1 of 2

১৫. হিদানাত (শিশু সন্তানের তত্ত্বাবধান)

১৫. পঞ্চদশ অধ্যায় – হিদানাত (শিশু সন্তানের তত্ত্বাবধান)

ধারা-৩৯৭

হিদানাত-এর সংজ্ঞা মাতা অথবা কোন বৈধ অভিভাবক কর্তৃক শিশুর লালন-পালনকে “হিদানা যশে”।

বিশ্লেষণ

হিদানাত বা হাদানাত (3___% ) শব্দের অর্থ লালন-পালন, তত্ত্বাবধান ও দায়িত্ব গ্রহণ। নাবালেগ সন্তান কাহার তত্ত্বাবধানে থাকিবে, পিতার না মাতাব এই প্রশ্নটি বিশেষত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিলেই প্রকট হইয়া দেখা দেয়। পিতা-মাতা মারা গেলেও এইরূপ সমস্যার উদ্ভব হইতে পারে।

ধারা-৩৯৮

হিনাতের অধিকার নাবালেগ সন্তান একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমায় না পৌঁছা পর্যন্ত তাহার মাতাই তাহার হিদামাতের (লালন-পালন ও তত্ত্বাবধানের অধিকারী। ইহা পুত্রের ক্ষেত্রে ৭ (সাত) বৎসরএবং কন্যারকেলবালেগাহওয়া পর্যন্ত। অবশ্য সন্তানের নিরাপত্তা ও কল্যাণের সহিত সংশ্লিষ্ট কোন বিশেষ কারণে তাহার এই অধিকার খর্ব হইতে পাবে।

বিশ্লেষণ

শিশুর লালন-পালনের প্রথম অধিকারী হইল মা, তাহার অবর্তমানে অন্যান্য আত্মীয়ের অধিকার বর্তায় এই বিষয়ে উম্মতের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। এই বিষয়ে কুরআন মজীদের সরাসরি সিদ্ধান্ত না থাকিলেও উহার সমর্থনে বক্তব্য (GAJ L I) রহিয়াছে। যেমন :

والوالدات يرضعن أولادهن حولين كاملين لمن أراد أن

– . – – – “যে স্তন্যপানকাল পূর্ণ করিতে চাহে তাহার জন্য জননীগণ তাহাদের সন্তানদিগকে পূর্ণ দুই বৎসর স্তন্য পান করাইবে” (বাকারা : ২৩৩)।

-~~-~

(58

من عبد الله بن عمرو أن امرأة قالت يا رسول الله ان ابني هذا ان بطنى له وعاء وثدیی له سقاء وحجرئ له جوا، وان أباه طلقني و آراد أن ينتزعه من فقال لها رسول الله صلى الله عليه وسلم أنت أحق به ما لم تنكح.

“আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা) হইতে বর্ণিত। এক মহিলা বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার এই পুত্র সন্তানটির জন্য আমার পেট ছিল তাহার মশক (ধারক), আমার স্তন ছিল তাহার পানপাত্র এবং আমার ক্রোড় ছিল তাহার নিরাপত্তার স্থান। তাহার পিতা আমাকে তালাক প্রদান করিয়াছে এবং সে এখন তাহাকে আমার নিকট হইতে জোর করিয়া লইয়া যাইতে চাহিতেছে। রাসূলুল্লাহ (সা) স্ত্রীলোকটিকে বলিলেন, তুমি যতক্ষণ পুনর্বিবাহ না করিবে ততক্ষণ সে তোমার অধিকারেই থাকিবে।”

عن رافع بن سنان أنه أسلم وأبت امراته أن تسلم فاتن النبي صلى الله عليه وسلم فقالت انتي وهي فطيم أو شبهه وتا راف ابنتى فقال له الثبي صلى الله عليه وسلم أفقد ناحية وقال لها أقعدي ناحية وأقعد الصبية بينهما ثم قال أدعواها فمالت الصبة اللى أمها فقال البي صلى الله عليه وسلم اللهم اهدها فمالت الصبية الى أبيها فاخذها .

“রাফে ইবন সিনান (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, কিন্তু তাহার স্ত্রী ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। স্ত্রীলোকটি মহানবী (সা)-এর নিকট উপস্থিত হইয়া বলিল, আমার কন্যা সন্তানটি দুধপান ত্যাগ করিয়াছে বা উহার কাছাকাছি বয়সে) পৌছিয়াছে। রাফে (রা) বলিলেন, আমার কন্যা। মহানবী (স) লাফে (রা)-কে বলিলেন, তুমি এক পাশে সরিয়া বস। তিনি স্ত্রীলোকটিকেও বলিলেন, তুমিও এক পাশে সরিয়া বস। তিনি শিশুটিকে তাহাদের মাঝ বরাবর বসাইলেন এবং তাহাদেরকে বলিলেন ও তাহাকে ডাক। শিশুটি তাহার মায়ের দিকে আকৃষ্ট হইল। মহানবী (স) বলিলেন, হে আল্লাহ! তাহাকে পথপ্রদর্শন কর। অতঃপর শিশুটি তাহার পিতার প্রতি আকৃষ্ট হইল এবং সে তাহাকে গ্রহণ করিল”।

عن أبي هريرة أن امراة جاءت اللى رسول الله صلى الله عليه وسلم وانا قاعد عنده فقالت يا رسول الله ان زوجي پري أن يذهب بابنى وقد سقاني من بئر أبي عنابة وق

৫১৫

نفعني فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم استهما عليه

ان النبي صلى الله

فقال زوجها من يحاني في ولدي عليه وسلم هذا أبوك وهذه أم فذ بيد أيهما شئت فأخذ بيد أمه فانطلقت به .

“ আবূ হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। আমি মহানবী (সা)-এর নিকট উপবিষ্ট অবস্থায় একটি স্ত্রীলোক তাঁহার নিকট উপস্থিত হইয়া বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্বামী আমার পুত্রকে আমার নিকট হইতে লইয়া যাইতে চাহে। অথচ সে আবু ইনাবার কূপ হইতে আমাকে পানি আনিয়া দেয় এবং আমার আরও উপকার করে। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, তাহার ব্যাপারে লটারির ব্যবস্থা কর। স্ত্রীলোেকটির স্বামী বলিল, আমার সন্তানের ব্যাপারে কে আমার সহিত বিবাদ করিবে? মহানবী (স) ছেলেটিকে বলিলেন, এই তোমার পিতা এবং ঐ তোমার মাতা। তুমি নিজ ইচ্ছামত যে কোন একজনের হাত ধর। অতএব ছেলেটি তাহার মায়ের হাত ধরিল এবং খ্রীলোকটি তাহাকে লইয়া চলিয়া গেল।”

ثم

عن عمرة الجرمي قال خيرني على بين أمي و قال لأخ لي أصفر منى وهذا أيضا لو قد بلغ مبلغ هذا الخبره وفي رواية وكنت ابن سبع أو ثمان سنين .

“উমারাহ আল-জারী (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মাতা ও চাচার মধ্যে যে কোন একজনের বাছিয়া নেওয়ার জন্য আলী (রা) আমাকে এখতিয়ার দিয়াছিলেন এবং আমার ছােট ভাই সম্পর্কেও বলিলেন, তাহার ব্যাপারেও অনুরূপ সিদ্ধান্ত হইবে, সে এই বয়সে পৌছিলে তাহাকেও আমি এখতিয়ার দিব। অপর বর্ণনা এছে, তখন আমি ছিলাম সাত অথবা আট বৎ: বালক।”

হারত উমর (রা) তাঁহার স্ত্রী আসিমের মাতাকে তালাক দিলে তিনি অন্যত্র বিবাহ বসে তাহার গর্ভজাত উমরের শিশুপু? আমি তাহা নানীর নিকট অবস্থান করে; উমর (রা) একদিন তাহাকে ধরিয়া নিয়া আসিলে নানী আবূ বাকর সিদ্দীক (রা)-এর নিকট অভিযোগ দায়ের করে। তিনি হিদানাতের অধিকার নানীকে দান করেন এবং উমর (রা)-কে শিশুর ভরণপোষণের ব্যয়ভার বহনের নির্দেশ দেন। অপর বর্ণনায় আছে, তিনি হিদানাতের অধিকার মাতাকে দান করিলেন এবং বলিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলিতে শুনিয়াছি :

لا توئه والده عن ولدها .

