1 of 2

১৮. হেবা (দান)

১৮. অষ্টাদশ অধ্যায় – হেবা (দান)

ধারা-৪৭৭

হেবার সংজ্ঞা কোন ব্যক্তির মাল বিনিময়মূল্য ব্যতিরেকে দান করা এবং যাহার বরাবরে দান করা হয় সেই ব্যক্তি কর্তৃক উহা গ্রহণ করাকে “হেবা” বলে।

বিশ্লেষণ

“হেবা” শব্দের অর্থ দান করা। অর্থাৎ কোন প্রতিদান ছাড়াই অপর ব্যক্তিকে নিজের সম্পদের মালিকানা হস্তান্তরকেই “হেবা” বলে। মহানবী (সা) বলেন :

تهادوا تحابوا .

“তোমরা পরস্পরকে উপহার দাও যাতে তোমাদের ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।”

وتهادوا تحابوا وتذهب الشهناء .

“তোমরা পরস্পর উপঢৌকন পাঠাও এবং বন্ধুতে পরিণত হও, তোমাদের ঘৃণা বিদ্বেষ দূরীভূত হইয়া যাইবে” (মুওয়াত্তা ইমাম মালেক, কিতাবুল জাই, মা জাআ ফিল-মুহাজিরাত)।

মদীনার উচ্চভূমিতে অবস্থিত নিজের খেজুর বাগান হইতে হযরত আবু বক্র (রা) তাঁহার কন্যা হযরত আয়শা (রা)-কে বৃক্ষোপরি বিশ ওয়াসাক খেজুর দান করেন (মুওয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ, কিতাবুল বুয়ু, ৩০ অনুচ্ছেদ, হা. ৮০৯)।

হেবাকৃত জিনিসের উপর হইতে হেবাকারীর মালিকানা ও ভোগ-ব্যবহার সম্পূর্ণ স্থানান্তর হওয়া জরুরী। অনুরূপভাবে যাহার অনুকূলে হেবা করা হইয়াছে সে যদি তাহা গ্রহণ না করে অর্থাৎ প্রত্যাখ্যান করে তাহা হইলেও হেবা কার্যকর হইবে না।

ধারা-৪৭৮

হেবা সম্পাদন (14। al) হেবা একটি চুক্তি যাহা ঈজাব ও কবুলের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়।

বিশ্লেষণ

অন্যান্য চুক্তির মত হেবাও দাতা ও গ্রহীতার ঈজাব-কবুলের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়।৩ ইহার অনুকূলে সাক্ষী রাখা বাধ্যতামূলক না হইলেও উত্তম। আমি তোমাকে

৫৬৯

ইহা হেবা করিলাম, দান করিলাম, ইহার মালিক বানাইলাম, এই খাদ্যদ্রব্য তোমাকে খাওয়ার জন্য দিলাম, তোমার পরিধানের জন্য এই কাপড়টি দিলাম, এই বাহন তোমাকে আরোহণ করিতে দিলাম ইত্যাদি শব্দ দ্বারা হেবা অনুষ্ঠিত হয়, যদি তাহা হেবার উদ্দেশ্যে উচ্চারণ করা হয়।

ধারা-৪৭৯

হেবা পূর্ণাঙ্গ হওয়ার শর্তাবলী (ক) হেবাকারী সুস্পষ্ট বাক্যে বস্তুর মালিকানা ও তৎসম্পর্কিত সকল এখতিয়ার সম্পূর্ণরূপে অৰ্পণ করিবে এবং হেবাকৃত বন্ধু হেবা গ্রহীতার এখতিয়ারে চূড়ান্তভাবে ছাড়িয়া দিবে এবং হেবা গ্রহীতা কর্তৃক উহ গৃহীত হইবে।

(খ) হেবাকারী হেবাকৃত বস্তুর উপর নিজের অধিকার-প্রসূত কর্তৃত্ব খাটাইতে থাকিলে হেবা অনুষ্ঠিত (Juil) হইবে না।

(গ) হেবা স্বেচ্ছাপ্রণােদিত হওয়া আবশ্যক, জবরদস্তিমূলক হেবা অবৈধ এবং বাতিল গণ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

হেবা যদিও ঈজাব-কবুলের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু যাহার অনুকূলে হেবা করা হইয়াছে সে উহা নিজ অধিকারভুক্ত না করা পর্যন্ত তাহার মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হইবে না। মহানবী (সা) বলেন :

دز الهبة الأ مقبوضه .

“হেবাকৃত বস্তু (হেবাগ্রহীতার) হস্তগত না হওয়া পর্যন্ত বৈধ হয় না।”

আবূ বা সিদ্দীক (রা) তাঁহার কন্যা হযরত আয়েশা (রা)-এর কূলে বিশ ওয়াসাক খেজুর হেবা করেন, যাহা তখনও গাছের মাথায় ছিল। তাহ। সংগৃহীত না হইতেই আবূ বা (রা)-র মৃত্যুর মুহূর্ত ঘনাইয়া আসে। তিনি আয়েশা (রা)-কে বলিলেন, তুমি যদি খেজুরগুলি হস্তগত করিয়া লইতে তাহা হইলে উহা তোমারই হইত। এখন তো ওয়ারিশী সূত্রে উহা সকলের মধ্যে বন্টন করিতে হইবে।

হযরত উমর (রা)-ও হেবা সম্পন্ন হওয়ার জন্য হেবা গ্রহীতার হস্তগত হওয়ার শর্ত আরোপিত করিয়াছেন। অনুরূপভাবে উমর ইবন আবদুল আযীয (র) সম্পর্কেও অনুরূপ মত বর্ণিত আছে যে, হেবা পূর্ণতার জন্য হস্তগত হওয়া শর্ত এবং হস্তগত না করা পর্যন্ত মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় না।

নাবালেগ সন্তানের অনুকূলে হেবা করিলে অভিভাবককে উহার ঘোষণা দিতে হইবে এবং এই ক্ষেত্রে সম্পত্তি হেবাকারী পিতা-মাতার করায়ত্ত থাকিলে ইহাই নাবালেগের দখলিস্বত্ত্ব গণ্য হইবে।

হেবাকৃত বস্তু হস্তগত করার পূর্বে হেবাকারী ও হেবাগ্রহীতার যে কোন একজনের মৃত্যু হইলে উক্ত হেবা বাতিল গণ্য হইবে।”

কোন ব্যক্তি নিজ অথবা নিজের পরিবারভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের অনুকূলে হেবা করিল কিন্তু হেবাকৃত জিনিস তাহাদের অধিকারে অর্পণ করিল না, এইরূপ অবস্থায় হেবা বৈধ হইবে না।

ধারা-৪৮০

হেবার যোগ্যতা (ক) বালেগ ও সুস্থবুদ্ধির অধিকারী যে কোন ব্যক্তি নিজ সম্পত্তি অপরের অনুকূলে হেবা করিতে পারে।

(খ) যাহার অনুকূলে হেবা করা হয় তাহার উপরোক্ত বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকা জরুরী নহে, তবে তাহার জীবিত থাকা জরুরী।

ধারা-৪৮১

যেসব জিনিস হেবা করা যায় যে কোন বৈধ মাল হেবা করা যায়।

বিশ্লেষণ

যেসব জিনিস ধারা (১৮৩) অনুযায়ী “মাল” হিসাবে গণ্য সেসব জিনিস হেবা করা যায়। কিন্তু অবৈধ জিনিসের হেবা জায়েয নহে, যেমন মদ, শূকর ইত্যাদি।

ধারা-৪৮২

অবিভক্ত সম্পত্তি (5) হেবা করা (ক) যে সম্পত্তি বিভক্ত করা সম্ভব নয় তাহা হেবা করা যায়।

(খ) বিভাজনযোগ্য সম্পত্তি বিভক্ত না করিয়া হেবা করিলে তাহা ফাসিদ গণ্য হইবে; কিন্তু

(গ) এক ওয়ারিশ অপর ওয়ারিশের অনুকূলে বিভাজনযোগ্য সম্পত্তি বিভক্ত করিয়া হেবা করিতে পারে।

বিশ্লেষণ

অবিভক্ত সম্পত্তি মূলে রহিয়াছে LL (মূশা/মাশা)। স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির অবিভক্ত অংশকে মুশা বলে। যে সম্পত্তি বিভাগজনযোগ্য তাহা বিভক্ত না করিয়া দান করিলে এই দান সিদ্ধ না হইলেও সম্পূর্ণ বাতিল হইবে না। কেননা পরে উহা ভাগ করিয়া দানকৃত অংশের দখল গ্রহীতাকে প্রদান করা যাইতে পারে।

৫৭১

ধারা-৪৮৩

একাধিক ব্যক্তির অনুকূলে হেবা।

বিভাজনযোগ্য সম্পত্তি দুই বা ততোধিক ব্যক্তিকে হেবা করা হইলে এবং হেবা গ্রহীতাহাদের অংশ নির্দিষ্ট করিয়া না দেওয়া হইলে বা বন্টন করিয়া না দিলে এই হেবা ফাসিদ গণ্য হইবে। তবে হেবা গ্রহীতাগণ আলাদাভাবে নিজ নিজ অংশের দখল গ্রহণ করিলে তাহা বৈধ হইবে।

বিশ্লেষণ

.

আসমা বিনতে আবু বা (রা) আল-কাসিম ইবন মুহাম্মাদ ও ইব্‌ন আবু আতীককে বলেন, আমি আমার বােন আয়েশা (রা)-এর ওয়ারিশ হিসাবে তাঁহার গাবা নামক স্থানের সম্পত্তি লাভ করিয়াছি। মুআবিয়া (রা) ইহার বিনিময়ে এক লাখ দিরহাম দিয়াছেন। ইহা তোমাদের দুইজনের জন্য।১৭ .

মহানবী (সা) ও তাঁহার সাহাবাগণ যুদ্ধলব্ধ অবণ্টিত সম্পদ হাওয়াযিন গোত্রকে দান করিয়াছিলেন। কয়েক ব্যক্তি কর্তৃক মিলিতভাবে একদল লোককে হেবা করা বা

এক ব্যক্তি কর্তৃক একদল লোককে হেবা করা জায়েয।

ধারা-৪৮৪

যে পরিমাণ সম্পত্তি হেবা করা যায় কোন ব্যক্তি তাহার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ বা উহার অধিক বা সমস্ত সম্পত্তি নিজের কোন ওয়ারিশের অনুকূলে বা অন্য কোন ব্যক্তির অনুকূলে হেবা করিতে পারে।

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তি সুস্থ থাকা অবস্থায় তাহার সমস্ত সম্পত্তি পছন্দসই যে কোন ব্যক্তির জন্য হেবা করিতে পারে, এই ব্যাপারে সে সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী। আইনগত দিক হইতে বৈধ হইলেও ন্যায়নীতির দিক হইতে ইহা উত্তম কাজ নহে, এজন্য গুনাহগার হইতে হইবে।” কোন ব্যক্তি তাহার জীবদ্দশায় নিজের সম্পত্তির একমাত্র মালিক, যেভাবে ইচ্ছা সে উহা ভোগ-ব্যবহার করিতে পারে। তাহার মৃত্যুর সময় উপনীত হওয়ার পরই কেবল তাহাতে ওয়ারিশগণের অধিকার জন্মে।”

ধারা-৪৮৫

আজীবনের জন্য হেবা (উমরা)। কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তিকে তাহার জীবকাল পর্যন্ত সময়ের জন্য কিছু হেৰা করিলে তাহা হেৰা গ্রহীতারই হইবে এবং হেবা গ্রহীতার মৃত্যুর পর উহা তাহার (হে গ্রহীতার) ওয়ারিশগণের প্রাপ্য হইবে এবং জীবৎকালের জন্য এই দান সীমিত থাকিবে না।

৫৭২

বিশ্লেষণ

এই ধরনের হেবাকে পরিভাষায় উমরা (১৫) বলে। এই জাতীয় শর্তাধীনে হেবা করা হইলে শর্তটি বাতিল গণ্য হয় এবং হেবা বলবৎ হয়। হেবা গ্রহীতার মৃত্যুর পর উহ! তাহার (হেবা গ্রহীতার) ওয়ারিশগণের সম্পত্তিতে পরিণত হয় এবং আজীবনকালের শর্ত থাকা সত্ত্বেও দানকারী উহার মালিক হইতে পারে না। মহানবী (সা) বলেন :

اما رجل أعمر عمري له ولعقبه فاما للذي يعطاها لا ترجع الى الذي أعطاها لإنه أعطى عطاء وقعت المواريث

: “কোন ব্যক্তিকে জীবনস্বত্ব (উমরা) দেওয়া হইলে উহা তাহার জন্য ও তাহার ওয়ারিশগণের জন্য। উহা যাহাকে দেওয়া হইয়াছে তাহারই থাকিবে, যে দান করিয়াছে তাহার হাতে ফিরিয়া আসিবে না। কারণ সে এমনভাবে একটি জিনিস দান করিয়াছে যাহার উপর (গ্রহীতার) ওয়ারিশী স্বত্ব প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে।”৯০

أمسكوا عليكم أموالكم ولا تفسدوها فائه من أعمر

عمري فهي للذي أمرها حيا وميتا ولعقبه .

“তোমরা তোমাদের সম্পদ ধরিয়া রাখ, উহা নষ্ট করিও না। কোন ব্যক্তি জীবনস্বত্ব (উমরা) দান করিলে উহা সে যাহাকে দান করিয়াছে তাহার জীবনেও মরণেও এবং তাহার ওয়ারিশগণের।”১১

ধারা-৪৮৬

শর্তসাপেক্ষে রুকবা করা বৈধ শর্তসাপেক্ষে “রুকবা” করা বৈধ হইবে; এবং তাহা এই যে, দান করিবার সময় দাত দানগ্রহীতাকে বলিল, এই জিনিস তুমি ভোগ করিতে থাক। যদি আমি ভোমার পূর্বে মারা যাই তবে তুমিই উহার মালিক হইবে। আর যদি তুমি আমার আগে মারা যাও তবে উহা আমারই থাকিবে। এইভাবে দান করা বৈধ নহে, তবে উহা গ্রহীতার জন্য বলবৎ হইবে।

বিশ্লেষণ

উপরোক্তরূপশর্তে যে হেবা করা হয় তাহাকে ‘রুকবা’ বলে, যদিও উক্ত শর্তে রুকবা বৈধ নহে। তবে যাহার অনুকূলে রুকবা করা হইবে উহা তাহারই হইবে এবং তাহার মৃত্যুর পর তাহার ওয়ারিশগণ উহার মালিক হইবে।

৫৭৩

মহানবী (সা) বলেন :

LL21

+ 19,

“রুকরা যাহাকে দেওয়া হয় তাহার জন্য তাহা বৈধ।”২২।

ولا رقبى فمن أرقب شيئا فهو له حياته ومماته .

“রুকবা বৈধ নহে। যাহার অনুকূলে রুকবা করা হয় উহা তাহার জন্য তাহার জীবনেও, মরণেও।”

ولا ترقبوا من أرقب شيئا فهو سبيله .

“তোমরা রুকবা করিও না। কারণ কেহ রুকবা করিলে উহা রুকবা গ্রহীতার অধিকারে চলিয়া যায়।

বিশেষজ্ঞ আলিমগণের মতে সাধারণত কুকবা করা বৈধ। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা, মালেক ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে ইহা বৈধ নহে। তবে ইমাম আবু ইউসুফ (র) জমহুরের সহিত ঐকমত্য পোষণ করিয়াছেন। ইমাম আবু হানীফা এই ধরনের দানকে এক প্রকারের ফেরতযোগ্য ঋণ ( আরিয়াত মনে করেন।

ধারা-৪৮৭

হেবা বিল-ইওয়াব (25AIL, ) বিনিময় প্রদানের পরিবর্তে হেবা করা হইলে তাহাকে “ হেবা বিল ইওয়ায বলে এবং বিনিময় প্রদানের পর উহা কার্যকরী হইবে।

বিশ্লেষণ

হেবা বিল-ইওয়ায বিক্রয় চুক্তির অনুরূপ। অতএব ত্রুটি বা না দেখার অজুহাতে উহা পরিত্যক্ত হইতে পারে। এই ধরনের হেবা বৈধ ও কার্যকর হওয়ার জন্য দুই শর্ত পূর্ণ হইতে হইবে।

(ক) হেবা গ্রহণকারীকে অবশ্যই এবং বাস্তবিকই বিনিময় প্রদান করিতে হইবে;

(খ) হেবাকারীকে হেবাকৃত জিনিস অবিলম্বে হেবা গ্রহীতার মালিকানায় ন্যস্ত করিতে হইবে। প্রদত্ত বিনিময় কম না বেশি তাহা বিবেচনাযোগ্য নহে। বিনিময় প্রদান না করিলে হেবাকারী তাহার দান ফিরাইয়া লইতে পারে। হেবা বিল-ইওয়ায বস্তুত দুইটি হেবা।

ধারা-৪৮৮

বিনিময় প্রদানের শর্তে হেবা নির্দিষ্ট বিনিময় প্রদানের শর্ত যুক্ত করিয়া হেবা করিলে উহাকে “হেবা বিশ শত” বলে এবং সংশ্লিষ্ট শর্ত পূরণ হইলে যে কার্যকর হয়।

৬৭৪

বিশ্লেষণ

ইহাও হেবা বিল-ইওয়াযেরই অনুরূপ। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, প্রথমোক্ত ক্ষেত্রে দানগ্রহীতা কর্তৃক বিনিময় প্রদান স্বেচ্ছামূলক এবং শেষোক্ত ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক।

ধারা-৪৮৯

ঘটনা সাপেক্ষে হেবা সম্ভাব্য কোন ঘটনা বা সময়ের সহিত সংশ্লিষ্ট করিয়া হেবা করা বৈধ নহে।

বিশ্লেষণ

কোন দান সম্ভাব্য কোন ঘটনার উপর নির্ভরশীল হইতে পারে না। এই ধরনের হেবা আদৌ হেবা করা হয় নাই বলিয়া গণ্য হইবে।

ধারা-৪৯০

শর্তযুক্ত হেবা যে ক্ষেত্রে এমন কোন শর্ত যুক্ত করিয়া হেবা করা হয় যাহাতে দানের সম্পূর্ণতা ক্ষুন্ন হয় সেই ক্ষেত্রে হেবা এমনভাবে কার্যকরী হয় যেন আদৌ কোন শর্ত আরোপিত হয় নাই।

বিশ্লেষণ

হেবা কার্যকর হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী কোন শর্ত আরোপ করিলে শর্তটি বাতিল হইবে এবং হেবা বলবৎ হইবে।

ধারা-৪৯১

মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় হে মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তির হেবা করা বৈধ নহে, কিন্তু হেবাকৃত সম্পদ গ্রহীতার নিকট হস্তান্তর করিলে সর্বাধিক এক-তৃতীয়াংশ সম্পত্তিতে উহা কার্যকর হইবে এবং হস্তান্তরের পূর্বে দাতা মারা গেলে হেবা বাতিল হইয়া যাইবে।

বিশ্লেষণ

মৃত্যুশয্যায় হেবা করা জায়েয নহে। তবুও এই অবস্থায় কেহ হেবা করিলে তাহার সর্বাধিক এক-তৃতীয়াংশ সম্পদে উহা কার্যকর হইবে। কিন্তু গ্রহীতার নিকট হেবাকৃত সম্পদ হস্তান্তরের পূর্বে দাতা মারা গেলে হেবা বাতিল হইয়া যাইবে এবং দাতার ওয়ারিশগণই উহার মালিক হইবে।

ধারা-৪৯২

ঋণগ্রহীতার অনুকূলে হেবা ঋণগ্রহীতার অনুকূলে ঋণ হেবা করা বৈধ ও পছন্দনীয়।

৬৭৫

বিশ্লেষণ

ঋণগ্রহীতা দান গ্রহণ করার কথা বাচনিক ব্যক্ত না করিলেও হেবা কার্যকর হইবে, তবে উহা প্রত্যাখ্যান করিলে হেবা বাতিল হইবে। তৃতীয় ব্যক্তিকে ঋণ হেবা করিলে ঋণগ্রহীতাকে ঋণ পরিশোধের এবং হেবা গ্রহীতাকে উহ আদায় করিয়া নেওয়ার নির্দেশ দিতে হইবে। ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিলে হেবা বাতিল হইয়া যাইবে।” হাসান ইব্‌ন আলী (রা) “তাঁহার পাওনা টাকা একজনকে দান করিয়াছিলেন” (বুখারী, হিবা, অনুচ্ছেদ : পাওনা মাফ করিয়া দেওয়া)।

ধারা-৪৯৩

অমুসলিমের অনুকূলে হেবা কোন মুসলিম ব্যক্তি অমুসলিম ব্যক্তির (যিশ্মী) অনুকূলে হেবা করিতে পারে।

বিশ্লেষণ

হেবার বিধানের ক্ষেত্রে অমুসলিমগণ মুসলমানের সমপর্যায়ভুক্ত।” মহান আল্লাহ্ বলেন :

لا يهم الله عن الذين لم يقتلوكم في الين ولم يخرجوكم من دياركم أن تبهم وتقسطوا إليهم إن الله يحب المقسطين .

“দীনের ব্যাপারে যাহারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নাই এবং তোমাদেরকে তোমাদের আবাসভূমি হইতে উচ্ছেদ করে নাই তাহাদের প্রতি মহানুভবতা প্রদশ, ও ন্যায়বিচার করিতে আল্লাহ্ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। আল্লাহ্ ন্যায়পরায়ণদেরকে ভালোবাসেন” (মুমতাহানা : ৮)।

“মহানবী (সা) উমর (রা)-কে একখানা রেশমী বস্ত্র দান করিলে তিনি উহা মক্কায় অবস্থানরত তাঁহার এক মুশরিক ভাইকে প্রদান করেন” (আবু দাউদ, কিতাবুল লিবাস, বাব মা জাআ ফী লুবসিল হারীর, নং ৪০৪০)।

ধারা-৪৯৪

মুসলিম ব্যক্তির অনুকূলে অমুসলিম ব্যক্তির হেবা কোন অমুসলিম ব্যক্তি কোন মুসলিম ব্যক্তির অনুকূলে হেবা করিলে উহা এহণ করা বৈধ।

বিশ্লেষণ

অনুরূপভাবে অমুসলিমদের দান গ্রহণ করাও মুসলমানদের জন্য বৈধ। রাসূলুল্লাহ (স)-কে একটি (রান্না করা) বিষ মিশ্রিত বকরী (এক ইহূদী নারী কর্তৃক) উপহার

৫৭৬

দেওয়া হইয়াছিল। আইলার অমুসলিম শাসক রাসূলুল্লাহ্ (স)-কে একটি সাদা খচ্চর উপহার দিয়াছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (স) তাহাকে একটি মূল্যবান চাদর উপহার দিয়াছিলেন” (বুখারী, কিতাবুল হিবা, অনুচ্ছেদ ও মুশরিকদের উপহার প্রদান)।

ধারা-৪৯৫ দাতা ও গ্রহীতার মতভেদে সাক্ষীর প্রয়োজনীয়তা কোন ব্যক্তি হেবা করিয়া সংশ্লিষ্ট বস্তুর মালিকানা অর্পণের পর উহা অস্বীকার করিলে হেবা গ্রহীতা সাক্ষী উপস্থিত করিয়া নিজের অনুকূলে হেবা প্রমাণ করিতে পারে।

বিশ্লেষণ

সাক্ষীগণ যদি বলে যে, দাতা সংশ্লিষ্ট জিনিস দাবিদারকে হেবা করিয়াছিল এবং তার দখলও অৰ্পণ করিয়াছিল তবে জ্ঞায়দের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হইবে।

‘ইন জুদআনের আযাদকৃত দাস সুহাইবের সন্তানগণ দুইটি ঘর ও একটি কামরার অধিকার দাবি করিয়া বলিল যে, রাসূলুম্লাহ (সা) ঐগুলি সুহাইবকে সান করিয়াছিলেন। মারওয়ান (মদীনার গভর্নর) বলিলেন, এই ব্যাপারে তোমাদের কোন সাক্ষী আছে কি? তাহারা বলিল, ইবন উমর (রা) সাক্ষী আছেন। তিনি উপস্থিত হইয়া সাক্ষ্য দিলেন যে, মহানবী (সা) সুহাইবকে ঘর দুইটি ও একটি কামরা দান করিয়াছেন। অতএব তাঁহার সাক্ষ্যের উপর নির্ভর করিয়া মারওয়ান তাহাদের অনুকূলে রায় প্রদান করিলেন।

ধারা-৪৯৬

হেবা রদকরণ হেৰা বদ কর বাবস্থায় মাকরূহ হইলেও আইনের দৃষ্টিতে বৈধ।

বিশ্লেষণ

হেবা করিয়া দখল অর্পণের পর উহা রদ করা যায় না, তাহা রক্ত সম্পর্কীয় মাহরাম *মাত্মীয়, অাহরাম আত্মীয়, রক্ত সম্পর্কীয় নহে কিন্তু মাহরাম আত্মীয় বা তৃতীয় কোন ব্যক্তির অনুকূলে করা হউক না কেন। কিন্তু দখলস্বত্ব না দেওয়া পর্যন্ত হেবা রদ করা বৈধ হইলেও উহা ঘৃণিত কাজ। মহানবী (স) বলেন :

العائد في هبة كالقائد قيئه .

“যে ব্যক্তি দান করিয়া তাহা আবার ফেরত নেয় সে ঐ ব্যক্তির মত যে বমন করিয়া পুনরায় উহা ভক্ষণ করে।”৩৫

“ ليس لنا مثل السوء الذي يعود في هبته كالكلب يرجع

: ৬  

৫৭৭

“নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন আমাদের জন্য শোভনীয় নহে। যে ব্যক্তি দান করিয়া উহা ফেরত নেয় সে ঐ কুকুরের সমতুল্য যে বমি করিয়া পুনরায় তাহা গলাধকরণ করে” (বুখারী, হিবা, নং ২৪৩৭; আবূ দাউদ হিবা, বাব ফী কারাহিয়াতির রুজু ফিল-হিবা, নং ২১৩৩; নাসাঈ, হিবা, নং ৩৭২০; ইবন মাজা, হিবা, নৃং ২৩৭৭)।

তথ্যনির্দেশিকা ১. কানযুদ দাকাইক-এর বরাতে আলমগিরী, কিতাবুল হিবা, ৪খ, পৃ. ৩৭৪ :

هي تمليك العين بلا عوض

ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, বাব কাকূলিল হাদয়ি, আবূ হুরায়রা (রা) কর্তৃক বর্ণিত; আরও দ্র. নাসাবুর রায়াহ লি-আহাদীসিল হিদায়া, ২খ, পৃ ২২৯-৩০, কিতাবুল হিবা (হিবা সম্পর্কিত সব হাদীস এখানে পাওয়া যাইবে)। কুদুরী গ্রন্থে বলা হইয়াছে : 13 J uly ২০১৬। ১. JL কিতাবুল হিবা, পৃ. ২১১; আরও দ্র. হিদায়া, ২য় খণ্ড, কিতাবুল হিবা,

পৃ. ২৬৭। ৪. কুদূরী, ঐ, পৃ. ২১৬-৭; হিদায়া, ২খ., পৃ. ২৬৮।

নাসাবুর রায়াহ, হেবা, ২খ, পৃ. ২৩০; মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাকের বরাতে। মুওয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ, কিতাবুল বুয়ু (বাংলা অনু.), অনুচ্ছেদ ৩০, হাদীস নং

৮০৯। ৭. নাসাবুর রায়াহ, ২খ, পৃ. ২৩০, কিতাবুল হিবা (আবদুর রাজ্জাকের আল-মুসান্নাফ-এর

বরাতে)। ৯ ও ১০. মুওয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ (বাংলা অনু.), ৮০৮-৮১১ নং হাদীসের নিচে ইমাম

মুহাম্মাদ (র)-এর অভিমত দ্র.। ১১. আল-মাবসূত, ১২খ, পৃ. ৬১। ১২. মুজামু লুগাতিল ফুকাহা, পৃ. ৪৩০ : 19 ১ ১ –

مفزرة – حصة من شئ غير مقسوم

হিদায়া, কিতাবুল হিবা, ২, পৃ. ২৭১। ১৪. হিদায়া, ২খ, পৃ. ২৭২।

বুখারী, কিতাবুল হিবা, বাব হিবাতিল ওয়াহিদ লিল-জামাআব। ঐ, বাবুল হি আল-

মাদাত ওয়া গাইরিল মাবুদাত ওয়াল মাসূমাত ওয়া গাইরিল মাকসূমাহ।

ঐ, বাব ইযা ওয়াহাবা জামআতুন লিকাওমিন। ১৮. আল-বাহরুর রাইক, কিতাবুল হিৰা, মিসরীয় সং, ১৩১১ হি., ৭খ.। অত্র গ্রন্থে

হকদারগণকে বঞ্চিত করিয়া সমস্ত সম্পত্তি হেবা করাকে মাকরূহ তাহরিমী গণ্য করা হইয়াছে।

৫৭৮

১৯. বাদাইউস সানাই, মিসর ১৩২৮ হি., কিতাবুল হি, ৬খ, পৃ. ১২৭। ২০. মুওয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ (বাংলা অনু.), ব্যবসা-বাণিজ্য অধ্যায়, বাব ৩১, হাদীস

৮১২। আরও দ্র. মুখতাসার সহীহ মুসলিম (হাফিজ আল-মুনযিরী), কিতাবুল ওয়াসায়া ………., বাব ফীর রাজুলি য়ামুরু রাজুলান উমরা, হাদীস নং ৯২২ (মূল গ্রন্থ ১৬২৫); তিরমিযী, কিতাবুল আহুকাম, বাব আল-উমরা, হাদীস ১৩৫০; নাসাঈ,

উমরা, নং ৩৭৭৬; ইবন মাজা, কিতাবুল হিবা, বাব আল-উমরা, নং ১৩৮০। ২১. সহীহ মুসলিম, ঐ, হাদীস নং ৯৯৩।

আবু দাউদ, কিতাবুল বুয়ু, বাব ফির-রুকবা, হাদীস নং ৩৫৫৮; তিরমিযী, কিতাবুল আহকাম, বাব আর-রুকবা, হাদীস ১৩৫১; ইবন মাজা, কিতাবুল হিবা, বাব আর-রুক, হাদীস ২৩৮২। ইবন মাজা, হিবা, বাব ঐ, হাদীস ২৩৮২। আবু দাউদ, কিতাবুল বুয়ূ ওয়াল ইজারা, বাব আর-রুকবা, হাদীস ৩৫৫৯; নাসাঈ, বাব আর-রুকবা, হাদীস ৩৭৩৮। শামসুল হক আযীমাবাদী, আওনুল মাবুদ (শরহে সুনান আবী দাউদ), হিদায়া,

কিতাবুল হিবা, ২খ, পৃ. ২৭৬। ২৬. আলমগিরী, কিতাবুল হিবা, বাব হিবা বিল-ইওয়াদ। ২৭. হিদায়া, কিতাবুল হিবা, পৃ. ২৭৬; আলমগিরী, খ, পৃ. ৩৯৬।

আলমগিরী, কিতাবুল হিবা, বাব হিবাতিল মারীদ, ৪খ, পৃ. ৪০০। ২৯. আলামগিরী, কিতাবুল হিবা, বাব ফী হিবাতিদ-দায়ন মিম্মান আলাইহিদ দায়ন,

৪খ, পৃ. ৩৮৪-৫। আলমগিরী, কিতাবুল হিবা, বাব হিবাতু আহলিয যিম্মা :

واهل الذمة في حكم الهبة بمنزلة المسلمين لانهم التزموا

احكام الاسلام فيما يرجع الى المعاملة .

আলমগিরী, কিতাবুল হিবা, বাব ফী ইখতিলাফিল ওয়াহিব ওয়াল মাওহ্ব…. ৪খ,

পৃ. ৩৯৮। ৩২. সহীহ বুখারী, কিতাবুল হিবা, নং ২৪৩৯ (ই. ফা. বা. সং.)। ৩৩. আলমগিরী, হিবা, ৪খ, পৃ. ৩৯৮। ৩৪. আলমগিরী, কিতাবুল হিবা, বাব ফির রুজু ফিল হিবা, ৪খ, পৃ. ৩৮৫। ৩৫. মুসলিম, কিতাবুল হিবা, বাব তাহরীমির রুজু ফিস-সাদাকা ওয়াল হিবা বাদাল

কাবৃন্দ, নং ১৬২২; বুখারী, কিতাবুল হিবা, বাব লা ইয়াহিলু লি-আহাদিন আন-ইয়ারজিআ ফী হিবাতিহী ওয়া সাদাকাতিহী, নং ২৪৩৬ (ই. ফা, সং.); নাসাঈ, কিতাবুল হিবা, নং ৩৭২১; ইবন মাজা, কিতাবুল হিবা, নং ২৩৮৫।

1 Comment
Collapse Comments

‘কিতাবুল হিবা’- বইটি কোথায় পাবো,দাম কত।কিনবো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *