১৬. ষষ্ঠদশ অধ্যায় – উত্তরাধিকার
ধারা-৪০৮
উত্তরাধিকার-এর সংজ্ঞা “উত্তরাধিকার” হইল মালিকানা বর্তন যাহার মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত মাস অন্যের অনুকূলে বর্তায়।
বিশ্লেষণ
মালিকের মৃত্যুর পর তাহার সম্পত্তির মালিকানার অধিকার কোনরূপ প্রতিদান বা অনুগ্ৰহ ব্যতীতই তাহার প্রাপকগণের নিকট স্থানান্তরিত (ওয়াকে উত্তরাধিকার (51,০) বলে। এই মালিকানা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে মালিকের ই ৰা এখতিয়ারের কোন দখল নাই। কারণ তাহার মৃত্যুর পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে মালিকানা তাহার ওয়ারিসগণের নিকট চলিয়া যায়।
মহান আল্লাহ্ :লন :
للرجال نصيب مما ترك الوالدان والأقوبون . وللساء نصيب مما ترك الوالدان والأقربون مماق منه أو كثر
.. . : “পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে, উহা অল্পই হউক অথবা অধিক, এক নির্ধারিত অংশ।” (সূরা নিসা : ৭)
ধারা-৪০৯ উত্তরাধিকারের উপাদানসমূহ (I,JI ss) উত্তরাধিকারের নিম্নোক্ত তিনটি উপাদান রহিয়াছে। (ক) মৃত ব্যক্তি (১১); (খ) উত্তরাধিকাশী (৩,০); এবং, (গ) পরিত্যক্ত সম্পত্তি (is)।
বিশ্লেষণ
কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পরই ওয়ারিশীস্বত্ব লাভের অধিকার সৃষ্টি হয়। কোন ব্যক্তির মৃত্যুর অব্যবহিত পর তাহার জীবিত ওয়ারিশগণই তাহার সম্পত্তির মালিক হইবে। অর্থাৎ মালিকের মৃত্যুর সময় যেসব ওয়ারিশ জীবিত থাকে কেবল তাহারই তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তি লাভ করিবে। অবশ্য গর্ভস্থ সন্তানকেও জীবিত ধরিয়া তাহাকেও ওয়ারিশ গণ্য করা হয়। মৃতের রাখিয়া যাওয়া সম্পত্তিতেই এই মালিকানা আরোপিত হয়। অবশ্য পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে কাহারও পাওনা (যেমন ঋণ, বন্ধক ইত্যাদি) থাকিলে উহা পরিশোধ না করা পর্যন্ত উক্ত সম্পত্তি বন্টনযোগ্য হইবে না। অথবা ঐসব পাওনা ঐ সম্পত্তির সহিত অচ্ছেদ্যভাবে লাগিয়া থাকিবে।
ধারা-৪১০ উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার শর্তাবলী উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার শর্ত তিনটি, যথা— (ক) সম্পত্তির মালিকের (৩১) মৃত্যু প্রমাণ; (খ) মালিকের মৃত্যুর পর ওয়ারিশগণের জীবিত থাকার প্রমাণ; এবং (গ) মৃত ব্যক্তি ও তাহার ওয়ারিশগণের মধ্যে আত্মীয়তার ধরন ও পর্যায়।
ধারা-৪১১ :
যে কারণে উত্তরাধিকায় জন্মায় (ক) বংশগত ( i) ও (খ) বৈবাহিক (
542) সম্পর্কে ভিত্তিতে উত্তরাধিকার স্বত্ব জন্মায়।
বিশ্লেষণ
বংশগত সম্পর্ক তিন ধরনের : (ক) মৃতের বংশধর ( ), যেমন তাহার সন্তান, সন্তানের সন্তান ইত্যাদি। (খ) মৃত ব্যক্তির মূল (Le), যেমন তাহার পিতা-মাতা, দাদা-দাদী ইত্যাদি। (গ) উপরে দুই ধরনের আত্মীয় ব্যতীত অন্যরা,
যেমন মৃতের ভাই-বােন, চাচা ইত্যদি।
বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের ওয়ারিশ হয়, যদি উভয়ের কোন একজনের মৃত্যু পর্যন্ত বৈবাহিক সম্পর্ক অটুট থাকে! অনিয়মিত (L.) ও বাতি। (ULL) বিবাহের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের ওয়ারিস হইতে পারে না।
ধারা-৪১:২ পরিত্যক্ত সম্পত্তির সহিত যেসব কর্তব্য যুক্ত থাকে মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিম্নোক্ত কাৰ্তব্যসমূহ যুক্ত থাকে–
(ক) মৃতের কাফন-দাফন-এর খরচ;
৫২৬
(খ) মৃতের ঋণ পরিশোধ; এবং (গ) মৃতের কোন বৈধ ওসিয়াত থাকিলে উহার বাস্তবায়ন।
বিশ্লেষণ
কুরআন মজীদে ওয়ারিসগণের মধ্যে পরিত্যক্ত সম্পত্তি বন্টনের উল্লেখপূর্বক বলা হইয়াছে :
من بعد وصية يوصى بها أو دين .
“সে (মৃত ব্যক্তি) যাহা ওসিয়াত করে তাহা দেওয়ার ও ঋণ পরিশোধের পর (সূরা নিসা : ১১; আরও দ্র. ১২ নং আয়াত)।
ধারা-৪১৩
যাহারা ওয়ারিশ হয় পর্যায়ক্রমে নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে স্বত্ববান হইবে (ক) যাবিল ঘুরূ (9 s91) (খ) আসাবা (Lee) (গ) আসাবার অবর্তমানে পুনরায় যাবিল ফুরূফ (র); (ঘ) যাবিল আরহাম ( 193);
(ঙ) যাহার জন্য সমস্ত সম্পত্তি ওসিয়াত করা হইয়াছে ( ২০ Ju০ ); এবং
(চ) বায়তুল মাল (Ju। ৩৬)
ধারা-৪১৪
বংশীয় ওয়ারিশগণের শ্রেণীবিভাগ বংশীয় ওয়ারিশগণ নিম্নলিখিত তিন শ্রেণীতে বিভক্ত (ক) যাবিল ফুরূয; (খ) আসাবাত; (গ) যাবিল আরহাম।
বিশ্লেষণ
(ক) যাবিল ফুরূষ : কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মতের ইজমার দ্বারা যাহাদের অংশ নির্দিষ্ট করিয়া দেওয়া হইয়াছে তাহাদিগকে যাবিল ফুরূষ বলে। ইহারা সকল ওয়ারিশের উপর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। কারণ একদিকে আল্লাহ তাআলা কুরআন মজীদে তাহাদের অংশের উল্লেখ করিয়াছেন এবং অপরদিকে রাসূলুল্লাহ্ (স) ইহাদের সম্পর্কে গুরুত্ব সহকারে বলিয়াছেন :
الحقوا الفرائض بأهلها فما بقي له قوى رجل ذكر .
।
৫২৭
“মীরাস ইহার প্রাপকদের (যাবিল ফুরূযদের) মধ্যে সর্বাগ্রে বণ্টন কর। অতঃপর যাহা অবশিষ্ট থাকে তাহা নিকটাত্মীয় পুরুষদের মধ্যে বণ্টন কর।”
যাবিল ফুরূ আবার দুই শ্রেণীতে বিভক্ত : (১) বংশগত ( a), যেমন পিতা-মাতা, কন্যা, নাতি-পুতী, সহােদর বােন, বৈপিত্রেয় ভাই, বৈমাত্রেয় বােন, দাদা-দাদী ইত্যাদি। কারণগত (।), যেমন স্বামী-স্ত্রী। বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে ইহারা পরস্পরের আত্মীয়।
(খ) আসাবাত ও যাহারা কোন অবস্থায় মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তির সমস্তটাই লাভ করে এবং কোন অবস্থায় যাবিল ফুরূযের অংশ দেওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তির ওয়ারিশ হয় তাহাদিগকে আসাবাত বলে। মহান আল্লাহর বাণী :
ولأبويه لكل واحد منهما السدس مما ترك ان كان له
ولد فان لم يكن له ول وورثه أبوه فمه الثلث .
“তাহার (মৃত ব্যক্তির) সন্তান থাকিলে তাহার পিতা-মাতা প্রত্যেকের জন্য তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-ষষ্ঠাংশ। সে নিঃসন্তান হইলে এবং পিতা-মাতাই ওয়ারিশ হইলে তাহার মাতার জন্য এক-তৃতীয়াংশ” (সূরা নিসা : ১১)।
এখানে লক্ষণীয় বিষয় যে, মৃত ব্যক্তি নিঃসন্তান হইলে তাহার সম্পত্তির ওয়ারিশ হয় তাহার পিতা-মাতা, তবে এই অবস্থায় মায়ের অংশ নির্ধারণ করা হইয়াছে এক-তৃতীয়াংশ এবং পিতার অংশ নির্ধারণ করা হয় নাই। ইহাতে বুঝা যায়, অবশিষ্ট দুই-তৃতীয়াংশ পিতার প্রাপ্য।
ان امرؤ هلك ليس له ولد وله أخ فلها نصف ما ترك
وهو يرثها ان لم يكن لها وله .
“কোন পুরুষ মারা গেলে সে যদি সন্তানহীন হয় এবং তাহার এক বােন থাকে তবে তাহার জন্য তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক এবং সে (মৃত বােন) যদি সন্তানহীনা হয় তবে তাহার ভাই তাহার ওয়ারিশ হইবে” (সূরা নিসা : ১৭৬)।
উপরোক্ত আয়াত হইতে প্রমাণিত হয় যে, সহােদর ভাইয়ের নির্ধারিত কোন অংশ নাই। বােন নিঃসন্তান হইলে সে তাহার সমস্ত সম্পত্তির ওয়ারিশ হইবে। অতএব আসাবাগণ যে ওয়ারিশ হইবে তাহা অকাট্যরূপে প্রমাণিত। তাহা ছাড়া পূর্বোক্ত হাদীস হইতেও ইহার সমর্থন পাওয়া যায়।
আসাবাগণ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত—(১) আসাবা বি-নাফসিহি; (২) আসাবা বি-গাইরিহি এবং (৩) আসাবা মাআ গাইরিহি।
(১) আসাবা বি-নাফসিহি : (সরাসরি আসাবা) ও মৃত ব্যক্তির সহিত যাহাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাঝখানে কোন মহিলা নাই। যেমন—পুত্র, দৌহিত্র (তদনিম্নগণ),
৫২৮
পিতা, দাদা (তদুর্ধগণ), সহােদর ভাইগণ, তাহাদের পুত্রগণ (তদনিম্নগণ) এবং আপন ও বৈমাত্রেয় চাচাগণ, তাহাদের পুত্রদের পুত্রগণ। যাবিল ফুরূযের অংশ দেওয়ার পর কিছু অবশিষ্ট থাকিলে উহা তাহারা পাইবে, অন্যথায় বঞ্চিত হইবে।
(২) আসাবা বি-গাইরিহি : চারিজন নারী এই শ্রেণীভুক্ত। যেমন (ক) নিজ কন্যা নিজ পুত্রের সহিত; (খ) পুত্রের কন্যা পুত্রের পুত্রের (দৌহিত্রের) সহিত বা চাচার পুত্রের সহিত; (গ) সহােদর বােন সহােদর ভাইয়ের সহিত; এবং (ঘ) বৈমাত্রেয় বােন বৈমাত্রেয় ভাইয়ের সহিত আসাবা হয়।
(৩) আসাবা মাআ গাইরিহি : কেবলমাত্র সহােদরা বােন ও বৈমাত্রেয় বােনগণ এই শ্রেণীভুক্ত। তাহাদের ভাই না থাকিলে তাহারা মৃতের কন্যার সহিত আসাবা হয়। এই শ্রেণীর আসাবা কন্যার সহিত বােনদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট। মহানবী (স) -এর উক্তি :
اجعلوا الأخوات مع البنات عصبية .
“কন্যার সহিত বােনদের আসাবা বানাও।”
উল্লেখ্য যে, সহােদর বােন আসাবা হইলে সে ভাই-এর স্থানীয় হইয়া বৈমাত্রেয় ভাই-বােন সকলকে বঞ্চিত করে, মৃতের অপর ভাইয়ের সন্তান এবং সহােদর চাচা ও বৈমাত্রেয় চাচাদেরকেও।
(গ) শাবিল আরহাম : মৃত ব্যক্তির সহিত যাহাদের নিকট সম্পর্ক রহিয়াছে, কিন্তু যাবিল ফুরূষ বা আসাবা কোনটিই নহে এবং কুরআন ও সুন্নাহ-এ যাহাদের জন্য নির্দিষ্ট অংশও নির্ধারণ করা হয় নাই তাহাদেরকে “যাবিল আরহাম” বলে। যেমন ফুফু, খালা, মামা, বােনের ছেলে, কন্যার ছেলে ইত্যাদি। যাবিল আরহামের ওয়ারিশ হওয়ার ব্যাপারে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে :
وأولوا الأرحام بعضهم أولى ببعض في كتاب الله .
“আল্লাহর বিধান অনুসারে যাহারা আত্মীয় তাহারা পরস্পরের নিকটতর” (সূরা আহযাব : ৬) :
للرجال نصيب مما ترك الوالدان واقربون واللساء تصيب مما ترك الوالدان والأقربون مما قل منه أو كثر
نصيبا مفروضا .
“পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুত্রদের অংশ আছে এবং পিতামাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্তসম্পত্তিতে নারীদের অংশ আছে। উহা অল্পই হউক অথবা বেশি, এক নির্ধারিত অংশ” (সূরা নিসা : ৭)।
উপরোক্ত আয়াতে আত্মীয়দের মৃতের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারের কথা বলা হইয়াছে। আর যাবিল আরহাম সর্বসম্মতিক্রমে আত্মীয়ের অন্তর্ভুক্ত।
আবু লুবাবা (রা) নামক সাহাবীর “ভাগ্নে” ব্যতীত আর কোন ওয়ারিশ ছিল না। রাসূলুল্লাহ্ (স) তাহাকে তাঁহার ওয়ারিশ ঘোষণা করেন। অনুরূপভাবে সাহল ইবন হুনাইফ (রা) নিহত হইলে তাঁহার অন্য কোন ওয়ারিশ না থাকায় হযরত উমর (রা) মহানবী (স)-এর নিম্নোক্ত হাদীসের ভিত্তিতে তাঁহার মামাকে ওয়ারিশ ঘোষণা করেন :
الخال وار من لا وارث له .
“যাহার কোন ওয়ারিশ নাই মামাই তাহার ওয়ারিশ।”
ধারা-৪১৫
স্বামীর প্রাপ্য অংশ মৃত স্ত্রীর কোন সন্তান না থাকিলে স্বামী তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক পাইবে; এবং স্ত্রীর সন্তান থাকিলে এক-চতুর্থাংশ পাইবে।
বিশ্লেষণ
মহান আল্লাহর বাণী;
و لم نصف ماترك أزواجكم إن لم يكن لهن ولدتان خان لهن ولا فلكم الربع ما تركن من بعد وصية يوصين بها أو دين .
“তোমাদের স্ত্রীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ তোমাদের জন্য, যদি তাহাদের কোন সন্তান না থাকে এবং তাহাদের সন্তান থাকিলে তোমাদের জন্য তাহাদের পরিত্যক্ত সম্পতির এক চতুর্থাংশ, ওসিয়াত পালন ও ঋণ পরিশোধের পর’ (সূরা নিসা : ১২)।
পুত্র-কন্যা, পুত্রের পুত্র-কন্যা (দৌহিত্র-দৌহিত্রী), দৌহিত্রের পুত্র-ন্যা (য নিম্নগামী হউক) ইত্যাদির বর্তমানে স্বামীর অংশ হ্রাস পায়। ইহাদের মধ্যে কন্যার
সন্তানগণ শামিল নয়।
ধারা-৪১৬
স্ত্রীর প্রাপ্য অংশ মৃত স্বামীর কোন সন্তান না থাকিলে স্ত্রী বা স্ত্রীগণ তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ পাইবে; এবং স্বামীর সন্তান থাকিলে এক-অষ্টমাংশ পাইবে।
বিশ্লেষণ
মহান আল্লাহর বাণী :
৫৩০
وله الرب مما تركتم ان لم يكن لكم ل فان كان لكم ولد فلهن الثمن ماتركم من بعد وصية وصون بها أو
“তোমাদের সন্তান না থাকিলে স্ত্রীদের জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক চতুর্থাংশ, আর তোমাদের সন্তান থাকিলে তাহাদের জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-অষ্টমাংশ, তোমরা যাহা ওসিয়াত করিবে তাহা দেওয়ার পর এবং ঋণ পরিশোধের পর” (সূরা নিসা : ১২)।
মৃতের একাধিক স্ত্রী থাকিলে উপরোক্ত অংশ তাহাদের সকলের মধ্যে সমান হারে বণ্টিত হইবে। মৃতের পুত্র-কন্যা, দৌহিত্র-দৌহিত্রী, দৌহিত্রের পুত্র-কন্যা (যত নিম্নগামী হউক) ইত্যাদির বর্তমানে স্ত্রীর অংশ হ্রাস পায়। ইহাদের মধ্যে কন্যার সন্তানগণ শামিল নহে।
ধারা-৪১৭
পিতার প্রাপ্য অংশ (ক) মৃতের পুত্র, পুত্রের পুত্র ও তদনিম্নবর্তীগণের বর্তমানে পিতা তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-ষষ্ঠাংশ পাইবে;
(খ) মৃতের কন্যার অথবা দৌহিত্রীর (যত নিমগামী হউক) বর্তমানে পিতা এক-ষষ্ঠাংশ পাইবে এবং উপরোক্ত ওয়ারিশদের অংশ দেওয়ার পর আসাবা হিসাবে অবশিষ্ট অংশ লাভ করিবে;
(গ) মৃতের পুত্র বা দৌহিত্র (যত নিম্নগামী হউক) না থাকিলে পিতা আসাবা হিসাবে সমস্ত সম্পত্তি লাভ করিবে।
বিশ্লেষণ
এখানে পিতা বলিতে মৃত ব্যক্তি যাহার ঔরসজাত তাহাকে বুঝায়। মহান আল্লাহর বাণী :
G
ولأبويه لكل واحد منهما السدس مما ترك ان كان له ولقان لم يكن له ول وورثه أبو قمه الثلث فان كان له
به السدس من بعد وصية يوصي بها او دين .
اخوة فلام
*
“তাহার (মৃতের) সন্তান থাকিলে তাহার পিতা-মাতা প্রত্যেকের জন্য তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-ষষ্ঠাংশ। সে নিঃসন্তান হইলে এবং পিতা-মাতাই তাহার ওয়ারিশ হইলে তাহার মাতার জন্য এক-তৃতীয়াংশ। তাহার ভাই-বােন থাকিলে
তাহার মাতার জন্য এক-ষষ্ঠাংশ। এসবই সে যাহা ওসিয়াত করে তাহা দেওয়ার এবং ঋণ পরিশোধের পর” (সূরা নিসা : ১১)।
উপরোক্ত আয়াতে মৃতের সন্তান থাকা অবস্থায় পিতা-মাতার প্রত্যেকের জন্য এক-ষষ্ঠাংশ নির্ধারণ করা হইয়াছে এবং সন্তান না থাকা অবস্থায় মাতার জন্য এক তৃতীয়াংশ নির্ধারণ করা হইয়াছে। অন্য ওয়ারিশের অবর্তমানে পিতা-মাতাই মৃতের সম্পত্তিতে স্বত্ববান হয়। তাই মাতার অংশ বাদ দেওয়ার পর পিতা আসাবা হিসাবে
অবশিষ্টাংশ পাইবে। উপরন্তু মহানবী (স) বলেন :
الحقوا الفرائض بأهلها فما بقي فهو لأولي رجل ذكر .
“মীরাস ইহার প্রাপকদের মধ্যে সর্বাগ্রে বন্টন কর। অতঃপর যাহা অবশিষ্ট থাকে তাহা নিকটাত্মীয় পুরুষদের মধ্যে বণ্টন কর” বুিখারী, মুসলিম, ইবন মাজা; মিশকাত, বাংলা অনু., ৬খ, পৃ. ১৬৮, নং ২৯১৯ (২)}।
ধারা-৪১৮
মাতার প্রাপ্য অংশ (ক) মৃতের সন্তান বা দৌহিত্র (যত নিগামী হউক) থাকিলে অথবা দুই বা ততোধিক ভাই-বােন (সহােদর, বৈপিত্রেয়, বৈমাত্রেয়) বর্তমান থাকিলে তাহার মা তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-ষষ্ঠাংশ পাইবে;
(খ) মৃতের স্বামী বা স্ত্রী বর্তমান থাকিলে তাহাদের অংশ দেওয়ার পর মাতা অবশিষ্ট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ পাইবে;
(গ) ধারা (ক)-এ উল্লেখিত ওয়ারিশগণের অবর্তমানে এবং পিতার স্থলে দাদা বিদ্যমান থাকিলে মাতা পরিত্যক্ত (মোট) সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ পাইবে।
বিশ্লেষণ
মাতা বলিতে এখানে মৃতের গর্ভধারিণী মাতাকে বুঝানো হইয়াছে। মৃতের সৎ মাতা তাহার সম্পত্তির ওয়ারিশ হয় না। কেননা তাহাদের উভয়ের মধ্যে বংশগত সম্পর্কও বিদ্যমান নাই এবং কারণগত সম্পর্কও বিদ্যমান নাই। কোন কোন অবস্থায় মাতার প্রাপ্য অংশ হ্রাস পায়, কিন্তু তিনি কখনো সম্পূর্ণ বঞ্চিত হন না। মাতার মীরাস সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ৪:১১ দ্র.।
ধারা-৪১৯
কন্যার প্রাপ্য অংশ (ক) মৃতের একজন মাত্র কন্যা বর্তমান থাকিলে সে সমস্ত ত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক পাইবে;
৫৩২
(খ) কন্যার সংখ্যা দুই বা ততোধিক হইলে তাহারা সকলে মিলিয়া মোট সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ পাইবে;
(গ) মৃতের কন্যা ও পুত্র সন্তান বর্তমান থাকিলে “পুরুষ নারীর দ্বিগুণ অংশ” পাওয়ার নীতি অনুযায়ী তাহাদের মধ্যে ত্যক্ত সম্পত্তি বন্টিত হইবে।
বিশ্লেষণ
কন্যা সন্তানেরা যদিও যাবিল ফুরূয, কিন্তু পুত্রের বর্তমানে তাহারা পুত্রের সঙ্গে আসাবা হইয়া যায় এবং “ পুত্র-কন্যা ২ : ১ অনুপাতে তাহাদের মধ্যে মাতা-পিতার পরিত্যক্ত সম্পত্তি বণ্টিত হয়। পবিত্র কুরআনে বলা হইয়াছে।
يوصي الله في أولادكم للذكر مثل حظ الأنثيين فان گن نساء فوق اثنتين فلهن ثا مماتك وان كانت واحد فنها العنف .
“আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে নির্দেশ দিতেছেন? এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান। কিন্তু শুধুমাত্র কন্যা সন্তান দুই.এর অধিক থাকিলে তাহাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ, আর মাত্র একজন কন্যা সন্তান থাকিলে তাহার জন্য অর্ধাংশ”(সূরা নিসা : ১১)।
এখানে পুত্র-কন্যা বলিতে মূত্রের ঔরসজাত বা গর্ভজাত পুত্র-কন্যাদের বুঝানো হইয়াছে। অনন্তর ফারায়েযের ক্ষেত্রে আরবি ‘দ্বিবচন’ বহুবচন’ অর্থে
ব্যবহৃত হয়।
ধারা-৪২০
পৌত্রীর প্রাপ্য অংশ (ক) পৌত্রীগণ কন্যাস্থানীয় এবং সংখ্যায় একজন হইলে সে মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক পাইবে, মৃতের কন্যা সন্তান না থাকিলে;
(খ) পৌত্রী দুই বা ততোধিক হইলে সকলে মিলিয়া সমস্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ পাইবে, মৃতের কন্যা সন্তান না থাকিলে;
(গ) মৃতের একজন কন্যা সন্তান থাকিলে সে পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক এবং পৌত্রীগণসকলে মিলিয়া এক-ষষ্ঠাংশ পাইবে; যাহাতে দুই-তৃতীয়াংশ পূর্ণ হইয়া যায়;
(ঘ) মৃতের দুই বা ততোধিক কন্যা সন্তান থাকিলে পৌত্রীগণ বঞ্চিত হইবে; কিন্তু
(ঙ) পৌত্রীদের সহিত তাহাদের পর্যায়ের অথবা তাহাদের নিম্ন পর্যায়ের কোন পৌত্র বিদ্যমান থাকিলে তাহারা সকলে আসাবা গণ্য হইবে এবং কন্যাদের অংশ
দেওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি তাহাদের মধ্যে একজন পুরুষের অংশ দুইজন নারীর সমান’ সূত্র অনুযায়ী বন্টিত হইবে;
(চ) মৃতের পুত্র সন্তান থাকিলে পৌত্রীগণ বঞ্চিত হইবে।
বিশ্লেষণ
মৃতের পুত্র বা কন্যা সন্তান না থাকিলে অথবা, একজন মাত্র কন্যা সন্তান থাকিলে দৌহিত্রীগণ কন্যাস্থানীয় বিবেচিত হইবে। কিন্তু দুইজন কন্যা সন্তানের বর্তমানে দৌহিত্রী/দৌহিত্রীগণ ওয়ারিসী স্বত্ব হইতে বঞ্চিত হইবে। কারণ কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে :
اما ترك .
فان كن نساء فوق اثنتين فلهن
“তবে কন্যার সংখ্যা দুই-এর অধিক হইলে তাহাদের জন্য মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ” (সূরা নিসা : ১১)।
মহানবী (সা) বলেন :
لا يزاد حق البنات على اللين ..
“কন্যাদের অংশ দুই-তৃতীয়াংশের অধিক বর্ধিত করা যাইবে না।
ধারা-৪২১
সহােদর ভগ্নীর প্রাপ্য অংশ (ক) সহােদর ভগ্নী একজন হইলে সে তাহার মৃত ভ্রাতার পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ পাইবে;
(খ) সহােদরা দুই বা ততোধিক হইলে দুই-তৃতীয়াংশ পাইবে;
(গ) ভগ্নীদের সহিত মৃতের সহােদর ভাই থাকিলে ভগ্নীরা ভাইয়ের সহিত আসাবা হইবে এবং একজন পুরুষের দুই জন নারীর সমান অংশ” নীতি অনুযায়ী তাহারা মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তির ওয়ারিশ হইবে;
(ঘ) মৃতের কন্যা বা পুত্রের কন্যা থাকিলে তাহাদের অংশ দেওয়ার পর ভগ্নীরা আসাবা হিসাবে অবশিষ্ট অংশের ওয়ারিশ হইবে;
(ঙ) মৃতের পুত্র (যত নিম্নগামী হউক) অথবা পিতা (যত উর্ধ্বগামী হউক) বর্তমান থাকিলে উন্নী বঞ্চিত হইবে।
বিশ্লেষণ
মৃত ব্যক্তি ও তাহার বােন একই পিতা-মাতার সন্তান হইলে তাহাদেরকে সহােদর ভাই-বােন বলে। মহান আল্লাহ্ বলেন :
ان امرؤ هلك ليس له ولد وله أخت فلها نصف ما ترك وهو يرثها ان لم يكن لها ولد فان كانتا اثنتين فلهما
৫৩৪
الثلثن مما ترك وان كانوا إخوة رجالا ونساء فللذكر مثل
21L
• ৬
।,
“কোন সন্তানহীন পুরুষ মারা গেলে এবং তাহার এক ভগ্নী থাকিলে তাহার জন্য তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক এবং সে (ভগ্নী) নিঃসন্তান হইলে ভাই তাহার ওয়ারিশ হইবে। আর দুই ভগ্নী থাকিলে তাহাদের জন্য তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ। আর ভাই-বােন উভয়ই থাকিলে এক পুরুষের অংশ দুই নারীর অংশের সমান” (সূরা নিসা : ১৭৬)।
নিন্মােক্ত হাদীসের ভিত্তিতে কন্যার সঙ্গে ভগ্নী আসবা হইবে। আবদুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রা)-এর নিকট এই জাতীয় প্রশ্ন উত্থাপন করা হইলে তিনি বলেন :
وقضين فيها بقضاء النبي صلى الله عليه وسلم للابنة النصف ولابنة الابن السدس تكملة الثين ومابقى
فيخت .
“এই ব্যাপারে মহানবী (সা) যেরূপ ফয়সালা করিয়াছেন আমিও তদ্রূপ ফয়সালা করিব। কন্যার জন্য অর্ধেক এবং পৌত্রীর জন্য এক-ষষ্ঠাংশ। অবশিষ্ট যাহা থাকিবে তাহা ভগ্নী পাইবে” (সহীহ বুখারী, কিতাবুল ফারাইদ, বাব মীরাসিল আখাওয়াতি মাআল বানাতি আসাবাতুন)।
একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, কন্যার সহিত মৃতের ভাই-বােন থাকিলে তাহাদের বিষয়টি মৃতের শুধু চাচা-ফুফু বিদ্যমান থাকার সহিত অথবা পৌত্র-পৌত্রী বিদ্যমান থাকার সহিত তুলনা করা যাইতে পারে। তবে শেষোক্তদের সহিত তুলনা করাই উত্তম। এই ক্ষেত্রে ভাই-বােন আসাবা হইবে, কিন্তু চাচা-ফুফুর সহিত তুলনা করিলে উপরোক্ত ক্ষেত্রে ভাই আসাবা হইলেও বােন বঞ্চিত হইবে।
ধারা-৪২২
বৈমাত্রেয় ভগ্নীর প্রাপ্য অংশ (ক) মৃতের বৈমাত্রেয় ভগ্নী একজন হইলে সে মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক পাইবে;
(খ) তাহাদের সংখ্যা দুই বা ততোধিক হইলে সকলে মিলিয়া দুই-তৃতীয়াংশ পাইবে;
(গ) একজন সহােদর ভগ্নী ও একজন বৈমাত্রেয় ভগ্নী থাকিলে সহােদর ভগ্নী অর্ধেক এবং বৈমাত্রেয় ভগ্নী এক-ষষ্ঠাংশ পাইবে এবং এইভাবে দুই-তৃতীয়াংশ পূর্ণ হইবে।
(ঘ) দুইজন সহােদর ভগ্নী থাকিলে বৈমত্রেয় ভগ্নী বঞ্চিত হইবে; কিন্তু
৫৩৫
(ঙ) বৈমাত্রেয় ভগ্নীর সহিত বৈমাত্রেয় ভাই থাকিলে তাহারা আসাবা হইবে এবং সহােদর ভগ্নীর অংশ দেওয়ার পর অবশিষ্ট অংশ তাহারা পাইবে;
(চ) মৃতের ঔরসজাত বা গর্ভজাত কন্যা বা পৌত্রীর বর্তমানে বৈমাত্রেয় ভগ্নীগণ তাহাদের সহিত আসাবা হইবে।
(ছ) মৃতের পুত্র, পৌত্রী (যত নিম্নগামী হউক) এবং পিতা বা দাদা (যত উধ্বগামী হউক) বর্তমান থাকিলে বৈমাত্রেয় ভগ্নীগণ বঞ্চিত হইবে।
বিশ্লেষণ
মৃতের পিতার ঔরসজাত কিন্তু সৎ মাতার গর্ভজাত কন্যাগণকে বৈমাত্রেয় ভগ্নী বলা হয়। ইহারাও সূরা নিসার ১৭৬ নং আয়াতের ভিত্তিতে মৃতের ওয়ারিশ হয়। কারণ আয়াতে সহােদর, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় সব ধরনের ভাই-বােন অন্তর্ভুক্ত। তবে a। ১। (নিকটতর দূরতরকে বঞ্চিত করে) নীতি অনুযায়ী সহােদর ভগ্নী বৈমাত্রেয় ভগ্নীকে হটাইয়া দিয়া নিজেই ওয়ারিশী স্বত্ব লাভ করে।
ধারা-৪২৩
বৈপিত্রেয় ভাই-বোনের অংশ
(ক) বৈপিত্রেয় ভাই অথবা ভগ্নী একজন হইলে সে মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-ষষ্ঠাংশ পাইবে;
(খ) তাহাদের সংখ্যা দুই বা ততোধিক হইলে সকলে মিলিয়া এক-তৃতীয়াংশ পাইবে এবং উহা ভাই-বােনের মধ্যে সমানুপাতে বন্টিত হইবে; এবং
(গ) মৃতের পুত্র, দৌহিত্র, পিতা বা দাদার বর্তমানে বৈপিত্রেয় ভাই-বােন বঞ্চিত হইবে।
বিশ্লেষণ
মৃতের মায়ের গর্ভজাত কিন্তু তাহার অন্য স্বামীর ঔরসজাত সন্তানদেরকে বৈপিত্রেয় ভাই-বােন বলা হয়। নিম্নোক্ত আয়াতের ভিত্তিতে ইহারা যাবিল ফুরূসের অন্তর্ভুক্ত :
وان كان رجل يورث كلال أو امرأة وله أخ أو أخ فلكل واحد منهما السدس فإن كانوا أكثر من ذلك فهم شركاء في الثلث من بعد وصية يوصي بها أو دين .
“যদি পিতা-মাতা ও সন্তানহীন কোন পুরুষ অথবা নারীর ওয়ারিশ থাকে তাহার এক বৈপিত্রেয় ভাই অথবা ভগ্নী তবে তাহাদের প্রত্যেকের জন্য এক-ষষ্ঠাংশ। তাহাৱা ইহার অধিক হইলে সকলে এক-তৃতীয়াংশে সমঅধিকারী হইবে, যাহা ওসিয়ত করা হয় তাহা দেওয়ার এবং ঋণ পরিশোধের পর” (সূরা নিসা : ১২)।
‘ ধারা-৪২৪
দাদার প্রাপ্য অংশ (ক) মৃত ব্যক্তির পুত্র বা পৌত্ৰ থাকিলে দাদা তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-ষষ্ঠাংশ পাইবে;
(খ) মৃত ব্যক্তির কন্যা বা পৌত্রী থাকিলে দাদা এক-ষষ্ঠাংশ পাইবে এবং উপরোক্তদের অংশ দেওয়ার পর আসাবা হিসাবে অবশিষ্টাংশ পাইবে;
(গ) মৃত ব্যক্তির সন্তানাদি (পুত্র-কন্যা, পৌত্র-পৌত্রী) না থাকিলে দাদা আসাবা হিসাবে সমস্ত সম্পত্তি লাভ করিবে;
(ঘ) মৃতের পিতার বর্তমানে দাদা সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হইবে।
বিশ্লেষণ
দাদা বলিতে এখানে এমন ব্যক্তিকে বুঝানো হইয়াছে যাহার সহিত মৃত ব্যক্তির সম্পর্কের মাঝখানে কোন স্ত্রীলোক নাই। অর্থাৎ মৃতের পিতা যাহার ঔরসজাত তাহাকে বুঝানো হইয়াছে।
পিতার অবর্তমানে দাদা পিতার স্থলাভিসিক্ত গণ্য হয় এবং কুরআনের যে আয়াতের ‘ ভিত্তিতে পিতা ওয়ারিশ হয় উহাই (৪ : ১১) দাদার ওয়ারিশ হওয়ার ভিত্তি। কুরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াতে (পিতা) শব্দ দ্বারা দাদাকে বুঝানো হইয়াছে। যেমন :
كما أخرج أبويكم من الجثة .
“যেমন সে তোমাদের পিতা-মাতাকে (আম্দম ও হাওয়াকে) জান্নাত হইতে বহিষ্কার করিয়াছে” (সূরা আরাফ : ২৭)।
হযরত আবু বা, ইবন আব্বাস ও ইবন যুবাইর (রা) বলেন, পিতার অবর্তমানে দাদা তাহার স্থলাভিসিক্ত হইবে। সাহাবীদের কেহই ইহার বিরোধিতা করেন নাই। অনন্তর নিকটতর দাদার বর্তমানে দূরতর দাদাও বঞ্চিত হইবে। অনুরূপভাবে মৃতের নানা (মায়ের পিতা) তাহার ওয়ারিশ হইবে না।
ধারা-৪২৫
দাদী ও নানীর প্রাপ্য অংশ (ক) দাদী ও নানী একজন বা একাধিক হউক সকলে মিলিয়া মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-ষষ্ঠাংশ পাইবে, তবে সকলকে একই স্তরের হইতে হইবে;
(খ) মৃতের পিতা-মাতার বর্তমানে দাদী-নানী সকলেই বঞ্চিত হইবে; (গ) মৃতের দাদার বর্তমানে মৃতের দাদী বঞ্চিত হইবে।
বিশ্লেষণ
আরবি ভাষায় ‘, শব্দটি দাদী ও নানী উভয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। তবে পিতার মা, দাদার মা (যত ঊর্ধ্বগামী হউক) সকলে ইহার অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু মাতৃকুলের
শুধু মায়ের মা (অর্থাৎ নানী) ইহার অন্তর্ভুক্ত।
৫৩৭
“এক মৃতের দাদী/নানী আবু বা সিদ্দীক (রা)-এর নিকট তাহার ওয়ারিশী স্বত্বের দাবি উত্থাপন করিলে তিনি বলেন, তোমার জন্য আল্লাহর কিতাবে কোন অংশ নির্ধারণ করা হয় নাই। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সুন্নাতে তোমার জন্য কিছু নির্ধারণ করা হইয়াছে কিনা তাহা আমার জানা নাই। অতএব তুমি চলিয়া যাও, আমি খোঁজ-খবর নিয়া দেখি। তিনি এই সম্পর্কে খোঁজ নিলে মুগীরা ইন শুবা (রা) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট উপস্থিত থাকা অবস্থায় তিনি দাদী/নানীকে এক-ষষ্ঠাংশ দান করিয়াছেন। আবূ বা (রা) জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনার সহিত আর কেহ উপস্থিত ছিল কি? তখন মুহাম্মাদ ইবন মাসলামা (রা) উঠিয়া দাঁড়াইয়া তাহার কথার সমর্থন করিলেন।
অতঃপর উমর ইবনুল খাত্তাব (রা)-এর খিলাফতকালে এক দাদী/নানী আসিয়া তাঁহার নিকট তাহার ওয়ারিশী স্বত্বের দাবি উত্থাপন করিল। উমর (রা)-ও বলিলেন, আল্লাহর কিতাবে তোমার জন্য কোন অংশ নির্ধারিত নাই। আর সেই যে ফয়সালা করা হইয়াছিল (রাসূলুল্লাহ (সা) ও আবু বাকর (রা)-এর যুগে তাহা তুমি ছাড়া অন্য কাহারো ক্ষেত্রে করা হইয়াছে। আমি ফারাইদে এক-ষষ্ঠাংশের অধিক বৃদ্ধি করিতে পারি না। যদি তোমরা দুইজন (দাদী ও নানী) একত্র হও তবে এক-ষষ্ঠাংশ তোমাদের উভয়ের মাঝে সমভাবে বন্টিত হইবে। আর তোমাদের দুইজনের মধ্যে কেউ যদি একা থাকে তবে সে একাই তাহা পাইবে।”
ধারা-৪২৬ আসাবাগণের মধ্যে সম্পত্তি বন্টনের স্তরবিন্যাস নিম্নলিখিত স্তর বিন্যাস অনুযায়ী আসাবাগণ মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে স্বত্ববান হইবে।
(ক) মৃতের সহিত নিকটতর আত্মীয়-সম্পর্কের আসাবাগণ তাহার সহিত দূরতর সম্পর্কের আসাবাগণের উপর অগ্রাধিকার পাইবে;
(খ) একই পর্যায়ের আলাবাগণের একত্র সমাবেশ হইলে তাহাদের মধ্যে মৃতের সহিতযাহার আত্মীয়-সম্পর্কঅপেক্ষাকৃতশক্তিশালীতাহাকে অগ্রাধিকার দিতে হইবে।
(গ) কয়েক শ্রেণীর আবার একত্র সমাবেশ হইলে তাহাদের মধ্যে মৃতের সহিতযাহার নিকটতর আত্মীয়ের সম্পর্ক রহিয়াছে তাহাকে অগ্রাধিকার দিতে হইবে;
(ঘ) আসাবাগণের সংখ্যানুপাতে তাহাদের মধ্যে মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তি বণ্টিত হইবে।
বিশ্লেষণ
যাবিল ফুরূযের নির্দিষ্ট অংশ দেওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি (যদি থাকে) আসাবাগণের মধ্যে বণ্টনযোগ্য হইবে। প্রথমোক্ত পর্যায়ের আসাবাগণের বর্তমানে পরবর্তীগণ বঞ্চিত হইবে। যেমন মৃতের পুত্র-পৌত্রের (যত নিম্নগামী হউক) বর্তমানে অন্য সকল
৫৩৮
আসাবা বঞ্চিত হইবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে পুত্রের অবর্তমানে মৃতের পিতা বা দাদা বর্তমান থাকিলে তাহাদের পরবর্তী আসাবাগণ বঞ্চিত হইবে।
পরবর্তী পর্যায়ে পিতা বা দাদার অবর্তমানে মৃতের সহােদর ভাই, তাহার অবর্তমানে বৈমাত্রেয় ভাই, তাহার অবর্তমানে সহােদর ভ্রাতুস্পুত্র, তাহার অবর্তমানে বৈপিত্রেয় ভ্রাতুস্পুত্র আসাবা হইবে। কয়েক শ্রেণীর আসাবার একত্র সমাবেশ ঘটিলে, যেমন কোন মৃতের এক কন্যা, একজন সহােদর ভগ্নী এবং একজন বৈপিত্রেয় ভ্রাতুস্পুত্র জীবিত থাকিলে তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক পাইবে কন্যা এবং অর্ধেক পাইবে সহােদর ভগ্নী কন্যার সহিত আসাবা হিসাবে এবং বৈপিত্রেয় ভ্রাতুস্পুত্র বঞ্চিত হইবে। অনুরূপভাবে মৃতের ভ্রাতুস্পুত্র ও চাচা বর্তমান থাকিলে ভ্রাতুস্পুত্র আসাবা হইবে এবং চাচা বঞ্চিত থাকিবে।
একই পর্যায়ের একদল আসাবা একত্র হইলে তাহাদের মধ্যে মাথাপিছু হিসাবে সম্পত্তি বণ্টিত হইবে, মূলনীতির অনুসরণ করা হইবে না। যেমন এক ব্যক্তি এক ভাইয়ের পক্ষের এক সন্তান (ভ্রাতুস্পুত্র) এবং অপর ভাইয়ের পাঁচ সন্তান রাখিয়া মারা গেল। এক্ষেত্রে তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তি সমান ছয় ভাগে বিভক্ত হইবে।
ধারা-৪২৭
আওল (Use) মৃত ব্যক্তির পত্যিক্ত সম্পত্তি তাহার ওয়ারিশগণের মধ্যে বন্টন করিতে গিয়া যদি দেখা যায় যে, তাহাদের প্রাপ্য অংশসমূহের সমষ্টি মূল একক অতিক্রম করিয়া গিয়াছে, তখন সেই ক্ষেত্রে বণ্টিত অংশসমূহ আনুপাতিক হারে হ্রাস করার বিধানকে “আওল” বলে।
বিশ্লেষণ
শব্দটির অর্থ বিলাপ, আর্তনাদ, জুলুম, অবলম্বন ইত্যাদি। অর্থাৎ অংশীদারগণের অংশ প্রদান করিতে গিয়া দেখা গেল যে, বণ্টিত অংশের সমষ্টি (লব) একক (হর) অতিক্রম করিয়া গিয়াছে। এক্ষেত্রে একক (হর)-কে অংশের সমষ্টির (লব) পর্যায়ে বর্ধিত করিয়া প্রত্যেক অংশীদারের অংশ আনুপাতিক হারে হ্রাস করিয়া সমস্যার সমাধান করিতে হয়। যেমন কোন মহিলা স্বামী ও দুই সহােদর ভগ্নী রাখিয়া মারা গেল। তাহার সম্পত্তিতে স্বামী ২ অংশ এবং ভগ্নীদ্বয় ও অংশ পাওয়ার কথা। অংকের হিসাবে ইহার ফল দাঁড়ায় নিম্নরূপ।
১ + ১ = ৩৫ = 3। অর্থাৎ মোটের তুলনায় অংশের বৃদ্ধি ঘটিয়াছে।
এই সমস্যার সমাধানকল্পে “আওল” নীতির অনুসরণপূর্বক হরকে (৬) লবের (৭) পর্যায়ে বৃদ্ধি করিয়া নিম্নোক্তভাবে সম্পত্তি বণ্টিত হইবে।
মোট সম্পত্তি হইতে স্বামী ও অংশের পরিবর্তে পাইবে ও অংশ এবং ভগ্নীদ্বয় ৪ অংশের পরিবর্তে পাইবে ব অংশ। এখানে আনুপাতিক হারে সকলের প্রকৃত প্রাপ্য অংশ হ্রাসপ্রাপ্ত হইয়াছে।
৫৩৯
২, ৩ ও ৮-এর আওল হয় না বা প্রয়োজন পড়ে না, কিন্তু ৬, ১২ ও ২৪ ইত্যাদি সংখ্যার ক্ষেত্রে আওল হয়। ৬-এর আওল জোড় ও বেজোড় সংখ্যায় ৭ হইতে ১০ পর্যন্ত হয়, ইহার অধিক হয় না। ১২-এর আওল হয় ১৭ পর্যন্ত বেজোড় সংখ্যায় এবং ২৪-এর আওল হয় ২৭ দ্বারা মাত্র একবার, যাহা মাসআলা মিম্বারিয়া’ নামে খ্যাত সমাধানে লক্ষ্য করা যায়?
মৃত-২৪=২৭।
মাতা
কন্যা কন্যা
পিতা
= ৩+8+2= ২৭
রাসূলুল্লাহ্ (স) ও আবু বকর (রা)-এর যুগে আওলের সমস্যা উথিত হয় নাই। উমর ফারূক (রা)-এর যুগে এই সমস্যার উদ্ভব হয়। কোন মৃত স্ত্রীলোকের ওয়ারিশগণ তথা স্বামী ও দুই সহােদর ভগ্নী তাহাদের নিজ নিজ অংশ দাবি করিলে উমর (রা) সমস্যার সম্মুখীন হন। তখন যায়েদ ইবন সাবিত (রা) তাঁহাকে ‘আওল’-এর প্রতি ইশারা করেন। অতএব তিনি তদনুযায়ী ফয়সালা করেন এবং বলেন, “ফারায়েয শাস্ত্রে আওল প্রবর্তন করা হইয়াছে।
, ধারা-৪২৮
রদ (প্রত্যর্পণ)। (ক) যাবিল ফুরূযদের মধ্যে মৃতের পরিত্যক্ত সম্পত্তি তাহারে। নির্দিষ্ট অংশ অনুপাতে বন্টন করার পর যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে এবং মৃজে কোন আসা পর্যায়ের আত্মীয় না থাকে তবে অবশিষ্ট সম্পত্তি পুনরায় যাবিল ফুরূষদের মধ্যে তাহাদের নির্দিষ্ট অংশ অনুপাতে পুনর্বণ্টন করাকে “রদ্দ” (স) বলে।
(খ) স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি সাধারণত রন্দ হয় না, কিন্তু মৃতের “যাবিল-আরহাম” পর্যায়ের কোন আত্মীয়ও না থাকিলে তাহাদের প্রতি “রদ্দ” হইবে।
বিশ্লেষণ
পবিত্র কুরআনে বলা হইয়াছে;
•
০
وأولوا الأرحام بعضهم أولى ببغض في كتاب الله .
“এবং আত্মীয়গণ আল্লাহর বিধানে একে অন্য অপেক্ষা অধিক হকদার” (সূরা আনফাল : ৭৫; সূরা আহযাব : ৬)।
সূরা নিসার সংশ্লিষ্ট আয়াতসমূহের ভিত্তিতে যাবি ফুরূযের নির্ধারিত অংশ দেওয়ার পর উপরোক্ত আয়াতের ভিত্তিতে তাহাদেরকে মৃতের অবশিষ্ট সম্পত্তি প্রত্যর্পণ করা হয়।
৫৪০
সুন্নাহ হইতেও ইহার সমর্থন পাওয়া যায়। এক ব্যক্তি লিআনের মাধ্যমে নিজ স্ত্রীর অন্তঃসত্ত্বাকে তাহার ঔরসজাত নহে বলিয়া প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল। মহিলাটি একটি পুত্রসন্তান প্রসব করে। পরবর্তী কালে ছেলেটি একমাত্র মাকে ওয়ারিস রাখিয়া মারা গেলে রাসূলুল্লাহ (সা) তাহার মাকে তাহার পরিত্যক্ত সমস্ত সম্পত্তি দান করেন।
মহানবী (সা) আরও বলেন, কোন স্ত্রীলোক রাস্তায় পতিত শিশুর (লাকীত) লালন-পালন করিলে, কোন গোলাম আযাদ করিলে এবং কোন শিশুর বংশসূত্র মায়ের দ্বারা প্রমাণিত হইলে এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্ত্রীলোকটি তাহাদের সমস্ত সম্পত্তির মালিক হইবে (যদি তাহারা ওয়ারিশবিহীন মারা যায়)। মৃতের যাবিল আরহাম পর্যায়ের কোন আত্মীয় না থাকিলে অবশিষ্ট সম্পত্তি স্বামী বা স্ত্রীকেই প্রত্যর্পণ (রদ্দ) করিতে হইবে।
ধারা-৪২৯
যাবিল আরহামের ওয়ারিশীস্বত্ব মৃত ব্যক্তির যাবিল ফুরূয (স্বামী বা স্ত্রী ব্যতীত) ও আসা পর্যায়ের কোন আত্মীয় বর্তমান না থাকিলে “যাবিল আরহামগণ” তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে স্বত্ববান হইবে।
বিশ্লেষণ
যাবিল ফুরূষ পর্যায়ে মৃতের স্বামী বা স্ত্রী বর্তমান থাকিলে এবং কোন আসাবা না থাকিলে তাহাদের প্রাপ্য অংশ দেওয়ার পর মৃতের অবশিষ্ট সম্পত্তি যাবিল আরহামগণ লাভ করিবে আল-প্রমাণ পূর্বে উল্লেখিত হইয়াছে)।
ধারা-৪৩০ যাবিল আরহামের ওয়ারিশী স্বত্ব লাভের পর্যায়ক্রম যাবিল আরহামগণ নিম্নোক্ত ক্রমানুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মৃতের ত্যক্ত সম্পত্তিতে ওয়ারিশ হইবে—
(ক) মৃতের সহিত যাহাদের সম্পর্ক; যেমন মৃতের কন্যাগণের ও দৌহিত্রীগণের সন্তানগণ;
(খ) মৃত ব্যক্তি যাহার সহিত সম্পর্কিত; যেমন নানা, নানার পিতা-মাতা;
(গ) যাহারা মৃতের পিতা-মাতার সহিত সম্পর্কিত; যেমন সহদরা, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভগ্নীগণের সন্তানগণ ও তদনিম্নবতীগণ;
(ঘ) যাহারা মৃতের দাদা-দাদী ও নানা-নানীর সহিত সম্পর্কিত; যেমন মৃতের ফুফু, খালা, মামা, মৃতের মায়ের চাচাগণ।
।
৫৪১
ধারা-৪৩১
অজ্ঞাতকুল ব্যক্তির ওয়ারিশী স্বত্ব (ক) মৃত ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তিকে নিজের বা তাহার কোন আত্মীয়ের ঔরসজাত বলিয়া স্বীকৃতি প্রদান করিলে এবং তাহার কোন সুনির্দিষ্ট বংশপরিচয়
থাকিলে অথবা অন্য কেহ তাহাকে নিজের ঔরসজাত বলিয়া দাবি না করিলে এবং তাহার ওয়ারিশ হওয়ার ক্ষেত্রে কোনরূপ প্রতিবন্ধকতা না থাকিলে। স্বীকৃতি প্রদানকারীর পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে স্বত্ববান হইবে।
তবে শর্ত থাকে যে, স্বীকৃতি প্রদানকারীর যাবিল ফুরূয, আসাবা ও যাবি। আরহাম পর্যায়ের কোন আত্মীয় বিদ্যমান থাকিলে সে ওয়ারিশ হইবে না।
বিশ্লেষণ
যেমন কোন ব্যক্তি দাবি করিল যে, অমুক ব্যক্তি আমার ঔরসজাত পুত্র তা কত অথবা আমার পিতার ঔরসজাত এবং সে অমত এই নদি প্রত্যাখ্যান * কারনে শেষোক্ত ব্যক্তি তাহার ওয়ারিশ হইবে। কিন্তু তাহার এই দাবি আইনত যুক্তিসঙ্গত * হইলে শেষোক্ত ব্যক্তি। ওয়াশ হইবে না; যে ব্যক্তি এ..। এ ব্যক্তিকে নিজের সন্তান বা তাই বলিয়া না “, “সে বলে বা :”. সে তাহার সন্তান ব ভ হইতে পারে : – : কর বিল . আসাবা ও যাবিল মারহাম পর্যায়ের (১”: :: :: ::; </fr.?= ব্যক্তি ঈ’ : : প্রদানকারীর” ওয়ারিশ হইত 11রে? :
এ
. ৪:::
যাহার জন: সমস্ত সম্পত্তি অমিয়াও করা হইয়াছে শাবিজ ফুরূষ, আষা পি এস এ (৪৩৪) ক ধারায় উল্লেখিত ব্যক্তি কেহ বর্তমান না থাকিলে কে কি – j: * * * * ঐমিয়াত করিলে সে তাছায় মৃত্যুর পর তাহার সমস্ত পরিত্যক্ত সম্পত্তির মালিক হইবে
of।
: :
ওয়ারিশগণের তর্মানে কোন ব্যক্তি হার সম্পত্তির এক-তীয়াংশের অধিক সিয়া করিতে পারে না। হাতে ওয়ারিশগ অধিকর পর না হয় সেজন্য এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হইয়াছে, : কিন্তু যাহার বন ওরশই নাই? . ১.! ২! প্রতারিত বা বঞ্চিত হওয়ার ১ উঠে। এই ২ ২ ১ বহি :র সম সম্পত্তি অপর 4াহারও অনুকূলে ও তি করি।
প্ৰয়া-৩৩
“স্বায়তুল মাল (সকারী ১াষাগার। কোন মৃত ব্যক্তির এই পর্যন্ত বর্ণিত ‘সমূহে উল্লেখিত শে; + স থাকিলে তাহার সমস্ত পরিত্যক্ত সম্পত্তি ইসলামী রাষ্ট্রের তুল মালে” জমা হইবে এবং ইহা জনসাধারণের সম্পত্তিতে পরিণত হইবে।
৫৪২
বিশ্লেষণ
ইসলামী আইনের ভিত্তিতে পরিচালিত রাষ্ট্রের কোষাগারকে “বায়তুল মাল”
বলে।
ধারা-৪৩৪। মাতৃগর্ভে অবস্থানরত সন্তান (হামল)-এর মীরাস দুইটি শর্তে মাতৃগর্ভে অবস্থানরত সন্তান মৃতের ওয়ারিশ হইতে পারে (ক) সম্পদ পরিত্যাগকারীর মৃত্যুকালে মায়ের গর্ভে সন্তানের নিশ্চিত অবস্থান;
এবং (খ) মায়ের গর্ভ হইতে জীবিত ভূমিষ্ঠ হওয়া।
বিশ্লেষণ
কোন নারীর জরায়ুতে অবস্থানরত ভ্রুণকে “হামল” (L. ২) বলে এবং স্ত্রীলোকটিকে “হামেলা” (গর্ভধারিণী) বলে।
ওয়ারিশগণের মধ্যে মৃতের সম্পদ বণ্টনকালে হামলের জন্য একটি অংশ পৃথক করিয়া রাখিতে হইবে। মাতৃগর্ভস্থ সন্তানকে যাহা মনে করিলে তাহার অপেক্ষাকৃত বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেইরূপ অংশ পৃথক করিয়া রাখিতে হইবে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হইলে আইনত তাহার প্রাপ্য অংশ দেওয়ার পর পৃথক করিয়া রাখা সম্পত্তির কিছু অবশিষ্ট থাকিলে তাহা অন্যান্য ওয়ারিশগণের মধ্যে তাহাদের নির্ধারিত অংশ অনুযায়ী বণ্টিত হইবে। যেসব ক্ষেত্রে হামল জীবিত ভূমিষ্ঠ হইলেও তাহার ওয়ারিশ হওয়ার সম্ভাবনা নাই সেসব ক্ষেত্রে সম্পত্তি পৃথক করিয়া রাখার প্রয়োজন নাই।
ধারা-৪৩৫
নিখোঁজ (19ial) ব্যক্তির মীরাস ক) নিখোঁজ ব্যক্তির মীরাসের অংশ পৃথক করিয়া রাখিতে হইবে; (খ) নিখোঁজ ব্যক্তির কারণে কোন ওয়ারিশের অংশে ঘাটতি ( 2) হওয়ার সম্ভাবনা থাকিলে সমুদয় সম্পত্তি অবণ্টিত থাকিবে, কিন্তু তাহার কারণে কাহারও অংশে ঘাটতি না হইলে তাহার অংশ আলাদা করিয়া রাখিয়া অবশিষ্ট অংশ অনান্য ওয়ারিশের মধ্যে বন্টিত হইবে;
(গ) সে জীবিত ফিরিয়া আসিলে তাহার অংশ তাহাকে দেওয়া হইবে;
(ঘ) আদালত কর্তৃক তাহাকে মৃত ঘোষণার পর তাহার প্রাপ্য অংশ তাহার ওয়ারিশগণের প্রাপ্য হইবে, কিন্তু মৃত ঘোষণা দেওয়ার পূর্বে তাহার যে ওয়ারিশ মারা গিয়াছে সে তাহার সম্পত্তিতে অংশীদার হইবে না।
৫৪৩
বিশ্লেষণ
কোন ব্যক্তি জীবিত আছে কি মারা গিয়াছে সে সম্পর্কে যথাসাধ্য খোঁজ-খবর নেওয়ার পরও কিছু জানা যায় নাই অথবা শত্রুরা তাহাকে অপহরণ করিয়াছে অথবা শিকারে গিয়াছে এবং অতঃপর তাহার আর কোন খোঁজ-খবর পাওয়া যায় নাই, তাহাকে “মাফকূদ (নিখোঁজ ব্যক্তি) বলে।
মাফকূদের এলাকার তাহার সমবয়স্ক লোকের কেহ জীবিত না থাকিলে তখন তাহাকে মৃত ঘোষণা করা যাইবে। ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে উক্ত মেয়াদ ৯০ বৎসর। মাফকূদকে তাহার নিজের মালিকানাধীন সম্পত্তির ক্ষেত্রে জীবিত গণ্য করা হইবে এবং উহা তাহার ওয়ারিশগণের মধ্যে বন্টিত হইবে না। অনন্তর সে কাহারও ওয়ারিশ হইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তি তাহার ওয়ারিশগণের মধ্যে বণ্টনকালে তাহার প্রাপ্য অংশ পৃথক করিয়া রাখিতে হইবে। আদালত কর্তৃক তাহাকে মৃত ঘোষণাকালে তাহার জীবিত থাকা ওয়ারিশগণের মধ্যে তাহার সম্পত্তি বণ্টিত হইবে। তাহাকে মৃত ঘোষণা করার পূর্বে যাহাদের মৃত্যু হইয়াছে তাহারা তাহার ওয়ারিশ হইবে না।
ধারা-৪৩৬
জারজ সন্তানের মীরাস। জারজ সন” ও “লিআনকারিণীর সন্তান” নিজ নিজ মা ও তাহাদের আত্মীয়গণের ওয়ারিশ হইবে।
ধারা-৪৩৭
কয়েদীর মীরাস (ক) কোন মুসলমান অমুসলিম দেশের কয়েদখানায় বন্দী থাকিলে তাহার জীবিত ফিরিয়া না আসা পর্যন্ত তাহার মীরাসের অংশ পৃথক করিয়া রাখিতে হইবে;
(খ) সে জীবিত ফিরিয়া না আসিলে তাহার অংশ তাহার ওয়ারিশগণের মধ্যে বণ্টিত হইবে;
(গ) সে মুরতাদ হইয়া গেলে তাহার সম্পত্তির উপর মুরতাহাদের বিধান ধারা ৪৪৭) কার্যকর হইবে।
ধারা-৪৩৮
খুনসার (উভয় লিঙ্গ) মীরাস খুনসা পুরুষ কি নারী তাহা নির্ণয় করা অসম্ভব হইলে তাহাকে পুরুষ বা নারী যাহা বিবেচনা করিলে সে অপেক্ষাকৃত কম অংশ পাইবে তাহাকে তাহাই সাব্যস্ত করিতে হইবে এবং সে তদনুযায়ী ওয়ারিশীস্বত্ব লাভ করিবে।
৫৪১৪
বিশ্লেষণ
জন্মগতভাবে যাহার স্ত্রীলিঙ্গ ও পুরুষলিঙ্গ উভয়ই রহিয়াছে তাহাকে খুনসা বলে। যদি পুরুষলিংগ দিয়; পেশাব নির্গত হয় তবে তাহাকে পুরুষ এবং স্ত্রীলিঙ্গ দিয়া
পশাব নির্গত হইলে নারী বিবেচনা করিতে হইবে এবং তদনুযায়ী মীরাস বণ্টিত হইব। আরও বলা হইয়াছে যে, যদি তাহার দাড়ি গোঁফ গজায় এবং স্বপ্নদোষ হয় কবে সে পুরুষ, আর মাসিক ঋতু হইলে ও স্তন স্ফীত হইলে নারী গণ্য হইবে।
ধারা-৪৩৯
ঘটনায় একত্রে মৃত্যুবরণকারীদের মীরাস যদি একাধিক ব্যক্তি একই দুর্ঘটনায় মারা যায় এবং কে কাহার আগে মারা গয়াছে তাহা নির্ণয় করা সম্ভব না হয় তাহা হইলে তাহাদের সম্পত্তি নিজ নিজ জীবিত ওয়ারিশগণের মধ্যে বণ্টিত হইবে; মৃত ব্যক্তিগণ পরস্পরের ওয়ারিশ হইবে না, কারণ তাহারা একই মূহর্তে একত্রে মারা গিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।
বিশ্লেষণ
হানা কয়েক দিত্বী! যারা পরস্পরের ওয়ারিস, হাড় বা প্রাচীর ধ্বসিয়া অথক জনম ইয়’ নিগ্ধ হইয়া র বনবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হইয়া একই সঙ্গে মারা অ! পাত্রে নিহত হইয়াছে এবং তাহাদের মধ্যে কে আগে মার।
হাFে ৬. ক র হ হ নির্ণয় ন র ব ামিবার কোন উপায় নাই। এইরূপ অব হারা নয়: ওয়ানি -ইরে না, তাহাদের জীবিত ওয়ারিশগণই তাহাদের পর গ ল্য করিব। জামাল, নফফান, হরিরা, ইয়ামামা ইত্যাদি যুদ্ধে নিহত মলশের বেলায় গ্রাহকগণ অনুরুপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছিলেন।
-১৪
১ রাকার লাল রায় উ ধক লাভের আশুরা গুলি নিম্নরূপ:
(ক; ইচ্ছা হকা সংঘটন, যার জন্য কিসাস অথবা ফাফঞ্চারা অপরিহার্য
হয়
।
} ধর্মের সার্থ; * দেশের পার্থক্য; (ঘ) ধর্মত্যাগ ইরতিদাদ)!
ধারা-৪৪১
হন্ত নিহতের ওয়ারিস হইবে না (ক) ইচ্ছাপূর্বক হত্যাকারী নিহত ব্যক্তির ওয়ারিশ হইবে না; কিন্তু
৫৪৫
(খ) নিজের জীবন বাঁচাইবার তাগিদে হত্যাকণ্ড সংঘটিত হইলে হত্যাকারী ওয়ারিশী স্বত্ব হইতে বঞ্চিত হইবে না;
(গ) হত্যাকারী শিশু অথবা পাগল হইলেও ওয়ারিশী স্বত্ব বঞ্চিত হইবে না।
বিশ্লেষণ
ইচ্ছাপূর্বক হত্যাকে পরিভাষায় Lae বলে। এইরূপ হত্যার সহিত মনোভাব বিদ্যমান থাকিতে হইবে। ইমাম আবু হানীফা (র) এইরূপ হত্যার সংজ্ঞায় অঙ্গ ছেদনকারী অস্ত্র ব্যবহারের শর্ত যুক্ত করিয়াছেন। কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে হত্যা সংঘটনের ক্ষেত্রে অস্ত্রের ব্যবহার শর্ত নহে ৫ পরিকল্পিত হত্যা, যেমন পানিতে ডুবাইয়া, আগুনে নিক্ষেপ করিয়া হত্যা করিলে উহাও ইচ্ছাপূর্বক হত্যার অন্তর্ভুক্ত। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যু ইচ্ছাকৃতভাবেই ঘটানো হউক কিংবা অসাবধানতার দরুন ঘটুক, এমনকি দুর্ঘটনাক্রমে যদি ঘটে তাহা হইলে উহার সহিত সংশ্লিষ্ট কেহই তাহার ওয়ারিশ হইবে না। মহানবী (স) বলেন :
1 2 1 sa) “হত্যাকারীর জন্য কোন মীরাস নাই” (তিরমিযী, ফারাইদ, বাব মা জাআ ফী ইতালি মীরাসিল কাতিল, হাদীস নং ২১০৯; ইবন মাজা, ফারাইদ, বাব মীরাসিল
কাতিল, নং ২৭৩৫)।
من قتل قتيلا فانه لا يرثه وان لم يكن له وارث غيره
وان كان والده أو ولده فليس للقاتل میراث.
“যে ব্যক্তি (নিজেদের) কাহাকেও হত্যা করিয়াছে, সে নিহত ব্যক্তির ওয়ারিশ হইবে না, হত্যাকারী ব্যতীত নিহতের আর কোন ওয়ারিশ বিদ্যমান না থাকিলেও; এমনকি হত্যাকারী যদি পিতা অথবা পুত্রও হয়। হন্তার জন্য কোন মীরাস নাই।২৫
ধারা-৪৪২ ধর্মের পার্থক্য ওয়ারিশী স্বত্বের বাধাস্বরূপ কোন কাফির কোন মুসলমানের অথবা কোন মুসলমান কোন কাফিরের ওয়ারিশ হইবে না।
বিশ্লেষণ
দুই ভিন্ন ধর্মের অনুসারী দুই ব্যক্তি, এমনকি পিতা-পুত্র হইলেও, একে অপরের ওয়ারিশ হইবে না। মহানবী (সা) বলেন :
لا يتوارث أهل الملتين .
৫৪৬
“দুই ধর্মের অনুসারী পরস্পরের ওয়ারিশ হইবে না।”
لا يرث المسلم الكافر ولا الكافر المسلم .
“মুসলমান কাফিরের এবং কাফির মুসলমানের ওয়ারিশ হইবে না।”
ধারা-৪৪৩ দুই ভিন্ন দেশের নাগরিকদের পরস্পরের মীরাস দুই ভিন্ন দেশের মুসলিম নাগরিকগণ পরস্পরের ওয়ারিশ হইবে।
বিশ্লেষণ
যেমন ইসলাম ধর্মের অনুসারী পিতা মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাস করে কিন্তু তাহার পুত্র অমুসলিম রাষ্ট্রে বসবাস করে। এই ক্ষেত্রে তাহারা পরস্পরের ওয়ারিশ হইবে।
ধারা-৪৪৪
মুরতাহাদের (ইসলাম ধর্মত্যাগীর) মীরাস (ক) মুরতাদ তাহার মুসলিম আত্মীয়দের ওয়ারিশ হইতে পারে না।
(খ) মুরতাদ মুসলমান অবস্থায় যে সম্পদ উপার্জন করিয়াছে উহা তাহার মুসলিম ওয়ারিশগণ পাইবে এবং ধর্মত্যাগের পরে অর্জিত মাল “বাইতুল মাল”-এ জমা হইবে; কিন্তু
(গ) মুরতাদ নারীর সমস্ত সম্পত্তি তাহার মুসলিম ওয়ারিশগণ লাভ করিবে।
বিশ্লেষণ
কোন মুসলমান দীন ইসলাম ত্যাগ করিলে তাহাকে মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) বলে। পবিত্র কুরআনে বলা হইয়াছে;
ومن يرتدد منكم عن دينه فيمت وهو كافر فأولئك حبطت أعمالهم في الدنيا والآخرة وأولئك أصح النار هم فيها خلدون . .
“তোমাদের মধ্যে যে কেহ স্বীয় দীন হইতে ফিরিয়া যায় এবং কাফিররূপে মৃত্যুমুখে পতিত হয় দুনিয়া ও আখিরাতে তাহাদের কর্ম নিষ্ফল হইয়া যায়। ইহারাই দোযখবাসী, সেথায় তাহারা স্থায়ী হইবে” (সূরা বাকারা : ২১৭)।
ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদের মতে মুরতাহাদের পূর্বাপর সমস্ত সম্পত্তির মালিক হইবে তাহার মুসলিম ওয়ারিশগণ।”
৫৪৭
ধারা-৪৪৫ -, তালাকের অবস্থায় মীরাস (ক) তালাকপ্রাপ্তা নারীর ইদ্দতকালের মধ্যে তাহার তালাকদাতা স্বামী মৃত্যুবরণ করিলে সে তাহার ওয়ারিশ হইবে, তালাক মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় প্রদান করা হইলেও; কিন্তু ঐ সময়কালের মধ্যে স্ত্রী মৃত্যুবরণ করিলে স্বামী তাহার ওয়ারিশ হইবে না।
(খ) তাবীয তালাকের ক্ষেত্রে স্ত্রী তাহার ইদ্দতকালের মধ্যে মৃত্যুবরণ করিলে স্বামী তাহার ওয়ারিশ হইবে; কিন্তু ঐ সময়কালের মধ্যে স্বামী মৃত্যুবরণ করিলে স্ত্রী তাহার ওয়ারিশ হইবে না।
• বিশ্লেষণ
উপধারা (ক)-এ বর্ণিত অবস্থায় স্বামীর ওয়ারিশ না হওয়ার কারণ এই যে, সে স্ত্রীকে তালাক প্রদান করিয়া নিজের স্বার্থ নিজেই ক্ষুন্ন করিয়াছে। উপধারা (খ)-এ বর্ণিত অবস্থায় স্ত্রীর ওয়ারিশ না হওয়ার কারণ এই যে, সে নিজের উপর তালাক কার্যকর করিয়া নিজের স্বার্থ নিজেই ক্ষুন্ন করিয়াছে। কিন্তু স্বামী যেহেতু তাহাকে সরাসরি তালাক প্রদান করে নাই, তাই সে তাফবীয় তালাকের ক্ষেত্রে স্ত্রীর ওয়ারিশ হইবে।
ধারা-৪৪৬
হজব ও হিরমান মৃত ব্যক্তির কোন ওয়ারিশের উপস্থিতিতে তাহার অপর কোন ওয়ারিশের ওয়ারিশী স্বত্ব লাভ সম্পূর্ণ বা আংশিক বঞ্চিত হওয়াকে “হজব” বলে।
বিশ্লেষণ
হজবের আভিধানিক অর্থ ‘বিরত রাখা’, ‘বঞ্চিত করা। কোন ওয়ারিশ সম্পূর্ণ বঞ্চিত হইলে তাহাকে হজবে হিরমান (৩৭১২২) বলে। যেমন মৃতের পুত্র-কন্যার বর্তমানে তাহার ভাই-বােন সম্পূর্ণ বঞ্চিত হয়। আর কোন ওয়ারিশ আংশিক বঞ্চিত হইলে তাহাকে হজবে নোকসান (5Lea; ) বলে। যেমন মৃতের সন্তান বর্তমান থাকিলে স্বামী-স্ত্রীর অংশ হ্রাস পায়।
ধারা-৪৪৭ মুনাসাখা (
A LL) মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তি তাহার ওয়ারিশগণের মধ্যে বন্টিত হওয়ার পূর্বেই যদি উক্ত ওয়ারিশগণের মধ্যে কাহারও মৃত্যু হয় তবে এই শেষোক্ত মৃতের প্রাপ্তব্য অংশ তাহার ওয়ারিশগণের মধ্যে বণ্টন করাকে “মুনাসাখা” বলে।
৫৪৮
বিশ্লেষণ
মুনাসাখা শব্দের অর্থ স্থানান্তর বা দূর করা। দ্বিতীয় মৃতের ওয়ারিশরাই প্রথম মৃতের ওয়ারিশ হইলে হিসাবে কোন রদবদল হয় না। যেমন কেহ চারজন পুত্র সন্তান। রাখিয়া মারা গেল। অতঃপর এক ছেলে অপর তিন ভাইকে ওয়ারিশ রাখিয়া মারা গেল। এই অবস্থায় পরিত্যক্ত সম্পত্তি তিনজনের মধ্যেই বন্টিত হইবে।
আবার দ্বিতীয় মৃতের ওয়ারিশরাই প্রথম মৃতের ওয়ারিশ হইলেও মৃতের সহিত তাহাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকিতে পারে। যেমন কোন ব্যক্তি দুই স্ত্রী এবং তাহাদের মধ্যে একজনের গর্ভজাত এক পুত্র ও অপরজনের গর্ভজাত দুই কন্যা রাখিয়া গেল। সম্পদ বণ্টনের পূর্বেই এক কন্যা মারা গেল। এই ক্ষেত্রে সম্পদ বণ্টনের পদ্ধতির পরিবর্তন হইবে।
তৃতীয়, দ্বিতীয় মৃতের ওয়ারিশগণ প্রথম মৃতের ওয়ারিশ নহে, অথবা তাহাদের কেহ কেহ উভয় তরফের ওয়ারিশ। এক্ষেত্রেও পরিত্যক্ত সম্পদ বন্টনের পদ্ধতির পরিবর্তন হইবে।
তথ্য নির্দেশিকা ১. আলমগিরী, কিতাবুল ফারাইদ, ৬খ, পৃ. ৪৪৭ :
الارث في اللغة البقاء وفي الشرع انتقال مال الغير الى
الغير على سبيل الخلافة .
৩
০
আল-বাহরুর রাইক, মিসর ১৩৩৪ হি., ৮খ, পৃ. ৪৮৯। সহীহ বুখারী, কিতাবুল ফারাইদ, বাব মীরাসিল-জাদ্দি মাআল আব; মুসলিম কিতাবুল ফারাইদ, ২ নং হাদীস; ইবন মাজা, ফারাইদ, বাব মীরাসিল আসাবা, হাদীস নং ২৭৪০। মুহাম্মাদ আলী আস-সাবৃনী, আল-মাওয়ারীস ফিশ-শারীআতিল ইসলামিয়্যা আলা দাওইল কিতাব ওয়াস-সুন্নাহ, বাব যাবিল আরহাম। ঐ বরাত। আবু বকর আল-জাসসাস, আহকামুল কুরআন, বৈরুত সং., পৃ. ৮৪। * আল-জাসসাস, আহকামুল কুরআন, পৃ. ৮৪। সায়্যিদ শারীফ জুরজানী, আশ-শারীফিয়্যা, পৃ. ৩০।
wiAJI s. ২১/’ সায়্যিদ শারীফ জুরজানী, আশ-শারীফিয়া, শারহি সিরাজিয়া, পৃ. ২২; ইবন কুদামা, আল-মুগনী, ৭খ, পৃ. ৭:
৭.
৫
وبنات الابن كبنات الصلب في ثبوت تلك الأحوال الثلث
১০. আশ-শারীফিয়্যা, পৃ. ২২। ১১. সহীহ বুখারী, কিতাবুল ফারাইদ, বাব মীরাসিল জাদ্দি;
৫৪৯
وقال أبو بكر وابن عباس وابن البير الجد أب .
উমদাতুল কারী, ২৩খ, পৃ. ২৪০। ১২. মুওয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ, বাংলা অনু., ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক
প্রকাশিত, ১ম সং., ১৪০৬/১৯৮৮, পৃ. ৪৫৭-৮, হাদীস নং ৭২৫। হাদীসটি আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবন মাজা, মুওয়াত্তা ইমাম মালেক ও মুসনাদে আহমাদেও সংকলিত হইয়াছে।
আলমগিরী, কিতাবুল ফারাইদ, ৬খ, পৃ. ৪৫৩, বাব আল-আসাবা। ১৪. আলমগিরী, ৬খ, পৃ. ৪৫৩ (বৈরূত সং.), কিতাবুল ফারাইদ, বাব আল-আসাবা। ১৫. মুহাম্মাদ আলী আস-সাবুনী, আল-মাওয়ারীস ফিশ-শারীআতিল ইসলামিয়্যা, অধ্যায়
আওল। আবু দাউদ, কিতাবুল ফারাইদ, বাব মীরাসি ইনিল মুলাইনাহ, হাদীস নং ২৯০৭। আবু দাউদ, ঐ, হাদীস নং ২৯০৬; তিরমিযী, ফারাইদ, বাব ইয়ারিসুন-নিসা মিলান ওয়ালা, হাদীস নং ২১১৬; ইবন মাজা, ফারাইদ, বাব তাহুল মাআতু
ছালাছা মাওয়ারী, হাদীস নং ২৭৪২। ১৮. আল-মাবসূত, ৩০খ, পৃ. ৭১; বাদাইউস সানাই, ৭খ, পৃ. ২৩০।
আশ-শারীফিয়্যা, পৃ. ১১। ২০. আশ-শারীফিয়্যা, পৃ. ১৩৭।
আল-মাবসূত, ৩০খ, পৃ. ৫৪-৫৫।। কুদূরী পাশা, আল-আহকামুশ শারীআ, মিসর ১৮৯০ খৃ., ধারা ৬৩৩। তাহির ইবন মুহাম্মাদ, খুলাসাতুল ফাতাওয়া, দিল্লী সং., ২খ, পৃ. ৪২০; আশ শারীফিয়্যা, পৃ. ১৪২; আল-মাবসূত, ৩০খ, পৃ. ৩৭। আল-মাবসূত, ৩০খ, পৃ. ৪৬-৪৭। ইন কুদামা, আল-মুগনী, কিতাবুল ফারাইদ, বাব আল-কাতিল লা ইয়ারিসুল
মাকতূল, ৬খ, পৃ. ২৯৯ (মুসনাদে আহমাদ-এর বরাতে)। ২৬. তিরমিযী, ফারাইদ, বাব ১৬, হাদীস ২১০৮; ইবন মাজা, ফারাইদ, বাব ৬, হাদীস
২৭৩১ এবং সিহাহ-এর অন্যান্য গ্রন্থ। তিরমিযী, ফারাইদ, বাব ১৫, হাদীস ২১০৭; ইবন মাজা, বাব ৬, হাদীস ২৭২৯,
২৭৩০ এবং সিহাহ-এর অন্যান্য গ্রন্থ। ২৮. আলমগিরী, কিতাবুল ফারাইদ, বাব ফী মীরাসি আহলিল কুফর, ৬খ, পৃ. ৪৫৪-৫।
, আলমগিরী, ফারাইদ, বাব মীরাসিল মুরতাদ, ৬খ, পৃ. ৪৫৫। ৩০.. উমর আবদুল্লাহ, আহকামুল মাওয়ারীস ফিশ-শারীআতিল ইসলামিয়্যা, পৃ. ১২৬
(মাজমূআহ্ কাওয়ানীন হইতে এখানে সংযুক্ত করা হইয়াছে, ৫খ, পৃ. ১৫৯৭-৮)। উপরোক্ত টীকা দ্র.।