॥ ১৮ ॥
ছন্দাকে নিয়ে আসা হল বটে, কিন্তু সে যেন সাপের মুখ থেকে ব্যাঙকে ছাড়িয়ে আনা। শেষ অবধি সর্পদষ্ট ব্যাং বাঁচে না। যে দু তিন দিন ছন্দা রেমির কাছে ছিল সেই কয়দিন সে কথাই বলত না। চোখে সর্বদা এক ঘোর-ঘোর চাউনি। ফাঁক পেলেই কাঁদতে বসত। রেমির সে এক জ্বালা। একদিন ছন্দা হঠাৎ বলল, সমীরদা কোথায় গেল খোঁজ নেবে না ৱেমি?
রেমি বিরক্ত হয়ে বলল, আবার তার খোঁজ কেন?
কোথায় আছে কী করছে জানি না তো, তাই ভয় হচ্ছে। যদি সুইসাইড করে!
সমীর কি খোকা? আজকালকার ছেলেরা অত হট করে মরে না।
তবু একটু খোঁজ নাও। ধ্রুবদাকে বলল, ঠিক খোঁজ এনে দেবে।
তোমার কি সমীরের জন্য মন কেমন করছে?
করছে। ওর তো দোষ নেই। আমারই কেমন পাগলামি এল। নিজেও ডুবলাম, ওকেও ডোবালাম।
রেমি বিরক্ত হল। বলল, দু নৌকায় পা দিও না ছন্দা। একটা পথ বেছে নাও। এখনো যদি সমীরের প্রতি তোমার উইকনেস থেকে থাকে তাহলে কিন্তু খুব বিপদে পড়বে।
ছন্দা অসহায়ভাবে বলল, আমি যে ওকে ভীষণ অপমান করলাম। এটা তো ওর পাওনা ছিল না । প্লীজ ওর একটু খবর এনে দাও আমাকে, তোমাদের পায়ে পড়ি।
কিন্তু সমীরের খোঁজ করা তো রেমির পক্ষে সম্ভব নয়। ছন্দা আসায় ধ্রুব একটু সংযত থাকে বটে, কিন্তু যেন একটা আনমনা উড়ু উড়ু ভাব। মুখ সর্বদা গম্ভীর। বেশীর ভাগ সময়ে বাইরেই থাকে। তাছাড়া ধুবকে সমীরের খবর আনার কথা বলতে একটু লজ্জা পায় রেমি। কেন পায় তা স্পষ্ট করে ভাবতে চায় না। তবে তার ধারণা, দারজিলিং-এর সেই ঘটনার কথা ধ্রুব জানে। শ্বশুর মশাইকে বললে অবশ্য কয়েক ঘন্টার মধ্যে শুধু খবর নয়, সমীরকে সুদ্ধ এনে হাজির করবে পুলিশ। কিন্তু শ্বশুরমশাইকে এসব তো বলা যাবে না। কৃষ্ণকান্ত ভিতরকার ঘটনা কিছুই জানেন না। বন্ধুর মেয়ে বেড়াতে এসেছে বলেই ধরে নিয়েছেন তিনি। কিন্তু সমীরকে খোঁজার কথা বললেই জেরা শুরু করবেন, আর সে জেরার মুখে রেমির ভিতর থেকে সব কথা টেনে বের করে নেবেন।
অগত্যা রেমি ধ্রুবকেই ধরল, ওগো, ছন্দা সমীরবাবুর জন্য খুব চিন্তা করছে। একটু খবর আনত পারো না?
ধ্রুব অবাক হয়ে বলল, খবর কিসের?
লোকটা আত্মহত্যা -টত্যা করল নাকি, খুব ভাবছে ছন্দা।
ধ্রুব একটু হেসে বলল, সে মাল সমীর নয়। ছন্দাকে ভাবতে হবে না।
বলব, কিন্তু তাতে কাজ হবে না।।
ধ্রুব একটু দোনোমোননা করে বলল, সমীর টাওয়ার হোটেলে আছে। বেশ মেজাজেই আছে। রোজই আমাদের দেখা হয়।
রেমি আকাশ থেকে পড়ল, দেখা হয়! তোমাদের দেখা হয়?
হবে না কেন? একই জায়গায় বসে আমরা মাল খাই। সমীর বেশ ভাল টানে।
রেমি কী বলবে ভেবে পেলো না অনেকক্ষণ। তারপর বলল, এ কথাটা আমাকে বলোনি!
বলার কী! বলে ধ্রুব নির্বিকার মুখ করে বেরিয়ে গেল।
রাগে দাঁত কিড়মিড় করল রেমি। তার রাগের কারণ সমীরের সঙ্গে খুব সম্পর্ক রাখবে কেন? ফুঁসতে ফুঁসতে সে গিয়ে ছন্দাকে বলল, তোমাকে ভাবতে হবে না। সমীরের সঙ্গে তোমার ধ্রুবদার রোজ দেখা হয়। দুজনে একসঙ্গে বসে মদ যায়।
ছন্দা যে খুব খুশি আর নিশ্চিন্ত হল তা নয়। স্তিমিত চোখে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। যেন সমীর ভাল আছে এটা প্রত্যাশিত খবর নয়। খুব নিরুৎসুক গলায় বলল, ও, আচ্ছ।
এতে রেমির রাগ বাড়ল বৈ কমল না।
ছন্দার ফিরে যাওয়ার জন্য প্লেনের টিকিট কাটা হল। ধ্রুব সংসারের কোনো কাজেই নিজেকে উড়ায় না। কিন্তু ছন্দার প্লেনের টিকিট সে নিজেই কেটে আনল। একটা নয়, দুটো টিকিট দুটো রেমির হাতে দিয়ে বলল, তুমিও ছন্দার সঙ্গে যাও। দিন দুই থেকে ফিরে এসো।
রিমি অবাক, আমি! আমি কেন যাবো?
যদি কোনো কথা ওঠে তবে তুমি সামাল দিতে পারবে।
অসম্ভব! আমি যেতে পারব না। ছন্দাও তো আমাকে যেতে বলেনি ওর সঙ্গে।
ওর মাথার ঠিক নেই। আমি বলছি, তোমার যাওয়া দরকার। সুদর্শন কাকা কিছুই জানেননা, কিন্তু ছন্দার হাবভাব লেখে ওঁর সন্দেহ হতে পারে। আর ছন্দার এখন ব্যালানস নেই। এ অবস্থায় ঠান্ডা মাথার একজন কারো ওর সঙ্গে থাকা উচিত।
রেমি প্রস্তাবটায় খুশি হয়নি, তবে যৌক্তিকতটা বুঝল। সে বলল, গেলে আমি একা কেন? তুমিও চলো।
যেতাম। কিন্তু আমার আবার একটা চাকরি হয়েছে। কালই জয়েন করতে হবে।
রেমিকে যেতে হল। কিন্তু বাগডোগরায় নেমেই সে অবাক। সমীর এবং একজন নেপালী ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে হাজির। সমীরের মুখ গম্ভীর।
মেজাজী একজন ডাকাবুকো শ্বশুরের সঙ্গ কয়ে আজকাল রেমিরও কিছু মেজাজ হয়েছে। কর্তৃত্বের ভাবও এসেছে খানিকটা। সে রাগের গলায় বলল, আপনি?
সমীর খুব মৃদু স্বরে বলল, প্ল্যানটা আমার নয়। ধ্রুবর। সে আমাকে যেমন বলেছে, করেছি।
উনি তো আমাকে কিছু বলেননি।
সেটা আমি জানি না। যা সত্যি তাই বললাম। বিশ্বাস করা না-করা আপনার মর্জি।
বেশ চ্যাটাং চাটাং কথা। রেমির মেজাজ আরো চড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এয়ারপোরটে একটা সিন তৈরি করা উচিত হবে না বলে চেপে গেল। ছন্দা সমীরকে দেখেই সেই যে এক ধরণের অপরাধী ভাব করে নতমস্তক হল, আর ঘাড় তুললই না।
সুদর্শনবাবুর বাড়িতে পৌঁছে কিছুক্ষণের মধ্যেই রেমি বুঝতে পারল ছন্দার কোনো ভয় নেই। কেউ কিছু টের পায়নি। এদের যা বোঝানো হয়েছে তা হল, ছন্দা কলকাতায় গিয়ে রেমির কাছে কয়েকদিন থেকে যায়। তার দেরী হবে বলে সমীর আগেই ফিরে এসেছে। সহজ সরল বিশ্বাসযোগ্য গল্প। সুতরাং রেমির কাজ ফুরিয়ে গেল।
সে সুদর্শনবাবুকে বলল, কাকু, আমি কালই ফিরে যাবো।
সুদর্শনবাবু অবাক হয়ে বললেন, সে কী? আমাকে যে ধ্রুব ট্রাংক কল করে জানিয়েছে যে, তুমি ছন্দার বিয়ে পার করে যাবে!
রেমির এক গাল মাছি। সর্বনাশ! অতদিন থাকতে হবে! এটা কি ধ্রুবর ষড়যন্ত্র?
রন্ধ্রে রন্ধ্রে তার রাগের হলকা বেরোচ্ছিল। তবে সুদর্শবাবুকে কিছু বলে লাভ নেই। ছাদে গিয়ে কিছুক্ষণ যে তার উত্তপ্ত মাথাটিকে ঠাণ্ডা করল। তারপর স্থির মাথায় ভাবতে বসল।
অনেক ভেবে তার মনে হল, ধ্রুব হয়তো খুব ভুল সিদ্ধান্ত নেয়নি। অবশ্য সিদ্ধান্তটার কথা তার রেমিকে জানানো উচিত ছিল। কিন্তু জানালে হয়তো বেমি আসত না। তাবে ছন্দার বিয়ে পর্যন্ত এ বাড়িতে থাকাটা হয়তো দরকার। ছন্দা আর সমীরের মধ্যে সে একটা ব্যারিকেডের কাজ করতে পারবে। ওদের দুজনের কারোই মনের ভারসাম্য নেই। কখন কী করে বসে! আবার হয়তো পালাবে বা আরো খারাপ কিছু করে বসবে।
রেমি থেকে গেল।
তবে থাকাটা আগের বারের মতো সুখকর হল না। ছন্দা হাসে না, কথা বলেনা, দূরে দূরে থাকে। নন্দার একটা পরীক্ষা সামনে। সমীর লজায় কাছে আসে না। অদ্ভুত এক পরিস্থিতি। তবু রেমি দাঁত মুখ টিপে বইল। ধ্রুবকে একটা চিঠি দিল না বা টেলিফোনে কথা বলল না। শুধু শ্বশুরমশাইকে টেলিফোন করে ব্যাপারটা জানাল। কৃষ্ণকান্ত বললেন, ভালই হয়েছে। ধ্রুবও বলছিল আমাকে। সুদর্শনের মেয়ের বিয়েতে আমি তা যেতে পারছি না, আমাকে দিন সাতেকের জন্য ওয়েসট জামানি যেতে হচ্ছে। তুমিই আমাদের রিপ্রেজেনটেটিভ হয়ে থাকো।
কিন্তু সারাটা দিন চুপচাপ কাঁহাতক থাকা যায়? একা একা বেড়াতে তার ভাল লাগে না। মেয়েদের একা বাইরে বেরোনো শ্বশুরমশাই পছন্দ করেন না বলে রেমি পারতপক্ষে একা কোথাও যায় না।
সময়টা খুবই খারাপ কাটবার কথা ছিল রেমির। কিন্তু সে শিলিগুড়িতে আসার দিন দুয়েকের মধ্যেই একটা ঘটনা ঘটল। বিকেলে ছাদে একা বসেছিল রেমি। ছন্দা নিজের ঘরে স্বেচ্ছাবন্দী। নন্দা কলেজ থেকে ফেরেনি। হঠাৎ সমীর রাঙা মুখে ছাদে এসে হাজির।
রেমি, আপনাকে একটা খবর দিতে এলাম।
খবর! রেমির বুক ধড়ফড় করতে লাগল। খারাপ খবর নয় তো!
সমীর বলল, খবরটা খুব উপাদেয় নয়। কৃষ্ণকান্ত বাবুর হুকুম হয়েছে আমাকে কালকের ফ্লাইটেই কলকাতা যেতে হবে। কী যেন জরুরী দরকার।
রেমি ব্যাপারটা বুঝল না। বলল, তাই নাকি?
সমীর একটু হাসল। খুব শ্লোষের হাসি। বলল, আপনি হয়তো ব্যাপারটা তলিয়ে বোঝেননি।
রেমি সরলভাবে বলল, না।
কৃষ্ণকান্তবাবুর সঙ্গে আমার যোগাযোগ খুবই ক্ষীণ। আমাকে তাঁর কোন কারণেই খুব জরুরী কাজে ডেকে পাঠানোর মানেই হয় না। আগে কোনোদিন তেমন প্রয়োজন দেখাও দেয়নি।
রেমি বোকার মতো বলল, ডেকেছেন যখন নিশ্চয়ই কোনো কাজ আছে। আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন?
রেগে যাওয়ার কারণ আছে বলেই। উনি আমাকে এখান থেকে সরিয়ে নিতে চাইছেন, আপনি এখানে আছেন বলে।
তার মানে?
আপনার শ্বশুরমশাই চান না আপনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার কোনো চানস আমি পাই।
যাঃ, কী যে সব আবোল তাবোল বলছেন।
একটু ভেবে দেখলে আপনিও বুঝবেন। কাকা এখন আমাকে ছাড়তে রাজি নন। সামনে ছন্দার বিয়ে। আমাকে তাঁর এ সময়ে দরকার। তবু কৃষ্ণকান্তবাবু ইনসিস্ট করছেন, যেন অবশ্যই আমাকে কলকাতা পাঠানো হয়। কোনো যুক্তিই তিনি মানতে রাজি নন।
রেমি শশুরের পক্ষ নিয়ে বেশ রাগের গলায় বলল, তাতে কী প্রমাণ হয়?
সমীরকে খুবই উত্তেজিত দেখাচ্ছিনা। প্রায় রুদ্ধস্বরে সে বলল, তাতে একটাই জিনিস প্রমাণ হয় রেমি। ক্ষমতাবান লোকেরা যা খুশি করতে পারে। তারা ডুগডুগি বাজালেই আমাদের নাচতে হবে
রেমি রেগে যেতে গিয়েও পারল না। সমীরের কথার ভিতরকার সত্যটুকু তাকে স্পর্শ করে থাকবে। শ্বশুরকে সে ভীষণ ভালবাসে, ভক্তি শ্রদ্ধাও করে। কিন্তু এও ঠিক, লোকটি অসম্ভব প্রভুত্ব করতে ভালবাসে, ভীষণ জেদী, অতিশয় কঠোর মনোভাব সম্পন্ন।
রেমি কোমল স্বরে বলল, ঠিক আছে। আপনি না হয় যাবেন না।
সে ক্ষেত্রে রিস্কটা কে নেবে? আপনি?
কিসের রিস্ক? রেমি অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বলে।
রিস্ক অনেক। আমার কাকা সেটা হাড়ে হাড়ে জানে। কৃষ্ণকান্তকে চটালে কাকাকে এই উত্তরবঙ্গেও ব্যবসা করে খেতে হবে না।
আপনি ব্যাপারটাকে ভীষণ জটিল করে তুলছেন।
সমীর সে কথায় কান না দিয়ে বলল, ইন ফ্যাকট কাকাও ভয় পাচ্ছেন। তাঁর যদিও মত ছিল না, তবু বলছেন, কৃষ্ণকান্তর কথা ফেলা ঠিক হবে না, তুই গিয়ে ঘুরে আয়।
তাই আপনি আমার কাছে এসেছেন?
আমি যে জানি, এর পিছনের কারণটা হলেন আপনি।
এবার রেমি লজ্জায় এবং রাগে লাল হয়ে উঠল। শ্বশুরমশাই কাজটা ঠিক করেননি। রেমিকে তাঁর বিশ্বাস করা উচিত ছিল। তাছাড়া ধ্রুব তো এসব গ্রাহাও করে না, শশুর হয়ে ওঁর তাহলে এত মাথাব্যথা কেন?
রেমি হঠাং অত্যন্ত দৃঢ় স্বরে বলল, রিস্ক আমারই। আপনাকে যেতে হবে না।
সমীর বোধহয় একটু অবাক হল। বলল, সত্যিই রিস্ক নেবেন?
নেবো। আপনার সন্দেহটা দুর করা দরকার। আমার শ্বশুরমশাই অতটা মীন নন।
মীন কথাটা আমি কিন্তু উচ্চারণ করিনি।
আপনি সেটাই বোঝাতে চাইছেন।
না। সমীর মাথা নেড়ে একটু শ্লেষের গলায় বলল, বরং আমি বলতে চাইছিলাম কৃষ্ণকান্তবাবু বড় বেশী পিউরিটান। বঙ্কিমের একটা লাইন আছে জানেন! ইহারা কুকুর মারে, কিন্তু হাঁড়ি ফেলে না।
তার মানে!
কৃষ্ণকান্ত তাঁর পুত্রবধূকে কিছুই বলবেন না, কিন্তু দরকার হলে আমাকে কান ধরে কলকাতা পর্যন্ত দৌড় করাবেন। ওঁর পিউরিটানিজমও একপেশে।
রেমি তর্ক করল না। কারণ ভিতরে ভিতরে তারও কিছু ভূমিক্ষয় হয়ে থাকবে। শ্বশুরের ওপর অনেক কারণে অনেকবারই ক্ষুব্ধ হয়েছে সে তবে কোনোবারই স্বশুরের ব্যবহার তাকে মারাত্মক আঘাত করেনি, এটা করল।
সারা রাত ঘুমোলো না রেমি। মাথা গরম। কখনো চোখে জল আসে, কখনো শরীর দিয়ে রাগের হলকা বেরোয়।
সকালে উঠেই স্নান করে পোশাক পরল সে। সমীরকে ডেকে বলল, চলুন কোথাও একটু বেড়াতে যাই।
সমীর বিস্মিত হয়ে বলে, তাহলে কলকাতা যাবো না বলছেন!
না, কিছুতেই না।
দেখবেন গরীবকে ধনেপ্রাণে মারবেন না।
রেমি বলল, মরলে আমিই মরব। আপনার ভয় নেই।
সেদিন একটা অ্যামবাসাডার গাড়িতে তারা গেল জলঢাকা অবধি। সাইটে সমীরের একটু কাজও ছিল।
পথে প্রথম দিকটায় দুজনের কেউই কথা বলেনি। অনেকক্ষণ বাদে সমীর বলল, ছন্দার ব্যাপারে আপনি এবং ধ্রুব আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।
রেমি অবাক হয়ে বলল, সে কী! আমি তো উল্টো ভেবেছিলাম।
সমীর মাথা নেড়ে বলল, না। আমি প্রায় ছেলেবেলা থেকে ওকে ভালবাসি ঠিকই, কিন্তু বরাবর আমার একটা দ্বিধাও ছিল। ছন্দা পাগলামি না করলে আমি এই কাণ্ড করতাম না।
রেমি বলল, জানি। ছেলেরা রিস্ক নিতে ভয় পায়।
হ্যাঁ। কারণ ছেলেরা অগ্র পশ্চাৎ বিবেচনা করে। মেয়েরা করে না। আমি ছন্দাকে বিয়ে করলে কাকা আমার মুখদর্শন করতেন না। ছন্দা আর এবাড়িতে ঢুকতে পেত না। আমরা অসামাজিক হয়ে যেতাম।
আপনি কি আর ছন্দাকে ভালবাসেন না?
সে কথা বলা কঠিন। হয়তো বাসি। আর বাসি বলেই চাই, ওর ভাল হোক।
ভালই কি হচ্ছে?
মনে তো হয়। অন্য ছেলের সঙ্গে বিয়ে হলে ও প্রথমটায় খুব অসুখী থাকবে ঠিকই, কিন্তু ক্রমে ক্রমে সেটা কেটে যাবে।
আপনার মনের অবস্থা কী?
কাকাকে খুব বড় একটা আঘাত দিতে হচ্ছে না এটা ভেবে আমি স্বস্তি পাচ্ছি। আপনি জানেন না, আমি আমার কাকাকে উয়িণ ভালবাসি। নিজের বাবার চেয়েও বেশী। আমি কাকার কাছেই মানুষ বলতে গেলে।
রেমি বহুদিন পর একটা তৃপ্তি বোধ করতে লাগল।
সমীরের সঙ্গে সেই যে ভাব হয়ে গেল তা আরও প্রগাঢ় হল কয়েক দিনে।
কতটা প্রগাঢ়? তা রেমি জানে না। তবে সে একটা কথা নিজের বুক ছুঁয়ে বলতে পারে, সেটা প্রেম নয়। যৌন আবেগ নয়। তখন তাদের কারো মনের অবস্থাই তেমন স্তরে নেই।
ছন্দার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর যখন রেমি ফিরে এল তখনও কৃষ্ণকান্ত জারমানি থেকে ফেরেননি। ধ্রুব তার নতুন চাকরির কাজে পুনা গেছে।
নিজের গর্ভ সঞ্চারের ব্যাপারটি এখনই সহসা টের পেল রেমি।
ধ্রুব ফিরে আসতেই বলল, কী কাণ্ড জানো?
না, কী কাণ্ড?
বলব না।
বোলো না।
শুনতে চাও না?
চাই তো। কিন্তু বলতে না চাইলে কী করব?
কোনো ব্যাপারেই তোমার আগ্রহ নেই কেন বলো তো?
ওঃ রেমি!
বিরক্ত হলে?
বিরক্ত করছ যে!
তুমি যে বাবা হতে চলেছো!
আমি? আমি কেন বাবা হতে যাবো?
তবে কে হবে? ভূতে?
কী ব্যাপার বলো তো!
এখনও বোঝেনি?
ওঃ! তুমি কি প্রেগন্যান্ট?
মনে তো হচ্ছে।
হঠাং ধ্রুবর মুখটা কেমন সাদা দেখতে লাগল।