১৮ মার্চ, বৃহস্পতিবার ১৯৭১
ঢাকা টেলিভিশন স্বাধিকার আন্দোলনকে তুঙ্গে তুলে দিয়েছে তার অভিনব গানের অনুষ্ঠান দিয়ে। এমন অনুষ্ঠান দেখি নাই কভু। ঢাকার যত প্রথম সারির নামকরা সঙ্গীতশিল্পী-ফেরদৌসী রহমান, সাবিনা ইয়াসমিন, শাহনাজ বেগম, আমান আরা বেগম, সৈয়দ আবদুল হাদী, খোন্দকার ফারুক আহমদ, রথীন্দ্রনাথ রায় এবং আরো অনেকে মিলে যখন গাইতে থাকেন সংগ্রাম সংগ্রাম সংগ্রাম। চলবেই দিনরাত অবিরাম–আর তাদের কয়েকটা চেহারা হাজার চেহারা হয়ে যায়; তখন মনে হয় বুকের মধ্যে, ঘরের মধ্যে ঝড় উঠে গেছে, সে ঝড়ের মাতামাতি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
মাসুমাকে জিগ্যেস করি, কি করে এমন অবাক কাণ্ড সম্ভব হল? কে করেছে? মাসুমা বলে, এসব মন্টু মামার কীর্তি।
মন্টু অর্থাৎ মোস্তফা মনোয়ারকে ধরলাম একদিন, মই বল না, কি কায়দায় শিল্পীদের একেকটা মাথা হাজার মাথা হয়ে যায়? দুতিন সার দাঁড়ানো মানুষ হাজার মানুষ হয়ে যায়?
মোস্তফা মনোয়ার তার স্বভাবসিদ্ধ বিনীত লাজুক হাসি হেসে মাথা চুলকে বলল, এই আর কি। যন্ত্রপাতি বিশেষ নেই তো আমাদের। এই আয়না-টায়না দিয়ে অনেক কসরত করে–এই আর কি।
মন্টুটা এই রকমই। নিজের কোন কৃতিত্বের কথা নিজের মুখে বলতে হলে এই রকমই তো তো করে!
মটুর কীর্তি এরকম অভিনব পদ্ধতিতে আরো কয়েকটা গানের টিভি চিত্রায়ন আমার ঘরে আগুন জ্বেলেছে, শান্তি নিয়েছে কেড়ে, জন্ম আমার ধন্য হল মাগো, একতারা তুই দেশের কথা বলরে আমায় বল। এইসব গান টিভিতে যতো দেখানো হয়, ঢাকার ঘরের ভেতরে সোফায় বসে থাকা শান্ত, নিরীহ মানুষের বুকেও ততো ঝড়ের দোলা লাগে, বাইরে পথে-প্রান্তরে-বন্দরে-জংশনে যারা রক্তাক্ত সংঘর্ষে নেমেছে, তাদের মাঝে হুটে চলে যেতে ইচ্ছে করে।