১৫ জুলাই, বৃহস্পতিবার ১৯৭১
আজ এস.এস.সি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। টাট্রু এ বছরের পরীক্ষার্থী। কিন্তু সে পরীক্ষা দিচ্ছে না। বাঙালি ছেলেমেয়েরা যাতে এস.এস.সি পরীক্ষা না দেয়, তার জন্য মাসখানেক ধরে বিভিন্ন জায়গায় কোথা থেকে কারা যেন গোপন ইস্তাহার বিলি করে যাচ্ছে তাই নিয়ে মহল্লায় মহল্লায়, বাড়িতে বাড়িতে উত্তেজনা, আলাপ-আলোচনা, ভয়-ভীতি। পরীক্ষার্থী ছেলেমেয়েদের বাবা-মার মাথা খারাপ হবার যোগাড়। এমন কথাও শোনা যাচ্ছে–ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা দিতে গেলে কেন্দ্রে নাকি বোমা মারা হবে।
অন্যদিকে, সরকারের তরফ থেকে পরীক্ষা দেওয়ার সপক্ষে প্রচুর ঢাকটোশ পেটানো হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে মাইকযোগে বলে বেড়ানো হচ্ছে : ছাত্রছাত্রীরা যেন দেশদ্রোহীদের দুরভিসন্ধিমূলক ও মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হয়, তারা যেন একটি মূল্যবান শিক্ষা বছর নষ্ট না করে। (পাকসেনারা যে গুলি মেরে কত মূল্যবান জীবন নষ্ট ও নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে সে কথা তাদের মনে নেই।) পূর্ব পাকিস্তান কাইয়ুমপন্থী মুসলিম লীগের সভাপতি হাশিমুদ্দীন, পাকিস্তান শান্তি ও কল্যাণ কমিটির সভাপতি ফরিদ আহমদ, জেনারেল সেক্রেটারিমওলানা নূরুজ্জামান এবং তাদের মতো আরো বহু দেশদরদী, জনদরদী নেতা কদিন ধরে পরীক্ষা দেওয়ার সপক্ষে বিবৃতি দিয়ে দিয়ে মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তাদেরকে সহায়তা করার জন্য বহুসংখ্যক রাজাকারকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মোড়ে মোড়ে পুলিশ। রাস্তায় রাস্তায় টহল পুলিশের গাড়ি। রাজাকারগুলো এই সুযোগে বেশ প্রাধান্য পেয়ে গেল।
আজ ধলু ও চিশতী সপরিবারে ঢাকা আসছে ইসলামাবাদ থেকে এক মাসের ছুটিতে। শরীফ গাড়ি নিয়ে এয়ারপোর্টে গেল পৌঁনে চারটেয়। জামীকে বাবার কাছে রেখে আমি পাঁচটার সময় মার বাসায় ওগলাম। ধলুরা এলো সোয়া পাঁচটায়। কতোদিন পরে দেখা। দুবোনে জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদলাম। মালালুওকাদলেন। কিন্তু আমার কান্না যেন কিছুতেই থামাতে পারছিলাম না। কেন? ওর মধ্যে কি রুমীর জন্যও কান্না মেশানো ছিল?