চতুর্দশ অধ্যায় – ভরণপোষণ
ধারা-৩৭৯
ভরণপোষণ-এর সংজ্ঞা বামী কর্তৃক স্ত্রীকে দেয় খাদ্যদ্রব্য, পোশাক-পরিদ ও বাসস্থান ইত্যাদিকে ভরণপোষণ’ বলে।
বিশ্লেষণ
কোন ব্যক্তির পরিশ্রমের বিনিময়ে তাহাকে অপর ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত প্রয়োজনীয় জীবনোপকরণকে পরিভাষায় রণপোষণ’ (aaa) বলে।
ভরণপোষণ দ্বারা সাধারণত খাদ্য, পোশাক ও বাসস্থান এই তিনটি জিনিসকে বুঝায়। কিন্তু অন্যান্য আবশ্যকীয় বস্তু যেমন তৈল, সাবান ঔষধ ইত্যাদি যাহা নারীর
জীবিকা ধাণ ও সুখ-স্বাচ্ছন্দের জন্য জরুরী তাহাও ইহার অন্তর্ভুক্ত।
স্বামী স্ত্রীকে রান্না করা খাদ্য ও সেলাইকৃত পোশাক দিতে বাধ্য। সে তাহাকে খাদ্য রান্না করিতে এবং পোশাক সেলাই করিতে বাধ্য করিতে পারে না।
সে তাহাকে পৃথক বাসস্থান বা নির্দিষ্টরূপে উহার অংশবিশেষ দিতে বাধ্য।
অবশ্য সে স্বেচ্ছায় স্বামীর পিতামাতা বা আত্মীয়দের সহিত বসবাস করিতে সম্মত হইলে যত কথা।
ধারা-৩৮০
শীর ভরণপোষণ। বীর ভরণপোষণ’-এর ব্যবস্থা করা স্বামীর কর্তব্য।
বিশ্লেষণ
পবিত্র কুরআনে বলা হইয়াছে;
لينفق نو سمة من سته ومن قدر عليه رزقه فلينفق
مما أتاه الله .
“বিত্তবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করিবে এবং যাহার জীবনোপকরণ সীর্ষিত সে আল্লাহ্ তাহাকে যাহা দান করিয়াছেন তাহা হইতে ব্যয় করিবে (সূরা তালাক:৭)। ৩২ –
৪৯৮
اسكوهن من حيث سكنتم من وجدكم .
“তোমরা নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী যেই স্থানে বাস কর তাহাদেরকে সেই স্থানে বাস করিতে দিও” (সূরা তালাক : ৬)।
وعلى المولود له رزقهن وكسوتهن بالمعروف .
“জনকের কর্তব্য যথারীতি তাহাদের (স্ত্রীদের) ভরণপোষণ করা” (সুরা বাকারা : ২৩৩)।
ধারা-৩৮১ ভরণপোষণ বাধ্যতামূলক হওয়ার শর্তাবলী নিম্নবর্ণিত অবস্থায় স্ত্রীর ভরণপোষণ বাধ্যতামূলক হয় (ক) বি. (সহীহ) বিবাহ হইলে; (খ) শ্রী নিজেকে স্বামীর এখতিয়ারাধীনে লোপ করিলে;
(ণ) এ নি। পিত্রালয়েনরত, কিন্তু ঘামী তাহাকে নিজ বাড়িতে আনিবার আয় আমায় না অথবা কােন বেধ কারণ ছাড়াই তাহাকে নিজের বাড়িতে আসিতে নিষেধ করে।
(ঘ) তলবী মুহর পরিশোধ না করায় অথবা অন্য কোন আইনসঙ্গত কারণে স্ত্রী স্বামীগৃহে আসিতে অস্বীকার করিলে, সহবাস হউক বা না হউক।
ধারা-৩৮২ ভরণপোষণ বাধ্যতামূলক না হওয়ার কারণসমূহ নিম্নবর্ণিত অবস্থায় মীর ভরণপোষণ স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক নহে (ক) স্বামীর সম্মতি ব্যতীত স্ত্রী হজ্জ করিতে গেলে
তবে শর্ত থাকে যে, তাহার উপর হজ ফরয হইলে সে অবশ্যই ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হইবে।
(খ) স্ত্রী স্বামীর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও যেখানে স্বামী অবস্থান করে সেই স্থান ভিন্ন অন্য স্থানে অবস্থান করিলে;
(গ) স্ত্রী বন্দীদশায় থাকিলে?
