1 of 2

০৮. ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্য

অষ্টম অধ্যায় – ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা-বাণিজ্য

ধারা-১৮২

ক্রয়-বিক্রয় ( )-এর সংজ্ঞা একজনের মাল অপরজনের মালের সহিত পারস্পরিক বেসাতির ভিত্তিতে বিনিময় করাকে ক্রয়-বিক্রয় বলে।

বিশ্লেষণ

আরবী ভাষায় – শব্দটি বিক্রয় অর্থে ব্যবহৃত হয়, তবে ক্ষেত্রবিশেষে ক্রয় অর্থেও ব্যবহৃত হয়।

ফিকহ-এর মহাবলীতে কিতাবুল বুয়ু’ বলিতে পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়, শিল্প উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্য উভয়ই বুঝানো হইয়াছে। মহান আল্লাহ ব্যবসা-বাণিজ্য হালাল ঘোষণা করিয়াছেন :

واحل الله البيع

“এবং আল্লাহ্ ক্রয়-বিক্রয় হালাল করিয়াছেন” (সূরা বাকারা : ২৭৫)।

بأيها الذين آمنوا لا تأكلوا أموالكم بينكم بالباطل الأ أن

تكون تجارة عن تراض منكم.

“হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অবৈধভাবে গ্রাস করিও না, তবে তোমাদের পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসা করা বৈধ” (সূরা নিসা : ২৯)।

الأ أن تكون تجارة حاضرة ديرونها بينكم فليس عليكم

جنا ألا تكتبوها.

“কিন্তু তোমরা পরস্পর যে ব্যবসায় নগদ আদান-প্রদান কর তাহা তোমরা না লিখিলেও কোন দোষ নাই” (বাকারা : ২৮২)।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম বলেন :

৩৪8

ان النبي صلى الله عليه وسلم سئل اي الكسب أطيب

فقال عمل الرجل بيده وكل بيع مبرور.

“মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হইল, কোন্ ধরনের উপার্জন সবচেয়ে পবিত্র ও পছন্দনীয়? তিনি বলেন, মানুষের স্বীয় পরিশ্রমলব্ধ উপার্জ এবং যে কোন প্রকার বৈধ ব্যবসায়লব্ধ উপার্জন”।

ফকীহগণ এই বিষয়ে একমত যে, বৈধ পন্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় করা শরীআতের দ্বারা সমর্থিত। কারণ কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মতের ইজমা (ঐকমত্য) দ্বারা উহা বৈধ প্রমাণিত হইয়াছে এবং মানবীয় বুদ্ধিবৃত্তিও উহাকে বৈধ প্রমাণ করে।

ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে সম্পদের বিনিময় পক্ষয়ের বেসম্মতিতে হইতে হইবে। অন্যথায় উক্ত বিনিময় ক্রয়-বিক্রয় বলিয়া গণ্য হইবে না।

মহানবী (সা) বলেন :

اما البيع عن تراض

ক্রয়-বিক্রয় অবশ্যই পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে হইবে।

ধারা-১৮৩

মাল ও উহার শ্রেণীবিভাগ (ক) যে বস্তু কাজে লাগাইয়া উপকৃত হওয়া সম্ভব এবং শরীআত যাহার ব্যবহার নিষিদ্ধ করে নাই তাহাকে ‘মাল’ (UL) বলে।

(খ) মাল প্রধানত দুই শ্রেণীতে বিভক্ত ১. অস্থাবর মাস যে মাল অবিকল অন্যায় এবং তাহার প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটাইয়া স্থানান্তর করা সব তাহাকে ‘অব মাল’ Ji: Jui) বলে।

২. স্থাবর মাল : যে মাল অবিকল অবস্থায় এবং তাহার প্রকৃতির পরিবর্তন না করিয়া স্থানান্তর করা সম্ভব নহে তাহাকে “স্থাবর মাল” (

J u Jul) বলে।

বিশ্লেষণ

বাংলা ভাষায় মাল’-এর প্রতিশব্দ ‘ধন’, সম্পদ’, সম্পত্তি’, ‘ধনসম্পদ’ ইত্যাদি ব্যবহৃত হইয়াছে। মুজামু সুগাতিল ফুকাহা গ্রহে বলা হইয়াছে, মানুষের মালিকানাধীন বস্তুকে ‘মাল’ বলে। অর্থাৎ ‘মাল’ এমন জিনিস যাহার প্রতি মানুষ স্বভাবতই আকৃষ্ট হয়, যাহা সঞ্চয় করা যায়, যেমন নগদ জিনিস (টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা ইত্যাদি) এবং যাহা নগদ জিনিসের বিকল্প হইতে পারে। লিসানুল আরাব গ্রন্থে বলা হইয়াছে, “তুমি যে সমস্ত জিনিসের মালিকানা লাভ করিয়াছ তাহাই মাল’। ইসলামের দৃষ্টিতে কোন বস্তুর মধ্যে দুইটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকিলে তাহাকে মাল হিসাবে গণ্য করা

৩৫

যায়। (এক) জিনিসটি ব্যবহারের যোগ্য, অন্য কথায় বলা যায়, জিনিসটি মানুষের জন্য উপকারী। (দুই) জিনিসটির ব্যবহার শরীআতে অনুমোদন করা হইয়াছে। অন্য কথায় বলা যায়, শরীআত জিনিসটির ব্যবহার নিষিদ্ধ (হারাম) করে নাই। অতএব যে জিনিস ব্যৱযোণ নয় অথবা যাহার হার শরীআতে সরাসরি নিষিদ্ধ (হাৱাম) করা হইয়াছে তাহা মাল’ নহে। যেমন শূকর, মদ ইত্যাদি।

অস্থার মাল’ বলিতে গৃহপালিত জীবজন্তু, উৎপাদিত দ্রব্য, নগদ অর্থ, সোনা-রূপা এক কথায় যা সহজেই স্থানান্তর করা যায়। স্থাবর মাল বলিতে জায়গা জমি, দালান-কোঠা, গাছপালা ইত্যাদি বুঝায়।

ইসলামে হালাল পন্থায় সম্পদ উপার্জন, উহার রক্ষণাবেক্ষণ ও বৈধ পন্থা তোগ-ব্যবহারে উৎসাহিত করা হইয়াছে।

মহান আল্লাহ বলেন :

فاذا قضيت الصلوة فانتشروا في الأرض وابتغوا من

فضل الله واذكروا الله كثيرا لعلكم تفلحون .

“নামায সমাপ্ত হইলে তোমরা জমীনের বুকে ছড়াইয়া পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর, আল্লাহকে অধিক শরণ কর, যাহাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার (সূরা জুমু’আ : ১০)।

মহানবী (সা) বলেন :

ما جاءك منه وأنت غير مشرف عليه فخذه وتموله .

“তোমার লালসা বা আকাঙ্ক্ষা ছাড়াই যদি কোন মাল তোমার নিকট আসিয়া যায় তবে তাহা গ্রহণ কর এবং তাহা তোমার মালভুক্ত কর।”

انك أن تذر ورثتك أغنياء خير من أن تذرهم عالة .

“তোমা কর্তৃক তোমার ওয়ারিসগণকে নিঃসম্বল অবস্থায় অন্যের মুখাপেক্ষী বাহায়। যাওয়ার তুলনায় তাহাদেরকে সম্পদশালী রাখিয়া যাওয়া উত্তম।”

من قتل دون ماله فهو شهيد .

“যে ব্যক্তি নিজের মাল রক্ষা করিতে গিয়া নিহত হয় সে শহীদ।”

মালের যথেচ্ছ ব্যবহার তথা অপচয় নিষিদ্ধ করা হইয়াছে। এমনকি হালাল পপেও প্রয়োজনাতিরিক্ত ব্যয় করা যাইবে না।

মহান আল্লাহর বাণী :

و بر تبذيرا . ان المبذرين كانوا اخوان الشيطين

৩৪৬

“এবং মোটেই অপব্যয় করিও না, যাহারা অপব্যয় করে তাহারা শয়তানের ডাই” (সূরা বনী ইসরাঈল : ২৬-২৭)।

অন্যদিকে কৃপণতাও করা যাইবে না। মহান আল্লাহর বাণী :

ولا تجعل يدك مغلولة اللى عنقك ولا تبسطها كل البسط

فتقعد ملوما محسورا .

“তুমি তোমার হস্ত তোমার গ্রীবায় আবদ্ধ করিয়া রাখিও না এবং উহা সম্পূর্ণ প্রসারিতও করিও না। তাহা হইলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হইবে” (সূরা বনী ইসরাঈল : ২৯)।

نهى النبي صلى الله عليه وسلم عن اضاعة المال .

মহানবী (সা) সহায়-সম্পদ ধ্বংস করিতে নিষেধ করিয়াছেন”।

ধারা-১৮৪

ক্রয়-বিক্রয় সংঘটন ( ১as) ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে একজন ক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব (L ) প্রদান করিলে এবং অপরজন উহাতে সম্মতি (J ) প্রদান করিলে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পাদিত হইবে।

বিশ্লেষণ

ক্রয়-বিক্রয়ে সাধারণত দুইটি পক্ষ থাকে; ক্রেতা (১ ) ও বিক্রেতা (L)। যে কোন পক্ষ এব করিলে এবং অপর পক্ষ তা সমর্থন করিলে বা তাঁহাতে সম্মতি প্রদান করিলে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সংঘটিত হইবে।

বি

ধারা-১৮৫

ক্রয়-বিক্রয়ের উপাদান () ক্রয়-বিক্রয়ের উপাদান cs) নিম্নোক্ত দুই শ্রেণীতে বিভক্ত (ক) ক্রেতা বা বিক্রেতার মধ্যে একজনের প্রস্তাব ও অপরজনের সম্মতি। (খ) মালিকানা হস্তান্তর।

বিশ্লেষণ

কোন ব্যক্তির কোন বস্তু ক্রয়ের আগ্রহ প্রকাশ এবং অপর ব্যক্তির সেই বস্তু বিক্রয়ের আগ্রহ প্রকাশ করা ব্যতীত ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠিত হইতে পারে না। অতএব

৩৪৭

ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য যে কোন এক পক্ষের প্রস্তাব প্রদান (CL ) এবং অপর পক্ষের সম্মতি প্রদান ( ) অপরিহার্য। যদি এক পক্ষ বলে, আমি এই পণ্য তোমার নিকট বিক্রয় করিলাম’ এবং অপর পক্ষ বলে, আমি ক্রয় করিব তাহা হইলে ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠিত হইবে না, যতক্ষণ না বলে, “আমি ক্রয় করিলাম’ : অতঃপর ক্রেতা বিক্রেতার মালিকানায় ক্রয়মূল্য এবং বিক্রেতা ক্রেতার মালিকানায় বিক্রীত মাল সোপদ করিলে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হইবে। ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্য হইতেছে,

একটি নির্দিষ্ট পন্থায় মালিকানা হস্তান্তরিত করা।

ধারা-১৮৬

ক্রয়-বিক্রয়ের শর্তাবলী (১) ক্রয়-বিক্রয়ের শর্তাবলী চার শ্রেণীতে বিভক্ত, যথা

(ক) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার শর্তাবলী; (খ) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি কার্যকর হওয়ার শর্তাবলী; () ফয়-বিক্রয় যুক্তি হওয়ার শর্তাবলী; এবং

(ঘ) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাধ্যতামূলক হওয়ার শর্তাবলী। (২) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার শর্তাবলী নিম্নরূপ

(ক) ক্রেতা ও বিক্রেতাকে বুজিনসম্পন্ন হইতে হইবে; (৩) ক্রয়-বিক্রয়ে দুইটি পক্ষ থাকিতে হইবে।

তবে শর্ত থাকে যে, পিতা, পিতার নিয়োগকৃত ওসী এবং আদালত একই সময়ে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিত্ব করিতে পারে; প্রস্তাবের সহিত সম্মতির সামঞ্জস্য থাকিতে হইবে; বিনিময়যোগ্য বস্তুর মধ্যে মান-এর বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকিতে

হইবে; (ঙ) মাল বিদ্যমান থাকিতে হইবে;

বিক্রীত মালের উপর বিক্রেতার মালিকানা থাকিতে হইবে; (ছ) বিক্রীত মাসের মধ্যে মাল’-এর বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকিতে

হইবে; প্রস্তাব ও সম্মতি প্রদানকারীদ্বয়কে পরস্পরের বক্তব্য ব্যর্থহীনভাবে

বুঝিতে হইবে; এবং (ঝ) প্রস্তাব ও সম্মতি একই মজলিসে প্রদান করিতে হইবে। (৩) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি কার্যকর হওয়ার শর্তাবলী নিম্নরূপ

(ক) বিক্রেতাকে মালের মালিক অথবা ওয়ালী হইতে হইরে; এবং (খ) মালের উপর অপর কাহারও অধিকার থাকিবে না।

৪৬

টি

8,

+

(৪) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি শুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলী নিম্নরূপ

(ক) সাধারণ শর্তাবলী, যাহা ক্রয়-বিক্রয় সম্পাদিত হওয়ার শর্তাবলীর

অনুরূপ। গ) বিশেষ শর্তাবলী, যেমন

১. ক্রয়-বিক্রয় নির্দিষ্ট সময়সীমার জন্য হইবে না; ২. মাল ও তাহার মূল্য সুনির্দিষ্ট হইতে হইবে; ৩. ক্রয়-বিক্রয়ে কোন অতিরিক্ত শর্ত যুক্ত থাকিবে না; ৪. বিক্রীতব্য মাল ও উহার মূল্য নির্ধারিত হইতে হইবে;

বিক্রীতব্য মাল ও উহার মূল্য হস্তান্তরের সময় নির্ধারিত হইতে হইবে; স্থানান্তরযোগ্য মাল ক্রয় করিলে তাহা ক্রেতার হস্তগত হইতে হইবে; যেসব মালের পারস্পরিক বিনিময়ে কম-বেশি হইলে সুদের যোগ ঘটে সেইসব ক্ষেত্রে বিনিময়কৃত মালের পরিমাণ সমান সমান হইতে হইবে; ক্রয়-বিক্রয় সূদমুক্ত হইতে হইবে; বাই সার। অর্থাৎ স্বর্ণ ও রৌপ্য বিনিময় (Money {xchange) হইলে পায়ের পশর পৃথক হওয়ার পূর্বে

বিনিময়কৃত মাল হস্তান্তরিত হইতে হইবে; ১০. বাই মুরাবাহা বা লাভ কব-বিক্রয় (Sale at a profit)

তাওলিয়া বা পাতহীন ক্রয়-বিক্রয় (Release at cost price), Tifosite of operat fate (Sale of a portion) ও ওয়াদিয়া বা লোকসানে বিক্রয় (Release at a loss) উপরোক্ত সকল ক্ষেত্রে সকল অবস্থায় সে সময়ের বাজার

দরে বিনিময় মূল্য নির্ধারিত হইতে হইবে। (৫)। ক্রয়-বিক্রয়ের পক্ষদ্বয়ের মধ্যে মাল ও মূল্য প্রদানের ক্ষেত্রে কোন শর্ত

যুক্ত না থাকিলে ঐ ক্রয়-বিক্রয় কোন পক্ষের প্রত্যাখ্যান সাপেক্ষ হইবে

না।

বিশ্লেষণ

-বিক্রয় চুক্তিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার জন্য ক্রেতা ও বিক্রেতার বুদ্ধিমান হওয়া শর্ত থাকিলেও তাহাদের বালেগ হওয়া শর্ত নহে। তবে তাহাদেরকে ক্রয়-বিক্রয়ের পরিণতি সম্পর্কে অবশ্যই অবহিত হওয়ার মত বয়স্ক হইতে হইবে। তবেই ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি শুদ্ধ হইবে (ফাতহুল কাদীর)।

৩৪৯

‘ ক্রয়-বিক্রয়ে অবশ্যই দুইটি পক্ষ বিদ্যমান থাকিতে হইবে। একই ব্যক্তি ক্রেতা ও বিক্রেতা হইলে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বিশুদ্ধ হইবে না (বাদাইউস সানাই)। তবে পিতা ও তাহার নিয়োগকৃত ওসী এবং বিচারক (প্রয়োজনে) নাবালেগের নিকট নিজ মাল বিক্রয় করিলে অথবা তাহার নিকট হইতে ক্রয় করিলে তাহাদের প্রত্যেকে উভয় পক্ষের (ক্রেতা-বিক্রেতা) হইয়া ক্রয়-বিক্রয় করিতে পারে। কিন্তু ওসীর ক্ষেত্রে শর্ত এই যে, এই ধরনের লেনদেনে পোষ্যদের কল্যাণ নিহিত থাকিতে হইবে।

প্রস্তাবের সহিত সম্মতির সামঞ্জস্য থাকাও জরুরী অর্থাৎ যেই পরিমাণ মাল যেই পরিমাণ মূল্যে ক্রয় বা বিক্রয় করিবার প্রস্তাব করা হইয়াছে সেই পরিমাণ মাল প্রস্তাবিত মূল্যে ক্রয় বা বিক্রয় করিবার সম্মতি থাকিতে হইবে। অন্যথায় ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠিত হইবে না। যেমন বিক্রেতা একটি কাপড় ১০০.০০ টাকায় বিক্রয়ের প্রস্তাব করিল, কিন্তু ক্রেতা ৯০.০০ টাকায় ক্রয় করিতে সম্মত হইল, এই ক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠিত হইবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত বিক্রেতা ক্রেতার প্রস্তাবিত মূল্যে পুনঃ সম্মতি প্রকাশ না করে কিংবা ক্রেতার প্রস্তাব বিক্রেতা মানিয়া না লয়।

বিক্রেতার মাল ও ক্রেতার মূল্য এমন হইতে হইবে যাহা ইসলামী আইনে মাল’ বলিয়া গণ্য। মাল’-এর বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান না থাকিলে ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠিত হইবে না। যেন কোন মুসলিম ব্যক্তি তাহার মাল শৱাব অথবা শুকরের বিনিময়ে বিক্রয় বলে ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠিত হইবে না। কারণ ইসলামী আইনে হারাম বস্তু মাল হইতে পারে

(বাদাই)।

যে মাল বিক্রয় করা হইবে তাহা বিদ্যমান থাকিতে হইবে। অনুপস্থিত ও বেদখল মালের ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠিত হয় না (অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় একটি ব্যতিক্রম)!

ক্রেতা ও বিক্রেতাকে পরস্পরের কথা উত্তমরূপে শুনিতে ও বুঝিতে হইবে, এই বিষয়ে ফকীহগণের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। প্রস্তাব ও সম্মতি একই মজলিসে একের পর এক প্রদান করিতে হইবে। এক মজলিসে প্রস্তাব এবং অন্য মজলিসে সম্মতি জ্ঞাপন করিলে ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠিত হইবে না।

ক্রয়-বিক্রয় (চুক্তি) কার্যকর হওয়ার জন্য শর্ত এই যে, যে মাল বিক্রয় করার জন্য চুক্তি হইয়াছে সেই মালের উপর বিক্রেতার মালিকানাস্বত্ব থাকিতে হইবে অথবা তাহাকে ওয়ালী হইতে হইবে। উহাতে কাহারও মালিকানা থাকিবে না : এ এক মাল বিক্রয় করিলে উহা কার্যকর হইবে না (বাদাই)

ক্রয়-বিক্রয় বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য সাধারণ শর্তাবলী ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠিত হওয়ার শর্তাবলীর অনুরুপ। কারণ যে ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠিত হয় না তাহা বিশুদ্ধ হইতে পা

। ক্রয়-বিক্রয় শুদ্ধ হওয়ার বিশেষ শর্তাবলী এই যে, ক্রয়-বিক্রয় কোন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সংঘটিত হইলে উহা বিশুদ্ধ হইবে না। যেমন এ+ বৎসরের

‘৩৫)

সময়সীমার জন্য, অথবা বিক্রেতা যখন মূল্য ফেরত দিবে ক্রেতা তখন ক্রীত মাল ফেরত দিবে। এই ধরনের শর্তে ক্রয়-বিক্রয় হইলে তাহা সহীহ হইবে না।

বিক্রীত মাল, উহার মূল্য এবং তাহা পরিশোধের সময় সুনির্দিষ্ট হইতে হইবে, যাহাতে পরে বিবাদের সূত্রপাত হইতে না পারে। স্থানান্তরযোগ্য মাল হইলে বিক্রয়ের।

সময় তাহা বিক্রেতার দখলে থাকিতে হইবে।

যে জিনিসের ক্রয়-বিক্রয়ে পরিমাণে কম-বেশি হইলে সূদের যোগ ঘটে সেসব জিনিস উভয় পক্ষ হইতে পরিমাণে সমান ও উহার নগদ লেনদেন হইতে হইবে। যেমন স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণের ক্রয়-বিক্রয়, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্যের ক্রয়-বিক্রয়

তাদির ক্ষেত্রে কম-বেশী হইলে সূদের যো ঘটে এবং ফলে ক্রয়-বিক্রয় বৈধ হয় না। টাকার পরিবর্তে টাকার বিনিময়ও তদ্রূপ।

ক্রয়-বিক্রয় বাধ্যতামূলক হওয়ার শর্তাবলী এই যে, ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে ক্রয় বিক্রয় প্রত্যাখ্যানের কোন শর্ত না থাকিলে ঐ ক্রয়-বিক্রয় কোন পক্ষই প্রত্যাখ্যান করিতে পারিবে না। এই অবস্থায় কীত মালের উপর ক্রেতার এবং উহার মূল্যের উপর বিক্রেতার মালিকানা বর্তাইবে।

ধারা-১৮৭

ক্রয়-বিক্রয়ের শ্রেণীবিভাগ :: বিক্রয় অনুষ্ঠানের দৃষ্টিকোণ হইতে উহা চার শ্রেণীতে বিভক্ত (ক) •াফিয (যার্যকর), যাহা তৎক্ষণাৎ বহাল এবং ক্রেতা-বিক্রেতার স্ব স্ব স্ত উপর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়;

? ‘ যাওকুফ (গিজ, আহা কোন পক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে কার্যকর হয়; (ণ) ফাসিদ (ত্রুটিপূর্ণ), যেখানে ক্রীত মাল হস্তগত করার পর ক্রয়-বিক্রয় কার্যকর হয়;

যে) বাতিল (বধ), যাহা ক্রয়-বিক্রয় হিসাবে আদৌ গণ্য হয় না।

ধারা-১৮৮

** ৫ সম্মতির সামঞ্জস্য {ক: কত যে পরিমাণ মতো করে প্রস্তাব করিয়াছে বিক্রেতা যদি উহা অপেক্ষা কম মূল্য বা সে মুন্য বিক্রয় কবিতে সম্মতি জ্ঞাপন করে তবে ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠিত হইবে এক: বিক্রেতার মূল্যই গৃহীত হইবে।

(খ) ক্রেতা যে পরিমাণ মূল্যে ক্রয়ের প্রস্তাব করিয়াছে বিক্রেতা উহার অধিক মূল্যে বিক্রয় করিতে সম্মত হইলে ক্রেতার প্রস্তাব বাতিল গণ্য হইবে এবং ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠিত হইবে না।

৩৫১

(গ) বিক্রেতা নির্দিষ্ট সংখ্যক জিনিসের পৃথক পৃথক মূল্য নির্ধারণ করিয়া সবগুলি একত্রে বিক্রয়ের প্রস্তাব করিলে এবং ক্রেতা উহার আংশিক ক্রয়ে সম্মতি প্রদান করিলে ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠিত হইবে না, কিন্তু বিক্রেতা উহা পৃথক পৃথকভাবে বিক্রয়ের প্রস্তাব করিলে সেই ক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠিত হইবে।

(ঘ) ক্রেতা ও বিক্রেতার প্রস্তাব ও সম্মতি একই মজলিসে অনুষ্ঠিত হইতে হইবে, অন্যথায় প্রস্তাব ও সম্মতি বাতিল গণ্য হইবে (১৮৬ (২) (ঝ)-এর সাথে

(৩) ক্রেতা বা বিক্রেতা কর্তৃক প্রস্তাব প্রদানের পর যে কোন পক্ষ ইশারা-ইঙ্গি, বা কোন কর্মের মাধ্যমে অসম্মতি জ্ঞাপন করিলে প্রস্তাব বা লে গণ্য হইবে।

(চ) কে বা বিক্রেতা প্রস্তাব প্রদান করার পর যে কোন পক্ষের সম্ম প্রদানের পূর্বে তাহার প্রস্তাব প্রত্যাহার করিলে ঐ প্রস্তাব বাতিল!! (ন

(য) ক্রেতা বা বিক্রেতা প্রস্তাব প্রদানের পর যে কোন + র গৃতি প্রদানে; পূর্বে আরেকটি নূতন প্রস্তাব প্রদান করিলে প্রথমোক্ত প্রস্তাব বাতিল গণ্য ইবে।

বিষ। ক্রেতার প্রস্তাবিত মূল্যের তুলনায় কম মূল্যে বিক্রেতা তাহার মাল বিক্রয় করি রাযী হইলে বিক্রেতার মূল্যই ধর্তব্য হইবে। কারণ মালিক তার মাল এমনকি লোকসানেও বিক্রয় করিবার অধিকা। আবার ক্রেতা যে মূল্য প্রস্তাব রিয়া: বিক্রেতা তাহার অধিক মূল্য হাঁকলে তার প্রস্তাব তল গণ্য হইবে, ২. (স পুনরায় বিক্রেতা কতৃক ঘোষিত মূল্যে ঐয় করিতে ৭: ৩ প্র.! • • •-1। • ৬, ক্ষেত্রে বিক্রেতার ঘোষিত মূল্যই ধর্তব্য হইবে।

বিক্রেতা তাহার কতগুলি মালের ভিন্ন ভিন্ন মূল্য নিধারণ বয়সেই ..:: বিক্রয়ের প্রস্তাব করিলে এবং ক্রেতা বিক্রেতার ( মূলে, যা এংশব – এ, ফে। সম্মতি প্রদান করিলে তাহার এই সম্মতি বাতিল গণ হই। বে বি@ে}; মালনি পৃথক পৃথকভাবে বিক্রয়ের প্রস্তাব করিলে সেই ক্ষে, &েতার সম্মতি শ৷ ‘ হইবে না। এই ক্ষেত্রেও বিক্রেতার সিদ্ধান্তই ধৰ্য ২,৭!। যেই মজা। এ বা বিক্রয়ের প্রস্তাব প্রদান করা হইয়াছে, সেই মজলিসেই মা প্রদান কার: ২ই; 11,

অন্য মজলিসে সম্মতি প্রদান করিলে প্রস্তাব বাতিল গণ্য হইবে।

এক পক্ষের প্রস্তাব অপর ক্ষের ইশারা-ইঙ্গিত বা কর্মের মমেও ৭ ৩৫। হইতে পারে। যেমন অপর পক্ষ হাত বা মাথা •ড়িয়া অসম্মতি জ্ঞাপন করিল অ

এমন কাজে লিপ্ত হইল যাহার দ্বারা পরিষ্কার বুঝা যায় যে, দ্বিতীয় পক্ষ প্রথম পক্ষের প্রস্তাবে সম্মত নহে।

প্রস্তাবক অপর পক্ষের সম্মতি প্রদানের পূর্বে তাহার প্রস্তাব প্রত্যাহার করিতে পারে। এই ক্ষেত্রেও তাহার প্রস্তাব বাতিল গণ্য হইবে। অনন্তর একটি প্রস্তাব করার

৩৫১

পর অপর পক্ষের সম্মতি জ্ঞাপনের পূর্বে আরেকটি প্রস্তাব প্রদান করিলে প্রথমোক্ত প্রস্তাব বাতিল হইয়া যাইবে। যেমন ক্রেতা বলিল, আমি এই জিনিসটি ১০০.০০ টাকায় ক্রয় করার প্রস্তাব করিলাম। বিক্রেতার সম্মতি প্রদানের পূর্বে ক্রেতা তাহার মত পরিবর্তন করিয়া পূনরায় বলিল, আমি এই জিনিসটি ৯০.০০ টাকায় ক্রয় করার। প্রস্তাব দিলাম! এই ক্ষেত্রে পূর্বের প্রস্তাবটি বাতিল গণ্য হইবে। অনুরূপভাবে বিক্রেতা বলিল, আমি এই জিনিসটি ২০০.০০ টাকায় বিক্রয়ের প্রস্তাব করিলাম। ক্রেতার সম্মতি প্রদানের পূর্বেই বিক্রেতা তাহার মত পরিবর্তন করিয়া পুনরায় বলিল, আমি উহা ২২৫.০০ টাকায় ‘বক্রয়ের প্রস্তাব করিলাম। এই ক্ষেত্রেও পূর্বের প্রস্তাবটি বাতিল গণ্য হইবে।

ধারা-১৮৯

ক্রয়-বিক্রয়ে শর্তায়োপ (ক) য়-বিক্রয় সহীহ হওয়ার জন্য জরুরী অথবা সহায়ক এইরূপ কোন শর্ত ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তিতে যোগ করা বৈধ এবং তাহা কার্যকর হইবে; কোন পক্ষ উক্ত শর্ত পূরণ করিতে ব্যর্থ হইলে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি একতরফাভাবে বাতিল করা যাইবে।

(খ) স্থানীয়ভাবে প্রচলিত ও শরীআত বিরোধী মহে এইরূপ কোন শর্ত আরোপ করাও বৈধ এবং তাহাও কার্যকর হইবে।

(গ) যে শর্তের দ্বারা পক্ষদ্বয়ের কেহই ক্ষতিগ্রস্ত হইবে না, এইরূপ কোন শর্ত আরোপ করাও বৈধ।

বিশ্লেষণ

-বিক্রয় সহীহ হওয়ার জন্য অপরিহার্য কোন শর্ত ক্রয়-বিক্রয়ের সহিত যোগ করা যাইবে। যেমন বিক্রেতা এই শর্ত আরোপ করিল যে, মূল্য হস্তান্তর না করা পর্যন্ত কিত মান্স হস্তান্তর করা হইবে না। ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হওয়ার জন্য ইহা একটি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। অতএব এই শর্ত আরোপ করাও বৈধ যে, মূল্য পরিশোধ না করা পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতার নিকট অমুক জিনিস বন্ধক রাখিবে অথবা অমুক ব্যক্তি তাহার জামিন হইবে। কারণ উপরোক্ত শর্ত মূল্য আদায়ের জন্য সহায়ক। ক্রেতা উপরোক্ত শর্ন পর কনিতে ব্যর্থ হইলে বিক্রেতা চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে।

ধারা-১৯০

ক্রয়-বিক্রয় বাতিলকরণ (ii)। (১) ক্রয়-বিক্রয় পূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার ও বিক্রীত মাল অর্পণের পর ক্রতা ও বিক্রেতার সম্মতিতে ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করা যায়, ইহাকে ‘ইকালা’ (uil) বলে।

বিধিব ইসলামী আইন

(২) -বিক্রয় বাতিল করার অন্য ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে এক পক্ষকে ( ( ) এবং সেতি এলাম (9) করিতে হয়।

(৩) কত মান বিক্রেতাকে এবং মূল্য ক্রেতাকে ফেরতদানও প্রস্তাব ও সতি হিসাবে গণ্য।

(8) ব ও সতি এমনি হইতে হইবে। (৫) কয়-বিক্রয় বাতিলের সময় কীত মাল ক্রেতার নিকট বহাল থাকিতে ৰে, মা মারা গেলে ক্রয়-বিক্রয় ব্যক্তি করা বৈধ হইবে না; (৬) মত মালের আশিক না হইলে ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করা যাইবে;

(৭) মালের বিনিময় মূল্য বিক্রেতার হাতে নষ্ট হইয়া গেলেও ক্রয়-বিক্রয় বাতিল না যাইবে।

বিশ্লেষণ

ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পর উভয়ের সম্মতিতে উক্ত ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল বা রদ করা যায়। আইনের পরিভাষায় ইহাকে বলে ইকালা (ujj-Rescission)। ইহার অর্থ বিক্রয় চুক্তি বাতিল বা রদকরণ। মহানবী

(সা) বলেন :

من أقال مسلما (أو نادما) أقاله الله عثرته يوم القيامة.

“যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের বা অনুতপ্ত ব্যক্তির (অনুরোধে) চুক্তি ভঙ্গের সুযোগ দিল, আহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাহার পদত্থান ও গুনাহ মাফ করিয়া দিবেন।

উপরোক্ত হাদীসের ভিত্তিতে চার মাযহাসের ফকীহগণ একমত যে, ইকালা করা বৈধ। কারণ চুক্তির সহিত ক্রেতা ও বিক্রেতার স্বার্থ জড়িত। তাহারা নিজ নিজ স্বার্থ বহালও রাখিতে পারে এবং ত্যাগও করিতে পারে। তাই উভয়ের সম্মতির ভিত্তিতে

ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল করার এখতিয়ার তাহাদের রহিয়াছে ১৩

ধারা-১৯১

বিত্রত মালের বৈশিষ্ট্য ও শর্তাবলী (১) যে মাল বিক্রয় করা হইয়াতোহা

(ক) বিদ্যমান থাকিতে হইবে; (৩) হাবােগ্য হতে হইবে; (গ) মালে মুতাকামি’ হইতে হইবে;

ক্রেতার নিকট পরিচিত হইতে হইবে; (৩) যে অবস্থায় ও বৈশিষ্ট্যের ধারা অন্য মাল হইতে স্বতন্ত্র সে অবস্থা

ও বৈশিষ্ট্যর বর্ণনা এন করিতে হইবে।

৩৫৪

তবে শর্ত থাকে যে, বিক্রীত মালটি ক্রয়-বিক্রয় অনুষ্ঠানের মজলিসে উপস্থিত থাকিলে উহার প্রতি ইঙ্গিত করিলে যথেষ্ট হইবে; এবং ক্রেতার নিকট পরিচিত হইলেও বতভাবে উহার পরিচয় প্রদানের

প্রয়োজন হইবে না; (২) বিক্রয়ের সময় যেই মাল দেখানো হইয়াছে বিক্রেতা ক্রেতাকে অবিকল

সেই মাল দিতে বাধ্য থাকিবে।

ব্যাখ্যা। মালে মুতাকাব্বিম’ (

eu JL) বা অর্জিত সম্পত্তি দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। প্রথম, এমন একটি মাল যাহার উপকারিতা লাভ আইনত বৈধ। যেমন কেহ দুবতী গাভী বন্ধক রাখিলে গ্রহীতা ঘাস-পানির ব্যবস্থা করার বিনিময়ে উহার দুধ দোহন করিতে পারিবে। অপর অর্থে, অর্জিত সম্পত্তিকে মালে মুতাকাকিম বলে। যেমন নদীর পানির মাছ মালে মুতাকামি নহে। কিন্তু উহা ধরিয়া ডাঙ্গায় তুলিলে মালে মুতাকাবিম (Property acquired) গণ্য হইবে।

খাৱা-১৯২ যেসব মাল বিক্রয় করা বৈধ এবং যারা বিক্রয় করা বৈধ নহে (১) অস্তিত্বহীন জিনিসের ক্রয়-বিক্রয় বাতিল; (২) বৃহ ফল খাওয়ার যোগ্য হউক বা না হউক তাহার ক্রয়-বিক্রয় বৈধ;

(৩) একই শ্রেণীভুত মাল বিজয়ের পর অন্য শ্রেণীভুক্ত মাল ক্রেতাকে প্রধান করা হইলে বিক্রয় বাতিল গণ্য হইবে।

(৪) যে জিনিস ক্রেতার নিকট সমর্পণ করা সব নহে তাহার ক্রয়-বিক্রয় বৈধ নহে।

(৫) যে জিনি ইসলামে মানুষের মধ্যে হিসাবে গণ্য নহে তাহার ক্রয়-বিক্রয় বৈধ নহে;

(৬) যে মাল ‘মালে মুতাকামি’ নহে তাহার ক্রয়-বিক্রয় ফাসিদ গণ্য হইবে; {৭) অজ্ঞাত জিনিসের ক্রয়-বিক্রয় ফাসিদ গণ্য হইবে; (৮) ক্ষেত্রবিশেষে মৃশা এর ক্রয়-বিক্রয় বৈধ;

(৯) ব্যক্তি মালিকানাধীন ভূমির উপরের যাতায়াতের পথ, পানির প্রবাহ (সেটের অধিকারী এবং পুকুরের পানি ক্রয়-বিক্রয় বৈধ।

বিশ্লেষণ

অস্তিত্বহীন জিনিসের ক্রয়-বিক্রয়, যেমন গাছে ফল ধরিবার পূর্বে তাহার ক্রয়-বিক্রয় করিলে এই ক্রয়-বিক্রয় বাতিল গণ্য হইবে। অবশ্য গাছে ফল ধরার পর তাহা খাওয়ার বা ব্যবহারোপযোগী না হওয়ার পূর্বে ক্রয়-বিক্রয় করা বৈধ।

৩৫৫

যে জিনিস সমাজে মাল হিসাবে গণ্য নহে; যেমন মৃত জীব অথবা মানুষ, তাহার ক্রয়-বিক্রয় বা তাহার বিনিময় ক্রয়-বিক্রয় বাতিল গণ্য হইবে। অজ্ঞাত জিনিসের ক্রয়-বিক্রয়, যেমন কোন ব্যক্তি বলিল, আমার সব কিছু এত টাকার বিনিময়ে তোমার নিকট বিক্রয় করিলাম, ফাসিদ গণ্য হইবে।

মূসা অর্থাৎ বিভাজনযোগ্য কিন্তু অবিভক্ত অর্থাৎ এজমাণী সম্পত্তিতে অংশীদারগণের স্ব স্ব অংশ নির্ধারিত থাকিলে এবং এই অবস্থায় কোন অংশীদার তাহার অংশ বিক্রয় করিলে তাহা বৈধ হইবে।

ধারা-১৯৩ -বিক চুক্তিতে উল্লেখ না থাকিলেও যেসব জিনিস উহার

আওতায় পড়িবে অথবা পড়িবে না (১) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিতে উল্লেখ না থাকিলেও নিম্নোক্ত জিনিসগুলি বিক্রীত

মানের সহিত যুক্ত হইবে; (ক) সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী কোন মাল বিক্রয় করিলে

উহার সহিত যেসব জিনিস যুক্ত হয় তাহা; (খ) বিক্রীত মালের প্রধান অংশসমূহ; (ক) বিক্রীত মালের আনুষঙ্গিক অসমূহ; (ঘ) মালহরের পূর্বে উহা হইতে প্রাণ উৎপাদন বিক্রয় চুক্তিতে উৎ না থাকিলে নিম্নোক্ত জিনিসগুলি বিক্রীত মাসের

সহিত যুক্ত হইবে না (ক) সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী কোন মাল বিক্রয় করিলে

যেসব জিনিস উহার অংশ হিসাবে গণ্য হয় না; (খ) যে জিনিস বিক্রীত মাসের অংশ নহে কিন্তু উহার সহিত যুক্ত

থাকে।

বিশ্লেষণ

স্থানীয় প্রথা অনুযায়ী বিক্রয়ের সহিত যুক্ত হইতে পারে এইরূপ জিনিস বলিতে, যেমন একটি বসতবাড়ি বিক্রয় করিলে বাড়ির প্রবেশপথ, সিড়ি এবং তাহার রান্নাঘরও বিক্রয়ের আওতাভুক্ত হইবে; অথবা একটি খেজুর বাগান ম্বলিত ভূমি বিক্রয় করিলে গাছগুলিও উহার অন্তর্ভুক্ত হইবে, বিক্রয় চুক্তিতে তাহার উল্লেখ থাকুক বা না থাকুক।

বিক্রীত মালের কার্যকরী অংশ বলিতে, যেমন একটি তালা বিয় করিলে স্বভাবতই উহার চাবিও উহার অন্তর্ভুক্ত বুঝায়। কারণ চাবি ছাড়া তালার কোন কার্যকারিতা নাই। বিক্রীত মালের আনুষঙ্গিক অংশ বলিতে, যেমন একটি টিনের ঘর বিক্রয় করিলে উহার পাটাতন ও পেরেক, স্কু, বলটু ইত্যাদিও বুঝায়। বিক্রয় চুক্তিতে উল্লেখ না থাকিলেও উক্ত জিনিসগুলি বিক্রীত মালের অন্তর্ভুক্ত হইবে।

৩৫৬

মাল বিক্রয়ের পর হস্তান্তরের পূর্বে তাহা হইতে যে উৎপাদন পাওয়া যাইবে তাহার মালিক হইবে ক্রেতা। যেমন বাগান বিক্রয়ের পর উহাতে যে ফল ধরিবে তাহা ক্রেতারই হইবে। এমনকি পর ক্ষেত্রে তাহার এসবিত বাঁচাও ক্রেতাই পাইবে।

বিক্রীত মালের কার্যকরী বা আনুষঙ্গিক অংশ নহে এইরূপ জিনিস উক্ত মালের অন্তর্ভুক্ত হইবে না। যেমন, বাড়ি বিক্রয় করিলে উহার চেয়ার, টেবিল, সোফা, কার্পেট ইত্যাদি।

বিক্রীত মালের অংশ নহে কিন্তু সুবিধার্থে উহার সহিত যুক্ত থাকে, যেমন ঘোড়র লাগাম, জিনপোষ, পাদানি ইত্যাদি এইরূপ জিনিসও বিক্রীত মালের সহিত যুক্ত হইবে

এবং উহা হারাইয়া গেলে বা চুরি হইয়া গেলে মূল মালের মূল্য কর্তন করা হইবে না।

ধারা-১৯৪

ক্রয়কৃত মালের মূল্য (১) যে মাল ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি হইয়াছে তাহার

(ক) মূল্যের পরিমাণ নির্ধারিত হইতে হইবে; (খ) মূল্য নগদ অর্থে অথবা যাদের মাধ্যমে পরিশোধ করা হইবে

কিনা তাহার উল থাকিতে হইবে; (গ) মূল্য পরিশোধের তারি এবং উহা কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য

হইলে তাহার উল্লেখ থাকিতে হইবে; (২) মাল ধারে ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে

(ক) মূল্য পরিশোধের সময়সীমা নির্ধারিত না থাকিলে মাল সরবরাহের

তারিখ হইতে উহার মেয়াদ যুক্তিত হইতে হইবে; (খ) মূল্য পরিশোধের সময়সীমা নির্ধারিত থাকিলে মাল ক্রেতার

নিকট অপশ করার দিন হইতে সময়সীমা গণনা শুরু হইবে; (গ) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর বিক্রেতা তাহার মালের

মূল্য অপর ব্যক্তির নিকট অপনের জন্য ক্রেতাকে নির্দেশ দিতে

পারিনে। (ঘ) ক্রেতা ক্রীত মাল বিক্রেতার নিকট হইতে গ্রহণের পূর্বে অণয়ের

নিকট বিক্রয় করিতে পারিবে যদি তাহা স্থাবর মাল হয়।

বিশ্লেষণ

যেমন বিক্রেতা কোন ব্যক্তির নিকট ঋণ আছে, এমতাবস্থায় সে ঋণদাতাকে তাহার প্রাপ্য ক্রেতার নিকট হইতে গ্রহণ করিতে বা ক্রেতাকে উক্ত মূল্য ঋণদাতাকে প্রদানের নির্দেশ দিতে পারিবে। অনুরূপভাবে ক্রেতাও তাহার ক্রীত স্থাবর প্রকৃতির

৫৭

মাল বিক্রেতার নিকট হইতে গ্রহণ করার পূর্বে অপরের নিকট বিক্রয় করিতে পারিবে; কিন্তু অস্থাবর প্রকৃতির মাল বিক্রেতার নিকট হইতে বুঝিয়া লওয়ার পূর্বে বিক্রয় করিতে পারিবে না।

ধারা-১৯৫

মাস ও মূল্যের পরিমাণে-বৃতি ক-বিক্রয় চুক্তির পর যদি

(ক) বিক্রেতা মূল্য মা বাড়াইয়া মানের পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করে এবং ক্রেতা একই মজলিসে সম্মতি প্রদান করে তবে সে বিক্রেতার নিকট বর্ধিত পরিমাণ দাবি করিতে পারিবে।

(খ) কে মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করে এবং বিক্রেতা একই মজলিসে সতি প্রদান করে, তবে সে ক্রেতার নিকট বর্ধিত মূল্য দাবি করিতে পারিবে;

(গ) পারস্পরিক সতির ভিত্তিতে বিক্রেতা কর্তৃক মূলহাস এবং ক্রেতা কর্তৃক মূল্যবৃদ্ধি বৈধ কার্যকরী হইবে এবং তাহা ফুল মুভির অংশ হিসাবে গণ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

বিক্রেতা মূল্য না বাড়াইয়া মালের পরিমাণ বৃদ্ধি করিতে পারে। উদারহণস্বরূপ সে ১০০.০০ টাকায় ৮টি কাঠাল বিক্রয় করিল, অতঃপর একই মূল্যে ক্রেতাকে আরও দুইটি কাঠাল প্রদানের প্রস্তাব করিল। ক্রেতা সংশ্লিলিসে বিক্রেতার প্রভাবে সম্মতি জ্ঞাপন করিল। ক্রেতা ১০০.০০ টাকায় ৮টি কাঁঠালের পরিবর্তে ১০টি কাঁঠাল পাইবে। এই অবস্থায় বিক্রেতা তাহার লোকসানের জন্য পরে অনুতপ্ত হইলে তাহা বিবেচনা করা হইবে না।

অনুরূপভাবে নির্ধারিত মূল্যের উপর ক্রেতা বর্ধিত মূল্য প্রদানের প্রস্তাব করিলে তাহা কার্যকরী হইবে এবং ইহার জন্য পরে অনুতপ্ত হইলে তাহাও বিবেচনা করা হইবে না।

ধারা-১৯৬

মাল খান ও মূল্য গ্রহণ (ক) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর প্রথমে ক্রেতা বিক্রেতার নিকট মালের মূল্য প্রদান করিবে এবং অব্যবহৃত পর বিক্রেতা ক্রেতার নিকট মাল হস্তান্তর করিবে;

(খ) মূল্য গ্রহণের পর বিক্রেতা ক্রেতার নিকট মাল হস্তান্তর করিলে এবং ক্রেতা তাহা বিনা বাধায় গ্রহণ করিলে সে উহার দখল বুঝিয়া পাইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।

৩৬০

(গ) গাছের ফল ও ক্ষেতের ফসল ক্রয়ের ক্ষেত্রে উহা সএহের এ ক্রেতা বহন করিবে।

(ঘ) দলীলপত্র তৈরি করার পর ক্রেতা ধন করিবে। (ঙ) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিতে প্রথা এবং দুটি

উপরের ধারাসমূহে যাহা বলা হইয়াছে তাহা সত্ত্বেও মূল্যের সহিত সংশি আনুষঙ্গিক খরচ এবং মাল সরবরাহের সহিত সটি আনুষঙ্গিক খরচের ক্ষেত্রে প্রথা ও চুক্তি প্রাধান্য পাইবে।

বিশ্লেষণ

মালের মূল্যের সহিত সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক খরচ, যেমন মাল বিক্রেতার নিকট হইতে বুঝিয়া পাওয়ার পর তাহা যানবাহনে তোলার খরচ, ব্যাংক ড্রাফট বা পে অর্ডারের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করা হইলে ব্যাংকের কমিশন ইত্যাদি ক্রেতাকে বহন করিতে হইবে।

মালের সরবরাহের সহিত সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক খরচ, যেমন মাল ওজন, পরিমাপ বা গণনা করার খরচ বিক্রেতা বহন করিবে। দলীলপত্রের পসরা প্রণয়ন ও নিবন্ধিকরণের খরচও ক্রেতা বহন করিবে। অবশ্য ক্ষেত্রবিশেষে এই জাতীয় কোন কোন খরচ স্থানীয় প্রথার বারাও প্রতাবিত হইতে পারে। যেমন স্থানীয় প্রথা অনুযায়ী মাল ক্রেতার যানবাহনে উঠানো বাবদ শ্রমিকের মজুরী ক্রেতা পরিশোধ না করিয়া বিক্রেতাও

পরিশোধ করিতে পারে।

ধারা-২০০

বিক্রীত মাল ক্ষতিগ্রস্ত হইলে (ক) ক্রেতার নিকট হস্তান্তর করার পূর্বে বিক্রেতার নিকট মাল ক্ষতিগ্রস্ত বা নষ্ট হইলে তাহার দায় বিক্রেতাই বহন করিবে।

(খ) মাল হস্তান্তর করার পর এবং মূল্য পরিশোধ করার পূর্বে ক্রেতা দেউলিয়া অবস্থায় মারা গেলে বিক্রেতা মাল ফেরত লইতে পারিবে না, তবে সে দেউলিয়ার নিকট পাওনাদার হিসাবে গণ্য হইবে।

(গ) মাল হস্তগত করার এবং মূল্য পরিশোধ করার পূর্বে ক্রেতা দেউলিয়া অবস্থায় মারা গেলে বিক্রেতা ক্রেতার পরিত্যক্ত সম্পত্তি যারা মূল্য পরিশোধ না করা পর্যন্ত মালের হস্তান্তর বৃপিত রাবিতে পারিবে।

(ঘ) মাল হস্তান্তরের পূর্বে এবং মূল্য গ্রহণের পর বিক্রেতা দেউলিয়া অবস্থায় মারা গেলে উক্ত মাল ক্রেতা হস্তগত করিবে এবং অন্যান্য পাওনাদার তাহাকে বাধা দিতে পারিবে না।

ধারা-২০১ ক্রয়ের উদ্দেশ্যে অথবা পছনে কয় করিবার জন্যে মাল এক

৩৬১

(১) অসের উদেশ্যে মূল্য বিবরণ এবং তা পরিশোধের পূর্বে বিক্রেতার নিকট হইতে মাল হতগত করার পর তারা ক্রেতার নিকট মট (al) বা ধ্বংস ৫us) হইয়া গেলে এবং তদনুরূপ মাল বাজারে

(ক)সমমূল্যেসহজলভ্যনাহইলে ক্রেতা বিক্রেতাকে উহার মূল্য প্রদান করিবে

(খ) সমমূল্যে সহজলভ্য হইলে ক্রেতা বিক্রেতাকে অনুরূপ মাল ক্রয় করিয়া দিবে।

(২) মালের মূল্য নির্ধারণ না করা অবস্থায় এবং মূল্য বাবদ কিছু দেওয়া না হইলে এবং মাল কেতার হাত হইলে উক্ত মাল ক্রেতার নিকট আমানত হিসাবে গণ্য হইবে; এবং তাহার কোনরূপ অবহেলা বা কটি ব্যতীত উক্ত মাল তাহার নিকট নষ্ট বা ধ্বংস হইলে তাহাকে ক্ষতিপূরণ করিতে হইবে না।

(৩) নিজে ক্রয়ের জন্য অথবা অপরের নিকট বিক্রয় করিয়া দেওয়ার জন্য দেখানোর উদ্দেশ্যে বিক্রেতার নিকট হইতে মালের নমুনা বা মাল হস্তগত করিলে তাহা ক্রেতার নিকট আমানত হিসাবে গণ্য হইবে এবং তাহার কোনরূপ অহেলা ব্যতীত উক্ত মাল তাহার নিকট নষ্ট বা ধ্বংস হইলে তাহাকে ক্ষতিপূরণ করিতে হইবে না।

বিশ্লেষণ

যেমন বিক্রেতা কোন ব্যক্তিকে বলিল, ৫,০০০.০০ টাকা মূল্যে তুমি চাহিলে এই মাল ক্রয় করিতে পার। ক্রেতা উক্ত মূল্যে মালটি ক্রয়ের উদ্দেশ্যে গ্রহণ করিল। এই

অবস্থায় মালটি তাহার নিকট নষ্ট বা ধ্বংস হইলে এবং অনুরূপ মাল বাজারে সহজলভ্য না হইলে ক্রেতা বিক্রেতাকে উক্ত মালের মূল্য প্রদান করিবে এবং সহজলভ্য হইলে অনুরূপ মাল ক্রয় করিয়া দিবে। কিন্তু মূল্য নির্ধারণ না করিয়া বিক্রেতা কোন ব্যক্তিকে বলিল, “এই মাল তুমি লও যদি ক্রয় করিতে চাও” এবং ক্রেতা ক্রয়ের উদ্দেশ্যে তাহা গ্রহণ করিল। এই অবস্থায় ক্রেতার নিকট উক্ত মাল নষ্ট বা ধ্বংস হইয়া গেলে তাহাকে ক্ষতিপূরণ করিতে হইবে না, যদি মাল তাহার অবহেলা বা অযত্নের কারণে ধ্বংস বা নষ্ট না হইয়া থাকে।

ধরা-২০২ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি প্রত্যাখ্যানের এখতিয়ার (ক) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিতে ক্রেতা বা বিক্রেতা অথবা উভয়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহাল রাখার অথবা বাতিল করার এখতিয়ার শর্ত হিসাবে রাখা বৈধ এবং এই এখতিয়ারকে খিয়ারুশ-শরত (5 ) Li) বলে।

৩৫৮

(গ) বিভিন্ন শ্রেণীর মাল ক্রয়-বিক্রয় হইলে মূল্য গ্রহণ ও মাল হস্তান্তরও তদনুরূপ (উপধারা খ) হইবে। :

(ঘ) বিক্রেতা গাছের ফল পাড়িয়া নেওয়ার এবং ক্ষেতের ফসল কাটিয়া নেওয়ার অনুমতি প্রদান করিলে তাহার এই অনুমতি ক্রেতার নিকট মালের হস্তান্তর বলিয়া গণ্য হইবে।

(ঙ) তালাবদ্ধ ঘরের চাবি ক্রেতার নিকট অৰ্পণ করিলে বিক্রেতা তাহাকে দখল হস্তান্তর করিয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।

(চ) ক্রেতা বিক্রীত পর কান, শিং অথবা গলায় দড়ি ধরিয়া পটিকে বিক্রেতার নিকট হতে গ্রহণ করিলে উহা হস্তান্তরিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।

(ঘ) যে জিনিস ওজন করিয়া বা মাপিয়া ক্রয়-বিক্রয় হয় তাহা ওজন করিয়া বা মাপিয়া ক্রেতা বিক্রেতার নিকট হইতে বুঝিয়া লইলে উহা হস্তান্তর হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।

(জ) যেসব জিনিস ওজন করিয়া বা মাপিয়া ক্রয়-বিক্রয় করা হয় না এবং পশু ও নগদ অর্থ ব্যতীত, তাহা কোন উন্মুক্ত স্থানে বিক্রেতা ক্রেতার নিকট অর্পণ করিলে তাহা হারিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।

(ঝ) বিক্রেতার উপস্থিতিতে ক্রেতা মাল গ্রহণ করিলে এবং বিক্রেতা বাধা দেওয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাহাতে বাধা না দিলে মাল হস্তাবিত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।

(ঞ) মূল্য পরিশোধের পূর্বে ক্রেতা বিক্রেতার অনুমতি ব্যতীত মাল হস্তগত করিলে তাহা হস্তান্তর গণ্য হইবে না।

ধারা-১৯৭ বিক্রেতা কর্তৃক মালের হস্তান্তর বা সরবরাহ বন্ধ রাখার অধিকার (ক) নগদ বিয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতা কর্তৃক মূল্য পরিশোধ না করা পর্যন্ত বিক্রেতা মালের হস্তান্তর বন্ধ রাখতে পারিবে।

(খ) এই চুক্তির অধীন একাধিক শ্রেণীর মাল বিক্রয় করা হইলে এবং প্রত্যেক শ্রেণীর মূল্য নির্ধারিত থাকিলে ক্রেতার নিকট হইতে সম্পূর্ণ মূল্য বুঝিয়া না পাওয়া পর্যন্ত বিক্রেতা মালের হস্তান্তর বন্ধ রাখিতে পারিবে।

(গ) ক্রেতা কর্তৃক বন্ধক বা জামিন প্রদান দ্বারা বিক্রেতার মাল হস্তান্তর স্থগিত রাখার অধিকার ক্ষুন্ন হইবে না।

(ঘ) মূল্য প্রাপ্তির পূর্বে বিক্রেতা ক্রেতার নিকট মাল হস্তান্তর করিলে তাহার “হস্তান্তর বন্ধ রাখার অধিকার বাতিল হইয়া যাইবে এবং সে ক্রেতার নিকট মাল ফেরত দানের দাবি করিতে পারিবে না।

৩৬২

(খ) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিতে যাহাকে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল করা বা বহাল রাখার এখতিয়ার দেওয়া হইয়াছে সে চুক্তিপত্রে উিিত মেয়াদের মধ্যে তাহার এখতিয়ান প্রয়োগ করিতে পারিবে।

(গ) এখতিয়ার লাভকারী তাহার কথা বা কাজের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে।

(খ) এখতিয়ারের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর এখতিয়ার বাতিল হইয়া যাইবে ও ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি পূর্ণতা লাভ করিবে এবং তদনুযায়ী কাজ করা বাধ্যতামূলক হইবে।

(৩) বিক্রেতাকে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল করার এখতিয়ার প্রদান করা হইলে এবং সে ডিপত্রে উল্লিখিত মেয়াদের মধ্যে মারা গেলে ক্রেতা বিসত মাসের মালিক হইবে এবং উপরোক্ত এখতিয়ার বিক্রেতার ওয়ারিসগণের অনুকুলে বাইরে

(চ) ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কে এখতিয়ার প্রদান করা হইলে (১) তাহাদের যে কোন একজন ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে;

(২) একপ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহালের কথা ব্যক্ত করিলে তাহার এখতিয়ার বাতিল হইয়া যাইবে এবং অপর পক্ষের এখতিয়ার বহাল থাকিবে।

(খ) শুধু বিক্রেতাকে এখতিয়ার প্রদান করা হইলে বিক্রীত মানের উপর তাহার মালিকানা বহাল থাকিবে, তাহা ক্রেতার নিকট হস্তান্তর করা হইলে; এবং উক্ত মাল ক্রেতার নিট মট বা এসে হইয়া গেলে সে বিক্রেতাকে তার মূল্য প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবে।

(জ) ৩ধু ক্রেতাকে এখতিয়ার প্রদান করা হইবে এবং কেতা মাল গত করিলে উহার উপর তাহার মালিকানা বর্তাইবে এবং তাহা ন ৰা বংস হইয়া গেলে সে বিক্রেতাকে নির্ধারিত মূল্য প্রদানে বাধ্য থাকিবে।

বিশ্লেষণ

মহানবী (সা) বলেন :

المتبايعان كل واحد منهما بالخيار على صاحبه ما لم

يتفرقا الأبيع الخيار .

“ক্রেতা ও বিক্রেতা পরস্পর পৃথক না হওয়া পর্যন্ত একের উপর অপরের ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি প্রত্যাখ্যানের অবকাশ রহিয়াছে। কিন্তু চুক্তিপত্রে এখতিয়ারের শর্ত রাখিলে (তাহা মেয়াদকাল পর্যন্ত বলবৎ থাকিবে)” (বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযী হা! মিশক: মাসাবীহ-এ, কিতাবুল বুয়ু, প্রথম ফাসল)।

ক্রেতা বা বিক্রেতা তাহার প্রতিপক্ষকে মৌখিকভাবেও ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি প্রত্যাখ্যানের এখতিয়ার প্রদান করিতে পারে। যেমন একজন বলিল, “আমি তোমাকে

ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহাল বা বাতিল করার অনুমতি বা সম্মতি প্রদান করিলাম।” অনুরূপভাবে কথার মাধ্যমেও চুক্তি বাতিল করা যায়। যেমন এখতিয়ার লাভকারী বলিল, “আমি ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল করিলাম,”আমি চলিয়া গেলাম” ইত্যাদি। কাজের মাধ্যমেও এখতিয়ার প্রয়োগ করা যাইতে পারে। যেমন ক্রেতাকে এখতিয়ার প্রদান করা হইলে ক্রেতা মাল হস্তগত করার পর তাহা এখতিয়ারের মেয়াদকালের মধ্যে অপরের নিকট বিক্রয় করিল অথবা বন্ধক রাখিল। ইহাতে বুঝা গেল যে, ক্রেতা ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহাল রাখিয়াছে। বিক্রেতাকে এখতিয়ার প্রদানের ক্ষেত্রে তাহার অনুরূপ কাজ দ্বারা ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করা বুঝাইবে।

ধারা-২০৩

ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে বিরোখ। যিয়ার্কশ শরত-এর অধীন

(ক) শুধু ক্রেতাকে এখতিয়ার’ প্রদান করা হইলে ক্রেতা মাল হগত করার পর তাহা বিক্রেতাকে ফেরত দিলে এবং তাহাদের মধ্যে মতভেদ হইলে শপথ গ্রহণসহ ক্রেতার কথা এইখযোগ্য হইবে;

(খ) ৩ধু বিক্রেতাকে এখতিয়ার প্রদান করা হইলে এবং মাল বিক্রেতার দখলে থাকা অবস্থায় ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে মতভেদ হইলে শপথসহ ক্রেতার কথাই গ্রহণযোগ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিতে কেবলমাত্র ক্রেতার জন্য ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহাল রাখার বা তাহা বাতিল করার এখতিয়ার রাখা হইয়াছে। এইরূপ অবস্থায় ক্রেতা বিক্রেতার নিকট হইতে মাল হস্তগত করার পর তাহা ফেরত দিল। বিক্রেতা বলিল, আমি তোমাকে যে মাল দিয়াছি তাহা এই মাল নহে। এই ক্ষেত্রে ক্রেতাকে শপথ করিতে হইবে এবং সে যদি শপথ করিয়া বলে যে, ইহাই সেই মাল তাহা হইলে ক্রেতার কথা গ্রহণযোগ্য হইবে। মাল বিক্রেতার দখলে আছে এবং ক্রেতা তাহা গ্রহণ করার সময় বলিল, ইহা সেই মাল নহে যাহা তুমি আমার নিকট বিক্রয় করিয়াছ। এই ক্ষেত্রে বিক্রেতার কথাই গ্রহণযোগ্য হইবে। তবে ক্রেতা তাহাকে প্রদত্ত এখতিয়ারের সুযোগ। গ্রহণ করিয়া ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে।

কেবলমাত্র বিক্রেতার জন্য ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিতে এখতিয়ার রাখা হইলে এবং ক্রেতা কর্তৃক মাল হস্তগত করার পর তাহা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে অথবা বিক্রেতার নিকট হইতে মাল গ্রহণের সময় তাহাদের মধ্যে মতভেদ হইলে উভয় ক্ষেত্রে শপথসহ ক্রেতার কথাই এহণযোগ্য হইবে। অবশ্য বিক্রেতা তাহাকে প্রদত্ত এখতিয়ারের সুযোগ গ্রহণ করিয়া ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে।’

৩৫৯

(ঙ) বিক্রেতা ক্রেতার নিকট হইতে মূল্য আদায়ের অধিকার অপরের নিকট অর্পণ করিলে তাহার মালের হস্তান্তর বন্ধ রাখার অধিকার বাতিল হইয়া যাইবে এবং তাহাকে অবিলমে ক্রেতার নিকট মাল হস্তান্তর করিতে হইবে।

(চ) মদ বিক্রয়ের পর বিক্রেতা মূল্য পরিশোধের জন্য ক্রেতাকে সময় প্রদান করিলে তাহার মানের হতার বন্ধ রাখার অধিকার বাতিল হইয়া যাইবে এবং তাহাকে অবিলবে ক্রেতার নিকট মাল হাওর করিতে হইবে।

(২) ধারে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিক্রেতা মালের হতার বন্ধ রাখিতে পারিবে না এবং তাহাকে অবিলম্বে তাহা ক্রেতার নিকট হস্তান্তর করিতে হইবে।

ধারা-১৯৮

মাল হারের স্থান। (ক) চুক্তিপত্রে ভিতর শর্ত না থাকিলে ক্রয়-বিক্রয়ের সময় মাল যেখানে কিনে ক্রেতা নেই উহণ করিবে।

(৩) বিয়ের সময় মাল কোথায় আছে সেই সম্পর্কে ক্রেতা অবহিত থাকিলে সে কি বাতি করিতে পারে অথবা মাল যেখানে আছে সেখান হইতে উহা এহণও করিতে পারে।

(গ) কোন স্থান হইতে মাল সরবরাহ গ্ৰহণ করিতে হইবে ক্রয়-বিক্রয়ের সময় চুক্তিতে তাহার উল্লেখ থাকিলে ক্রেতা সেই স্থান হইতে মাল গ্রহণ করিবে।

विवर्ष চুক্তিপত্রে ভিন্নরূপ শর্ত না থাকিলে অর্থাৎ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পাদনকালে মাল যেই স্থানে থাকিবে ক্রেতা সেই স্থান হইতে উহা গ্রহণ করিবে। যেমন চুক্তিপত্র সম্পাদিত হইয়াহে ঢাকায়, কিন্তু মাল রহিয়াছে খুলনায়, এই অবস্থায় ক্রেতা খুলনা হইতে মাল গ্রহণ করিবে।

ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পাদনের পর মাল কোথায় আছে তাহা ক্রেতাকে অবহিত করা হইলে ক্রেতা চুক্তিপত্র বহাল রাখিতে বা রদ করিতে পারিবে অথবা নির্দিষ্ট স্থান হইতে মাল গ্রহণও করিতে পারিবে। কিন্তু চুক্তিপত্র সম্পাদনকালে মালের স্থান উল্লেখ থাকিলে ক্রেতা সেই স্থান হইতেই মাল গ্রহণ করিতে বাধ্য, চুক্তিপত্র যেখানেই সম্পাদিত হউক না কেন।

ধারা-১১

মাল সরবরাহের খরচ (ক) মালের মূল্যের সহিত সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক খরচ ক্রেতা বহন করিবে। (খ) মালের সরবরাহের সহিত সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক খরচ বিক্রেতা বহন করিবে।

৩৬৪

ধারা-২০৪

পরিদর্শনের এখতিয়ার (L3> Ls) . (ক) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পাদনকালে ক্রেতা মাল দেখে নাই এই অবস্থার মাল দেখার পর সে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহালও রাখতে পারে অথবা বাতিলও করিতে পারে এবং ইহাকে ‘খিয়ারে রুইয়াত’ ( Jl jLs) বা পরিদর্শনের এখতিয়ার বলে।

(খ) বিয়ারে রুইয়াত ওয়ারিসগণের অনুকূলে বর্তায় না।

(গ) বিক্রেতা না দেখিয়া তাহার মাল বিক্রয় করিলে সে বিয়ারে রুইয়াত’-এর অধিকারী হইবে না।

(ঘ) মানের বৈশিষ্ট্য ও মান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়াই তাহা পরিদর্শনে শ্যে এবং মালের নমুনা দেখিলেও এই উদ্দেশ্য পূহইতে পারে।

তবে শর্ত থাকে যে, মাল নমুনা অনুযায়ী মাইলে কে কয়-বিক্রয় চুক্তি খাতি ফতে পারিবে।

(ঙ) বাড়ি-ঘরের মত স্বাবর মাল হইলে তাহার সমস্ত কোঠা দেখা প্রয়োজন, তবে কোঠালি একইরূপ হইলে একটি কোঠা পরিদর্শনই যথেষ্ট।

(চ) একই চুক্তির অধীনে বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করিলে তভাবে প্রতিটি জিনিস পরিদর্শন করা আবশ্যক।

(৪) লি মাল নমুনা অনুযায়ী যাইলে এবং কিছু নমুনা অনুযায়ী না হইলে ক্রেতা ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহাল রাখিতে অথবা বাতিল করতে পারিবে, কিন্তু কিছু মাল গ্রহণ করিতে এবং কি মাল প্রত্যাখ্যান করিতে পারিবে না, এহণ করিলে সমও মালই গ্রহণ করিতে হইবে।

(জ) অন্ধ ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিতে আবদ্ধ হইতে পারে, তবে কোন সম্পত্তি ক্রয়ের ক্ষেত্রে উহার মান ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অজ্ঞাত থাকিলে সে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহালও রাবিতে পারে অথবা বাতিলও করিতে পারে।

(ঝ) মাল পরিদর্শন করিয়া ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পাদনের পর ক্রেতা কর্তৃক মাল হস্তগত করার পূর্বে উহার পরিবর্তন করা হইলে ক্রেতা ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহালও রাখিতে পারে অথবা বাতিলও করিতে পারে।

(ঞ) ক্রেতার নিয়োগকৃত প্রতিনিধির পরিদর্শন ক্রেতার পরিদর্শন হিসাবে গণ্য হইবে।

(ট) ক্রেতার দূতের পরিদর্শন ক্রেতার পরিদর্শন হিসাবে গণ্য হইবে না।

( ক্রেতার এমন আচরণ, যাহা দ্বারা সে মালের মালিকানা পাইয়াছে এইরূপ বুঝায়, সেই ক্ষেত্রে তাহার থিয়ারে কইয়াত’ বাতিল হইয়া যাইবে।

ধারা-২০৫ তুল বা মিথ্যা বর্ণনার ক্ষেত্রে এখতিয়ার প্রয়োগ (ক) বিয়ের সময় বিক্রেতা মালের যে ৩৭ ও মানের বর্ণনা দিয়াছে, হস্তান্তরের সময় মাল সেই ৩ ও মান অনুযায়ী না হইলে ক্রেতার ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহাল রাখিবার অথবা বাতিল করিবার এখতিয়ার রহিয়াছে এবং ইহাকে ‘লি ওয়া ‘ ( La) বলে।

(খ) খিয়া ওয়া ওয়ারিসের অনুকূলে বর্তাইবে।

(ণ) ক্রেতার এমন আচরণ, যা তারা সে মালের মালিকানা পাইয়াছে এইরূপ বুঝায়, সেই ক্ষেত্রে তাহার ‘বিয়াল ওয়াস’ বাতিল হইয়া যাইবে।

বিশ্লেষণ

গুণ ও মানের বর্ণনা, যেমন একটি গাভী বিক্রয়ের সময় বলা হইয়াছে যে, গাভীটি এখনও দুধ দেয় কিন্তু বাস্তবে দুধদান বন্ধ হইয়া গিয়াছে। অথবা রাত্রিবেলা একটি পাথর লাল পদ্মরাগ মণি বলিয়া বিক্রয় করা হইয়াছে, কিন্তু দিনের বেলা দেখা গেল উহা পুশরাগ মণি। এই উভয় ক্ষেত্রে ক্রেতা ই করিলে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহালও রাখিতে পারে অথবা বাতিলও করিতে পারে।

‘খিয়ারুল ওয়াসফ’-এর আওতায় ক্রেতার এখতিয়ার তাহার মৃত্যুর পর তাহার ওয়ারিসগণের অনুকূলে বর্তাইবে। অর্থাৎ তাহার ওয়ারিসগণ চাহিলে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহালও রাখিতে পারিবে অথবা বাতিলও করিতে পারিবে।

ক্রেতার আচরণ অর্থাৎ খিয়ারুল ওয়াহ্-এর অধিকারী ক্রেতা মা হস্তগত করার পর তাহা বিক্রয়ের জন্য অন্য কোন ব্যক্তির সহিত চুক্তিবদ্ধ হইলে অথবা ঐ মাল হেবা বা ওয়াকফ করিলে তাহার এই ধরনের আচরণে তাহার ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি প্রত্যাখ্যানের এখতিয়ার (খিয়ারুল ওয়াস) বাতিল হইয়া যাইবে।

-২০৬ মূল্যের সহিত সং এখতিয়ার (if us) (ক) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিতে মালের মূল্য পরিশোধের মেয়াদ নির্ধারিত থাকা অার ঐ সময়ের মধ্যে তা মূল্য পরিশোধ না করিলে বিক্রেতার ক্রয়-বিক্রয় তুতি বহাল আর ধৰা বাতিল করার এখতিয়ার রহিয়াছে এবং ইহাকে খিয়ান

‘ (aul L.) বলে।

(খ) ক্রেতা মূ পরিশোধের মেয়াদকালের মধ্যে মারা গেলে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল হইয়া যাইবে।

৩৬৬

ধারা-২০৭ বাছাই করার এখতিয়ার ( ১ ) (ক) দুই বা ততোধিক জিনিসের মূল্য বতভাবে নির্ধারিত করিয়া বিক্রেতা কর্তৃক ক্রেতাকে উহার মধ্য হইতে তাহার পছন্দমত এক বা একাধিক জিনিস ৰায়ই করিয়া নেওয়ার এখতিয়ার প্রদান করিতে পারে এবং ইহাকে খিয়াকত তাআয়্যিন’ (a) Ls) বা বাছাই করার এখতিয়ার বলে।

(খ) খিয়াকত তায়্যিন’-এর ৰাছিয়া লওয়ার সময়সীমা নির্ধারিত থাকিতে হইবে।

(গ) ক্রেতার বাছিয়া লওয়ার এখতিয়ার নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার পর বাতিল হইয়া যাইবে।

(ঘ) খিয়ারুত তাআয়্যিন’ ক্রেতার মৃত্যুর পর তাহার ওয়ারিসগণের অনুকূলে বর্তাইবে।

বিশ্লেষণ

বিক্রেতা তিন রং-এর তিনটি শাড়ী কাপড় ক্রেতাকে প্রদান করিয়া বলিল, আপনার যে শাড়ীটি পছন্দ হয় এই সময়ের মধ্যে ক্রয় করিতে পারেন, প্রতিটি শাড়ীর এই এই দাম। এই অবস্থায় ক্রেতা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যে কোন একটি বা একাধিক শাড়ী ক্রয় করতে বা নাও করতে পারে। খিয়ানত তাআয়্যিন-এর ক্ষেত্রে দুইটি বিষয় লক্ষণীয় : স্বতন্ত্রভাবে প্রতিটি জিনিসের মূল্য বাছাই করিয়া লওয়ার সময়সীমা নির্ধারিত থাকিতে হইবে। সময়সীমার মধ্যে ক্রেতা মারা গেলে তাহার ওয়ারিসগণ অবশিষ্ট সময়সীমার জন্য বাছাই করিয়া লওয়ার এখতিয়ার লাভ করিবে।

ধারা-২০৮ মালের ত্রুটির কারণে এখতিয়ার (11) (ক) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিতে উল্লেখ না থাকিলেও মালের ক্রটিমুক্ত হ য়া শর্ত হিসাবে গণ্য হইবে।

(খ) মালের মধ্যে ধ্রুটি থাকিলে ক্রেতা ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহালও রাখিতে পারে অথবা বাতিলও করিতে পারে। ইহাকে ‘খিয়ারুল আইব’ ( La) বা এটির কারণে এখতিয়ার বলে।

(গ) ক্রটি সত্ত্বেও ক্রয়-বি। টুক্তি বহাল রাখিলে ক্রেতাকে মালের নির্ধারিত মূল্যই পরিশোধ করিতে হইবে এবং সে মূলদ্বাসের জন্য বিক্রেতাকে বাধ্য করিতে পারিবে না।

(ঘ) এমন কোন দোষ যাহার ফলে ‘মাল বিশেষজ্ঞের মতে মালের মূল্য হ্রাস পায় তাহা কটি’ হিসাবে গণ্য।

৩৬৭

(৩) মাল বিজয়ের পর এবং বিক্রেতার দখলে থাকা অবস্থায় উহাতে কোন দোষ সৃষ্টি হইলে তাহাও ফটি’ হিসাবে গণ্য হইবে এবং ক্রেতার এখতিয়ার বহাল থাকিবে।

(চ) বিক্রেতা ক্রেতাকে মালের ক্রটি দেখাইয়া বিক্রয় করিলে এবং ক্রেতা তাহা গ্রহণ করিলে তাহার এখতিয়ার বাতিল হইয়া যাইবে।

(৫) মালের যে কোন ত্রুটির জন্য বিক্রেতা দায়মুক্ত, চুক্তিপত্রে এইরূপ শর্ত থাকিলে ক্রেতার এখতিয়ার বাতিল হইয়া যাইবে।

(জ) ক্রয়ের সময় যদি ক্রেতা বলে যে, মালটি যে কোন ক্রটিসহ গ্রহণ করা হইল’, তবে তাহার এখতিয়ার বাতিল হইয়া যাইবে।

(ক) মাসের মধ্যে কটি আহে’ তাহা আত থাকা সত্ত্বেও ক্রেতার এমন আচরণ যাহা দ্বারা সে মালের মালিকানা পাইয়াহে এইরূপ বুঝায়, সেই ক্ষেত্রেও তাহার এখতিয়ার বাতিল হইয়া যাইবে।

(এ) মাল হস্তগত হওয়ার পর তাহাতে ক্রেতার যারা নূতন কটি সৃষ্টি হওয়ার ফলে উহার পুরাতনকটি প্রকাশ পাওয়ায় ক্রেতা উক্ত মাল বিক্রেতাকে ফেরত দিলে বিক্রেতাও তাহাকে উহ (নুতন কটির কারণে) পুনঃ ফেরত দিতে পারিবে, তবে

(১) ক্রেতা বিক্রেতার নিকট মুহাস দাবি করতে পারিবে এবং (২) একজন ন্যায়পায়ণ বিশেষজ্ঞ দ্বারা মূলহােসের পরিমাণ নির্ণীত হইবে।

(৫) ক্রেতার সৃষ্ট নুতন কটি দূর করা সবপর হইলে তাহা দূর করার পর সে পুরাতন কটির কারণে উক্ত মাল বিক্রেতাকে ফেরত দিতে পারিবে।

(ঠ) বিক্রেতা নূতন টিসহ মাল ফেরত নিতে সম্মত হইলে ক্রেতা মূলাস দাবি করিতে পারিবে না, হয় সে নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করিবে অথবা বিক্রেতাকে মাল ফেরত দিবে, এমনকি এটি সম্পর্কে জ্ঞাত থাকিয়াও উক্ত মাল অনন্যর নিকট বিক্রয় করিলে সে বিক্রেতার নিকট মূলাহ্রাস দাবি করিতে পারিবে না।

(ড) ক্রেতা মালের পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করিলে তাহার এখতিয়ার বাতিল হইয়া যাইবে।

(ট) ক্রটি সত্ত্বেও মাল ফেরত দেওয়া অসম্ভব, এইরূপ অবস্থায় বিক্রেতা ইচ্ছা করিলেও মাল ফেরত নিতে পারিবে না এবং তাহাকে মূলোস করিতে হইবে, এমনকি ক্রেতা জটি সম্পর্কে জ্ঞাত হইয়া উক্ত মাল অন্যত্র বিক্রয় করিলেও।

() অনেক মাল একত্রে ক্রয় করার পর হস্তগত করার সময় কিছু মাল এটিপূর্ণ হলে ক্রেতা

(১) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিলও করিতে পারে অথবা নির্ধারিত মূল্যে সমস্ত মাল গ্রহণ করিতে পারে; কিন্তু ক্রটিপূর্ণগুলি বাদ দিয়া ভালগুলি গ্রহণ করিতে পারবে না;

(২) মাল হগত করার পর কটি ধরা পড়িলে ভালগুলি রাতিরা জটিলি ফেরত দিতে পারিবে এবং বিক্রেতা সম্মত না হইলে সমস্ত মাল ফেরত দিতে পারিবে না;

(৩) মাল বিভানের কারণে ক্ষতিগ্রত হইলে নির্ধারিত মূল্যে সাত মাল রাখিয়া দিবে অথবা সময় মাল ফেরত দিবে।

(ত) ওজন অথবা পরিমাপ করিয়া ক্রয়-বিক্রয় হয়, এই একই শ্রেণীভুক্ত জিনিস ক্রয় ও হস্তগত করার পর তাহার কি ভাল এবং কিছু ত্রুটিপূর্ণ পাওয়া গেলে ক্রেতা হয় সবগুলি রাখিয়া দিবে অথবা সবগুলিই ফেরত দিবে।

(খ) শস্য ক্রয়ের পর তাহাতে মাটি মিশ্রিত থাকিলে এবং উহার পরিমাণ প্রথা অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে থাকিলে ক্রেতা উহা ফেরত দিতে পারিবে না, তবে এবােগ্য পরিমাণের অধিক হইলে ফেরত দিতে পারিবে।

(দ) ডিম, আখরোট ইত্যাদির ক্রটি প্রথা অনুযায়ী এইবােগ্য পর্যায়ে থাকিলে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহাল থাকিবে, অন্যথায় ক্রেতা মাল ফেরত দিয়া বিক্রেতার নিকট হইতে সম্পূর্ণ মূল্য ফেরত হইবে।

(ধ) ক্রয়কৃত পরিধেয় বয় এমনভাবে সেলাই করা যে, তাহা ব্যবহার করা সব নহে, এই অবস্থায় ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল গণ্য হইবে এবং ক্রেতা সশ মূল্য ফেরত পাবে।

বিশ্লেষণ

মালের ক্রটিমুক্ত হওয়া শর্ত’ অর্থাৎ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পাদনকালে এই শর্ত যোগ করা হয় নাই যে, মাল ত্রুটিমুক্ত হইতে হইবে, তবুও মালে কোন দোষ থাকিতে পারিবে না। এই অবস্থায় মাল ত্রুটিমুক্ত হওয়া শর্ত হিসাবে গণ্য হইবে এবং এটিযুক্ত হইলে ক্রেতা ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহালও রাখিতে পারে অথবা বাতিলও করিতে পারে।

মালটি যে কোন ক্রটিসহ গ্রহণ করা হইল’, যেমন একটি গরু ক্রয়ের সময় ক্রেতা বলিল, ইহা অন্ধ, খোঁড়া, স্বাস্থ্যহীন যাহাই হউক, ইহা গ্রহণ করা হইল। এই

অবস্থায় ক্রেতা ত্রুটির কারণে গরুটি বিক্রেতাকে ফেরত দিতে পারিবে না।

ক্রেতার দ্বারা নূতন ক্রটি সৃষ্টি হওয়ার ফলে পুরাতন কটি প্রকাশ পাইপে-যেমন ক্রেতা এক খও বস্ত্র ক্রয় করিয়া পোশাক তৈরির উদ্দেশ্যে তাহা কর্তন করিল এবং বন্ত্রের একটি পুরাতন কটিও দেখিতে পাইল। এই অবস্থায় সে ব্যখণ্ড বিক্রেতাকে ফেরত দিতে পারিবে না, কারণ সেও তাহাতে নূতন কটি সৃষ্টি করিয়াছে। অবশ্য পুরাতন ত্রুটির কারণে সে বিক্রেতার নিকট মূলাৱাসের দাবি করিতে পারিবে।

নূতন কটি দূর করা সম্ভবপর হইতে-যেমন একটি পশু ক্রয় করিয়া হতগত করার পর রোগাক্রান্ত হইয়া পড়ার ফলে তাহার একটি পুরাতন ত্রুটি ধরা পড়িল। এই অবস্থায় সে পশুটি বিক্রেতাকে ফেরত দিতে পারিবে না বটে, কিন্তু পুরাতন

৩৬৯

ত্রুটির কারণে মূলোস দাবি করিতে পারিবে। অবশ্য পশুটি সুস্থ হওয়ার পর সে তাহা পুরাতন ত্রুটির কারণে বিক্রেতাকে ফেরত দিতে পারিবে।

নূতন ক্রটিসহ মাল ফেরত নিতে সম্মত হইলে এবং তাহা ফেরত দিতে বাধা না থাকিলে ক্রেতা বিক্রেতার নিকট পুরাতন কটির কারণে মূলহাস দাবি করিতে পারিবে

। পুরাতন ক্রটি সম্পর্কে জ্ঞাত হইয়াও সে মালটি অপরের নিকট বিক্রয় করিলে, যেমন সে একখণ্ড বস্ত্র ক্রয়ের পর তাহা দ্বারা জামা তৈরির পর জানিতে পারিল যে, বস্ত্রখণ্ড কটিযুক্ত, এই অবস্থায় সে জামাটি অনন্যর নিকট বিক্রয় করিলে বিক্রেতার নিকট পুরাতন ক্রটির অজুহাতে মূল্যহ্রাস দাবি করিতে পারিবে না। অবশ্য অপরের নিকট বিক্রয় না করিলে মূল্যহ্রাস দাবি করিতে পারিবে।

‘ক্রেতা মালের পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করিলে, যেমন একখণ্ড বস্ত্র ক্রয়ের পর ক্রেতা তাহাতে নকসা করিল বা রং করিল বা চিত্রাংকন করিল। এই অবস্থায় বস্ত্রখণ্ডে পুরাতন ক্রটি থাকা সত্তে ক্রেতা তাহা বিক্রেতাকে ফেরত দিতে পারিবে না।

‘পুরাতন ক্রটি সত্ত্বেও ফেরত দেওয়া অসম্ভব হইলে’ অর্থাৎ উক্ত কারণে বিক্রেতা মাল ফেরত নিতে সম্মত আছে, কিন্তু কোন কারণে তাহা ফেরত দেওয়া বা নেওয়া সম্ভব হইতেছে না, এই অবস্থায় ক্রেতা উক্ত কুটির কারণে বিক্রেতার নিকট মূলহাস দাবি করিতে পারিবে, এমনকি মালটি অপরের নিকট বিক্রয়ের চুক্তিতে আবদ্ধ হইলেও।

বিভাজনের কারণে ক্ষতি হইলে, যেমন একজোড়া জুতা ক্রয়ের পর দেখা গেল যে, উহার একটি ক্রটিপূর্ণ। এই অবস্থায় ক্রেতা বিক্রেতাকে জুতাজোড়া ফেরত দিতে পারিবে এবং প্রদত্ত সম্পূর্ণ মূল্যও ফেরত পাইবে।

ধারা-২০৯ কারিগরের দ্বারা উৎপাদন ( 1) (ক) কোন জিনিস নির্মাণ বা এত করিয়া দেওয়ার জন্য কোন দক্ষ কারিগরের সহিত কোন ব্যক্তির চুক্তিবদ্ধ হওয়াকে ইসতিসনা’ ( A ) বলে।

(খ) যে ব্যক্তি নির্মাণ বা প্রস্তুত করে তাহাকে ‘সানি’ বা কারিগর (L) বলে।

(গ) যে ব্যক্তি নির্মাণ বা প্রস্তুত করায় তাহাকে ‘মুসতাসনি ( ১) বলে।

(ঘ) নির্মিত বন্ধুকে ‘মাস’ ৫০ ) বলে।

(ঙ) কোন ব্যক্তি কারিগরকে কোন জিনিস নির্ধারিত মূল্যের বিনিময়ে নির্মাণ বা এত করিয়া দেওয়ার প্রস্তাব করিলে এবং কারিগর ঐ প্রস্তাব সমর্থন করিলে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি সম্পাদিত হইবে। ২৪

৩৭০

(চ) যেসব জিনিস আদেশের মাধ্যমে নির্মাণ বা এত ফইয়া লইবার গীতি প্রচলিত আছে সেইসব জিনিস নির্মাণ ৰা বতুত করিয়া দেওয়ার আদেশ প্রদান করিলে উহা চুক্তি গণ্য হইবে।

(হ) যেসব জিনিস আদেশের মাধ্যমে নির্মাণ বা এত মাইয়া লইবার গীতি নাই সেইসব জিনিস নির্মাণ বা প্রস্তুত করিবার আদেশ প্রদান করিলে উহাও চুক্তি গণ্য হইবে; তবে এই চুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় (L. ) চুক্তির শর্তাবলী প্রযোজ্য হইবে এবং চুক্তিতে সময়সীমার উলেখ থাকিতে হইবে।

(জ) আদেশের মাধ্যমে যে চুক্তি হয় তাহাতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করিতে হইবে।

(ঝ) আদেশের মাধ্যমে চুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রিম মূল্য প্রদান বাধ্যকর নহে। (ঞ) চুক্তি সম্পাদনের পর কোন পাই তাহা প্রত্যাহার করিতে পারিবে না।

(ট) সংশ্লিষ্ট মাল বর্ণনা অনুযায়ী না হইলে আদেশদাতার ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বহাল রাখার অথবা বাতিল করার এখতিয়ার থাকিবে।

বিশ্লেষণ

‘আমাকে অমুক জিনিস এত টাকায় তৈরি করিয়া দাও’ অর্থাৎ এক ব্যক্তি তাহার পদদ্বয় দেখাইয়া জুতা প্রকৃতকারককে বলিল, “আমাকে এই মাপে দুই শত টাকার মধ্যে এই প্রকারের চামড়া দ্বারা একজোড়া জুতা প্রস্তুত করিয়া দাও’। জুতা প্রস্তুতকারক তাহার প্রস্তাব গ্রহণ করিল। ইহাতে একটি চুক্তি সম্পাদিত হইল।

ধারা-২১০ মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত (94। ১৭৯) ব্যক্তির ক্রয়-বিক্রয় (ক) মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় কোন ব্যক্তি তাহার কোন ওয়ারিসের নিকট কোন জিনিস বিক্রয় করিলে তাহা তাহার অপরাপর ওয়ারিসের সম্মতির উপর নির্ভরশীল হইবে, তাহার মৃত্যুর পর তাহার ওয়ারিসগণ সম্মতি প্রদান করিলে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি কার্যকর হইবে, অন্যথায় নহে।

(খ) মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় কোন ব্যক্তি তাহার সাব্য ওয়ারিস নহে এমন কোন ব্যক্তির নিকট কোন জিনিস বিক্রয় করিলে এবং বিক্রয়মূল্য উক্ত জিনিসের যথার্থ মূল্যের সমান হইলে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বৈধ হইবে এবং আইন অনুযায়ী বলবৎ করা যাইবে।

(৩) মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি যদি যথার্থ মূল্যের কম মূল্যে কোন জিনিস বিক্রয় এর এবং তাহা হস্তান্তর করে এবং অতঃপর মরিয়া যায়, সেই ক্ষেত্রে বিক্রীত বন্তু তাহার সমস্ত সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের মধ্যে হইলে ঐ ক্রয়-বিক্রয় বৈধ হইবে এবং উহা আইন অনুযায়ী বলবৎ করা যাইবে। কিন্তু উহা যদি তাহার এক-তৃতীয়াংশ

৩৭১

সম্পত্তির বেশি হয় তবে প্রকৃত মূল্যের তুলনায় যে পরিমাণ মূল্য কম দেওয়া হইয়াছে তাহা ক্রেতা পূরণ করিতে বাধ্য। অন্যথায় মৃতের ওয়ারিস ঐ ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করিতে পারিবে।

(ঘ) মৃত্যুব্যাধিগ্রস্ত অবস্থায় কোন ব্যক্তি তাহার সম্পত্তি প্রকৃত মূল্যের তুলনায় কম মূল্যে বিক্রয় করিলে এবং তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তি ঋণে ভারাক্রান্ত হইলে পাওনাদারগণ ক্রেতাকে প্রকৃত মূল্য প্রদান করিতে বলিবে, সে তাহাতে সম্মত না হইলে পাওনাদারগণ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে।

ধারা-২১১

বাই বিল-ওয়াফা (LiqJus) (ক) কোন ব্যক্তি তাহার সম্পত্তি অপর ব্যক্তির নিকট এই শর্তে বিক্রয় করিল যে, সে যখন মূল্য ফেরত দিবে ক্রেতা তখন তাহার সম্পত্তি ফেরত দিবে, ইহাকে ‘বাই বিল-ওয়াফা’ বলে।

তবে শর্ত থাকে যে, ক্রেতা বা বিক্রেতা ঐ সম্পত্তি অনন্যর নিকট বিক্রয় করিতে পারিবে না।

(খ) ৰাই বিল-ওয়াফায় শর্ত থাকিলে সম্পত্তি হইতে প্রাপ্ত আয় ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে বন্টিত হইতে পারে।

(গ) বাই বিল-ওয়াফার মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয়কৃত সম্পত্তির মূল্য যদি ঋণের সমপরিমাণ হয় এবং সম্পত্তি ক্রেতার দখলে থাকা অবস্থায় ধ্বংস হইয়া যায় তাহা হইলে উহার পরিবর্তে ঋণ বাতিল হইয়া যাইবে।

(ঘ) সম্পত্তির মূল্য পরিমাণের তুলনায় কম হইলে এবং উক্ত সম্পত্তি ক্রেতার দখলে থাকা অবস্থায় ধ্বংস হইলে ঋণের সমপরিমাণ মূল্য বিয়োগ করার পর ক্রেতা অবশিষ্ট ঋণ বিক্রেতার নিকট দাবি করিতে পারিবে।

(ঙ) সম্পত্তির মূল্য ঋণের পরিমাণের তুলনায় অধিক হইলে এবং উক্ত সম্পত্তি ক্রেতার দখলে থাকা অবস্থায় ধ্বংস হইলে ঋণের সমপরিমাণ মূল্য বিয়োগ করার পর জেতা অবশি মূল্য বিক্রেতাকে প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবে-যদি তাহা অবহেলা বা অযতের কারণে তাহা ধ্বংস হইয়া থাকে, কিন্তু অবহেলা বা অযত্র ব্যতীত অন্য কারণে ধ্বস হইয়া থাকিলে ক্রেতা অবশিষ্ট মূল্য বিক্রেতাকে প্রদান

করিতে বাধ্য মহে।

(চ) বাই বিল-ওয়াফার চুক্তিতে আবদ্ধ ক্রেতা তাহার প্রাপ্য পূর্ণরূপে বুঝিয়া হওয়া পর্যন্ত বিক্রেতার অন্যান্য ঋণদাতা তাহার সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ করিতে পারিবে না।

৩৭২

বিশ্লেষণ

বাই বিল-ওয়াফা (L DL ) এক ধরনের বন্ধকের ( ) মত। ইহার অপর নাম বাই আল-মুআমালা’ (LL ILL)। কারণ বিক্রীত মাল ক্রেতার নিকট বন্ধকের মত আবদ্ধ থাকে, সে তাহার মালিক নহে, আবার মালিকের অনুমতি ব্যতীত ব্যবহারও করিতে পারে না। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি ঋণদাতার নিকট তাহার কোন মাল ঋণের বদলে অথবা কম মূল্যে এই শর্তে বিক্রয় করে যে, সে যখন ঋণ বা মূল্য পাশোধ করিবে তখন উক্ত মাল ক্রেতা তাহাকে প্রত্যর্পণ করিবে এবং সে তাহার অনুমতি ব্যতীত অপরের নিকট উক্ত মাল বিক্রয় করিতে পারিবে না। অনুরূপভাবে বিক্রেতাও ঋণ বা বিক্রয়মূল্য ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত উত আল নেতার অনুমতি ব্যতীত অপরের নিকট-বিক্রয় করিতে পারে না। উক্ত মাল হইতে প্রাপ্ত মুনাফার কিছু অংশ ক্রেতা ও কিছু অংশ বিক্রেতার জন্য শর্ত করিলে তাহা কার্যকর হইবে। উক্ত মাল ক্রেতার নিকট ধ্বংস হইয়া গেলে ঋণের দাবি বাতিল হইয়া যাইবে। সেই মালের মূল্য ঋণের পরিমাণের তুলনায় কম হইলে মূল্যের অতিরিক্ত ঋণ বিক্রেতার নিকট দাবি করা যাইবে। ক্রেতা উক্ত মাল অপরের নিকট চুড়ান্তভাবে বিক্রয় করিয়া দখল বুঝাইয়া দিয়া নিরুদ্দেশ (CL) হইয়া গেলে বিক্রেতা শেষোক্ত ক্রেতার সহিত বিবাদ করিয়া উহা ফেরত সইতে পারিবে। বিক্রেতা এবং প্রথম ও দ্বিতীয় ক্রেতা মারা গেলে এবং তাহাদের প্রত্যেকের ওয়ারিস বিদ্যমান থাকিলে প্রথম বিক্রেতার ওয়ারিসগণ দ্বিতীয় ক্রেতার ওয়ারিসগণের নিকট হইতে উক্ত মাল ফেরত নিতে পারিবে এবং দ্বিতীয় ক্রেতার ওয়ারিশগণ প্রথম ক্রেতার (অর্থাৎ দ্বিতীয় বিক্রেতার) পরিত্যক্ত সম্পত্তি হইতে বা তাহার ওয়ারিসগণের নিকট হইতে ক্রয়মূল্য ফেরত লইতে পারিবে। একটি জমি দুই ব্যক্তির মালিকানায় (প্রত্যেকের অংশ পৃথকভাবে নির্দিষ্ট) থাকা অবস্থায় এক মালিক অপর মালিকের নিকট তাহার অংশ বাই বিল-ওয়াফার অধীনে বিক্রয় করিল। অতঃপর দ্বিতীয় মালিক তাহার অংশ অপরের নিকট বিক্রয় করিলে প্রথম মালিক উহাতে শুফআ দাবি করিতে পারিবে।”

ধারা-২১২ গান ফাসিদ ও আগরীর

(মারাত্মক ক্ষতি ও প্রতারণা) (ক) ক্রয়-বিক্রয়ে সংশ্লিষ্ট কোন পক্ষের প্রতারণা ব্যতীত অপর পক্ষের মারাত্মক ঠকা হইলে ক্ষতিগ্রস্ত পৰু ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল (ফা) করিতে পারিবে না।

(খ) ইয়াতীমের পক্ষে কোন সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ে মারাত্বক ঠকা হইলে এবং তাহাতে সংশ্লিষ্ট কোন পক্ষের প্রতারণা বিদ্যমান না থাকিলেও ইয়াতীমের সাথে উক্ত চুক্তি বাতিল করা যাইবে।

৩৭৩

(গ) ওয়াকফ সম্পত্তি ও রায় সম্পত্তির ক্ষেত্রেও উপধারা (খ)-এর বিধান প্রযোজ্য হইবে।

(ঘ) সংশ্লিষ্ট কোন পক্ষের প্রতারণার কারণে ক্রয়-বিক্রয়ে মারাত্মক ঠকা হইলে ক্ষতি পক্ষ তরুণাং ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে।

(৩) উপধারা (ঘ)-এর বিধান ক্ষতি ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাহার ওয়ারিশগণের অনুকূলে বর্তায় না।

(চ)বিক্রেতার প্রতারণার কারণে ক্রেতা মারাত্মকভাবেঠকিয়াহেজনিয়াও তাহার এমনআচরণ,যাহা আরা সে সংশ্লিষ্ট পণ্যের মালিকানা প্রাপ্ত হইয়াছে এইরূপ বুঝায়, সেই অবস্থায় তাহার ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল করার অধিকার রহিত হইয়া যাইবে।

(২) যে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে প্রতারণার কারণে মারাত্মক ঠকা হইয়াছে, সেই পণ্য ধ্বংসপ্রাপ্ত হইলে, ধ্বংস করা হইলে, কটিযুক্ত হইলে অথবা ক্রেতা উহার পরিবর্তন পরিবর্ধন করিয়া থাকিলে, এইরূপ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষের ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল করার এখতিয়ার থাকিবে না।

(গ) শরিত ব্যক্তি মৃত্যুশয্যায় শায়িত আমার আবার সঙি পোকৃত কম মূল্যে বিক্রয় করিয়া মায়া গেলে, তার ণদাতাগণ কের নিকট উক্ত সম্পত্তির বিক্রয় কালের প্রকৃত মূল্য দাবি করিতে পারিবে এবং ক্রেতা তাহাদের দাবি অগ্রাহ্য করিলে তাহাৱা উক্ত ক্রয় বাতিল করার দাবি উত্থাপন করিয়া ক্রেতাকে তাহার ক্রয়মূল্য ফেরত প্রদান করিয়া সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি নিজেদের দখলভুক্ত করিতে পারিবে এবং এই ক্ষেত্রে ক্রেতার মারাত্মক ঠকা বা বিক্রেতার প্রতারণার বিষয়টি বিবেচনাযোগ্য হইবে না।

বিশ্লেষণ

গাব (৬) শব্দের অর্থ ঠকা, ক্ষতি, লোকসান, দর-দামে কাহাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করা, লেনদেনে একপক্ষ কর্তৃক অপর পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত করা ইত্যাদি। অবশ্য শব্দটির অর্থ প্রতারণাও হয়। তাগরীর’ ( 5) অর্থ ধোঁকা, প্রতারণা, ফাঁকিবাজি ইত্যাদি। সংশ্লিষ্ট ধারায় ক্রয়-বিক্রয়ে বা বাণিজ্যিক লেনদেনে ‘গা’ শব্দটি ক্ষতি বা ঠকা অর্থে এবং তাগরীর’ শব্দটি প্রতারণা’ অর্থে ব্যবহৃত হইয়াছে। ক্ষতি বা ঠকার মাত্রা সামান্য হইলে ইহাকে বলে ‘আল-গাবুন আল-ইয়াসির’ (সামান্য ঠকা) এবং অধিক হইলে ইহাকে বলে ‘আল-গাবুন আল-ফাহিশ’ (মারাত্মক ঠকা)।

মানুষের সারল্য, অজ্ঞতা ও অনভিজ্ঞতার সুযোগ লইয়া তাহাকে ঠকানো, ক্ষতিগ্রস্ত করা বা প্রতাৱিত করা শরীআতে নিষিদ্ধ করা হইয়াছে।

من أبي هريرة قال نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم

• ) 

৩৭৪

“আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করিয়াছেন (মুসলিম, বুয়ু, ৰাব ২, নং ৩৬৬৬; তিরমিযী, বুয়ূ বাব ১৭, নং ১১৬৭)।

عن ابن عمر أن رجلا ذكر لرسول الله أنه يخدع في البيع فقال له رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا بایت فقل “ خلابة فكان الرجل انا بايع يقول لا خلابة .

“ইন উমর (রা) হইতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট উল্লেখ করিল যে, সে ক্রয়-বিক্রয়ে প্রতারিত হয়। রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাহাকে বলিলেন : তুমি যখন ক্রয়-বিক্রয় করিবে তখন বলিবে, যেন ধােকা না দেওয়া হয়। অতএব লোকটি যখন ক্রয়-বিক্রয় করিত তখন বলিত, যেন ধোঁকা না দেওয়া হয়” (আবু দাউদ, বায়ু, বাব ফির রাজুলি…… লা খিলাবা; আরও দ্র. তিরমিযী, বুযু, বাব ২৮, নং ১১৮৭, আনাস (রা) কর্তৃক বর্ণিত)।

عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم مرا على صبرة من طعام فاذخل يده فيها قالت أصابه بللا فقال يا صاحب الطعام ما لهذا قال أصابته السماء يا رسول

جعلته فوق الطعام حتى يراه الناس ثم قال

الله فقال أف من غش فليس منا.

“আবু হুরায়রা (রা) হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) একটি খাদ্যশস্যের স্তুপ অতিক্রম করিয়া যাওয়ার সময় উহার মধ্যে তাঁহার হাত ঢুকাইয়া। দিলেন। তিনি তাঁহার হাতে ভিজা অনুভব করিলেন। তিনি স্কুপের মালিককে জিজ্ঞাসা করিলেন, ইহা কি? সে বলিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! বৃষ্টির পানিতে ইহা ভিজিয়া গিয়াছে। তিনি বলিলেন : ভিজাগুলি কূপের উপরে রাখ নাই কেন, যাহাতে লোকেরা তাহা দেখিতে পাইত। অতঃপর তিনি বলিলেন : যে ব্যক্তি ধোঁকাবাজি করে, আমাদের সহিত তাহার কোন সম্পর্ক নাই” (তিরমিযী, বায়ু, বাব ৭২, নং ১২৫৩)।

অনুরূপভাবে দুই-তিন দিন গবাদি পশুর দুধ দোহন না করিয়া উহার পালান ফুলইয়া বিক্রয় করিতে এবং নকল ক্রেতা সাজিয়া পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করিতেও মহানবী (সা) নিষেধ করিয়াছেন। কারণ ইহাও ধোকা ও ঠকবাজির অন্তর্ভুক্ত। অতএব শরীঅতে কোন অবস্থায়ই ধোঁকা ও ঠকবাজি বৈধ নহে। এইজন্যই ক্রয়-বিক্রয়ে

৩৭৫

কোন পক্ষ প্রতারণা ও ঠকবাজির আশ্রয় নিলে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে চুক্তিভঙ্গের অধিকার প্রদান করা হইয়াছে।

বিশেষজ্ঞগণের অনুমানে নিরূপিত মূল্যের সহিত ক্রয় বা বিক্রয় মূল্যের সামান্য পার্থক্য হইলে ইহা সামান্য ঠকার পর্যায়ভুক্ত এবং এজন্য কোন পক্ষই চুক্তি বাতিল করিতে পারে না। গাবন ফাহিণ অর্থাৎ ক্রয়-বিক্রয়ে মারাত্মক ঠকা হইলে এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষবৃন্দের কেহ তাহার প্রতিপক্ষকে প্রতারিত করিয়াছে বলিয়া প্রমাণিত না হইলে চুক্তি বাতিল করা যাইবে না এবং প্রতারণা প্রমাণিত হইলে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ চুক্তি বাতিল করিতে পারিবে। তবে ইয়াতীমের সম্পত্তি, ওয়াকফ সম্পত্তি ও রাষ্ট্রের সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ে কোনরূপ প্রতারণা ছাড়াই মারাত্মক ঠকা হইলে, ইয়াতীমের পক্ষে, ওয়াকফ সম্পত্তির সুবিধা ভোগকারীর পক্ষে এবং রাষ্ট্রের পক্ষে উক্ত চুক্তি বাতিল করা যাইবে (তুকী মাজাল্লা, ধারা ৩৫৬-৩৬০; কিতাবুল মুআমালাতিশ শারইয়্যা আল-মালিয়া, পৃ. ১২১; আরও দ্র. পূ. ৯০)।

গান ফাহিশেষ বেলায় একদল ফকীহর মতে প্রতিকার পাত্রে অধিকার ক্ষস্তি ব্যক্তি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। তাহার মৃত্যুর পর তাহার ওয়ারিসগণের অনুকূলে এই অধিকার বর্তায় না এবং অপর দলের মতে বর্তায় (ফিতাবুল মুআমালা, পৃ. ১২১)। কতক বিশেষজ্ঞের মতে স্থাবর সম্পত্তির ক্ষেত্রে ২০%, গবাদি পশুর ক্ষেত্রে ১০%, ব্যবসায়িক পণ্যের ক্ষেত্রে ৫% এবং বাজারে যেসব পণ্যের মূল্য বাঁধিয়া দেওয়া হইয়াছে, উহার বেলায় নির্ধারিত দরের কম বা বেশি হইলে তাহা গাবুন ফাহিশ হিসাবে গণ্য হইবে (প্রাগুক্ত কিতাব, পৃ. ৯০)।

ধারা-২১৩

বাতিল ক্রয়-বিক্রয় (Jus) (ক) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তির উপাদানে cs) ক্রটি (;) থাকিলে উক্ত চুক্তি বাতিল গণ্য হইবে।

(খ) যে মাল বিদ্যমান নাই (esul), যে মাল হস্তান্তরযোগ্য নহে এবং যে মাল ‘মালে মুতাকাব্বিম’ (

ei JL) নহে তাহার ক্রয়-বিক্রয় বাতিল গণ্য হইবে।

(গ) কোন ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিল গণ্য হইলে তাহার কোন লাভজনক ফলাফল (Beneficial consequence) নাই।

(খ) বাতিল মুক্তির অধীনে তো-বিক্রেতার সম্মতিতে মাল হস্তগত করিলে উহা তাহার নিকট আমানত হিসাবে গণ্য হইবে এবং তাহার কোনরূপ ক্রটি বা অবহেলা ব্যতীত ৪ মাল তাহার দখলে থাকা অবস্থায় ধ্বংস বা ক্ষতি হলে লেস্য সে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য নহে।

৩৭৬

বিশ্লেষণ

উপাদানে ক্রটি থাকিলে’, যেমন উন্মাদ বা নির্বোধ ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ হইলে তাহা বাতিল গণ্য হইবে। মালে মুতাকাব্বিম-এর জন্য দ্র. ধারা (১৯১) (ব্যাখ্যা)। যে মাল বিদ্যমান নাই, যেমন আকাশে উড়ন্ত পাখি, গভীর পানির মাছ ইত্যাদি।

ধারা-২১৪

ফাসিদ ক্রয়-বিক্রয় (LL) (ক) যে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তিতে চুক্তির শর্ত বিদ্যমান আছে কিন্তু কোন বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের কারণে তাহা শরীআত সাত হয় নাই, সেই ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি কাসিদ’ গণ্য হইবে।

() ফাসিদ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তির অধীনে ক্রেতার নিকট মাল হস্তান্তর করা হইলে তাহা কার্যকর ও বৈধ গণ্য হইবে এবং ক্রেতা মাসের মালিক হইবে।

(গ) ফাসিদ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তির অধীনে ক্রেতাবিক্রেতার নিকট হইতে আ. হস্তগত করার পর তাহা ধ্বংস অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে ক্রেতা উহার ক্ষতি, “স: দিতে বাধ্য থাকিবে।

(ঘ) ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি ফাসিদ হইলে যে কোন পরে তাহা বাতিল করার এখতিয়ার আছে কিন্তু মাল ক্রেতার দখলে থাকা অবস্থায় শট বা ধ্বস হইয়া গেলে বা সে ধ্বংস করিলে অথবা বিক্রয় বা ওয়াকফের মাধ্যমে অপসারণ করিলে অথবা মালের পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন অথবা মেরামত করিলে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি বাতিলের এখতিয়ার তাহার থাকিবে না।

(ঙ) ফাসিদ ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে মালের মূল্য পরিশোধ করা হইয়া থাকিলে, বিক্রেতা উক্ত মূল্য ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত ক্রেতা মাল নিজের দখলে রাখিতে পারিবে।

==

=

=

=

=

=

=

=

তথ্যনির্দেশিকা ১. (ক) আল-

আতুল ফিকহিয়্য, ১ম সংস্করণ, কুয়েত ১৪০৭/১৯৮৬ ১, পৃ. ৫।

هو مبادلة مال بمال او مقابلة شئ او دفع عوض واخذ ما

عوض عنه .

(খ) আলমগিরী :

فمبادلة المال بالمال بالتراضي

১.

মু”

মুসনাদে আহমাদ, ৪খ, পৃ. ১৪১। ৩. আল-মাওসূআতুল ফিকহিয়্যা, ৯, পৃ. ৭-৮। ৪. ইবন মাজা, কিতাবুত তিজারাত, বাব বায়ইল বিয়ার, নং ২১৮৫।

৩৭৭

৫. মুজামু লুগাতিল ফুকাহা, পৃ. ৩৯৬ :

كل ما يمكن الانتفاع به مما أباح الشرع الانتفاع به .

৬.

ঐ গ্রন্থ, পৃ. ৩৯৬ :

المال اسم لجميع مايملکه الانسان واصله مايميل اليه .

الطبع ويمكن ادخاره كالنقد وما يمكن ان يقوم مقامه .

লিসানুল আরাব, ৬খ, পৃ. ৪৩০০, ২য় কলাম :

المال ما ملكته من جميع الاشياء .

৮. মুজামু লুগাতিল ফুকাহা, পৃ. ৩৯৭:

المال المنقول ما يمكن تحويله على هيئته من غير نقض

৯. মুজামু লুগাতিল ফুকাহা, পৃ. ৩৯৭:

المال غير المنقول ما لا ينقل و لا يحول في العادة كالارض وما اتصل بها اتصل قرار كالبناء والأشجار ما لا يمكن نقله

ويحويله الا بالنقض .

১০. লিসানুল আরাব হইতে, ৬খ, পৃ. ৪৩০০, ১১. বুখারী ও মুসলিম-এর বরাতে মিশকাতুল মাসাবীহ, বাংলা অনু. নূর মোহাম্মদ

আজমী, ৬, পৃ. ১৫৬-৭, নং ২৯১১ (২) ১২. বরাত পূর্বে উল্লেখ করা হইয়াছে। ১৩. লিসানুল আরাব, ৬৩, পৃ. ৪৩০০। ১৪. সম্পূর্ণ আলোচনাটি ফাতওয়া আলমগিরী, কিতাবুল বুয়ু, ৩, পৃ. ২-৩ হইতে

গৃহীত। ১৫. ইবন মাজা, কিতাবুত তিজারাত, বাবুল ইকালা, নং ২১৯৯; আবু দাউদ, কিতাবুল

বুয়ু ওয়াল ইজারাত, বাব ফী ফাদলিল ইকালা, নং ৩৪৬০; বায়হাকী। ১৬. আলমগিরী, বায়ু, বাবুছ ছালিছ আশার ফিল ইকালা, ৩থ, পৃ. ১৫৬-৬০; হিদায়া,

বুয়ু, বাবুল ইলা, ৩২, পৃ. ৫২-৫৩; বাদাইউস সানাই, কিতাবুল বুয়ু, ফাসল ফী

বায়ানি মা ইয়ারফাই হুকমাল বায়, ৫২, পৃ. ৩০৬-১০। ১৭. আলমগিরী, কিতাবুল বু, ৭ম ফাসল, ৬ষ্ঠ বাব। ১৮. আলমগিরী, কিতাবুল বয়, ২০ নং বাব, ৩, পৃ. ২০৮-২০৯।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *