষ্যগণের বিনাশের জন্য৷ ৩৷৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ন তং যক্ষ্মাঃ ইতি পঞ্চমং সূক্তং। তস্য ঐতু দেবঃ ইতি উক্তসূক্তস্য চ পুরোহিতকর্তব্যে রাত্রৌ রাজ্ঞঃ শয্যাগৃহপ্রবেশনকর্মণি গুগগুলুধূপং কুষ্ঠৌষধিধূপং চ দদ্যাৎ।–ইত্যাদি। (১৯কা, ৫অ. ৫সূ.)।
টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি এবং পরবর্তী সূক্তটি রাত্রে রাজার শয্যাগৃহে প্রবেশ কর্মে পুরোহিত কর্তৃক গুগুল-ধূপ ও কুষ্ঠৌষধি-ধূপ প্রদানে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। গুগুল হলো স্বনামখ্যাত গন্ধনির্যাস এবং কুষ্ঠ হলো এক ওষধিবিশেষের নাম। কেউ কেউ কুষ্ঠ অর্থে কুটজ নির্দেশ করেন। কুটজ হলো গিরিমল্লিকা। রাত্রে রাজার শয্যাগৃহে প্রবেশকর্মে পুরোহিতের আরও কর্তব্য বিষয়ও ইতিপূর্বে কথিত হয়েছে। পিষ্টময় রাত্রির প্রসঙ্গত ইতিপূর্বে উল্লেখিত হয়েছে।–উপযুক্ত সূক্তের বিনিয়োগ প্রসঙ্গে পরিশিষ্টে (৪৪) বলা হয়েছে…এহ্যানং আ তিষ্ঠ (২কা, ১৩সূ. ৪ মন্ত্র) ইতি পঞ্চমীং অধিষ্ঠাপয়েৎ। ন তং যক্ষ্মা (উপযুক্ত সূও) ঐতু দেবঃ (পরবর্তী সূক্ত) ইতি গুগুলু (কুষ্ঠ) ধূপং দদ্যাৎ।–ইত্যাদি ৷ (১৯কা, ৫অ. ৫সূ.)।
.
ষষ্ঠ সূক্ত : কুষ্ঠনাশনম্
[ঋষি : ভৃগ্ব্বঙ্গিরা। দেবতা : কুষ্ঠ। ছন্দ : অনুষ্টুপ, জগতী, শক্করী, অষ্টি প্রভৃতি ]
ঐতু দেবস্ত্ৰায়মাণঃ কুষ্ঠো হিমবতস্পরি। তত্মানং সর্বং নাশয় সর্বাশ্চ যাতুধান্যঃ ॥১॥ ত্রীণি তে কুষ্ঠ নামানি নদ্যমায়রা নদ্যারিষঃ।। নদ্যায়ং পুরুষো রিষৎ। যস্মৈ পরিব্রবীমি ত্বা সায়ম্প্রতরণো দিবা ॥ ২॥ জীবলা নাম তে মাতা জীবন্তো নাম তে পিতা। নদ্যায়ং পুরুষো রিষৎ। যস্মৈ পরিব্রবীমি ত্বা সায়তরথো দিবা ॥ ৩॥ উত্তমো অস্যোষধীনামনড়ান জগতামিব ব্যাঘ্রঃ শ্বপদামিব। নদ্যায়ং পুরুষো রিষৎ। যস্মৈ পরিব্রবীমি ত্বা সায়তরথো দিবা ॥ ৪ ত্রিঃ শাম্বুভ্যো অঙ্গিরেভ্যস্ত্রিরাদিত্যেভ্যস্পরি। ত্রির্জাতে বিশ্বদেবেভ্যঃ। স কুষ্ঠো বিশ্বভেষজঃ। সাকং সসামেন তিষ্ঠতি। তত্মানং সর্বং নাশয় সর্বাশ্চ যাতুধান্যঃ ॥৫॥ অশ্বত্থা দেবসদনস্তৃতীয়স্যামিতে দিবি। তত্রামৃতস্য চক্ষণং ততঃ কুষ্ঠো অজায়ত। স কুষ্ঠো বিশ্বভেষজঃ সাকং সোমেন তিষ্ঠতি। তত্মানং সর্বং নাশয় সর্বাশ্চ যাতুধান্যঃ ॥ ৬৷৷ হিরণ্যয়ী নৌরচরদ্ধিরণ্যবন্ধনা দিবি। তত্রামৃতস্য চক্ষণং ততঃ কুষ্ঠো অজায়ত। সকুষ্ঠো বিশ্বভেষজঃ সাকং সোমেন তিষ্ঠতি। তক্মানং সর্বং নাশয় সর্বাশ্চ যাতুধান্যঃ ॥৭॥ যত্র নাবপ্রভ্রংশনং যত্র হিমবতঃ শিরঃ। তত্রামৃতস্য চক্ষণং ততঃ কুষ্ঠো অজায়ত। স কুষ্ঠো বিশ্বভেষজঃ সাকং সোমেন তিষ্ঠতি। তত্মানং সর্বং নাশয় সর্বাশ্চ যাতুধান্যঃ ৮ যং ত্বা বেদ পর্ব ইহ্মাকো যং বা ত্বা কুষ্ঠ কাম্য। যং বা বসো যমাৎস্যস্তেনাসি বিশ্বভেষজঃ ॥৯৷৷ শীর্ষলোকং তৃতীয়কং সদন্দির্যশ্চ হায়নঃ। তত্মানং বিশ্বধাৰীৰ্যাঞ্চং পরা সুব ॥১০৷
বঙ্গানুবাদ –দ্যুলোকে উৎপন্ন বা অতিশয় বীর্যে দ্যোতমান (দেবঃ) কুষ্ঠ নামক ঔষধিবিশেষ (কুষ্ঠঃ) হিমবান্ বা হিমালয় নামক পর্বত হতে (হিমবতঃ পরি) আমাদের রক্ষাকারীরূপে আগমন করুক (ত্রায়মাণঃ আ এতু)। হে কুষ্ঠ নামক ঔষধিবিশেষ! তুমি ক্লেশকারী সকল রোগবিশেষকে নাশ করো (তত্মানং নাশয় সর্বং)। অধিকন্তু, সকল যাতুধানীর, অর্থাৎ যাতনাদায়িনী রাক্ষসীবর্গের নিধন সাধিত করো (সর্বাঃ চ যাতুধান্যঃ নাশয়) ॥১।
হে কুষ্ঠ! তোমার. তিনটি নাম অত্যন্ত রহস্যময়। একটি নাম নদ্যমার, অর্থাৎ নদী ইত্যাদির জলদোষ হতে উদ্ভূত ব্যাধির নাশক। দ্বিতীয় নাম নদ্যারিষ, অর্থাৎ জলের অনিষ্টসূচক উৎপাতের বিনাশক। তৃতীয় নাম কেবল নদ, অর্থাৎ জলের মারক শক্তির নিবারক। হে নদ্য (অর্থাৎ কুষ্ঠাখ্য ঔষধি)! তোমার নাম গ্রহণের অভাবে এই ব্যাধিগ্রস্ত পুরুষ হিংসিত বা বিনষ্ট হতে পারে (রিষৎ); অতএব ব্যাধিতরক্ষক তোমার সম্যক কথিত নাম। এইজন্য তোমার নাম তিনটির দ্বারা অভিধীয়মান মন্ত্ররূপ নাম এই রোগাৰ্ত ব্যক্তির নিকট (ত্ব যস্মৈ) সকাল-সন্ধ্যায় (সায়ং প্রাতঃ) এবং অধিকন্তু মধ্যাহ্নে (দিবা) উচ্চারণ করছি এই (পরিব্রবীমি)। ২।
হে কুষ্ঠাখ্য ঔষধি! তোমার মাতার নাম (তে মাতা নাম) জীবলা, অর্থাৎ জীবয়িত্রী বা জীবনপ্রদায়িণী; এবং তোমার পিতার নাম (তে পিতা নাম) জীবন্ত, অর্থাৎ রোগ ইত্যাদি পরিহারের দ্বারা বসন্তের ন্যায় জীবনপ্রদায়ক। হে নদ্য! তোমার নাম গ্রহণের অভাবে এই ব্যাধিগ্রস্ত পুরুষ বিনষ্ট হতে পারে; অতএব ব্যাধিতরক্ষক তোমার সম্যক্ কথিত নাম। এই জন্য তোমার নাম তিনটির দ্বারা অভিধীয়মান মন্ত্ররূপ নাম এই রোগাৰ্ত ব্যক্তির নিকট সকাল-সন্ধ্যায় এবং অধিকন্তু মধাহ্নে বা সমগ্র দিবাব্যাপী উভয় সন্ধ্যায় উচ্চারণ করছি ৷৷ ৩৷
হে কুষ্ঠ! তুমি ব্যাধিহরণকারী ওষধিগণের মধ্যে উৎকৃষ্টতম (উত্তমঃ অসি ওষধীনা)। (দৃষ্টান্ত কি?–না) গম্যমান প্রাণীদের মধ্যে ভারবহনসমর্থ বলদ যেমন উত্তম (অনড়ান্ জগতাংইব), অর্থাৎ আপন শরীর পীড়নেও লোকের উপকারত্বের কারণে বলদ যেমন শ্রেষ্ঠ, তুমিও সর্বপ্রাণীর উপভোগ সাধনত্বের দ্বারা শ্রেষ্ঠ। অতিক্রুর বীর্যবান্ ব্যাঘ্র যেমন হিংস্র জন্তুগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ (ব্যাঘ্রঃ শ্বপদাম্ ইব), তুমিও তেমনই আপন অতুলনীয় তেজঃপ্রভাবে উৎকৃষ্টতম। হে নদ! তোমার নাম গ্রহণের অভাবে এই ব্যাধিগ্রস্ত পুরুষ হিংসিত বা বিনষ্ট হতে পারে; অতএব ব্যাধিতরক্ষক তোমার সম্যক্ কথিত নাম। এইজন্য তোমার নাম তিনটির দ্বারা অভিধীয়মান মন্ত্ররূপ নাম এই রোগার্ত ব্যক্তির নিকট সকাল সন্ধ্যায় এবং মধ্যাহ্নে বা সমগ্র দিব্যাপী উভয় সন্ধ্যায় উচ্চারণ করছি। ৪
যে কুষ্ঠাখ্য ঔষধি অঙ্গিরাগণের অপত্যভূত শাস্তু নামক মহর্ষিগণের দ্বারা তিন লোকের উপকারের নিমিত্ত অথবা ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য বর্ণত্রয়ের নিমিত্ত ভূমিস্থানে অর্থাৎ পৃথিবীতে তিনবার উৎপন্ন হয়েছে (ত্রিঃ শাম্বুভ্য অঙ্গিরেভ্য ত্রিজাত), তথা অদিত্যবর্গের দ্বারা দ্যুলোকে তিনবার ত্রিজননপ্রয়োজনে উৎপন্ন হয়েছে (ত্রিঃ আদিত্যেভ্যঃ পরি ত্রিজাত), এই মতো বিশ্বদেবগণের দ্বারা মধ্যস্থানে অর্থাৎ অন্তরিক্ষলোকে তিনবার উৎপন্ন হয়েছে (বিশ্বদেবেভ্য ত্রিঃ জাতঃ), সেই হেন কুষ্ঠ নামক ঔষধিবিশেষ সকল রোগের ভৈষজ্যরূপ অর্থাৎ সর্বরোগ-শমনের সামর্থ্যধারী (বিশ্বভেষজঃ)। সে পূর্বে কোনস্থানে সোমের সাথে অবস্থান করেছিল (স সাক সোমেন তিষ্ঠতি), অর্থাৎ সোমের সমান বীর্যত্বসম্পন্ন ছিল। হে কুষ্ঠাখ্য ঔষধি! নানাভেদভিন্ন (সর্বং) রোগ নাশ করো (তত্মানং নাশয়), তথা সকল যাতুধানীগণকে নিপাতিত করো (সর্বাশ্চ যাতুধান্যঃ–যাতুধানীনাশয়) ॥ ৫॥
এই ভূলোক হতে তৃতীয় দ্যুলোকের দেবসদনে, অর্থাৎ দেবগণের আবাসস্থানভূত অশ্বত্থ অবস্থান করছে (ইতঃ তৃতীয়স্যাং দিবি দেবসদনঃ অশ্বত্থঃ। (অগ্নি অশ্বরূপে সেই স্থলে অবস্থান করার কারণে অশ্বত্থ নাম সম্পন্ন হয়েছে) তত্র অর্থাৎ সেই অশ্বথে অমরণ-ধর্মক (অর্থাৎ অমৃতময়) সোমের প্রকাশন (অমৃতস্য চক্ষণ) বিদ্যমান। [ অশ্বত্থ শব্দের দ্বারা আদিত্য-ও বোঝায়; কারণ ছান্দোগ্য উপনিষদে (৩।৬,৩) আদিত্যে অমৃতের অবস্থান বলা হয়েছে]। ততঃ অর্থাৎ সেই অশ্বথ হতে কুষ্ঠাখ্য ঔষধি উৎপন্ন হয়েছে (অজায়ত)। সেই হেন কুষ্ঠ নামক ঔষধিবিশেষ সকল রোগের ভৈষজ্যরূপ। সে পূর্বে কোনস্থানে সোমের সাথে অবস্থান করেছিল। হে কুষ্ঠাখ্য ঔষধি! নানাভেদভিন্ন রোগ নাশ করো, তথা সকল যাতুধানীকে নিপাতিত করো ৷ ৬ ৷
দ্যুলোকে হিরণ্যনির্মিত (দিবি হিরণ্যয়ী) তথা হিরণ্যময় শঙ্কু অর্থাৎ শল্যাস্ত্র, পাশ অর্থাৎ রজ্জবৎ অস্ত্র ইত্যাদির দ্বারা বদ্ধ, (হিরণ্যবন্ধনা) নৌকা সদা ভ্রমণ করে থাকে (নৌঃ অচরৎ)। সেই স্থানে অমৃতের প্রকাশন বিদ্যমান। সেই স্থান হতে অমৃতত্ব-সাধনধর্মা কুষ্ঠাখ্য ঔষধি উৎপন্ন হয়েছে (কুষ্ঠঃ অজায়ত)। সেই হেন কুষ্ঠ নামক ঔষধিবিশেষ সকল রোগের ভৈষজ্যরূপ। সে পূর্বে কোনস্থানে সোমের সাথে অবস্থান করেছিল। হে কুষ্ঠাখ্য ঔষধি! নানাভেদভিন্ন রোগ নাশ করো, তথা সকল যাতুধানীকে নিপাতিত করো ৷৷ ৭৷
যত্র অর্থাৎ যে দ্যুলোকে সৎকর্মকারীগণের অধোমুখী হয়ে পতন ঘটে না (ন অবভ্রংশ), সেই স্থানে হিমালয় পর্বতের শিখর অবস্থিত (যত্র হিমবতঃ শিরঃ)। (হিমালয়ের শিরঃপ্রদেশ স্বর্গভূমি বলে প্রসিদ্ধ)। সেই স্থলে অমৃতের প্রকাশন হয়ে থাকে এবং সেই স্থানেই কুষ্ঠাখ্য ঔষধির উৎপত্তি। সেই হেন কুষ্ঠ নামক ঔষধিবিশেষ সকল রোগের ভৈষজ্যরূপ। সে পূর্বে কোন স্থানে সোমের সাথে অবস্থান করেছিল। হে কুষ্ঠাখ্য ঔষধি! নানাভেদভিন্ন রোগ নাশ করো, তথা সকল যাতুধানীকে নিপাতিত করো ॥ ৮।
হে কুষ্ঠাখ্য ঔষধি! যেহেতু (যং) তোমাকে প্রাচীন ইক্ষাকু রাজা সর্বব্যাধির হন্তা বলে জ্ঞাত হয়েছিলেন (বেদ), যেহেতু হে কুষ্ঠ! তোমাকে কাম্য অর্থাৎ কামের পুত্র সবৌষধিরূপে জ্ঞাত হয়েছিলেন, এবং যেহেতু তোমাকে যমের আস্য বা বদনের ন্যায় বদনশালী বসঃ নামক দেব জ্ঞাত হয়েছিলেন (বসঃ যম্ আৎস্যঃ), সেই কারণে তুমি সকল ব্যাধির নির্মোচক অর্থাৎ সকল ভেষজাত্মক (বিশ্বভেষজঃ অসি) ॥ ৯।
হে কুষ্ঠ! ভূলোক অপেক্ষা দুলোক নামক তৃতীয় লোক তোমার শির বলে কথিত (তৃতীয়কম্ শীর্যলোক)। (দ্যুলোকে প্রথম ভূমিষ্ঠ হলেও তৃতীয় লোক পর্যন্ত কুষ্ঠৌষধির ব্যাপ্তি)। কালব্যাপী তোমার অবস্থান অর্থাৎ সর্ব কালই তোমাকে অবলম্বন করে বিরাজিত (যঃ চ হায়নঃ)। (সে কীরকম? না–) সদন্দি, অর্থাৎ তুমি সদা রোগসমূহের খণ্ডয়িতা বা নিবারক। এই হেন মহিমোপেত তুমি সর্বতোব্যাপ্ত (বিশ্বধাবীর্যং) রোগসমূহকে (তত্মানং) অধঃপাতিত করে নিকৃষ্ট স্থানে প্রেরণ করো (অধরাঞ্চং পরা সুব), অর্থাৎ নাশ করো। ১০।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ঐতু দেবঃ ইতি ষষ্ঠং সূক্তং। অস্য রাত্রীকল্পে কুষ্ঠধূপপ্রদানে পূর্ব সূক্তসময় উক্তঃ ৷ (১৯কা, ৫ম, ৬সূ.)।
টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি রাত্রিকল্পে কৃষ্ঠধূপ প্রদানে পূর্ব সূক্তের সাথে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে ৷ (১৯কা. ৫অ. ৬সূ.)।
.
সপ্তম সূক্ত : মেধা
[ঋষি : ব্রহ্মা। দেবতা : বৃহস্পতি, বিশ্বদেবগণ। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ, বৃহতী, গায়ত্রী।]
যন্মে ছিদ্রং মনসো যচ্চ বাচঃ সরস্বতী মমন্তং জগাম। বিশ্বৈস্ত দেবৈঃ সহ সম্বিদানঃ সং দধাতু বৃহস্পতিঃ ॥১॥ মা ন আপো মেধাং মা ব্রহ্ম প্র মথিষ্টন। সুষ্যদা যূয়ং স্যন্দধ্বমুপহুতোহহং সুমেধা বৰ্চস্বী॥ ২॥ মা নো মেধাং মা নো দীক্ষাং মা নো হিংসিষ্টং যৎ তপঃ। শিবা নঃ শং সন্ত্ৰায়ুষে শিবা ভবন্তু মাতরঃ ॥ ৩৷৷ মা নঃ পীপরদখিনা জ্যোতিষ্মতী তমস্তিরঃ। তামম্মে রাসতামিষম ॥৪॥
বঙ্গানুবাদ –আমার মনের যজ্ঞ-দান-ধ্যান ইত্যাদি ব্যাপারের (মে: মনসঃ) যে ছিদ্র বা ছেদ আছে (যৎ ছিদ্র) অর্থাৎ ত্রুটি আছে; তথা মন্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে যে ত্রুটি আছে (যৎ চ বাচঃ); তথা আমাদের মানসিক ধর্মসভৃত যে ক্রোধ বাক্যের মাধ্যমে ক্ষরিত হয়ে (সরস্বতী মনুমন্ত) আমাদের পরিত্যাগ পূর্বক অন্যত্র গমন করেছে (জগাম), অর্থাৎ সেই মানসিক বাক্যের ক্রটি অবশ্য সন্ধাতব্য; উক্ত লক্ষণান্বিত সকল ত্রুটি মন্ত্রসমূহের বা বেদের পালক দেবতা বৃহস্পতি ইন্দ্র প্রমুখ দেববর্গের সাথে (বিশ্বৈঃ দেবৈঃ সহ) ঐকমত্য প্রাপ্ত হয়ে সন্ধান বা সংযুক্ত করুন (সন্ধিদানঃ সং দধাতু), অর্থাৎ সংশোধন করে দিন। (কেবল বৃহস্পতির দ্বারাই ছিদ্র বা ত্রুটি সন্ধান সম্ভব নয়, তাই অপরাপর সকল দেবতার আনুকূল্য অর্থাৎ ঐকমত্য আশা করা হচ্ছে)। ১।
হে জলদেবতাগণ (আপো)! তোমরা আমার অধীত বেদ ইত্যাদির ধারয়িত্ৰী বুদ্ধি ভ্রংশ করো না (মেধাং মা প্র মথিষ্টন); তথা আমার অধীত বেদ (ব্রহ্ম) ভ্রংশ করো না। অধিকন্তু আমার সম্বন্ধিত যে যে কর্ম বিশুষ্কতা প্রাপ্ত হয়েছে (শুষ্যৎ) সেই সেই কর্ম অভিলক্ষ্য করে তোমরা সর্বতো প্রবাহিত হও, অর্থাৎ আর্দ্র করো (আ স্যন্দধ্বং)। (বক্তব্য এই যে, আমার ত্রুটির ফলে যে যজ্ঞকর্মসমূহ বিফলতা লাভ করেছে, সেইগুলিকে সংশোধিত করে ফলপ্রদায়ী করো)। তোমাদের দ্বারা অনুগৃহীত আমি (উপহূতঃ অহং)। উত্তম ধারয়িত্ৰী বুদ্ধি (সুমেধাঃ) লাভ করবো, অর্থাৎ আমার মেধা ভ্ৰংশিত না হয়ে, যেন সুমেধা লাভ করি। তথা আমি ব্ৰহ্মতেজ লাভ করবো অর্থাৎ আমার মেধা ভংশিত না হয়ে যেন সুমেধা লাভ করি। তথা ব্রহ্মতেজ লাভ করবো (বৰ্চস্বী), অর্থাৎ আমার অধীত বেদ ভংশিত না হয়ে যেন ব্রহ্মতেজের সাথে যুক্ত হয় ॥ ২॥
হে দ্যাবাপৃথিবী! তোমরা আমাদের অধীত-ধারণবুদ্ধি (মেধাং) বিনষ্ট করো না (মা নঃ হিংসিষ্টম)। তথা নবনীতের দ্বারা আমাদের অঙ্গমর্দন, মুষ্টীকরণ, বাসযেমন, দণ্ড-মেখলা ইত্যাদি ধারণসাধ্য সংস্কারের (দীক্ষা) প্রতি হিংসান্বিত হয়ো না। এই রকম, আমাদের পয়োব্রত ইত্যাদিরূপ ক্লেশসহনাত্মক যে তপস্যা (যৎ তপঃ), তার প্রতি হিংসান্বিত হয়ে না; অর্থাৎ বিনাশ করো না। তথা জলদেবীগণ মঙ্গলকারিণী হয়ে (শিবাঃ) আমাদের আয়ুর অভিবৃদ্ধির নিমিত্ত আমাদের প্রশংসা করুন (নঃ শম্ সন্তু আয়ুষে)। তথা মাতৃবৎ হিতকারিণী বা জগতের নির্মাণকী মাতৃগণ (মাতরঃ) মঙ্গলদায়িনী হোন (শিবাঃ ভবন্তু) ৷ ৩৷৷
হে অশ্বিনী কুমারযুগল (অশ্বিনা)! সবকিছুর আবরক, অর্থাৎ সকল আচারবিচারের প্রতিবন্ধক অন্ধকার (তমঃ), যেন আমাদের আচ্ছন্ন করতে না পারে (মা পীপরৎ); কিন্তু সকল আচার বিচারের অনুকূল প্রকাশোপেতা রাত্রি (জ্যোতিষ্মতী) সেই অন্ধকারকে তিরস্কার করুক (তিরঃ), অর্থাৎ দূর করে দিক। সেই হেন (তাং) সকলের আকাঙ্ক্ষিত (ইষং) রাত্রি আমাদের (অস্মে) প্রদান করো (রাসতাম রাথাং )। (অর্থান্তরে ইষ শব্দে সকলের ইষ্যমাণ অর্থাৎ কামনীয় অন্ন বোঝায়। জ্যোতিষ্মতী অর্থে। প্রকাশবতী অর্থাৎ লোকে অন্নযুক্তের প্রকাশ বোঝায়। অথবা তমঃ হলো দারিদ্র্যের নাম, তির, শব্দে তাহলে সব কিছুর তিরোধায়ক বুঝতে হবে) ৪
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –…তস্য পবিত্ৰনাশনিমিত্তপ্রায়শ্চিত্তে আজ্যহোমে বিনিয়োগঃ। তৎ উক্তং পরিশিষ্টে সমুচ্চয়প্রায়শ্চিত্তপ্রকরণে।–ইত্যাদি৷৷ (১৯কা, ৫ম, ৭সূ.)।
টীকা –পবিত্র অর্থাৎ অর্ঘপাত্র বা উপবীত বা বেদমন্ত্র ইত্যাদির কোন হানি ঘটলে প্রায়শ্চিত্তকরণে। যে আজ্যহোমের প্রয়োজন হয়, তাতে এই সূক্ত মন্ত্রগুলি বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। পরিশিষ্টের সমুচ্চয়প্রায়শ্চিত্ত প্রকরণে এর নির্দেশ আছে। এইরকমে, হাত হতে উপয়ামের স্থলনেও আজ্যহোমে এই সূক্তের বিনিয়োগ হয়ে থাকে (প. ৩৭।১৪)। শাখান্তরে চতুর্থ মন্ত্রটিতে যা নঃ পীপরৎ পাঠান্তর পাওয়া যায় (ঋ. ১।৪৬।৬) ৷ (১৯কা, ৫অ. ৭সূ.)।
.
অষ্টম সূক্ত : রাষ্ট্রং বলমোজশ্চ
[ঋষি : ব্রহ্মা। দেবতা : তপঃ। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ।]
ভদ্রমিচ্ছন্ত ঋষয়ঃ স্বর্বিদস্তপো দীক্ষামুপনিষেদুরগ্রে। ততো রাষ্ট্রং বলোজশ্চ জাতং তদস্মৈ দেবা উপসন্নমন্তু ॥১॥
বঙ্গানুবাদ –পূর্বে সৃষ্টির আদিতে (অগ্রে) অতীন্দ্রিয়ার্থদ্রষ্টা ঋষিগণ (ঋষয়ঃ) মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী হয়ে (ভদ্রম্ ইচ্ছন্তঃ) স্বর্গলাভের উদ্দেশে তার সাধনের নিমিত্ত পয়োব্রত ইত্যাদি লক্ষণান্বিত তপস্যা (তপঃ), নবনীতাভ্যঙ্গ-মুষ্টীকরণ- বাক্সংযম-দণ্ডমেখলা ইত্যাদি ধারণ ইত্যাদি দীক্ষা প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তারই ফলস্বরূপ রাজ্য (রাষ্ট্র), বল (সামর্থ্য) ও ওজঃ (তেজ) নিষ্পন্ন হয়েছিল (জাতং)। দেবগণ সেগুলি এই পুরুষে (অস্মৈ) উপনীত করেছিলেন (উপসন্নমন্তু), অর্থাৎ এই পুরুষের মধ্যে সংযোজিত করেছিলেন ॥ ১৷৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ভদ্রমিচ্ছন্তঃ ইত্যেত অষ্টমং সূক্তং একর্ডং। তৎ পাঠস্তু৷৷ (১৯কা, ৫অ. ৮সূ.)।
টীকা— উপযুক্ত একটি ঋক্ সম্বলিত সূক্তটি প্রাচীনতম ঋষিবর্গের সাধনা ও তার ফলস্বরূপ সিদ্ধিপ্রাপ্তির বিষয় কথিত হয়েছে। এটি পূর্ব সূক্তের সাথে বিনিযুক্ত হয় ৷ (১৯কা. ৫অ. ৮.)।
.
নবম সূক্ত : ব্ৰহ্মযজ্ঞঃ
[ঋষি : ব্রহ্মা। দেবতা : ব্রহ্ম। ছন্দ : অনুষ্টুপ, পংক্তি, ত্রিষ্টুপ, জগতী।]
ব্রহ্ম হোতা ব্রহ্ম যজ্ঞা ব্ৰহ্মণা স্বরবো মিতাঃ। অধ্বষুব্রহ্মণণা জাত ব্ৰহ্মণোহন্তর্হিতং হবিঃ ॥১॥ ব্ৰহ্ম সুচো ঘৃতবতীব্ৰহ্মণা বেদিরুদ্ধিতা। ব্রহ্ম যজ্ঞস্য তত্ত্বং চ ঋত্বিজো যে হবিষ্কৃতঃ। শমিতায় স্বাহা ॥ ২॥ অংহোমুচে প্র ভরে মনীষামা সুত্রাবণে সুমতিমাবৃণানঃ। ইমমিন্দ্র প্রতি হব্যং গৃভায় সত্যাঃ সন্তু যজমানস্য কামাঃ # ৩ অংহোমুচং বৃষভং যজ্ঞিয়ানাং বিরাজন্তং প্রথমমধ্বরাণা। অপাং নপাতমনা হুবে ধিয় ইন্দ্রিয়েণ ত ইন্দ্রিয়ং দত্তমোজঃ ॥৪॥
বঙ্গানুবাদ— ব্রহ্মই, অর্থাৎ জগতের উপাদানকারণ তত্ত্বই, যজ্ঞাঙ্গভূত হোতা নামক এককর্তৃত্ব উপাধিবিশিষ্ট সত্তা; (কারণ ব্রহ্মই আপন সৃষ্ট সকল পদার্থে অনুপ্রবিষ্ট হয়েছেন। তিনিই পুরুষ, তিনিই স্ত্রী, তিনিই কুমার, তিনিই কুমারী। তিনি ব্যতীত আর কিছুই নেই। সুতরাং যজ্ঞের হোতা ইত্যাদি সকলই তিনি। তৈ. আ. ৮৬, শ্বে. ৪৩)। তথা জ্যোতিষ্টোম ইত্যাদি যজ্ঞসমূহও (যজ্ঞাঃ) ব্রহ্ম; (শ্রুতিতেও বলা হয়েছে ব্রহ্মৈব যজ্ঞা। মুণ্ডক ২।১।৬)। এইরূপে, ব্রহ্মই স্বরসমূহকে অর্থাৎ কুষ্ট ইত্যাদি সপ্ত স্বর ও উদাত্ত ইত্যাদি চারটি স্বরকে যজ্ঞে অনুপ্রবিষ্ট করিয়েছেন (ব্ৰহ্মণা স্বরবো মিতাঃ), অর্থাৎ ব্রহ্মের মধ্যেই উদ্গাতার ভাব বিরাজমান।–অথবা জ্যোতিষ্টোম ইতাদি যজ্ঞের অনুষ্ঠাতৃগণকে স্বর্গে গমন করিয়েছেন। এইভাবে অধ্বর্যও ব্রহ্ম হতে উৎপন্ন (অধ্বর্যঃ ব্ৰহ্মণঃ জাতঃ)। তথা যজ্ঞসাধনভূত চরু-পুরোডাশ-আজ্য-সোম ইত্যাদি লক্ষণ-সমন্বিত হবিঃ ব্রহ্মেই অন্তর্হিত বা অবস্থান করে থাকে (ব্ৰহ্মণঃ অন্তর্হিতং হবিঃ), অর্থাৎ ইন্দ্র প্রমুখ দেবতাদের উদ্দেশে প্রদত্ত হলেও হবিঃ মন্ত্রবর্ণিত সেই ব্রহ্মেই লীন হয়ে থাকে ৷ ১।
হোমসাধনভূত জুহু, উপভৃৎ ইত্যাদি ঘৃত প্রক্ষেপের যজ্ঞপাত্রসমূহও (সুচঃ) ব্রহ্ম, সেগুলি হোমের নিমিত্ত ঘৃতের দ্বারা পূর্ণ (ঘৃতবতীঃ)। ব্রহ্মই হবিঃসাধনের জন্য চুল্লী ইত্যাদি খননপূর্বক বেদি নির্মাণ বা সম্পাদন করেছেন (বেদিঃ উদ্ধিতা); এবং যজ্ঞের অর্থাৎ জ্যোতিষ্টোম ইত্যাদি যাগের (যজ্ঞস্য) পারমার্থিক রূপ (তত্ত্ব) হলেন ব্রহ্ম। (যেমন মৃত্তিকা হতে নির্মিত শরা ইত্যাদি মৃৎপাত্র সমুদয়ের উপাদান মৃত্তিকা, তেমনই ব্রহ্ম উপাদান হওয়ার কারণে সমগ্র প্রপঞ্চই ব্রহ্মময়)। ঋত্বি প্রমুখ যাঁরা হবির কর্তা তারা ব্যতিরিক্ত প্রতিস্থাতা ইত্যাদিও ব্রহ্মের তুল্য (যে চ হরিস্কৃতঃ ঋত্বিজঃ শমিতায়–সম্মিতায়) অর্থাৎ ব্রহ্মের সাথে অভিন্ন–এটাই বক্তব্য। সেই ব্রহ্মের বা সেই সকলের উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে আহুতি অর্পিত হোক (স্বাহা–স্বাহুতং অস্তু)। ২৷
আমি পাপমোচক (অংহমুচে), সুতরাং পাপ হতে ত্রাণকারক (সুত্রানে) ইন্দ্রকে শোভনমতিসম্পন্ন হয়ে বা তার গুণাবলী উচ্চারণ করে (সুমতি আবৃণানঃ) মনের সামর্থ্যানুসারে স্তুতি সম্পাদন করছি (প্র ভরে মনীষা আ)। হে ইন্দ্র! তুমি এক্ষণে হব্য সমুদয় স্বীকার করো (প্রতি গৃভায়); যজমানের আয়ু ইত্যাদি বিষয়ের কামনা সত্য, অর্থাৎ পূর্ণ, হোক ॥ ৩॥
পাপমোচনকারী (অংহঃমুচম); যজ্ঞা দেবগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ (যজ্ঞিয়ানাম্ বৃষভঃ), অর্থাৎ সকল দেবতার পালকত্বের নিমিত্ত তিনি বিনা সোম ইত্যাদি হবিঃ সংক্রান্ত যজ্ঞ নিষ্পন্ন হয় না, তাই দেবগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব; যজ্ঞের মধ্যে (অধ্বরাণাং) মুখ্যরূপে বিশেষভাবে দীপ্যমান। (প্রথমং বিরাজন্তং), অথবা যজ্ঞের আদিভূত; এই হেন মহানুভব ইন্দ্রের আহ্বান করছি (ইন্দ্রং হুবে)। অপিচ, জলের পাতয়িতা অর্থাৎ স্রষ্টা (অপাং নপাতং) অগ্নি ও অশ্বিনীকুমারযুগলকে আহ্বান করছি (অশ্বিনা হুবে)। সেই অশ্বিনীকুমারযুগল ইন্দ্রের সামর্থ্যের দ্বারা তোমায় প্রকৃষ্টা বুদ্ধি (তে ধিয়ং), দর্শন শ্রবণ ইত্যাদি সামর্থ্য (ইন্দ্রিয়ং) ও বল (ওজঃ) প্রদান করুন (দত্ত)। ৪
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ব্রহ্ম হোতা ইতি নবমং সূক্তং৷৷ (১৯কা, ৫অ. সূ)।
টীকা –উপযুক্ত সূক্তটিতে ব্রহ্মের স্বরূপ ব্যাখ্যাত হয়েছে। ব্রহ্মযজ্ঞ নামে খ্যাত এই সূক্তটি ব্রহ্মযজ্ঞে। বিনিয়োগ করা হয় ॥ (১৯কা, ৫অ. ৯সূ.)।
.
দশম সূক্ত : ব্ৰহ্মা
[ঋষি : ব্রহ্মা। দেবতা : অগ্নি ইত্যাদি। ছন্দ : পংক্তি।]
যত্র ব্রহ্মবিদো যান্তি দীক্ষয়া তপসা সহ। অগ্নিৰ্মা তত্র নয়ত্বগ্নিমেধা দধাতু মে। অগ্নয়ে স্বাহা ॥১৷৷ যত্র ব্রহ্মবিদো যান্তি দীক্ষয়া তপসা সহ। বায়ুৰ্মা তত্র নয়তু বায়ুঃ প্রাণান্ দধাতু মে। বায়বে স্বাহা ॥২৷৷ যত্র ব্রহ্মবিদো যান্তি দীক্ষয়া তপসা সহ। সূৰ্যো মা তত্র নয়তু চক্ষুঃ সূর্যোদধাতু মে। সূর্যায় স্বাহা ॥৩॥ যত্র ব্রহ্মবিদো যান্তি দীক্ষয়া তপসা সহ। চন্দ্রো মা তত্র নয়তু মনশ্চন্দ্রো দধাতু মে। চন্দ্রায় স্বাহা ॥৪॥ যত্র ব্রহ্মবিদো যান্তি দীক্ষয়া তপসা সহ। সোমো মা তত্র নয়তু পয়ঃ সোমো দধাতু মে। সোমায় স্বাহা ॥ ৫৷৷ : যত্র ব্রহ্মবিদো যান্তি দীক্ষয়া তপসা সহ। ইন্দ্রো মা তত্র নয়তু বলমিন্দ্রো দধাতু মে। ইন্দ্রায় স্বাহা। ৬। যত্র ব্রহ্মবিদো যান্তি দীক্ষয়া তপসা সহ। আপো মা তত্র নয়ত্বমৃতং মোপ তিতু। অভ্যঃ স্বাহা ॥৭॥ যত্র ব্রহ্মবিদো যান্তি দীক্ষয়া তপসা সহ।ব্রহ্মা মা তত্র নয়তু ব্ৰহ্মা ব্ৰহ্ম দধাতু মে। ব্ৰহ্মণে স্বাহা ॥৮॥
বঙ্গানুবাদ –সুকৃত ফলভোগের আশ্রয়স্বরূপ যেস্থানে (যত্র) সগুণ ব্রহ্মের স্বরূপত্ব সম্পর্কে জ্ঞাত অথবা ব্রহ্ম-সম্পর্কিত কর্মবিষয়ে জ্ঞানবন্ত মহাত্মাগণ (ব্রহ্মবিদঃ) দণ্ড-কৃষ্ণাজিন-মেখলা ইত্যাদি ধারণাত্মিকা দীক্ষা ও পয়োব্রত ইত্যাদি নিয়মাত্মিকা তপস্যা সহ গমন করেন (যান্তি), সেই স্থানে (তত্র) অগ্নিদেব (অগ্নিঃ) আমাকে নীত করুন (মা নয়তু) এবং সেই নিমিত্ত অগ্নিদেব আমাতে মেধা অর্থাৎ সেই বিষয়ক প্রজ্ঞা প্রদান করুন (মে মেধা দধাতু)। সেই হেন অগ্নির উদ্দেশে স্বাহা সহকারে এই হবিঃ সমর্পিত হোক (অগ্নয়ে স্বাহা) ॥ ১।
সুকৃত ফলভোগের আশ্রয়স্বরূপ যেস্থানে সগুণ ব্রহ্মের স্বরূপত্ব সম্পর্কে জ্ঞাত মহাত্মাগণ দণ্ড-কৃষ্ণাজিন-মেখলা ইত্যাদি ধারণাত্মিকা দীক্ষা ও পয়োব্রত ইত্যাদি নিয়মাত্মিকা তপস্যা সহ গমন করেন, সেই স্থানে বায়ুদেব (বায়ু) আমাকে নীত করুন এবং সেই নিমিত্ত আমাতে প্রাণ-অপান-সমান-উদান-ব্যান এই পঞ্চপ্রাণ বা পঞ্চবায়ু স্থাপন করুন (মে প্রাণান দধাতু)। সেই হেন বায়ুর উদ্দেশে স্বাহা সহকারে এই হবিঃ সমর্পিত হোক (বায়বে স্বাহা)। ২
যেস্থানে ব্রহ্মবিদ্বর্গ অর্থাৎ সগুণ ব্রহ্মের স্বরূপত্ব সম্পর্কে বা ব্রহ্মসম্পর্কিত কর্মবিষয়ে জ্ঞানবন্ত মহাত্মাগণ দীক্ষা অর্থাৎ দণ্ড-কৃষ্ণাজিন ইত্যাদি ধারণরূপ সংস্কার এবং তপস্যা অর্থাৎ ব্রতচর্যা সহ গমন করেন, সেই স্থানে সূর্যদেব (সূর্যঃ) আমাকে নীত করুন। সেই নিমিত্ত সূর্যদেব মা আমাতে চক্ষু স্থাপন করুন (মে চক্ষুঃ দধাতু)। সেই হেন সূর্যের উদ্দেশে স্বাহা সহকারে এই হবিঃ সমর্পিত হোক (সূর্যায় স্বাহা) ৷৷ ৩৷
যেস্থানে ব্রহ্মবিদ্বর্গ দীক্ষা ও তপস্যা সহ গমন করেন, সেই স্থানে চন্দ্রদেব (চন্দ্ৰঃ) আমাকে নীত করুন এবং সেই নিমিত্ত আমাতে আহ্লাদজনক মন (স্থাপন করুন (মে মনঃ দধাতু)। সেই হেন চন্দ্রের উদ্দেশে স্বাহা সহকারে এই হবিঃ সমর্পিত হোক (চন্দ্রায়। স্বাহা) ॥ ৪
যেস্থানে ব্রহ্মবিধ্বর্গ দীক্ষা ও তপস্যা সহ গমন করেন, সেই স্থানে অভিযুয়মাণ বল্লীরূপ বা ওষধীসমূহের রাজা সোম (সোমঃ) আমাকে নীত করুন। সোম আমাতে রসাত্মক জল স্থাপন করুন (মে পয়ঃদধাতু)। সেই হেন সোমের উদ্দেশে স্বাহা সহকারে এই হবিঃ সমর্পিত হোক। (সোমায় স্বাহা)। ৫৷
যেস্থানে ব্রহ্মবির্গ দীক্ষা ও তপস্যা সহ গমন করেন, সেই স্থানে দেবগণের পালক ইন্দ্রদেব (ইন্দ্ৰঃ) আমাকে নীত করুন। ইন্দ্রদেব আমাতে বল অর্থাৎ সামর্থ্য স্থাপন করুন। সেই হেন বলরূপ ইন্দ্রের উদ্দেশে স্বাহা সহকারে এই হবিঃ সমর্পিত হোক (ইন্দ্রায় স্বাহা) ॥ ৬ ৷৷
যেস্থানে ব্রহ্মবিদ্বর্গ দীক্ষা ও তপস্যা সহ গমন করেন, সেই স্থানে অমৃতময় জলরাশি বা জলের অভিমানী দেবতাগণ (আপঃ) আমাকে নীত করুন। জলদেবতাগণ আমাকে অমৃত প্রাপ্ত করান (মা অমৃতং উপ তিতু)। সেই হেন জলদেবতাগণের উদ্দেশে স্বাহা সহকারে এই হবিঃ সমর্পিত হোক (অভ্যঃ স্বাহা)। ৭৷
যেস্থানে ব্রহ্মবিধ্বর্গ দীক্ষা ও তপস্যা সহ গমন করেন, সেই স্থানে জগৎস্রষ্টা হিরণ্যগর্ভ অর্থাৎ সুবর্ণময় অণ্ড হতে জাত ব্রহ্মা আমাকে নীত করুন। সেই ব্রহ্মা আপন, স্বরূপভূত বা শ্রুতি-অধ্যয়নের দ্বারা জায়মান তেজঃ আমাতে স্থাপন করুন (মে ব্ৰহ্ম দধাতু)। সেই হেন ব্রহ্মের উদ্দেশে স্বাহা সহকারে এই হবিঃ অর্পিত হোক (ব্ৰহ্মণে স্বাহা)। ৮.
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –যত ব্ৰহ্মবিদঃ ইতি দশমং সূক্তং৷৷ (১৯কা, ৫অ. ১০সূ.)।
টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি ব্রহ্মা নামে খ্যাত। এই সূক্তে তপোধন ও কর্মবান ব্ৰহ্মজ্ঞানী পুরুষগণের পুণ্যলোক প্রাপ্তি ও সেই পুণ্যলোকে যাত্রার নিমিত্ত স্তোতার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত হয়েছে। অগ্নি, সূর্য ইত্যাদি দেবগণের নিকট সেই প্রার্থনা প্রজ্ঞাপিত হয়েছে। এই সূক্তের বিনিয়োগ পূর্ববর্তী সূক্তের অনুরূপ। (১৯কা. ৫অ. ১০সূ.)।
.
একাদশ সূক্ত : ভৈষজ্যম
[ঋষি : ভৃগু। দেবতা : আঞ্জন, বরুণ। ছন্দ : অনুষ্টুপ, উষ্ণিক, গায়ত্রী।]
আয়ুষোহসি প্রতরণং বিপ্রং ভেষজমুচ্যসে। তদাঞ্জন ত্বং শন্তাতে শমাপো অভয়ং কৃতম্ ॥১॥ যো হরিমা জায়ান্যোহঙ্গভেদো বিসল্পকঃ। সর্বং তে যক্ষ্মমঙ্গেভ্যে বহির্নিহন্তান। ২। আঞ্জনং পৃথিব্যাং জাতং ভদ্রং পুরুসজীবন। কৃপোত্বপ্রমায়ুকং রথভূতিমনাগসম্৷৷ ৩৷৷ প্রাণ প্রাণং ত্ৰায়স্বাসো অসবে মৃড়। নিঋতে নিঋত্যা নঃ পাশেভ্যো মূঞ্চ ॥৪॥ সিন্ধোর্গর্ভোহসি বিদ্যুতাং পুষ্প। বাতঃ প্রাণঃ সূর্যশ্চক্ষুর্দিৰ্বম্পয়ঃ ॥৫দেবাঞ্জন ত্রৈককুদং পরি মা পাহি বিশ্বতঃ। ন ত্বা তরন্ত্যোষধয়ো বাহ্যাঃ পৰ্বতীয়া উত৷৬৷৷ বীদং মধ্যমবাসৃপদ রক্ষোহামীবচাতনঃ। অমীবাঃ সর্বাশ্চাতয় নাশয়ভিভা ইতঃ ॥৭॥ বহীদং রাজ বরুণামৃতমাহ পুরুষঃ। তস্মাৎ সহস্রবীর্য মুঞ্চ নঃ পর্যংহসঃ ॥ ৮ যদাপো অগ্ন্যা ইতি বরুণেতি যদূচিম। তস্মাৎ সহস্রবীর্য মুঞ্চ নঃ পর্যংহসঃ ॥৯॥ মিশ্চ স্বা বরুণশ্চানুপ্রেয়তুরাঞ্জন। তৌ ত্বানুগত্য দূরং ভোগায় পুনরোহতুঃ ॥১০৷
বঙ্গানুবাদ –হে আঞ্জন! তুমি শতসম্বৎসরকাল পর্যন্ত আয়ুর প্রাপণকারী অর্থাৎ প্রবর্ধক (আয়ুষঃ প্রতরণং অসি), তুমি প্রীতকরী বা বিপ্রবৎ শুদ্ধ (বিপ্রং), তুমি সকল ব্যাধির নিদানভূত ঔষধ (ভেষজং) বলে উক্ত হয়েছে। সেই কারণে (তৎ), হে আঞ্জন! হে মঙ্গলস্বরূপ (শন্তাতে)! হে উদকলক্ষণ আঞ্জন! তুমি ও জলদেবতাগণ আমায় সুখ (শং) ও ভয়রাহিত্য (অভয়ং) দান করো (কৃতং)। ১ ॥
শরীরে হরিবর্ণকারক পাণ্ডু নামে অভিহিত যে অতিপ্রবৃদ্ধ অর্থাৎ দুশ্চিকিৎস্য ব্যাধি (হরিমা জায়ান্যঃ), তথা বাত ইত্যাদি জনিত অবয়ববিশ্লেষরূপ অর্থাৎ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে এমন যন্ত্রণাপ্রদ যে ব্যাধি (অঙ্গভেদঃ), তথা জানুর নিম্নে প্রায়ই নানারকম প্ৰসরণশীল যে ব্রণ অর্থাৎ স্ফোটক জাত হয় (বিসর্পকঃ-বিসল্পকঃ), হে আনমণির ধারক পুরুষ! এই আঞ্জন সেই সকল ক্ষয়কারক ব্যাধি (সর্বং যক্ষ্ম) তোমার দেহ হতে (তে অঙ্গেভ্যঃ) পৃথক করে নিরন্তর নাশ করুক (বহিঃ নিঃ হন্তু)। ২।
ভূমিতে উৎপন্ন (পৃথিব্যাৎ জাতং), কল্যাণরূপী (ভদ্রং), আপন-ধারক অর্থাৎ আঞ্জনধারী পুরুষের জীবয়িত্ব (পুরুষজীবনং) আঞ্জন আমাকে অমরণশীল (অপ্রমায়ুকম) করুক; তথা রথবৎ বেগগামী বা রথবন্ত করুক (রথজুতি) এবং আমাকে পাপহীন (অনাগসম) করুক (কৃণোতি)। ৩।
হে প্রাণস্বরূপ আঞ্জন! তুমি আমার প্রাণকে রক্ষা করো (প্রাণং ত্ৰায়স্ব), অর্থাৎ অকালে যাতে অপগত না হয়ে যায়, তেমন করো! হে অসুরূপ আঞ্জন (অর্থাৎ প্রাণ-অপান ইত্যাদি পঞ্চ বায়ুরূপ আঞ্জন)! তুমি পঞ্চবায়ুর নিমিত্ত আমাকে সুখী করো (অসবে মৃড়)। হে নির্ঋতি (অর্থাৎ পাপদেবতা নির্ঋতিরূপ আঞ্জন)! তুমি নির্ঋতির পাশবন্ধন হতে আমাকে মুক্ত রেখো (পাশেভ্যঃ মুঞ্চ)। ৪।
হে আঞ্জন! তুমি বাহ্যবায়ুরূপ প্রাণ (বাতঃ), এতএব আমার প্রাণরায়ু সমূহকে রক্ষা করো। তথা, তুমি সূর্যাত্মক চক্ষুরিন্দ্রিয় (সূর্যঃ চক্ষুঃ), অতএব চক্ষুকে রক্ষা করো। (শ্রুতি অনুসারে বায়ু প্রাণভূত হয়ে নাসিকায় প্রবিষ্ট হয়ে, সর্বদেহে ব্যাপ্তি লাভ করে এবং আদিত্ব চক্ষুভূত হয়ে সর্বদর্শনের কারক হয়)। তথা, (হে আঞ্জন!) তুমি দ্যুলোকের সারভূত জলস্বরূপ (দিবঃ পয়ঃ)। তুমি (হে আঞ্জন!) সমুদ্রের গর্ভস্বরূপ বা গর্ভস্থানীয় (সিন্ধোঃ গর্ভঃ) ও বিদ্যুতের পুষ্প (বিদ্যুতাম্ পুষ্পং) অর্থাৎ বৃষ্টির জলস্বরূপ ॥ ৫৷৷
হে আঞ্জন! তুমি কুদ, অর্থাৎ স্বয়ং তিনটি শিখরবিশিষ্ট ত্রিককুৎ বা নামান্তরে ত্রিকূট বা চিত্রকূট নামক পর্বতে উৎপন্ন হওয়ায় এবং আঞ্জনরূপে দেবতাগণের দ্বারা স্বরক্ষার্থে বা প্রাণীগণের উপকারার্থে সৃষ্ট হওয়ায় আমাকে সর্বতঃ রক্ষা করো (দেব আঞ্জন মাং বিশ্বতঃ পরি পাহি)। তুমি বাহ্যাঁ বা পর্বতবাহ্যাঁ, অর্থাৎ পর্বতব্যতিরিক্তস্থলে উৎপন্ন ওষধিসমূহ লঙ্ঘন বা অতিক্রম করতে পারে না (ন তরন্তি); এমন কি, অন্য পর্বতে উদ্ভব (উত পৰ্বতীয়া) অর্থাৎ হিমালয়-বিন্ধ্য ইত্যাদি পর্বতজাত ওষধিসমূহও তোমা অপেক্ষা ন্যূনবীর্য হওয়ার কারণে তোমাকে অতিক্রম করতে পারে না ৷ ৬ ৷
এই আঞ্জন রাক্ষসগণের বিঘাতক (রক্ষোহা) এবং রোগসমূহের নাশক (অমীবচাতনঃ); অর্থাৎ এই পরিদৃশ্যমান যা কিছু আছে, পর্বতের নিম্নে গমন পূর্বক, তার সব কিছুর মধ্যে বা প্রতিটি পদার্থে ব্যাপ্ত হতে সমর্থ। (গমন পূর্বক কি করে?) যে যে রোগ দেহাভ্যন্তরে নানাভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে অবস্থিত আছে, তাদের সবগুলিকে বিনাশ করে (সর্বাঃ অমীবাঃ চাতয়ৎ)। (পুনরায় কি করে? না–) সকল রোগ ইত্যাদিকে তিরস্কার পূর্বক নাশ করে থাকে (অভিভাঃ ইতো নাশয়ৎ)। ৭।
হে প্রাণীগণের শিক্ষাকর্তা রাজা বরুণ! মনুষ্য (পুরুষঃ) ইদানীং (ইদং) প্রাতঃ প্রভৃতি হতে শয়নকাল পর্যন্ত অপরিমিত মিথ্যা কথা বলে থাকে (বহু অনৃতং আহ), সেই মিথ্যাকে বা মিথ্যাভাষণকে তুমি ক্ষমা করো, অর্থাৎ তার জন্য শিক্ষা বা শাস্তি দিয়ো না। হে সহস্রবীর্যশালী আঞ্জনৌষধি! তুমি আমাদের (নঃ) মিথ্যাভাষণের কারণজনিত পাপ হতে (অংহসঃ) সর্বতো মুক্ত করো (পরি মুঞ্চ)। ৮।
হে জলরাশি (আঃ)! তোমরা সাক্ষী থেকো (যৎ উচিম–জানীধ্বে); হে অদ্যা, অর্থাৎ অহন্তব্য গাভীগণ! তোমরা আমার চিত্ত সম্পর্কে জ্ঞাত হও (যৎ ঊচিম–জানীধ্ব)। তথা, হে বরুণ! তুমি জ্ঞাত আছো (যৎ উচিম–জানাসীতি)। হে সহস্রবীর্যশালী অর্থাৎ অপরিমিত সামর্থ্যসম্পন্ন ত্রিককুৎ-আঞ্জন! তুমি আমাদের সেই সকল পাপ হতে সর্বতো মুক্ত করো। ৯।
হে আঞ্জনাখ্য ওষধি!তোমাকে দিবা ও রাত্রির অভিমানী মিত্রদেব ও বরুণদেব উভয়ে দ্যুলোক হতে ভূলোকে আগত হয়ে কোনও কারণে বিমুখ হয়ে গমনোন্মুখ তোমায় অনুসরণ করেছিলেন (অনুপ্রেয়তুঃ)। সেই মিত্র-বরুণ (তৌ) দূর পর্যন্ত তোমার অনুগমন করে (ত্বা দূরং অনুগত্য) প্রাণীগণের উপভোগের নিমিত্ত পুনরায় প্রত্যাবৃত্ত করিয়েছেন ॥ ১০৷৷
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –আয়ুষোসি ইতি একাদশং সূক্তং। অনেন সূক্তেণ উত্তরেণ চ…. নৈঋত্যাখ্যায়াং মহাশূন্তৌ আঞ্জনমণিং অভিমন্ত্র বন্ধুীয়াৎ। উক্তং হি নক্ষত্রকল্পে।–ইত্যাদি৷৷ (১৯কা, ৫অ. ১১সূ.)।
টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি নক্ষত্রকল্পের (১৭, ১৯) বিধান অনুসারে নৈঋতি নামক মহাশান্তি যাগে আঞ্জনমণি অভিমন্ত্রিত পূর্বক ধারণে বিনিয়োগ হয়ে থাকে। এর পরবর্তী সূক্তটিও ঐ একই উদ্দেশ্যে একই রকমভাবে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। ইত্যাদি৷৷ (১৯কা, ৫অ. ১১সূ.)।
.
দ্বাদশ সূক্ত : আঞ্জনম
[ঋষি : ভৃগু। দেবতা : আঞ্জন, অগ্নি ইত্যাদি। ছন্দ : অনুষ্টুপ, ত্রিষ্টুপ, বৃহতী।]
ঋণাদৃণমিব সন্নয় কৃত্যাং কৃত্যাকৃত গৃহম। চক্ষুর্মস্য দুহাদঃ পৃষ্টীরপি শৃণাঞ্জন ॥১॥ যদম্মাসু দুম্বপ্নং যদ গোষু যচ্চ নো গৃহে। অনামগস্তং চ দুহাদঃ প্রিয়ঃ প্রতি মুঞ্চতাম্ ॥ ২॥ অপামূর্জ ওজসো বাবৃধানমগ্নের্জাতমধি জাতবেদসঃ। চতুবীরং পৰ্বতীয়ং যদাঞ্জনং দিশঃ প্রদিশঃ করদিচ্ছিস্তে ৷৷ ৩৷৷ চতুবীরং বধ্যত আঞ্জনং তে সর্বা দিশো অভয়াস্তে ভবন্তু। ধ্রুবস্তিষ্ঠাসি সবিতেব চার্য ইমা বিশো অভি হরন্তু তে বলিম্ ॥ ৪ ৷৷ আকৈং মণিমেকং কৃণুম্ব স্নাহ্যেকেনা পিবৈকমেষাম। চতুবীরং নৈঋতেভ্যশ্চতুর্ভো গ্রাহ্যাঁ বন্ধেভ্যঃ পরি পাত্বম্মান ॥৫॥ অগ্নিৰ্মাগ্নিবতু প্রাণায়াপনায়ায়ুষে বচঁসে ওজসে তেজসে স্বস্তয়ে সুভূতয়ে স্বাহা ॥ ৬৷৷ ইন্দ্রো মেন্দ্রিয়েণাবতু প্রাণায়াপনায়ায়ুষে বচস ওজসে। তেজসে স্বস্তয়ে সুভূতয়ে স্বাহা ॥৭॥ সোমো মা সৌম্যেনাবতু প্রাণায়াপনায়ায়ুষে বৰ্চস ওজসে। তেজসে স্বস্তয়ে সুভূতয়ে স্বাহা ॥৮॥ ভগো মা ভগেনাবতু প্রাণায়াপনায়ায়ুষে বৰ্চস ওজসে। তেজসে স্বস্তয়ে সুভূতয়ে স্বাহা ॥৯॥ মরুতে মা গণৈবন্তু প্রাণায়াপনায়ায়ুষে বৰ্চস ওজসে। তেজসে স্বস্তয়ে সুভূতয়ে স্বাহা ॥১০৷
বঙ্গানুবাদ –লোকজগতে যেমন কোনও ধনীর হস্ত হতে গৃহীত ঋণ ভয়পূর্বক তার হস্তে প্রত্যর্পণ করতে হয় অথবা ঋণদাতার (উত্তমর্ণের) নিকট হতে গৃহীত ঋণ যেমন ঋণগ্রহীতা (অধমর্ণ) তারই হস্তে প্রত্যর্পণ করে থাকে, তেমনই (ঋণাৎ ঋণম্ ইব) আভিচারিক ক্রিয়ায় (কৃত্যাং) পীড়াদানের নিমিত্ত পিশাচ ইত্যাদি অপদেবতাকে উৎপাদিত করে (কৃত্যাকৃতঃ) উদ্দিষ্ট ব্যক্তির (বা আমার) প্রতি (গৃহং) সম্যক্ প্রেরণ (সন্নয়ন) করা হলে, হে আমার চক্ষুর মিত্রবৎ (চক্ষুঃ মন্ত্রস্য মিত্রস্য) বা আদিত্যের ন্যায় চক্ষুস্থানীয় আঞ্জন! তুমি দুষ্টহৃদয়সম্পন্ন সেই অভিচারী শত্রুদের (দুহাদঃ) পার্শ্বের অস্থিসমূহ অর্থাৎ পঞ্জরগুলিও (পুষ্টীঃ অপি) ভগ্ন করো (শৃণ) ১
ভ্রাতা-পুত্র ইত্যাদি সম্বন্ধীয় আমাদের (অস্মাসু) যে দুঃস্বপ্ন জনিত দুঃখ (যৎ দুঃস্বপ্ন্যং), আমাদের গো সম্পর্কিত যে দুঃস্বপ্নজনিত দুঃখ (যৎ গোষু), আমাদের গৃহস্থ দাসদাসী ইত্যাদি সম্পর্কীয় যে দুঃস্বপ্নজনিত দুঃখ (যৎ চ নঃ গৃহে), দুষ্টচিত্তশালী (দুর্হার্দঃ) অপ্রিয় অর্থাৎ আমাতে দ্বেষকারী শত্রুর প্রতি লৌহনির্মিত অলঙ্কারের ন্যায় ধারণ করাও। অর্থাৎ উপযুক্ত দুঃখসমূহ তাদের প্রাপ্য হোক ॥ ২॥
জলের রসভূত বা সারভূত (অপাম্ ঊর্জঃ), অতএব বলের বর্ধনকারী (ওজসঃ ববৃধান); প্রাপ্ততেজোলক্ষণ ধনসমূহের অধিপতি অগ্নি হতে জাত (জাতবেদসঃ অগ্নে জাত অধি); চতুর্দিকে বিক্রান্ত অর্থাৎ সর্বতো অকুণ্ঠিতশক্তি (চতুঃ বীরম) বা চারিটি পুত্র যার, সেই পুত্ৰচতুষ্টয়াখ্য ফলদাতা; পর্বতে উৎপন্ন অর্থাৎ ত্রিককুৎ নামক পর্বতে জাত যে মহানুভাব আঞ্জন (পবতীয় যৎ আ অঞ্জনং), তা (তে) অপ্রধান দিকগুলি ও পূর্ব ইত্যাদি প্রকৃষ্ট দিমূহ (দিশঃ প্রদিশঃ) সুখপ্রদায়ক করুক (শিবাঃ করৎ) ৩
হে রক্ষাফলাকাঙ্ক্ষী পুরুষ! তোমার পুত্ৰচতুষ্টয়াখ্য ফলদাতা বা তোমার চতুর্দিকে বীর্যোপেত অঞ্জনমণিরূপ ঔষধি বন্ধন করা হচ্ছে (তে চতুর্বীরং আঞ্জনং বধ্যতে)। (তার ফল কি?–না) এই মণি ধারণে তোমার সকল দিক্ ভয়রহিত হয়ে যাক (তে সর্ব দিশঃ অভয়া ভবন্তু), অর্থাৎ সর্বত্র অভয় ফল লব্ধ হবে। অধিকন্তু, হে স্বামি (আর্য)! নির্ভয় তুমি সূর্যের ন্যায় (সবিতা ইব) সব কিছু প্রকাশিত করে স্থির হয়ে অবস্থান করো (ধ্রুবঃ তিষ্ঠাসি)। সূর্যের ন্যায় অতি তেজস্বী হয়ে চিরকাল অবস্থিত তোমাকে (ইমা) সকল প্রজা (বিশঃ) হিরণ্য-রজত-মণি-মুক্তা-হস্তী-অশ্ব। ইত্যাদি উৎকৃষ্ট পদার্থময়ী বলি অর্থাৎ পূজোপহার বা রাজস্ব সর্বতঃ সমর্পণ করুক (অভি হরন্তু)। ৪
হে পুরুষ! একটি আঞ্জন চক্ষে ধারণ করা (একং আ অক্ষ), তথা একটি আঞ্জন বন্ধনের নির্মিত মণি করো (মণিম্ এক কৃণুম্ব), তথা, একটি আঞ্জনের দ্বারা স্নান করো (স্নাহি একেন), তথা একটিকে পান করো (আ পিব এক এষা)। (তিন পর্বতের ককুৎ হতে উৎপন্ন তিন আঞ্জনের মধ্যে কোটি কোন্ প্রয়োজনে প্রযোজিতব্য সেই বিচার-বিবেচনা না করে অসংকোচে সেগুলির ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে)। এই আঞ্জন চতুর্দি ব্যাপী বীর্যোপেত (চতুবরিং) অর্থাৎ সর্বতঃ অকুণ্ঠিতশক্তি। এই হেন গ্রহণীয় (গ্রাহ্যা) আঞ্জনময় ওষধি সমুদায় চারিদিকে ব্যাপ্ত পাপদেবতা নির্ঋতি সম্বন্ধীয় বন্ধন হতে আমাদের সর্বতোভাবে রক্ষা করুক (নৈঋতেভ্যঃ বন্ধেভ্যঃ অম্মান পরি পাতু)। ৫।
অগ্রণীত্ব গুণসম্পন্ন অর্থাৎ সকল যজ্ঞে সর্বাগ্রে আহূত অগ্নিদেব, অথবা পাবক ইত্যাদি গুণোপেত আপন অপর মূর্তিধারী অগ্নিসমভিব্যাহারে স্বয়ং অগ্নিদেব আমাকে রক্ষা করুন (অগ্নিঃ অগ্নিনা মা অবতু)। প্রাণ, অপান ইত্যাদি পঞ্চপ্রাণের লাভের নিমিত্ত; আয়ুর বৃদ্ধির নিমিত্ত অর্থাৎ প্রাণ ইত্যাদির সিদ্ধির নিমিত্ত (আয়ুষে), শ্রুতি-অধ্যয়ন জনিত তেজের নিমিত্ত; ওজঃ, অর্থাৎ বল বা শরীরকান্তি লাভের নিমিত্ত; মঙ্গল লাভের নিমিত্ত (স্বস্তয়ে) এং শোভন সম্পদ লাভের নিমিত্ত (সুভূতয়ে)–সেই হেন অগ্নির উদ্দেশে স্বাহা সহকারে এই হবিঃ সমর্পিত হোক স্বাহা) ৷৷ ৬ ৷
ইন্দ্রদেব আমাকে (মা) ইন্দ্ৰত্বসম্পাদক অসাধারণ ধর্মের দ্বারা অথবা জ্ঞানেন্দ্রিয় ও কর্মেন্দ্রিয়ের দাৰ্টত্বের দ্বারা আমাকে রক্ষা করুন (ইন্দ্রঃ মা ইন্দ্রিয়েন অবতু)। প্রাণ, অপান, আয়ুবৃদ্ধি, তেজঃ, ওজঃ, ও মঙ্গল ও শোভন সম্পদ লাভের নিমিত্ত অগ্নির উদ্দেশে স্বাহা সহকারে এই হবিঃ সমর্পিত হোক ৷৷ ৭৷
সোমদেব আমাকে সোমত্বসম্পাদক ধর্মের দ্বারা, অর্থাৎ জগতের, তৃপ্তি বিধায়ক সুকৃতির দ্বারা রক্ষা করুন (সোমো মা সৌম্যেন অবতু)। প্রাণ, অপান, আয়ুবৃদ্ধি, তেজঃ, ওজঃ, মঙ্গল ও শোভন সম্পদ লাভের নিমিত্ত সোমের উদ্দেশে স্বাহা সহকারে এই হবিঃ সমর্পিত হোক ৮
ভগদেব আমাকে ভগত্বসম্পাদক ধর্মের দ্বারা, অর্থাৎ সম্পূর্ণ ঐশ্বর্য-বীর্য-শ্রী যশ-জ্ঞান ও বৈরাগ্যরূপ সুকৃতির দ্বারা রক্ষা করুন (ভগো মা ভগেন অবতু)। প্রাণ, অপান, আয়ুবৃদ্ধি, তেজঃ, ওজঃ, মঙ্গল ও শোভন সম্পদ লাভের নিমিত্ত ভগদেবের উদ্দেশে স্বাহা সহকারে এই হবিঃ সমর্পিত হোক। ৯।
মরুৎ দেবতাগণ অর্থাৎ রুদ্রের পুত্রত্বের দ্বারা পরিগৃহীত, ঊনপঞ্চাশৎসংখ্যক দেববর্গ আপন গণসমূহের দ্বারা আমাকে রক্ষা করুন (মরুতঃ মা গণৈঃ অবন্তু)। প্রাণ, অপান, আয়ুবৃদ্ধি, তেজঃ, ওজঃ, মঙ্গল ও শোভন সম্পদ লাভের নিমিত্ত মরুৎ দেবতার উদ্দেশে স্বাহা সহকারে এই হবিঃ সমর্পিত হোক৷ ১০
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ— ঋণাদৃণমিব ইতি দ্বাদশসূক্তস্য আঞ্জনমণিবন্ধনে পূর্বসূক্তেন সহ উক্তো বিনিয়োগঃ ॥ (১৯কা, ৫অ. ১২সূ.)।
টীকা –পূর্ববতী সূক্তের বিনিয়োগ প্রসঙ্গে উপযুক্ত সূক্তটির বিনিয়োগ উক্ত হয়েছে। বর্তমান সূক্তটির সাহায্যে আভিচারিক আক্রমণের প্রতিকার করা হয়ে থাকে ৷ (১৯কা, ৫অ. ১২সূ.)।