1 of 2

১৩. অধ্যায় তালাক

ত্রয়োদশ – অধ্যায় তালাক

ধারা-৩৩২

তালাকের সংজ্ঞা স্বামী কর্তৃক সরাসরি অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে নিদি বাক্যে অথবা ইঙ্গিতে তৎক্ষণাৎ অথবা পরিণামে সাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন করাকে ‘তালাক’ বলে।

বিশ্লেষণ

‘তালাক (২৮) শব্দের অর্থ পরিত্যাগ’, ‘বিন্নি’, ‘বন্ধনমুক্ত’ বা ‘মুক্তি’। নির্দিষ্ট বাক্যের সাহায্যে বিবাহবন্ধন ছিন্ন করাই তালাক। ইহা একটি দৃণিত বৈধ কাজ। মহানবী (সা) বলেন :

ما أحل الله شيئا أبغض اليه من الطلاق .

‘আল্লাহ তাআলা তালাকের তুলনায় অধিক ঘৃণ্য কোন জিনিস হালাল করেন নাই।” (আৰু দাউদ, তাগাক, বাব ফী কারাহিয়াতিত তালাক, হাদীস নং ২১৭৭)

أبغض الحلال الى الله تعالى الطلاق

“সমস্তু হালাল জিনিসের মধ্যে মহান আল্লাহর নিকট তালাক সর্বাপেক্ষা ঘৃণ্য” (আবু দাউদ, তালাক, বাব ঐ, হাদীস নং ২১৭৮; ইবন মাজা, তালাক, হাদীস নং ২০১৮)

ইসলামী শরীআতে তালাকের সুযোগ রাখা হইয়াছে একটি অপরিহার্য ও নিরুপায়ের উপায় হিসাবে। অতএব যথেষ্ট চিন্তাভাবনার পর উহার ব্যবহার হওয়া উচিৎ। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হইলে বিভিন্ন উপায়ে উহার সংশোধনের চেষ্টা করিতে হইবে। কোন প্রকাবেই সংশোধন সম্ভব না হইলে কেবল তখনই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ।

ধারা-৩৩৩

তালাকের শ্রেণীবিভাগ (ক) পদ্ধতিগত দিক হইতে তালাক দুই প্রকার (১) সুন্নাত তালাক ও

৪৭৫

(২) বিন তালাক। (ক) ফলাফলের দিক হইতেও তালাক দুই একার (১) রিই তালাক ও (২) বাহন তালাক। (গ) সুন্নাত তালাক আবার দুই প্রকার (১) আহসান তালাক ও (২) সান তালাক। (ঘ) বাইন তালাকও দুই প্রকার– (১) বাইন তালাক সগরা ও (২) বাইন তালাক কুবরা (ৰা যুগান্না তালাক)।

ধারা-৩৩৪

সুন্নত তালাক মহানবী (সা) ঠিক যে সময় এবং যে পদ্ধতিতে তালাক দিতে শিক্ষা দিয়াছেন তদনুরূপ তালাককে ‘সুন্নাত তালাক’ বলে।

বিশ্রেষণ।

সুন্নাত তালাকের অর্থ এই নহে যে, ইহাতে সওয়াব পাওয়া যাইবে। কারণ তালাক স্বয়ং কোন ইবাদত নহে। বরং ইহার অর্থ মহানবী (সা) ও তাঁহার সাহাবীগণ সুন্নাত নিয়মে তালাক দেওয়া পছন্দ করিয়াছেন। ইহার বিপরীত পন্থায় তালাক দিলে গুনাহ হইবে।

ধারা-৩৩৫

আহসান তালাক যেই তুহরে সহবাস হয় নাই এবং ইহার পূর্ববর্তী তুহরেও তালাক দেওয়া হয় নাই সেই অবস্থায় স্ত্রীকে এক রিজ তালাক প্রদানের পর ইদ্দত পূর্ণ হইতে অথবা গর্ত খালাস হইতে দিলে উহাকে ‘আহসান তালাক’ বলে।

বিশ্লেষণ

উপরোক্ত তালাকের ভিত্তি হইল হাসান বসরী (র)-এর একটি বণনা যাহাতে তিনি বলেন–

كانوا يستحبون أن يطلقها واحدة ثم يتركها حتى

تحيض ثلث حبض .

“সাহাবীগণ স্ত্রীকে এক তালাক প্রদানের পর তিনটি হায়েযকাল অতিবাহিত হইতে দেওয়াই পছন্দ করিতেন” (মুসান্নাফে ইবন আবূ শায়বা, নাসাবুর য়াহ হইতে উদ্ধৃত)।

৪৭৬

ধারা-৩৩৬

হাসান তালাক সহবাস বর্জিত তুহয়ে স্ত্রীকে এক রিজই তালাক দেওয়ার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় তুহরে পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় তালাক প্রদানকে “হাসান তালাক” বলে।

বিশ্লেষণ

নিম্নোক্ত দলীলের ভিত্তিতে ইহা সুন্নাত তালাকের অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কুরআনে বলা হইয়াছে।

فطلقوا هن لعدتهن .

“তাহাদেরকে তালাক দিও ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া” (সূরা তাহরীম : ১)। মহানবী (স) বলেন :

من السنة أن تستقبل انطهر استقباله فتطلقها لك طهر

.ain; “সুন্নাত তালাক এই যে, তুমি তুরকে সামনে রাখিয়া প্রতি তুহরে এক তালাক দাও” (বায়হাকী, কিতাবুস সুনান, হায়দরাবাদ সং, ৭খ, পৃ. ৩৩৪, কিতাবুত তালাক)।

ধারা-৩৩৭

বিঈ তালাক স্বামী তাহার স্ত্রীকে একই তুহরে এক বা একাধিক শব্দে একাধিক তালাক দিলে অথবা সহবাসকৃত তুহরে এক তালাক দিলে উহাকে বিদই তালাক’ বলে।

বিশ্লেষণ

বিদই তালাক আবার দুই প্রকার : কালগত ও সংখ্যাগত। হায়েয অবস্থায় স্ত্রীকে বিজই তালাক দিলে উহা বিদষ্ট তাশাক হিসাবে গণ্য। এই অবস্থায় স্ত্রীকে রুজমাত কর (ফিরাইয়া লওয়) ওয়াজিব (অপরিহার্য)। অনুরূপভাবে যে তুহরে সহবাস হইয়াছে সেই তুহরে একত্রে দুই বা তিন তালাক দিলে উহাও বিদই তালাকের অন্তর্ভুক্ত, তাহা এক বাক্যে দেওয়া হউক অথবা পৃথক পৃথক বাক্যে (সংখ্যাগত তালাকের দৃষ্টান্ত)।

ধারা-৩৩৮

রিজই তালাক ‘তালাক’ শব্দ উচ্চারণপূর্বক স্বামী স্ত্রীকে এক বা দুই তালাক দিলে এবং উহার সহিত ‘বাইন’ শব্দ যোগ না করিলে উহাকে রিজই তালাক’ বলে। বীকে ইদ্দত চলাকালে ফিরাইয়া না নিলে ইদ্দত শেষে উহা বাইন তালাকে পরিণত হয়।

৪৭৭

বিশ্লেষণ

অর্থাৎ কোন ব্যক্তি নিজ খ্রীকে এক অথবা দুই তালাক দিল, কিন্তু উহার সহিত বাইন’ (L=বিন্নি) শব্দ উল্লেখ করিল না, এই অবস্থায় রিজই তালাক হইবে। হায়েয অবস্থায় বা সহবাসকৃত তুহরে রিজঈ তালাক সংঘটিত হইতে পারে।

ধারা-৩৩৯

বাইন তালাক সুগরা তালাক শব্দের সহিত বাইন’ শব্দ বােগ করিয়া বীকে এক অথবা দুই তালাক প্রদান করিলে উহাকে বাইন তালাক সুগরা’ বলে।

বিশ্লেষণ

এই ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ বিবাহ বিচ্ছেদ হইয়া যায় এবং সহবাসও নিষিদ্ধ হইয়া যায়। অবশ্য ইদ্দত চলাকালে বা ইজ্জত পূর্ণ হওয়ার পর পারস্পরিক সম্মতিতে ‘তাহলীল’ ব্যতীত সম্পূর্ণ নূতনভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায়।

