১৬ এপ্রিল, শুক্রবার ১৯৭১
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র কদিন থেকে ধরতে পারছি। খুব অল্প সময়ের জন্য অনুষ্ঠান। : সকালে ঘন্টা খানেক–আটটা থেকে নটা কিংবা সাড়ে আটটা থেকে সাড়ে নটা। বিকেলে কোনদিন পাঁচটা থেকে সাতটা। কোনদিন আটটা থেকে দশটা। প্রচার সময়ের কোন স্থিরতা নেই। দুতিনটি মাত্র গান ঘুরে ঘুরে বাজানো হয়, বাংলা-ইংরেজি খবর, মুক্তিযোেদ্ধাদের জন্য কথিকা, বিদেশী পত্রপত্রিকা থেকে উদ্ধৃতি, মাত্র এইটুকু। তবু এইটুকুর জন্য আমরা সবাই কিরকম যেন তৃষ্ণার্ত হয়ে থাকি। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কথিকা। মুক্তিযুদ্ধ তাহলে হচ্ছে? তবু এখনো যেন বিশ্বাস হতে চায় না। আর এই যে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, এইটাই বা প্রচার করছে কোথা থেকে, কিভাবে? রুমী বলে নিশ্চয় বর্ডার এলাকায় কোন জঙ্গলের ভেতর ট্রান্সমিটার লুকিয়ে ব্রডকাস্ট করে।
তাই হবে মনে হয়। কিন্তু যদি ধরা পড়ে যায় কোনদিন? যদি পাক আর্মি কোনদিন খোঁজ পেয়ে যায় লুকোনো ট্রান্সমিটারের? তাহলে? কোন কোন দিন সময়মত বেতার কেন্দ্র ধরতে না পারলে অস্থির হয়ে উঠি বাড়িসুদ্ধ সবাই। এই বুঝি পাক আর্মি দিয়েছে শুড়িয়ে। কেউ কেউ বলে আসলে নাকি কলকাতা থেকে এসব প্রচার করা হয়। এটাও বিশ্বাস হতে চায় না। কলকাতা থেকে হলে নিশ্চয় এর চেয়ে ভালো প্রোগ্রাম হত, গানও এই দুটো তিনটে মাত্র ঘুরে ঘুরে দিত না। রবি ঠাকুরের আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি,নজরুলের কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙে ফেলে কররে লোপাট, দুর্গম গিরি-কান্তার মরু দুস্তর পারাবার আর মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম।আরেকটা গান হয়, এটা আগে কোনদিন শুনি নি–কেঁদো না কেঁদো না মাগো আর তুমি কেঁদো না।
আর অনুষ্ঠানের শুরুতে বাজে শাহনাজ বেগমের সেই গান যেটার রেকর্ড আমি কিটির হাতে সরিয়ে দিয়েছি
জয় বাংলা, বাংলার জয়।
হবে হবে হবে নিশ্চয়।
অনুষ্ঠানের শেষেও এই গানটাই বাজানো হয়।