১০. নৈহাটি
কুমারহট্ট বা হালিশহরের দক্ষিণে নৈহাটী। কেউ কেউ বলেন, ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী এখানে একটি নয়া হাট বসান—ঐ কাঞ্চনপল্লী আর ভাটপাড়া নামক দুটি প্রাচীন সমৃদ্ধিশালী গ্রামের মাঝামাঝি অবস্থানে, গঙ্গার তীরে। সেই নয়া হাট থেকে নয়াহাটি, ক্রমে নৈহাটি।
পূর্বে এর কাছাকাছি ছিল একটি ঐতিহ্যসম্পন্ন গ্রাম: গৌরিফা
ভাটপাড়া অথবা কাঞ্চনপল্লীর মতো এখানেও বাস করতেন অনেক সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত। ঊনবিংশ শতকে এটি বাঙলার এক সাহিত্য-তীর্থ হয়ে ওঠে।
বর্তমান নৈহাটী স্টেশনের পুবদিকে কাঁঠালপাড়ায় বঙ্কিমচন্দ্রের ভিটেখানি ছিল। তার অনেকটা এখন রেলওয়ে ইয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত, তবু তাঁর বৈঠকখানা ও পৈত্রিক দেবালয়গুলি রক্ষা পেয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্রের কুলদেবতা ঁবিজয় রাধাবল্লভ জীউর রথযাত্রা বোধকরি এখনো হয়ে থাকে। কাঁঠালপাড়ার সাহিত্যসেবীরা আজও সাহিত্য-সম্রাটের জন্মদিন পালন করেন, ‘বঙ্কিম-সাহিত্য সম্মেলন’ করে থাকেন।
ঐতিহাসিক মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ভদ্রাসনও ছিল নৈহাটীতে।
গৌরিফা গ্রামখানি নৈহাটী রেলওয়ে স্টেশানের কিছু উত্তরে। ‘নববিধান’ মতাবলম্বী বাগ্মী ও সমাজ সংস্কারক ব্রাহ্মধর্মের মহান নেতা কেশবচন্দ্র সেনের স্মৃতিধন্য।
উনবিংশ শতকের সেই ঐতিহ্য বহন করে আমাদের সমকালীন প্রথিতযশ কথাসাহিত্যিক বন্ধুবর সমরেশ বসুও নৈহাটীতে বাগদেবীর পতাকা উড্ডীন রেখে গেছে।