ধারা-৩৪০ খাইন তালাক কুবরা (মুগা তালাক) একই সময়ে অথবা বিভিন্ন সময়ে এক বা একাধিক শয়ে স্ত্রীকে তিন তালাক প্রদান করিলে কে ‘বাইন তালাক বুব’ বা “যুগান: ‘তালাক’ বলে।

বিশ্লেষণ

তিন তালাক দেওয়ার পর বৈৰাহক ১৬, ১ ছ; হইয়া!! নং : ২ উতব একত্রে বসবন হারাম ইদ্দত শে : : : স্বামী : 3 : ইথা লইতে পারে না এন উভয়ে নৃতনভাই-নও অ… : ) :?? : তালাকপ্রাপ্তা অন্য কাহারো :f৩!ি’ (

.. হলে .:; ন + আবার বিচ্ছেদ ঘটিলে অথবা শেষেও স্বামী! হইলে উভ? পুর্বর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হইতে পারে, যদি হারা মনে করে যে, উয়ে আল্লাহ নির্ধারিত সমা রক্ষা করিয়া চলিতে পারিবে।

মহান আল্লাহর বাণী :

ان طلقها فلا تحل له من بعد حتی تنکح زوجا غيره فان طلقها فلا جناح عليهما أن يتراجعا ان ظنا أن يقيما حدود الله وتلك دون الله يبيها لقوم يعلمون .

“অতঃপর যদি সে তাহাকে (তৃতীয়) তালাক দেয় তবে সে তাহার জন্য বৈধ হইবে না, যে পর্যন্ত সে অন্য স্বামীর সহিত সঙ্গত না হইবে। অতঃপর সে যদি

৪৭৮

তাহাকে তালাক দেয় এবং তাহারা উভয়ে মনে করে যে, তাহারা আল্লাহর সীমা রক্ষা করিতে সমর্থ হইবে তবে তাহাদের পুনর্মিলনে কাহারও কোন অপরাধ হইবে না। এইগুলি আল্লাহর সীমারেখা। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ ইহা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন” (সূরা বাকারা : ২৩০)।

ধারা-৩৪১

তালাকের সংখ্যা কোন স্বামী তাহার স্ত্রীকে সর্বাধিক তিন তালাক দিতে পারিবে।

ধারা-৩৪২

তালাকের যোগ্যতা প্রত্যেক সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন বালেগ ব্যক্তি নিজ স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে।

বিশ্লেষণ

তালাকদাতাকে স্বামী বা তাহার প্রতিনিধি হইতে হইবে এবং উভয়েরই প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ বুদ্ধির অধিকারী হওয়া অপরিহার্য।

ধারা-৩৪৩

তালাকের পদ্ধতি সুশষ্ট বাক্যে অথবা পরোক্ষ বক্তব্যে অথবা ইশারা-ইঙ্গিতে অথবা লিখিতভাবে প্রদত্ত তালাক সংঘটিত হইবে।

বিশ্লেষণ

সুস্পষ্ট বাক্যে স্ত্রীকে তালাক দিলে উহা সংঘটিত হইবে, তালাকদাতার উদ্দেশ্য যাহাই হউক না কেন। পরোক্ষ বক্তব্যে (যেমন তোমার ব্যাপার তোমার হাতে, তুমি ইদ্দত পালন কর, তুমি আমার উপর হারাম ইত্যাদি) তালাক দিলে উহা স্বামীর নিয়তের উপর নির্ভরশীল হইবে! সুস্পষ্ট ইংগিতে বােবার প্রদত্ত তালাক সংঘটিত হইবে এবং লিখিতভাবে তালাক দিতে এবং মুখে উচ্চারণ না করিলেও তালাক কার্যকর হইবে।

ধারা-৩৪৪

তালাকের সাক্ষী তালাক সংঘটিত হওয়ার জন্য সাক্ষী শর্ত নহে।

বিশ্লেষণ

কুরআন মজীদে তালাকের সাক্ষী সম্পর্কে বলা হইয়াছে;

৪৭৯

فاذا بلغن أجلهن فأمسكوهن بمعروف أو فارقوهن

بمعروف واشهدوا ذوي عدل منكم وأقيموا الشهادة لله .

“তাহাদের ইদ্দত পূরণের কাল আসন্ন হইলে তোমরা হয় তাহাদেরকে সসম্মানে রাখিয়া দিবে অথবা সসম্মানে ত্যাগ করিবে এবং তোমাদের মধ্য হইতে দুইজন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখিবে। তোমরা আল্লাহর জন্য সঠিক সাক্ষী দিও” (সূরা তালাক : ২১)।

কিন্তু ফকীহগণের মতে তালাকদানের ক্ষেত্রে সাক্ষী রাখা বাধ্যতামূলক নহে, মুস্তাহাব (উত্তম)।

ধারা-৩৪৫

তাবীয তালাক বামী তাহার তালাকের অধিকার স্ত্রীর উপর অর্পণ করিতে পারে এবং এই অধিকায়বলেনিকেতলাকপ্রদান করিলেউত তালাককে তাফীষ তালাক’ বলে।

বিশ্লেষণ

স্বামী স্ত্রীকে তালাকদানের অধিকার অর্পণের পর সে নিজকে তালাক দিতে পারে। বিবাহ বন্ধন অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় বা পরবর্তী কোন সময় স্বামী স্ত্রীকে তালাকের অধিকার প্রদান করিতে পারে। স্বামী এই অধিকার বাতিল করিতে পারে

ধারা-৩৪৬

যাহাদের প্রদত্ত তালাক কার্যকর হয় না নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ কর্তৃক প্রদত্ত তালাক তালাক নহে– (ক) নাবালেগ; (খ) পাগল; (গ) জড়বুদ্ধি যুক্ত ব্যক্তি; (ঘ) বে; (ঙ) বুদ্ধি লোপও ব্যক্তি; (চ) ঘুমন্ত ব্যক্তি ও (ঘ) রোগের প্রকোপে পাগল ব্যক্তি।

বিশ্লেষণ

নাবালেগের প্রদত্ত তালাক সংঘটিত হয় না, সে বয়ঃপ্রাপ্তির কাছাকাছি হইলেও। বয়ঃপ্রাপ্তির পর উহা বহাল রাখিলেও তালাক হইবে না।

৪৮০

মহানবী (সা) বলেন :

رفع القلم عن ثلة عن النائم حتى يستيقظ وعن الصبی

حتى يبلغ وعن المعتوه حتى يعقل .

“তিন ব্যক্তি শরীআতের বিধানমুক্ত : ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত না হওয়া পর্যন্ত; শিশু বালেগ না হওয়া পর্যন্ত এবং পাগল বুদ্ধিজ্ঞান ফিরিয়া না আসা পর্যন্ত” (তিরমিযী, আবু দাউদ, দারিমী, ইবন মাজা, মিশকাত, তালাক অধ্যায়, ২য় পরিচ্ছেদ হইতে

মস্তিষ্ক বিকৃতির কারণে যাহার ভালো মন্দ পার্থক্য করার শক্তি সোপ পাইয়াছে এবং যে নিজের কাজের পরিণতি অনুধাবন করিতে অক্ষম তাহাকে পাগল বলে, তাহা জনাগত হউক অথবা অন্য যে কোন কারণে হউক।” সে কখনও সুস্থ হওয়ার পর তালাক দিলে উহা সংঘটিত হইবে।

মহানবী (স) বলেন :

كل طلاق جائز الأطلاق المعتوه والمغلوب على قلب

“পাগলের তালাক ব্যতীত সব তালাকই বৈধ।” (তিরমিযী, তালাক, বাব ১৪, jীন ১১৯১;

জড়বুদ্ধিযুক্ত ব্যক্তি (

: Ja। ৩ali) : যে ব্যক্তি অসংলগ্ন (বার্তা বলে এবং যাহা মূলে আসে তাহাই বলে তাহার প্রদত্ত তালাকও সংঘটিত হই না। .

বেহুশ ও ইহা নিদ্রার মতই মানুষের ইচ্ছা ও নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত। অতএব এই ২য় তালা দিল উহা সটি ত হইবে না

বৃদ্ধিলোপ:: : ব্যক্তি কান অঘাত অথবা বিপদ অথবা আকস্মিক দুর্ঘটনার : :: যাহার 3.1 পাইয়াছে তাহার প্রদত্ত তালাকও সংঘটিত হইবে না।

ঘুমন্ত ব্যক্তি এই অ7 : তালাক দিলে তাহা সংঘটিত হইবে না। কারণ ঘুমন্ত অবস্থায় মুখ হইত নির্গত ক নির্ভরয্যে নহে।

রোগের প্রকোপে পাগল ব্যক্তির প্রদত্ত তালাকও কার্যকর হইবে না। কারণ তাহাকে ঐ অবস্থায় সুস্থ বুদ্ধির অধিকারী বলা যায় না।

ধারা-৩৪৭

নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তালাক মাতাল অবস্থায় তালাক দিলে তাহা কার্যকর হইবে; কিন্তু হালাল জিনিস বা ঔষধের প্রতিক্রিয়ায় মাতাল হইয়া তালাক প্রদান করিলে তাহা কার্যকর হইবেনা।

৪৮১

বিশ্লেষণ

নেশাগ্রস্ত হইয়া কোন ব্যক্তি নিজ স্ত্রীকে তালাক দিলে তাহা কার্যকর হইবে। কারণ সে নিজ ইচ্ছায় মাদকদ্রব্য পান করিয়া নিজের বুদ্ধি ও বিবেচনাশক্তি নষ্ট করিয়াছে।

ইমাম আবু হানীফা, আবু ইউসুফ, মুহাম্মাদ (র) ও অপরাপর ফকীহর মতে কোন ব্যক্তি নেশা করার এবং স্বাদ আস্বাদনের উদ্দেশ্যে নেশা উদ্রেককারী হারাম জিনিস ব্যবহারের মাধ্যমে নেশাগ্রস্ত হইয়া স্ত্রীকে তালাক দিলে উহা কার্যকর হইবে। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেন : বালক ও পাগলের ব্যতীত সব তালাকই বৈধ’। হালাল জিনিস বা ঔষধের প্রতিক্রিয়ায় মাতাল হইলে এই অবস্থায় প্রদত্ত তালাক সংঘটিত হইবে না।১৭

ধারা-৩৪৮

মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় তালাক মৃত্যুব্যাধিগ্রত অবস্থায় তালাক প্রদান করিলে তাহা কার্যকর হইবে এবং ইদ্দতকালের মধ্যে স্বামী মারা গেলে তাহার ওয়ারিস হইবে।

ধারা-৩৪৯

জোরপূর্বক তালাক (৩২। G১৬) কোন ব্যক্তিকে ফল এয়োগে বা ভীতি প্রদর্শন করিয়া নিরীকে তালাক দিতে বাধ্য করিলে তাহা কার্যকর হইবে না; তবে হানাফী মতে কার্যকর হইবে।

বিশ্লেষণ

ইচ্ছা ও এখতিয়ারের ভিত্তিতেই কাহাকেও কোন কাজের জন্য দায়ী করা হয়। এই দুইটি উপাদানের অনুপস্থিতিতে কোন ব্যক্তিকে কোন কাজের জন্য দায়ী করা যায়

। তাহাকে বল প্রয়োগে বা ভীতি প্রদর্শন করিয়া কোন কাজ করিতে বাধ্য করা হইলে তাহার ঐ কাজের পিছনে তাহার ইচ্ছাও নাই, এখতিয়ারও নাই। তাহার ইচ্ছাশক্তি ও এখতিয়ার হরণ করা হইয়াছে। সে বাস্তবে বল প্রয়োগকারী বা ভীতি প্রদর্শনকারীর ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটায়। সে মুখে যাহা উচ্চারণ করে তাহা কেবল আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যেই। অতএব কাহাকেও জোরপূর্বক কুফরী কথা বলিতে বাধ্য করা হইলে তাহাকে সেইজন্য কাফির বলা যায় না। মহান আল্লাহ বলেন :

من كفر بالله من بعد ايمانه الأ من أكره وقلبه مطمنن بالايمان ولكن من شرح بالكفر صدرا فعليهم غضب من الله ولهم عذاب عظيم .

৩১

৪৮২

“কেহ ঈমান আনার পর আল্লাহকে অস্বীকার করিলে এবং কুফরীর জন্য নিজের হৃদয় উনাক্ত রাখিলে তাহার উপর আপতিত হইবে আরাহর গযব এবং তাহার জন্য আছে মহাশাস্তি; তবে তাহার জন্য নহে যাহাকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয়, কিন্তু তাহার অন্তর ঈমানে অবিচল” (সূরা নাহল : ১০৬)।

অতএব কাহাকেও জোরপূর্বক ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা হইলে সে মুসলমান হিসাবে গণ্য হইবে না। অনুরূপভাবে কাহাকেও জোরপূর্বক নিজ স্ত্রীকে তালাক দিতে বাধ্য করা হইলে উহা কার্যকর হইবে না।

মহানবী (স) বলেনঃ

رفع عن أمتي الخطاء والنسيان وما استكرهوا عليه .

“আমার উম্মতের ভুলচুক এবং জোরপূর্বক তাহাদের যাহা করিতে বাধ্য করা হয় উহা ধর্তব্য নহে।”

عن عائشة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لا

طلاق ولا عتاق في اغلاق .

“আইশা (রা) হইতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, ‘জোরপূর্বক তালাক বা দাসমুক্তকরণ হয় না।

উমর ইবনুল খাত্তাব, আবদুল্লাহ ইবন উমর, আলী ই আবু তালিব, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা), মালেক, শাফিঈ, আহমাদ ও দাউদ জাহিরী (র)-এর মতেও জোরপূর্বক প্রদত্ত তালাক কার্যকর হইবে না। কিন্তু হানাফী মাযহাবমতে উহা কার্যকর হইবে। অবশ্য এই ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগ বা ভীতি প্রদর্শন প্রমাণিত হইতে হইবে।

ধারা-৩৫০

মুমুর্থ অবস্থায় তালাক উত্তরাধিকার হইতে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে মুমূর্ষ অবস্থায় প্রদত্ত তালা কার্যকরী হইবে, কিন্তু যদি স্বামী এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে এবং স্ত্রী ইন্দত পালনরত থাকে তবে সে উত্তরাধিকার হইতে বঞ্চিত হইবে না।

বিশ্লেষণ

: স্বামী মৃত্যুশয্যায় থাকা অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর তাহার ইদ্দতকাল শেষ না হইতেই মারা গেলে তালাক কার্যকর হইবে, কিন্তু সে তাহার ওয়ারিশ হইবে।

তবে তাহার ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পর তালাকদাতা স্বামী মারা গেলে সে তাহার ওয়ারিস হইবে না।

৪৮৩

ধারা-৩৫১ বাইন তালাক কুবরার (যুগান্নাযা) পর কআত হয় না বামী তাহার একে একই সময়ে একই বাক্যে অথবা পৃথক পৃথক সময় ও বাকে তিন তালাক দিলে তথাৎ বিবাহবন হির হইয়া যায় এবং স্বামী তাহাকে ফিরাইয়া লইতে পারে না। তবে এর অন্য মীর সহিত বিবাহ ও নির্জনে মিলন হওয়ার পর পুনরায় বিদে ঘটিলে বা স্বামী মারা গেলে পূর্বোক্ত স্বামীর সহিত পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইতে পারে।

বিশ্লেষণ

এই অবস্থায় ফিরাইয়া লওয়ার (রুজআত) সুযোগ থাকে না। তবে ইদ্দতশেষে স্ত্রী স্বেচ্ছায় অন্য পুরুষের সহিত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর কোন কারণে বিচ্ছেদ ঘটিলে বা স্বামীর মৃত্যু হইলে পুনরায় সে পূর্বোক্ত স্বামীর সহিত সম্পূর্ণ নূতনভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হইতে পারে।

ধারা-৫২ জিজ তালাকের পর আত (ফিরাইয়া লওয়া) এক বা দুই রিট তালাক দেওয়ার পর ইদ্দতকাল শেষ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পুনর্বিবাহ ও মুহর ব্যতীত কথায় বা কাজের মাধ্যমে স্বামী তাহার শীকে ফিরাইয়া সইতে পারে, আর সতি থাকুক বা না থাকুক; কিন্তু ইদত শেষ হওয়ার পর শ্রী সম্মতি থাকিলে জাব-কবুলের মাধ্যমে তাহারা পুনর্বিবাহে আজ হইতে পারিবে।

विणे স্বামী তাহার স্ত্রীকে তুহর বা হায়েয অবস্থায় অথবা সহবাস করার পর রিজ তালাক দিলে ইদ্দত চলাকালে তাহাকে ফিরাইয়া লইতে পারে। মহানবী (সা) হযরত সাওদা (রা)-কে তোমার ইদ্দত গণনা কর’ বাক্যে তালাক দেওয়ার পর তাহাকে ফিরাইয়া লন। অনুরূপভাবে তিনি হযরত হাফসা (রা)-কে রিজঈ তালাক দেওয়ার পর সহবাসের মাধ্যমে তাহাকে ফিরাইয়া লন। কেননা এক্ষেত্রে ইদ্দত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিবাহবন্ধন অটুট থাকে। কিন্তু ইদ্দতশেষে উহার পরিসমাপ্তি ঘটে। তবে তাহারা পারস্পরিক সম্মতিতে তাহলীল ব্যতীত সহজে পুনর্বিবাহে আবদ্ধ হইতে পারে। স্ত্রীকে ফিরাইয়া লওয়ার এখতিয়ার স্বামীকে দেওয়া হইয়াছে। মহান আল্লাহ বলেন :

وبعولتهن أحق بردهن .

“তাহাদের পুনগ্রহণে তাহাদের স্বামীগণ অধিক হকদা (বাকারা : ২২৮)।

৪৮৪

ধারা-৩৫৩

বাইন তালাক সুগরার পর ফজআত স্বামী তাহার স্ত্রীকে এক অথবা দুই বাইন তালাক দিলে তৎক্ষণাৎ বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হইয়া যায় এবং স্বামী তাহাকে ফিরাইয়া লইতে ( ১) পারে না; তবে তাহারা পারস্পরিক সম্মতিতে তাহলীল ব্যতীত পুনর্বিবাহে আবদ্ধ হইতে পারে।

বিশ্লেষণ

উক্ত অবস্থায় স্ত্রীকে ফিরাইয়া লওয়ার (a ) সুযোগ থাকে না। তবে তাহারা উভয়ে পারস্পরিক সম্মতিতে ইদ্দত চলাকালে বা উহার পরে তাহলীল ব্যতীত ইজাব কবুলের মাধ্যমে পুনর্বিবাহে আবদ্ধ হইতে পারে। এই ক্ষেত্রে সাক্ষী রাখার বা পুনরায় মুহর নির্ধারণের প্রয়োজন নাই।

ধারা-৩৫০ যে স্ত্রীর সহিত সহবাস হয় নাই তাহাকে তালাক দিলে যে বীর সহিত সহবাস হয় নাই তাহাকে একবাক্যে তিন তালাক দিলে উহা তৎক্ষণাৎ কার্যকর হইবে এবং তাহলীল ব্যতীত উভয়ের পুনর্বিবাহ বৈধ হইবে না। অবশ্য এক বা দুই তালাক দেওয়া হইলে প্রথম তালাকেই বিবাহ বিদে হইয়া যাইবে, তবে এই অবস্থায় উভয়ে তাহলীল ব্যতীত পুনর্বিবাহে আবা হইতে পারে।

दिने যে স্ত্রীর সহিত সহবাস হয় নাই তাহাকে এক তালাক দিলে উহা বাইন তালাক হিসাবে গণ্য হয়। তাহাকে ইদ্দত পালন করিতে হয় না।

ধারা-৩৫৫

খুলার সংজ্ঞা স্ত্রীর ইচ্ছার ভিত্তিতে তৎকর্তৃক প্রদত্ত মাসের বিনিময়ে সমঝোতার মাধ্যমে স্বামী খু’ বা অনুরূপ অর্থবােধক শব্দের প্রয়োগে তাহাকে বিবাহবন্ধন হইতে মুক্ত করিলে উহাকে ‘খুলা’ বলে।

বিশ্লেষণ

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হইলে, তাহাদের পক্ষে দাম্পত্য কর্তব্য পালন অসম্ভব হইয়া পড়িলে এবং আল্লাহ নির্ধারিত সীমা লংঘিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে স্বামীকে কিছু মাল দিয়া স্ত্রী স্বামীর মাধ্যমে তাহার নিকট হইতে বিবাহ বন্ধনমুক্ত হইতে পারে। পরিভাষায় ইহাকে খুলা বলে। মহান আল্লাহ বলেন :

فان خفتم الأيقيما حدود الله فلا جناح عليهما فيما

افتدت به .

৪৮৫

“যদি তোমাদের আশঙ্কা হয় যে, তাহারা আল্লাহর সীমা রক্ষা করিয়া চলিতে পারিবে না তবে স্ত্রী কোন কিছুর বিনিময়ে নিষ্কৃতি পাইতে চাহিলে তাহাতে তাহাদের কাহারও কোন অপরাধ নাই” (সূরা বাকারা : ২২৯)।

ধারা-৩৫৬

খুলার বিনিময়ের পরিমাণ মুহরের সমপরিমাণ অথবা উহার কমবেশি পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে স্বামী তাহার শীকে গুলা তালাক দিতে পারে।

বিশ্লেষণ

বিভেদ-বিসম্বাদ স্বামীর পক্ষ হইতে হইলে খুলার বিনিময়ে অর্থ গ্রহণ তাহার জন্য মাকরূহ। আর যদি তাহা স্ত্রীর তরফ হইতে ঘটিয়া থাকে তবে স্বামী কর্তৃক তাহাকে প্রদত্ত মালের অধিক পরিমাণ বিনিময় গ্রহণও মাকরূহ। স্বামী ইচ্ছা করিলে বিনিময় ছাড়াও খুলা প্রদান করিতে পারে। মহানবী (সা) বলেন, খুলাপ্রার্থিনী স্ত্রীর নিকট হইতে তাহাকে তোমার প্রদত্ত মালের সমপরিমাণ গ্রহণ করিতে পারে, উহার অধিক নহে”–(বায়হাকীর সুনানুল কুবরা, দাক্ষিণাত্য সং, ১৩০৩ হি., ৭, পৃ. ৩১৪)। সাবিত ইব্‌ন কায়েস (রা)-র স্ত্রী খুলার প্রার্থনা করিলে মহানবী (স) তাহার স্বামীর প্রদত্ত বাগানটি তাহাকে ফেরত দিতে বলেন। সাবিতের স্ত্রী আরও অতিরিক্ত দিতে চাহিলে মহানবী (স) তাহাকে বারণ করেন (বায়হাকী, সুনানুল কুবরা, ৭খ, ৩১৪)।

ধারা-৩৫৭

খুলার বিনিময়ের ধরন যে বন্ধু মুহর হিসাবে প্রদান করা যায় তাহা খুলার বিনিময় হিসাবেও প্রদান করা যাইবে।

বিশ্লেষণ

অর্থাৎ যে কোন হালাল জিনিস যেমন নগদ অর্থ, জায়গা-জমি, সোনারূপা ইত্যাদি খুলার বিনিময় হইতে পারে।

ধারা-৩৫৮

বিনিময় ছাড়াই খুলা প্রদান মী যদি কোনরূপ আর্থিক বিনিময় উলেখ ছাড়াই স্ত্রীকে খুনা প্রদান করে তবে ইহাতে স্ত্রীর মুহরের দাবি রহিত হইবে।

বিশ্লেষণ

বিনিময়ের উল্লেখ না করিয়া স্বামী যদি স্ত্রীকে বলে, আমি তোমাকে খুলা শিলা, তবে ঐ সময় পর্যন্ত স্ত্রী যে পরিমাণ মুহর আদায় করিয়াছে উহা স্বামীকে ফেরত হইবে। কারণ খুলার সঙ্গে প্রথাগতভাবে বিনিময়ের সম্পর্ক রহিয়াছে।

৪৮৬

ধারা-৩৫

না এলামের যোগ্যতা ধুনা প্রদানকারী মীকে বালে ও সুবুরি অধিকারী হইতে হইবে।

ধারা-৩৬০

খুলার কুম (অবস্থা) (ক) খুলার মাধ্যমে এক বাইন তালাক সংঘটিত হয়, এমনকি দুই তালাকের নিয়াত করিলেও, কিন্তু তিন তালাকের নিয়াত করিলে তিন তালাক হইবে।

(খ) বা নারী ইদ্দতকালের খােরপোষ ও বাসস্থান পাইবে, যদি না ভিন্নতর কোন চুক্তি হইয়া থাকে; তবে সে উপহার সামগ্রী (মাতা) পাইবে না।

বিশ্লেষণ

খুলা এক বাইন তালাকের অন্তর্ভুক্ত। তবে তিন তালাকের নিয়াত করিলে তিন তালাকই কার্যকর হইবে।

ধারা-৩৩১

মুবারাত বামী-লীর পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে সংঘটিত তালাককে ‘মুবারাত’ বলে এবং ইহার দ্বারাও এক বাইন তালাক সংঘটিত হয়।

विश्व। মুবারাত শব্দের অর্থ পরস্পর হইতে মুক্ত হওয়া। এই ক্ষেত্রে স্বামী বা স্ত্রী যে কোন পক্ষ হইতে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করার প্রস্তাব আসিতে পারে। এই পদ্ধতিতে কোনরূপ আর্থিক বিনিময় নাই। মুবারাতের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকারের পরিসমাপ্তি ঘটে।

ধারা-৩৬২ মোগ বা দৈহিক ত্রুটির কারণে বিবাহ বিভেদ স্ত্রী যদি স্বামীর মধ্যে এমন কোন রোগ বা ত্রুটি দেখিতে পায় যাহা সহবাসের প্রতিবন্ধক তাহা হইলে সে আদালতে বিবাহ রদের (ফাসখ) দৰি উথাপন করিতে পারিবে। এই জুটির মধ্যে নপুংসক হওয়া, পুরুষাঙ্গ কর্তিত হওয়া, খােজা হওয়া ইত্যাদি অতর্ভুক্ত।

বিশ্লেষণ

যৌন অক্ষমতা জনিত ত্রুটির কারণে কেবল স্ত্রীরই বিবাহ রদ (ফাসখ) করার অধিকার রহিয়াছে। কিন্তু স্ত্রীর মধ্যে যৌন অক্ষমতা জনিত ত্রুটি থাকিলে স্বামী বিবাহ

৪৮৭

রদ করার অধিকারী হইবে না, যদি না বিবাহের চুক্তিনামায় এই জাতীয় কোন শর্ত থাকে; অবশ্য সে তাহাকে তালাক দিতে পারে। ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর মতে কুষ্ঠরোগ ইত্যাদির ক্ষেত্রেও স্ত্রী বিবাহ রদ’ (ফাসখ = ) দাবি করিতে পারিবে।

ধারা-৩৩

পুরুষত্বহীনতার কারণে বিদে। বিবাহ অনুষ্ঠানের সময় স্বামী পুরুষত্বহীন (৬) হিল এবং তাহা অব্যাহত রহিয়াছে, ইহার পরিপ্রেক্ষিতে ী আদালতের সহায়তায় বিবাহ বিদে ঘটাইতে পারিবে। তবে আদালত স্বামীকে চিকিৎসার জন্য এক বৎসরের অবকাশ প্রদান করিবে। তারপর যৌনশক্তি বহাল না হইলে আদালতবিবাহ করিয়া দিতে পারে।

বিশ্লেষণ

যে ব্যক্তি পুরুষাঙ্গ থাকা সত্ত্বেও খ্রীর সহিত সঙ্গম করিতে সক্ষম হয় নাই, ইহা জন্মগত হউক, রোগের কারণে হউক, দুর্বলতা বা বার্ধক্যের কারণে বা অন্য যে কোন কারণেই হউক, তাহাকে পরিভাষায় পুরুষত্বহীন’ ( e) বলে। এই ক্ষেত্রে স্ত্রীর আদালতের সহায়তায় বিবাহ বিচ্ছেদ দাবি করার অধিকার আছে। বিলবে দাবি উথাপন করিলে তাহাতে তাহার এই অধিকার ক্ষুন্ন হইবে না।” আদালত কর্তৃক স্বামীকে চিকিৎসার জন্য অবকাশ প্রদানের তারিখ হইতে এক বৎসর গণনা শুরু হইবে।” চিকিৎসার পর যৌনক্ষমতা ফিরিয়া পাইলে স্ত্রীর দাবি রহিত হইয়া যাইবে, অন্যথায় নহে।

ধারা-৩৬৪ পুরুষাঙ্গ কর্তিত হওয়ার কারণে বিবাহ বিদে স্বামীর পুরুষাঙ্গ কর্তিত হইলে অথবা সে খােজা হইলে স্ত্রী আদালতের সাহায্যে বিবাহ বিভেদের অধিকারী হইবে এবং আদালত উপরোক্ত ক্রটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর বিবাহ রদ করিয়া দিতে পারে।

বিশ্লেষণ

বিবাহের উদ্দেশ্য হইল যৌন উত্তেজনা নির্বাপণ ও সন্তান উৎপাদন। এই ক্ষেত্রে উপরোক্ত উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। উপরন্তু স্ত্রী জৈবিক চাহিদা পূরণ হইতে বঞ্চিত থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইসলামী শরীআতের একটি মূলনীতি হইল, “ক্ষতি করাও যাইবে না, সহাও যাইবে না”।

* (لا ضرر ولا ضرار في الاسلام)

তাই এই ক্ষতি দূর করার জন্য আদালত বিবাহ বিচ্ছেদের নির্দেশ দিতে পারে।

৪৮৮

ধারা-৩৬৫

মস্কি বিকৃতির কারণে বিদে স্বামীউন্মাদ থাকিলে আদালতের সহায়তায় বিবাহ বিল ফরাইতে পারে।

বিশ্লেষণ

ইমাম আবু হানীফা ও আবু ইউসুফ (র)-এর মতে স্ত্রী স্বামীর মস্তিষ্ক বিকৃতির কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের দাবি করিতে পারে না। ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর মতে আদালতে দরখাস্তের মাধ্যমে স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদের দাবি করিতে পারে, যদি স্বামীর উন্মাদনার কারণে তাহার সহিত বসবাস অসম্ভব হইয়া পড়ে। ইমাম মালেক, শাফিঈ ও আহমাদ ইবন হাম্বল (র)-এর মতেও উন্মাদনার ক্ষেত্রে স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ দাবির অধিকার আছে।

ধারা-৩৬৬ টিজনিত কারণে সংঘটিত বিদেদের প্রকৃতি ধারা (৩৬২) হইতে (৩৬৫) নং ধারাসমূহে উিিত দোষের কারণে বিবাহ বিমেদ হইলে তাহা এক বাইন তালাক’ হিসাবে গণ্য হইবে।

ধারা-৩৬৭

নিখোঁজ মীর ক্ষেত্রে বিবাহ বিদে স্বামী একাধারে চারি বৎসর নিখোঁজ থাকিলে স্ত্রী আদালতের সহায়তায় বিবাহ বিজেদের অধিকারী হইবে।

ধারা-৩৮

স্বামীর কারাদণ্ড

কোন অপরাধের শাস্তিস্বরূপ স্বামীর সাত বৎসর মেয়াদের কারাদণ্ড হইয়া থাকিলে স্ত্রী বিবাহ বিলেদের জন্য মামলা দায়ের করিতে পারিবে। কিন্তু কারাদণ্ডের রায় প্রদান চুড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত আদালত সীর মামলায় ডিক্রি প্রদান করিবে না।

বিশ্লেষণ

উপমহাদেশের কোর্টসমূহ কর্তৃক অনুসৃত ইসলামী আইনের ব্যাখ্যার ভিত্তিতে উপরোক্ত ধারা রচনা করা হইয়াছে। মিসরীয় পারিবারিক আইনে তিন বৎসর বা উহার অধিক, ইরাকে পাঁচ বৎসর বা উহার অধিক এবং সিরিয়ায় এক বৎসরের মেয়াদে স্বামীর কারাদণ্ড হইলে স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করিতে পারিবে।

৪৮৮

ধারা-৩৬৯

ধর্মত্যাগের ফলে বিবাহ বিদে স্বামী-স্ত্রীর কোন একজন ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করিলে ইহাতে সরাসরি বিবাহ বিদে হইয়া যাইবে।

বিশ্লেষণ

কোন মুসলিম পুরুষ বা নারীর ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করাকে ‘ধর্মত্যাগ” (1 ) বলে। এই ক্ষেত্রে সরাসরি বিবাহ বিচ্ছেদ হইয়া যায় এবং আদালতের নির্দেশের প্রয়োজন হয় না।” উভয়ে একত্রে আবার ইসলামে ফিরিয়া আসিলে তাহাদের বিবাহ বন্ধন অক্ষুন্ন থাকিবে।

ধারা-৩৭০

ইলা (SL)। যদি কোন স্বামী শপথ করে যে, সে তাহার স্ত্রীর সহিত চারমাস বা উহার অধিক কাল সহবাস করিবে না এবং সহবাস হইতে বিরত থাকে তবে চারমাস অতিবাহিত হওয়ার পর উহা এক বাইন তালাকে পরিণত হইবে।

বিশ্লেষণ

‘ঈলা (L) শব্দের অর্থ তালাকের উদ্দেশ্যে স্ত্রীর সহিত সহবাস না করার শপথ। শপথ না করিয়া সহবাস হইতে বিরত থাকিলে তাহা ঈলা নহে। এই সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে :

اللذين يؤلون من نسائهم تربص اربعة أشهر فان فاوا فان الله غفور رحيم . وان عزموا الطلاق فان الله سميع

.

.

“যেসব লোক তাহাদের স্ত্রীগণের সহিত ঈলা (সম্পর্ক না রাখার প্রতিজ্ঞা করে, তাহাদের জন্য চার মাসের অবকাশ আছে। যদি তাহারা প্রত্যাবর্তন করে তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়। আর যদি তাহারা তালাক দেওয়ারই সিদ্ধান্ত করিয়া থাকে, তবে আল্লাহ সব কিছু শুনেন ও জানেন” (সূরা বাকারা : ২২৬, ২২৭)।

সময়সীমা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক বাইন তালাক সংঘটিত হয় এবং বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আদালতের নির্দেশের প্রয়োজন হয় না।”

ধারা-৩৭১

যিহার (%)। স্বামী যদি স্ত্রীকে তাহার মায়ের সহিত অথবা কোন চিরস্থায়ী মাহরাম মহিলার সহিত তুলনা করে, তাহা হইলে যে পর্যন্ত না সে উহার জন্য অনুতপ্ত হইয়া কাফফারা দেয় সে পর্যন্ত প্রীর সহিত তাহার মেলামেশা করা হারাম।

৪৯০

বিশ্লেষণ

খ্রীর দেহের কোন অংশকে স্বামীর চিরস্থায়ী মাহরামের কোন অংশের সহিত তুলনা করিলেও তাহা যিহার হইবে। যেমন তুমি আমার সহােদর বােন। বিহারের মাধ্যমে মূলত বিবাহ বিচ্ছেদ হয় না, তবে কাফফারা আদায় না করা পর্যন্ত স্ত্রীর সহিত মেলামেশা হারাম হইয়া যায়। কুরআন মজীদে বলা হইয়াহে :

انهم ثم يعودون لما قالوا

والذين يظاهرون من فتحرير رقبة من قبل أن يتماشا ذلكم وعظون به والله بما تملون خبيرة . فمن لم يجد فصيام شهرين متتابعين من قبل أن يتماتا فمن لم يستطع قاطعام ستين مسكينا.

“যাহারা নিজেদের স্ত্রীদের সহিত যিহার করে এবং পরে নিজেদের উক্তি প্রত্যাহার করে, তবে পরস্পরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি দাস মুক্ত করিতে হইবে। এই নির্দেশ তোমাদেরকে দেওয়া হইল। তোমরা যাহা কর আল্লাহ তাহার খবর রাখেন। কিন্তু যাহার এই সামর্থ্য থাকিবে না, তাহাকে পরস্পরকে স্পর্শ করিবার পূর্বে একাধারে দুই মাস মোয়া রাখিতে হইবে। যে তাহাতেও অসমর্থ সে ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াইবে” (সূরা মুজাদালা : ৪)।

ধারা-৩৭২

লিআন (5) আদালতের সামনে স্বামী-শী পরস্পরের বিরুতে সিআন করিলে আদালত তৎকণাৎ তাহাদের বিবাহ দিয়া দিবে।

বিশ্লেষণ

স্বামী যদি স্ত্রীর বিরুদ্ধে যেনার অভিযোগ উত্থাপন করে অথবা তাহার গর্ভজাত সন্তানকে এই বলিয়া অস্বীকার করে যে, সে তাহার ঔরসজাত নহে এবং ইহার সপক্ষে কোন চাক্ষুস সাক্ষী-প্রমাণও না থাকে, অপরদিকে স্ত্রীও যদি তাহার উপরোক্ত অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে, তবে এই অবস্থায় স্বামী ও স্ত্রী উভয়কে অথবা যে কোন একজনকে নিজ দাবির সমর্থনে আদালতের সামনে নির্দিষ্ট পন্থায় শপথ করিতে হয়। ইহাকে লিআন (অভিশাপযুক্ত শপথ) বলে। পবিত্র কুরআনে বলা হইয়াছে;

والذين يرمون أزواجهم ولم يكن لهم شهداء الأ أنفسهم شهادة أحدهم أربع شهدت بالله انه لمن الصدقين . والخامس أن لفئة الله عليه ان كان من الكذبين . ويدر وا

১১

منها العذاب آن تشهد اربع شهدت بالله انه لمن الكذبين . والخامسة أن غضب الله عليها ان كان من الصدقين .

“যাহারা নিজেদের স্ত্রীদের প্রতি (যেনার) অপবাদ আরোপ করে অথচ নিজেরা ব্যতীত তাহাদের কোন সাক্ষী নাই, তাহাদের প্রত্যেকের সাক্ষী এই হইবে যে, সে (স্বামী) আল্লাহর নামে চারবার শপথ করিয়া বলিবে যে, সে অবশ্যই সত্যবাদী এবং পঞ্চমবারে বলিবে, সে মিথ্যাবাদী হইলে তাহার উপর আল্লাহর গযব পতিত হইবে। তবে স্ত্রীর শাস্তি রহিত হইবে যদি সে চারবার আল্লাহর নামে শপথ করিয়া সাক্ষ্য দেয় যে, তাহার স্বামীই মিথ্যাবাদী এবং পঞ্চমবারে বলে, তাহার স্বামী সত্যবাদী হইলে নিজের উপর আল্লাহর গযব পতিত হইবে” (সূরা নূর : ৬-৯)।

লিআন দ্বারা সরাসরি বিবাহ বিচ্ছেদ হয় না, বরং আদালত বিবাহ ভাঙ্গিয়া দিলেই কেবল বিচ্ছেদ হয়। তবে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিলেই উত্তম। এই ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী পুনর্বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইতে পারে না। তবে স্বামী নিজের অভিযোগ মিথ্যা। বলিয়া স্বীকার করিলে মিথ্যা অপবাদের শাস্তি ভোগের পর তাহাদের মধ্যে পুনর্বিবাহ হইতে পারে।”

লিআন-এর সভা ও শপথবাক্য ও বিধান-এর জন্য দ্র. ধারা (১৪৭)।

ধারা-৩৭৩

ইত-এর সংজ্ঞা তালাক অথবা মৃত্যুজনিত কারণে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হওয়ার পর যে সময়সীমার মধ্যে কোন নারী পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইতে পারে না তাকে ‘ইদ’ বলে।

ধারা-৩৭৪

ইদ্দত পালন বাধ্যতামূলক নিম্নলিখিত অবস্থায় নারীর ইদত পালন বাধ্যতামূলক

(ক) ধারা (২৬৬) মোতাবেক বৈধ (সহীহ) বিবাহের ক্ষেত্রে সহবাস অথবা ধারা (২৮৮) মোতাবেক নির্জনে মিলনের পর বিবাহ বিদে হইলে;

(খ) ধারা (২৬৯) মোতাবেক অনিয়মিত (ফাসিদ) বিবাহের ক্ষেত্রে সহবাস বা নির্জনে মিলনের পর বিবাহ বিদে হইলে;

(গ) উপধারা (ক) ও (খ)-এ বর্ণিত উভয় প্রকার বিবাহের পর মীর মৃত্যু হইলে;

তবে শর্ত থাকে যে, নির্জনে মিলন বা সহবাসের পূর্বে বিবাহ বিদেশে ইদ্দত পালন করিতে হইবে না।

৪৯২

ধারা-৩৭৫

ইদ্দতের সময়সীমা (ক) বালেগা নারী যাহার নিয়মিত হায়েয হয় তাহার ইদ্দতকাল তিন হায়েয পর্যন্ত এবং হায়েয অবস্থায় তালাক দেওয়া হইলে ইতকাল হইবে উহার পরে তিনটি পূর্ণ হায়েযকাল।

(খ) অল্প বয়স, বার্ধক্য, রোগব্যাধি বা অন্য কোন কারণে কোন নারীর হায়েয হইলে তাহার ইদ্দতকাল পূর্ণ তিন মাস।

(গ) কোন নারীর স্বামী মৃত্যুবরণ করিলে তাহার ইদ্দতকাল চারমাস দশ দিন।

(ঘ) কোন নারীকে রিজই তালাক দেওয়ার পর তাহার মত চলাকালে শী মারা গেলে তাকে স্বামীর মৃত্যুর তারিখ হইতে চারমাস দশদিন ইলত পালন করিতে হইবে।

(৩) গর্ভবতী নারীর ইতকাল গর্ভখালাস হওয়া পর্যন্ত এবং বিবাহ বিদে অথবা স্বামীর মৃত্যুর পর অন্তঃসত্তা প্রকাশ পাইলে ইতকাল হইৰে গভ খালাস পর্যন্ত।

বিশ্লেষণ

মহান আল্লাহর বাণী :

يأيها الذين آمنوا اذا نكتم المؤمنت ثم طلقتموهن من

قبل أن تمسوه فما لكم عليهن من عدة تفتونها .

“হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিন নারীগণকে বিবাহ করিয়া স্পর্শ করার পূর্বে তালাক দিলে তোমাদের জন্য তাহাদের পালনীয় কোন ইদ্দত নাই যাহা তোমরা গণনা করিতে পার” (সূরা আহযাব : ৪৯)।

والمطلقت يتربصن بأنفسهن ثلثة قروء.

“তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী তিন হায়েযকাল প্রতীক্ষা করিবে” (সূরা বাকারা : ২২৮)।

والذين يتوفون منكم ويرون أزواجايتربصن

بأنفسهن أربعة أشهر وعشرا .

“তোমাদের মধ্যে যাহারা স্ত্রী রাখিয়া মারা যায় তাহাদের স্ত্রীগণ চারমাস দশ দিন প্রতীক্ষা করিবে” (সূরা বাকারা : ২৩৪)।

৪৯৩

والي يئن من المريض من نسائكم إن ارتبتم

عهن له أشهر والی لم يحضن وأوت الأحمال أجله

.

“তোমাদের স্ত্রীগণের মধ্যে যাহাদের হায়েয হওয়ার আশা নাই তাহাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা সন্দেহ করিলে তাহাদের ইদ্দতকাল হইবে তিন মাস এবং যাহারা এখনও হায়েযগ্রস্ত হয় নাই তাহাদেরও। আর গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত” (সূরা তালাক : ৪)।

মৃত্যুব্যাধি (

৩৬১)

ধারা-৩৭৬

মৃত্যুব্যাধির সংজ্ঞা যে ব্যাধিতে রোগীর মৃত্যুর প্রবল আশঙ্কা থাকে, রোগী বাড়ির বাহিরে যাইয়া নিজের বাবিক কাজকর্ম করিতে অক্ষম হইয়া পড়ে এবং পরিশেষে তাহার মৃত্যু হয় উহাকে মৃত্যুব্যাধি’ (বা মারাদুল মাওত) বলে।

বিশ্লেষণ

ইহা এমন ব্যাধি যাহাতে রোগীর মৃত্যুর প্রবল আশঙ্কা থাকে, বােগী পুরুষ হইলে বাড়ির বাহিরে যাইয়া নিজের প্রয়োজন পূরণ করিতে অক্ষম হইয়া পড়ে এবং স্ত্রীলোক হইলে সাংসারিক কাজকর্ম করিতে অপারগ হইয়া যায়। এই রোগের তিনটি বৈশিষ্ট্য রহিয়াছে : (১) রোগাক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঘট’র প্রবল আশঙ্কা থাক, (২) রোগাক্রান্ত ব্যক্তির মনেও মৃত্যুর ভীতি সৃষ্টি হয় এবং (৩) ব্যাধির কারণে রোগী তাহার স্বাভাবিক কাজকর্ম করিতে অক্ষম হইয়া পড়ে।

অবশ্য কোন রোগ মৃত্যুব্যাধি হিসাবে গণ্য হইবে কি না উহার কোন ধরাবাধা নিয়ম নাই। রোগ অতি পুরাতন হইলে মনে করা হইবে যে, রোগী উহাতে অভ্যস্ত হইয়া গিয়াছে। যক্ষ্মা, বহুমূত্র, শ্বাসকষ্ট, পক্ষাঘাত ইত্যাদি রোগসমূহ দীর্ঘমেয়াদী বিধায় আপাত মৃত্যুভয় সৃষ্টির সহায়ক বলিয়া ধর্তব্য হয় না। সুতরাং এইগুলি মৃত্যুব্যাধি বলিয়া গণ্য হয় না। তবে এই রোগগুলি যদি এমন পর্যায়ে আসিয়া পোঁছে যাহাতে মৃত্যুর প্রবল আশঙ্কা সৃষ্টি হয় এবং রোগীও পরিশেষে মারা যায় তবে উহা মৃত্যুব্যাধি গণ্য হইবে। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হইয়া, দুর্ঘটনায় পতিত হইয়া, হিংস্র প্রাণীর আক্রমণের শিকার হইয়া এবং যুদ্ধক্ষেত্রে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মারা গেলে উহা মৃত্যুব্যাধি গণ্য হইবে না।

৪৯৪

ধারা-৩৭৭

মৃত্যুব্যাগ্রিত অবস্থায় তালাক কোন ব্যক্তি মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় নিজ ভীকে যে কোন প্রকার তালাক প্রদান করিলে এবং তাহার ইদ্দতকালের মধ্যে স্বামী মারা গেলে তাহার ওয়াসি হইবে।

তবে শর্ত থাকে যে, স্ত্রীর দাবি অনুযায়ী তালাক প্রদান করা হইলে এবং স্বামী তাহার ইদ্দতকালের মধ্যে মারা গেলেও সে তাহার ওয়ারিস হইবে না।

বিশ্লেষণ

উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) কাযী শুরায়হকে লিখিয়া পাঠাইলেন যে, কোন ব্যক্তি রোগাক্রান্ত অবস্থায় স্বীয় স্ত্রীকে তিন তালাক দিলে এবং স্বামী তাহার ইদ্দতকালের মধ্যে মারা গেলে তাহাকে তাহার ওয়ারিস বানাও। কিন্তু স্বামী ইদ্দতের পরে মারা গেলে সে তাহার ওয়ারিস হইবে না স্ত্রীর দাবি অনুযায়ী সে তালাক দিলে এবং তাহার ইদ্দতকালের মধ্যে তালাকদাতা স্বামী মারা গেলেও স্ত্রী তাহার ওয়ারিস হইবে। কারণ সে দাবি করিয়া তালাক আদায় করিয়া নিজেই নিজের স্বার্থ ক্ষুন্ন করিয়াছে।

ধারা-৩৭৮ ফাস্খ বা বিবাহদি (cKJ/tw) (ক) তালাক ব্যতীত অন্য কোন কারণে সরাসরি অথবা আদালতের মাধ্যমে বিবাহবন্ধন ন্নি হইলে তাহাকে ‘ফাস বা বিবাহরদ (

cut) বলে। (খ) যে কারণে বিবাহ নদ হয় পরে সেই কারণ অপসৃত হইলে স্বামী পুনরায় যথারীতি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হইতে পারে।

বিশ্লেষণ

বিভিন্ন কারণে সরাসরি বিবাহ ভাঙ্গিয়া যাইতে পারে। যেমন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিলে বা ত্যাগ করিলে সরাসরি বিবাহবন্ধন ছিন্ন হইয়া যায়। শরাষ্ট্র হইতে স্বামী-স্ত্রীর কোন একজন ইসলাম গ্রহণ করিয়া অথবা ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করিয়া ইসলামী রাষ্ট্রে চলিয়া আসিলে তাহাদের বিবাহও সরাসরি ছিন্ন হইয়া যাইবে। ফাসিদবিবাহ, নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য বিবাহ, ঈলা ও লিআন ইত্যাদি ক্ষেত্রে আদালতের মাধ্যমে বিবাহ রদ হইয়া যাইবে।

তথ্যনির্দেশিকা ১. বাদাইউসসানাই, ৩২, পৃ. ৮৮; নাসাবুর রায়াহ, লাখনৌ সং., ২খ, পৃ. ২৮। ২. বাহরুর রাইক, ৩, পৃ. ২৩৮; বাদাইউসসানাই, ৩, পৃ. ৮৯। ৩. মুজামু সুগাতিল ফুকাহা, করাচী সং., পৃ. ২৯২। ৪. বাদাইউসসানাই, ৩থ, পৃ.৯৩। ৫. বাদাইউসসানাই, ৩থ, পৃ. ৯৪।

৪৯৫

৬. বাদাইউসসানাই, ৩খ, পৃ.৯৪। ৭. কুদূরী (আরবী), পৃ. ২৭৯; শারহল বিকায়া, পৃ. ১০১।

আলমগিরী, ১, পৃ. ৬৭।

বাদাইউসসানাই, ৩থ, পৃ. ৯৯-১০০। ১০. ঐ, ৩, পৃ. ৯৯-১০০।

মাজমূআহ কাওয়ানীন, ২খ, পৃ. ৩৯৬-৭; বাহরুর রাইক হইতে, ৩২, পৃ. ৮৯। বাদাইউস সানাই, ৩, পৃ. ১০০।

ঐ, ৩২, পৃ. ১০০। ঐ, ৩, পৃ. ৯৯-১০০। আস-সায়্যিদ সাবিক, ফিকহুস সুন্নাহ, ৪র্থ সংস্করণ, বৈরূত ১৪০৩/১৯৮৩, ২খ, পৃ. ২১২-৩; ড. ওয়াহবা আয-যুহায়ণী, ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিয়াতুহ, ২য় সংস্করণ, বৈরূত ১৪০৯/১৯৮৯, ৭, পৃ. ৩৬৬।

বাদাইউস সানাই, ৩২, পৃ. ৯৯। ১৭. মাজমূআহ কাওয়ানীন (বরাত বাদাই, ৩, ১৭৬; ফাতহুল কাদীর, ৩, ৪০-৪১)। ১৮. ইবন মাজা, কিতাবুত তালাক, ৰাব তালাকি মুকহ, পৃ. ৬৫৯-৬০, নং ২০৪৩,

আবু যর গিফারী (রা) কর্তৃক বর্ণিত; ইবন হিব্বান, সার কুতনী, তাবারানী, হাকেম।

ইবন মাজা, কিতাবুত তালাক, বাব তালাকিল মুকৱাহ, ২, পৃ, ৬৫৯-৬০, নং

২০৪৬; আবু দাউদ, তালাক, বাব ৮, নং ২১৯৩। ২০. তাঁহারা নিম্নোক্ত হাদীস পেশ করেন :

عن أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم

ثلاث جدهن جد وهزلهن جد النكاح والطلاق والرجعة .

আবু হুরায়রা (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) বলিয়াছেন, তিনটি জিনিস বেয়’ করা হউক অথবা আনন্দ-উল্লাসে’ ও নিরর্থক’ করা হউক তাহা কার্যকর হইবে? বিবাহ, তালাক ও আত (রিজ তালাকের পর স্ত্রীকে পুনরায় – ফিরাইয়া লওয়া) (তিরমিযী, তালাক, বাব মা জাআ ফিল জিপি ওয়াল-হাযলি তিতালাক, নং ১১৮৪; আবু দাউদ, তালাক, বাব ৯, নং ২১৯৪; ইবন মাজা, তালাক, বাব ১৩, নং ২০৩৯)। যদিও এই হাদীস দ্বারা জোরপূর্বক তালাক কার্যকর হওয়া প্রমাণিত হয় না এবং ইহার অনুকূলে কোন সাহাবীরও মত বিদ্যমান নাই।

ফিকহুস সুন্নাহ, ২খ, পৃ. ২১২; ফিকহুল ইসলামী, ৭৩, পৃ. ৩৬৭-৮। ২২. হন সাপ, আত-তাবাকাতুল কুবরা, বৈরূত সং., ৮, পৃ. ৫৩-৪।

সুনানুল সারিমী, তালাক, বাব ফির আহ; কানযুল উম্মাল, ২য় সং.. হায়দরাবাদ

১৩৮১/১৯৬২, ৯, পৃ. ৪১২, হাদীস নং ৩৪৩৪, তালাক। ২৪. আলমগির, ৩য় সং., বৈরূত ১৪০০/১৯৮০, ১, পৃ. ৪৮৮; আল-হিদায়া,

দেওবৃন্দ সং., ২খ, পৃ. ৩৮৪। ২৫. আল-হিদারা, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৮৪।

২১.

৪৯৬

২৬. বাদাইউস সানাই, কোয়েটা সং, ১৪০৯/১৯৮৯, ৩, ১৫১। ২৭. আলমগিরী, ২৩, ২২১ (মাজমূআহ কাওয়ানীন হইতে এখানে অকৃত, ২২, পৃ.

৫৭৯)।

আল-হিদায়া, ২খ, পৃ. ৩৮৪; আলমাগরী, ১, পৃ. ৪৮৮। ২৯. আলমগিরী, ১খ, পৃ. ৪৮৮, মুওয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ, বাংলা অনু., পৃ. ৩৩৬।

রদুল মুহতার, মিসর ১২৫৬ হি., ২খ, পৃ. ৬১২।

আল-মাবসূত, ১৩২৪ হি., ৫২, পৃ. ১০২। ৩২. আলমগিরী, কানপুর সং, ২৩, ১৫৬; হিদায়া, করাচী সং., ২, ৪২১, বাবুল

ইনীন; রদুল মুহতার, বাবুল ইমীন, ২৩, ৬১১। ৩৩, ইমাম যায়, তাবঈনুল হাকাইক, ৩, পৃ. ২৫ (মাজমূআহ কাওয়ানীন হইতে

এখানে উদ্ধৃত, ২, পৃ. ৬১৫)। ইন মাজা, কিতাবুল আহকাম, বাব ১৭, হাদীস নং ২৩৪০, ২৩৪১; মুসনাদে আহমাদ, মিসরীয় সং., ৫, পৃ. ৩২৭; মুওয়াত্তা ইমাম মালেক, কিতাবুল আকদিয়াহ,

বাব ৩১। ৩৫. আলমগিরী, কিতাবুত তালাক, বাবুল ইন্নীন। ৩৬. আলমগিরী, ২খ, পৃ. ২৫৩, বাবু আহকামিল মুরতাদ্দীন। ৩৭. রব্দুল মুহতার, কিতাবুন নিকাহ, যাব নিকাহিল কাফির, ২, পৃ. ৪২৫।

মুওয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ, বাংলা অনু, তালাক, অনুচ্ছেদ ১৪, পৃ. ৩৪৬-৪৮। ৩৯, ঐ, তালাক, কা নং ১২, পৃ. ৩৫৪! ৪০. আলমগিরী, কিতাবুত তালাক, বাবুল খামিস ফী তালাকিল মারী, ১, পৃ.

৪৬২-৩; ফাতহুল কাদীর, কিতাবুত তালাক, বাব তালাকিল মারী, ৪, পৃ. ৭-৮। ফাতহুল কাবীর, ঐ, পৃ. ৭-৮। মুওয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ (র), বাংলা অনু. কিতাবুত তালাক, ১২ নং অনুচ্ছেদ অসুস্থ অবস্থায় তালাক দেওয়া, পৃ. ৩৪৫; আলমগিরী, ১, পৃ. ৪৬২; ফাতহুল কাদীর, ৪খ,

পৃ. ৫। ৪৩. ফাতহল চাদীর, ৪খ, পৃ. ৫।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *