1 of 2

১০. সন্ধের আগে আগেই

১০

সন্ধের আগে আগেই পৃথু, ঠুঠা আর শামীম এসে পৌঁছেছিল দিগা পাঁড়ের কুঁড়েতে। শামীমের বি এস এ মোটর সাইকেলে তিনজন আগে পিছনে বসে লাফাতে লাফাতে আপাদমস্তক ধুলোর আবির মেখে।

এই দিকটা গিরিশদার বাড়ি, পিরপিরি নালা, এবং পুন্নার জঙ্গলের একেবারেই উল্টোদিকে। ঘন গভীর জঙ্গল এদিকে। হাটচান্দ্রা থেকে দূরত্বও প্রায় তিরিশ মাইলের মতো। হাঁলো নদী বয়ে গেছে দিগার কুঁড়ের পাশ দিয়ে। এই জঙ্গলই গড়িয়ে গিয়ে মিশে গেছে সুফকর, বাঘমার, ঘাঙ্গার এবং গোন্দলার দিকে। অন্যদিকে চলে গেছে কানহা-কিসলি-ইন্দ্রা। মোতিনালা চিলপির দিকে বেরিয়ে গেছে অন্য আরও একটি হাত। অন্যতর দিকে অন্যতর হাত ছড়িয়ে গেছে বাইহার, বালাঘাট, সীওনী ইত্যাদি জায়গা হয়ে। সেই সীওনীর কাছে নতুন ন্যাশনাল পার্ক গড়ে উঠছে একটি। নাম পেঞ্চ। মধ্যপ্রদেশের এই অঞ্চলে শুধু জঙ্গলই জঙ্গল; পাহাড়ই পাহাড়। দশ পনেরো মাইল বাদে বাদে ছোট কোনও বস্তি, অথবা সামান্য জনপদ। এখনও শান্তি আছে; নির্জনতা আছে এখানে।

এই সীওনিতেই রুডইয়ার্ড কিপলিং-এর ‘মোওগুলি’র বাস ছিল বলে অনেকেরই ধারণা। কুমায়ুঁকে যেমন করবেট-কানট্রি বলে সকলেই জানেন, সীওনী এবং তার চারপাশের অঞ্চলকেও তেমনই, সকলে বলে “কিপলিং কানট্রি।”

শামীম মিঞা রহস্যময় লোক। হাটচান্দ্রার ছোট্ট মসজিদটার পাশে যে ধুলিধূসরিত এবড়ো-খেবড়ো পথটি আছে, যে-পথের দু-পাশে লাল কাপড় মোড়া, বড় বড় হান্ডার উপরে সাজানো কাবাব, চাপাটি, বাখ্‌খরখানি আর রোমালি রোটি, বিরিয়ানী আর বড়া গোস্ত-এর দিল-খুশ গন্ধে যে-গলির বাতাস দিনে রাতে ম’ ম’ করে সেই রাস্তারই মোড়ে শামীমের ঘড়ি, চশমা, আর লাইটার সারাই-এর দোকান। সেটাকে দোকান না বলে, গর্ত বললেই ভাল হয়। দোকানের সাইজ চার ফিট বাই তিন ফিট। তারই মধ্যে শামীম হাঁটু মুড়ে কোনওরকমে অষ্টাবক্র মুনির মতো বসে থাকে। দোকানে নতুন ঘড়ি, চশমা, লাইটার বলতে একটিও থাকে না। সামান্য কয়েকটি চশমার ফ্রেম এবং ঘড়ির ব্যান্ড। লাল-নীল-সোনালি-রুপোলি। উত্তর ভারতীয় মুসলমানী রুচির। সারাই-এর জন্যে কয়েকটি হাতঘড়ি, টেবল-ঘড়ি। ব্যাস। দেওয়ালে বম্বে সিনেমার রেখার আধ-বন্ধ আধ-খোলা চোখের গা-গরম করা অ্যাফ্রোডিসিয়াক্‌ ক্যালেন্ডার।

শামীম-এর পকেট সবসময়ই প্রায় শূন্য। ব্যতিক্রমহীন ভাবেই শুন্য। কিন্তু হৃদয়, প্রেম এবং রসজ্ঞানে টইটম্বুর। তার বয়স তিরিশ। বিবির সংখ্যা দুই। এবং দু’পক্ষ নিয়ে ছেলেমেয়েদের সংখ্যা দশ। মিঞার সংসার ঠিক কী উপায়ে চলে, এ রহস্যের কিনারা পৃথু তার স্থূল বুদ্ধিতে কখনও করে উঠতে পারেনি।

শামীম সব সময়ই হাসিখুশি, অফুরন্ত উৎসাহ তার। কথায় কথায় শের-শায়ের আওড়ায়, এবং শশীকাপুরের ঢঙ নকল করে হাঁটে। কথাও সেরকমই বলে। নিন্দুকেরা অনেকে আড়ালে মন্তব্য করে শামীমের দু বউয়েও শানায়নি, তাই একজন উপরি প্রেমিকাও আছে। তাই-ই ও সবসময় এমন চলকে চলকে চলে।

পৃথুর অবশ্য সন্দেহ আছে এ কথার সত্যতা সম্বন্ধে। শামীম এমনই জন্মপ্রেমিক যে, গা-ঝলসানো, চোখ-জ্বালানো লু, অথবা আঙুল-বাঁকানো শীতরাত্রির বরফ-ঝরা আকাশ কিংবা পাগলের কথা অথবা ছাগলের খাদ্যদ্রব্য থেকেও ও ওর রোম্যান্টিসিজম নিংড়ে নিতে জানে। পৃথুর নিজের ধারণা যে, কোনও মানবীর খেয়ালখুশির উপর শামীমের প্রেমিক সত্তা আদৌ নির্ভরশীল নয়। পৃথিবীর তাবৎ শুষ্কতা এবং রুক্ষতা থেকেও ক্যাক্টাস-এর মতোই রস শুষে নেয় মানুষটা।

আজ রাতে শামীমের ঠুঠা বাইগার সঙ্গে দিগা পাঁড়ের নদীপারের সান্নাটা কুটিরে আসার উদ্দেশ্য একটাই। চুরি করে চিতল হরিণ মারবে ঠুঠা ও শামীম। বহুদিন কাবাব খায়নি বলে তো বটেই, তাছাড়া মহম্মদ সাবীর-এর তেরো নম্বর ছেলের ছুন্নৎ কাল। শিকারির বাড়ির দাওয়াত-এ শিকার-করা বুনো জন্তুর একটিও পদ না থাকলে শিকারি এবং তার ইয়ার-দোস্ত সকলেরই দারুণ অসম্মানের কারণ ঘটে। পৃথু এখন শিকার-টিকারের মধ্যে একেবারেই নেই। তবে একসময় ও অনেকই শিকার করেছে। পারমিট নিয়ে, পারমিট না নিয়েও; এই সব অরণ্য পর্বতে বাবার সঙ্গে, বাবার বন্ধুবান্ধব এবং নিজের বন্ধুদের সঙ্গে। কিন্তু আজ প্রায় পনেরো বছর শিকারের সঙ্গে নফরৎ। ঠিক কেন যে, তা বুঝিয়ে বলতে পারবে না। বাইরের বিধিনিষেধ তো আছেই, তাছাড়া মন থেকেই সাড়া পায় না আজকাল। অল্প বয়সে বোধ হয় একটা বাহাদুরী-প্রবণতা ছিল। তাছাড়া ওর বাবার নিজের প্রচণ্ড উদ্বেল উৎসাহে অনুপ্রাণিত হয়ে যখন ওর দশ বছর বয়স তখন থেকেই জঙ্গলে জঙ্গলে বন্দুক হাতে ঘুরেছিল ও। এ অঞ্চলের এমন জঙ্গল নেই যেখানে পৃথু যায়নি বা এমন জাতের জানোয়ারও নেই যে, পৃথু শিকার করেনি এক সময়। কিন্তু সে সব পিছনে ফেলে-আসা দিনেরই কথা।

শিকার বন্ধ হয়ে গেছে, তবে শিকারি বন্ধুবান্ধবদের এবং জঙ্গলের সঙ্গে প্রগাঢ় সখ্যতার শিকড় এখনও গভীরে প্রোথিত রয়ে গেছে। হয়তো থাকবেও বাকি জীবন। জঙ্গল-পাহাড়, নদী, বাসী-মাঠ, শিকারি বন্ধুরা শুধু একতরফা দিয়েই গেছে তাকে; বিনিময়ে চায়নি কিছুই।

হৃদয়ের মামলাতে দেনা-পাওনা থাকার কথা নয়, তবুও থাকে। কিন্তু শিকারের ইয়ার-দোস্তদের প্রেমের সঙ্গে কোনও নারীর প্রেম কখনই তুলনীয় নয়। শিকারি মাত্র জানেন একথা।

আজকে পৃথুকে প্রায় জোর করেই ধরে নিয়ে এসেছে ওরা। ওর ভুমিকাটা, অনেকটা পুরনো দিনের যাত্রাদলের বিবেকেরই মতো!

এ এক অদ্ভূত জগৎ। এই শিকার ও শিকারিদের জগৎ। তুফান-তোলা। সবচেয়ে বড় জুয়ার নেশার চেয়েও অনেক বেশি তীব্র এ নেশা। পুরুষালি নেশা। খোলা আকাশের নীচে, পরের জীবন এবং নিজের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার নেশা। এ নেশার ঝাঁঝের মধ্যে, গ্যাঁজাল ফ্যানার মধ্যে, একদিন অঙ্গাঙ্গীভাবে মিশে ছিল বলেই পৃথু জানে যে, যারা শিকারকে ছোট চোখে দেখেন তাঁরা অন্যায় করেন। তাঁরাও নিশ্চয়ই অন্যায় করেন, যাঁরা শিকারকে মহান কোনও ব্যাপার বলে প্রচার করেন। সবকিছুরই মতো এই প্রাণবন্ত প্রাণনিধনের বনময় খেলারও বোধহয় ভাল এবং মন্দ দিক দুই-ই আছে।

ছেলেবেলাতে পৃথুর কিপলিং-এর ‘জাংগল-বুক’-এর অনেক গল্পই মুখস্থ ছিল। তার মধ্যে “কা-আজ হানটিং”, “রিক্কি-টিকি-টাভি” ইত্যাদি এখনও পরিষ্কার মনে আছে। ‘লেটিং ইন দ্যা জাংগল’ চ্যাপটারটাও চমৎকার লাগত ওর।

বাবার সঙ্গেই প্রথমবার সীওনীতে এসেছিল পৃথু। তখন ও ছোট্ট ছেলে। বাবা যখন বলেছিলেন, এই সীওনীই রুডইয়ার্ড-কিপলিং-এর “জাংগল-বুক”-এর মোওগলির সীওনী তখন পৃথুর উত্তেজনার শেষ ছিল না।

টাইগার! টাইগার!

এখনও ও মুখস্থ বলে। টুসুকেও শিখিয়েছিল পৃথু,

“হোয়াট অফ দ্যা হান্টিং, হান্টার বোন্ড?/ব্রাদার, দ্যা

ওয়াচ্‌ ওজ লঙ এন্ড কোল্ড।/হোয়াট অফ্‌ দ্যা কোয়ারী

ঈ ওয়েন্ট টু কিল?/ ব্রাদার, হি ক্রপস ইন দ্যা জাঙ্গল

স্টিল।/ হোয়্যার ইজ দ্যা পাওয়ার দ্যাট মেড ইওর প্রাইড?/

ব্রাদার, ইট এব্‌ব্‌স ফ্রম মাই ফ্ল্যাঙ্ক এন্ড সাইড।/

হোয়্যার ইজ্‌ দ্যা হেস্ট দ্যাট ঈ হারী বাই?/ ব্রাদার,

আই গো টু মাই লেয়ের টু ডাই।”

আহা!

“লেটিং ইন দ্যা জাংগল”-এর সেই গানটিও ভোলবার নয় কোনওদিনও। পরিণত বয়সে পৌঁছেও যখনই জঙ্গলে রাত কাটিয়েছে ও, যখনই পূবের আকাশে অন্ধকার ফিকে হয়ে এসেছে, ঊষার ঠিক আগের রাত যাই-যাই মুহূর্তে, লালিমার জরায়ুর মধ্যে থেকে যখনই লাল রঙের তারল্য অতি আস্তে আস্তে আভাসিত হতে থেকেছে; তখনই পৃথুর মনে পড়েছে :

“হো! গেট টু লেয়ের! দ্যা সানস্ অ্যাফ্লেয়ার বিহাইন্ড দ্যা ব্রিদিং গ্রাস/এন্ড ক্রিকিং থ্রু দ্যা ইয়াং ব্যাম্বু দ্যা ওয়ার্নিং হুইসপার্স পাস।/ বাই ডে মেড স্ট্রেঞ্জ দ্যা উডস্ উই রেঞ্জ উইথ ব্লিঙ্কিং আইজ উই স্ক্যান/হোয়াইল ডাউন দ্যা স্কাইজ, দ্যা ওয়াইল্ড ডাক ক্রাইজঃ দ্যা ডে—দ্যা ডে, টু ম্যান।”

মধ্য প্রদেশের এই সব অঞ্চলে ‘পান্‌কা’ বলে একরকম আদিবাসীরা আছে। এদের সামাজিক রীতিনীতি দেখলে শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে। এরা সবাই-ই কিন্তু কবীর-পন্থী। কবীর দাস-এর মতোও পথের অনুসরণকারী। কিপলিং-এর ‘জাংগল-বুক’-এ “আ সং অফ কবীর”, বলেও একটি গান আছে। কিপলিং যে এ অঞ্চল নিয়েই লিখেছেন তাঁর ‘জাংগল-বুক’, সে বিষয়ে বোধহয় কারওই সন্দেহ থাকার কথা নয়। ‘জাংগল-বুক’-এ আরও একটি গান আছে। তার নাম হচ্ছে “হান্টিং সং অফ্‌ দ্যা সীওনী প্যাক।” সীওনী নামটা গেঁথে রয়েছে কিপলিং-এর লেখাতে।

কিপলিং-এর কথা হলেই আনন্দ হয় এই ভেবে যে, তাঁর যখন বয়স মাত্র বেয়াল্লিশ তখনই সাহিত্যের নোবেল প্রাইজ তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। আরেকজন ভারতীয় অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ছিলে জিম করবেট। সেই প্রচার-বিমুখ, নম্র-স্বভাব, নীরব, প্রায় কবি শঙ্খ ঘোষের মতোই লাজুক, অন্তর্মুখী মানুষটিও বড় সাধারণ লেখক ছিলেন না। তাঁর শিকার-কাহিনীগুলির কথা না হয় ছেড়েই দেওয়া গেল, শুধু “জাঙ্গল-লোর” বা “মাই ইন্ডিয়া”র মতো বইয়ের জন্যেও তাঁর নোবেল প্রাইজ পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু উচিত কর্ম এ পৃথিবীতে ক’টাই বা হয়? সম্মান যোগ্যজনে বর্ষিত হলেই আজকাল অবাক লাগে পৃথুর।

শামীম চায়ের বন্দোবস্ত করতে গেল ভেতরে। চায়ের প্যাকেট আর ঝাল লেড়ে বিস্কুট নিয়ে এসেছে সঙ্গে করে। বেলা পড়ে আসছে তাই বাইরে আগুন জ্বালানোর বন্দোবস্ত করেছিল ঠুঠা। শীতও পড়ে গেছে। আগুনের পাকা-পোক্ত একটা জায়গা ছিলই দিগার কুঁড়ের সামনেটাতে। মস্ত বড় একটা হলুদ গাছের ঝরে-পড়া গুঁড়ি সেখানে টেনে নিয়ে এসে ফেলে রেখেছিল। পাতা, খড়কুটো, ভাঙা শুকনো ডালপালা জড়ো করে এনে আগুন করল ঠুঠা। শামীম ততক্ষণে কুঁড়ে থেকে দিগার লোটাটা নিয়ে এসে আগুনের পাশে দু’টুকরো গোলগাল পাথর বসিয়ে চড়িয়ে দিল। পাগলের মতো পুরুষ চিতল হরিণ ডাকতে লাগল হঠাৎ হাঁলোর ওপারের শেষ সূর্যের সিঁদুর-লাগা গভীর জঙ্গলে। দেখতে দেখতে আগুনের ফুটফাট শব্দের সঙ্গে জল ফোটার শোঁ-শোঁ আওয়াজ গলা মেলাল। চা হয়ে গেলে, একটি ফাটা এবং দুটি ভাল, লালচে রঙা মোটা কাচের গেলাসে চা খেল ওরা।

চা-টা খায় না দিগা। ওদের খাওয়াও শেষ হল আর পশ্চিমের আকাশ লাল করে অসংখ্য পাখির ব্যস্ত-সমস্ত ডাকাডাকির মধ্যে সূর্য অস্ত গেল।

সুর্যাস্তর অব্যবহিত আগেই বন-পাহাড়ে এক প্রচণ্ড নড়াচড়া, ব্যস্ততা এবং শোরগোল লক্ষিত হয়। বিশেষ করে, পাখিদের মধ্যে। যতক্ষণ পর্যন্ত আলোর রেশ থাকে। তারপরই, যেমন ঝুপ করে গাঁ-গঞ্জের যাত্রা-মঞ্চের কালো পর্দা নামে, তেমনই ঝুপ করে নামে এক গর্ভবতী স্তব্ধতা। অনেক কিছু হতে পারার, ঘটনাতে পারার সম্ভাবনাময় গাভীন সেই রাত নিঃশব্দে উসখুস করে, পাশ ফিরে শোয়; কথা না বলেই কথা হয় নিজের সঙ্গে।

শামীম ঘরে গিরে ওর ম্যানটন কোম্পানির আটাশ ইঞ্চি ব্যারেলের দোনলা বন্দুকটাতে একবার ক্লিনিং রড চালিয়ে, নিজের হিনা-ঈত্বর লাগানো খুশবু-ভরা রুমাল দিয়ে বন্দুকের মুখ ও গা থেকে ধুলোটুলোও ঝেড়ে এল। বড় পেয়ারের বন্দুক শামীমের। শামীমের এই বাড়াবাড়ি বন্দুক-ভালবাসা নিয়ে মাঝে-মাঝেই মজা করে সাবীর মিঞা। ওকে শুনিয়েই বলে : বিবি দো। বাল-বাচ্চা দশ/এক আসিক/মাশুক, মগর…

শামীম তবু হিরোর মতোই হাসে। সমস্ত সময়ই শামীম এমন হিরো-হিরো ভাব করে যে, মাঝে মাঝেই পৃথুর সন্দেহ হয়, এই অ্যামেচার বে-মঞ্চর অভিনয়ই বুঝি শামীমের জীবন।

তারিয়ে তারিয়ে চা-টা খেয়ে নিয়ে, একটা সিগারেট ধরিয়ে শামীম ঠুঠাকে বলল, ক্যা গুরু? অব ক্যা কিয়া যায়? আভভি চলো গে? না, জারা বাদমে? পালসা খেলেঙ্গে আজ। বহত রোজ বাদ।

ঠুঠা একটা শুকনো ডাল হলুদ গাছের রিকি-ঝিকি আগুনে গুঁজে দিয়ে ধরিয়ে নিল। তারপর ঠোঁটের ফাঁকে চুঠঠাটা গুঁজে দিয়ে মনোযোগ সহকারে চুঠঠায় আগুন ধরাল। সেই কমলরঙা আগনে ওর বাঁ গালের বাঘ-নখের আঁচড়ের গভীর দাগটিকে আরও কুৎসিত করে তুলল। সুফফর-এর কাছের হাঁকোয়া শিকারের স্মৃতি, এই দাগ। চুঠঠাটা ধরিয়ে ডালটাকে আগুনে ফিরিয়ে দিয়ে মাথা তুলে বলল; তুম যেইসা বোলোগে হিরো-মিঞা।

তারপর বলল, দ্যাখ সঙ্গে মৌলভীটাকে নিয়ে এলেই হত। মৌলভী গিয়াসুদ্দিন। এতক্ষণে শেয়ালের মতো চুপটি করে গিয়ে কমসে কম চার-চারটে বড়কা-মোরগা মেরে আনত। রাতে কী দারুন জমত তাহলে খাওয়াটা!

শামীম ঘেন্নায় থুথু ফেলল। জিভটা টাগরাতে ঠেকিয়ে একটা শব্দ করল। ছুঁচোজাতীয়। বলল, মৌলভী গিয়াসুদ্দিন বড় দাম্ভিক। তার দম্ভ কেতাবি রংবাজির, পয়সার আর তার মোরগা-মারার কেরামতির। ও একটা বেজন্মা। মুসলমানদের কুলাঙ্গার।

পৃথু ভাবছিল, মোরগা-মারার ক্ষমতাটা ওর কিন্তু সত্যিই তাজ্জব করার মতো। সে বিষয়ে সন্দেহ নেই কারও। চেক-চেক লুঙ্গি পরে, ঝুমকো-জবার মতো লেজওয়ালা মেরুন-রঙা ফেজ মাথায় দিয়ে, ঘাড়ে-গর্দানে নাটা-গাঁট্টা মৌলভী যখন পা-পুড়ে থেবড়ে বসে, হেলেদুলে মুরগির দলের দিকে ঝোপঝাড়ের আড়ালে-আড়ালে এগিয়ে যায়, তখন তাকে দেখলে মনে হয়, সত্যিই সে খুদাহর এক আশ্চর্য সৃষ্টি। শামীম অত্যন্ত ঘেন্নার সঙ্গে বলে পবিত্র কোরআন শরীফ-এর ‘সুরা নাহ্‌ল’-এর এক নম্বর ‘রুকু’র পাঁচ নম্বর ‘আয়াত’-এ অন্য জানোয়ারদেরই সঙ্গে এই মৌলভী সাহেবের কথাও উল্লিখিত হওয়া নাকি উচিত ছিল। শালে, এক আজীব জানোয়ার!

মুরগির দলের কাছে গিয়ে ডান হাতে বন্দুক বাগিয়ে ধরে, বাঁ হাতে পাতা, মাটি, কুটো নেড়েচেড়ে, পা দিয়ে ঠিক মুরগাদেরই মতন শব্দ করে মৌলভী। আর মুখ দিয়েও মুরগিদের আওয়াজ ছেড়ে ইঁ-ইঁ-এঁ-এঁ-এঁ-এঁ-এঁ, এঁ-এঁ-এঁ-এ-ইঁ…আর তার সঙ্গে সঙ্গে খচ খচ খচর খচর খচর করে আঙুল দিয়ে পাতা নাড়াচাড়ার, পোকা-খোঁজার পোক্‌-পোকারি আওয়াজ। দেখতে দেখতে নতুন হারেমের খোঁজ পেয়ে, চিরকালীন বোকাদের প্রতিভূ মদ্দা, দামড়া, ধেড়ে-মোরগা লাল-নীল বেগনে-সোনালি মাঞ্জা চড়িয়ে, তার মোরগ-পৌরুষের চেকনাই উড়িয়ে কঁক-কঁক-কঁক-কঁক করে এগিয়ে আসে। অনেক সময়ই তার পেছনে পেছনে সন্ধিগ্ধ, ঈর্ষাকাতর চিরকালীন মুরগিগুলো মানুষীদেরই মতো আসে নতুন সঙ্গ-ধরা অসতী সতীনদের চেহারা-ছবি দেখতে। ঠিক তখনই, গদ্দাম করে দেগে দেয় মৌলভী। মোরগা এবং সঙ্গে দুটো-একটা সহ-মরণে বিশ্বাসী সতী-সাধ্বী মুরগিও পা-হড়কে সড়াৎ করে পিছলে পড়ে মুখ থুবড়ে। স্বর্গের দিকে উড়ে যায়, না-উড়েই, পাখায় রোদের রঙ উড়িয়ে।

সাহসী শিকারি শামীম, মৌলভীর এই সব হরকৎ একেবারে দেখতে পারে না। ও বলল, বাঘ-বাঘিনীকে ডেকে মারত, তাও তো বুঝতাম। শালে, মোরগা-শিকারি। ডরপোক। ওর মাথার ফেজটাও একেবারে মোরগার ঝুঁটির মতো। ওকে আমিই একদিন মুরগি মারতে নিয়ে এসে ধড়কে দেব ঠিক করেছি। কাছ থেকে একটি পৌনে তিন ইঞ্চি অ্যালফাম্যাক্স এল-ইজ হুম্মচকে ঠুকে দিলেই, ইয়া আল্লাহ! বলে চুত্বর উল্টে পড়বে সুরতহরাম! মজা বুঝবে সেদিন।

ঠুঠা ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে, হচ্ছিল কখন শিকারে বেরুবে তার কথা, মধ্যে এতগুলো কথা এসে গেল মৌলভী গিয়াসুদ্দিনের। বেকার। বড় ঘোরাঘুরি করে যায় তোর কথার পথ শামীম।

পৃথু, ঠুঠার দেওয়া চুঠঠাটা পাথরের উপর বসে, পা মুড়ে আরাম করে খেতে খেতে ওদের মিছিমিছি-ঝগড়া শোনে। ফাক্‌সা—আলাপের মতোই ফাক্‌সা-ঝগড়া। সুইট-নার্থিংস-এরই মতো সুইট-বিকারিং!

ওরা সব শিকারের, জঙ্গলের বন্ধু। এমন বন্ধুত্ব বোধহয় একমাত্র লড়াইয়ের কমরেডদের মধ্যেই হতে পারে। সোস্যালিজম্‌-এরও পরাকাষ্ঠা এই বন্ধুত্বে। বিপদে, আনন্দে, ভয়ে, স্বস্তিতে এই যে কমরেডশিপ, তার দাম ধন-দৌলত দিয়ে কখনওই শোধা যায় না।

ঠুঠা বাইগা হাটচান্দ্রা শেলাক কোম্পানির নাইট-ওয়াচম্যান। কাজটা, পৃথু যখন এই চাকরিতে ঢোকে, ম্যানচেষ্টার থেকে এঞ্জিনীয়ারিং পাস করে ফিরে এসে, তখনই ঠুঠার জন্যে করে দেয়। শামীমের জন্যে একবার মাত্র একটি উপকারই করতে পেরেছিল। কোম্পানির সিলভার-জুবিলিতে, যেসব কর্মচারী প্রথমদিন থেকে কাজ করছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই একটি করে হাতঘড়ি দেওয়ার ডিসিশান নিয়েছিলেন ম্যানেজমেন্ট। তখন শামীমকেই ওই ঘড়ি-সাপ্লাই-এর অর্ডারটা পাইয়ে দিয়েছিল পৃথু। এইচ-এম-টি ঘড়ি। কমিশন বাঁধা। মোটে সাত-আটশর মতো কামিয়েছিল শামীম সেবারে।

মহম্মদ সাবীরও, পৃথুর বাবার আমলের শিকার-জগতের আরেকজন লোক। ওঁকে সাহায্য করতে পেরেও খুশি হয়েছিল পৃথু। কোম্পানির দারোয়ান-বেয়ারাদের য়্যুনিফর্ম ও জুতো সাপ্লাই করার পার্মানেন্ট অর্ডারটা ওঁকেই পাইয়ে দিয়েছিল ম্যানেজারকে বলে।

বাজারের মধ্যে, ছোট মসজিদেরই কাছে শামীমের দোকানের কিছু দূরেই মহম্মদ সাবীর-এর জুতোর দোকান। ক্যাঁটে ক্যাঁটে লাল-রঙা জমির উপর পাকিস্তানী ন্যাশনাল ফ্ল্যাগের রঙের গাঢ়-সবুজে লেখা সাইনবোর্ড—মধ্যপ্রদেশ ফ্যান্সী স্টোরস। শ্যু অ্যান্ড গান-ডিলার।

দোকানের নামটা কে ঠিক করেছিল পৃথু জানে না। দোকানে আছে জুতো-চপ্পল। দিশি-বন্দুক। টোপিওয়ালা এবং টোপিছাড়া। ব্ল্যাক গান-পাউডার। কিছু ইন্ডিয়ান অর্ডন্যান্স কোম্পানির ছররা গুলি, যে-গুলি, গুলিখোর হাঁসেরা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডানা-ঝেড়ে ফেলে দেয় অবলীলায়। এবং শিকারিকে দোয়া দিয়ে উড়ে যায় হাসাহাসি করতে করতে। এই সামগ্রী-সম্ভার সাজিয়েই দোকানকে “ফ্যান্সী” বলতে বোধ হয় একমাত্র সাবীর মিঞাই পারেন।

পৃথুর জীবনে, বক্‌রি ঈদ্‌, মুহর্‌রম, শাবে-বা-রাত, ইত্যাদি উৎসবে এবং কোনও উৎসব-অনুষ্ঠান ছাড়াই যত নেমন্তন্ন খেয়েছে, সাবীর মিঞার বাড়িতে; যত ঈত্বর ইস্তেমাল করেছে সাবীর মিঞা তার জন্যে এই দীর্ঘ সময়ে, যত ভালবেসেছে, পুরুষের ভালবাসা, শিকার-দাদার ভালবাসা, যত বকেছে, রাগ করেছে, অনুযোগ করেছে; সে সবের কৃতজ্ঞতার ঋণ মাত্র এক জীবনের সমস্ত পার্থিব সামর্থ্যের বিনিময়েও শোধ করতে পারবে না পৃথু। শুধতে অনেকই জীবন লাগবে।

আর ঠুঠা বাইগার কথা? ঠুঠার মধ্যে দিয়ে ইংরিজি শিক্ষায় শিক্ষিত পৃথু আদিম চিরন্তন ভারতবর্ষকে যেন নিত্যনতুন করে আবিষ্কার করে। ঠুঠার মতো আদিবাসীদের সহজাত জঙ্গল-পাহাড়ের গভীর-শিকড়ের সহবৎ, মূল্যবোধ, ভদ্রতা, আতিথেয়তা ওকে ছোট্টবেলা থেকেই মুগ্ধ করে এসেছে। দিগার কাছ থেকেও কম শেখেনি কিছু।

পাঁড়ে ফিরে এল লাল্লু সিংকে নিয়ে পন্নেয়া বস্তি থেকে।

এই অঞ্চলে শামীমরা আজকাল কালে-ভদ্রে আসে, তাই-ই এইদিকে জানোয়ারদের রাহান-সাহান খাল-খবিয়াৎ-এর খবর রাখেই না বলতে গেলে।

লাল্লু বলল, হাঁলো নদী পেরিয়েই একটা মস্ত বড় ভোঁর ঘাসের মাঠ আছে। সেটার পরে যে নীলগিরিয়া টিলা, সেই টিলাটার পাশ কেটে আধ মাইলটাক গেলেই টিলাটার পশ্চিমে একটা ছোট্ট ‘নুনি’। সেখানে সন্ধের পর বারাশিঙা, চিতল আর নীল গাই নুন চাটতে আসে। শুয়োরও আসে।

মুসলমান দোস্ত-এর ছেলের ছুন্নৎ অনুষ্ঠানে “হারাম” খাইয়ে “হারাম” করতে চায় না ঠুঠা। তাই-ই আজ মৃত্যু থেকে শুয়োরদের ছুটি দেওয়া মনস্থ করল ও। শামীমকে বলল, নবাবজাদা শামীম, হারামজাদাদের খেয়াল রাখিস। মারার দরকার নেই।

শামীমকে বলল ঠুঠা, তুই মান্নান মশালচিকে বরং বলে দিস ফিরে গিয়েই। যেন, চিতলের কাবাবটা একদম বঁড়িয়া হয়। লাল্লুকেও নেমন্তন্ন করে দে কাল রাতের খানা-পিনাতে। একেবারে চর্বি-নদনদে চেকনাই-ওয়ালা চিতল মারব একটা।

শামীম, হিন্দী সিনেমার কমেডিয়ানের মতো মুখ করে বলল, তুম আজীব আদমি গুরু! শিকার হবে কি হবে না তারই ঠিক নেই, নেমন্তন্ন করতে শুরু করে দিলে। হামদর্দ-দাবাখানাকি দো-বটি পাচনলভি দিয়ে দাও না অগ্রিম। খানহা ঠিক সে পচ্‌নেকা লিয়ে।

ওরা সকলেই হেসে উঠল। লাল্লুও।

শামীম আবার বলল, কি গো। দিগাজী? খাওয়া দাওয়ার কী হবে রাতে? শ্রীরামচন্দ্রর কাছে কিছু চাও না। মেহেমানদের জন্যে? তুমি হচ্ছ গিয়ে রামভগোয়ানকা হট-ফেভারিট। জিগরী-চেলা ভগবানও আজকাল একচোখ। নইলে, নাম্মী ডাকাইত, ঘর-জ্বালানো, সিন্দুক-ভাঙা, খুনী, ছোকরী-উঠোনেওয়ালা দাগী ভি আজ সাধু বনকে বৈঠা হ্যায়।

শামীম বড় বেশি কথা বলে। এই-ই ওর দোষ। অনেকদিন পর পৃথু এল দিগার কুটিরে। বড় শান্তির জায়গা এটা। এখানে ফিসফিস করে কথা বললেও তা হাঁলোর জলে আলোরই মতো প্রতিসরিত হয়ে গিয়ে নদীপারের গাছ-পাতায়, জঙ্গলের গভীরের ঘাসে-ফুলে প্রজাপতির পাখার মতোই তির তির করে কাঁপতে থাকে। শব্দর গতিবেগ পৃথু জানে। আলোর গতিবেগও জানে। যদিও এসব কিছুই জানতে ওর ভাল লাগেনি কোনওদিনও।

ভাবে তো মানুষ একা একাই। সব মানুষই। পৃথু ভাবছিল। শামীম, কি সাবীর মিঞা বা ঠুঠাকে এসব কথা বললে তারা বুঝবে না। হয়তো দিগা পাঁড়ে বুঝবে। তাও পুরোটা নয়। অথচ, তারা কোনও দিক দিয়েই পৃথুর চেয়ে নিকৃষ্ট, বা অগভীর নয়। আসলে, পৃথুর বুকের মধ্যে, মস্তিষ্কের মধ্যে অনেকগুলো কুঠুরি আছে। ওয়াটার-টাইট, এয়ার-টাইট, সাউন্ড-প্রুফ, টাইট-প্রুফ। যখন যে রকম মানসিক সমতার মানুষের সঙ্গে ও মেশে, ওঠে বসে, তখন সেই সমতার ঘরটিই শুধু খুলে দেয়। আলো-পাখা চালিয়ে দিয়ে, দরজা জানালা খুলে বসেই সেই মানুষের নিজস্ব জগতের গল্প করে। তারপর এক সময় সেই ঘর বন্ধ করে, আলো-নিবিয়ে অন্য ঘরে চলে যায়। প্রায় সব ঘরেই আগন্তুক আসে যায়। আসে—যায় না শুধু একটি মাত্র ঘরে। তার হৃদয়ের প্রেমের ঘরে। যদিও সেখানে রুষার সালঙ্কারা মূর্তি প্রতিষ্ঠিত আছে। সাড়ম্বরে। বিয়ের পরপরই ওরা জ্যাম্‌খিন্দিকার স্টুডিওতে গিয়ে তোলা, বেনারসী-পরা ফোটোটি বাঁধানো আছে দামি ফ্রেমে। ফ্রেমটা দামি। কিন্তু তাতে বাঁধানো প্রেম এখন ফোটোই হয়ে গেছে। শুধুই ফোটো। ধুলো-মলিন; বিবর্ণ। বে-কামকা। সোনা-বাঁধানো ডেঞ্চার-এর মতো রোজ আলো জ্বালিয়ে ধূপ-ধুনোও দেওয়া হয় তার সামনে। কিন্তু সে ঘরে রুষা অথবা পৃথু কেউই বাস করে না। মৃত ঘর। মৃত সম্পর্ক। অসকার-ওয়াইল্ড-এর ‘পিকচার অফ ডরিয়ান গ্রে’-র মতো পৃথুও একটি নিষ্প্রাণ ছবি হয়েই থাকে সে ঘরে। তফাৎ এইটুকুই যে, সেই ছবির চেহারায় ডরিয়ান গ্রের ছবির মতো কোনও পরিবর্তন ধরা পড়ে না। পৃথু নয়, শুধু পৃথুর অপরিবর্তনশীল মূর্তিখানিই সেখানে বাস করে।

আর একজনও বাস করতে পারত, আসতে পারত, বাস না করুক, এসে বসতে পারত অন্তত ন’মাসে-ছ’মাসে সে ঘরে দু’দণ্ড। সে, কুর্চি। কিন্তু সে আসেনি; আসে না। তাই পৃথুর হৃদয়ের এই সুন্দর সাজে সাজানো বড় দামী ঘরটি দূর্গম বনের ভিতরের নির্জন পোড়া মন্দিরেরই মতো খাঁ-খাঁ করে। ভাঙা আল্‌সেতে কামনার কবুতর কানীন স্বরে ডাকে, শেষ-সূর্যের সান্ত্বনার আলো আশ্লেষে এসে কিছুক্ষণের জন্যে ঘরটিকে, স্বামী-হারা বিধবা নারীর মুখের সৌন্দর্যর মতো এক ধরনের বিধুর সৌন্দর্য হঠাৎ ধার দিয়েই চলে যায়। কখনও, ক্বচিৎ রাতে; নরম চাঁদের আলো, চাল-ধোওয়া জলের মতো সাদা, বন-ডাইনির গাছে-পাতায় ভেসে ভেসে এসে কানে কানে অস্ফুট ভাষায় ফিসফিস করে বলে; প্রেমকে ডাকো না কেন? শরীরকে আদর দাও না কেন! আদর করো না কেন অন্য শরীরকে? বলেই, মিলিয়ে যায়, আলো-ছায়ার বুটিকাটা মৃদু ঈত্বর-গন্ধী বালাপোশ গায়ে, আধো-অন্ধকারে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *