১১. ভাটপাড়া
নৈহাটীর ক্রোশখানেক দক্ষিণে ভাটপাড়া। সেকালের ঐ অতিবিখ্যাত জনপদটির অবস্থান জানাতে একালীন পাঠক-পাঠিকাকে বলে দিতে হবে : কাঁকিনাড়া ইস্টিশানের কাছে!
কাশী, নবদ্বীপ, ত্রিবেণীর সঙ্গে সমান তালে সংস্কৃত চর্চার দীপশিখাটি প্রজ্জ্বলিত রেখেছিলেন এখানকার পণ্ডিতসমাজ। কোন সামাজিক বিধানদানে ভাটপাড়ার অধিকার ছিল তুল্যমূল্য। ভাটপাড়া কথাটা এসেছে ‘ভট্টপল্লী’ থেকে। বলা বাহুল্য : ভট্ট অর্থে ব্রাহ্মণ।
এই জনপদের অযুত-নিযুত পণ্ডিতদের ভিতর দু-একজনের কথা বলি :
হলধর তর্কচূড়ামণি (জন্ম : 1790) : স্ববংশীয় জনার্দন বিদ্যাবাচস্পতি মহাশয়ের প্রিয় শিষ্য। প্রখ্যাত ন্যায়াধীশ। নব্যন্যায়ের একটি ‘পত্রিকা’ প্রকাশ তাঁর অসামান্য পাণ্ডিত্যের পরিচয়।
রাখালদাস ন্যায়রত্ন (জন্ম : 1829) : সীতানাথ বিদ্যাভূষণের সুযোগ্য পুত্র। প্রথমে ব্যাকর সাহিত্য ও অলঙ্কারশাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি লাভ করে নৈয়ায়িক হলধর তর্কচূড়ামণি এবং যদুনাথ সার্বভৌমের নিকট ন্যায়শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। নব্যন্যায়ে তাঁর উদ্ভাবিত যুক্তি-কৌশল এখনো আলোচিত হয়। ভারতীয় পণ্ডিতসমাজ যখন ‘মহামহোপাধ্যায়’ উপাধি বিতরণের আয়োজন করেন তখন প্রথম আটজন মহাপণ্ডিতের ভিতর রাখালদাসকেও ঐ উপাধি প্রদান করা হয়। তাঁর শিষ্য শিবচন্দ্র সার্বভৌমও পরে (1903) এই উপাধি লাভ করেন।
নিমাই তর্কপঞ্চানন—ইনিই নিমাইচন্দ্র শিরোমণি কিনা ঠিক জানি না।
শিবচন্দ্র সার্বভৌম (জন্ম: 1847): রাখালদাসের সুযোগ্য শিষ্য। পশ্চিমদেশীয় বৈদিক শ্রেণীর ব্রাহ্মণ। ভট্টপল্লীতেই বসবাস করতেন। প্রথম জীবনে পিতা রঘুমণি বিদ্যাভূষণ ও খুল্লতাত জয়রাম ন্যায়ভূষণের নিকট শিক্ষা করতেন। মাত্র ষোলো বৎসর বয়সে ‘পাণ্ডবচরিত্রম্’ নামে একটি সংস্কৃত নাটক রচনা করে বিখ্যাত হন। পরে মূলাজোড় সংস্কৃত কলেজে আমৃত্যু অধ্যক্ষের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন, এবং তখনই ‘মহামহোপাধ্যায়’ উপাধি লাভ করেন।