তবে শর্ত থাকে যে, স্বামী কারারুদ্ধ হইলে স্ত্রী ভরণপোষণ হইতে বঞ্চিত হইবে না।
(ঘ) স্ত্রী অন্যায়ভাবে অবাধ্য হইয়া স্বামীর অনুমতি ব্যতীত অসঙ্গত কারণে স্বামীগৃহ ত্যাগ করিলে, অথবা গৃহের মালিক শ্রী কিন্তু সে স্বামীকে উহাতে প্রবেশ করিতে না দিলেও
৪৯৯
তবে শর্ত থাকে যে, শ্রী অবাধ্য হওয়া সত্ত্বেও স্বামীগৃহে বসবাস করিলে সে ভরণপোষণের অধিকারী হইবে, এমনকি স্বামীকে সহবাসে বাধা দিলেও।
(৩) ফাসিদ বিবাহে সন্দেহজনক সহবাসের ( L .) পর বিবাহের অবৈধতা প্রমাণিত হইলে তবে সাক্ষীহীন বিবাহের কথা হয়।
(চ) সঙ্গত কারণ ব্যতীত খী বামী হইতে পৃথক থাকিলে অথবা তাহার সহিত অন্য শহরে যাইতে অস্বীকার করিলে
তবে শর্ত থাকে যে, তলৰী মুহর পরিশোধের দাবি থাকিলে অথবা স্বামী-শ্রীর মধ্যে কোন বৈধ চুক্তি থাকিলে সে ভরণপোষণ পাইবে।
(ঘ) স্ত্রী ধর্মত্যাগী (মুরতাদ) হইলে; (জ) বীর অবাধ্যাচরণের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ হইলে; (ক) দ্বামীর মৃত্যুজনিত কারণে স্ত্রী ইদ্দত পালনরত থাকিলে।
তবে শর্ত থাকে যে, বিধবা অন্তঃসত্তা হইলে গর্ভ খালাস না হওয়া পর্যন্ত ভরণপোষণ পাইবে।
(4) শ্রীকে কেহ অপহরণ করিয়া লইয়া গেলে।
ধারা-৩৮৩
ভরণপোষণের পরিমাণ বীর রণপোষণের পরিমাণ নির্ধারণে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের মর্যাদা বিবেচনায় রাখিতে হইবে।
বিশ্লেষণ
স্বামী-স্ত্রী ধনী বা দরিদ্র হইলে তদনুযায়ী ভরণপোষণ করিতে হইবে। স্ত্রী সম্পদশালী এবং স্বামী দরিদ্র হইলে মধ্যম মানের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করিবে।
ধারা-৩৮৪
অতীত কালের ভরণপোষণ স্ত্রী স্বামীর নিকট অতীত কালের জন্য ন্যায়সঙ্গত পরিমাণ ভরণপোষণ দাবি করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
পারস্পরিক চুক্তি থাকিলে অথবা আদালত কর্তৃক নির্ধারিত হইতে স্ত্রী সেই পরিমাণ তাহার অতীতের ভরণপোষণ পাইবে, অন্যথায় নহে।
কুদূরীতে বলা হইয়াছে, “স্ত্রী খােরপোষ দাবি করা সত্ত্বেও স্বামী তাহা প্রদান না করিলে এবং এইভাবে যে সময় অতীত হইয়া যাইবে উহার জন্য সে কিছুই পাইবে
৫০০
। কিন্তু বিচারক ইতিপূর্বে তাহার জন্য খােরপোষ নির্ধারণ করিয়া থাকিলে অথবা সে স্বামীর সহিত নির্দিষ্ট পরিমাণ খােরপোষের জন্য সমঝোতা করিয়া থাকিলে বিচারক তাহাকে অতীতের অনাদায়ী থােরপোষ প্রদানের জন্য রায় প্রদান করিবেন। এই রায় প্রদানের পর স্বামী মারা গেলে এবং কয়েক মাস অতীত হইয়া গেলে খােরপোষ (প্রাপ্তির দাবি) রহিত হইয়া যাইবে।”
শারহুল বিকায়া গ্রন্থে বলা হইয়াছে, “যেই সময় অতীত হইয়া গিয়াছে সেই সময়ের ধােরপোষ (প্রাপ্তির দাবি) রহিত হইয়া যাইবে। কিন্তু বিচারক পূর্বেই যদি তাহার জন্য খােরপোষ নির্ধারণ করিয়া দিয়া থাকেন অথবা স্বামী-স্ত্রী নির্দিষ্ট পরিমাণ খােরপোষ সম্পর্কে সম্মত হইয়া থাকে তবে উভয় অবস্থায় অতীত কালের খােরপোষ প্রদান বাধ্যতামূলক, যত দিন স্বামী-স্ত্রী উভয়ে জীবিত থাকে। কিন্তু উক্ত খােরপোষ হস্তগত করার পূর্বে তাহাদের কেহ মারা গেলে অথবা স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিলে উহার দাবি বাতিল হইয়া যাইবে। তবে বিচারকের নির্দেশে শ্ৰী ঋণ এহণ করিয়া থাকিলে তাহার খােরপোষের দাবি রহিত হইবে না, ইহা আমাদের (হানাফীগণের) অভিমত। ইমাম শাফিঈ (র)-এর মতে মৃত্যুর কারণে খােরপোষের পাওনা বাতিল হইবে না, বরং উহা স্বামীর উপর ঋণ হিসাবে গণ্য হইবে।”
ধারা-৩৮৫
স্বামীর অনুপস্থিতিতে ভরণপোষণ বামীর অনুপস্থিতিতে স্ত্রী তাহার নামে অন্যের নিকট হইতে ধায় গ্রহণ করিয়া নিজের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করিতে পারিবে, ঋণদাতা গ্রহীতার স্বামীর নিকট হইতে উহা আদায় করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
স্বামী অনুপস্থিত এবং স্ত্রীর ভরণপোষণের ব্যবস্থা করে না। তাহার এমন কোন সম্পত্তি বা ব্যবসায়ও নাই যাহা হইতে স্ত্রী তাহার ভরণপোষণের ব্যবস্থা করিতে পারে। এই অবস্থায় সে অন্যের নিকট হইতে ঋণ গ্রহণ করিয়া নিজের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করিতে পারে এবং ঋণ স্বামীর দায় হিসাবে গণ্য হইবে।
ধা-৩৬ ভরণপোষণ প্রদানে অবহেলার ক্ষেত্রে মোকদ্দমা দায়ের শীর ভরণপোষণের ব্যবস্থা করিতে লমী অব্যাহতভাবে অবহেলা করিলে ইহার প্রতিকারের জন্য সে আদালতে দরখাস্ত পেশ করিতে পারিবে।
বিশ্লেষণ
উপরোক্ত অবস্থায় বিচারক ভরণপোষণের ব্যবস্থা করার জন্য স্বামীকে নির্দেশ দিবেন। ইহার পরও সে স্ত্রীর ভরণপোষণ না দিলে বিচারক তাহাকে নির্দিী মেয়াদে বন্দী করিয়া রাখার হুকুম দিতে পারেন।
৫০১
ধারা-৩৮৭
ভরণপোষণের চুক্তি বামী- যদি এই মর্মে চুক্তি হয় যে, স্বামী তাহার ভরণপোষণ করিতে বাধ্য নহে; অথবা ধী স্বীকার করে যে, স্বামী তাহার ভরণপোষণ করিতে বাধ্য নহে; অথবা সে ভরণপোষণ গ্রহণ করিবে না, তবে এইরূপ চুক্তি বাতিল।
বিশ্লেষণ
‘ স্ত্রীর ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা বিবাহের উদ্দশ্যে পূরণের একটি উপায়, যাহার ভিত্তি হইল সার্বিক কল্যাণ সাধন। অতএব স্ত্রীর অধিকারকে প্রভাবিত করার মত কোন চুক্তি বলবৎ অযোগ্য সাব্যস্ত হইবে।
ধারা-৩৮৮ স্বামীর দরিদ্রতার কারণে বিবাহ বিদে কোন জীবামীর দরিদ্রতার কারণে বিবাহ বিদে দবি করিতে পারিবে না।
বিশ্লেষণ
স্বামী স্ত্রীর ভরণপোষণে অবহেলা করিলে উভয়ের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানো যাইবে না, স্বামী দরিদ্র হইলেও। আল্লাহ তাআলা বলেন :
النفق ذو سعة من سته ومن قدر عليه رزقه فلينفق مما أتاه الله لا يكلف الله نفسا الأمما أتاها سيجعل الله
بعد عسر يسرا .
“বিত্তবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করিবে এবং যাহার জীবনোপকরণ সীমিত সে আল্লাহ্ তাহাকে যাহা দান করিয়াছেন তাহা হইতে ব্যয় করিবে। আল্লাহ্ যাহাকে যে সামর্থ্য দিয়াছেন তদপেক্ষা গুরুতর বােঝা তিনি তাহার উপর চাপান না। আল্লাহ কষ্টের পর দিবেন স্বস্তি।” (তালাক : ৭)।
তাহা ছাড়া দরিদ্রতার কারণে ভরণপোষণ না করার অজুহাতে মহানবী (সা) ও খুলাফায়ে রাশিদার যুগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানোর একটি নজিরও নাই। অতএব স্বামী সহজ হওয়া সত্ত্বেও খ্রীর ভরণপোষণ না করিলে বিচারক তাহাকে বন্দি করার নির্দেশ দিতে পারেন এবং দারিদ্রের ক্ষেত্রে স্বামীকে অবকাশ দিবেন।
বর-৩৮৯
সভানের ভরণপোষণ পুত্র সন্তান বালেগ না হওয়া পর্যন্ত এবং কন্যা সন্তানের বিবাহ না হওয়া পর্যন্ত তাহাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব তাহাদের পিতার উপর বর্তায়, তাহার সামর্থ্য অনুযায়ী।
৫০২
विवर्ष পবিত্র কুরআনে বলা হইয়াছে :
وعلى المولود له رزقهن وكسوتهن بالمعروف لا تكلف
نفس الا وسعها .
“জনকের কর্তব্য যথারীতি তাহাদের (মাতাগণের) ভরণপোষণ করা। কাহাকেও তাহার সাধ্যাতীত কার্যভার দেওয়া হয় না” (সূরা বাকারা : ২৩৩)।
দীন ইসলাম পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করাকে ইবাদত গণ্য করিয়াছে এবং কোন ব্যক্তি তাহাদের জন্য যাহা ব্যয় করে তাহাকে দান-খয়রাতের সমতুল্য সাওয়াবের কাজ বলিয়াছে। মহানবী (সা) বলেন :
اذا أنفق المسلم نفقه على أهله وهو يحتسبها كانت له
. “কোন মুসলিম ব্যক্তি সওয়াবের আশায় তাহার পরিবার-পরিজনের জন্য যাহা কিছু ব্যয় করে তাহা তাহার জন্য দান হিসাবে গণ্য হয়।”
وما أنفق الرجل على نفسه وأهله وولده وخادمه فهو
“কোন ব্যক্তি তাহার নিজের জন্য, তাহার পরিবারের জন্য, তাহার সন্তানের জন্য এবং তাহার খাদেমের জন্য যাহা ব্যয় করে তাহা দান হিসাবে গণ্য।
انك لن تنفق نفقة الأ أجرت فيها حتى اللقمة التي
ترفعها إلى فيي امرأتك .
তুমি (পরিবারের জন্য) যাহাই ব্যয় কর উহার জন্য তোমাকে প্রতিদান দেওয়া হইবে, এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে গ্রাসটি তুলিয়া দাও তাহার জন্যও।”১৫।
নাবালেগ সন্তানের ভরণপোষণের ভার এককভাবে ও নিঃশর্তভাবে পিতার উপর বর্তায়। কিন্তু নাবালেগ সন্তানের নিজস্ব মাল থাকিলে তাহার ব্যয়ভার বহনে পিতা বাধ্য নহে। সন্তান অবাধ্যাচারী হইলে অথবা মাতার সহিত পৃথকভাবে বসবাস করিলেও পিতাই তাহার ভরণপোষণের জন্য দায়িত্বশীল। পুত্ৰ বালেগ হইলে এবং উপার্জনে অক্ষম না হইলে তাহার ব্যয়ভার বহনে পিতা বাধ্য নহে। শিশু সন্তান যদি মায়ের দুপোষ্য হয় তবে মাতা শিশুর পিতার নিকট হইতে ইহার বিনিময় দাবি করিতে পারে। নাবালেগ সন্তান অমুসলিম হইলেও পিতাকে তাহার ভরণপোষণ দিতে হইবে।
৫০৩
ধারা-৩৯০ পিতা ভরণপোষণ দিতে অসমর্থ হইলে (ক) পিতা নিঃসম্বল অথবা উপার্জনে অক্ষম হইলে মাতা সন্তানের ভরণপোষণ করিবে।
(খ) মাতাও নিঃসম্বল হইলে সল পিতামহ তাহাদের ভরণপোষণের ব্যয়ভার বহন করিবে।
বিশ্লেষণ
মাতা বা পিতামহের উপর নাবালেগের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিঃশর্ত নহে। পিতা সচ্ছলতা ফিরিয়া পাইলে বা উপার্জনে সক্ষম হইলে তাহারা উক্ত দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি পাইবে। স্বামী অনুপস্থিত বা নিরুদ্দেশ থাকিলে স্ত্রী তাহার নামে ঋণ গ্রহণ করিয়া নাবালেগের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করিতে পারিবে।
ধারা-৩৯১
পিতা-মাতার ভরণপোষণ অভাবী পিতা-মাতার ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা পুত্র সন্তানের আইনগত দায়িত্ব, তাহারা অন্য ধর্মের অনুসারী হইলেও।
বিশ্লেষণ
পিতা-মাতা উপার্জনে সক্ষম হইলেও তাহাদের দুঃস্থাবস্থায়, বিশেষত তাহাদের বার্ধক্যে তাহাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা পুত্র সন্তানের কর্তব্য।
মহান আল্লাহ্ বলেন :
وقضى ربك ألا تعبدوا الا اياه وبالوالدين إحسانا انا يبلغن عندك الكبر أحدهما أو كلاهما فلا تقل لهما أف ولا تنهرهما وقل لهما و گرما . واخفض لهما جناح الثل من الرحمة وقل رب ارحمهما كما ربياني صغيرا .
t)
০
“তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়াছেন তিনি ব্যতীত অন্য কাহারও ইবাদত না করিতে এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করিতে। তাহাদের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হইলে তাহাদেরকে উফ (বিরক্তি বা ঘৃণাসূচক কোন কথা) বলিও না এবং তাহাদেরকে ধমক দিও না, তাহাদের সহিত মর্যাদাপূর্ণ নম্র কথা বলিও, মমতাবশে তাহাদের প্রতি তার পক্ষপুট অবনমিত করিও এবং বলিও, হে আমার প্রতিপালক! তাহাদের প্রতি দয়া কর যেভাবে তাহারা শিশুকালে আমাকে প্রতিপালন করিয়াছিলেন” (সূরা বনী ইসরাঈল : ২৩, ২৪)।
৫০৪
ووصينا الانسان بوالديه حسنا .
“আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়াছি তাহার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করিতে” (সূরা আনকাবুত : ৮: আরও দ্র. আহকাফ : ১৫)।
ان رجلا أتى النبي صلى الله عليه وسلم فقال إن لي مالا وان والدي يحتاج الى مالي قال أنت ومالك بوالدك ان أولادكم من أطيب كسبم كلوا من كسب أولادكم.
“এক ব্যক্তি নবী (সা)-এর নিকট আসিয়া বলিল, আমার সম্পদ আছে এবং আমার পিতা আমার সম্পদের মুখাপেক্ষী। তিনি বলেন : তুমি ও তোমার মাল তোমার পিতার জন্য। তোমাদের সন্তানেরা তোমাদের উত্তম উপার্জন। তোমরা তোমাদের সন্তানদের উপার্জন ভোগ করিতে পার।
পিতা-মাতা অমুসলিম হইলেও তাহাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা মুসলিম সন্তানের কর্তব্য। কারণ মহান আল্লাহ বলেন :
وان جاهدك على أن تشرك بي ما ليس لك به علم فلا
تطعهما وصاحبهما في اليا معروفا .
“তোমার পিতা-মাতা যদি তোমাকে পীড়াপীড়ি করে আমার সমকক্ষ দাঁড় করাইতে, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নাই, তবে তুমি তাহাদের কথা মানিও না, কিন্তু পৃথিবীতে তাহাদের সহিত সত্তাবে বসবাস কর” (সূরা লুকমান : ১৫)।
হযরত আসমা (রা)-র মুশরিক মাতা তাঁহার নিকট আসিলে রাসূলুল্লাহ (স) তাঁহাকে মায়ের সহিত উত্তম আচরণের নির্দেশ দেন।
ধারা-৩৯২
পিতামহ ও পিতামহীর ভরণপোষণ পিতামহ ও পিতামহী অভাবী ও উপার্জনে অক্ষম হইলে পৌত্র তাহাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করিবে।
বিশ্লেষণ
পিতা-মাতার অবর্তমানে দাদা-দাদী পিতৃ-মাতৃস্থানীয়। পিতা তাহাদের ভরণপোষণ প্রদানে অক্ষম হইলে সচ্ছল নাতিকেই উহার ব্যবস্থা করিতে হইবে, এমনকি তাহারা অমুসলিম হইলেও।
خر )
ধারা-৩৯৩
অমুসলিম ভ্রাতার ভরণপোষণ কোন মুসলিম ব্যক্তি তাহার অমুসলিম ভ্রাতার এবং অমুসলিম ব্যক্তি তাহার মুসলিম ভ্রাতার ভরণপোষণ দিতে বাধ্য নহে, তাহারা অভাবী ও উপার্জনে অক্ষম হইলেও।
বিশ্লেষণ
এখানে ভ্রাতা বলিতে একই পিতার ঔরসজাত সন্তানগণকে বুঝানো হইয়াছে। ভরণপোষণের প্রসঙ্গটি উত্তরাধিকারের সহিত সংশ্লিষ্ট। আর এই কথা সুস্পষ্ট যে, দুই ভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা পরস্পরের ওয়ারিস হয় না।
-৩০ রত সম্পকীয় মাহরাম আত্বীয়ের ভরণপোষণ রক্ত সম্পর্কীয় মাহরাম আয়ের এবং দরিদ্র, অন্ধ ও পঙ্গু বালেগ মাহরাম আত্নীয়ের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা অত সম্পৰ্কীয় সামর্থ্যবান মাহরাম আত্মীয়ের দায়িত্ব।
বিশ্লেষণ
মহান আল্লাহ বলেন :
و على الوارث، مثل ذلك .
“এবং ওয়ারিসগণেরও অনুরূপ কর্তব্য” (সূরা বাকারা : ২৩৩)।
অর্থাৎ দুগ্ধপোষ্য শিশুর পিতার অবর্তমানে তাহার ওয়ারিসগণকেই তাহার ভরণপোষণের ব্যয়ভার বহন করিতে হইবে। এই দায়িত্ব ওয়ারিসগণের উপর বর্তাইবে তাহাদের প্রাপ্তব্য অংশের আনুপাতিক হারে। কোন ওয়ারিস খরচপাতি দিতে অসম্মত হইলে তাহার নিকট হইতে উহা বলপ্রয়োগে আদায় করা যাইবে।
ধারা-৩৯৫
যাহাদের উপর ভরণপোষণের দায়িত্ব বর্তায়। পর্যায়ক্রমে নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণের উপর ভরণপোষণের দায়িত্ব বর্তায় (ক) স্বামীর উপর; (খ) পিতার উপর; (গ) মাতার উপর; (ঘ) যৌথভাবে দাদা-নানা ও নাতি-নাতনীদের উপর; (ঙ) পুত্রের উপর; এবং (চ) রক্ত সম্পর্কীয় আত্নীয়দের উপর।
৫০৬
বিশ্লেষণ
ইহাদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে বাধ্য, সে অমুসলিম হইলেও এবং ধনবতী হইলেও, কিন্তু স্ত্রী গরীব বা উপার্জনে অক্ষম স্বামীর ভরণপোষণ দিতে বাধ্য নহে। অনুরূপভাবে পিতা তাহার নাবালেগ সন্তানদের ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। তবে তাহাদের নিজস্ব সম্পদ থাকিলে উহা তাহার জন্য বাধ্যতামূলক নহে। ইহা ছাড়া অন্যান্যের ভরণপোষণের দায়িত্ব বাধ্যতামূলক নহে, নৈতিক দায়িত্ববােধের আওতাভুক্ত এবং অনেকটা পারস্পরিক। যেমন পিতা গরীব পুত্রের ভরণপোষণ করিবে এবং পুত্রও গরীব পিতা-মাতার ভরণপোষণের ব্যবস্থা করিবে। স্ত্রী ব্যতীত আর সকলেই দরিদ্র ও উপার্জনে অক্ষম হওয়ার শর্তে ভরণপোষণ লাভের অধিকারী হয়।
ধারা-৩৯৬ তালাকপাতার খােরপোষ ও উপটৌকন (মাতা) (ক) ধারা (২৮৮) মোতাবেক মির্জনে মিলন হওয়ার পূর্বে স্বামী এীকে তালাক প্রদান করিলে এবং মুহর ধার্য না হইয়া থাকিলে কি উপহার সামগ্রী (মাতা) পাইবে এবং তাহা প্রদান করা স্বামীর জন্য বাধ্যকর; কিন্তু মুহর ধার্য হইয়া পাকিলে উপহার সামগ্রী প্রদান করা স্বামীর জন্য ঐলিক।
(খ) ধারা (২৮৮) মোতাবেক নির্জনে মিলন হওয়ার পর শমী স্ত্রীকে তালাক প্রদান করিলে তাহার ইদ্দতকালের খােরপোষ ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা স্বামীর জন্য বাধ্যকর।
(গ) ইদ্দত চলাকালে তালাকদাতা স্বামী মারা গেলে সে খােরোধ ও বাসস্থান পাইবে না, তবে সে তাহার পরিত্যক্ত মাসে ওয়ারিস হইবে।
‘ বিশ্লেষণ
যেসব তালাকপ্রাপ্তাকে ইদ্দত পালন করিতে হয় না তাহারা খােরপোষ ও বাসস্থান প্রাপ্তির অধিকারী হয় না। কারণ তাহারা তালাকপ্রাপ্তির পরপরই অপর পুরুষের সহিত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হইতে পারে। কিন্তু যেসব তালাকপ্রাপ্তাকে ইদ্দত পালন করিতে হইবে তাহারা ইদ্দতের মেয়াদকালের জন্য তাহাদের তালাকদাতা স্বামীর নিকট হইতে ভরণপোষণ ও বাসস্থান পাইবে। মহান আল্লাহ বলেন :
أسكنوهن من حيث سكنتم من وجسدكم ولا تضاروهن التفقوا عليهن وان كن أولات حمل فأنفقوا عليهن حتى يضمن حملهن . فان أرضعن لكم فاتوهن أجورهن .
“তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেই স্থানে বাস কর তাহাদিগকে সেই স্থানে বাস করিতে দিও। তাহাদিগকে সঙ্কটে ফেলিবার জন্য উত্যক্ত করিও না। তাহারা
৫০৭
গর্ভবতী হইয়া থাকিলে সন্তান প্রসব পর্যন্ত তাহাদের জন্য ব্যয় করিবে। যদি তাহারা তোমাদের সন্তানদেরকে দুধপান করায় তবে তাহাদেরকে পারিশ্রমিক দিও” (সূরা তালাক : ৬)।
মহানবী (স) বলেন : “তালাকপ্রাপ্তা নারী ইদ্দতকাল পর্যন্ত খােরপোষ পাইবে” (হিদায়া, ২য় খণ্ড)।
হযরত উমর ফারুক (রা) তাঁহার খিলাফতকালে এই ফরমান জারী করেন যে, তালাকপ্রাপ্তা নারী তাহার ইদ্দতকাল পর্যন্ত তাহার তালাকপাতা স্বামীর নিকট হইতে খােরোষ পাইবে।
ইমাম আবু হানীফা তথা হানাফী মাযহাবমতে তালাকপ্রাপ্তা নারী তাহার ইদ্দতকাল পর্যন্ত খােরপোষ ও বাসস্থান পাইবার অধিকারী হইবে (ইমাম কুরতুবীর আল-জামে লি-আহকামিল কুরআন, তখ, পৃ. ১৬৭)।
উপহার সামগ্রী বা মাতা’ ( 4) পাইবে সেই সব তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীলোক যাহাদেরকে নির্জনে মিলনের পূর্বে তালাক দেওয়া হইয়াছে এবং পূর্বে মুহর নির্ধারিত করা হয় নাই। কিন্তু যাহাদের সহিত নির্জনে মিলন হয় নাই, তবে পূর্বে মুহরও নির্ধারিত করা হইয়াছে অথবা নির্জনে মিলনও হইয়াছে এবং মুহরও নির্ধারিত করা হইয়াছে তাহাদেরকে মাতা’ অর্থাৎ উপহার সামগ্রী প্রদান স্বামীর জন্য বাধ্যকর নহে, তবে সে দ্রতা, মানবিকতা ও সৌজন্যের খাতিরে তাহা প্রদান করিতে পারে। এই সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে :
لا جناح علم ان طلقتم النساء المتمسوهن أو تفرضوا لهن ريضة ومؤهن على الموسع قدره وعلى
.
المقتر قدرة ناعا بالمعروف حقا على المحسنين .
“তোমরা স্ত্রীদের স্পর্শ করার এবং মুহর ধার্য করার পূর্বে যদি তালাক দাও তবে তাহাতে তোমাদের কোন পাপ নাই। তাহাদেরকে কিছু ‘মাতা’) দেওয়া তোমাদের কর্তব্য। সচ্ছল ব্যক্তি তাহার সামর্থ্য অনুযায়ী এবং দরিদ্র ব্যক্তি নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী (মাতা) প্রদান করিবে। ইহা সৎকর্মশীল লোকদের কর্তব্য।” (সূরা বাকারা : ২৩৬)।
وللمطلقت متاع بالمعروف حقا على المتقين .
“যেসব স্ত্রীলোককে তালাক দেওয়া হইয়াছে তাহাদেরকে প্রথামত কিছু প্রদান করিয়া বিদায় করা উচিৎ। ইহা মুত্তাকী লোকদের কর্তব্য” (সূরা বাকারা : ২৪১)।
৫৮
ابنها الذين آمنوا اذا نكتم المؤمنت ثم طلقتموهن من قبل أن تمسوهن فما لكم عليه من عمة تعتدونها
فمتعوهن وسرحوهن سراحا جميلا .
“হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিন নারীগণকে বিবাহ করিয়া স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিলে তোমাদের জন্য তাহাদের পালনীয় কোন ইদ্দত নাই যাহা তোমরা গণনা করিবে। তোমরা তাহাদেরকে কিছু সামগ্রী (মাতা) দিবে এবং তার সহিত তাহাদেরকে বিদায় দিবে” (সূরা আহযাব : ৪৯)।
রাসূন্নাহ্ (সা) বলেন :
“তোমার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে কিছু সামগ্রী (মাতা) প্রদান কর, তাহা অর্ধ সা (পৗণে দুই সের) খেজুরই হউক না কেন” (জুমউল জাওয়ামে, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৬, দ্র. বায়হাকী)।
এক ব্যক্তি তাহার স্ত্রীকে এক তালাক প্রদান করিলে মহানবী (সা) তাহাকে বলেন, “তুমি তোমাব তালাক দেওয়া স্ত্রীকে উপহার সামগ্রী (মাতা) দেওয়ার মত যদি কিছু না পাও তবে তোমার মাথার টুপিটা তাহাকে দিয়া দাও” (কুরতবী, আল-জামে লি-আহকামিল কুরআন, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২২)।
অতএব কুরআন মজীদে ও হাদীস শরীফে তালাকপ্রাপ্তাকে মাতা বা মুতা (উপহার সামগ্রী) দেওয়ার যে নির্দেশ রহিয়াছে তাহা সম্পূর্ণ সাময়িক, অস্থায়ী, কোন স্থায়ী আর্থিক দায় নহে। আরবী ভাষার সুপ্রসিদ্ধ বিশ্বকোষ লিসানুল আৱাব’ গ্রন্থে তালাকপ্রাপ্তাকে দেয় মাতা বা সামগ্রীর ব্যাখ্যায় বলা হইয়াছে, মাতা’র অর্থ এমন প্রত্যেক বন্ধু যাহার দ্বারা উপকার লাভ করা যায়।
كل ما انتفع به فهو متاع.
(/iJ আল্লাহ বলেন :
. (L
JI) মাতা হইল সামান্য পাথেয়। যেমন মহান
يا قوم انما هذه الحيوة الثيا متاع وان الأخرة هي دار
القرار .
UT
“হে আমার সম্প্রদায়! এই পার্থিব জীবন তো সামান্য উপভোগের বস্তু এবং আখিরাতই হইতেহে চিরস্থায়ী আবাস” (সূরা মুমিন : ৩৯)।
“মাতআতুল মারআ” বলা হয় তালাকের পর তাহাকে যাহা দেওয়া হয় তাহাকে।”
আল্লাহ্ তা’আলা কুরআন মজীদে তালাকপ্রাপ্তাকে যে মাতা’ (বসামগ্রী) দেওয়ার কথা বলিয়াছেন তাহা দুই প্রকার : একটি বাধ্যতামূলক এবং অপরটি ঐকি বা
৫০৯
মুস্তাহাব। যে নারীর বিবাহের সময় মুহর নির্ধারিত হয় নাই এবং স্বামীর সহিতও নির্জনবাস হয় নাই তাহাকে এই তাস্থা ‘তালাক প্রদান করা হইলে কিছু বস্তুসামগ্রী প্রদান করা তালাকদাতা স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক যাহার দ্বারা যে উপকৃত হইতে পারে। যেমন পরিধেয় বস্ত্র, নগদ অর্থ, খাদ্যসামগ্রী ইত্যাদি। আর যে মতা’ বস্তুসামগ্রী প্রদান তালাকদাতা স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক নহে তাহা হইল–কোন ব্যক্তি কোন নারীকে বিবাহ করার সময় মুহর ধার্য করিল, অতঃপর নির্জনবাসের আগে বা পরে তাহাকে তালাক দিল, তাহাকে অর্ধেক বা পূর্ণ মুহর প্রদানের পর সৌজন্যমূলকভাবে অতিরিক্ত যাহা প্রদান করে তাহা। আবদুর রহমান (রা) তাঁহার স্ত্রীকে তালাক প্রদানের পর তাহাকে উপহার সামগ্রী ( 0) হিসাবে একটি ক্রীতদাসী প্রদান করেন।”
খৃস্টান অভিধানবেত্তা ইলয়াস আনা ইলয়াস তাহার সুবিখ্যাত অভিধান গ্রন্থ আল-মুনজিদ-এ লিখিয়াছেন :
متعة المرأة وصلت به بعد الطلاق م نحو القميص
351 ) + . 4 115, 31, “মাতা বা মুতা’ শব্দের অর্থ উপকার সাধন, সামান্য পুঁজি। আর শ্রীলোকের মাতা’ হল সামা, পাজামা ও উহার সহিত শগ্নি সং ‘খা ‘কে পর
প্রদান করা হয় এবং ইহা বণে তালাকের ১াত।’
ইমাম রাযী (র) লিখিয়াছেন, মাতা বা ১: উরি রে এমন বিষয় হার উপকারিতা সাময়িক, বেশি দিন অবশিষ্ট থাকে, ত সব নিঃশেষ হইয়া যায়।
ইবন উমর (রা: বলেন, প্রত্যেক তালাকপ্রাপ্তা নারী, উপ সামগ্রী (মু। পাইবে। ইমাম মুহাম্মাদ (র) বলেন, স্ত্রীকে +হবাসের পূবে : দেওয়া হলে এবং তাহার মুহর ধার্য – ২. থাকিলে এই * : সব সামগ্ৰ …Jন বাধ্যতা” অন্য সব ক্ষেত্রে বাধ্যতামৃত ১ নহে। ইহার নাম পরিমাণ হল, বাজে ব্যবহার্য স্ত্রীর কাপড়-চোপড়, ওড়না, জামা ইত্যাদি। ইমাম আবু হানীফা (র) এ নত’ তাই।”
অতএব উপরোক্ত আলোচনা হতে পরিখ ঝা যায় যে, তালাক তা স্বাম তাহার তালাকপ্তা স্ত্রীর খােরপোষ তাহার ইদ্দতকা সমাপ্ত হওয়া পর্যন্তই বহম করিতে বাধ্য। এই বিষয়ে সকল মাযহাবের সকল যুগের ফকীহগণ একমত
ইসলামী আইনে প্রত্যেক বালেগ ও বুদ্ধিমান ব্যক্তিকে স্বতন্ত্র সত্তা হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করা হইয়াছে। তাহাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য তাহারা নিজেরাই বহন ও পালন করিবে, সে নারী হউক অথবা পুরুষ। প্রত্যেকের ভরণপোষণের দায়িত্ব তাহার নিজের। কেবল ব্যতিক্রম স্বামী স্ত্রীর অণপোষণের এবং অভিভাবক তাহার অধীনস্তদের
ভরণপোষণের জন্য দায়ী, অধীনস্তগণ বালেগ ও আত্মনির্ভরশীল না হওয়া পর্যন্ত। এই সমাজে পিতা-মাতা যেমন বালেগ পুত্র-কন্যার ভরণপোষণ করিতে বাধ্য নহে, তেমন তালাকদাতা স্বামীও তাহার পরিত্যক্তা স্ত্রীর ভরণপোষণ করিতে বাধ্য নহে। বিবাহ বন্ধন যেমন দুইজন নারী-পুরুষকে স্বামী-স্ত্রীতে পরিণত করিয়া তাহাদের মধ্যে পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্যের সৃষ্টি করে, তেমনি তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন ছিন্ন করিয়া তাহাদেরকে বিবাহের পূর্বের অবস্থায় নিয়া যায় তাহারা দুইজন সম্পর্কহীন স্বতন্ত্র ব্যক্তিতে পরিণত হয় এবং তাহাদের মধ্যকার দায়িত্ব ও কর্তব্যেরও পরিসমাপ্তি ঘটে। এমনকি তালাকদাতা স্বামী ও তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে পরস্পর সজমক্রিয়ায় লিপ্ত হইলে ইসলামী দণ্ডবিধি মোতাবেক মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি ভোগ করিবে।
অবশ্য তালাকপ্রাপ্তা অসহায় হইলে তাহার জন্য সামাজিক বা রাত্রীয়ভাবে ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা হইবে। এক ব্যক্তি তাহার সৎমাতাকে বিবাহ করিলে উমর রা) তাহাদের বিবাহ ভাঙ্গিয়া দেন এবং বলেন, কে এই নারীর ভরণপোষণের দায়িত্ব বহনে সম্মত ‘আছে? আবদুর রহমান ইবন আওফ (রা) তাহার ভরণপোষণের ভার নিলেন এবং তাহাকে নিজের একটি বসতবাড়ি হাড়িয়া দিলেন।”
০ ০
০
তথ্যনির্দেশিকা ১. কিতাবুল ফিকহ আলাল মাযাহিবিল আরবাআহ, ৪খ, পৃ. ৫৫৩, মিসরীয় সংস্করণ। ২. ঐ গ্রন্থ, ৪খ, প. ৫৫৩।
বাহরুর রাইক, ৪খ, পৃ. ২০০; কাযীখান, ১খ, পৃ. ১৯৬-৮ (মাজমূআহ কাওয়ানীন হইতে এখানে উদ্ধৃত) :
আলমগিরী, ভারতীয় মুদ্রণ, ২, পৃ. ১৪৭। বাহরুর রাইক, ৪খ, পৃ. ১৯০-৯৬।
কাযীখান ১খ, পৃ. ১৯৫; রদুল মুহতার, ২২, পৃ. ৬৬৪। ৭. বন্দুল মুহতার, ২৩, পৃ. ৬৬৪।
শারহুল বকায়া, ২খ, পৃ. ১০০ (দেওবন্দ মুদ্রণ); কানযুদ দাকাইক, ৪খ, পৃ. ১৭৩। কুদরী, কিতাবুন নাফাকাত, পৃ. ৩০১ ( ইদাদিয়া লাইব্রেবী, ঢাকা) :
+ ০ ০ ১
১.
واذا مضت مدة لم ينفق الزوج عليها وطالبته بذالك فلا شيء لها الا أن يكون القاضي فرض لها نفقة او صالحت الزوج على مقدارها .
ت لم ينفق الزوج عليها وطالبته بذالك فلا
واذا م
.)
شي لها الأ أن يكون القاضي فرض لها نفقة أو
دام
صالحت الزوج على مقدارها فيفضي لها بنفقة ما مي . فان مات الزواج بعد ما قضى عليه بالثقة
ومضت شهور سقطت النفقة . (قدوری – نفقة ص ۸) ) ولا تجب نفقة مضت الأ بانقضاء أو الرضاء لأن
النفقة صلة وليست بعوض عندنا فلم يستحکم الوجوب فيها الابالقضاء …. والمراد بالرضا اصطلاحهما على قدر معين للنفقة اما اصنافااو در اهم (بحر الرائق ۷
/
4 -۱۸۹) ۲) نفقة للزوجة بمضي المدة قبل القضاء فاذا لم
ينفق عليها بأن ان غائبا عنها أو كان حاضرا وامتنع .
انه لا يطالب بما مضى بل تسقط بمضي المدة . أما بعد القضاء انها تحب دينا وتسقط الأبموت احدهما أو طلافها أو نحو ذلك . (كتاب الفقه على المذاهب الأربعة .. ۵۷۱
/ 4 ) اذا أصطنا على نفقة فانها تلزمه وتصبح دينا في ذمته وترجع بها عليه حتى
ولو لم يقل القاضي حكمت – (ص ۵۷۲) . ) وتسقط نفقة ممتنة مضت الا اذا سبق فرض قاض أو
رضيا بشيء فتح لما مضى ما داما حين فان مات أحدهما أو طلقها قبل قبض سقط الفروض الأ اذا استدانت بامر قاض هذا عندنا واما عند الشامي ف سقط بالموت بن نصير دينا عليه . (شرح الوقاية –
:
IT
.(۱۵۲-۰۲/۲) .
درد .9,8,139,144
1399,85b .9,د,,
fa
Tamer .ود
.دد .*,87,134
444;885 .9,8,meer IP4 .دد
لا
11449 se, I afer, 8, 9, ১৩. বুখারী, কিতাবুন নাফাকাত, বাব ফাদলিন নাফাকাতি আলাল আহলি; কিতাবুল।
ঈমান, বাব মা জাআ আন্নাল আমালা বিন-নিয়্যাহ; মুসলিম, কিতাবুয যাকাত, নং
II, 1 bo , for 8t;
১৮.
১৪ ইবন মাজা, কিতাবৃত তিজারাত, বাব আল-হি আলাল-মাকাসিব, নং ২১৩৮।
••. বুখারী, কিতাবুল ওয়াসায়া, ২য় বাব: মানাকিবুল আনসার, ৪৯ নং বাব; নাফাকাত,
১ম বাব; মাগাযী, ৭৭ নং বাব; ফারাইদ, ৬ষ্ঠ বাব; মুসলিম, কিতাবুল ওয়াসিয়্যা; আবু দাউদ, কিতাবুল ওসিয়া, ২য় বাব, নং ২৮৬৪; তিরমিযী, কিতাবুল ওয়াসায়া, ১ম বাব, নং ২১১৬। হিদায়া, কিতাবুত তালাক, বাবুন নাফাকা, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪২৪; আলমগিরী,
কিতাবুত তালাক, আল-ফাসলুর রাবি’ ফী নাফাকাতিল আওলাদ, ১খ, পৃ. ৫৬০। ১৭। হিদায়া, ১ খ, পৃ. ৪২৫।
ইবন মাজা, কিতাবুত তিজারাত, বাব মা লির-রাজুলি মিন মালি ওয়ালাদিহি, নং ২২৯২, আবু দাউদ, কিতাবুল বুয়ু, বাব ফির রাজুল ইয়াকুলু মিন মালি ওয়ালাদিহি,
*ং ৩০। হিদায়া, কিতাবুত তালাক, বাবুন-নাফাকা, ১, পৃ. ৪২৫। বুখারী, কিতাল হিব, ৰাব ৩৯, কিতাবুল আম্দব, বাব ৮; আবূ দাউদ, কিতাবু মাকত, বাব ৩৪. : ১৬৬৮।
হিদায়া, কিতাবৃত তালাক, লাবুন নাফাকা, ১খ, পৃ. ৪২৬।
হিদা, হালক, বান নাসাকা, ১খ, পৃ. ৪২৬।
হিয়া, তালাক, বাবুন নাফাকা, ১, পৃ. ৪২৬-৭। 3. নৈ মানব. লি Tনুল আরাব, ৬, পৃ. ৪১২৭, কলাম ২। ১৫. ঐ, খ, ‘. ৪১১৯, কাম ২: ২৬, ঐ ঘ. ৬, পৃ. ৪১১৮ কলাম। ২. ঐ গ্রন্থ, ৬, পৃ. ৪১২৯, কলাম ২। ২৫. আলমুনজিদ, দ্র. উক্ত শব্দের অধীন, পৃ. ৭৪৫, কলাম ২ ও ৩। মুজামু লুগাতিল
ফুকাহা, পৃ. ৪০৩ :
متعة الطلاق كسوة يرسلها الزوج لمطلقتها بعد الطلاق
.)
তাফসীরে মীর, ১৫ খং, পৃ. ৪০৭।
ওয়াত্তা নাম মুহাম্মাদ (র), বাংলা অনু.. ১ম সং., ১৯৮৮ ., পৃ. ৩৫৫, হাদীস নং ৫৮৯ ইবন ই জার আসর লান, আ’-ইসাবা, মিসর ১৩৮৮ হি., ৩, পৃ. ৪৬৩; ইসলামী বিশ্বকোষ, ১৭খ, পৃ. ৪৩২, কলাম ১।