৫১৬

“মাতাকে তাহার সন্তান হইতে বিচ্ছিন্ন করিও না”।

অবশ্য হিদানাতের এই অধিকার মাতার জন্য কত বৎসর পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকিবে সেই বিষয়ে মতভেদ আছে। পুত্র সন্তানের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মত এই যে, সে নিজের পানাহার গ্রহণ, পোশাক পরিধান, পায়খানা-পেশাবের পর দেহের ময়লা দূরীভূত করিতে সক্ষম হওয়ার বয়সে পৌঁছিলে পিতা হিদানাতের অধিকার লাড করিবে। আল্লামা বাসনা এই বয়সসীমা ৭/৮ বৎসর উল্লেখ করিয়াছেন। পূর্বোক্ত হাদীস হইতেও ইহার সমর্থন পাওয়া যায়।

ইমাম আবু ইউসূফ (র)-এর মতে কন্যা সন্তান বালেগ হওয়া পর্যন্ত মাতার তত্ত্বাবধানে থাকিবে। ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর মতে তাহার মধ্যে যৌন আবেগের উন্মেষ হওয়া পর্যন্ত সে মাতার তত্ত্বাবধানে থাকিবে (এই শেষোক্ত মতই গ্রহণযোগ্য হইয়াছে), অতঃপর সে পিতার তত্ত্বাবধানে চলিয়া যাইবে।

ধারা-৩৯৯ মাতার পুনর্বিবাহ ও হিদানাতের অধিকার হিদানাতের অধিকারপ্রাপ্ত মাতা অন্য পুরুষের সহিত পুনর্বিবাহে আবদ্ধ হইলে তাহার উপরোক্ত অধিকার রহিত হইয়া যাইবে।

তবে শর্ত থাকে যে, সন্তানের মাহরাম আত্মীয়ের সহিত বিবাহ হইলে তাহার এই অধিকার খর্ব হইবে না।

বিশ্লেষণ

মহানবী (স) বলিয়াছেন :

أنت أحق به ما لم تنكحی .

“পুনর্বিবাহে আবদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত তুমিই সন্তানের অধিক হকদার।” কিন্তু সন্তানের নিকটাত্মীয়ের সহিত (যেমন চাচা) বিবাহ হইলে তাহার হিদানাতের অধিকার রহিত হইবে না।”

রা-৪০০।

মাতা অমুসলিম হইলে মাতা অমুসলিম হইলেও তাহার মুসলিম আমীর ঔরসজাত সন্তানের হিদানাতের অধিকার সংরক্ষিত থাকিবে

তবে শর্ত থাকে যে, কোন মুসলিম মাতা ধর্মত্যাগ করিলে সঙ্গে সঙ্গে তাহার হিদানাতের অধিকার রহিত হইয়া যাইবে।

বিশ্লেষণ

সন্তানের মধ্যে ধর্ম সম্পর্কিত ধারণা সৃষ্টি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অমুসলিম মাতা তাহার মুসলিম সন্তানকে নিজের তত্ত্বাবধানে রাখিতে পারিবে। সে যদি তাহাকে

৫১৭

কুফর-এর দিকে নিয়া যাইতে চাহে তবে তাহার উপরোক্ত অধিকার খর্ব হইবে। সন্তান তাহার তত্ত্বাবধানে থাকাকালে সে যেন তাহাকে কোন হারাম বস্তু পানাহার না করায় সেই সম্পর্কেও তাহাকে সতর্ক করিয়া দিতে হইবে। ইহার বিপরীত হইলে তাহার হিদানাতের অধিকার খর্ব হইবে। অবশ্য মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) নারীর হিদানাতের

অধিকার নাই, যতক্ষণ না সে পুনরায় ইসলামে ফিরিয়া আসে।

ধারা-৪০১ মাতা ব্যতীত অন্যান্য নারীর হিদানাতের অধিকার মাতা হিদানাতের দায়িত্ব গ্রহণে অসমত বা অসমর্থ হইলে, অথবা হিদানাতের অধিকারচ্যুত হইলে, অথবা মৃত্যুমুখে পতিত হইলে সন্তানের নিম্নোক্ত আত্বীয়গণ পর্যায়ক্রমে হিদানাতের অধিকারী হইবে

(ক) নানী (ও তদুর্ধগণ); (খ) দাদী (ও তদুধগণ); (গ) সহােদর ভন্নী; (ঘ) বৈপিত্রেয় ভগ্নী; (৩) বৈমাত্রেয় ভগ্নী; (চ) সবােদর ভগ্নীর কন্যা; (খ) বৈপিত্রেয় ভয়ীর কন্যা; (জ) বৈমাত্রেয় ভগ্নীর কন্যা; (ঝ) বালা; (4) ফুধু।

বিশেণ ইহাদের প্রথমোক্ত জনের অবর্তমানে তাহার পরের জন হিদানাতের অধিকারী হইবে।

ধারা-৪০২

পুরুষদের হিদানাতের অধিকার ধারা (৪০১)-এ উল্লিখিত নারীগণের অনুপস্থিতিতে বা অসামর্থ ও অযোগ্যতার কারণে তাহারা হিদানাতের অধিকার বঞ্চিত হইলে শিশুর পুরুষ আত্মীয়গণ ধারা (৪১৭) মোতাবেক (আসাতের ক্রমানুযায়ী) হিদানাতের অধিকারী হইবে।

বিশ্লেষণ

যেমন পিতা, দাদা, সহােদর ভাই, বৈমাত্রের ভাই ও সহােদর ভ্রাতার সন্তানগণ পর্যায়ক্রমে হিদানাতের অধিকারী হইবে। কিন্তু কন্যা সন্তানের ক্ষেত্রে অবশ্যই হিদানাতের

৫১৮

অধিকারীর সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, বিশ্বস্ততা ও নৈতিকতার মূল্যায়ন করিতে হইবে। অবিশ্বস্ত, প্রতারক ও নৈতিক দেউলিয়ার উপর তাহার হিদানাতের দায়িত্ব অর্পণ করা যাইবে না। এই ক্ষেত্রে বিচারক একজন ন্যায়পরায়ণ মুসলিম মহিলার উপর তাহার হিদানাতের দায়িত্ব অর্পণ করিবেন।

ধারা-৪০৩ হিদানাতের অধিকারী হওয়ার শর্তাবলী হিদানাতের অধিকারীকে বালেগ, সুস্থ বুদ্ধির অধিকারী ও শিশুব যথােপযুক্ত প্রতিপালনে সক্ষম এবং হিদানাতের অধিকারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী ক্রটি হইতে মুক্ত হইতে হইবে।

বিশ্রেণ হিদানাতের অধিকারী বালেগ ও সুস্থ বুদ্ধির অধিকারী হওয়া এবং ফাসিক (দুষ্কর্মপরায়ণ) না হওয়া সকল ইমামের মতে অপরিহার্য শর্ত।

ধারা-০৪

লাওয়ারিশ (লাকীত) শিশুর হিনা লাওয়ারিশ শির রক্ষণাবেক্ষণ ও ভরণপোষণের দায়িত্ব সরকারের; তবে কোন ব্যক্তি নেয় তাহার তত্ত্বাবধানের দায়িত্বভার গ্রহণ করিতে চাহিলে সরকার তাহার উপর উহা অৰ্পণ করিতে পারে।

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তি কর্তৃক তাহার তত্ত্বাবধানাধীন শিশু দরিদ্র্যের ভয়ে বা প্রকোপে অথবা যেনার অভিযোগ হইতে আত্মরক্ষার জন্য পরিত্যক্ত হইলে উহাকে “লাকীত’ না ‘লাওয়ারিশ শিশু’ বলে। লাওয়ারিশ শিশু কেহ রাস্তাঘাটে পড়িয়া থাকিতে দেখিলে তাহার রক্ষার ব্যবস্থা করা দর্শনকারীর অপরিহার্য দায়িত্ব। তাহার অবহেলার কারণে শিশুটি মারা গেলে সে চরম গুনাহগার হইবে। কারণ আল্লাহ তা’আলা বলিয়াছেন :

من قتل نفسا بغير نفس أو فساد فی الارض فكانما قتل

الناس جميعاد ومن أحياها فكأنما أحيا الناس جميقا .

“নরহত্যা অথবা দুনিয়ায় ধ্বসাংত্মক কার্য করা হেতু ব্যতীত কেহ কাহাকেও হত্যা করিলে সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষকেই হত্যা করিল। আর কেহ কাহারও প্রাণ রক্ষা করিলে সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করিল” (সূরা মাইল : ৩২)।

মহানবী (সা) বলেন :

من لا يرحم الناس لا يرحمه الله .

“যে ব্যক্তি মানুষকে দয়া করে না তাহাকে আল্লাহও দয়া করেন না।”১৫

“যে আমাদের ছােটদের দয়া করে না সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নহে।”

ليس منا من لم يرحم صغيرنا . ارحموا من في الأرض يرحمكم من في السماء .

“তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি দয়া কর তাহা হইলে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করিবেন।”

লাকীত-এর রক্ষণাবেক্ষণ ও ভরণপোষণের দায়িত্ব সরকারের। তাহাকে অমুসলিমের নিকট অর্পণ করা জায়েয নহে।

সুলায়ম গোত্রের সুনায়ন ইন জামীলা উমর (রা)-এর খিলাফতকালে একটি পরিত্যক্ত শিশু (মানব) পাইলেন এবং তাহাকে লইয়া উমর (রা)-এর নিকট আসিলেন।………. তিনি সুনায়নকে বলিলেন, যাও সে মুক্ত-স্বাধীন, তুমি তাহার ওয়ারিস এবং তাহার ভরণপোষণের দায়িত্ব আমাদের (সরকারের) উপর। অপর বর্ণনায় আছে, বায়তুল মাল (রীয় কোষাগার) হইতে তাহার ভরণপোষণের ব্যয়ভার বহন করার দায়িত্ব আমাদের (মুওয়াত্তা ইমাম মালেক, মুসনাদে ইমাম শাফিঈ, মুসান্নাফ আবদুর রায্যাক, তাবারানীর আল-মুজাম, বায়হাকীর আল-মারিফা)।

সাইদ ইবনুল মুসায়্যাব (র) বলেন, উমর ইবনুল খাত্তাব (রা)-এর নিকট পরিত্যক্ত শিশু আনা হইলে তিনি তাহার ভরণপোষণের জন্য প্রয়োজন পরিমাণ খাদ্য ও অর্থ বরাদ্দ করিতেন এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে তাহার সহিত স্নেহপূর্ণ ব্যবহার করার উপদেশ দিতেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি প্রতি মাসে তাহার বরাদ্দকৃত খাদ্য ও অর্থ কোষাগার হইতে তুলিয়া নিত। তাহার দুধপানের ব্যয়ভারও তিনি বায়তুল মাল হইতে প্রদান করিতেন।

তামীম নামক এক ব্যক্তি একটি পরিত্যক্ত শিশুসহ আলী (রা)-এর নিকট আসিলে তিনি তাহাকে উহার লালন-পালনের দায়িত্ব দিলেন এবং শিশুর জন্য মাসিক ১০০ দিরহাম তা বরাদ্দ করিলেন। অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি একটি ব্যভিচারজাত শিশুকে মাসিক ১০০ দিরহামের বিনিময়ে লালন-পালনের দায়িত্ব তামীমের উপর

অৰ্পণ করিলেন।

ধারা-৪০৫

শিকে লইয়া স্থানাঙর গমন পিতার অনুমতি ব্যতীত হিদানাতের অধিকারও মাতা তাহার সন্তানকে লইয়া স্থানান্তর গমন করিতে পারিবে না, এই ক্ষেত্রে পিতায় বাধা দেওয়ার অধিকার রহিয়াছে।

৫২০

বিশ্লেষণ

মাতার যদিও হিদানাতের অধিকার রহিয়াছে, কিন্তু পিতাই সন্তানের স্বাভাবিক ও প্রকৃত অভিভাবক। সন্তান মাতার নিকট থাকিলেও পিতা তাহার তত্ত্বাবধান করিতে বাধ্য। অবশ্য পিতার তত্ত্বাবধানে ব্যাঘাত না হওয়ার মত দূরত্বে মাতা সন্তানকে লইয়া যাইতে পারে। তবে সে শহর ছাড়িয়া সন্তানসহ গ্রামে বসবাস করার অধিকারী নহে। ইহাতে তাহার উপর পরিবেশের প্রভাব পড়িতে পারে, কিন্তু গ্রাম ছাড়িয়া শহরে বসবাস করিতে পারে, ইহাতে সন্তানের মধ্যে উন্নত মানসিকতার বিকাশ ঘটিতে পারে। তবে সন্তানকে লইয়া আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে সাময়িকভাবে বেড়াইতে যাওয়ার অবকাশ আছে। আরও একটি কথা স্মরণীয় যে, সন্তান যাহার নিকটেই প্রতিপালিত হউক, উক্ত সন্তানের সহিত পিতা বা মাতার অবাধে মেলামেশার অধিকার থাকিবে। কোন পক্ষই ইহাতে বাধা দিতে পারিবে না।”

ধারা-০৬ সন্তান কর্তৃক পিতা বা মাতাকে বাহিয়া নেওয়ায় এখরি বালেগ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সন্তান বােধশক্তিসম্পন্ন হওয়ার পর বিচারক তাহাদের অভিমত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দিতে পারিবেন।

विभिने। পিতা-মাতার মতভেদের ক্ষেত্রে পুত্র সন্তান ৭ বৎসর পর্যন্ত এবং কন্যা সন্তান বালেগ না হওয়া পর্যন্ত মাতার তত্ত্বাবধানেই থাকিবে। ইহার পর উভয়ে পিতার তত্ত্বাবধানে থাকিবে। তাহারা বালেগ হওয়ার পর পিতা বা মাতা যাহার সহিত থাকিবার অভিপ্রায় ব্যক্ত করিবে তাহার সহিতই থাকিতে পারিবে। ইহা হানাফী মাযহাবের অভিমত। ইমাম মালেক (র)-এর মতে পুত্র সন্তান পরিষ্কারভাবে কথাবার্তা বলিতে সক্ষম হওয়ার বয়স পর্যন্ত এবং কন্যা সন্তান বিবাহযোগ্য হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মাতার সহিত থাকিবে। ইমাম শাফিঈ ও আহমাদ (র)-এর মতে উভয়ে সাত বৎসর পর্যন্ত মাতার তত্ত্বাবধানে থাকিবে। ইহার পর তাহাদেরকে পিতা বা মাতার যে কোন একজনকে বাহিয়া লওয়ার এখতিয়ার দেওয়া হইবে।

মহানবী (সা) যাহাদেরকে পিতা-মাতার যে কোন একজনের সহিত যাওয়ার এখতিয়ার দিয়াছিলেন তাহারা বালেগ হইয়াছিল বলিয়াই অনুমিত হয়। যেমন আবু হুরায়রা (রা) বর্ণিত হাদীসে স্ত্রীলোকটি বলিয়াছিল;

وانه قد تفقني وسقاني من بئر أبي عتبة .

(সে আমার উপকার করে এবং আবু উতবার কৃপ হইতে পানি আনিয়া আমাকে পান করায়)। একটি নাবালেগ শিশু ইহা অনুধাবন করিতে অক্ষম যে, কাহার সহিত

৫২১

থাকিলে তাহার কল্যাণ হইবে। মহানবী (সা) একটি শিশুকে এখতিয়ার দিলে সে তাহার অমুসলিম মাতার সহিত যাইতে উদ্যত হইলে তিনি (সা) বলেন :

اللهم اهده .

(হে আল্লাহ! তাহাকে সুপথ প্রদর্শন কর)। অতঃপর বালকটি তাহার মুসলিম পিতার সহিত চলিয়া গেল।

বালেগ হওয়ার পর পুত্রসন্তান পিতা-মাতা যাহার সহিত ইচ্ছা থাকিতে পারে, এমনকি একাকীও থাকিতে পারে। অবশ্য সে উদ্ধৃংখল হইলে পিতা তাহাকে নিজের সহিতই রাখিবে, যাহাতে সে মার্জিত হইতে পারে।

ধারা-৪০৭

সন্তানের অণপোষণ সন্তান যাহার অধিকারেই থাকুক তাহার ভরণপোষণের ব্যয়ভার পিতাকেই বহন করিতে হইবে।

বিশ্লেষণ

মাতা যদিও হিদানাতের আওতায় সন্তানকে নিজের অধিকারে রাখিতে পারে, তবুও পিতাই তাহার প্রকৃত ও স্বাভাবিক অভিভাবক। বিশেষত ছেলেকে দেখাশুনা কার ও আয়ত্তে রাখার ক্ষমতা একমাত্র পিতারই রহিয়াছে এবং মাতার নিকট সন্তান থাকিলেও পিতা তাহার তত্ত্বাবধান ও লালন-পালনের ব্যয়ভার বহন করিতে বাধ্য। মাতা সন্তানকে স্তন্যদানে অসম্মত হইলে তাহাকে স্তন্যদানে বাধ্য করা যাইবে না, অবশ্য বিকল্প ব্যবস্থা না থাকিলে বাধ্য করা যাইবে। এজন্য মাতা পারিশ্রমিক পাইবার অধিকারী হইবে। তথ্যনির্দেশিকা

সুনান আবু দাউদ, কিতাবুততালাক, বাব মান আহাৰু বিল-ওয়ালাদ, নং ২২৭৬, ইংরাজি অনু. নং ২২৬৯। সুনান আবু দাউদ, কিতাবুততালাক, বা ইযা আসলামা আহাদুল আবাওয়াইনে মাআ মান ইয়াকূনুল ওয়ালাদু, নং ২২৪৪, ইংরাজি অনু. নং ২২৩৬; নাসাঈ, তালাক, বাব আসলামা আহাদু-যাওযায়ন। সুনান আবু দাউদ, তালাক, বাব মান আহাৰু বিল-ওয়ালাল, নং ২২৭৭; ইং. অনু. নং ২২৭০; মালা, তালাক, বাব ইসলামি আহাদ্যি-যাওজায়ন ওয়া তায়ারি ওয়ালাদ; ইবন মাজা, কিতাবুল আহকাম, নং ২৩৫১; তিরমিযী, বাব খয়রিল

এলাম বায়না আবওয়ায়হি ইয়া ইফতাৱাকা, নং ১৩৫৭। ৪. বায়হাকীর সুনানুল কুবরা, কিতাবুন নাফাকাত, ৮থ, পৃ. ৪। ৫. বায়হাকীর সুনানুল কুবরা, ৮থ, পৃ. ৫।

৫২২

sode

হিদায়া, কিতাবুত তালাক, বাব হিদানাতিল ওয়ালাদ, ১২, পৃ. ৪১৫; বাদাইউস

নাই, কিতাবুল হিদ, ৪ খ, পৃ. ৪২; আলমগিরী, কিতাবুত তালাক, যা ফিল-হিদানা, ১, পৃ. ৫৪২। পূর্বোক্ত বরাতসমূহ দ্র.। হিদায়া, কিতাবুল তালাক, বাব হিদানা, ১, পৃ. ৪১৫; বাদাইউস সানাই, ৪,

পৃ. ৪২,কিতাবুল হিদানা, ফাসল বায়ানি মান লাহুল হিদানা; ফাতহুল কাদীর, কিতাবুত

তালাক, বাবুল ওয়ালাদি মান আহাৰু বিহি, ৪, পৃ. ১৮৮। ৯. হিদায়া, তালাক, বাব হিদানা, ১৩, পৃ. ৪১৬; ফাতহুল কাদীর, তালাক, বাবুল

ওয়ালানি মান আহাৰু বিহি, ৪খ, পৃ. ১৮৮। ১০. বাদাইউস সানাই, কিতাবুল হিদানা, ফাস বায়ানি মান লাহুল হিদানা, ৪২ পৃ. ৪২। ১১. ফাতহুল কাদীর, তালাক, বাবুল ওয়ালাদি মান আহাকু বিহ, ৪, পৃ. ১৮৫-৬;

বাদাইউস সানাই, হিদানা, ফাসল মান লাহুল হিদানা, ৪খ, পৃ. ৪১-২; হিদায়া,

তালাক, বা হিদানা, ১, পৃ. ৪১৪-৫। ১২. বাদাইউস সানাই, হিদানা, ৪খ, পৃ. ৪৩; ফাতহুল কাদীর, তালাক, বাবুল ওয়ালাদি

মান আহাকু বিহি, ৪খ, পৃ. ১৮৭। ১৩. ইবন কুদামা, আল-মুগনী, মাকতাবা ইবন তায়মিয়া, কায়রো, কিতাবুত তালাক,

বব মান আহাৰু বি-কিফালাতিত তিফলি, ৭, থ, পৃ. ৬২৫; বাদাইউস সানাই, হিদানা,

৪, পৃ. ৪১। ১৪. হিদায়া, ইংরাজি অনু., কিতাব ভবন, দিৱী ১৯৭৯ খৃ., পৃ. ২০৬। লা-ওয়ারিস

শিশুর বিষয়ে অন্যান্য ফিকহ্-এর গ্রন্থাবলীতে কিতাবুল সুতা, কিতাবুল লাকীত,

কিতাবুল মাবুয ইত্যাদি অধ্যায় দ্রষ্টব্য। ১৫. তিরমিযী, কিতাবুল বিররি ওয়াস-সিলাহ, বাব মা জাআ ফী রহমাতিল মুসলিমীন,

নং ১৯২২; বুখারী, কিতাবুত তাওহীদ, বাব কুলিউল্লাহ আবিদউর রহমান, নং

৬৮৬০ (বাংলা অনু.. আধুনিক প্রকাশনী, ৬খ, পৃ. ৪৫৭)। ১৬. তিরমিযী, কিতাব ঐ, বাব মা জাআ রহমাতিস-সিয়ান, নং ১৯১৯, ১৯২০,

১৯২১; আবু দাউদ, কিতাবুল আদাব, বাব ফির-রহমাতি, নং ৪৯৪৩। ১৭. তিরমিযী, কিতাব ঐ, বাব ১৬, নং ১৯২৪। ১৮. আবদুল্লাহ ইন ইউসুফ আল-

ফালা, নাসাবুর রায়াহ লি-তাখরীজ আহাদীসিল

হিদায়া, কিতাবুল লাফীত, ২য়, পৃ. ১৬১-৬২। ১৯. ঐ, ২২, পৃ. ১৬২। ২০. হিদায়া, তালাক, বাব হিদানা, ১, পৃ. ৪১৬; ইংরাজি অনু., ১৯৮৫ খৃ. সংস্করণ,

১৩, পৃ. ৩৯০-৯১; বাদাইউস সানাই, হিদানা, ফাসল বায়ানি মাকানিল হিদানা, ৪খ, পৃ. ৪৪; আলমগিরী, তালাক, বাব ফিল হিদানা, ফাসল মাকানিল হিদানা, ১, পৃ. ৫৪৩-৪; ফাতহুল কাদীর, তালাক, বাবুল ওয়ালাদি মান আহাৰু বিহু, ৪খ, পৃ. ১৯০-২।

৫২৩

২১. আল-মুগনী, মিসর ১৩৬৭ হি., ৭, পৃ. ৬১৪-১৬। ২২. বাদাইউস সানাই, ৪খ, পৃ. ৪৩-৪; হিদায়া, ১খ, পৃ. ৪১৬। ইমাম শাফিঈ

(র)-এর মতে ৭-৮ বৎসর পর (পুত্র বা কন্যা) সন্তান পিতা-মাতার যে কোন

একজনকে বাছিয়া নিতে পারে। আল্লামা বদরুদ্দীন আল-আইনী (র) বলেন, এক্ষেত্রে ইমাম শাফিঈর অভিমতই সঠিক ও যথার্থ (হিদায়ার উর্দু অনু. আইনুল হিদায়া, ২খ,

পৃ. ৩৩০)। ২৩. হিদায়া, ১খ, পৃ. ৪১৪; বাদাইউস সানাই, ৪খ, পৃ. ৪০; আলমগিরী, কিতাবুত

তালাক, বাব ফিন-নাফাকাত, আল-ফাসপুর রাবি’ ফী নাফাকাতিল আওলাদ, ১খ, পৃ. ৫৬০।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *