1 of 2

১২. বিবাহ

দ্বাদশ অধ্যায় – বিবাহ

ব্যক্তি বিধি

ধারা-২৫৩

‘বিবাহ’ ( i) একটি চুক্তি যাহার মাধ্যমে পুরুষ ও নারীর মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন বৈধ হয়।

বিশ্লেষণ

নিকাহ (বিবাহ)-এর আভিধানিক অর্থ মিলানো’ ‘একত্র করা, সহবাস : মার শরীআতে ‘বিবাহের চুক্তিকে নিকাহ বলা হয়।

মুজামু লুগঠিল ফুকাহা’ গ্রন্থে নিকাহ-এর ব্যাখ্যায় বলা হইয়াছে। বিবাহ এম একটি চুক্তি যাহার দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের সহিত পহিক সম্পর্ক স্থাপন বপ হয়।

আলাউদ্দীন আল-হাসকাফী বলেন, বিবাহ এমন #কটি স্বচ্ছাপ্রণোক্তি যাহ কোন পুরুষকে এমন কোন নারীকে সম্ভোগের অধিকার দেয় যাহার সহিত বাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে শরীরে কোন বাধা নাই

অ এর “নিকা” বা বিবাহ বলি নি এট: $ 1ঝাইবে যাহা!!! একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে দৈ!িলিন সৎ ই: ‘

২ার

বিবাহের উদ্দেশ্য হইবে.. (ক) নৈতিক চরিত্র ও সতীত্বের হেফাজত করা; (খ) পারস্পরিক ভালোবাসা ও প্রান্তি অর্জন করা; (গ) ইজত-আবরুর হেফাজত করা, এবং (ঘ) বংশধারা অব্যাহত রাখা।

বিশ্লেষণ

অশ্লীল ও অবৈধ যৌন সম্পর্ক হইতে নিজেকে সংযত রাখিবার ঠাণ; বিবাহ একটি দুর্ভেদ্য দুর্গরূপ। বিবাহিত নারী-পুরুষকে পবিত্র কুরআনে মুহসানাত (৩ -Jl) ও মুহসিনীন ( 21-01বলা হইয়াছে। ইহ্য হিস

৪৩০

( ১) শব্দমূল হইতে উৎপন্ন, যাহার আভিধানিক অর্থ দুর্গ’। অর্থাৎ বিবাহিত নারী-পুরুষ যেন নিজ নিজ চরিত্র ও সতীত্বের হেফাজতের জন্য বিবাহ নামক দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করিল।

মহান আল্লাহর বাণী :

والمحصنت من النساء .

“নারীদের মধ্যে সধবাগণ (যাহাদের স্বামী বর্তমান ………..) (৪ : ২৪)। অন্যত্র বলা হইয়াছে :

.. “বিবাহকারীগণ, অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনকারীগণ নহে, …”(৪ : ২৪)। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন :

يا معشر الشباب من استطاع منكم الباءة فليتزوج فائه أغض للبصر وأحصن للفرج ومن لم يستطع فعليه بالصوم فانه له وجاء .

“হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে স্ত্রীর ভরণপোষণে সামর্থ্যবান সে যেন বিবাহ করে। কেননা ইহা দৃষ্টি সংযমের ও গোপনাঙ্গের হেফাজতের জন্য সর্বোকৃষ্ট পস্থা। আর যাহার সেই সামর্থ্য নাই সে রোযা রাখিবে, ইহা তাহার জন্য ঢাকনা স্বরূপ।”

পারস্পরিক ভালবাসা ও প্রশান্তি অর্জন : আল্লাহ তা’আলা বলেন

ومن أيته أن خلق لكم من أنفسكم أزواجا لتسكنوا البها

وجعل بينكم مودة ورحمة .

‘আর তাঁহার নিদর্শনসমূহের মধ্যে রহিয়াছে, তিনি তোমাদের মধ্য হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন তোমাদের জুড়ি, যাহাতে তোমরা তাহাদের নিকট প্রশান্তি লাভ করিতে পর এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক প্রেম-ভালবাসা ও দয়ামায়া সৃষ্টি করিয়াছেন” (রূম : ২১)।

ইজ্জত-আবরুর হেফাজত : আল্লাহ তা’আলা বলেন

هن لباس لكم وانتم لباس لهن

“তাহারা (স্ত্রীগণ) তোমাদের ভূষণ এবং তোমরা (স্বামীগণ) তাহাদের ভূষণ” (বাকারা : ১৮৭)।

৪৩১

পোশাক যেমন দেহকে আবৃত করিয়া রাখে তেমনি স্বামী-স্ত্রী তাহাদের দোষত্রুটি ঢাকিয়া রাখে এবং এইভাবে তাহারা একে অপরের মান-সম্মানের হেফাজত করে।

বংশধারা অব্যাহত রাখা : আল্লাহ্ তা’আলা বলেন–

ياها الناس اتقوا ربكم الذي خلقكم من نفس واحدة

وخلق منها زوجها وبث منهما رجالا كثيرا ونساء .

“হে মানব! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন এবং যিনি তাহা হইতে তাহার জুড়ি সৃষ্টি করিয়াছেন এবং তাহাদের দুইজন হইতে বহু নর-নারী বিস্তার করেন” (নিসা : ১)।

فالئن باشروهن وابتغوا ما كتب الله لكم .

“সুতরাং এখন তোমরা তাহাদের (শ্রীদের) সহিত মিলিত হও এবং আত্মাহু তোমাদের জন্য যাহা নির্ধারণ করিয়াছেন তাহা কামনা কর” (বাকারা : ১৮৭)।

ধারা-২৫৫

বিবাহের বয়স সাবান ও জ্ঞান-বুদ্ধির উন্মেষই বিবাহের বয়স।

ব্যাখ্যা। সাবালকত্ব ও সাবালকত্ব’ বা বালেগ’ বলিতে-(ক) কোন পুরুষের স্বপ্নদোষ বা পনর বসর বয়স হওয়া, যাহা আগে সংঘটিত হয়; এবং

(খ) কোন মহিলার ঋতুবতী বা গর্ভধারণক্ষম হওয়া, অথবা পনর বৎসর বয়স হওয়া, যাহা আগে সংঘটিত হয়;

বুঝাইবে।

বিশ্লেষণ

ইসলামী শরীআতে বিবাহের ক্ষেত্রে কোন সুনির্দিষ্ট বয়সসীমার উল্লেখ নাই। এই সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হইয়াছে :

و ابتلوا اليثمي حتى اذا بلغوا النكاح فان أنتم منهم

رشدا فادفعوا اليهم أموالهم .

“তোমরা ইয়াতীমদের (জ্ঞান-বুদ্ধির উন্মেষ) যাচাই করিতে থাক যতক্ষণ না তাহারা বিবাহযোগ্য হয়। তাহাদের মধ্যে জ্ঞান-বুদ্ধির উনোষ লক্ষ্য করিলে তোমরা তাহাদের সম্পদ তাহাদের নিকট প্রত্যর্পণ কর” (নিসা : ৬)।

৪৩২

বালেগ বা বয়প্রাপ্তির লক্ষণ পাঁচটি। ইহার মধ্যে তিনটি নারী-পুরুষ উভয়ের সহিত সমভাবে সংশ্লিষ্ট এবং অবশিষ্ট দুইটি কেবল নারীদের সহিত সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ মাসিক ঋতু (হাদ) হওয়া, গর্ভধারণক্ষম হওয়া। অবশিষ্ট তিনটি হইল পনর বৎসর বয়স, স্বপ্নদোষ ও বিশেষ স্থানে লোম গজানো যাহার স্বপ্নদোষ হয় না তাহার ক্ষেত্রে ইমাম শাফিঈ, আহমাদ ও আওযাঈর মতে বালেগ হওয়ার বয়স ১৫ বৎসর। ইমাম মালেক আবু হানীফা ও অন্যদের মতে যাহার স্বপ্নদোষ হয় না তাহার ক্ষেত্রে ১৭ বৎসর ইমাম আবু হানীফার প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী বালেগ হওয়ার বয়স ছেলেদের ক্ষেত্রে ১৯ বৎসর এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৭ বৎসর (অপর মত অনুযায়ী ১৮ বৎসর) করতবী, আল-জামি লি-আহকামিল কুরআন, বৈরূত ১৯৬৪ খৃ., ৩য় ভলিউম, ৫ম প, ৭ ৩৫.৬)।

বগ হওয়ার বয়স ও নিদর্শন সম্পর্কে হাদীস হইতে যে ইঙ্গিত পাওয়া যায় তাই নিম্নরূপ :

على رسول الله دلي نه ، . .

عن ابن عمر قال عرض

أديب: رود

وسام في جيش و أنا ابن أربع عن

.. . … … ….. – 11,… s la’ a। ১। … … … … …j11111= as JS

ما بين المغار و اندر

‘? মা র : হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন এক যুদ্ধের সময় আমাকে ‘। ক ২াবে চর্তির জন্য রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট উপস্থিত করা হয়। তখন ৭।?

Tছল .jীদ ৭ংসর তিনি আমাকে গ্রহণ করেননি। পরবর্তী বৎসর কোন ‘r, 1 : যার মত বৎসর বয়সে আমাকে পুনরায় মহানবী (সা)-এর নিকট ও ত ক হ। ‘‘হনি মাকে; সেনাবাহিনীতে) গ্রহণ করেন। অধস্তন রাবী

•… 1: বল ম এ হাদীস র ইবন আবদুল আযীয (র)-এর নিকট ঠাঁহার

ঈক) ii }রলে তি বলেন, বালেগ ও নাবালেগের মধ্যে ইহাই ১৫ {ৎসর হইল সীমারেখা :

ইন মাজার বর্ণনায় প্রথমে উহুদ যুদ্ধের ও পরে খন্দক যুদ্ধের কথা উল্লেখ মছ; অর্থাৎ ঘটনাটি এই দুই যুদ্ধকালীন সময়ে।

عن عبد الملك بن عمير قال سمه عطنية الف اظ يول عرضنا على رسول الله صلى الله عليه و سلم يم

৪৩৩

قريظة فكان من أثبت قتل ومن لم ينبت خلى سبيله

فكنت فيمن لم ينسبت

“আবদুল মালিক ইবন উমাইর (র) বলেন, আমি আতিয়্যা আল-কুরাজী (রা)-কে বলিতে শুনিয়াছি, কুরায়জার যুদ্ধশেষে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সামনে উপস্থিত করা হইল। যাহাদের বিশেষ স্থানে নোম গজাইয়াছিল তাহাদের হত্যা করা হয় এবং যাহাদের নোম গজায় নাই তাহাদের হাড়িয়া দেওয়া হয়। তখনও আমার লোম গজায়। নাই বলিয়া আমাকে ছাড়িয়া দেওয়া হয়” (ইন মাজা, হদ্দ, নং ২৫৪১)।

عن عائشة وغيرها من الصحابة من النبي صلى الله عليه وسلم قال رفع القلم على الثلثة الصبي حتى يحتلم أو استمل خمس عشرة سنة.

“আয়েশা (রা)-সহ অপরাপর সাহাবীগণ হইতে বর্ণিত। মহানবী (সা) বলেন, তিন শ্রেণীর মানুষের উপর হইতে কলম (দ) প্রত্যাহার করা হইয়াছে : বালকের উপর হইতে যতক্ষণ না তাহার স্বপ্নদোষ হয় অথবা পনর বৎসর বয়স পূর্ণ হয় …।”

ধারা-২৫৬ বিবাহের যোগ্যতা

প্রত্যেক সুস্থ বুদ্ধি ও সুস্থ জ্ঞানসম্পন্ন বালেগ মুসলিম পুরুষ ও মহিলা অভিভাবকের (19) মধ্যস্থতা ছাড়াই বিবাহ করার যোগ্য।

বিশ্লেষণ

ফকীহুগণ এই ব্যাপারে একমত যে, কোন সুস্থ বুদ্ধির অধিকারী বালেগ পুরুষ নিজের বিবাহ নিজেই করিয়া নেওয়ার অধিকার রাখে। অনুরূপভাবে একজন ছায়্যিবাও (প্রাপ্তবয়স্কা স্বামীহীনা স্ত্রীলোক, তালাকের কারণে হউক বা স্বামী মরিয়া যাওয়ার কারণে) নিজের বিবাহ নিজে করিয়া নেওয়ার অধিকার রাখে।

কিন্তু কোন বাকিরাহ (অবিবাহিত স্ত্রীলোক) সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন ও প্রাপ্তবয়কা হওয়া সত্ত্বেও নিজের বিবাহ নিজেই করিতে পারিবে কি না এই বিষয়ে ফকীহগণের মধ্যে মতভেদ আছে।

ইমাম আবু হানীফা (র) ও সাহিবাইনের (সর্বশেষ) মতানুযায়ী যে কোন প্রাপ্ত বয়স্কা ও সুস্থ বুদ্ধির অধিকারী বাকিরাহ’ অভিভাবকের মধ্যস্থতা ছাড়াই নিজের বিবাহ নিজেই করিয়া নেওয়ার অধিকার রাখে।

২৮–

৪৩৪

সুস্থ বুদ্ধির অধিকারী প্রাপ্তবয়স্কা স্বাধীন নারী-পুরুষের স্বেচ্ছাকৃত বিবাহ শুদ্ধ। হওয়ার জন্য অভিভাবকের উপস্থিতি শর্ত নহে, বরং অভিভাবক ছাড়াই তাহা অনুষ্ঠিত হইতে পারে। এই মতের সমর্থনে কুরআন পাকের নিম্নোক্ত আয়াত পেশ করা হয় :

وامرأة مؤمنة ان وهبت نفسها للبى ان أراد البي آن

. :.. “এবং কোন মু’মিন স্ত্রীলোক নিজেকে নবীর নিকট অৰ্পণ করিলে এবং নবী তাহাকে বিবাহ করিতে চাহিলে তাহা বৈধ” (সূরা আহযাব : ৫০)।

ইমাম আবু হানীফা (র) বলেন, কোন মহিলার নিজের বাক্যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার অনুকূলে উপরোক্ত আয়াত একটি অকাট্য দলীল। কারণ ‘হেবা (৯) শব্দের মাধ্যমেও বিবাহ অনুষ্ঠিত হইতে পারে।

فان طلقها فلا تحل له من بعد حتی تنکح زوجا غيره .

“অতএব (স্বামী) যদি তাহাকে (স্ত্রীকে তালাক দেয় তবে সে (স্ত্রী) তাহার জন্য বৈধ হইবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে অন্য স্বামী গ্রহণ না করিবে” (সূরা বাকারা : ২৩০)।

فلا جناح عليكم في مافعلن في أنفسهن من معروف .

“তবে বিধিমত তাহারা (স্ত্রী) নিজেদের জন্য যাহা করিবে তাহাতে তোমাদের কোন অপরাধ নাই” (সূরা বাকারা : ২৪০)।

উপরোক্ত আয়া দ্বয় হইতে ইমাম আবু হানীফা (র) দুইভাবে প্রমাণ গ্রহণ করিয়াছেন। (এক) কোন স্ত্রীলোক যে নিজের বিবাহ নিজেই করিতে পারে তাহার অনুকূলে উপরোক্ত আয়াতে সুস্পষ্ট সমর্থন রহিয়াছে। (দুই) কোন মহিলার নিজ উদ্যোগে দ্বিতীয় স্বামীর সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াটা তাহার পূর্বতন স্বামীর সহিত পুনর্বিবাহের অবৈধতা দূরীভূত করিয়া দেয়। ইহাতে প্রমাণিত হয় যে, দ্বিতীয় স্বামীর সহিত নারীর এই বিবাহ বলবৎ হইবে। অনন্তর উভয় আয়াতেই (1) ও

২) স্ত্রীবাচক ক্রিয়াপদ ব্যবহৃত হইয়াছে যাহার কর্তা স্বয়ং স্ত্রীলোক।

فان طلقها فلا جناح عليهما أن يتراجعا .

“অতএব সে (দ্বিতীয় স্বামী) যদি তাহাকে তালাক দেয় তবে তাহাদের (স্ত্রী ও প্রথম স্বামীর মধ্যে) পুনর্বিবাহে কাহারও কোন অপরাধ হইবে না” (সূরা বাকারা : ২৩০)।

উপরোক্ত আয়াত হইতেও অভিভাবক ছাড়া কোন নারী-পুরুষের পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সমর্থন পাওয়া যায়।

৪৩৫

৪৩৫

واذا طلقتم النساء فبلغن أجلهن فلا تغضون أن

ينكحن أزواجهن اذا ترضوا بينهم بالمعروف .

“তোমরা যখন স্ত্রীদিগকে তালাক দাও, অতঃপর তাহারা নিজেদের ইদ্দতকাল পূর্ণ করে, তাহারা যদি বিধিমত পরস্পর সম্মত হয়, তবে স্ত্রীগণ নিজেদের স্বামীদের বিবাহ করিতে চাহিলে তোমরা তাহাদের বাধা দিও না” (সূরা বাকারা : ২৩২)।

ইমাম আবু হানীফা (র) উপরোক্ত আয়াত হইতেও দুই ধরনের দলীল গ্রহণ করিয়াছেন। (এক) অত্র আয়াতে বিবাহের কাজটি স্ত্রীলোকের সহিত সম্পর্কিত করা হইয়াছে। কারণ ২) স্ত্রীবাচক ক্রিয়াপদের কর্তা হইল নারী। অতএব অভিভাবক ছাড়াই নারীর কথায় বিবাহ অনুষ্ঠান বৈধ হওয়ার প্রমাণ উক্ত আয়াত হইতে পাওয়া যায়। (দুই) বিবাহে উভয় পক্ষ সম্মত হইলে নারীদের স্বেচ্ছায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইতে বাধা প্রদান করিতে উক্ত আয়াতে অভিভাবকগণকে নিষেধ করা হইয়াছে।

হাদীসসমূহের প্রমাণ ও অভিভাবক ছাড়াই বিবাহ অনুষ্ঠান (cKJ as) বৈধ হওয়ার সপক্ষে হাদীস বিদ্যমান। যেমন :

عن ابن عباس أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال

ليس لأول مع الثيب أمر .

“ইবন আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (স) বলেন : “সয়্যিবার উপর অভিভাবকের কোন হুকুম চলে না।”

مں

عن عبد الله بن عباس أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال الأيم أحق بنفسها من وليها والبكر تستاذن في نفسها و اذنها صماتها .

“আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন : আয়্যিম তাহার পুনর্বিবাহের ব্যাপারে নিজ অভিভাবকের তুলনায় অধিক কর্তৃত্বসম্পন্ন। আর কুমারীর বিবাহের ব্যাপারে তাহার অনুমতি গ্রহণ করিতে হইবে এবং তাহার নীরবতাই তাহার সম্মতি।”

عن خنساء بنت خذام أن أباها زوجها وهى ثيبا فكرهت

ذلك فاتت رسول الله صلى الله عليه وسلم فر؛ نگاكها .

৪৩৬

“খ্যিাম কন্যা খিনসা (রা) হইতে বর্ণিত। তাঁহার পিতা তাঁহাকে বিবাহ দিলেন, অথচ তিনি ছিলেন ছায়্যিবা (বিধবা)। তিনি এই বিবাহ অপছন্দ করিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট আসিলেন। মহানবী (সা) তাঁহার এই বিবাহ ভাঙ্গিয়া দিলেন।”

عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال

لا تنك الأم حتى تستامر ولا تنكح البكر حتى تستاذن .

“আবু হুরায়রা (রা) হইতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন : “আয়্যিমকে বিবাহ দেওয়া যাইবে না তাহার স্পষ্ট নির্দেশ ব্যতীত। প্রাপ্তবয়স্কা কুমারীকেও বিবাহ দেওয়া যাইবে না তাহার অনুমতি ব্যতীত।”

عن ابن عباس أن جارية بغرا أتت النبي صلى الله عليه وسلم فذكرت أن أباها توجها وهي كارهة فخرها الثبي صلى الله عليه وسلم .

“ইবন আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত। প্রাপ্তবয়স্কা এক কুমারী মেয়ে মহানবী (সা)-এর নিকট উপস্থিত হইয়া জানাইল যে, তাহার পিতা তাহার অমতে তাহাকে বিবাহ দিয়াছে। মহানবী (সা) তাহাকে বিবাহ ঠিক রাখা বা না রাখার এখতিয়ার দিলেন (আবু দাউদ)।

عن أبي سلمة بن عبد الرحمن قال جاءت امرأة الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقالت ان ابئ أنكحني رجلا وانا كاره؛ فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم

بيها لا نكاح لك اذهبي فانكح ما شنت .

“আবু সালামা ইবন আবদুর রহমান (রা) বলেন, এক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট উপস্থিত হইয়া বলেন, আমার পিতা এমন এক ব্যক্তির সহিত আমার বিবাহ দিয়াছেন যাহাকে আমি পছন্দ করি না। রাসূলুল্লাহ (সা) তাহার পিতাকে বলিলেন : তাহাকে বিবাহ দেওয়ার অধিকার তোমার নাই। তিনি মহিলাকে বলিলেন : যাও, তুমি যাহাকে পছন্দ কর তাহাকে বিবাহ কর” (নাসাবুর রাহু, ৩, ১৮২)

আয়েশা (রা) বলেন, “এক যুবতী মেয়ে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট উপস্থিত হইয়া বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা আমাকে তাহার ভাইয়ের ছেলের সহিত বিবাহ দিয়াছেন এই উদ্দেশ্যে যে, তিনি আমার সাহায্যে তাহাকে দুর্দশামুক্ত করিবেন। রাসূলুল্লাহ (সা) এই বিবাহ ঠিক রাখা বা না রাখার কর্তৃত্ব তাহাকে দান

8७१

করিলেন। অতঃপর যুবতী বলিল, আমার পিতা যাহা কিছু করিয়াছেন আমি তাহা ঠিক রাখিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল, মেয়েরা জানুক তাহাদের উপর তাহাদের পিতাহাদের কোন কর্তৃত্ব নাই” (নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ)।

ধারা-২৫৭

ঈজাব ও কবুল (Js-i, o l) বিবাহের পর নারী ও পুরুষের ঈজাব (প্রস্তাব) ও কবুলের (সন্মতি) মাধ্যমে বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়।

বিশ্লেষণ

বিবাহ অনুষ্ঠান ঈজাব ও কবুলের উপর নির্ভরশীল। বিবাহের প্রস্তাব দানকারীর বক্তব্যকে ঈজাব এবং তাহা অনুমোদনকারীর বক্তব্যকে কবূল (সম্মতি) বলা হয়। ইহা বিবাহের সর্বপ্রধান ও মৌলিক শর্ত। ঈজাব অথবা কবুল যে কোন পক্ষ হইতে হইতে পারে।

ধারা-২৫৮ মৌখিক অথবা লিখিত আকাকে ঈজাব-কবুল ইজাব-কবুল মৌখিক ধীকারোক্তির মাধ্যমে অথবা লিখিত আকারে অনুষ্ঠিত হইতে পারে। তবে পক্ষদ্বয় সশরীরে বিবাহ মজলিসে উপস্থিত থাকিলে ইজাব-কবুল বাচনিক হওয়া অপরিহার্য। অবশ্য কোন ওজর থাকিলে স্বতন্ত্র কথা।

বিশ্লেষণ

কোন এক পক্ষ যদি সশরীরে বিবাহের মজলিসে উপস্থিত না থাকে কিন্তু তাহাদের প্রস্তাব লিখিত আকারে ও নির্ভরযোগ্য পন্থায় উত্থাপিত থাকে এবং উহা দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে সেখানে পাঠ করা হয় এবং অপর পক্ষ উহার জওয়াবে নিজের সম্মতি প্রকাশ করে তবে বিবাহ অনুষ্ঠিত হইয়া যাইবে।

অতএব কোন মহিলার নিকট পত্র মারফত বিবাহের প্রস্তাব পাঠানো হইলে এবং দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে উহা পাঠ করিয়া নিজের সম্মতি ব্যক্ত করিলে বিবাহ অনুষ্ঠিত হইবে।

ধারা-২৫৯

সরাসরি অংশগ্রহণ অথবা প্রতিনিধি নিয়োগ ইজাব-কবুল পক্ষদ্বয়ের সরাসরি অংশগ্রহণ অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হইতে পারে। তবে প্রতিনিধিকে অবশ্যই বালেগ ও সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন হইতে হইবে।

৪৩৮

বিশ্লেষণ

বিবাহের ঈজাব-কবুল প্রতিনিধির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হইতে পারে। তবে যদি কোন কর্তৃত্বহীন ব্যক্তি কাহারো বিবাহ দেয় অথবা প্রতিনিধি নিয়োগকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতা অতিক্রম করিয়া ঈজাব-কবুল করে তাহা হইলে এই ধরনের বিবাহ প্রতিনিধি নিয়োগকর্তার অনুমতির উপর নির্ভরশীল। তিনি সম্মতি প্রকাশ করিলে উহা কার্যকর হইবে, অন্যথায় নহে।

প্রতিনিধিকে অবশ্যই সুস্থবুদ্ধির অধিকারী হইতে হইবে। কিন্তু তাহার প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া শর্ত নয়। অতএব সুস্থ বুদ্ধির অধিকারী (ভালো-মন্দ ও লাভ-ক্ষতির মধ্যে পার্থক্য করিতে সক্ষম) বালক বিবাহের ক্ষেত্রে প্রতিনিধি হইতে পারে।”

ধারা-২৬০

ইজাব-কবুলের শব্দাবলী ইজাব-কবৃন্সের শব্দাবলী এতটা সুস্পষ্ট অর্থাপক হইবে যাহার সাহায্যে তৎক্ষণাৎ পক্ষদ্বয়ের মধ্যে আইনত বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়; যেমন

সজাব : (ক) আমি আমার কন্যাকে তোমার নিকট বিবাহ দিলাম। (খ) আমি আমার কন্যাকে তোমার নিকট অৰ্পণ করিলাম। (গ) আমি আমার কন্যাকে তোমার নিকট হেবা করিলাম।

(ঘ) বালেগ পাত্র-পাত্রী কোন একজন অপরজনকে বলিল, আমি তোমাকে বিবাহের প্রস্তাব দিতেছি।

সম্মতি : (ক) আমি কবুল করিলাম। (খ) আমি তোমাকে বিবাহ করিলাম।

বিশ্লেষণ

কোনরূপ গ্রহণযোগ্য অসুবিধার কারণে লিখিত আকারে বা ইশারা-ইঙ্গিতেও ঈজাব-কবুল অনুষ্ঠিত হইতে পারে, যাহার দ্বারা পক্ষদ্বয় পরস্পরের উদ্দেশা সহজে ও সুস্পষ্টভাবে বুঝিতে পারে। যাহা হউক ইজাব-কবুলের জন্য এমন বাক্য ব্যবহার করিতে হইবে যাহা শব্দগত, অর্থগত ও ঐতিহ্যগতভাবে বিবাহেয় (মিকা) প্রতি ইঙ্গিত করে।

কোন এক পক্ষ বা উভয় পক্ষ মূক অথবা বধির হইলে ইশারা-ইঙ্গিতে বিবাহ অনুষ্ঠিত হইতে পারে। তবে এই ইঙ্গিত এতটা সুস্পষ্ট হইবে যাহাতে উভয় পক্ষ বুঝিতে পারে যে, তাহাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হইতেছে। এই ক্ষেত্রে লিখিত আকারে ঈজাব-ককূল হইলেই অধিক উত্তম।

৪৩৯

ধারা-২৬১ প্রস্তাব ও সতিজ্ঞাপক বাক্যের ক্রিয়াপদ জাব-

কালের জন্য ব্যবহৃত উভয় পক্ষের বক্তব্যের ক্রিয়াপদ হয় অতীত কাল আপ হইবে অথবা একটি অতীত কাল জাপক এবং অপরটি বর্তমান কালভাপক অথবা একটি অনুজ্ঞাসূচক () এবং অপরটি অতীত কাল জ্ঞাপক হইবে। ভবিষ্যৎ কাল জাপক শব্দের দ্বারা বিবাহ অনুষ্ঠান বুঝায় না।

ধারা-২৬২ উভয় পক্ষের বক্তব্যের সামঞ্জস্যশীলতা ইজাব-কবুলের ক্ষেত্রে এক পক্ষের বক্তব্য অপর পক্ষের বক্তব্যের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ হইতে হইবে।

বিশ্লেষণ

অর্থাৎ প্রস্তাবক ও অনুমোদকের বক্তব্যের মধ্যে কোনরূপ ফাঁক বা গোজামিল থাকিবে না। যেমন প্রস্তাবক বলিল, আমি দশ হাজার টাকা মুহর ধার্যপূর্বক আমার নিজেকে তোমার নিকট বিবাহ দিলাম। সমর্থক বলিল, আমি ককূল করিলাম, কিন্তু মুহরের প্রস্তাব কবুল করিলাম না। এই ক্ষেত্রে বিবাহ অনুষ্ঠিত হইবে না।

ধারা-২৬৩

বিবাহ অনুষ্ঠান (আৰুদ=ic) বিবাহ অনুষ্ঠান (1) বৈধ হওয়ার জন্য পাত্র ও পাত্রীকে অথবা উভয়ের প্রতিনিধিগণকে এবং সাক্ষীদ্বয়কে বালেগ ও সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন হইতে হইবে।

বিশ্লেষণ

বিবাহের যোগ্যতা সাবালকত্বের দ্বারাই সৃষ্টি হয়। আকদ অনুষ্ঠানের সময় দুইজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা সাক্ষীর উপস্থিতি অপরিহার্য। উপরন্তু আকদ অনুষ্ঠান একই মজলিসে হইতে হইবে।

ধারা-২৬৪

খ্রীর সংখ্যা একজন মুসলিম পুরুষ একই সময় সর্বাধিক চারজন স্ত্রী গ্রহণ করিতে পারে, তবে ন্যায়নীতি সম্মনের আশঙ্কা থাকিলে একজন স্ত্রীই গ্রহণ করা উচিত।

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তির একজন স্ত্রী নিয়াই সস্তুষ্ট থাকা উচিত। তবে তাহার একাধিক স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি আছে। পবিত্র কুরআনে বলা হইয়াছে?

৪৪)

فانكحوا ما طاب لكم من النساء مثنى وثلث وربع فان

خفتم ألا تعدلوا فواحده .

.

“অতএব তোমরা বিবাহ করিবে নারীদের মধ্যে যাহাদেরকে তোমাদের ভাল লাগে—-দুই, তিন অথবা চারজন। আর যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, সুবিচার করিতে পারিবে না তবে একজনকে” (সূরা নিসা : ৩)।

কিন্তু সুবিচার ও ন্যায়নীতি লংঘিত হওয়ার আশঙ্কা থাকিলে একজন স্ত্রী নিয়াই সন্তুষ্ট থাকিবে। এখানে সুবিচার ও ন্যায়নীতি বলিতে ভালোবাসা, হৃদ্যতা, সুসম্পর্ক, সহবাস, (স্ত্রীদের নিকট অবস্থানের) পালা বণ্টন ইত্যাদি বুঝানো হইয়াছে।

ধারা-২৬৫

বিবাহের শ্রেণীবিভাগ বৈধতার নিরিখে বিবাহ তিন প্রকার (ক) সহীহ বা বৈধ; (খ) ফাসিদ বা অনিয়মিত; এবং (গ) বাতিল বা অবৈধ।

ধারা-২৬৬

সহীহ বিবাহ একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে বিবাহ সহীহ হইবে, যদি বিবাহের

সময়

(ক) উভয়ে বালেগ হয়; (খ) উভয়ে জ্ঞানবুদ্ধি সম্পন্ন হয়; (গ) উভয়ের বেগতি থাকে;

(ঘ) দুইজন বালেগ ও বুদ্ধিমান মুসলিম পুরুষ অথবা এক বালেগ ও বুদ্ধিমান মুসলিম পুরুষ এবং দুইজন বালেগা ও বুদ্ধিমতী মুসলিম নারী সাক্ষী উপস্থিত থাকে; এবং

(খ) উভয়ে পরস্পরের মাহরাম না হয়।

ধারা-২৬৭

সহীহ বিবাহের ফলাফল (১) একটি সহীহ বিবাহের ফলে নিরূপ অধিকার ও কর্তব্যের জব হয় (ক) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক অধিকার ও কর্তব্য; . (খ) স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার এবং স্বামীর প্রতি মীর কর্তব্য;

৪৪১

(গ) স্বামীর উপর প্রীর অধিকার এবং স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য; (ঘ) স্বামী এবং স্ত্রীর কতিপয় আত্মীয়-স্বজনের ক্ষেত্রে মুহরিমাতের অবস্থা। (২) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক অধিকার ও কর্তব্য নিম্নরূপ — (ক) উভয়ের মধ্যে যৌনমিলন; (খ) উভয়ের বৈধ সন্তান জন্মদান; (গ) উভয়ের মধ্যে উত্তরাধিকারিত্ব; (ঘ) উভয়ের মধ্যে সম্পাদিত শরীআতসম্মত চুক্তি পালন। (৩) স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার এবং স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য নিম্নরূপ

(ক) যে কোন যুক্তিসঙ্গত সময়ে ও স্থানে স্ত্রীর সহিত স্বামীর সহবাসের অধিকার এবং স্বামী চাহিলে, শারীরিক বা শালীনতা বা ধারা (২৭৪) (২)-এ উল্লিখিত ক্ষেত্রে ব্যতীত, শ্রী কর্তৃক তাহার সহবাসের ডাকে সাড়া প্রদান;

(খ) ৰী কর্তৃক তাহার সতীত্ব সংরক্ষণ; (গ) স্বামীর যে কোন যুক্তিসঙ্গত আদেশ পালন; (খ) স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর চলাফেরার উপর যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ আরোপণ; (ঙ) যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যতীত স্বামীর সহিত স্ত্রীর একত্রে বসবাস

(চ) তালাক বা স্বামীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে স্ত্রী কর্তৃক ধারা (৩৭৪) ও (৩৭৫) মোতাবেক ইদ্দত পালন;

(৪) স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার এবং স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য নিম্নরূপ (ক) ৰী কর্তৃক মোহরানা প্রাপ্তি; (খ) শ্ৰী কর্তৃক তরুণপোষণ প্রাপ্তি (গ) ধারা (৩৪৫) মোতাবেক স্ত্রী কর্তৃক তালাক প্রদান; (ঘ) স্ত্রীর স্বীয় আত্মীয়-স্বজনের সহিত দেখা-সাক্ষাৎ

(ঙ) স্বামীর সহিত একত্রে বসবাসের প্রয়োজনে স্ত্রীর জন্য পৃথক কক্ষ বা বাসগৃহের ব্যবস্থা;

(চ) একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে স্বামী কর্তৃক প্রত্যেক স্ত্রীর প্রতি শালীন এবং মার্জিত ব্যবহার।

ধারা-২৬৮

সহীহ বিবাহ ফাসিদ বা বাতিল হওয়া (১) নিম্নলিখিত কারণে একটি সহীহ বিবাহ বাতিল হইয়া যাইবে। (ক) দুধপানজনিত সম্পর্ক ও

উদারহণ ও স্ত্রী স্বামীর শিশু ভাই বা বােনকে নিজ স্তনের দুধ পান করাইলে বিবাহ বাতিল হইয়া যাইবে।

৪৪২

(খ) উভয়ের আচরণ।

উদাহরণঃ মীর অপর পক্ষের বালেগ মনকে যৌন আবেগসহ চুমা দিলে বিবাহ বাতিল হইয়া যাইবে।

(গ) নিকটাত্মীয়দের মধ্যে পরবর্তীতে কোন বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন।

উদাহরণ : পিতা পুত্রের শালীকে বিবাহ করিলে বিবাহ বাতিল হইয়া যাইবে। . (২) একটি বৈধ বিবাহ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে কোনও একজনের ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করার কারণে ফাসিদ হইয়া যাইবে।

ধারা-২৬৯

ফাসিদ বা অনিয়মিত বিবাহ (১) ধারা (২৬৬) (ক), (খ), (গ) ও (খ)-এ উল্লিখিত কোন শর্ত অপূর্ণ রাখিয়া কোন বিবাহ অনুষ্ঠিত হইলে বিবাহ ফাসিদ হইবে।

(২) উপধারা (১)-এ যাহাই থাকুক না কেন, নিম্নলিখিত ক্ষেত্রেও একটি বিবাহ ফাসিদ হইবে

(ক) স্ত্রীর জীবদ্দশায় তাহার সহােদরাকে বিবাহ করিলে; (খ) আহলে কিতাব মহিলা ব্যতীত কোন অমুসলিমকে বিবাহ করিলে; (গ) ইদ্দত পালনরত অবস্থায় নারীর বিবাহ হইলে; (ঘ) চার স্ত্রীর বর্তমানে পুনরায় বিবাহ করিলে; (ঙ) খ্রীর ইদ্দত পালনকালে তাহার সহােদরাকে বিবাহ করিলে;

(চ) এমন দুই নারীকে একই সঙ্গে বিবাহধীনে রাখিলে যাহারা নারী ও পুরুষ হইলে তাহাদের মধ্যে বিবাহ বাতিল হইত।

উদাহরণ : ফুফু ও ভাইঝিকে অথবা পালা ও বােনঝিকে একত্রে একই সঙ্গে বিবাহধীনে রাখা।

ধারা-২৭০

ফাসিদ বিবাহের ফলাফল (১) কোন বিবাহ ফাসিদ বলিয়া প্রমাণিত হইলে তৎক্ষণাৎ স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পৃথক হইয়া যাইবে; এবং তাহারা স্বেচ্ছায় পৃথক না হইলে আদালত তাহাদিগকে পৃথক করিয়া দিবে এবং উচিত বিবেচনা করিলে তাহাদেরকে যথােপযুক্ত শাস্তিও প্রদান করিতে পারিবে।

(২) কোন বিবাহ ফাসিদ হইলে এবং উহা ফাসিদ প্রমাণিত হওয়ার পূর্বে বা পরে স্বামী-স্ত্রী একত্রে বসবাস করিলে

(ক) স্ত্রীর মোহরানা প্রাপ্য হইবে; (খ) স্বামীকে তাহাদের সন্তানের ভরণপোষণ করিতে হইবে;

৪৪৩

(গ) খ্রীকে ইদ্দত পালন করিতে হইবে; (ঘ) তাহাদের সন্তান বৈধ গণ্য হইবে; (৩) উভয়ের আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে মুহাঝিমাতের সম্পর্ক সৃষ্টি হইবে; (৩) কোন বিবাহ ফাসিদ হইলে (ক) স্বামী-লী পরস্পরের ওয়ারিস হইবে না; (খ) জী খােরপোষ পাইবে না।

তবে শর্ত থাকে যে, শুধু সাক্ষীর অভাবে বিবাহ ফাসিদ হইলে স্ত্রী খােয়পোষ পাইবে;

(৪) স্বামী-স্ত্রী মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত একটি ফাসি বিবাহের আইনগত কোন বৈধতা থাকিবে না।

ধারা-২৭১

ফাসিদ বিবাহ সহীহ বিবাহে রূপান্তর একটি কালিদ বিবাহ নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে সহীহ, বিবাহে রূপান্তরিত হইবে—

(ক) সাহীন বিবাহের ক্ষেত্রে, বিবাহ-পরবর্তী কালে স্বামী-স্ত্রী তাহাদের বিবাহের কথা সুম সানীর সামনে প্রকাশ করিলে অথবা তাহারা স্বামী-স্ত্রী হিসাবে বসবাস করিলে;

(খ) বালেগ ও বালেগার বেসম্মতিহীন বিবাহের ক্ষেত্রে, বিবাহ-পরবর্তী কালে তাহারা স্বেচ্ছায় সম্মতি প্রদান করিলে;

(গ) নাবালেগদের অভিভাবকগণের বেলাসমতিহীন বিবাহের ক্ষেত্রে, বিবাহ পরবর্তী কালে অভিভাবকগণ বেজায় সম্মতি প্রদান করিলে অথবা সাবালকত্ব প্রাপ্তির পর পাত্র-পাত্রী বেদায় সম্মতি প্রদান করিলে;

(খ) অননুমোদিত অভিভাবক ব্যক্তি অথবা অভিঙবাকের এখতিয়ার বহির্ভূত ক্ষমতা প্রয়োগকৃত ব্যক্তির সম্মতিক্রমে অনুষ্ঠিত বিবাহের ক্ষেত্রে, যথাযথ অভিভাবক বা কর্তৃত্ব সম্পন্ন ব্যক্তি বিবাহ-পরবর্তী কালে সমতি প্রদান করিলে;

(৩) ধর্মের পার্থক্যের ক্ষেত্রে, পাত্র বা পাত্রী যে ধর্মাবলম্বী হইলে বিবাহ সহীহ হইত সে সেই ধর্ম গ্রহণ করিলে;

(চ) চার-এর অধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে, চার-এর অধিক স্ত্রীকে তালাক প্রদান করা হইলে অথবা তাহার মৃত্যু হইলে;

(ছ) বেহুঁশ বা মাতালের ক্ষেত্রে, তাহার হুঁশ ফিরিয়া আসার পর স্বেচ্ছায় সম্মতি প্রদান করা হইলে;

(জ) ধারা (২৬৯) (২) (চ)-এ উল্লিখিত অবস্থার ক্ষেত্রে, যে নারীকে বিবাহ করার কারণে বিবাহ ফাসিদ হইয়াছে, সেই নারীকে তালাক প্রদান করা হইলে।

৪৪৪

ধারা-২৭২

বাতিল বিবাহ (১) যদি ধারা (২৬৬)-এর বিধান লংঘন করিয়া কোন বিবাহ অনুষ্ঠিত হয় এবং তাহা সংশোধনযোগ্য না হয় তাহা হইলে উহা বাতিল বিবাহ’ হইবে।

(২) উপধারা (১)-এর বিধানের কোন হানি না করিয়া, নিলিখিত ক্ষেত্রেও বিবাহ বাতিল হইবে

(ক) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নিষিদ্ধ রক্ত সম্পর্ক বিদ্যমান থাকিলে;

(খ) উভয়ের মধ্যে নিষিদ্ধ বৈবাহিক সম্পর্ক ( Lw৩) বিদ্যমান থাকিলে;

(গ) উভয়ের মধ্যে দুধপানের সম্পর্ক বিদ্যমান থাকিলে; (ঘ) স্ত্রীর স্বামী বিদ্যমান থাকিলে;

(ঙ) তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ধারা (৩৫১)-এর বিধান লঙ্গন করিয়া বিবাহ করিলে;

(চ) স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন মুশরিক হইলে? তবে শর্ত থাকে যে, আহলে কিতাব স্ত্রীর ক্ষেত্রে ইহা প্রযোজ্য নহে;

(ছ) যেনাকারী পুরুষের সহিত যেনাকারী নারীর মাতা বা তদুর্বের কোন মহিলা অথবা কন্যা বা তদনিমের কোন মহিলার বিবাহ হইলে

(জ) যেনাকারী নারীর সহিত যেনাকারী পুরুষের পিতা বা তদুরে কোন পুরুষ অথবা পুত্র বা তদনিমের কোন পুরুষের বিবাহ হইলে;

(৩) কোন বিবাহ বাতিল বলিয়া প্রমাণিত হইলে তৎক্ষণাৎ স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পৃথক হইয়া যাইবে; এবং তাহারা বেলায় পৃথক না হইলে আদালত তাহাদেরকে পৃথক করিয়া দিবে এবং বিবেচনা করিলে তাহাদেরকে যথােপযুক্ত শাস্তি প্রদান করিতে পারিবে।

(৪) বাতিল বিবাহের ফলাফ-(ক) বাতিল বিবাহ কোন অবস্থাতেই সংশোধনযোগ্য হইবে না।

(খ) বাতিল বিবাহের কোন আইনগত অস্তিত্ব থাকিবে না, যেন ইহা কোন সময়ই অনুষ্ঠিত হয় নাই?

তবে শর্ত থাকে যে, যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়ে সদ্বিশ্বাসে তাহাদের বিবাহের মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতা নাই বিবেচনাক্রমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইয়া থাকে এবং পরবর্তীতে উক্তরূপ প্রতিবন্ধকতার বিষয় প্রকাশিত হইয়া পড়ে তাহা হইলে বিবাহটি বাতিল হইলেও তাহাদের সন্তান বৈধ বলিয়া গণ্য হইবে।

৪৪৫

ধারা-২৭৩

সহীহ বিবাহের পদ্ধতি (১) নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে একজন বুন্ধিমান বালেগ পুরুষ এবং একজন বুদ্ধিমতী বালেগা নারীর মধ্যে সহীহ বিবাহ সম্পন্ন হইবে

(ক) উভয়ের মধ্যে একজন বিবাহের জন্য বেসায় প্রস্তাব প্রদান (CLI) করিবে এবং অপরজন স্বেচ্ছায় সম্মতি প্রদান (

Ji) করিবে; (খ) উক্ত প্রস্তাব ও সম্মতি শরীআত মোতাবেক দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে ও শ্রুতিতে প্রদান করিতে হইবে;

(২) পায়ের মধ্যে কেহ নাবালেগ বা নির্বোধ হইলে তাহার পক্ষে তাহার অভিভাবকের প্রস্তাব বা সম্মতি প্রদানের মাধ্যমে তাহাদের মধ্যে সহীহ বিবাহ সম্পন্ন হইবে;

(৩) প্রয়োজনবােধে কোন পক্ষ, অথবা ক্ষেত্রবিশেষে তাহার অভিভাবক, কর্তৃক নিযুক্ত বালেগ ও বুদ্ধিমান প্রতিনিধির মাধ্যমেও উক্তরূপ প্রস্তাব বা সমতি প্রদান করা যাইবে :

তবে শর্ত থাকে যে, উক্ত প্রতিনিধি তাহার উপর অর্পিত ক্ষমতার বাহিরে কিছু করিতে পারিবে না।

(৪) পায়ের মধ্যে কেহ বােবা হইলে সে ইশারা-ইঙ্গিতে তাহার প্রস্তাব বা সম্মতি প্রদান করিতে পারিবে।

(৫) পায়ের মধ্যে কে বিবাহ মজলিসে উপস্থিত থাকিতে না পারিলে সে লিখিতভাবে তাহার প্রস্তাব বা সম্মতি প্রদান করিতে পারিবে।

(৬) পক্ষদ্বয়ের উভয়ে বিবাহ মজলিসে উপস্থিত থাকিলে তাহাদেরকে একই মজলিসে মৌখিকভাবে প্রস্তাব বা সতি প্রদান করিতে হইবে।

(৭) প্রস্তাব ও সম্মতির ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের কথার মধ্যে সামঞ্জস্য থাকিতে হইবে।

ধারা-২৭৪ স্বামী-লীর পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিকার (১) স্বামী যদি স্ত্রীর প্রতি তাহার দায়িত্ব পালন করে, কিন্তু স্ত্রী যদি স্বামীর প্রতি তাহার দায়িত্ব পালন না করে, তাহা হইলে স্বামী

(ক) তাহাকে তালাক দিতে পারিবে;

(খ) স্বামীর বিনা অনুমতিতে স্ত্রীর অন্যত্র পৃথকভাবে বসবাসের ক্ষেত্রে তাহাকে দাম্পত্য সম্পর্কে ফিরাইয়া আনিবার অন্য মামলা দায়ের করিতে পারিবে;

४४७

(গ) তাহার খােরপোষ বন্ধ করিয়া দিতে পারিবে;

(২) স্ত্রী যদি স্বামীর প্রতি তাহার দায়িত্ব পালন করে, কিন্তু স্বামী যদি স্ত্রীর প্রতি তাহার দায়িত্ব পালন না করে তাহা হইলে স্ত্রী

(ক) ধারা (৩৪৫)-এর অধীনে তালাকে তাফবাদ যারা বিবাহ ভঙ্গ করিতে পারিবে;

(খ) বিবাহ ভঙ্গের মামলা দায়ের করিতে পারিবে;

(গ) খােরপোষ না দেওয়ার ক্ষেত্রে, খােরপোষ আদায়ের জন্য মামলা দায়ের করিতে পারিবে;

(ঘ) প্রথম সহবাসের পূর্বে দাবিকৃত মুহরে মুআজাদ (স ) অপরিশোধিত থাকার ক্ষেত্রে বা তাহার প্রতি স্বামীর নির্যাতন বা তাহার খােরপোষ প্রদানে গাফলতির ক্ষেত্রে, স্বামীর সতি সহবাসে অস্বীকৃতি জানাইতে পারিবে।

ধারা-২৭৫

যেসব নারীকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ ‘মাহরাম’ বলিতে এমন নারীকে বুঝাইবে যাহার সহিত কোন পুরুষের বিবাহ নিষিদ্ধ (হারাম); এবং ইহাতে কোন পুরুষের নিম্নলিখিত আত্মীয়গণও অন্তর্ভুক্ত হইবে—

(ক) রক্ত সম্পর্কের দরুন যে কোন মুসলিম পুরুষের জন্য নিম্নলিখিত মহিলাগণকে বিবাহ করা নিষেধ।

(১) তাহার মা, দাদী-নানী (আপন ও সৎ) ও তদুর্ধ সম্পর্কে মহিলা; (২) তাহার কন্যা, নাতনী ও তদনি সম্পর্কের মহিলা; (৩) তাহার সহােদরা, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয় ভগ্নীগণ;

(৪) তাহার (আপন ও সৎ) ফুফু ও (আপন ও সৎ) খালা ও এবং তদুধ। সম্পর্কের হিলা;

(৫) তাহার ভ্রাতুস্পুত্রী ও ভাগী এবং তাহাদের কন্যা, নাতনী ইত্যাদি ক্রমে কোন মহিল।

(খ) বৈবাহিক সম্পর্কের দরুন নিম্নোক্ত মহিলাগণকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ (১) স্ত্রীর মা, দাদী, নানী ও তদুর্ধ সম্পর্কের মহিলা; (২) স্ত্রীর কন্যা, পৌত্রী ও তদনিক্স সম্পর্কের মহিলা; (৩) স্ত্রীর পিতার স্ত্রী বা দাদার স্ত্রী যত উধ্বগামী হউক; (৪) স্ত্রীর পুত্রের স্ত্রী, পৌত্রের ও দৌহিত্রের স্ত্রী যত নিম্নগামী হউক; (৫) স্ত্রী বিবাহধীনে থাকা অবস্থায় তাহার বােন।

৪৪৭

(গ) সম্পর্কের আত্মীয়দের অনুরূপ দুধপান সম্পর্কীয় আত্মীয়দেরকেও বিবাহ করা হারাম।

ব্যাখ্যা তানিমঃ কোন ব্যক্তির ‘তদনি’ বলিতে সে ‘পুরুষ’ হইলে সোজা লাইনে তাহার অধস্তন পুরুষগণকে এবং নারী’ হইলে সোজা লাইনে তাহার অধস্তন নারীগণকে বুঝাইবে।

তদু ও কোন ব্যক্তির ‘তদুগ্ধ’ বলিতে সে পুরুষ’ হইলে সোজা লাইনে তাহার উর্ধ্বতন পুরুষগণকে এবং নারী হইলে সোজা লাইনে তাহার উধ্বতন নারীগণকে বুঝাইবে।

বিশ্লেষণ

পবিত্র কুরআনে এই সম্পর্কে বলা হইয়াছে :

حرمت عليكم أهم وبناتكم واخواتكم وتكم وخلتكم

التي أرضفنگم

وبنات الاخ وبنات الأخت وأمه واخواتكم من الضعة واهت نسائكم و ربائب التي في

جوركم من سائكم التي دخلت به فان لم تكونوا دخلتم بهن ف جناح عليكم وكل أبان الذين من أصلابكم وآن تجمعوا بين الأختين الأماق سلف أن الله كان فورا رحيما . والمحصنت من النساء .

“তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হইয়াছে তোমাদের মাতা, কন্যা, ভগ্নী, ফুফু, খালা, ভ্রাতুস্পুত্রী, ভাগ্নী, দুধমাতা, দুধবােন, শাশুড়ী, এবং তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাহার সহিত সঙ্গত হইয়া তাহার পূর্ব স্বামীর ঔরসে তাহার গর্ভজাত কন্যা–যাহার। তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে, তবে তাহাদের সহিত সঙ্গত না হইয়া থাকিলে তাহাতে তোমাদের কোন অপরাধ নাই; এবং তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রী, দুই সহােদরাকে একত্রে বিবাহ করা, পূর্বে যাহা হইয়াছে তো হইয়াছে, আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। এবং সকল সধবা নারী তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ” (নিসা : ২৩-২৪)।

দুধমাতার গর্ভজাত পুত্রের জন্য যাহাদেরকে বিবাহ হারাম দুধপুত্রের জন্যও তাহাদেরকে বিবাহ করা হারাম।

মহানবী (সা) বলেন :

৪৪৮

الرضاعة تحرم ما حرم الولاده .

“বংশীয় সম্পর্ক যাহাদের সহিত বিবাহ হারাম করে, দুধ পানজনিত সম্পর্কও তাহাদের সহিত বিবাহ হারাম করে” (বুখারী, মুসলিম, মুওয়াত্তা)।

يحرم من الرضاع ما يحرم من الشسب .

“বংশীয় সম্পর্কের কারণে যাহাদের সহিত বিবাহ হারাম, দুধপানজনিত সম্পর্কের কারণেও হারাম” (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, ইবন মাজা, দারিমী, মুওয়াত্তা, মুসনাদে আহমাদ)।

অতএব একই স্তনে সালিত শিশুরা পরস্পর দুধ সম্পর্কীয় ভাই-বোেন, তাহাদের পরস্পরের মধ্যে বিবাহ হারাম।

ধারা-২৭৬

সৎ মাতাকে বিবাহ নিষিদ্ধ সৎ মাতাকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ।

বিশ্লেষণ

এই সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে :

ولا تنكوا مانع أباءگم .

“নারীদের মধ্য হইতে তোমাদের পিতৃপুরুষগণ যাহাদিগকে বিবাহ করিয়াছে, তোমরা তাহাদিগকে বিবাহ করিও না” (নিসা; ২২)।

ধারা-২৭৭ দুই মাহরাম নিকটাত্মীয়াকে একত্রে বিবাহ নিষিদ্ধ একজন মুসলমানের একই সময় এমন দুইজন শ্রী থাকিতে পারিবে না যাহাদের একজনকে পুরুষ কল্পনা করিলে অপরজনের সহিত তাহার বিবাহ হারাম।

বিশ্লেষণ

যেমন ফুফু- ইঝি ও খ 11-বােনঝি। মহানবী (সা) বলেন :

لا يجمع بين المرأة وعمته ولا بين المرأة وخالتها .

“স্ত্রী ও তাহার ফুফুকে এবং স্ত্রী ও তাহার খালাকে (কাহারো বিবাহধীনে) একত্র করা যাইবে না” (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, ইবন মাজ, মুওয়াত্তা, দারিমী)।

ধারা-২৭৮

মুশরিকদের সহিত বিবাহ কোন মুসলিম পুরুষ ও মহিলা পর্যায়ক্রমে কোন মুশরিক নারী বা মুশরিক পুরুষকে বিবাহ করিবে না।

৪৪৯

বিশ্লেষণ

এই প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর বাণী :

ولا تنكحوا المشركت حي يؤمن …. ولا تنكحوا

المشركين حتى يؤمنوا .

“তোমরা মুশরিক নারীদিগকে ঈমান না আনা পর্যন্ত বিবাহ করিও না ……… তোমরা মুশরিক পুরুষদের নিকট ঈমান না আনা পর্যন্ত (তোমাদের নারীগণকে) বিবাহ দিও না” (সূরা বাকারা : ২২১)।

ধারা-২৭৯

আহলে কিতাব নারীকে বিবাহ (ক) কোন মুসলিম পুরুষের জন্য আহলে কিতাব নারীকে বিবাহ করা বৈধ; কিন্তু মুসলিম নারীর জন্য আহলে কিতাব পুরুষকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ।

(খ) কোন নারীর পিতা-মাতার যে কোন একজন মুশরিক ও অন্যজন আহলে কিতাব হইলে সে আহলে কিতাব গণ্য হইবে।

ব্যাখ্যা কোন আসমানী কিতাবের অনুসারী সম্প্রদায় আহলে কিতাব হিসাবে গণ্য, যেমন ইহুদী-খৃষ্টান।

বিশ্লেষণ

মহান আল্লাহ্ বলেন :

اليوم أحل لكم الطيب ….. والمصت من المؤمنت

والمحصنت من الذين أوتوا الكثب من قبلكم.

“আজ তোমাদের জন্য হালাল করা হইল……….মুমিন সচ্চরিত্রা নারী এবং তোমাদের পূর্বে যাহাদিগকে কিতাব দেওয়া হইয়াছে তাহাদের সচ্চরিত্রা নারী তোমাদের জন্য বৈধ করা হইল” (সূরা মাইদা : ৫)।

উপরোক্ত আয়াতে কেবল মুসলিম পুরুষদিগকে আহলে কিতাবের সচ্চরিত্রা নারীকে বিবাহ করার অনুমতি দেওয়া হইয়াছে। অতএব কোন মুসলিম নারীর পক্ষে আহলে কিতাব পুরুষকে বিবাহ করা বৈধ নহে।

ধারা-২৮০

পরীকে বিবাহ দাম্পত্য সম্পর্কযুক্ত নারীকে বিবাহ করা হারাম।

২৯

৪৫০

বিশ্লেষণ

তালাক, খুলা, লিআন অথবা মৃত্যুজনিত কারণে দাম্পত্যসম্পর্ক বিভিন্ন হয়। সধবা নারীকে অজ্ঞাতসারে বিবাহ করিলে তাহা ফাসিদ (ক্রটিপূর্ণ) বিবাহ গণ্য হইবে এবং বিচ্ছেদ অপরিহার্য হইবে।

মহান আল্লাহ বলেন :

وانقصت من النساء .

“এবং সকল সধবা নারী তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ” (সূরা নিসা : ২৪)।

ধারা-২৮১

চারজন বীর বর্তমানে পমী এহণ কোন ব্যক্তির চারজন স্ত্রী বর্তমান থাকিতে পঞ্চম স্ত্রী গ্রহণ নিষিদ্ধ এবং ইহা বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

কুরআন মজীদে একজন পুরুষকে সর্বাধিক চারজন স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হইয়াছে (দ্র. সূরা ৪ : ৩)। গাইলান ইবন উমায়া আস-সাকাফী ইসলাম গ্রহণকালে তাহার দশজন স্ত্রী ছিল। মহানবী (সা) তাহাকে নির্দেশ দিলেন : “তুমি যে কোন চারজনকে বাছিয়া লও এবং অবশিষ্টদেরকে পৃথক করিয়া দাও” (মুওয়াত্তা, নাসাই, দারু কুতনী)।

হারিস ইবন কায়স (রা) বলেন, “আমি ইসলাম গ্রহণকালে আমার আটজন স্ত্রী ছিল। বিষয়টি আমি মহানবী (সা)-এর গোচরে আনিলে তিনি বলেন :

তাহাদের মধ্যে চারজনকে বাছিয়া লও” (আবু দাউদ)।

ধারা-২৮২

ইদ্দত পালনরত অবস্থায় বিবাহ কোন স্ত্রীলোকের ইদ্দত চলাকালীন তাহার পুনঃ বিবাহ নিষিদ্ধ এবং উহা বাতিল গণ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

এই সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে :

ولا تعزموا عقدة النكاح حتى يبلغ الكتاب أجله.

“নির্দিষ্টকাল (ইদ্দত) পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তোমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সংকল্প করিও না” (সূরা বাকারা : ২৩৫)।

৪৫:

والمطلقت يتربصن بأنفسهن ثلثة قروء.

“তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী তিন রজঃস্রাবকাল প্রতীক্ষায় থাকিবে” (সূরা বাকারা : ২২৮)।

তালহা ইবন উবায়দুল্লাহ্ (রা)-এর কন্যা ইদ্দত চলাকালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইলে উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) তাহার বিবাহ ডাঙ্গিয়া দেন এবং উভয়ের শাস্তির ব্যবস্থা করেন।

এমনকি ইদ্দত পালনরতার নিকট বিবাহের আকাংখা প্রকাশও নিষিদ্ধ। অজ্ঞাতসারে বিবাহ হইলে উহা ফাসিদ গণ্য হইবে। কিন্তু প্রত্যাহারযোগ্য বা তিনের কম সংখ্যক তালাকের ইদ্দত পালনরত অবস্থায় তালাকদাতা স্বামী তাহাকে স্ত্রীত্বে ফিরাইয়া লইতে পারিবে।

ধারা-২৮৩

তিন তালাকপ্রাপ্তার সহিত বিবাহ তৃতীয় তালাকপ্রাপ্তা নারীর যথারীতি অন্য পুরুষের সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর পুনরায় তালাকণা বা বিধবা না হওয়া পর্যন্ত প্রাক্তন স্বামীর সহিত পুনঃবিবাহ হারাম।

বিশ্লেষণ

পবিত্র কুরআনে বলা হইয়াছে :

فان طلقها فلا تحل له من بعد حتی تنکح زوجا غيره فان طلقها فلا جناح عنيهما أن تراجعا ان ظنا أن يقيما

حدود الله .

“অতঃপর যদি সে তাহাকে (তৃতীয়) তালাক দেয় তবে সে তাহার জন্য বৈধ হইবে না যতক্ষণ না সে অন্য স্বামীকে বিবাহ করিবে। অতঃপর সে যদি তাহাকে তালাক দেয় এবং তাহারা উভয়ে মনে করে যে, তাহারা আল্লাহর সীমা রক্ষা করিতে সমর্থ হইবে, তবে তাহাদের পুনর্বিবাহে কাহারো কোন অপরাধ হইবে না” (সূরা বাকারা : ২৩০)।

ধারা-২৮৪

গভবতীয় সহিত বিবাহ যে নারীর অন্তঃসত্তার বংশ প্রমাণিত তাহার সহিত সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত বিবাহ বাতিল।

বিশ্লেষণ

কোন নারী অন্তঃসত্তা অবস্থায় বিধবা অথবা তালাকপ্রাপ্তা হইলে গর্ত খালাস না হওয়া পর্যন্ত তার অপর কোন পুরুষের সহিত পুনর্বিবাহ বাতিল। তবে যেনার

৪৫২

মাধ্যমে গর্ভবতী হইলে সংশ্লিষ্ট যেনাকারীর সহিত ঐ অবস্থায় তাহার বিবাহ ও সহবাস হইতে পারে।

ধারা-২৮৫

যেনাকারীর মা ও মেয়েকে বিবাহ (ক) কোন পুরুষ কোন নারীর সহিত যেনা করিলে তাহার জন্য নিম্নোক্ত নারীগণকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ (হারাম)

(১) ব্যভিচারিণীর মা, তাহার মা ও তদুধগণ; (২) ব্যভিচারিণীর কন্যা, তাহার কন্যা ও তদনিগণ।

(খ) কোন নারী কোন পুরুষের সহিত যেনা করিলে তাহার জন্য নিম্নোক্ত পুরুষগণের সহিত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া নিষিদ্ধ (হারাম)

(১) ব্যভিচারীর পিতা, পিতার পিতা ও তদুর্বগণ; (২) ব্যভিচারীর পুত্র, পুত্রের পুত্র ও তদনিগণ।

ধারা-২৮৬

মুতআ বিবাহ মুতআ বিবাহ হারাম।

বিশ্লেষণ

যৌন সজেগের উদ্দেশ্যে নারী-পুরুষের মধ্যে নির্ধারিত সময়ের জন্য কোন কিছুর বিনিময়ে সম্পাদিত বিবাহ বন্ধনকে মুতআ বিবাহ’ বলে। এই বিবাহ হারাম। মুতআর ফলে একে অপরের উত্তরাধিকারী হয় না, তবে সন্তান বৈধ বলিয়া গণ্য হয়। মহানবী (সা) বলেন :

كنت أذنت لكم في الاستمتاع من النساء وان الله قد

حرم ذلك الى يوم القيامة .

“আমি তোমাদিগকে মুতআর অনুমিত দিয়াছিলাম। আল্লাহ তা’আলা অদ্য হইতে কিয়ামত পর্যন্ত তাহা হারাম করিয়া দিয়াছেন” (মুসলিম, নিকাহ, বাব নিকাহিল মুতআহ)।

ধারা-২৮৭ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিবাহ (3,94 4:) কোন নারী-পুরুষ নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য যুহর নির্ধারণপূর্বক এবং সাদীগণের উপস্থিতিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইলে উহাকে “নিকাহে মুওয়াত” বলে এবং তাহা বাতিল গণ্য হইবে।

৪৫৩

বিশ্লেষণ

বিবাহ চুক্তির একটি শর্ত হইল উহা স্থায়ী হইবে, সাময়িক নহে। আলোচ্য বিবাহে এই শর্ত অনুপস্থিত। অবশ্য ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে যদি নির্ধারিত সময়সীমা এত দীর্ঘ হয় যে, তত দিন পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রীর বাচিয়া থাকার সম্ভাবনা নাই তাহা হইলে এই বিবাহ সহীহ হইবে।

ধারা-২৮৮

নির্জনে মিলন (খালাওয়াতে সহীহ) (ক) নির্জনে মিলন বলিতে স্বামী-স্ত্রীর এমন স্থানে একত্র হওয়া বুঝাইবে যেখানে উভয়ের সহবাসে মিলিত হইতে দৈহিক, প্রাকৃতিক ও আইনগত কোন প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান থাকিবে না।

(খ) নিম্নোক্ত ক্ষেত্রসমূহে নির্জনে মিলন বিধান অনুযায়ী সহবাসে গণ্য হইবে (১) পূর্ণ মুহর বাধ্যতামূলক হওয়ার ব্যাপারে; (২) সন্তানের বংশ প্রমাণে; (৩) ইদ্দত পালন অপরিহার্য হওয়ার ব্যাপারে; এবং (৪) ইদ্দত পালনকালে খােরপোষ প্রদান বাধ্যতামূলক হওয়ার ব্যাপারে।

বিশ্লেষণ

দৈহিক প্রতিবন্ধকতা বলিতে পুরুষ বা নারীর এমন ব্যাধি বুঝায় যাহা সহবাসের প্রতিবন্ধক অথবা সহবাসে সংক্রমিত হওয়ার আশংকা আছে। প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা, যেমম হায়েয, নিফাস ইত্যাদি। আইনগত প্রতিবন্ধকতা যেমন, কোন একজন ফরয রোযা পালনরত অবস্থায় আছে।

ধারা-২৮৯

মুহরের সংজ্ঞা বিবাহ বন্ধন উপলক্ষে স্ত্রীকে স্বামী কর্তৃক বাধ্যতামূলকভাবে প্রদত্ত মালকে ‘মুহ (আহ) বলে।

বিশ্লেষণ

স্ত্রীকে মুহর প্রদান স্বামীর একটি বাধ্যতামূলক কর্তব্য। মহান আল্লাহ্ সম্পদ ব্যয়ের মাধ্যমে পুরুষকে বিবাহের নির্দেশ দিয়াছেন :

وأحل لكم ما وراء ذلكم ان تنتفوا بأموالم محصنين

غير مسافحين .

৪৫৪

“উল্লিখিত মাহরাম নারীগণ ব্যতীত অন্য নারীকে অর্থব্যয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করিতে চাওয়া তোমাদের জন্য বৈধ করা হইল, অবৈধ যৌন সম্পর্কের জন্য নহে” (নিসা : ২৪)।

وأتوا النساء صدقتهن نحلة .

“এবং তোমরা নারীদেরকে তাহাদের মুহর স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রদান কর” (নিসা : ৪)।

মহানবী (সা) বলেন :

من تزوج امرأة بصداق ينوي أن لا يؤديه فهو زان ..

“কোন ব্যক্তি মুহরের বিনিময়ে কোন নারীকে বিবাহ করিল, কিন্তু তাহা পরিশোধের ইচ্ছা তাহার নাই—সে ব্যভিচারী” (তাবারানীর মুজামুল কবীর)।

এমন যে কোন জিনিস মুহর হিসাবে ধার্য হইতে পারে যাহার মধ্যে মাল (L)-এর বৈশিষ্ট বিদ্যমান এবং যাহা হারাম নহে। যেমন—নগদ টাকা-পয়সা, ব্যবসায়ের পণ্যদ্রব্য, জায়গা-জমি, কোম্পানীর শেয়ার ইত্যাদি।

ধারা-২৯০

মুহরের পরিমাণ মুহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ দশ দিরহাম এবং সর্বোচ্চ পরিমাণের কোন নির্দিষ্ট সীমা নাই।

বিশ্লেষণ

মহানবী (সা) বলেন :

لا مهر اقل من عشرة دراهم.

“দশ দিরহামের কম মুহর হইতে পারে না” (ইবন আবূ হাতিম)।

মুহরের সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্দিষ্ট করা হয় নাই। এই সম্পর্কে কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে :

وان اردتم استبدال زوج مكان زوج وأتم اخذهن

قنطارا فلا تاخدوا منه شيئا.

“তোমরা যদি এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী গ্রহণের সংকল্প কর এবং তাহাদের একজনকে অগাধ অর্থও দিয়া থাক, তবুও উহা হইতে কিছুই প্রতিশ্ৰহণ করিও না” (নিসা : ২০)।

৪৫৫

ধারা-২৯১

মুহরের শ্রেণীবিভাগ মুহর দুই প্রকার—মুহরে মুসাঘা ও মুহরে মিহল।

(ক) বিবাহ অনুষ্ঠানের সময় অথবা উহার পরে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্মতিতে নির্ধারিত মুহরকে ‘মুহরে মুসাম্মা’ (নির্ধারিত মুহর) বলা হয়। উহা আবার দুই প্রকার—মু’আজ্জাল (তলবী) ও মুওয়াজ্জাল (মেয়াদী)।

(১) যে মুহর বিবাহ অনুষ্ঠানের সময় অথবা চাহিবামাত্র পরিশোধযোগ্য উহা “মুহরে মুআজাদ ( w)।

(খ) বিবাহ-বিচ্ছেদ অথবা স্বামী-স্ত্রীর কোন একজনের মৃত্যুতে অবশ্য পরিশোধযোগ্য মুহরকে ‘মুহরে মুওয়াজাল’ ( 4) বলে।

ধারা-২৯২

মুহরে মিহল-এর সংজ্ঞা পাত্রীর সমপর্যায়ের নারীদের জন্য নির্ধারিত মুহরকে মুহরে মিহল’ (যথাযোগ্য মুহ) বলে।

বিশ্রেবণ বিবাহের চুক্তিতে মুহরের উল্লেখ না থাকিলে অথবা মুহর ধার্য না হইয়া থাকিলে উপযুক্ত পরিমাণ মুহর নির্ধারণের জন্য স্ত্রীর পিতৃকুলের অন্যান্য মহিলার মুহরের পরিমাণ কত ছিল তাহা বিবেচনা করিতে হইবে। ঐ সময়ে স্ত্রীর সহােদরা ও বৈমাত্রেয় ভগ্নীদের এবং তাহাদের অবর্তমানে তাহার ফুফুদিগের মুহরের সমপরিমাণ মুহর নির্ধারিত হইবে।

ধারা-২৯৩

মুহর না দেওয়ার শর্তে বিবাহ মুহর না দেওয়ার শর্তে বিবাহ অনুষ্ঠিত হইলে শর্ত অকার্যকর হইবে এবং ‘মুহরে মিল পরিশোধ বাধ্যকর হইবে।

বিশ্লেষণ

মুহর বিবাহের বৈধতার একটি শর্ত, উহা ব্যতীত বিবাহ বৈধ নহে। মুহর নির্ধারণ বা উহার উল্লেখ না করিয়া বিবাহকার্য সম্পন্ন হইলে অথবা কোন পুরুষ কোন নারীকে মুহর না দেওয়ার শর্তে বিবাহ করিলে এবং পাত্রীও ইহাতে সম্মত হইলে মূল বিবাহ বন্ধনের ভিত্তিতে মুহরে মিছল প্রদান বাধ্যকর হইবে এবং স্ত্রী স্বামীর নিকট উহার দারি করিতে পারিবে।

৪৫৬

ধারা-২৯৪

মুহর পরিশোধের দায়িত্ব স্বামীর স্ত্রীর প্রাপ্য মুহর পরিশোধের দায়িত্ব স্বামীর উপর বর্তায়।

বিশ্লেষণ

অবশ্য নাবালেগ অবস্থায় বিবাহ হইলে মুহর পরিশোধের দায়িত্ব অভিভাবকের উপর বর্তায়, তবে স্বামী বালেগ হইয়া বিবাহ ঠিক রাখিলে অভিভাবকগণ দায়মুক্ত হইয়া যাইবে এবং উহা তাহার উপর বর্তাইবে।

ধারা-২৯৫

মুহর পরিশোধ অনুল্লেখ থাকিলে বিবাহ চুক্তিতে মুহর পরিশোধ সম্পর্কে কোন উল্লেখ না থাকিলে সম্পূর্ণ মুহর চাহিবামাত্র আদায়যোগ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

মুহর সম্পর্কে মু’আজ্জাল (২ ) অথবা মুওয়াজ্জাল (২৬) এইরূপ কিছু উল্লেখ না থাকিলে সম্পূর্ণ মুহর তলবী (

U La) সাব্যস্ত হইবে। তবে সবাগ্রগণ্য মত এই যে, প্রচলিত রেওয়াজ অনুযায়ী ফয়সালা হওয়া উচিত।

ধারা-২৯৬ নির্জনে মিলনের পূর্বে তালাকের ক্ষেত্রে মুহরপ্রাপ্তি (ক) ধারা (২৮৮) মোতাবেক নির্জনে মিশন হওয়ার পূর্বে স্বামী স্ত্রীকে তালাক প্রদান করিলে এবং মুহর

(১) নির্ধারিত না হইয়া থাকিলে স্ত্রী মুহর পাইবে না,তবে ধারা (৩৯৬) মোতাবেক মাতা’ কিছু উপহার সামগ্রী) পাইবে এবংতাহাকে ইদ্দত পালন করিতে হইবে না;

(২) নির্ধারিত হইয়া থাকিলে স্ত্রী অর্ধেক মুহর পাইবে এবং তাহাকে ইদ্দত পালন করিতে হইবে না।

(খ) ধারা (২৮৮) মোতাবেক নির্জনে মিলন হওয়ার পূর্বে স্বামী মারা গেলে সম্পূর্ণ মুহর প্রাপ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

নির্জনে মিলনের পূর্বে বিবাহ বিচ্ছেদ হইলে এবং মুহরের পরিমাণ নির্ধারিত থাকিলে অর্ধেক মুহর বাধ্যতামূলক হইবে।

৪৫৭

মহান আল্লাহ বলেন :

وان طلقتموهن من قبل أن تمسوهن وقد فرضتم لهن

فريضة فنصف ما فرضتم .

“তোমরা যদি তাহাদিগকে স্পর্শ করিবার পূর্বে তালাক দাও অথচ তাহাদের মুহরও ধার্য করিয়াছ, তবে যাহা তোমরা ধার্য করিয়া তাহার অর্ধেক।” (সূরা বাকারা : ২৩৭)

বিবাহ অনুষ্ঠানকালে অথবা পরে মুহর ধার্য না হইয়া থাকিলে এবং নির্জনে মিলনের পূর্বে তালাক সংঘটিত হইলে স্ত্রী নজরানাস্বরূপ মাতা পাইবে। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে :

لا جناح عليكم ان طلقتم النساء ما لم تمسوهن أو تفرضوا لهن فريضة ومتوهن على الموسع قدره وعلى المقتر قدره متاعا بالمعروف .

“যে পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের স্পর্শ করিয়াছ এবং তাহাদের জন্য মুহর ধার্য করিয়াছ, তাহাদেরকে তালাক দিলে তোমাদের কোন পাপ নাই। তোমরা তাহাদের সংস্থানের ব্যবস্থা করিও, বিত্তবান তাহার সাধ্যানুসারে এবং বিত্তহীন তাহার সামথ্যানুসারে যথারীতি খরচপত্রের ব্যবস্থা করিবে” (বাকারা : ২৩২)।

মুহর নির্ধারিত হওয়ার ক্ষেত্রে বিবাহ রদ ( 1) হইলে অর্ধেক মুহর প্রাপ্য হইবে। নির্জনে মিলনের পূর্বে নারীর কারণে বিবাহ রদ হইলে কোন মুহর প্রাপ্য হইবে

ব্যবস্থা করিবে-সাধ্যানুসারে কোন পাপ নাই দের জন্য মুহর

ধারা-২৯৭ নির্জনে মিলনের পর তালাকের ক্ষেত্রে মুহরপ্রাপ্তি। ধারা (২৮৮) মোতাবেক নির্জনে মিলন হওয়ার পর স্বামী স্ত্রীকে তালাক প্রদান করিলে এবং মুহর

(ক) নির্ধারিত না হইয়া থাকিলে স্ত্রী ধারা (২৯২) মোতাবেক মুহরে মিহল’ পাইবে, ধারা (৩৭৪ ও ৩৭৫) মোতাবেক ইদ্দত পালন করিবে এবং ধারা (৩৯৬) মোতাবেক ইদ্দতকালের জন্য খােরপোষ পাইবে;

(খ) নির্ধারিত হইয়া থাকিলে স্ত্রী সম্পূর্ণ মুহ পাইবে, ধারা (৩৭৪ ও ৩৭৫) মোতাবেক ইদ্দত পালন করিবে এবং ধারা (৩৯৬) মোতাবেক খােরপোষ পাইবে।

৪৫৮

বিশ্লেষণ

শুধুমাত্র বিবাহ বন্ধন দ্বারা সম্পূর্ণ মুহর পরিশোধযোগ্য হয় না। অবশ্য নির্জনে মিলনের পর পূর্ণ মুহর পরিশোধযোগ্য হয়। মহানবী (সা) বলেন : “কোন ব্যক্তি স্ত্রীর ওড়না বা নেকাব উন্মুক্ত করিয়া তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিলে পূর্ণ মুহর পরিশোধ বাধ্যতামূলক হইবে, নির্জনে মিলন হউক বা না হউক” (দারু কুতনী)।

যায়দ ইবন সাবিত (রা) বলেন, “কোন ব্যক্তি যখন তাহার স্ত্রীর কাছে যায় এবং সতর তুলিয়া দেওয়া হয় (নির্জনে মিল হয়) তখন মুহর ওয়াজিব হয়” (মুওয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ, বাংলা অনু, হাদীস নং ৫৩৩)।

উমর (রা) নারীর ব্যাপারে রায় দিয়াছেন যে, “কোন ব্যক্তি তাহাকে বিবাহ করিলে এবং সতর উন্মুক্ত করা হইলে মুহর ওয়াজিব হয়” (মুওয়াত্তা ইমাম মালেক, নিকাহ, মা জাআ ফী ইরইস সুত্র)।

নির্জনে মিলন সহবাসের স্থলাভিষিক্ত গণ্য হয়, অবশ্য ফাসিদ বিবাহের ক্ষেত্রে সহবাস গণ্য হয় না। অতএব এই ক্ষেত্রে সহবাসের পূর্বে তালাক সংঘটিত হইলে মুহর প্রান্তব্য হইবে না।”

ধারা-২৯৮ নির্জনে মিলনের পর তালাকের ক্ষেত্রে মুহর পরিশোধ নির্জনে মিলনের পর তালাক সংঘটিত হইলে সম্পূর্ণ মুহয় তৎক্ষণাৎ পরিশোধযোগ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

তালাকের দ্বারা বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হইয়া যায়, এইজন্য তৎক্ষণাৎ মুহর পরিশোধ বাধ্যতামূলক হয়, উহা তলবী (মুআজ্জাল) হউক অথবা মেয়াদী (মুওয়াজ্জাল)।

ধারা-২৯৯

মৃত্যুর ক্ষেত্রে মুহর পরিশোধ বৈধ (সহীহ) বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর কোন একজনের মৃত্যু হইলে সম্পূর্ণ মুহর পরিশোধ বাধ্যকর হয়, নির্জনে মিলন হউক বা না হউক।

বিশ্লেষণ

মৃত্যুর কারণে চিরকালের জন্য বিবাহের পরিসমাপ্তি ঘটে। তাই সম্পূর্ণ মুহর পরিশোধ বাধ্যতামূলক হইয়া যায়, নির্জনে মিলন হউক বা না হউক।

ধারা-৩০০

মুহরের পরিমাণে হ্রাস-বৃদ্ধি বিবাহ বন্ধন অটুট থাকাকালে স্বামী নির্ধারিত মুহরের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং স্ত্রী উহা হ্রাস করিতে পারিবে।

৪৫৯

विस স্ত্রী তাহার মুহরের পরিমাণ হ্রাস করিতে পারে। তবে ইহা স্বেচ্ছাপ্রণােদিত হইতে হইবে। সে যদি নিরুপায় হইয়া অথবা বলপ্রয়োগে বাধ্য হইয়া হ্রাস করিয়া থাকে তবে তাহা শুদ্ধ হইবে না। অনুরূপভাবে মৃত্যুশয্যায় থাকা অবস্থায় স্ত্রীর নিজ মুহর হ্রাস করা বৈধ হইবে না।” অনন্তর স্বামীও স্ত্রীর মুহর বর্ধিত করিতে পারে।”

ধারা-৩০১

মুহর আদায়ের অধিকার বালেগা নারী স্বয়ং নিজের মুহর আদায় করার অধিকার রাখে। নাবালেগা হইলে পিতা এবং তাহার অবর্তমানে নিকটতর অভিভাবক মুহর আদায় করিতে পারে।

ধারা-৩০২

মুহর মাফ অথবা হেবা করার অধিকার বালেগা তাহার মুহরের আংশিক বা সম্পূর্ণটাই হেবা (দান) অথবা মাফ করিয়া দিতে পারে। কিন্তু কী নাবালেগা হইলে তাহার অভিভাবক উহা মাফ অথবা হেবা করিতে পারে না।

বিশ্লেষণ

মুহরের মালিকানা স্ত্রীর। তাই সে যখন ইচ্ছা করে উহার অংশবিশেষ বা সম্পূর্ণটাই মাফ অথবা হেবা করিয়া দিতে পারে। ইহাতে অভিভাবকের বাধা দেওয়ার অধিকার নাই।

ধারা-৩০৩ তলবী মুহর অনাদায়ে স্ত্রীর কর্তব্য পালনে অসম্মতি মুহরে মুআজ্জাল (তলবী মুহর) অনাদায়ের ক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর সহিত বসবাস করিতে এবং সঙ্গমের সুযোগ দিতে অস্বীকার করিতে পারে।

বিশ্লেষণ

ইতিপূর্বে স্বামীর সহিত সঙ্গম হইয়া না থাকিলে তসবী মুহর পরিশোধ না করা পর্যন্ত স্ত্রী স্বামীর সহিত বসবাস করিতে এবং তাহাকে সঙ্গমের সুযোগ দিতে অস্বীকার করিতে পারে।

ধারা-৩০৪

মুহলের প্রকৃতি (ক) মুহর ঋণরূপ যাহা ওসিয়াত ও উত্তরাধিকারের সমস্ত অধিকার অপেক্ষা অগ্রগণ্য।

(খ) স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা শ্ৰী তাহার পরিত্যক্ত মাল হইতে মুহর আদায় করিতে পারিবে।

৪৬০

(গ) মৃতের ওয়ারিসগণের উপর নিজ নিজ অংশ মোতাবেক এই মুহরের দায় বর্তাইবে।

(ঘ) স্বামীর কোন পরিত্যক্ত মাল না থাকিলে মুহরের দাবি বাতিল হইয়া যাইবে।

বিশ্লেষণ

মুহর মূলত দেনাস্বরূপ, অনাদায়ের ক্ষেত্রে স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর অধিকার রহিত হয় না। অতএব সে মৃত্যু স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তি হইতে প্রাপ্য মুহর আদায় করিতে পারে। কিন্তু ইহার প্রকৃতি জামানতবিহীন দেনার মত।

ধাবা-৩০৫ মুহর অপরিশোধিত থাকিলে মরহুম স্বামীর

সম্পত্তি নিজ দখলে রাখার অধিকার মুহর অপরিশোধিত থাকিলে মৃতের বিধবা স্ত্রী তাহার পরিত্যক্ত মাল উহা আদায় না হওয়া পর্যন্ত নিজ দখলে রাখতে পারে।

বিশ্লেষণ

স্বামীর জীবদ্দশায় তাহার কোন সম্পত্তি বা উহার অংশবিশেষ-এর উপর এককভাবে স্ত্রীর দখল থাকিলে তাহার মৃত্যুর পর মুহর পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত সে উহা দখলে রাখিতে পারিবে।

কুফু (সমকক্ষতা)

ধারা-৩০৬

সং ধর্ম, বংশ, সম্পদ, সামাজিক পদমর্যাদা ইত্যাদি বিষয়ে পাত্রীর সমকক্ষ পাত্রকে ‘কুফু’ বলে।

বিশ্লেষণ

এমন দুইজন নারী-পুরুষকে কুফু’ বলা যায় যাহারা মুসলমান, বংশমর্যাদায় সমান, স্বাধীন এবং পেশা, দীনদারী, আর্থিক প্রাচুর্য ইত্যাদিতে পরস্পর সমকক্ষ।

ধারা-৩০৭

কুফুর প্রয়োগ। বিবাহের ক্ষেত্রে পুরুষের নারীর সমকক্ষ হওয়া আবশ্যক, নারীর পুরুষের সমকক্ষ হওয়া আবশ্যক নহে।

৪৬১

বিশ্লেষণ

বিবাহে পুরুষের নারীর সমকক্ষ হওয়াই জরুরী, কিন্তু নারীর পুরুষের সমকক্ষ হওয়া জরুরী নহে। সে স্ত্রী হওয়ার সুবাদে স্বামীর সমকক্ষ বিবেচিত হয়।

ধারা-৩০৮

কুফুর বিবেচনা বিবাহ বন্ধন অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় কুফু বিবেচনা করিতে হইবে।

বিশ্লেষণ

বিবাহ সংঘটিত হওয়ার সময়ই কুফু বিবেচ্য বিষয় হইতে পারে। বিবাহের পরে ইহার বিবেচনা জরুরী নহে।

ধারা-৩০৯

কুফুর অনুপস্থিতি ও বিবাহের বৈধতা (ক) বালেগা নারী স্বয়ং অসম পাত্রকে বিবাহ করিলে তাহা সহীহ হইবে, কিন্তু অভিভাবকের আপত্তি করার এবং আদালতের সাহায্যে বিবাহ রদ করানোর

অধিকার থাকিবে।

(খ) সন্তান প্রসবের পর অবিভাবকের আপত্তির অধিকার রহিত হইয়া যায়। (গ) অসম পাত্রে বিবাহের ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশেই বিবাহ রদ হইবে।

বিশ্লেষণ

অসম পাত্রে বিবাহ হওয়ার ক্ষেত্রে আদালতে অভিভাবকের বিবাহ বদ করা দরখাস্ত পেশ কর কোন সময়সীমা নির্ধারিত নাই। কিন্তু দিনাতির সন্তান প্রসবের পর তাহার আপত্তি উত্থাপনের অধিকার রহিত হইয়া যায়।

কোন নারী অসম পাত্রে বিবাহ ওরকে এই ‘য়ে তাহার অভিভাবকের অপাও তোলার অধিকার থাকিলেও আদালতের নির্দেশ ছাড়া বিহ রদ হইবে না। আদালতের নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিবাহবন্ধন অটুট থাকিবে।* আদালত বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাইলে মুহর প্রদান, ইদ্দত পালন এবং ঐ সময়ের ভরণপোণ প্রদান বাধ্যতামূলক হইবে। নির্জনে মিলন না হইলে মুহর বাধ্যতামূলক হইবে না।

ধারা-৩১০ বিবাহ অনুষ্ঠানে আলিমের প্রয়োজনীয়তা বিবাহ বন্ধন অনুষ্ঠানের জন্য কোন আলিমের প্রয়োজন নাই। পাত্র ও পাত্রী দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে সরাসরি ‘ঈজাব ও কবুল-এর মাধ্যমে পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইতে পারে।

৪৬২

বিশ্লেষণ

পক্ষদ্বয়ের মধ্যে বিবাহ বন্ধন স্থাপনের জন্য কোন আলিম ব্যক্তির প্রয়োজন নাই। পাত্র-পাত্রী দুইজন মুসলিম পুরুষকে অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন স্ত্রীলোককে সাক্ষী রাখিয়া পরস্পর প্রস্তাব (ইজাব) ও সম্মতি (কবুল) প্রকাশক বাক্য বিনিময়ের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইতে পারে। তবে আলিম ব্যক্তি, ইসলামী আইন সম্পর্কে অভিজ্ঞ বিধায়, বিবাহ মজলিসে উপস্থিত থাকিলে বিবাহের চুক্তি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হইতে পারে।

ধারা-৩১১ বিবাহে ওয়ালী (অভিভাবকএর স্থান এম্রাণীগণ নাবালেগের বিবাহ দিতে পারেন, কিন্তু নাবালেগের বালেগ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাহার উপর ওয়ালীর অভিভাবকত্বের অধিকার শেষ হইয়া যায়।

ধারা-৩১২

ওয়ালীর গোগ্যতা : প্রত্যেক বুদ্ধিমান ও বালেগ মুসলমান বিবাহের ওয়ালী হইতে পারে।

বিশ্লেষণ

আলীর বুদ্ধিমান, বালেগ ও মুসলমান হওয়া জরুরী! সুবুদ্ধি বহিত অথবা নাবালেগ যেহেতু নিজের ব্যাপার মাইতে সক্ষম নহে এবং নিজের ব্যাপারসমূহ দেখিবার জন্য আইনগত অধিকারপ্রাপ্ত নহে, তাই সে অন্যদের ব্যাপারে ওয়ালী হইতে পারে না।

‘খালীকে মুসলমান হইতে হইবে। এই ব্যাপারে ফকীহগণ একমত। অতএব কোন কাফির কোন মুসলমান নাবালেগ ছেলে বা মেয়ের ওয়ানী হইতে পারিবে না। কারণ ওয়ালী হইবার অধিকার জন্যে ওয়ারিস হইবার অধিকার হইতে। কিন্তু হাদীস শরীফে বলা হইয়াছে।

لا يتوارث أهل الملتين شب

“দুইটি ভিন্ন মিলাতে অসাবী পরস্পরের উত্তরাধিকারী হইতে পারিবে না।”

এখানে দুইটি মিল্লাত বলিতে কুফর ও ইসলামকে বুঝানো হইয়াছে। অতএব কোন কাফির কোন মুসলমানের ওয়ালী হইতে পারে না।

কুরআন মজীদেও মুসলমানের উপর কাফিরের অভিভাবকত্ব নিষিদ্ধ করা হইয়াছে। বলা হইয়াছে;

ولن يجعل الله للكافرين على المؤمنين سبي؟ .

৪৬৩

“এবং আল্লাহ কখনই মুমিনদের উপর কাফিরদের জন্য কোন পথ রাখেন নাই” (সূরা নিসা : ১৪১)।

ياها الذين آمنوا لا تخوا أبائكم واخوانكم أولياء ان استحبوا الكفر على الايمان ومن يتولهم منكم فأولئك هم الظلمون

“হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতাগণ ও ভ্রাতাগণ যদি ঈমান অপেক্ষা কুফরকে শ্রেয় মনে করে তবে তাহাদেরকে ওয়ালীরূপে গ্রহণ করিও না। তোমাদের মধ্যে যাহারা তাহাদেরকে ওয়ালীরূপে গ্রহণ করে তাহারাই জালিম”।তওবা : ২৩।

এই দুইটি আয়াত হইতে প্রমাণিত হয় যে, কোন কাফির কোন মুসলমানে ওয়ালী হইতে পারে না।

মুরতাহাদের ক্ষেত্রেও এই বিধান প্রযোজ্য। সুতারাং মুরতাদ হইবার কারণে তাহার মুসলমানের উপর অভিভাবকত্বের আইনগত অধিকার রহিত হইয়া যায়।

ধারা-৩১৩

অভিভাবকত্বের অধিকার নাবালেগ ছেলে বা মেয়ের বিবাহ দেওয়ার অধিকার পর্যায়ক্রমে নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিগণের থাকিবে

১. পিতা, ২. সাদা ও তদুধগণ, ৩, আপন ভাই, ৪. সৎ ভাই, ৫. আপন ভাতিজা, ৬. সৎ ভাতিজা, ৭. আপন চাচা, ৮. সংচাচা, ৯. আপন চাচাতো ভাই,

১০. সৎ চাচাতো ভাই এবং অনুরূপ আত্মীয়গণ (পিতার দিকের আত্মীয়-স্বজন উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে অগ্রগামিতা অনুসারে),

১১. মা, ১২. হেশের মেয়ে, ১৩. মেয়ের মেয়ে, ১৪. নাতির মেয়ে, .

৪৬৪

১৫. মেয়ের নাতনী, ১৬. আপন ভগিনী, ১৭. সৎ ভগিনী, ১৮. সৎ ভাই, ১৯. অন্যান্য আত্মীয়স্বজন (মায়ের দিকের) উত্তরাধিকারে অগ্রগামিতা অনুসারে ২০. শাসক বা বিচারক।

বিশ্লেষণ

ইহারা পর্যায়ক্রমে একজনের অবর্তমানে তাহার পরবর্তীজন ওয়ালী হইবে।

ধারা-৩১৪ নিকটতর ওয়ালীর বর্তমানে দূরতর ওয়ালীর বিদায়াতের অধিকার

ক) নিকটতর সম্পর্কের ওয়ালীর বর্তমানে দূর-সম্পকীয় ওয়ালীর বিলায়াতের। অভিভাবকত্বে) অধিকার থাকে না। তবে নিকটতর ওয়ালী যদি একেবারে নিরুদ্দেশ পাকে তাহা হইলে দূর-সম্পৰ্কীয় ওয়াশী নাবালেগ ও নাবালেগার বিবাহ দিতে পারিবে।

খ) নিকটতর ওয়ালী বর্তমান থাকিতে দূরতর ওয়ালী নাবালেগ বা নাবালেগার ববাহ দিলে তাহার সম্পাদিত এই বিবাহের স্থায়িত্ব নিকটতর ওয়ালীর সম্মতির উপর নির্ভর করিবে।

বিশ্লেষণ

নিকটতর সম্পর্কের ওযান্সী দূর সম্পর্কীয় ওয়ালীর বিদায়াতের (অভিভাবকত্বের) অধিকার বহিত করিয়া দেয়। ইং ফকীহগণের একটি সর্বসম্মত অভিমত।

নিকটতঃ ওয়ালী কৃর্তমান থাকিতে দূরতর ওয়ালী নাবালেগ নাবালেগার বিবাহ দিলে তাহা বাতিল হইবে না, বরং নিকটতর ওয়ালীর সম্মতির উপর নির্ভর করিবে।” : ৭তি :: করিলে উহা জায়েয হইবে ও অটুট থাকিবে, অন্যথায় নাজায়েয বলিয়া গণ্য হইবে লং বি এঙ্গিয়া যাইবে। .

ধার -৩১৫ সমপর্যায়ের একাধিক ওয়ালী বর্তমান থাকিলে সরি সমপর্যায়ের বা সমমর্যাদার একাধিক ওয়ালী বর্তমান থাকে এবং তাহাদের কোন একজন তাহাদের অধীনস্থ নাবালেগ বা নাবালেগার বিবাহ দেয় তবে উহা বৈধ হইবে।

বিশ্লেষণ

যেমন কোন নাবালেগ বা নাবালেগার দুইজন সহােদর ভাই বর্তমান আছে এবং তাহাদের কোন একজন তাহাকে বিবাহ দিলে সেই বিবাহ বৈধ হইবে।

৪৬৫

বিয়ান যুগ (JI

)

ধারা-৩১৬

পিয়াল বুলগ-এর সংজ্ঞা ওয়াশী কর্তৃক সম্পাদিত তাহার অধীনস্ত নাবালেগ বা নাবালেগার বিবাহ তাহার বালেগ হওয়ার পর প্রত্যাখ্যান বা বাতিল করার অধিকারকে ‘বিরারুল বুলুগ’ (পরিণত বয়সের অধিকার) বলে।

ধারা-৩১৭

পিতা বা দাদা বিবাহ দিলে (ক) নাবালেগের বিৰাহ তাহার পিতা বা দাদা ব্যতীত যে কোন ওয়ালী কর্তৃক সম্পাদিত হইলে ‘খিয়ারুল বুলগের’ অধিকার প্রয়োগ করিয়া তাহা নাবালেগ বালেগ হওয়ার পর প্রত্যাখ্যান বা বাতিল করিতে পারে।

(খ)পিতা বা দাদা যদি অসদুদ্দেশ্য প্রণােদিত হইয়া অথবা হঠকারিতার আশ্রয় নিয়া অথবা পরিণাম সম্পর্কে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকিয়া বিবাহকার্য সম্পন্ন করিয়া থাকে

তৰে নাবালেগ বালেগ হইবার পর উহা প্রত্যাখ্যান ৰা বাতিল করিতে পারিবে।

বিশ্লেষণ

শুধুমাত্র ইমাম আবু ইউসুফ (র) ছাড়া হানাফী মাযহাবের সকল ইমাম এই ব্যাপারে একমত যে, পিতা কিংবা দাদা ছাড়া অন্য কোন ওয়ালী যদি নাবালেগ ছে’ল বা মেয়ের বিবাহ দেয় তবে তাহারা বালেগ হইবার পর খিয়ারুল বুগ’-এর অধিকার প্রয়োগ করিয়া ঐ বিবাহ বাতিল করিতে পারিবে।

ধারা-৩১৮

বিবাহ বাতিলের ডিক্রি যদি কোন ওয়ালী তাহার অধীনস্থ নাবালেগ বা নাবালেগার বিবাহ দিয়া থাকে তবে বালেগ হইবার পর সে তাহার ‘খিয়াৰুল বুগের অধিকার প্রয়োগ করিয়া আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বাতিলের ডিক্রি লাভ করিতে পারিবে।

বিশ্লেষণ

খিয়ারুল বুলুগ (পরিণত বয়সের অধিকার) প্রয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হইল, নাবালেগ বা নাবালেগা বালেগ হইবার পর উক্ত অধিকার প্রয়োগ করিলেই কি বিবাহ বাতিল হইয়া যায়, না সেইজন্য যথারীতি আদালতের নির্দেশ লাভের প্রয়োজন আছে? ফিকহবিদগণ এই ব্যাপারে একমত যে, উক্ত অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আদালতের নির্দেশে বিবাহ বাতিল হইয়া যায়। শুধু স্বামী বা স্ত্রীর কোন একজনের এই অধিকার প্রয়োগের দ্বারা বিবাহ সরাসরি বাতিল হয় না, যতক্ষণ আদালত বিবাহ

০–

৪৬৬

বাতিলের নির্দেশ জারী না করে।” LiJ 4 বাতিলের জন্য আদালতের সিদ্ধান্ত থাকা শর্ত)।

(এ ক্ষেত্রে বিবাহ

وفي خيار البلوغ لا يقع الفرقة ولا يبطل النكاح ما لم

يفسخ القاضي العقد بينهما .

“পরিণত বয়সের অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে আদালত বিবাহ রদের নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিবাহ বিচ্ছেদও হইবে না এবং বাতিলও হইবে না।

ধারা-৩১৯

খিয়ারুল বুগ প্রয়োগের সময় নাবালেগ বা নাবালেগা, নাবালেগ অবস্থায় তাহাদের ওয়ালীর সম্পাদিত বিবাহ অপছন্দ করার ক্ষেত্রে, বয়ঃসন্ধিতে উপনীত হওয়ার তিন বৎসর পর বা বিবাহ সম্পর্কে অবহিত হওয়া কিংবা পনর (১৫) বৎসর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত (যে মেয়াদকালটি অধিক হইবে) পরিণত বয়সের অধিকার প্রয়োগে করিতে পারিবে।

ধারা-৩২০ ‘খিয়াল লুণ’ কখন বাতিল হইয়া যাইবে। শাকিয়া মায়ী তাহার ওয়ালী কর্তৃক সম্পাদিত বিবাহ সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পরও স্বামীকে সহবাসের সুযোগ দিলে অথবা সে এমন কোন কাজ করিলে বা এমন কোন কাজ বর্জন করিলে, যাহা দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রকাশ পায় যে, সে বিবাহ প্রত্যাখ্যান করে নাই, ইহার যারা তাহার পরিণত বয়সের অধিকার (খিয়ারুল বুলুগ) বাতিল হইয়া যাইবে। তবে নাবালেগ অবস্থায় কিংবা সম্মতি ছাড়াই সহবাস হইয়া থাকিলে খিয়ারুল বুকৃগ ক্ষুন্ন হইবে না।

ধারা-৩২১ বালেগ পুরুষ ও সায়্যিবা নারীর শিয়াল বুলুগ বালেগপুরুষকিংবা সায়্যিবা নারীর বালেগ হওয়ার পর যতক্ষণ পর্যন্ত সুস্পষ্টভাবে তাহাদের সম্মতি প্রকাশ নাকরিবে ততক্ষণ পর্যন্ত খিয়ারুল যুগ বাতিল হইবে না।

সন্তানের নসব (বংশপরিচয়) (১,

৬৯)

ধারা-৩২২

বংশপরিচয় সহীহ বিবাহের ভিত্তিতে জন্মলাভকারী সন্তানের পিতা-মাতার সহিত আইনগত সম্পর্ককে নসব’ বা ‘বংশপরিচয়’ বলে।

৪৬৭

বিশ্লেষণ

পিতা-মাতার সহিত সন্তানের জন্মগত সম্পর্ককেই বংশপরিচয় বলে। দাম্পত্য বন্ধনের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে সন্দেহ সত্ত্বেও নসব বা বংশপরিচয় প্রমাণিত হইবে। অর্থাৎ বিবাহ অনুষ্ঠান (আ) এবং সহবাসের ক্ষেত্রে সন্দেহ সৃষ্টি হইলেও তাহার কারণে বংশপরিচয়ের উপর কোন প্রভাব পড়িবে না। ইহাতে দাম্পত্য সম্পর্কে বিপর্যয় সৃষ্টি হয় বটে, কিন্তু এইভাবে যে সন্তান জন্মলাভ করে তাহার বংশপরিচয় বিশুদ্ধ ও বৈধ।

ধারা-৩২৩

নস (বংশপরিচয়)-এর শ্রেণীবিভাগ নস (বংশপরিচয়) দুই শ্রেণীতে বিভক্ত

(ক) পিতৃগত নলব (বংশপরিচর) : যে বংশপরিচয় পিতা-মাতার বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয় তাহাকে পিতৃগত নসব (বংশপরিচয়) বলে।

(খ) মাতৃগত নসব (বংশপরিচয়)। যে বংশপরিচয় মাতার গর্ভ হইতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয় তাহাকে মাতৃগত নসব (বংশপরিচয়) বলে।

বিশ্লেষণ

পিতৃগত বংশপরিচয়ের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার বৈবাহিক সম্পর্ক সহীহ বা ফাসিদ যাহাই হউক না কেন তাহাতে বংশপরিচয়ের উপর কোন প্রকার প্রভাব পড়িবে না। আর মাতৃগত বংশপরিচয় হইল সন্তান যে নারীর গর্ত হইতে ভূমিষ্ঠ হইবে সেই নারীর বংশপরিচয়ে সে পরিচিত হইবে। পুরুষের সহিত নারীর সম্পর্কে বৈধ ছিল কি না তাহাতে কিছুই যায় আসে না।

মহানবী (সা) বলিয়াছেন :

الولد للفراش وللعاهر الحجر .

“যাহার বিছানায় সন্তান জন্মগ্রহণ করিবে সে তাহারই, আর ব্যভিচারীর জন্য পাথর।”

সন্তানের মাতৃগত বংশপরিচয় (নসব) সর্বক্ষেত্রে সেই নারীর সহিত সম্পর্কিত হইবে যাহার গর্ভ হইতে সে ভূমিষ্ঠ হইয়াছে। কিন্তু পিতৃগত বংশপরিচয় ততক্ষণ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হইবে না যতক্ষণ সন্তান বিশুদ্ধ ( a) বা অনিয়মিত বিবাহের (Lars) ফলে জন্মলাভ করিয়াছে বলিয়া প্রমাণিত না হইবে।

ধারা-৩২৪।

বংশপরিচয়ের ফল বংশপরিচয়ের দ্বারা ব্যক্তি ও সম্পত্তির অভিভাবকত্ব, খােরপোষ, উত্তরাধিকার ও ওলিয়াতের সহিত সম্পর্কিত অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ সৃষ্টি হয়।

৪৬৮

বিশ্লেষণ

বংশপরিচয় প্রমাণিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানের বংশপরিচয়ের বিশুদ্ধতা স্বীকৃত হইয়া যায় এবং অতঃপর সন্তান ও পিতা-মাতার মধ্যে যেসব অধিকার, দায়িত্ব ও কর্তব্য সৃষ্টি হয় শরীআতের বিধান অনুসারে তাহাও পরস্পরের উপর বর্তায়। সুতরাং সন্তান এইভাবে ভরণপোষণ লাভের অধিকারী হয়, পিতা-মাতাও সন্তানের নিজের ব্যক্তিসত্তা ও সম্পদের উপর অভিভাবকত্বের অধিকার লাভ করে এবং মৃত্যুর পর একে অপরের পরিত্যক্ত সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়। কিন্তু সন্তানের বংশপরিচয় প্রমাণিত না হইলে সে তাহার মায়ের সন্তান বলিয়াই গণ্য হইবে এবং মায়ের বংশপরিচয়ে পরিচিত হইবে। এই ক্ষেত্রে ঐ সন্তান মা ও তাহার আত্মীয়-স্বজনের উত্তরাধিকারী হইবে এবং মা ও তাহার আত্মীয়-স্বজন তাহার উত্তরাধিকারী হইবে।

ধারা-৩২৫

বৈধ বংশপরিচয় (নস) (ক) বংশপরিচয় বৈধ হওয়ার জন্য শরীআত সম্মত আকদ অর্থাৎ বৈধ বৈবাহিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গর্ভধারণের মেয়াদকাল কমপক্ষে ছয় মাস এবং সর্বোচ্চ দুই বৎসর। তবে শেষোক্ত ক্ষেত্রে গত সুশ হইতে হইবে এবং খামী বা তাহার উত্তরাধিকারীরা অস্বীকৃতি জ্ঞাপন বা মিথ্যা প্রতিপন্ন করিবে না। কিন্তু স্বামী যদি এই সময়ের মধ্যে পরস্পর মেলামেশায় এমন সুযোগ না পাইয়া থাকে যাহাতে গর্ভ স্থিতি লাভ করিতে পারে তবে এই বংশপরিচয় বৈধ গণ্য হইবে না।

(খ) স্ত্রী যদি তালাক বা মৃত্যুজনিত কারণে ইদ্দত পালনরত অবস্থার ইতকাল শেষ হওয়ার কথা না বলিয়া থাকে, তবে সে ইদ্দতকাল শেষ হওয়ার ঘোষণা করা সত্তেও স্বামী ও তাহার উত্তরাধিকারীগণ দুই বৎসর পর যদি নবজাত সন্তানের দাবি করে।

(গ) ইদ্দতকাল শেষ হওয়ার স্বীকায়োক্তির ক্ষেত্রে গর্ভধারণের সর্বাধিক মেয়াদ স্বীকারোক্তির সময় হইতে ১৮০ দিন এবং তালাক বা মৃত্যুর সময় সর্বাধিক দুই বৎসর হইবে।

ব্যাখ্যা সময়কাল নির্ধারণের জন্য চামাস ও বৎসরের হিসাব গ্রহণযোগ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

গর্ভধারণের সর্বাধিক সময়কাল কত সেই বিষয়ে মতভেদ আছে, কিন্তু গর্ভধারণের সর্বনিম্ন সময়কাল সম্পর্কে সকল ইমাম ও ফকীহ একমত। গর্ভধারণের সর্বনিম্ন মেয়াদ কত সেই বিষয়ে কুরআন মজীদের নিম্নোক্ত দুইটি আয়াত পেশ করা হয় :

৪৬৯

وحمله وفصاله ثلثون شهرا .

“তাহাকে গর্ভে ধারণ কৱিতে ও তাহার শুন্য ছাড়াইতে লাগে ত্রিশ মাস।

وفصاله في عامين.

“এবং তাহার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বৎসরে।

এই আয়াত দুইটি হইতে প্রমাণিত হয় যে, সন্তানকে গর্ভধারণ ও দুধ ছাড়াইবার সর্বমোট মেয়াদ ত্রিশ মাস এবং সন্তানের দুধ ছাড়াইবার সময়কাল দুই বৎসর বা চব্বিশ মাস। ত্রিশ মাস হইতে চব্বিশ মাস বাদ দিলে থাকে ছয় মাস। এই ছয় মাস হইবে গর্ভধারণের সময়কাল। অর্থাৎ এই আয়াত দুইটি হইতে প্রমাণিত হয় যে, গর্ভধারণের সময়কাল হয় মাস।

গর্ভধারণের সর্বাধিক মেয়াদ কত সেই ব্যাপারে ইমামদের মধ্যে মতভেদ আছে। অধিকাংশ হানাফী ইমামের মতে গর্ভধারণের সর্বোচ্চ মেয়াদ দুই বৎসর।

ধারা-৩২৬

শরীআতের বিধান অনুসারে বংশপরিচয় যখন সন্দেহাতীতভাবে কোন নারী ও পুরুষের বৈবাহিক সম্পর্ক (বৈধ বা ফাসিদ যাহাই হউক) সর্বজন বিদিত ও প্রচলিত পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠিত হইবে এবং

সলামের বিধিতি অনুসারে সঙন জন্মলাভ করিবে সেই ক্ষেত্রে শরীআতের বিধান অনুসারেই সন্তানের বংশপরিচয় বিশুদ্ধ বলিয়া বিবেচিত হইবে।

ধারা-৩২৭ সাবির মাধ্যমে নসব (বংশপরিচয়) প্রমাণ শরঈ বিধান অনুসারে কোন পুরুষ ও নারীর মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দাবি করার মাধ্যমে সন্তানের বংশপরিচয় প্রমাণিত হইতে পারে।

বিশ্লেষণ

বংশপরিচয় প্রতিষ্ঠার দ্বিতীয় উপায় হইল দাবি করা। কোন ব্যক্তি কোন বালককে তাহার পুত্র বলিয়া দাবি করিল এবং ইহার পর ঐ ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করিল। মৃত্যুর পর যদি ঐ বালকের মাতা বলে, আমি মৃত ব্যক্তির স্ত্রী তাহা হইলে সে উক্ত মৃত ব্যক্তির স্ত্রী গণ্য হইবে এবং উক্ত বালককে উক্ত ব্যক্তির পুত্র সাব্যস্ত করা হইবে, যদি পুত্রের দাবিদারের দাবি বাস্তবে অসম্ভব না হয়। যেমন, দাবিদার পিতা ও দাবিকৃত পুত্রের বয়সের ব্যবধান এত বেশি যে, বাস্তব ক্ষেত্রে তাহাদের পিতা-পুত্র হওয়া অসম্ভব।

৪৭)

ধারা-৩২৮ সাক্যের দ্বারা নসব (বংশপরিচয়) প্রমাণ (ক) যে পরিস্থিতির বর্তমানে কোন নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক আছে বলিয়া অনুমান করা যায় সেই পরিস্থিতিতে তাহাদের সভানের বংশপরিচয় প্রতিষ্ঠিত হইবে।

(খ) কোন নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে কিন্তু সন্তানের জন্মলাভের সময় শরীআতের নির্দিষ্ট নীতিমালার কোনটি প্রযোজ্য হইবে এই বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে সেই ক্ষেত্রে সাক্ষ্য ও যুক্তি (5L

Li০) দ্বারা সন্তানের নসব (বংশপরিচয়) প্রতিষ্ঠিত হইবে।

বিশ্লেষণ

সাক্ষ্য দ্বারাও নসব (বংশপরিচয়) প্রতিষ্ঠিত হইতে পারে। যেমন কেহ যদি স্ত্রীকে তালাক দেয় এবং তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী ইদ্দত পালনরত অবস্থায় সন্তান প্রসব করে আর স্বামী ঐ সন্তানকে অস্বীকার করে তবে ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে দুইজন পুরুষ অথবা দুইজন স্ত্রীলোক ও একজন পুরুষের সাক্ষ্য দ্বারা সন্তানের নসব (বংশপরিচয়) প্রতিষ্ঠিত হইবে। কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফের মতে একজন (সংশ্লিষ্ট) ধাত্রীর সাক্ষ্য দ্বারাই বংশপরিচয় প্রতিষ্ঠিত হইবে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি

ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন।

شهادة البناء جائزة فيما لا يستطيع الرجال النظر اليها .

“পুরুষের পক্ষে যেসব বিষয়ে দেখা সম্ভব নহে সেইসব ক্ষেত্রে নারীদের সাক্ষ্য গ্রহণ বৈধ।”

ধারা-৩২১ স্বীকৃতি দ্বারা বংশপরিচয় প্রতিষ্ঠিত হইবে এ ক্ষেত্রে শিশুর বংশপরিচয় অজ্ঞাত হইবে সে ক্ষেত্রে শরীআতের বিধান অনুসারে স্বীকৃতির মাধ্যমে নসব (বংশপরিচয়) প্রমাণ করা যাইবে। তবে সত্যায়ন

করিলে উক্ত স্বীকৃতির প্রভাব পিতা-মাতা ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সন্তান দ্বারা অন্য কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের উপর পড়িবে না।

বিশ্লেষণ

কোন শিশুর বংশপরিচয় যদি প্রচলিত নিয়ম অনুসারে তাহার পিতা হইতে প্রমাণিত না হয় অর্থাৎ গর্ভস্থিতি লাভ করিবার সময় তাহার পিতা-মাতার মধ্যে বিশুদ্ধ দাম্পত্য সম্পর্ক বিদ্যমান থাকা প্রমাণিত না হয় তাহা হইলে ইসলামের বিধান অনুসারে স্বীকৃতির মাধ্যমে বংশপরিচয় প্রতিষ্ঠিত করা যাইতে পারে। কিন্তু অন্য কোন ব্যক্তির সহিত যদি শিশুর বংশপরিচয় বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত হয় তাহা হইলে সেই

৪৭১

ক্ষেত্রে বংশপরিচয়ের স্বীকৃতি অকার্যকর হইবে। অর্থাৎ যে ক্ষেত্রে কোন শিশুর বংশপরিচয় অনিদি ও অজ্ঞাত হইবে কেবল সেই ক্ষেত্রে স্বীকৃতির মাধ্যমে বংশ পরিচয় এই মূলনীতি প্রযোজ্য হইবে।”

ধারা-৩৩০ বংশপরিচয়ের স্বীকৃতি অপ্রত্যাহারযোগ্য শরীআতের বিধান অনুসারে বংশপরিচয়ের স্বীকৃতি দেওয়া হইয়া থাকিলে তাহা প্রত্যাহার করা যাইবে না।

বিশ্লেষণ

কোন পিতা যদি কাহাকেও তাহার সন্তান বলিয়া স্বীকার করে এবং শরীআতের বিধান অনুসারে বাস্তবে তাহা সব হয়, তবে পুনরায় স্বীকৃতি প্রত্যাহার করিবার এখতিয়ার তাহার থাকিবে না।

ধারা-৩৩১

সত্তক (পালক পুত্র-কন্যা) গ্রহণ ইসলামী বিধানে কাহাকেও দত্তক (পালক পুত্র-কন্যা) হিসাবে গ্রহণ করার কোন কার্যকারিতা নাই।

বিশ্লেষণ

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত যায়েদ (রা)-কে দত্তক (পালক পুত্র) হিসাবে গ্রহণ করিয়াছিলেন। যায়েদ (রা) তাঁহার স্ত্রী যয়নব (রা)-কে তালাক দিলে এবং আল্লাহর নির্দেশে রাসূলুহ্ (সা) তাঁহাকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করিলে লোকেরা সমালোচনা শুরু করে যে, তিনি তাহার পুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিবাহ করিয়াছেন। এই মর্মে কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয় :

ما كان محمد أبا أحد من رجالكم .

“মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নহে।

অর্থাৎ যায়েদ ইবন হারিসা (রা), যাঁহাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম পালকপুত্র হিসাবে গ্রহণ করিয়াছিলেন, সত্যিকার অর্থেই তাঁহার পুত্র হইয়া যান নাই যে, তাঁহার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে নবী (সা) বিবাহ করিতে পারিবেন না। উক্ত আয়াত হইতে এই সিদ্ধান্তে পৌছা যায় যে, কাহাকেও পালকপুত্র হিসাবে গ্রহণ করিলে শরীআতের বিধানে সে সন্তানের মর্যাদা ও অধিকার প্রাপ্ত হইবে না।

তথ্যনির্দেশিকা ১.।

as! লিসানুল আরাব, শিরো, নিকাহ)।

النكاح عقد يحل به استمتاع كل من الزوجين بالاخر

(কাওয়াইদুল ফিকহ, পৃ. ৪৮৭)। “

৪৭২

.3

النكاح عقد بفير حل استمتاح الرجل من امراة لم يمنع

fLA

L Ki (আল্-কামূসুল ফিকহী, পৃ. ৩৬০; শামী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩-৫)। বুখারী, কিতাবুস সাওম, বাব ১০; নিকাহ; আবু দাউদ, নিকাহ, বাব ১, নং ২০৪৬; মুসলিম, নিকাহ, বাব ইসতিহবাবিন নিকাহ; নাসাঈ, নিকাহ, বাব হিসিন নিকাহ; তিরমিযী, নিকাহ, বাব ফাদলিত তাবীজ, নং ১০৮১; ইবন মাজা, নিকাহ, বাব ফাদলিন নিকাহ, নং ১৮৪৫; মুসনাদ আহমাদ, নং ৩৫৯৬, ৪০২৩, ৪১১২। তিরমিযী, কিতাবুল জিহাদ, বাব মা জাআ ফী হান্দি বুলুগির রাজুল; ইবন মাজা, কিতাবুল হুদূদ, বাব মান লা ইয়াজিবু আলাইহিল হাদু; মুসলিম। তাফসীরে ইবন কাছীর, বৈরূত ১৪০০/১৯৮০, ১২, পৃ. ৪৫২-৩। কানযুদ দাকাইক, দিল্লী সং, পৃ. ১০০; কুদূরী, করাচী সং, পৃ. ১৪৮-৯; আল-মুগনী, ৩খ, ৪৪৯ (মাজমূআহ কাওয়ানীনে ইসলামী হইতে গৃহীত, ১খ, পৃ. ৭৪, টীকা ৯)। আল-আহকামুশ শারীআহ ফিল-আইওয়ালিশ-শাখসিয়াহ, মিসর, ধারা ৩৪ :

ليس للولى شرطا لصحة نكاح الحر والحرة العاقلين

البالغين بل ينعقد نكاحا بغیر ولی .

ان

বাদাইউস সানাই, ২খ, ২৪৮; নাসাবুর রায়াহ, ৩২, ১৭২; আবু দাউদ, নাসাঈ।

আয়্যিম ( 1) বলা হয় সকল প্রকারের প্রাপ্তবয়স্ক অবিবাহিত নারী-পুরুষকে, সে সায়্যিবা (প্রাপ্তবয়স্ক বিধবা ও বিপত্নীক, তালাকের কারণে হউক অথবা স্বামী বা স্ত্রী মারা যাওয়ার কারণে) হউক বা বাকিরাহ (প্রাপ্তবয়স্ক কিন্তু অবিবাহিত)। মুওয়াত্তা, নিকাহ, বাব ২; তিরমিযী, নিকাহ; আবু দাউদ, নিকাহ; মুসলিম, নিকাহ; নাসাঈ, নিকাহ।

বুখারী, নিকাহ; ইবন মাজা, নিকাহ; আবু দাউদ, নিকাহ। বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবু দাউদ, অধ্যায় নিকাহ। J aJ19 LAL i <JT; আল-মুখতাসার ফিল ফিকহ,

কিতাবুন নিকাহ।

ফাতওয়া আলামগিরী, ১ম খণ্ড, কিতাবুন নিকাহ, পৃ. ২৬৭। কানূন আল-আহওয়ালিশ-শাখসিয়া, সিরিয়া, ধারা ৭; আরও দ্র, বাদাইউস সানাই, কিতাবুন নিকাহ, ২২, পৃ. ২৩৩; ফাতওয়া আলমগিরী, কিতাবুন নিকাহ, ২২, পৃ. ২। বাদাইউস সানাই, কিতাবুল ওয়াকালাত, ৬খ, পৃ. ৩৩; দুররুল মুখতার, রদূল মুহতারের পার্শ্বটীকায়, ৪খ, ৪১৭; মাজমাউল আনহুর, কিতাবুল ওয়াকালাত, ২খ, পৃ. ২৩২; ফাতহুল মাঈন, খ, পৃ. ৯৪-৫; আলমগিরী, কিতাবুল ওয়াকালাত, ৩খ,

পৃ. ২৫৪।

আল-মাবসূত, ৫, পৃ. ২।

১৯. ফাতাওয়া কাযীখান, ভারতীয় মুদ্রণ, পৃ. ১৫৭:

وفي الحديث المعروف البكر تستامر في نفسها وسكوتها رضاها فدل ان اصل الرضا منها معتبر رضاء المراة اذا كانت بالغة بكرا كان أو ثيبا فلا يملك الولی اجبارها على النكاح

আল-জামি লি-আহকামিল কুরআন, আল-কুরতুবী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২০, ৪: ৩ আয়াতের অধীনে। এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশে কার্যকর পারিবারিক আইনের সংক্ষিপ্তসার নিম্নরূপ : আদালতের লিখিত অনুমতি ব্যতীত কোন ব্যক্তি এক স্ত্রীর বর্তমানে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ

৪৭৩

করিতে পারিবে না। আদালত নিম্নোক্ত বিষয়ে সন্তুষ্ট হইলেই কেবল দ্বিতীয় বিবাহের অনুমতি দিবে। ১. সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আর্থিক দিক হইতে সচ্ছল, ২. এক স্ত্রীর বর্তমানে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণের মধ্যে শরঈ দৃষ্টিকোণ হইতে কল্যাণ নিহিত আছে, ৩, স্ত্রীদের মধ্যে সুবিচার প্রতিষ্ঠা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা নাই, ৪. দ্বিতীয় বিবাহ করার জন্য প্রথম স্ত্রীর অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন নাই, ৫. বিনা অনুমতিতে কোন ব্যক্তি দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করিলে তাহা বৈধ হইবে বটে, কিন্তু আগেই অনুমতি অর্জন না করার অপরাধে অপরাধী হইবে। রহুল মুহতার ও দুররুল মুখতার, ২খ, বাবুল মাহরিম, পৃ. ৩৫৯; ফাতহুল মাঈন শারহি কানযুদ দাকাইক, অনুচ্ছেদ মুহর, ২খ, পৃ. ৬০: ফাতহুল কাদীর, ইদ্দাত, ৩খ, পৃ. ২৭৯; মাজমাউল আনহুর, মুহরিমিত, ১খ, পৃ. ৩৫৫; বাহরুররাইক, মিরসীয় সং,

৩, পৃ. ১১১। ২২. কোন কোন বিবাহকে ফাসিদ ও বাতিল উভয় শ্রেণীভুক্ত করা হইয়াছে। বাতিল

বিবাহ সংশোধনযোগ্য নহে, কিন্তু ফাসিদ বিবাহ সংশোধনযোগ্য।

২৩, ৪:২৩ আয়াতের ব্যতিক্রম লক্ষণীয়।

২৪. মুওয়াত্তা ইমাম মুহাম্মাদ (র), বাংলা অনু.. ই. ফা. বা, পৃ. ৩১৮:৯, হাদীস নং

৫৪৬। ২৫. মুওয়াত্তা ইমাম মালেক, বিবাহের প্রস্তাব অনুচ্ছেদ দ্র.।

আল-বাদাই ওয়াস-সানাই, মিসর, ২ খ, পৃ. ২৮৮ :

او كان سكوتا عن التعجيل والتاجيل لان حكم السکوت حكم المبجل .

২৭. বন্দুল মুহতার, মিসরীয় সংস্করণ, ২খ, পৃ. ৩৫৯ (মাজমূআহ কাওয়ানীন হইতে)

শারহুল বিকায়া, ২য় খণ্ড। ২৯. ফতওয়া আলামগীরী, বৈরূত ১৪০০/১৯৮০, ১, পৃ. ৩১২। ৩০. মাজমূআই কাওয়ানীন, বাহরুর রাই-এর বরাতে, মিসরীয় সং, ২খ, পৃ. ১৬১-২। ৩১. আলমগিরী, ঐ, পৃ. ৩১২। ৩২. আল-বাহর, করাচী সং, ৩খ, ১২৮; আলমগিরী, বৈরূত নং ১৪০০/১৯৮০, ১২,

পৃ. ২৯৩। আলমগিরী, ঐ পৃ. ২৯৩-৪। আলমগিরী, ১খ, পৃ. ২৯৪। আলমগিরী, ১খ, পৃ. ২৯৩-৪। হিদায়া, ইংরাজী সং, পৃ. ৩৭। আল-মাবসূত, ৪খ, পৃ. ২২০; রদুল মুহতার, ২খ, পৃ. ৩২৩।

ফাতওয়া কাযীখান, ১ম খণ্ড, কিতাবুন নিকাহ, পৃ. ১৬৬।

ইসলামী ফিকহ (উ), মাওলানা মুজিবুল্লাহ নদবী, মাকতাবা আল-হাসানাত,

দিল্পী ১৯৮১ খৃ., পৃ. ৩৩১। ৪০. আল-হিন্দিয়া, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৮৫। ৪১. ফাতাওয়ায়ে কাযীখান, ভারতে মুদ্রিত, প্রথম খণ্ড, কিতাবুন নিকাহ, পৃ. ১৬৬।

সুনান আবু দাউদ, কিতাবুর রিদা, বাব ৩৪ এবং সিহাহ সিত্তার অন্যান্য গ্রন্থ। ৪৩. সূরা আহকাফ, আয়াত ১৫। ৪৪. সূরা লুকমান, আয়াত ১৪। ৪৫. হিদায়া আওয়ালাইন, পৃ. ৪১৩, অধ্যায় সুবৃতুন নাসাব। ৪৬. হিদায়া, আওয়ালাইন, পৃ. ৪১৩, অধ্যায় সুবৃতুন নাসা। ৪৭. সূরা আহযাব: ৪০।

2 Comments
Collapse Comments

Ma Sah Allah….. Aploguka bohot bohot sukriya shab……….
Outstanding

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *