১৮ আগস্ট, বুধবার ১৯৭১
সকাল থেকে অঝোরে পানি ঝরছে। কদিন থেকেই বেশ ভালো বৃষ্টি হচ্ছে। তবে মাঝে-মাঝে থামে। আজ আর থামাথামির লক্ষণ নেই। এরই মধ্যে শরীফ ড্রাইভার আমিরুদ্দিকে সঙ্গে নিয়ে বাজার করে এনে দিয়েছে। রুমীর কয়েকজন বন্ধু দুপুরে খাবে।
২৮ নম্বর রোডের যে বাড়িটাতে ওদের প্রধান আস্তানা, সেখানে কদিনে অনেক গেরিলা ছেলে এসে গেছে। বড়ো গাদাগাদি, ঠাসাঠাসি। রুমীদের কয়েকজনের আলাদা নিরিবিলি বসে কিছু প্ল্যান করা দরকার। আমাদের ছাদের ঘরটা এ কাজের জন্য একেবারে আইডিয়াল। সারা মেঝে জুড়ে জাজিম পাতা, রুমী জামীর জুডো কারাতে প্র্যাকটিসের জায়গা। সকালে তার ওপর কয়েকটা চাদর বিছিয়ে ঢেকে দিয়েছি, দোতলা থেকে কতকগুলো বালিশ আর অ্যাশট্রে নিয়ে রেখে দিয়েছি। আর কয়েক প্যাকেট ৫৫৫ সিগারেট।
ছেলেগুলো দশটার মধ্যে এসে ছাদের ঘরে দরজা এঁটে মিটিংয়ে বসে গেছে। মাঝখানে একবার রুমী এসে নিজের হাতে চা-নাশতার ট্রে নিয়ে গেছে।
দেড়টা বেজে গেছে। ওদের নামবার নাম নেই। টেবিলে খাবার দিয়ে নিজেই ছাদের ঘরের সামনে গিয়ে বন্ধ দরজায় টোকা দিলাম। ঘরের মধ্যে কথা শোনা যাচ্ছিল, টোকার শব্দে হঠাৎ সব চুপ হয়ে গেল। আমি একটু চেঁচিয়ে বললাম, খাবার রেডি। একটু পরে দরজাটা একটু ফাঁক করে মুখ বাড়িয়ে রুমী বলল, তুমি যাও, আমরা দুমিনিটের মধ্যে আসছি। ফাঁক দিয়ে চোখে পড়ল সারা ঘর ধোয়ায় আচ্ছন্ন। মনে মনে একটু হেসে নেমে গেলাম। ছাদের ঘরের দরজা-জানালা সব সেঁটে সব পর্দা টেনে ওরা কথা বলছিল।
একটু পরে নিচে খেতে এল ওরা। ওদের মধ্যে কাজী, আলম, বদিকে আগেই দেখেছি। এখন রুমী পরিচয় করিয়ে দিল স্বপন আর চুলুর সঙ্গে। এর মধ্যে আলম ছাড়া বাকি সবাই রুমীর চেয়ে কয়েক বছরের বড়। আগে থেকেই রুমীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠত তার চেয়ে বয়সে বড় ছেলেদের সঙ্গে। আর এখন তো যুদ্ধে তের থেকে তিরিশ সবাই এক বয়সী।
ছেলেগুলো একেবারে মুখ বুজে খাচ্ছে। আমি বললাম, একটু মেলাঘরের কথা বল শুনি।